#পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন
[৩য় পর্ব]
লেখক – আবির চৌধুরী
নীলা ঘুম থেকে উঠে দেখে নিশান বিছানায় নেই। নীলা ভাবছে হয়তো নিশান ওয়াশরুমের ভিতরে গেছে। তাই সে অনেক্ষন বসে রইল। কিন্তু নিশান বের হচ্ছেনা। এবার ধরি ধরি নীলা ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। দরজার সামনে গিয়ে ভয়ে ভয়ে টোকা দিতে থাকল। কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ আসছিলনা দেখে নীলা দরজা টা খুলে ফেলল। দেখে ভিতরে কেউ নেই। হঠাৎ করে নিশানের ফোন বেজে উঠলো। ফোন বাজার শব্দ শুনে নীলা একটা চমকে উঠল। আর সে ফোনের দিকে এগিয়ে গেল। ফোন ধরবে কিনা সেটা ভাবতে ভাবতে ফোন কেটে গেলো। তারপর নীলা নিশানের বিছানা টা গুছিয়ে দিল। একটু পরে নিশান রুমে আসল।
— আপনার কল এসেছে একটা।
এই কথা বলে নীলা নিশানের দিকে ফোন এগিয়ে দিল। নিশান ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার বন্ধু কল দিয়েছে। তাই সে কল বেক করল।
— হ্যালো মারুফ বল।
— দোস্ত কই আছিস তুই?
— বাসায় কেন কি হইছে?
— আজকে এক জায়গায় যামু তুই গাড়ি নিয়ে আসিস ঠিক আছে?
— ওকে ঠিক আছে তোরা থাক আমি এক্ষনি আসছি।
এই কথা বলে নিশান ফোন কেটে দিল। নীলা নিশানকে উদ্দেশ্য করে বলল — আপনি এখন আবার কই যাবেন?
— যেখানেই যাই তোমাকে বলে যেতে হবে নাকি? আর কতো বার বলতে হবে এক কথা যে আমার কোনো কিছু নিয়েই কথা বলবেনা।
— সরি। নাস্তা তো করে যান।
— নাহ, নাস্তা করব না এখন ফ্রেন্ড দের সাথেই খাবো। আসি।
এই কথা বলেই নিশান বের হতে যাবে তখনই একটা হচট খেলো। নীলা গিয়ে সাথে সাথে নিশান কে ধরে ফেলল।
— একটু বসে জান প্লিজ। বের হওয়ার সময় বাধা পেয়েছেন।
— আরে রাখো এসব। আমাকে বের হতে হবে।
এই কথা বলে নিশান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। নীলা মন খারাপ করে খাটের উপরে বসে রইল। একটু পরে নিশান গাড়ি ড্রাইভিং করে বন্ধুদের কাছে চলে গেলো।
— কি রে তোরা যাবিটা কোথায় আমাকে সেটা বল!
— তুই গেলেই বুঝতে পারবি এখন আমাদের সাথে চল।
তারপর সবাই গাড়ি তে উঠে বসল। তারপর তারা সবাই চলে গেলো একটা পার্কে ভিতরে।
নিশান — এবার বল আমাকে তোরা এখানে নিয়ে আসলি কেন?
— তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
নিশান সারপ্রাইজে কথাটা শুনে একটু অবাক হয়েই প্রশ্ন করল– আমার জন্য সারপ্রাইজ! তা কিসের সারপ্রাইজ তা একটু শুনি!
নিশান এই কথা বলে শেষ করার আগেই কেউ পিছন থেকে নিশানের চোখ চেপে ধরল।
নিশান বুঝতে পারছিনা কে হতে পারে।এবার নিশান একা টান দিয়ে পিছনের লোকটাকে সামনে নিয়ে এলো। আর যাকে নিশান সামনে নিয়ে আসল সে একটা মেয়ে ছিল।আর সে মেয়ে নিশানের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। অনেক দিন পরে দেখা রিমির সাথে। প্রায় দু’বছর।
— তুই! তুই কবে আসলি দেশে? আর আমাকে একটুও বললিনা?
— কালকেই আসছি তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলে তোকে বলিনি। শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করলি অথচ আমাকে বললিনা।
— তেমন কাওকে বলি নাই দোস্ত। বাদ এসব তারপর বল কি অবস্থা তোর অনেক দিন পরে দেখা।
— এই তো ভালোই খুব মিস করতাম তোদের। তোদের সাথে কাটানো সময় গুলো খুব মিস কতি এখনও।
— বুঝলাম। তো এইবার কি তুই বিয়েশাদি করবি নাকি আজীবন কুমারী থাকবি?
— বিয়ে করতেও দেশে এসেছি। আর আমার বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে।
— বাহ কংগ্রাচুলেশনস চল ট্রিট দিবি তুই আজ আমাদের।
— আমি কেন? তুই দিবি তুই আমাদের না বলেই বিয়ে করে পেলকি শালা।
— আচ্ছা বল কি খাবি আমি এখনই নিয়ে আসছি।
— আইসক্রিম নিয়ে আয় আমাদের জন্য।
— তোর সেই অভ্যাসটা এখনও গেলো না দেখছি।
— যা তো নিয়ে আয়।
তারপর নিশান রোডের ওপারে চলে গেলো আইসক্রিম আনতে। সবার জন্য আইসক্রিম কিনে রাস্তা পর হতে যাবে এমন সময় একটা বড় ট্রাক খুব গতিতে নিশানের দিকে এগিয়ে আসছে। যেটা নিশান খেয়াল করেনি। ট্রাক খুব দ্রুত গতিতে নিশানের কাছে চলে আসল।নিশান ট্রাক টা দেখে দাঁড়িয়ে গেল। ট্রাক ড্রাইভার ব্রেক করার অনেক চেষ্টা করেও পারলোনা নিশান ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেলো রাস্তার অপর পাসে।
নিশানের এই অবস্থা দেখে সবাই থমকে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর তাড়াতাড়ি করে নিশানের সব বন্ধুরা তার দিকে এগিয়ে আসছে। এই দিকে নিশানের অবস্থা খুব খারাপ। পুরো শরীর রক্তে লাল হয়ে গেছে। নিশান ভালো করে তাকানোর শক্তি পাচ্ছেনা। ধরি ধরি তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে একটু পরে নিশান অজ্ঞান হয়ে গেলো। এবার তাড়াতাড়ি করে নিশানের সব বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলো। হাসপাতালে গিয়ে নিশানকে অপারেশন রুমে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দিল। আর বাহিরে অপেক্ষা করে আছে নিশানের সব বন্ধুরা।
মারুফ — নিশানের বাসায় কল দিয়ে ব্যাপার টা জানানোর দরকার আছে।
রাজ — হুম তাড়াতাড়ি করে কল দে।
তারপর মারুফ কল দিল নিশানের আম্মুর নাম্বারে সাথে সাথে রাবেয়া বেগম কল রিসিভ করল।
— হ্যালো!
— আসসালামু আলাইকুম আন্টি আমি মারুফ।
— ওহ তা কেমন আছো তুমি বাবা?
— আন্টি আমি ভালো আছি কিন্তু নিশান।
— নিশান মানে ওর কি হইছে বাবা? আমার অনেক্ষন ধরে কেমন জানি লাগছে কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা বলো আমার ছেলের কি হয়েছে?
— আন্টি নিশান রোড পার হতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করছে আমরা তাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে চলে আসছি চিকিৎসা চলছে।
এই কথা শুনে রাবেয়া বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। ফোনে অনেক্ষন মারুফ আন্টি আন্টি বলল কিন্তু সে কোনো সারা না পেয়ে কল কেটে দিল।
এই দিকে নীলা রাবেয়া বেগমের রুমে এসে দেখে তিমি ফ্লোরের উপরে পড়ে আছে। নীলা তাড়াতাড়ি করে রাবেয়া বেগমের মুখের উপরে পানি দিয়ে তার জ্ঞান ফিরাল। রাবেয়া বেগম চোখ খুলেই নীলাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
— মা কি হইছে কান্না করছেন কেন এই ভাবে? কি হইছে আপনার আমাকে বলুন।
— মারে নিশান নাকি এক্সিডেন্ট করছে।
এই কথা বলেই আবার কান্না শুরু করে দেল।রাবেয়া বেগম। নীলা কথা শুনেই থমকে গেলো। নীলার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে-না সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
— মা ওনাকে এখন কই নিয়ে গিয়েছে আমরা ওখানে চলুন ওনার পাসে আমাদের থাকার খুব দরকার। আপনাকে বলছে কোন হাসপাতালে নিয়ে গেছে?
— হুম সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে বলছে।
— তা হলে আমরা ওখানেই চলুন।
— তোমার শ্বশুর কে একটা কল দেই।
— এখন না আমারা আগে গিয়ে দেখি ওনার কি অবস্থা তারপর আমরা বাবাকে জানিয়ে দেবো না হলে বাবা ও চিন্তা করবে ওনার জন্য। এখন আমরা চলুন আমরা গিয়ে দেখি আগে তারপর না-হয় বাবাকে জানিয়ে দেবো।
এই কথা বলেই দুজনেই বের হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা হাসপাতালে পৌছে গেলো।হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে রাবেয়া বেগম কান্না শুরু করে দিল। নীলা তাকে ধরে কাউন্টারের সামনে চলে গেলো ।
নীলা — শুনছেন!
ম্যানেজার — জ্বী বলুন! আমি কি আপনাকে কোনো ধরনের হেল্প করতে পারি?
— আচ্ছা অপনাদের এখানে আজকে একজন এক্সিডেন্ট এর রুগী নিয়ে আসা হইছে বলতে পারেন সে কোথায়?
— নাম কি রোগীর?
— নিশান চৌধুরী।
— ওহ ওনাকে তো অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অবস্থা খুব খারাপ।
— ওহ আচ্ছা ধন্যবাদ।
তারপর নীলা রাবেয়া বেগমকে নিয়ে অপারেশন রুমে সামনে চলে গেলো।
চলবে,,