#পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন
[২য় পর্ব]
লেখক – আবির চৌধুরী
কিছুক্ষণ পরে নিশান ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে সে বাসা থেকে বের হতে চলে যাবে এমন সময় তার আম্মু ডাক দিল।
— নিশান নাস্তা না করে তুই আবার বের হচ্ছিস কেন?
— আমি বাহিরে খাবো, তোমরা খেয়ে নাও।
এই কথা বলে নিশান বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
অন্যদিকে রাবেয়া বেগম খেয়াল করল যে নীলা মন খারাপ করে বসে আছে। তাই রাবেয়া বেগম নীলাকে উদ্দেশ্য করে বলল — মা মন খারাপ কোরো না নিশান একটু এমনি তুমি ওঁকে একটু ঠিক করে নিয়।
— আম্মু আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেনো ওনাকে ঠিক করতে পারি।
— হুম মা, আমি জানি তুমি ঠিক পারবে আমার বদরাগী ছেলেটাকে সোজা করতে।
রাবেয়া বেগমের কথা শুনে নীলা একটা মুচকি হাসি দিল। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো।
এই দিকে নিশান তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলো। নিশান এর তিনটা বন্ধু যাদের সাথে সে সব সময় আড্ডা দেয়৷ মারুফ, রাজ, নিলয়। সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে তখন হঠাৎ করে নিলয় বলে উঠল — নিশান কিরে তুই তো কাল রাতের সম্পর্কে কিছুই বললিনা! কাল রাতে কি বিড়াল মারছিলি? নাকি না মেরেই ঘুমিয়ে গেলি।
এই কথা বলেই সবাই খিলখিল করে হেসে দিল। এই দিকে নিশান কিছু না বলেই চুপ হয়ে রইল। ব্যাপার টা ওদের চোখ এড়ালো না। বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।
মারুফ নিশান কে বলল — কিরে তুই এই ভাবে চুপচাপ হয়ে আছিস কেন? কি হয়েছে তোর? ভাবি কি রাতে এক সাথে ঘুমাতে দেয় নাই নাকি হাহাহা।
নিশান — এই তোরা কি চুপ করবি নাকি এখান থেকে আমি চলে যাবো?
রাজ — আরে দাড়া দোস্ত। এই তোরা চুপ থাক। নিশান কি হইছে তোর সেটা আমাদের বল।
নিশান — আরে ভাই কি বলব। এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলাম যে। তোদের কাছে বলতেও আমার লজ্জা লাগছে।
— কি এমন কথা যে আমাদের কাছেও বলতে তোর লজ্জা লাগছে? আমাদের সব খুলে বল।
— বাদ দে আমার ভালো লাগছেনা এসব এখন বলতে।
— আরে আমাদের বল দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।
— ঠিক আছে আগে আমাকে একটা সিগারেট দে তোরা তারপর সব বলছি।
তারপর মারুফ নিশানের দিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিল। তারপর নিশান সিগারেট ধরিয়ে কিছুক্ষণ টানার পরে সবাইকে কাল রাতের ঘটনা টা খুলে বলল। নিশানের কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সবাই হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে গেলো। কারো মুখে কোনো কথা বের হচ্ছে-না। হঠাৎ করে রাজ বলে উঠল– দেখ যা হবার হয়েছে এখন আর কি করবি বল? বিয়ে তো করেই ফেললি।
নিশান — হুম আমি ওঁকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো এই মেয়ের সাথে থাকা আমার পক্ষে পসিবল না। তোরা একটা ভালো উকিল ঠিক কর।
রাজ — আরে মাথা মোটা বিয়ে করলি এক দিন হলো এখনই কি ডিভোর্স হয়ে যাবে নাকি? কমপক্ষে ৬মাস সময় লাগবে।
নিশান — কি! এই মেয়ের সাথে আমাকে ৬ মাস থাকতে হবে? আমার তো মিনিট ও থাকতে ইচ্ছে করেনা।
নিলয় — আমিও শুনেছি এটাই নিয়ম।কিছু করার নাই। আমি একটা জিনিস বুঝলাম না।
— কি জিনিস?
— তুই কি বিয়ের আগে মেয়েকে দেখিস নাই একবারও? বিয়ের আগে তো তোর একবার দেখা উচিত ছিল।
— আরে ভাই আমি কি জানতাম নাকি যে এই মেয়েকেই আমি বিয়ে করছি! আম্মু আব্বু বিয়ে ঠিক করছে তাই আর দেখার ইচ্ছে হয়নি। কে জানতো যে আমার জন্য এমন মেয়ে ঠিক করবে তারা।
— যা হবার হইছে এখন বাদ দে এসব। মেয়েটা কি বলছে তুই এক মাত্র যে সে তোর সাথে বেড শেয়ার করছে আর কারো সাথে করে নাই?
— হুম সেটাই তো বলল, কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়নি। কারণ আমার মনে হচ্ছে মিথ্যে বলছে। কারণ এই লাইনের মেয়েরা এতো তাড়াতাড়ি বের হতে পারে না কিছু তেই।
— ঠিক আছে এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। দেখে তো মনে হয় সকালে নাস্তা করে আসিস নাই চল নাস্তা করবো এক সাথে সবাই।
তারপর সবাই গিয়ে এক সাথে নাস্তা করে আসলো। এসেই আবার আড্ডা জমিয়ে দিলে ৪ জনে। আড্ডা দিতে দিতে দুপুর হয়ে আসলো। তখন হঠাৎ করে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো নিশানের ফোনে। নিশান ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাস থেকে একটা মেইলি কন্ঠ ভেসে আসলো।
নিশান — হ্যালো! কে আপনি?
নীলা — আমি নীলা বলছে। বাসায় আসবেন কখন?
— আমি বাসায় কখন আসবো সেই কৈপিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে আমার? ফোন দিলে কেন সেটা বলো।
— ফোন দিয়েছে দুপুর হয়ে গেছে খেতে আসতে। সকালেও কিছু না খেয়ে বের হয়ে গেছেন।
— আমার খাওয়া নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না ফোন রাখো। যত্তসব আজাইরা ঢং।
এই বলে নিশান ফোন কেটে দিল।
রাজ — কিরে কল কে দিয়েছে? আর এই ভাবে কথা কেন বললি তুই?
— আর বলিস না ওই মেয়েটা কল দিছে। ওর কথা শুনলে আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়।
— এই ভাবে কথা না বললেও পারতি মেয়েটা তো কষ্ট পাবে।
— পেলে আমার কি?
অন্যদিকে নীলা খাটের উপরে বসে কান্না করে দিল।অনেক্ষন একা একা কান্না করল মেয়েটা। কান্না করতে করতে একটা সময় না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ল।
নিশান তার বন্ধুদের সাথে গিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিল। দেখতে দেখতে রাত ১২ টা বেজে গেলো নিশান রা এখনও আড্ডা দিচ্ছে। অন্যদিকে নীলা নিশানের অপেক্ষা করে বসে আছে কখন আসবে। ইতি মধ্যে অনেক গুলা কল দিয়েছে কিন্তু নিশান বার বার কল কেটে দিচ্ছে। একটু পরে রাবেয়া বেগম নীলার কাছে আসল।
— মা নিশান এখনও আসে নাই?
— না মা।
— কল দিয়েছিলে নিশানকে?
— হুম কিন্তু বার বার কেটে দিচ্ছে। রিসিভ করছেনা কল।
— আচ্ছা তুমি খেতে আসো। দুপুরেও না খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলে।
— না মা আপনার ছেলে আসলে এক সাথে খাবো আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে যান।
— নিশান কখন আসে তার কোনো ঠিক নেই তুমি খেয়ে নাও।
— সমস্যা নাই মা উনি আসলেই এক সাথে খাবো চিন্তা করবেন না আপনি। আপনি ঘুমিয়ে যান। বাবা খেয়ে ছেন?
— হুম খেয়ে ঘুমিয়েছে।
— ওহ আপনিও খেয়ে ঘুমিয়ে যান রাত অনেক তো হলো।
রাবেয়া বেগম নীলার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। নীলা নিশানের অপেক্ষা করে খাটের এক কোণে বসে রইল। একটু পরে নিশান রুমে আসলো।
নিশান — কি হলো তুমি এখনও ঘুমাও নি কেম? এখানে বসে আছো কেন?
— আপনার জন্য বসে ছিলাম কল দিলাম রিসিভ করেন নাই কেন? কতো চিন্তা হচ্ছিল।
— আমাকে নিয়ে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই ঘুমিয়ে যাও আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
— আপনি খাবার খাবেন না। হাত মুখ ধুয়ে আসেন আমি খাবার নিয়ে আসছি।
— আমি বাহিরে থেকে খেয়ে আসছি।
এই কথা বলেই নিশান পকেট থেকে সিগারেটের পেকেট বের করে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করে দিল।
নীলা — আপনি সিগারেট খাচ্ছেন কেন? সিগারেট খাওয়া ভালো না।
— তোমার থেকে কি আমাকে নতুন করে শিখতে হবে আমার কোনটা ভালো কোনটা খারাপ?
— আপনি এই সিগারেট পেলে দিন। এটা খাবেননা প্লিজ। সিগারেট আমার সহ্য হয়না।
— তাতে আমার কিছু যায় আসেনা এটা আমার বাসা আমি যা ইচ্ছে খাবো। আর কোনো কথা না বলে নিজের যায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
নিশান সিগারেট শেষ করে শুয়ে পড়ল। এই দিকে নীলা তার বিছানা রেডি করে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। আর ভাবছে। কি এমন ক্ষতি হয় আমার সাথে একটু ভালো ভাবে কথা বললে। সব সময় আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে। উনিকি বুঝে-না আমার অনেক কষ্ট হয়। এসব ভাবতে ভাবতে নীলা ঘুমিয়ে গেল।
সকালে নীলা ঘুম থেকে উঠে দেখে নিশান নেই,,,,
চলবে,,,