#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-২৪
মাহমুদ সাহেব বিধ্বস্ত অবস্থায় হসপিটালের করিডোরে পায়চারী করছেন। যদিও ডক্টর ইনফরম করে গেছেন যে নীলময়ী এখন অনেকটা সুস্থ আছে…. কিন্তু তারপরও নিজের চোখে একবার না দেখলেই নয়……..
কিন্তু বিপত্তি বাধলো…………………………..
পিছন থেকে কারো স্পর্শ পেয়ে মাহমুদ সাহেব পিছনে ফিরলেন।
-হাসান….. কি অবস্থা!?… মেয়ের কনডিশন এখন কেমন?
কাজী সাহেবের প্রশ্নে মাহমুদ সাহেব কোনরকম মাথা ঝাকালেন,,
-হু…. আছে…. আছে আমার মেয়ে…………..
তিনি বর্নর দিকে তাকালেন….. চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ ছেলেটার…… মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে আনাটা কি ঠিক হলো!!! কিন্তু উনিও বা করবেন!!!! নীলময়ী সবার প্রথম বর্নর সাথেই দেখা করতে চায়…….
-আমার মেয়েটা…. জানতো একটু জেদি…… কিছু মনে করোনা বাবা….. ও প্রথমেই………….
-নীলময়ী কি জেগে আছে আংকেল!!…… আমি…. দেখা করতে চাই………
-হু… হু…. আছে… তুমি যাও বাবা… একটু ভিতরে যাও………
বর্ন নীলময়ীর কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার বড় করে দম নিলো….. তারপর খুব আস্তে করে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল।
নীলময়ী শুয়ে…. খুব শান্তিতে ঘুমিয়ে যেনো…… বেশকিছু নল হাতে লাগানো। এত নল কেনো!!!!! নীলময়ীর কোন নড়াচড়া নেই….. শ্বাস-প্রশ্বাসও কি নিচ্ছে না নাকি!!! বর্নর ভ্রু কুচকে গেলো…… দৃঢ় পায়ে এগুলো ও……..
বেডের পাশের স্টুলটায় বসল…. ফিসফিসিয়ে বলল
-নীলময়ী আপনি ভালো আছেন!!! নীলময়ী আমি এসেছি দেখুন…….
নড়াচড়া না দেখে,,,বর্ন আঙুল দিয়ে নীলময়ীর গালে আলতো করে গুতা দিলো……. নীলময়ী এবার একটু নড়ল….. পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো…. এবং আয়েশ করে বেশ বড়সড় একটা হাই তুলল……
-গুড বয়…… আমাকে দেখে কি আপনার ভালো মনে হচ্ছে……..!!!!
-……………………..
-খুব আরামের একটা ঘুম দিয়েছিলাম জানেন!!!!! পিলগুলো খুব ভালো কাজ করেছিলো……
-…………………………
নীলময়ী বর্নর থেকে চোখ ফিরিয়ে সিলিং-এর তাকালো…… এবং তাকিয়েই রইল…….
-আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম…… খুব সুন্দর ভয়ের একটা স্বপ্ন…………….. জানতে চাইবেন না…. কি স্বপ্ন দেখেছিলাম…….
বর্নর দৃষ্টি নীলময়ী ডানহাতের দিকে। দৃষ্টি সেদিকে স্থির রেখেই মাথা ঝাকালো।
-আমি দেখলাম কি…… আমি দৌড়াচ্ছি……খুব জোড়ে জোড়ে দৌড়াচ্ছি….. জংগলের ভিতর দিয়ে দৌড়ে চলেছি….. ডালপালায় টান লেগে আমার জামা কাপড় ছিড়ে যাচ্ছে….. তাও দৌড়ে চলেছি…… কারন আমার পিছনে একটা কালো ডায়নী তাড়া করছে….. ধরতেই পারলেই জাদু করে আমাকে আটকে রাখবে…… কিন্তু কি!!!! হঠাৎ করে আমি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম…… সাথে সাথে ডায়নীটা আমার সামনে….. আমার গলা চেপে ধরল….. তারপর “আবড়া কা ডাবড়া” বলে মন্ত্র পড়তে লাগল……. আমি এতো চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছি না……….ঠিক তখনই…… ঝড় তুফান তুলে আমার সামনে এসে দাড়ালো….. লাল নীল ড্রেস পড়া সুপারম্যান………..
সুপারম্যান এসে “ইয়া ডিসুম” বলে কালো ডায়নীটাকে এমন একটা ঘুষি দিলো……………
এতোটুকু বলেই নীলময়ী খিলখিল করে হাসতে লাগলো….. হাসতে হাসতে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো…….
-তারপর জানেন কি হলো……. সুপারম্যান আমাকে সা করে উড়ে গেলো……. কিন্তু আমি যখন চোখ খুললাম দেখি আমি এখানে……..এবং পর পরেই আমার ভয় করতে লাগলো…… যদি ডায়নীটা আবার আসে….. আর সুপারম্যান যদি আমাকে এবার না বাচাতে পারে….. তখন!!!!
-…………………..
-বর্ন,,,,, আমি যদি বলি……আপনি কি আমার সুপারম্যান হবেন?
বর্ন নিজের দুইহাত দিয়ে নীলময়ীর ডান হাত চেপে ধরল……তারপর কাপা কাপা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল
-আমি আছি নীলময়ী….. আছি আমি…..….. আপনার সুপারম্যান।
👇👇👇
তামান্না ঘরের দরজাটা লাগিয়েই বিছানায় এলিয়ে পড়ল। এতো পরিশ্রম করতে আর ভালো লাগে না….. বসের তো শান্তি,,,,,,, এলে এলাম না এলে নাই…… আর এদিকে এমপ্লয়িদের জান যায় যায় অবস্থা…… শুধু নামেরই বস….. আজ তিনদিন যাবৎ উধাও….. আর এদিকে এতো মিটিং ক্লায়েন্ট ডিলস!!! এবার বোনাস না দিলে….. ওই নিমচা স্যারের কান ছিড়ে ফেলবে একদম তামান্না……..
তামান্না ফোনের ক্যালেন্ডার চেক করল….. কাল শুক্রবার!!! কিন্তু তাও কত কাজ!!! উফফ!!
সকালে ঘুম থেকেই উঠেই ঘরের কাজে লেগে পড়তে হয়েছে তামান্নার….. কাল রাতে বালতি বালতি ভিজানো কাপড় গুলো মাত্র ধুয়ে উঠেছে…… ঠিক তখন দরজা ধুরুম ধারুম পিটানোর আওয়াজ পাওয়া গেলো……..
তামান্না হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলতে গেলো…… দরজা খুলে তামান্না পুরোই অবাক…….
-মিস তামান্না…….. সেদিন আমাদের ঘোরাঘুরির মাঝে এভাবে ফাকি দিয়ে আপনি চলে এসেছিলেন……. তাই আমি আপনাকে আজ শাস্তি দিতে এসেছি…….আপনার শাস্তি,,, আপনি আজ সারাদিন আমার সাথে ঘুরবেন।
(আসছে)
পর্ব ছোট জানি……. কিন্তু একটু চালিয়ে জান….. পরের পর্বগুলো বড় করার চেষ্টা করবো।