এক মুঠো রোদ পর্ব-১

0
2517

#এক_মুঠো_রোদ #saif_1275
#Writer_নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা
#part_1
#collected Sk Galib
চৌরাস্তার মোড়ে কপালে আড়াআড়িভাবে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।গায়ে সাদামাটা শাড়ি,লম্বা চুলে বেনুনি করা শ্যামবর্ণের মেয়েটির কপাল কুঁচকে আছে হালকা বিরক্তিতে।সেই ১২ টায় টিউশনি শেষ হয়েছে তার এখন প্রায় ১২ টা ৩০। এই অাধাঘন্টা যাবৎ দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো রিক্সার দেখা মিলছে না তার।তারওপর মাথার ওপর উত্তপ্ত সূর্য।মেয়েটির নাম রাদিয়ানা আহমেদ রোজা।সবাই রোজা নামেই ডাকে।কখনো শান্ত তো কখনো চঞ্চল….বৈশাখ মাসের কালবৈশাখীর মতো হুটহাটই মেজাজ পরিবর্তন হয় তার। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্তি যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই পাশ থেকে একটা ছেলে গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো –
.
এক্সকিউজ মি ম্যাম! আপনার কাছে কি সেলফোন হবে?
.
ছেলেটির কথায় ফিরে তাকালো রোজা।বিরক্তির সাথে চোখে-মুখে ফুটে উঠলো অপরিসীম কৌতূহল। সুঠাম দেহী ছেলেটির মাথায় ক্যাপ, চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস,গায়ে জড়ানো ব্লু জ্যাকেট।ছেলেটি ক্রমাগত চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে…যেনো নিজেকে কারো চোখের আড়ালে রাখতে চাইছে সে।তাকে দেখে রোজার প্রথম যে কথাটি মনে হলো তা হচ্ছে-“ছেলেটি কোনো সন্ত্রাসী টন্ত্রাসী নয় তো?” রোজার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে এলো মুহূর্তেই। অর্ধেক ঢাকা মুখটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর রোজার মনে হলো ছেলেটিকে সে চেনে।কোথাও একটা দেখেছে সে।কিন্তু কোথায়?আচ্ছা? এই ছেলেটা কোনো মোষ্ট ওয়ান্টেট ক্রিমিনাল নয় তো?যাদের ছবি প্রতিবেলার খবরের প্রধান খাবার হয়ে থাকে।জার্নালিস্ট বাবার মেয়ে রোজা…সেই হিসেবে কোনো মোষ্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালকে পরিচিত মনে হওয়া অবশ্যই দোষের কিছু না।।নিজের অজান্তেই ভ্রু কুঁচকে এলো রোজার।তার মাথায় ঘুরছে অদ্ভুত সব প্রশ্ন….আচ্ছা?ক্রিমিনালরা কি এতো হ্যান্ডসাম হয়?হতেও পারে…আজকালকার যুগে গ্যাংস্টাররাও সেইরম ফ্যাশনেবল হয়।সন্ত্রাসী বা ক্রিমিনাল বলে তাদের হ্যান্ডসাম বা ড্যাশিং হওয়া যাবে না এমন তো কোনো কথা নেই।নাহ্!! এমনটা ভাবা ঘোর অন্যায় হয়েছে রোজার….ভয়ানক অন্যায়।কিন্তু একটা গ্যাংস্টার তার কাছে সেলফোন চাইবে কেন?গ্যাংস্টারদের তো অনেক টাকা থাকার কথা….অদ্ভুত!! রোজাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিভরা কন্ঠে আবারও বলে উঠলো ছেলেটি-
.
ম্যাম!হবে কি একটা সেলফোন?আই ব্যাডলি নিড আ ফোন জাস্ট ফর ফাইভ মিনিটস্….
.
ছেলেটার কথায় আবারও অবাক হলো রোজা।।কি অদ্ভুত একটা ব্যাপার….ছেলে
টার কন্ঠটাও এমন কেমন একটা পরিচিত লাগছে তার।যেনো প্রায়ই শুনে এই কন্ঠ।অনেক সময় সকাল, দুপুর,রাত প্রতিবেলা।আবারও ভ্রু কুঁচকে এলো রোজার,ছেলেটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই চমকে উঠলো সে।চট করে রাস্তার ওপাশের মস্ত বিল বোর্ডের দিকে তাকালো সে।বিল বোর্ডে ম্যাংগু জুস হাতে নায়িকার সাথে রোমান্সরত নায়ক আরিয়ান মৃন্ময়ের ছবি।রোজা বিস্ফারিত চোখে একবার বিল বোর্ড তো একবার ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছে….দুজনেই সেইম!!তারমানে রোজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ও চিত্রশল্পী আরিয়ান মৃন্ময়?নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।যার সাথে দেখা করার জন্য হাজারও মেয়েরা হা-হুতাশ করে মরে সেই আরিয়ান মৃন্ময় নাকি তার কাছে এসে সেলফোন চাচ্ছে!!তাও আবার মাঝরাস্তায়….কি অদ্ভুত!! আচ্ছা এটা রোজার কোনো স্বপ্ন নয় তো?বা কল্পনা?রোদের তাপে বোল্ড হয়ে এসব আজগুবি জিনিস দেখছে না তো?এসব এলোমেলো চিন্তা মাথায় নিয়ে হাত বাড়িয়ে সামনে দাঁড়ানো ছেলেটির কনুইয়ের খানিক উপরে চিমটি বসিয়ে দিলো রোজা।সাথে সাথেই “আহ্” শব্দ করে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ছেলেটি।হাতের কনুইয়ের কাছে বাম হাতের তালু ঘষতে ঘষতে বলে উঠলো –
.
আর ইউ লস্টেট?
.
রোজা উত্তেজনায় মুখ চেপে ধরলো।ওহ্ মাই গড।এটা তো সত্যি আরিয়ান মৃন্ময়। ছেলেটি চারপাশে তাকিয়ে পকেট থেকে মাস্ক বের করে নাক মুখ ঢেকে নিলো।আশেপাশের মানুষ থেকে নিজেকে আড়াল করার কতো প্রচেষ্টা তার।রোজা এখনও মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তার মাথায় একটি ওয়ার্ডই ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার….ইম্পসিবল!! ইম্পসিবল!! মৃন্ময় এবার কিছু বিরক্তি নিয়েই বলে উঠলো –
.
ওহ হ্যালো ম্যাম?আপনার কাছে কি ফোন আছে?আমি বিপদে পড়েছি…আমাকে একটু হেল্প করুন প্লিজ।
.
রোজা কিছু একটা ভেবে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে এগিয়ে দিলো।মৃন্ময় ফোনটা একরকম লুফে নিলো…একটা নাম্বার ডায়াল করে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনটা কানে নিলো।।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বলে উঠলো –
.
সোহেল? আমি মৃন্ময়….তুমি কি আসলেই গাধা??আমার সেলফোনটা সাথে দেওয়ার দায়িত্ব তোমার ছিলো।গাড়িতে তেল আছে কি না সেটাও চেইক করো নি।।তোমার কেয়ারলেসের জন্য আমি এখন মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি…..ওদিকে ফামহাউজে রুজি ওয়েট করছে।আমার পি এ হিসেবে তোমায় কি আরো বেশি কেয়ারফুল হওয়া উচিত ছিলো না?আমি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে সাংবাদিকরা কোথা থেকে কি বের করে ফেলবে কে জানে??আর এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার….এটাকে আমি নিউজ বানাতে চাচ্ছি না।।তোমাকে আমি দশমিনিট মিনিট টাইম দিচ্ছি গাড়ি পাঠাও….নয়তো তোমার জবের কথা ভুলে যাও… গট ইট…ইডিয়ট!!
.
রোজার কানে মৃন্ময়ের কথাগুলো হালকা পাতলা কানে এলো।মনটা খুশিতে ডাকুমডুকুম নাচছে তার…নিশ্চয় মৃন্ময়ের সাথে কন্ঠশিল্পী রুজির চক্কর চলছে নয়তো ফামহাউজে পার্সোনাল কি কাজ থাকতে পারে??তবু একা একা?এই খবরটা বাবাকে দিতে পারলে নিশ্চয় বাবা তাকে জার্নালিজম নিয়ে পড়াশোনার জন্য পার্মিশন দিয়ে দিবে?ইয়াহু…মৃন্ময় এগিয়ে এসে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো-“থেংক্স ম্যাম” রোজা দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়েই উল্টো পথে হাঁটা দিলো।এখনই বাসায় পৌঁছাতে হবে তাকে।।বাবাকে তো জানাতে হবে ব্যাপারটা… আজই নিশ্চয় জার্নালিজম পড়ার পার্মিট টা পেয়ে যাবে সে!!মৃন্ময় সানগ্লাস চোখেই আড়চোখে রোজার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে….মেয়েটির লম্বা বেনুনি হাঁটার তালে হেলে-দুলে যাচ্ছে…দেখতে ভালো লাগছে তার।।সাদা-মাটা শাড়ি আর লম্বা চুলের বেনুনী পিচ্চি মেয়েটার মাঝে একটা মাধুর্যতা এনে দিয়েছে।।পুরাতন যুগের মেয়েদের মতো লাগছে তাকে…..এসব ভাবতে ভাবতেই একটা বিশাল গাড়ি এসে থামলো ওর সামনে।ড্রাইবার বেরিয়ে এসে ফোন আর গাড়ির চাবি দিয়েই চলে গেলো।।মৃন্ময় গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দ্রুত ছুটলো তার নিজের গন্তব্য।। আর রোজা নামের মেয়েটির স্মৃতিটুকু ফেলে গেলো এই চৌরাস্তা মোড়টাতেই…এক রৌদ্রজ্বল দুপুরের অব্যক্ত গরম বাতাসে…
.
# চলবে…

  1. #part_2
    https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943484889834972/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here