#এক_মুঠো_রোদ
#Writer_নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা
#part_12
#collected Sk Galib
রাফিন অবাক চোখে আরুর দিকে তাকালেও কিছু বললো না। রাফিনকে তাকাতে দেখে আরু খুব স্বাভাবিকভাবে বলে উঠলো,
— নাগরাদোলায় উঠবো। একা ভয় লাগে। যদি পড়ে যাই? আপনি পাশে থাকলে সেই ভয়টা থাকবে না। জানি ধরবেন না তবু পড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ভয়টা এটলিস্ট থাকবে না। চলুন না?
কথাটা বলেই হাতটা আরো জোড়ে টেনে ধরলো আরু। আরু ভেবেছিলো চড় টর খাবে নিশ্চয় কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নেমে দাঁড়ালো রাফিন। সিগারেটটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে ভদ্র ছেলে হয়ে গেলো মুহূর্তেই। আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা “ভাই” ” ভাই’ করে মুখে ফ্যানা তুলা ছেলেগুলো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রাফিনকে কখনোই আরুর মতো মেয়েদের সাথে মিশতে দেখে নি তারা। এমনটা নয় যে রাফিন কখনো মেয়েদের সংস্পর্শে যায় না। রাফিনও মেয়েদের সাথে মেলামেশা করে, গভীরভাবেই করে কিন্তু আরুর মতো মেয়েদের সাথে কখনোই নয়। তবে কি রাফিন আরু কে….!
রাফিন-আরু পাশাপাশি হাঁটছে। আরু খুব শক্ত করে রাফিনের বামহাতটা জড়িয়ে আছে। রাফিনের বেশ অস্বস্তি লাগছে। ভয়ানক অস্বস্তি। তবু নিরব সঙ্গী হয়ে হেঁটে চলেছে সে। কিছুটা হেঁটেই নীরবতা ভাঙলো আরু। একঝাঁক বেলুনের দিকে ইশারা করে বলে উঠলো,
— বলুন নিবো। কিনে দিবেন?
এবারও কিছু বললো না রাফিন। আরু রাফিনকে টেনে নিয়ে মুঠো ভরে বেলুন নিয়ে নিলো। বেলুনগুলো হাতে পেয়েই মহানন্দে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো আরু। রাফিন ভাবলেশহীনভাবে পাঁচশ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলো বেলুন বিক্রেতাকে। আরু হাসি হাসি মুখ নিয়ে আবারও হাতটা আকঁড়ে ধরে বললো,
— চলুন!
আরু হাঁটতে হাঁটতেই নিজের বামহাতের সাথে বেলুনের সুতোগুলো বেঁধে নিলো। বাম হাতটা একটু ঝাঁকিয়ে বেলুনগুলো একবার দেখে নিয়ে আবারও বলে উঠলো সে,
— আচ্ছা? আপনি এতো মারপিট কোথায় শিখেছেন? আমিও শিখবো। তারপর ঢিসুম ঢিসুম করে সব্বাইকে মারবো। (একটু ভেবে) না, সবাইকে মারবো না। শুধু মিলনকে মারবো। এই ছেলেটা খুব বাজে। খুব বিরক্তি করে আমায়। কলেজ গেইট থেকে বেরুতেই কি বিশ্রী বিশ্রী কথা বলে। মাঝে মাঝে তো কান্নায় পেয়ে যায়…..
আরুর কথার মাঝপথেই একটা ছেলে এসে গা ঘেঁষে চলে গেলো। গলার ব্যান্ডেজটাতেও ব্যাথা লাগলো হালকা। আরু গলার ব্যান্ডেজে হাত রেখে ছোট্ট করে, “আহ” বলেই রাফিনের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। রাফিন ভ্রু কুঁচকালো। একবার আরুর দিকে তাকিয়েই পেছন ফিরে তাকালো সে। এতো ভীরের মাঝে একজনকে খুঁজে বের করাটা বড্ড কঠিন। কিন্তু যেখানে বিশজনের চোখ একদিকে থাকে সেখানে চোখের আড়াল হওয়াটা আরো বেশি কঠিন। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই ছেলেটাকে ধরে রাফিনের ঠিক সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো। ছেলেটাকে দেখেই রাফিনের পেছনে গিয়ে শার্ট আঁকড়ে ধরে দাঁড়ালো আরু। ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— এই ছেলেটা ওই বাজে ছেলেটার বন্ধু। আপনাকে বললাম না? মিলন নামে ছেলেটার কথা? এটা ওর চামচা…কি বিশ্রী চাহনী! ছিহ!
কথাটা বলেই মুখ কুঁচকালো আরু। আরুর কাজে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাফিন। রাফিনের ধারনা ছিলো আরু খুব সাহসী মেয়ে সে কাউকেই ভয় পায় না বা ভয় কি তা সে জানেই না। কিন্তু ব্যাপারটা ভুল। আসল কথা হলো, আরু রাফিনকে ছাড়া আর সবাইকে ভয় পায়। কথাটা ভেবে খানিকক্ষণ স্পিচলেস হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাফিন। রাফিন কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না একটা গলির গুন্ডাকে যে এতো ভয় পায় সেই মেয়েটা তারমতো একটা গ্যাংস্টারকে ভয় পাচ্ছে না কেন? একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রাফিন। ছেলেটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— নাম কি?
— লিমন।
— ওকে টাচ করলি কেন? মেয়ে দেখলেই শরীর চুলকায় নাকি?
কথাটা বলেই আরুর দিকে তাকালো রাফিন। ডানহাতে আরুর হাত ধরে টেনে পেছন থেকে সামনে এনে বলে উঠলো,
— ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে আসো। যাও…
কথাটা শুনে ছেলেটির দিকে তাকালো আরু। ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আবারও
রাফিনের পেছনে গিয়ে লুকালো আরু। ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— ওকে তাড়িয়ে দেন। ওকে আমার ভয় লাগে।
আরুর কথায় চরম রকম বিরক্ত হলো রাফিন। ছেলেটাকে হাতের ইশারায় কাছে আসতে বলেই গালে বসালো এক চড়। এক চড়েই ছিটকে পড়লো ছেলেটি। আবারও তাকে তুলে এনে দাঁড় করানো হলো রাফিনের ঠিক সামনে। রাফিন পকেটে হাত ঢুকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো,
— আমাকে চিনিস?
ছেলেটি মাথা নেড়ে দুর্বল গলায় বললো।
— না। চিনি না।
— রাফিন চৌধুরীকে চিনিস?
— জি ভাই।
ছেলেটি “জি ভাই” বলার সাথে সাথেই পেছন থেকে ছেলেটির কোমর বরাবর লাথি মারলো কেউ। মাথার চুলগুলো টেনে ধরে বললো,
— শালা! রাফিন চৌধুরীকে চিনিস আর উনাকে চিনিস না? ইনিই রাফিন চৌধুরী।
ছেলেটি হতবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। সে কখনো ভাবতেই পারে নি এই ছেলেটা রাফিন চৌধুরী হতে পারে। নাম তো অনেক শুনেছে কিন্তু চোখে ক’জনই বা দেখেছে তাকে? রাফিন এবার শার্টের কলারটা টেনে ঠিক করে একটু নিচু হয়ে বলে উঠলো,
— মেয়েদের ডিস্টার্ব করবি খুব ভালো কথা। কিন্তু মেয়েটির পাশে কে আছে তা দেখে তারপর…আন্ডারস্ট্যান্ড?
কথাটা বলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো রাফিন। পাশে দাঁড়ানো ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
— আসিফ? এইটাকে নিয়ে যা এখান থেকে। মুডটা এমনিই চরম খারাপ আর খারাপ করিস না। গো।
— জি আচ্ছা ভাই।
ছেলেটাকে নিয়ে চলে যেতেই মুখ তুলে তাকালো আরু। রাফিনের হাতটা শক্ত করে ধরে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলে উঠলো,
— ওইতো নাগরদোলা। চলুন চলুন…
রাফিনকেও নাগরদোলায় উঠতে হলো। আরুর অযাচিত চিৎকারও শুনতে হলো। নাগরদোলায় এমন কি আছে যাতে করে চেঁচিয়ে গলা ফাঁটাতে হবে জানা নেই রাফিনের। আরুকে নিয়ে নাগরদোলা থেকে নেমেই নিজের ডান হাতের দিকে নজর দিলো সে। হাতটায় নখের অসংখ্য দাগ….যে দাগগুলোর মালিক আরু ছাড়া আর কেউ নয়। ফর্সা হাতটাতে নখের দাগগুলো একদম টকটকে লাল। আরু আরও কিছুক্ষণ ঘুরলো অবশেষে রাফিনের কাঁধে মাথা রেখে ক্লান্ত গলায় বলে উঠলো,
— দশটা বেজে গেছে, তাই না? চলুন বাসায় যাবো। বাবা বাসায় একা।
আরু কথা বলছে আর হাঁটছে। রাফিন বরাবরের মতো শুধু চুপচাপ শুনেই চলেছে। মেইন রাস্তায় এসে রাফিনের হাতটা ছেড়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো আরু। কিছুটা গিয়ে আবারও ফিরে তাকালো, দৌড়ে রাফিনের সামনে এসে হাতটা ধরে বলে উঠলো,
— রাতের বেলা ফাঁকা রাস্তায় হেঁটেছেন কখনো? দারুন লাগে…. আপনি কিন্তু আজ ট্রাই করতে পারেন। আমার বাসা এখান থেকে হেঁটে যেতে পনেরো মিনিট। এই পনেরো মিনিট আমার সাথে হাঁটবেন চলুন। আমার একা হাঁটতে একদমই ইচ্ছে করছে না।
রাফিন এবারও নিশ্চুপ সঙ্গী। রাফিন কেন যে আরুকে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে জানা নেই তার। মনটা খারাপ ছিলো খুব। হঠাৎ আরুকে পেয়ে মন খারাপ ভাবটা আরুর মাঝে ঢেলে দেওয়ারই প্রয়াশ ছিলো তার। মনটা ভালো হয়েছে কি না জানে না সে তবে সারাদিন “ভাই” আর “মারামারি-কাটাকাটির” কথা শুনে অভ্যস্ত কানটা আরুর গুরুত্বহীন কথায় যে একটু স্বস্তি পেয়েছে তা স্পষ্ট। প্রতিটি মানুষের মনই একটা পর্যায়ে এসে কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যস্ত হতে চায় অগোছালো কিছু সময়ে। সেই সময়ের স্থায়িত্ব খুব অল্প কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়,, খুব বেশিই প্রয়োজনীয়।
২৩.
সকাল ১১ টা প্রায়। তাড়াহুড়ো করে বিছানা ছাড়লো মৃন্ময়। ১১ টার মধ্যে স্টুডিও তে যেতে হবে তাকে অথচ ঘড়ির কাটা এখন এগারোর ঘরে। সোহেল নামক ছেলেটার প্রতি প্রচন্ড রাগ লাগছে তার। মৃন্ময়ের রাগটা বরাবরই বেশি কিন্তু অন্যদের চোখে ধরা পড়ে না বললেই চলে। সবার জানা মতে মৃন্ময় খুবই শান্ত এবং ভদ্র ছেলে। কিন্তু ব্যাপারটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। মৃন্ময় খুবই আলাদা ধরনের মানুষ। নিজের ওপর ৯৯% নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে সে। মাথা গরম হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিতেও তাকে দেখায় শান্ত, স্বাভাবিক। মৃন্ময়কে কেউ কখনও স্ল্যাং ইউজ করতে দেখে নি বা কারো সাথে উচ্চবাচ্যও করে না কখনো। রাগ মাখা রাঙা চোখ মৃন্ময়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সিগারেট,নেশা আর মেয়ে জাতীয় কোনো দুর্বলতা মৃন্ময়ের মাঝে বিন্দুমাত্রও নেই। ঠান্ডা মাথায় মিষ্টি বুলিতে অপমান করার টেকনিকগুলো বেশ ভালোই জানে মৃন্ময়। মানুষের ব্রিথিং স্পিড, কন্ঠের ওঠানামা, চোখের দৃষ্টি এসব দেখেই একটা মানুষের মাঝে কি চলছে তা বুঝতে পারে মৃন্ময়। সাধারণ মানুষের চেয়ে চিন্তার গতি তার কয়েকগুণ। কোনোরকম শাওয়ার নিয়ে একটা শার্ট পড়তে পড়তে বেরিয়ে গেলো মৃন্ময়। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতেই গাড়ি ছুটিয়ে চলেছে মৃন্ময়। মাথায় চলছে “এলিনা” নামের মেয়েটা। মেয়েটার উদ্দেশ্যটা কি হতে পারে তাই ভাবছে সে। সেদিন বাড়িতে ঢুকতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য এলিনাকে চোখে পড়েছিলো তার। এলিনা স্ট্রেট বসে ছিলো। হাতে ছিলো উল্টো করে ধরা ম্যাগাজিন। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম আর চোখের দৃষ্টি অস্থির। মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো সে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু কিসের ভয়? মৃন্ময়ের ভয়? মৃন্ময়কে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই তাহলে? মেয়েটার সোফায় বসে থাকাটাও স্বাভাবিক ছিলো না। কেউ ওভাবে স্ট্রেইট হয়ে বসে ম্যাগাজিন পড়ে না। ম্যাগাজিন বা খবরের কাগজ মানুষ আগ্রহের তাড়নায় বা সময় কাটানোর জন্য পড়ে থাকে। আর তখন মানুষের বসার ভঙ্গিটা থাকে আরাম আরাম ভঙ্গি। বসা থাকা দেখেই চট করে বোঝে ফেলা যায় যে মানুষটি বেশ আরাম পাচ্ছে। কিন্তু এলিনার মধ্যে তেমনটা ছিলো না। আর যেহেতু তার ম্যাগাজিনটাও উল্টো ছিলো তারমানে সে ম্যাগাজিনটা পড়ছিলো না। সে কিছু একটা লুকচ্ছিলো, কিন্তু কি? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই একজায়গায় চোখ আটকে গেলো মৃন্ময়ের। সেই দিনের পার্কটাতেই কিছু বাচ্চারা হৈহৈ করে বৃষ্টিতে ভিজছে আর তাদের সাথে আছে একটি মেয়ে। নীল শাড়ি আর হাঁটুর নিচ পর্যন্ত নেমে যাওয়া লম্বা চুলের মেয়েটা যে রোজা তা মুহূর্তেই বুঝে গেলো মৃন্ময়। নিজের অজান্তেই থেমে গেলো গাড়ি। জানালার কাঁচটা নামিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো দূরের ওই বৃষ্টিতে। রোজার এই লাফালাফি আর আনন্দ দেখে মনে হচ্ছে বৈশাখ মাসের এই বৃষ্টিটা হয়তো বড্ড মিষ্টি, বড্ড সুন্দর। বাচ্চাদের সাথে হাসি-মজার এক ফাঁকে রোজার চোখ পড়লো ওই রাস্তায়। চোখদুটো ছোট ছোট করে কপাল কুঁচকে তাকাতেই ঝাপসা দেখতে পেলো মৃন্ময়ের ওই মুখ। রোজা বাচ্চাদের বিদায় দিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। রোজাকে হুট করে সামনে চলে আসতে দেখে থতমত খেয়ে গেলো মৃন্ময়। এই মেয়েটা এমন কেনো বুঝে না মৃন্ময়। এই মেয়েটা সামনে এলেই তার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা ছেলে বলে বোধ হয় বারবার। নিজের বুদ্ধিমত্তা নামক ষষ্ঠইন্দ্রিয়টা মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় একদম। জানালার কাঁচে টোকা পড়ায় ভাবনার ঝুলি ফেলে সচকিত চোখে তাকালো সে। রোজা তার ভেজা ভেজা ঠোঁট নাড়িয়ে বলে উঠলো,
— আরে, আপনি এখানে? বৃষ্টি দেখছিলেন বুঝি?
মৃন্ময়ের বলতে ইচ্ছে করছিলো, “নাহ! বৃষ্টি নয় আপনাকে দেখছিলাম মিস. রোজা।” কিন্তু কথাটা বলা হয়ে উঠলো না আর। ঠোঁটে হালকা হাসির পরশ নিয়ে বলে উঠলো,
— হুম। দেখছিলাম। বাচ্চাদের বৃষ্টিবিলাসটা কতো আনন্দের। কিন্তু আপনি এখানে? বৃষ্টিতে ভিজতে এসেছেন নাকি?
— আরে ধুর! বৃষ্টিতে কেউ ভিজতে আসে নাকি? আমি তো গিয়েছিলাম রিদের স্কুলে। গার্ডিয়ান মিটিং ছিলো। বাবা নিজের কাজে ব্যস্ত। আর মায়ের মাইগ্রেনের ব্যাথা, তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই আসতে হলো। রিক্সা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম তখনই শুরু হলো বৃষ্টি। বাচ্চারা এতো মজা করে ভিজছিলো আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি। আপনিও আসুন না? দারুন লাগবে…
— পাগল নাকি? কতো কাদা চারপাশে। তারওপর মাঝরাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজলে কাল নির্ঘাত খবরের হেডলাইনে চলে আসবো আমি।
কথাটা বলেই হালকা হাসলো মৃন্ময়। রোজা ঠোঁট উল্টিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
— আপনাদের জীবনটা পুরো আলুর সিঙ্গারার মতো। উপরের টুকু খুব টেষ্ট কিন্তু ভেতরের টুকু একদম বিশ্রী।
রোজার কথায় হেসে উঠলো মৃন্ময়। হাসি হাসি মুখ নিয়েই বলে উঠলো,
— কি রকম?
রোজা কিছুক্ষণ ভেবে দুষ্টু হেসে বললো,
— আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজলে বলবো। নয়তো বলবো না।
ভ্রু কুঁচকালো মৃন্ময়। রোজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারও হেসে উঠলো সে। মুচকি হেসে বললো,
— আপনি সব সময়ই লোভ দেখান মিস.রোজা। সেদিনও বলেছিলেন “এক মুঠো রোদ” দিবেন। কই দিলেন না তো!তাহলে আজ কি করে বিশ্বাস করি বলুন?
রোজা কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর বললো,
— আচ্ছা বেশ। আপনার ওই টাক্কু পি.এর চুলের কসম। যদি এবারও না বলি তাহলে সবকটা চুলই ওঠে যাবে তার। একদম পাক্কা ছক্কা। ওকে?
রোজার কথায় মাথা নিচু করে হাসলো মৃন্ময়। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বললো,
— ঠিক আছে। কিন্তু এখানে? আমরা কি সেদিনের ওই জায়গাটায় যেতে পারি না মিস.রোজা?
— পারি। কিন্তু রিক্সা কোথায় পাবো এখন?
— আজ নাহয় গাড়িতেই চলুন।
— একদম না। আপনার গাড়ি ভিজে যাবে। আমার গা ভিজে চুপচুপে। তারচেয়ে বরং বেরিয়ে আসুন৷ সামনে এগুলো পেয়ে যেতেও পারি। তাছাড়া রিক্সায় চড়ে বৃষ্টিবিলাসের মজাই আলাদা। কি বেরুবেন?( ভ্রু নাঁচিয়ে)
মৃন্ময় মিষ্টি হাসলো। সিট বেল্টটা খুলে বেরিয়ে এলো চুপচাপ। আজ তার মাথায় ক্যাপ নেই। মুখে মাস্কও পড়ে নি। গায়ে কফি কালারের শার্ট। রাস্তা অনেকটায় ফাঁকা দু’একটা গাড়ি ছাড়া পথচারী নেই বললেই চলে। এই বৃষ্টি স্নিগ্ধ দুপুরে রোজার পাশাপাশি হাঁটতে বেশ লাগছে মৃন্ময়ের। কিছুটা এগিয়ে যেতেই রিক্সা পেয়ে গেলো তারা। রিক্সাচালককে ডাবল ভাড়া দিয়ে ছুটে চললো উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে। রিক্সার হুড ফেলে দেওয়া হয়েছে, বৃষ্টি পড়ছে অবিরাম। দু’জনের ভেজা শরীর রিক্সার ঝাঁকিতে মিশে যাচ্ছে বারবার। আজও মৃন্ময়ের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে রোজা। আর মৃন্ময় চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে বসে আছে চুপচাপ। গায়ে হাজারও পানি ছিঁটা থাকলেও গলাটা শুকিয়ে কাঠ। এতো এতো মেয়ের সংস্পর্শে এসেও রোজার ছোঁয়াটাই তাকে এতো কাঁপাই কেনো বুঝে না মৃন্ময়। হৃদপিন্ডটা বুঝি বেরিয়ে আসবে এক্ষুনি। এক পশলা জলের ছিঁটায় চোখ মেলে তাকালো মৃন্ময়। কানে ভেজে উঠলো মন্ত্রমুগ্ধ করা সেই খিলখিল হাসি। মৃন্ময় আড়চোখে তাকালো, ভেজা শাড়িতে রোজাকে খুব আবেদনময়ী লাগছে আজ। উচ্ছ্বসিত এক কিশোরীর সাথে পরিপূর্ণ এক নারী রূপে ফুটে উঠেছে রোজা। মৃন্ময়ের ভাবতেই অবাক লাগছে রোজার মতো সাধারণ একটা মেয়ের জন্য এক সপ্তাহ ধরে পরিকল্পিত মিটিংটিই সে ভেস্তে দিলো আজ। রোজা হাসি থামিয়ে মৃন্ময়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— চোখ বন্ধ করে কাকে নিয়ে এতো ভাবছেন মিষ্টার হিরো? গার্লফ্রেন্ড?
মৃন্ময় হাসলো। রোজা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় ছেলেটা এতো চমৎকার করে কি করে হাসে বুঝে না রোজা। কথায় কথায় হাসে। হাসি ছাড়া কি এই ছেলেটার মাঝে কিছু নেই? রাগ? জেদ? মৃন্ময়ের কথায় ভাবনার প্রহর কাটলো রোজার। মৃন্ময় কপালে পড়ে থাকা একগুচ্ছ চুল পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে বলে উঠলো,
— মিস. রোজা? আপনি যে বারবার আমায় মিষ্টার হিরো, মিষ্টার হিরো বলেন তা কিন্তু ঠিক নয়। আমি ছোট থেকেই একজন সিংগার। বলতে গেলে প্রফেশনাল সিংগার। চলচিত্রে আসাটা সম্পুর্নটায় জোরজবরদস্তির উপর। ডিরেক্টর ময়নুল রায়হান একদম আঠার মতো লেগে গিয়েছিলেন অভিনয় করার জন্য। তাই বাধ্য হয়েই রাজি হয়ে যাই। আর ভাগ্যক্রমে মুভিটাও হিট হয়ে যায় তারপর থেকে বাড়ে আরো চাপ। সিনেমা জগৎ এ আমি মাত্র দু’বছরের মেহমান।
— তাতে কি? এই দু বছরেই তো সাত সাতটা মুভি করে ফেলেছেন। তবে আপনাকে সিংগার থেকে হিরো হিসেবেই বেশি মানায়। একদম কিউট পোলা….আপনি মুভি করলে তো এমনিতেই হিট। সব মেয়েরা “হা” করে তাকিয়ে থাকে।
— আর আপনি?
কথাটা বলেই থতমত খেয়ে গেলো মৃন্ময়। ধেৎ কি বলতে কি বলে ফেললো সে?
# চলবে….
(সারাদিনে কাজের ফাঁকে এই গল্পটাই একটু লিখতে পারছি। তোকে চাই কাল দিবো।)
#part_13
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943492836500844/
#part_11
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943492439834217/