এক মুঠো রোদ পর্ব-৩৪

0
934

#এক_মুঠো_রোদ
#Writer_নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা
#part_34
#collected Sk Galib
আকাশে একচ্ছত্র অন্ধকার। ঘন অন্ধকারকে চিরে মেঘের সাগরে হাবুডুবু খেয়ে একফালি ক্লান্ত চাঁদ দেখা দিয়ে চলেছে থেকে থেকে। পাহাড়ী বনু বাতাসটাও হোটেলের গা স্পর্শ করে অভিমানে থমকে দাঁড়াচ্ছে, আবারও ফিরে যাচ্ছে বহুদূরে। তারসাথেই ছুটে চলেছে রোজার মন। প্রায় একঘন্টা হতে চললো বান্দরবান এসে পৌঁছেছে তারা। কিন্তু অজানা এক কারণে ভীষণ অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে৷ হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে, ঠিক নেই। কিছু একটা ঠিক নেই। ভেতরটা তেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কিন্তু কার জন্য এতো অস্থিরতা তার? রোজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। লম্বা সিক্ত চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে অন্ধকার আকাশে তাকায়। আকাশটাকেও রোজার মনের মতোই কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ। এই অন্ধকারেও সেই শূন্যতাটা কতোই না দৃষ্টিবহ। রোজা বিছানায় গিয়ে বসলো। ফোনটা হাতে নিয়ে কি মনে করে রিদকে ফোন লাগালো। ফোনটা দু’বার বেজে কেটে গেলো। ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে একবার ফোনের দিকে তাকালো রোজা। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবারও ডায়াল করলো সে।
____________
রিদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে দারুন একটি খেলা খেলছে সে। তাদের স্কুলের মজিদ স্যার বলেছিলেন —– ইউ ক্যান সি এভ্রিথিং ইন ইউর মাইন্ড। মনের একাত্মতা আর ইচ্ছে থাকলে যেকোনো বিষয় কল্পনার মাধ্যমে নিজের চোখের সামনে উপলব্ধি করতে পারবে তুমি। মজিদ স্যারের কথার ভিত্তিতেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে রিদ। এই মুহূর্তে ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে হওয়া “বিগ ব্যাঙ” অর্থাৎ “মহাবিস্ফোরণ” কে দেখার চেষ্টা করছে সে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার পর পরই বিরক্তিতে চোখ মেলে তাকালো রিদ। পায়ের প্লাস্টারের নিচে কিছু একটা কুটকুট করে কামড়াচ্ছে। রিদ ভ্রু কুঁচকে বামপায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভাবলো। তারপর চোখ বন্ধ করে হাবলের নীতি নিয়ে ভাবতে লাগলো। সেদিন মজিদ স্যার বলেছিলেন,
—“{\displaystyle v=H_{0}D\,}
যেখানে,
{\displaystyle v} হলো, ছায়াপথ বা অন্যান্য জ্যোতিষ্কের প্রাস্থানিক বেগ (recessional velocity)।
{\displaystyle D} হলো বস্তুটির দূরত্ব।
এবং{\displaystyle H_{0}} হলো….. ” মনে মনে এটুকু আওড়াতেই আবারও ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো তার। ফোনটা বাজছে। রিদ বিরক্ত হয়ে ডানপাশের বেডসাইড টেবিলটির দিকে তাকালো। ফোনে “আপু” শব্দটা ভাসতেই মুখে হাসি ফুটলো রিদের। খুশিমনে ফোনটা তুলতে গিয়েই নিজের ভাঙা হাতের কথা মনে পড়লো তার। ডানহাতটা প্লাস্টার করে বুকের সাথে সিটিয়ে রাখা হয়েছে। ফোনটা ডানপাশের টেবিলে হওয়ায় আপাতত রিসিভ করা একদমই সম্ভবপর নয়। রিদ একটু নড়েচড়ে টেবিলের দিকে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করতেই সারাটা শরীর যেন ব্যাথায় কুঁচকে গেল। সেদিন রিক্সা এক্সিডেন্ট করে খুব বাজে ভাবে বাম পা’টা ভেঙে গিয়েছে রিদের। ডান পা’টাও মচকে গিয়েছে। কোমরের কাছেও হালকা পাতলা আঘাত পেয়েছে। মাঝে মাঝেই তীক্ষ্ণ শীতল ব্যাথা শুরু হয় কোমরের ডানপাশের হারে। রিদ চেঁচিয়ে ডাকলো,
—” মা? মা?”
ছেলের ডাকে সুলতানা বেগমের সারা পাওয়া গেলো না। রিদ মুখ কালো করে আরো একবার ফোনের দিকে তাকালো। বাজতে বাজতে ইতোমধ্যেই কেটে গেছে কল। এমন সময় দরজার বাইরে কমলকে চোখে পড়লো। রিদ উচ্চস্বরে ডাকলো,
—” কমল? এই কমল? এই দিকে আয়।”
কমলের মাঝে তেমন কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ঘাড় চুলকালো সে তারপর ধীর গতিতে দরজায় এসে দাঁড়ালো,
—” জে ভাইজান?”
—” এই? জে আবার কি? তোকে না বলেছি “জে” বলবি না। বল জ্বি। কি হলো বল?”
রিদের কথায় বেশ বিরক্ত হলো কমল। দায়সারা ভাবে বললো,
—” জ্বি বললেই কি হবো ভাইজান? জ্বি বললে কি কামের মাইয়া থাইকা নায়িকা হইয়া যামু আমি?”
রিদ উত্তর দিলো না। ভ্রু কুঁচকে বললো,
—” একদম চাঁপা ঝাড়বি না। এদিকে এসে ফোনটা আমার বামহাতে তুলে দে তো। জলদি কর…”
রিদের কথার মাঝে আবারও ফোন বেজে উঠলো। কমল আলস্যভঙ্গিতে ফোনটা নিয়ে ধরিয়ে দিলো রিদের বাম হাতে। রিদ ওকে যেতে বলে ফোনটা তুলে ঝটপট বললো,
—” কেমন আছো আপু?”
—” সেটা পরে বলছি। আগে বল, ফোন তুলতে এতো লেইট হলো কেন? সত্যিকারের আইনস্টাইন হয়ে সূত্র আবিষ্কার করতে লেগে গিয়েছিলি বুঝি?”
রিদ মিষ্টি করে হাসলো। হাসিমাখা গলায় বললো,
—” হুম করছিলাম তো। হাত আর পায়ের কয়টা হার ভেঙেছে তা সহজে বুঝে ফেলার দারুন একটা সূত্র আবিষ্কার করছিলাম।”
—” তাই নাকি? কি সেই সূত্র? আর হঠাৎ করে হার ভাঙার সূত্র আবিষ্কারের কারণ?”
—” ওহ! তোমাকে তো বলায় হয় নি। দু’দিন আগে রিক্সা উল্টে পা আর হাত ভেঙে ফেলেছি আমি। ”
রোজা আৎকে উঠে বললো,
—” সেকি? আমি ঢাকার বাইরে আসতেই অঘটন ঘটিয়ে শুয়ে পড়লি? আচ্ছা শয়তান তো তুই।”
কথাটা বলে থামলো রোজা। রিদ হাসছে। রোজা এবার নরম গলায় বললো,
—” খুব ব্যাথা লাগছে ভাই? একটু সাবধানে চলাচল করবি তো? বাবা বাসায় আছেন? ভালো ডক্টর দেখিয়েছিস তুই?”
রিদ হেসে বললো,
—” একটা ট্রাক এসে হঠাৎ ঠুকে দিলো। বাবা বললো, ফুটপাতে পড়ায় বেঁচে গেছি। আমার কি মনে হয় জানো, আপু? লোকটি ইচ্ছে করে ঠুকে দিয়েছে।”
রোজার কপাল কুঁচকে এলো। সেদিনের কুকুরের ঘটনাটা মস্তিষ্কে আঘাত করছে ক্রমাগত।কয়েকদিনের মাঝে পরপর দুটি ইন্সিডেন্ট তাও আবার রিদকে কেন্দ্র করে। ব্যাপারটা কি একটু বেশিই কাকতালীয় হয়ে যাচ্ছে না? রোজা হাতের পিঠ দিয়ে ঘাম মুছে। বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে তাকে। রিদের কথায় ভাবনার সুঁতো কাটলো রোজার। সচেতন হয়ে বললো,
—” হুম বল।”
—” কখন থেকে ডাকছিলাম, কথা বলছিলে না কেন? আচ্ছা আপু? কবে আসবে তুমি? ”
রোজা স্মিত হেসে বলে,
—” জলদি ফিরে আসবো ভাই।”
রিদ খুশি হয়ে বললো,
—“তাহলে তো বেশ হবে। দেখো, তুমি আসলেই ভালো হয়ে যাবো আমি।”
রোজা হেসে ফেললো। কপাল কুঁচকে বললো,
—” তাই নাকি?”
—” হুম তো। তোমার কাছে তো ম্যাজিক আছে আপু। তুমি পাশে বসলেই সব ঠিক। রাতের বেলা একদমই ঘুম হয় না আমার। একা একা ভয় লাগে আপু। তুমি থাকলে একদমই ভয় লাগবে না। তাড়াতাড়ি এসো…”
রোজা রুদ্ধ কন্ঠে বললো,
—” তাড়াতাড়ি আসবো ভাই। খুব তাড়াতাড়ি। ”
৬৪.
রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয়াল ঘড়িতে একটার ঘন্টা বাজলো। রাফিন মাত্রই বাড়িতে ডুকছে। সারাদিন নানা ঝামেলায় জীবনটায় শেষ তার। হসপিটালে একজন বিদেশি সার্জন এসেছেন। তারসাথে মিটিং শেষ করে বস্তির ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হয়েছে তাকে। বস্তির কাজটা পিছিয়ে যাওয়ায় বেশ লস হয়ে যাচ্ছে তার। তারওপর বিভিন্ন কনস্ট্রাকশনে চোখ বুলানো। গোল্ডের চুরাচালান নিয়েও কতো হাবিজাবি কাজ করতে হয়েছে তাকে। বাড়িতে ঢুকে টাই টা ঢিলে করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে রাফিন। গলা উঁচিয়ে বলে,
—“সুলাল? সুলাল?”
রাফিনের ডাকে ঘুমু ঘুমু চোখের মধ্যবয়স্ক একটি লোক বেরিয়ে এলো। ইতস্তত গলায় বললো,
—” জ্বি স্যার।”
—” একটা কড়া কফি দাও তো। ”
—” আচ্ছা স্যার। স্যার? ডিনার করবেন? খাবার দিবো টেবিলে?”
—” না। এতো রাতে আর খাবো না। তুমি এক কাপ কফি দিয়ে যাও। আমি শাওয়ার নিবো। কফিটা রুমেই রেখে যেও…”
সুলাল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর দ্রুত রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়। রাফিন শাওয়ার নিয়ে কফি হাতে ছাঁদের দিকে পা বাড়ায়। কফি খাওয়ার সময়টুকু সবসময় ছাঁদেই কাটায় রাফিন। রাতের অন্ধকারে ভয়ঙ্কর একাকিত্বটা ভীষণ টানে ওকে। কিন্তু আজ অন্যরকম কিছু হলো। ছাঁদে পা দিয়েই রেলিং এর পাশে দাঁড়ানো কোনো নারীর ছায়া পড়লো চোখে। নিজের অজান্তেই ভ্রু কুঁচকে এলো রাফিনের। তার বাড়িতে মেয়ে? কিভাবে? রাফিন আরো খানিকটা এগিয়ে গেলো। সাথে সাথেই কানে এলো সুরেলা কিন্নর কন্ঠ,
—“দে দে পাল তুলে দে
মাঝি হেলা করিস না
দে দে পাল তুলে দে
মাঝি হেলা করিস না
ছেড়ে দে নৌকা
আমি যাবো মদিনা
তুই ছেড়ে দে নৌকা
আমি যাবো মদিনা
দে দে পাল তুলে দে
মাঝি হেলা করিস না
দে দে পাল তুলে দে
মাঝি হেলা করিস না
ছেড়ে দে নৌকা
আমি যাবো মদিনা
তুই ছেড়ে দে নৌকা
আমি যাবো মদিনা….”
রাফিন থমকে দাঁড়ালো। হঠাৎ করেই আরুর কথা মনে পড়লো তার। আরুর দিকে এগিয়ে নেওয়া পা’টা দু কদম পিছিয়ে এনে সিগারেট ধড়ালো সে। কফির কাপটা টেবিলে রেখে চেয়ারে টেনে আরাম করে বসলো। সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে স্বাভাবিক গলায় বললো,
—” এতো রাতে ছাঁদে কি করছো আরু?ভয় লাগে না?”
আরু উত্তর দিলো না। গানটা থামিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। আরুর দৃষ্টি অনুসরণ করে রাফিনও দৃষ্টি রাখলো আকাশে। আকাশটা আজ অন্ধকারে ঢাকা। চাঁদ তো নেইই সাথে তারাদেরও দেখা নেই আজ। রাফিন কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কপাল কুঁচকে আরুকে পর্যবেক্ষণ করে। এই অন্ধকার আকাশে কি খুঁজে মেয়েটা? রাফিন কফির কাপ নামিয়ে আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ে,
—” ঘুমোও নি কেন আরু? এতো রাতে মেয়েদের ছাঁদে থাকতে নেই। যাও,ঘুমুতে যাও।”
আরু চুপচাপ নিচে নেমে যায়। রাফিন অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও কফিতে চুমুক দেয়। আরুকে দিন দিন ভীষণ অদ্ভুত লাগছে রাফিনের। মেয়েটা কি কথা বলতে ভুলে গেছে? সেদিন গ্রামের বাড়িতেই আরুর মুখের শেষ বুলি শুনেছিলো সে। তারপর থেকেই বিষাক্ত নিশ্চুপতায় ছেঁয়ে গেছে ওর মন। আরুর মতো একটা চঞ্চল মেয়ের হঠাৎ থেমে যাওয়াটা যেন যত্নে গাঁথা সুরের হঠাৎ ছন্দপতন। বড্ড অস্বাভাবিক! রাফিনের জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো হঠাৎ ছন্দপতনের বিষে শোষিত হতো কিন্তু বেখেয়ালি রাফিন ব্যাপারটাকে পাত্তা দিলো না। কপালের চিন্তার ভাজটা আরো স্পষ্ট করে তুলে ডিরেক্টর আর মৃন্ময়ের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। আরো একটা সিগারেট ধরিয়ে নাক-মুখ দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করলো সে,
—” ডিরেক্টরের সাথে মৃন্ময়ের শত্রুতাটা কি? আর মৃন্ময়ই বা কি খুঁজছে? মৃন্ময়ে অনুসন্ধান অভিযানে রোজায় বা কেন? আশ্চর্য!”
_______________
নিজের রুমের এককোণে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরু। নিজেকে কেমন অনুভূতি শূন্য লাগছে তার। রাগ,বিরক্তি,ভয় সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে অদ্ভুতভাবে শূন্যে মিশে গেছে সব। আরুর মনে হচ্ছে সময়টা যেন আটকে আছে। যাচ্ছে না, কিছুতেই না। রাফিন তাকে পরিবারের বদলে আভিজাত্য দিয়েছে, রেসপেক্ট দিয়েছে তারসাথে দিয়েছে একরাশ একাকীত্ব আর উদাসীনতা। এ বাড়ির সবাই আরুর সাথে কথা বলতে ভয় পায়। প্রয়োজন ছাড়া একবার উঁকিও দিয়ে দেখে না তারা। সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করা আরু আজ একদমই একা। আজকাল বাবা-ভাইয়ার কথাও ভাবে না সে। ভাবলেই তো যেতে ইচ্ছে করে, কষ্ট হয়। ভীষণ কষ্ট। আরু টেবিলের বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখে। অযথাই ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে। বইটা ছুঁড়ে ফেলে ঘড়ির দিকে তাকায় —– ২ঃ১০। আরু বিছানায় গিয়ে বসে আবারও উঠে দাঁড়ায়। আবারও বসে। সারাদিন একটা রুমে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসে তার। যদিও আসিফ তাকে বাগানে, লনে ঘুরে বেড়াতে বলেছে তবেও আরু যায় না। মনটা টানে না। সে রাফিনকে নিয়ে ভাবে। না, এই রাফিন নয়। আরু নিজের মতো করে রাফিনকে সাজায় আবার ভাঙে আবার গড়ে। মাঝে মাঝে সত্যিকারের রাফিন চোখের সামনে পড়লে বিরক্ত হয়। অসহ্য লাগে। এই রাফিন তো তার রাফিন নয়। আরুর রাফিন তো আরুকে খুব বুঝে। খুব।
# চলবে…

#part_35
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943509396499188/

#part_33
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943508899832571/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here