#প্রেমনোঙর_ফেলে,২৮,২৯
লেখনীতেঃ মিথিলা মাশরেকা
২৮.
প্রেমবায়বের সাথে সময় চলছিলো বেসুরোভাবে। ইচ্ছের দেখা না পাওয়ার দিনগুলো প্রাপ্তর কাছে রঙহীন ক্যানভাসের মতো কাটতে লাগলো। তবে প্রকাশ করাটা হয়ে ওঠেনি। মিষ্টিঘরের নতুন স্কুল তৈরীর কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে ওকে। তাছাড়া খই লক্ষনীয়ভাবে সবটার সাথে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে ইদানিং। মিষ্টিঘরের বাচ্চাদের সাথে হাসতে শেখা, পড়াশোনায় আগ্রহ, আচরন, অভিযোজন সবার সাথে ওর সাথেও টুকটাক কথা বলতে শুরু করেছে খই। এইতো সেদিনই! সাদিক সাহেব ছিলেন না বলে খই নিজে ওকে বলেছিলো পড়াতে। মানা করেনি প্রাপ্ত। বরং খুশি হয়েছিলো ওর পড়ার প্রতি জোর দেখে। তবে এটাও বেশ ভালোমতোই বুঝেছে, ইচ্ছের সাথে জরিয়ে গেছে ও। ইচ্ছেকে না দেখার অস্থিরতায় সুগভীর স্পষ্টতা, ওকে অনুভব করতে শুরু করেছে ও। মনেমনে সারাক্ষন ওকেই ভাবতে শুরু করেছে। না চাইতেও ইচ্ছে নামের এই বিপরীত স্রোতস্বীনিতে বাধা পরেছে ও। প্রেমনোঙরে। আজ অস্বীকার করার কিছুই নেই, ইচ্ছেকে ভালোবাসে ও।
এদিকে রাকীনের কথামতো নিজেকে সাজাতে শুরু করেছে খই। ওর নিজের কাছে এখন নিজেকেই নতুন লাগে। আয়নায় নিজেকে পরখ করে নিলো খই। গ্রামের সেই শাড়ি পেচিয়ে দৌড়ে বেরানো মেয়েটা আজ মার্জিত থ্রিপিসে। ফিতায় বাধা বিনুনির চুল আজ উচুতে রাবার ব্যান্ডে ঝুটি করা। সবটার জন্য নকশাদার দায়ী। মনেমনে কথাটা ভেবে মুচকি হাসলো খই। রুম থেকে বেরোতেই দেখে প্রাপ্তদের বাসার পেছনের বাগানে সাফোয়ানের সামনে একটা কাগজহাতে দাড়িয়ে মিষ্টি। খই কৌতুহলী হয়ে এগোতে লাগলো। মিষ্টি সাফোয়ানকে বলছে,
-আর কতোদিন উত্তরের অপেক্ষা করবি তুই?
-যতোদিন তুই উত্তর না দিবি।
-যদি আমার উত্তর না হয়, কি করবি?
-বলেছি তো। এখান থেকে চলে যাবো। তোর সামনে থাকার মুখ নেই আমার। বন্ধুত্বর মাঝে একপাক্ষিক ভালোবাসা টেনে দেওয়া, তাকে প্রতিনিয়ত মনে করাতে থাকা বিপরীতপাশের মানুষটার জন্য একপ্রকার অপমান। আমি তোকে অপমান করতে পারবো না। দুরে চলে যাবো তোর থেকে।
বড়বড় চোখে তাকালো খই। পরিস্থিতি বুঝে উঠতে সময় লাগলো না ওর। মিষ্টির দিকে তাকালো ও। এই মেয়েটাকে বুঝে ওঠে নি ও এখনো। কখনো মনে হয় প্রাপ্তকে আড়াল থেকে দেখে। কখনো মনে হয়, প্রাপ্তকেই আড়াল করে। মেয়ে হয়ে মেয়ের চাওনি এটুকো বুঝেছে ও। মিষ্টি ওর হাতের কাগজটা তুলে ধরলো সাফোয়ানের সামনে। ওটা দেখেই চুপ মেরে গেলো সাফোয়ান। নিজেকে সামলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাগজটা হাতে নিয়ে বললো,
-ট্রান্সফার লেটার? আ্ আচ্ছা, ভালো থাকিস।
এটুক বলেই সাফোয়ান পেছন ফিরলো। ও জানে, মিষ্টির দিকে তাকালে আরো দুর্বল হয়ে পরবে ও। খই মিষ্টির জবাবের কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। তবে সাফোয়ানের কষ্টটা বেশ বুঝতে পারলো। চলে আসবে বলে পা বাড়াতে যাচ্ছিলো সাফোয়ান। হুট করেই পেছন থেকে ওকে জরিয়ে ওর পিঠে মাথা ঠেকালো মিষ্টি। চমকে উঠলো সাফোয়ান। একইসাথে খইও। মিষ্টি আস্তেকরে বললো,
-যেখানে যাবি, আমাকে নিয়ে যা সাফোয়ান। তোর মতো আমিও অনাথ। আমারও কেউ নেই এখানে। তোকে লাগবে আমার। প্লিজ নিয়ে চল আমাকেও তোর সাথে। তোর করে!
সাফোয়ান থমকে গেলো। কি বুঝে মুচকি হেসে বুকের ওপর থাকা মিষ্টির হাতজোড়ার ওপর হাত রাখলো ও। চোখ বন্ধ করে নিলো আবেশে। পুরোটাই দেখে খুশিতে নেচে উঠলো খইয়ের মন। ও ছুটলো পিয়ালীকে সবটা বলবে বলে। একছুটে যেইনা পিয়ালীর ঘরে ঢুকেছে, বিছানায় স্কার্ফের এক টুকরো হাতে বসাবস্থায় প্রাপ্ত বলে উঠলো,
-আই লাভ ইউ।
ঠিক সে সময়েই ওই ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন সাদিক সাহেব। প্রাপ্তর কথাটা কানে গেছে তার। একপা পিছিয়ে প্রাপ্তর রুমের দরজা দিয়ে ভেতরে তাকালেন উনি। রুমে প্রাপ্ত খই ছাড়া আর কেউ নেই। সাদিক সাহেবের চোখ পরলো সোজা খইয়ের দিকে। তার ঠোটে খুশির হাসি। আর প্রাপ্তর চেহারায় মুগ্ধতা। হাসি ফুটলো সাদিক সাহেবের ঠোটেও। প্রাপ্তর জন্য ভুল কাউকে পছন্দ করেননি তিনি। কিছুটা দেরিতে হলেও, সেই হয়ে উঠেছে প্রাপ্তর ভালোবাসা, ওর সেই কল্পকন্যা, খই!
•
-বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে বলে, খেয়া ইচ্ছে করে হারিয়ে যায়নি ইচ্ছে। তোমার জন্যই ও হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে। ওর অভিমান করার কারন তুমি ছিলে। ওর না ফেরার জন্য দায়ী তুমি ইচ্ছে! তুমিই!
কথাগুলো বলে দুটো ছোটছোট স্বর্নের চুড়ি ইচ্ছের সামনে ছুড়ে মারলেন নাফিজা বেগম। সবে একটা প্রোগ্রাম শেষ করে বাসায় ঢুকছিলো ইচ্ছে। সিড়ি থেকে চুড়িদুটো গরিয়ে ওর পায়ের কাছে এসে ঠেকলো। এ দিনগুলো হাউজিং, মিউজিক সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ততায় কেটেছে ও। বড্ড ক্লান্ত লাগছিলো ইচ্ছের। তবুও ঝুকে মেঝে থেকে তুললো চুড়িগুলো। ড্রয়িংরুমে তাকিয়ে দেখে সোফায় বসা থেকে দাড়িয়ে গেছেন নওশাদ সাহেব আর রাজীব মাহমুদ। আর সিড়িতে দাড়িয়ে তীব্র ঘৃনা আর রাগে কাপছেন নাফিজা বেগম। ইচ্ছে বুঝলো তার আকস্মাৎ রাগের কারন। আজ আবারো রাজীব মাহমুদ ওর আর রাকীনের বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলতে এসেছেন হয়তো। চুড়িদুটো মুঠোতে নিয়ে ইচ্ছে শান্তস্বরে বললো,
-সিন ক্রিয়েট করো না এস এম। যা ভাবছো, তেমন কিছুই ঘটবে না। তুমিও জানো এটা।
রাগে নাফিজা বেগমের চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো এবার। কঠোরকন্ঠে বললেন,
-কি ঘটবে, কি ঘটবে না, সেটা তো সময় বলবে। কিন্তু আমি তোমাকে কোনোদিনও ক্ষমা করবো না ইচ্ছে! আমার মেয়েটাকে কেড়ে নিয়েছো তুমি আমার কাছ থেকে! কোল খালি করে দিয়েছো আমার তুমি!
-নাফিজা…
নওশাদ সাহেব কিছু বলবেন বলে এগোচ্ছিলেন। আজ তাকেও মানলেন না নাফিজা বেগম। হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
-আমাকে আজ আটকিও না নওশাদ! কি দোষ ছিলো আমার বলো? কি দোষ ছিলো? দুজন দুজনকে খুব বেশি ভালোবেসেছিলাম বলে বিবাহিত জেনেও তোমার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম। হ্যাঁ আক্রোশ ছিলো। তবে জীবিত থাকতে কখনোই কিন্তু ইচ্ছের মায়ের কোনো অধিকার খুন্ন হবে, এমন কোনো আবদার করিনি তোমার কাছে। এটা তো তুমিও জানো ইচ্ছে। সৎ হলেও আমার মেয়েটাও কিন্তু কখনো এতোটুকো কম ভালোবাসেনি তোমাকে আর তোমার মাকে। বরং বেশিই ভালোবাসতো। আমার চেয়েও বেশি।
ইচ্ছে চুপ রইলো। ভুল বলেনি নাফিজা বেগম। নিজের মায়ের চেয়ে খেয়ার কাছে ইচ্ছে আর ওর মাই বেশি প্রাধান্য পেতো বরাবর। আর তাই হয়তো প্রথম থেকেই ওর প্রতি এতো ক্ষোভ নাফিজা বেগমের। চুড়িদুটো মুঠোয় নিয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো ও। নাফিজা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,
-আর তার বিনিময়ে তুমি কি দিয়েছিলে ওকে ইচ্ছে? মনে পরে চৌদ্দ বছর আগের কথা? গায়ের রঙ একটু চাপা বলে আমার মেয়েটাকে এতো বাজেভাবে উপহাস করেছিলে তুমি, অভিমান করে এই বাসা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলো ও। মনে পরে?
ইচ্ছে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। চৌদ্দটা বছর হলো এই তিক্ত সত্য কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। অন্যান্যদিনের মতো রাকীন, ও আর খেয়া একসাথে পার্কে খেলছিলো সেদিনও। বয়সের দিক দিয়ে ইচ্ছে-রাকীন কিছুটা বড় হলেও খেয়া ছিলো শিশুসুলভ। চাপা গায়ের রঙ নিয়ে কথা শুনতে হতো বলে, সেভাবে কারো সাথে মিশতো না ও। রাকীন ইচ্ছেই ছিলো ওর কমফোর্ট জোন। আর সেদিন খেলতে খেলতে সেই ইচ্ছের কথাতেই হয়তো কষ্ট পেয়েছিলো খেয়া। রাকীন খেয়ার সাথে বেশি মিশতো বলে ইচ্ছে শুধু মজার ছলে খেয়াকে বলেছিলো, “এই গায়ের রঙ নিয়ে রাকীনের সাথে খেলা তোকে মানায় না খেয়া। কাল থেকে ফুটপাতের বাচ্চাদের সাথে খেলবি কেমন?” কথাটা বলার পর সেদিন ও আর রাকীন হাসাহাসি করেছিলো প্রচুর। পার্ক থেকে দুজন ফিরলেও এককোনে চুপচাপ বসে ছিলো খেয়া। আর ফেরেনি। ওকে হারানোর পর ইচ্ছের অনুভব হয়েছে, ওর ঠাট্টাছলে বলা কথাটা ওর সবচেয়ে আদরের মানুষটাকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো। অতীত মনে করে গাল বেয়ে পানি গরালো ইচ্ছের। নওশাদ সাহেব একপলক রাজীব মাহমুদের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে এসে বললেন,
-শান্ত হও নাফিজা। কি হলো আজ তোমার? খেয়ার বাসা ছাড়ার কারন ইচ্ছে না! ওরা তো তখনও অনেক ছোট। এই গায়ের রঙ নিয়ে সামান্য ঠাট্টাই তো করেছিলো ইচ্ছে। ওর কোনো দোষ…
-দোষটা ইচ্ছেরই নওশাদ! ইচ্ছেরই দোষ! আচ্ছা? তোমার কি একবারও মনে হয় না নওশাদ, আরেকটা মেয়ে ছিলো তোমার? একবারও মনে হয়না, তোমার এই মেয়ের জন্য আরেকটা মেয়েকে হারিয়েছো তুমি। একবারও মনে হয়না, এই ইচ্ছের জন্য আজ আমি সন্তান হারা। মনে হয়না নওশাদ? একবারও মনে হয়না?
এবার শব্দ করে কাদতে লাগলেন নাফিকা বেগম। দাতে দাত চেপে নিজেকে সামলালেন নওশাদ সাহেব। স্ত্রীকে শান্ত করতে বললেন,
-শান্ত হও নাফিজা।
নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ” নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ” এবং ফলো করে সাথেই থাকুন।
-কতো খুজেছি। কতো জায়গায় ডায়রি করেছি। কোথাও পাইনি আমার মেয়েটাকে। পেতামই বা কি করে? ও ত ফিরতে চাইই নি! ওর জায়গা তো ইচ্ছে কবেই নিয়ে নিয়েছে তাইনা? খেয়া ফিরবে না আর! ফিরবে না! নিয়ে নাও ইচ্ছে! ওই চুড়িদুটোর সাথে ওর সব অংশীদারীত্ব আমি তোমাকে ভিক্ষা দিলাম। নিয়ে নাও!
কথাটা বলে হনহনিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন নাফিজা বেগম। ইচ্ছে চোখ মেলে তাকালো। গাল মুছে একটা শুকনো ঢোক গিলে বাবাকে বললো,
-এস এমের কি হয়েছে বাবা?
নওশাদ সাহেব কিছু বলার আগেই রাজীব মাহমুদ এগিয়ে আসলেন। ইচ্ছের সামনে দাড়িয়ে বললেন,
-রাকীন এসেছে ইচ্ছে। তোমার রুমে আছে। তোমার সাথে দেখা করতে চায়। কথা বলতে চায় ও।
ইচ্ছে অবুঝের মতো বাবার দিকে তাকালো। নওশাদ সাহেবেরও অসহায় চাওনি। রাজীব মাহমুদ বললেন,
-আমার ছেলেটাও এতোগুলো বছর হলো গুমরে মরেছে মা। যে হারিয়ে গেছে, তাকে ভেবে ভেবে সোনালী জীবনটার অনেক বড় একটা অংশকে শেষ করে দিয়েছে। তুমিও স্বাভাবিক নেই ইচ্ছে। কিন্তু আর না! বাবা হয়ে না আমি ওকে এভাবে দেখতে পারছি, নাইবা নওশাদ তোমাকে। তোমাদের মুভ অন করা প্রয়োজন। আমি জানি, খেয়ার পরে যদি রাকীনের সবচেয়ে কাছের কেউ হয়, সেটা তুমি। আর এটাও জানি, রাকীনের চেয়ে ভালো কেউই বুঝবে না তোমাকে। আমার ছেলেটাকে বোঝার চেষ্টা করো ইচ্ছে। একটু বুঝো ওকে।
ইচ্ছে বিস্ময়ে তাকালো রাজীব মাহমুদের দিকে। রাকীনকে বুঝবে মানে? কি বুঝাতে চায় রাকীন? বিস্ময় নিয়েই বললো,
-এসব কি বলছেন আপনি রাজীব আঙ্কেল?
-তুমি গিয়ে একটু কথা বলো ওর সাথে। তারপর বাকিটা তুমি নিজেই বুঝে যাবে।
আবারো একপলক বাবার দিকে তাকালো ইচ্ছে। সিড়ি বেয়ে উঠে চলে এলো নিজের রুমে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখে রাকীন ওর ব্যালকনিতে পকেটে দুহাত গুজে উল্টোদিক হয়ে দাড়িয়ে। দেখে মনে হবে, পশ্চিমে হেলতে থাকা সূর্যে পৃথিবীর সব রুপ খুজে নেওয়ার চেষ্টায় আছে ও। দরজার শব্দ শুনে রাকীন যেনো টের পেলো ইচ্ছে এসেছে। তবে পেছন ফিরলো না। ওভাবেই অস্তগামী সুর্যের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-এসেছিস?
-কি হয়েছে রাকীন?
রাকীন আস্তেধীরে পেছন ফিরলো। ওর ঠোটের কৃত্রিম হাসিটা দেখে ইচ্ছের বিস্ময় বাড়লো আরো। বাইরে থেকে দেখে গোছানো মনে হলেও, বোঝাই যাচ্ছে, ভেতরে তান্ডব চলেছে কোনো এক। ইচ্ছে সবে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই রাকীন বলে উঠলো,
-বিয়ে করবি আমাকে ইচ্ছে?
থেমে গেলো ইচ্ছে। পরপরই মনে পরলো, গত কিছুদিন দেখাসাক্ষাৎ কম হয়েছে বলে কথাটা অচেনা লাগছে ওর কাছে। নইলে এমন মজা সচারচর হতোই ওদের মাঝে। কিন্তু আজকে কিছু তো আলাদা। মাথায় ঘুরতে লাগলো, আচমকাই নাফিজা বেগমের আক্রোশ, নওশাদ সাহেবের নিরবতা। আর রাকীনকে বোঝা নিয়ে রাজীব মাহমুদই বা কি বোঝাতে চাইলেন? ইচ্ছে একটা শুকনো ঢোক গিললো। জোরপুর্বক হেসে বললো,
-মজা করিস না। রাজীব আঙ্কেল বললো কি নাকি বলতে চাস? আমি…
-আমি তোকে বিয়ে করতে চাই ইচ্ছে। একবিন্দু মজা নেই এতে। ঠাট্টার ফল যে কতোটা যন্ত্রনার, তা তো তুই জানিসই। আমি নিজেকে আর যন্ত্রনা দিতে চাই না। এতোগুলো বছর হলো চলে আসা এই সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতাকে শেষ করতে চাই এবার। তোকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে চাই। নিজেকেও বোধগম্য করতে চাই তোর কাছে। আমি জানি, আমাকে ভালোবাসিস না তুই। আর এটাও জানি, তোকে ভালোবাসতে হলে তাকে আগে আমার চেয়ে বেশি জানতে হবে তোকে। তোকে আমার চেয়ে বেশি কেউ জানে না। নাইবা আমাকে তোর চেয়ে ভালোমতোন কেউ আগলে নিতে পারবে।
-রাকীন…
রাকীন এগিয়ে এসে দুহাত মুঠো করে নিলো ইচ্ছের। মাথা নিচু করে বললো,
-আর মানা করিস না। আমরা দুজন দুজনের সাথে ঠিক মানিয়ে নেবো! বিয়েটাতে রাজি হয়ে যা ইচ্ছে। আমার কথা ভেবে হলেও। প্লিজ!
ইচ্ছের হাত ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রাকীন। এতোক্ষন যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ইচ্ছের। রাকীন বেরিয়ে যেতেই শ্বাস ছেড়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরলো ও। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গরাতে লাগলো ওর। ফাকা দৃষ্টিতে অসহায়ের মতো এদিকওদিক তাকালো ইচ্ছে। খেয়া ফেরেনি। রাকীনের সাথে আস্তেধীরে এভাবেই জুড়ে যাওয়ার কথা ছিলো ওর। আজ রাকীন নিজে ওকে বিয়ের কথা বলেছে। অবশেষে, দুই পরিবার খুশী। এতোদিন হলো, এতো ভালোভাবে চেনে, এমন কারো সাথেই বিয়েটা হবে ওর। রাকীনের অপেক্ষাকে আর দীর্ঘায়িত করবে না ও। হ্যাঁ-ই বলবে ইচ্ছে। তবে ওর এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে? কেনো বিয়ের কথা ভাবতেই শ্বাস আটকে আসছে ওর? কেনো মনে হচ্ছে সে ভাবনা অনেক আগেই অন্যত্র নোঙর ফেলেছে। প্রেমনোঙর…
#চলবে…
#প্রেমনোঙর_ফেলে
লেখনীতেঃ মিথিলা মাশরেকা
২৯.
-আমি বিয়েটাতে রাজী রাকীন। সত্যিই হয়তো তোর চেয়ে বেশি আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাউকে পাবো না। তাই জীবনসঙ্গী হিসেবে তোকেই মেনে নেবো। আমি রাজী বিয়েতে।
ফোনে ইচ্ছের বলা কথাটা শুনে কান থেকে ফোন নামিয়ে কলটা কেটে দিলো রাকীন। ও জানতো, ইচ্ছে মানা করবে না এই বিয়েতে। ইচ্ছের মনে এখনো অবদি যদি কোনো দুর্বলতা থেকে থাকে, সেটা শুধু ওকে নিয়েই। যদিও তা ভালোবাসার না। বন্ধুত্বের। তবুও! ওর সারা রুমের অবস্থা দেখার মতো না। ড্রেসিংটেবিলের আয়না চুর্নবিচুর্ন হয়ে মেঝেতে পরে আছে। সাথে পরে আছে রাকীনের শিক্ষাজীবনের গোটাবিশেক ক্রেস্ট, মেডেল আর অনেকগুলো স্কেচের কাগজ। তাতে এক বাচ্চা মেয়ের মুখশ্রী। মোবাইলটা ছুড়ে মেরে, চিৎকার করে মাথার চুলগুলো উল্টে ধরলো রাকীন। দেয়ালে ঘুষি ছুড়লো কয়েকবার। ওর আওয়াজ শুনে ছুটে এলেন রাজীব মাহমুদ আর তার মিসেস। ভেতরে ঢুকে চারপাশ দেখে শব্দ করে কেদে দিলেন মিসেস মাহমুদ। ছুটে এসে বিছানায় বসা রাকীনের কাটা হাত আচলে চেপে ধরলেন। এতোগুলো বছরের সংসারে, স্বামীর দিকে প্রথমবারের মতো ঘৃনাদৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে বললেন,
-এটা কেমন বিয়ে বলতে পারো? তুমি না আমাদের ছেলের ভালোর জন্য ওকে বিয়ে দিতে চাইছো? আমার ছেলেটা তো…
-আমি ঠিক আছি মা।
শান্তস্বরে বললো রাকীন। মিসেস মাহমুদ আরো জোরে কেদে দিয়ে বলতে যাচ্ছিলেন কিছু। রাকীন নিজেকে ছাড়িয়ে বাবার মুখোমুখি এসে দাড়ালো। শক্ত গলায় বললো,
-ইচ্ছে রাজী হয়ে গেছে বাবা। ও রাজি এই বিয়েতে।
-এ মাসের পনেরো তারিখ তোমাদের বিয়ে রাকীন।
রাকীন চোখ সরিয়ে তাচ্ছিল্যে হাসলো। বললো,
-আর খেয়া হাউজিং?
-আমি কথা বলেছি লয়ারের সাথে। ঝামেলা মিটে গেলে আমিই ইনস্টলমেন্টের ব্যবস্থা করে দেবো। ওটা নিয়ে আর ভাবতে হবে না তোমাকে। নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নাও রাকীন। আমার বিশ্বাস, ইচ্ছেকে কোনোদিনও কষ্ট দেবে না তুমি। আর সে দায়িত্ববোধ থেকেই তোমাদের সম্পর্কটা আরো গাঢ়তর হবে দেখো। তাইতো এই বিয়ে…
আবারো রাকীন তাচ্ছিল্যে হাসলো। বললো,
-ইচ্ছেকে যেমন কোনোদিনও কষ্ট দিতে পারবো না, তেমন খেয়াকেও কোনোদিনও ভুলতে পারবো না আমি বাবা। তাই বলে তুমি ভুলেও ভেবো না, হাউজিং নিয়ে তোমার শর্তের জন্য এই বিয়েতে রাজি হয়েছি আমি। মোটেও তা নয়। ইচ্ছের বন্ধুত্বের জন্য ওকে খুশি রাখার দায়িত্বটা আমি নিচ্ছি। মাঝখান থেকে এই শর্ত জুড়ে দিয়ে নিজেকে ছোট না করলেও পারতে।
ছেলের সামনে দাড়িয়ে থাকার আর সাহস হলো না রাজীব মাহমুদের। চলেআসলেন রাকীনের সামনে থেকে। জীবনে এই প্রথমবার এতোটা নিচকাজ করেছেন তিনি। ছেলেকে ভালো দেখবেন বলে তার ভালোলাগার, ভালোবাসার সাথেই বেআইনি সংশ্লিষ্টতা প্রমান করে তাতে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন রাজীব মাহমুৃদ। উপায় ছিলো না তার। অবশ্য তাতে যদি ভবিষ্যতে রাকীন, ইচ্ছে দুজনেই ভালো থাকে, এ কাজ নিয়ে বিন্দুমাত্র আফসোস নেই তার। একটুও না।
•
সন্ধ্যে নেমেছে শহরে। বাইকের চাবিটা নিয়ে বেরোচ্ছিলো প্রাপ্ত। পরনে সাদা টিশার্টের উপর ডার্কচেইক শার্ট। শার্টের হাতা কনুই অবদি গুটানো। ইচ্ছের দেখা সেই প্রথমদিনের প্রাপ্তর মতো। ভালোবাসি বলবে বলে, চেনাপরিচয়ের সেই শুরুর বেশেই বাসা থেকে বেরোনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রাপ্ত। দরজা দিয়ে বেরোনের সময় সাদিক সাহেব ডাক লাগালেন ওকে। প্রাপ্ত দাড়ালো। সাদিক সাহেব বললেন,
-ইমারজেন্সি?
মুচকি হেসে মাথা নেড়ে না বুঝালো প্রাপ্ত। মুখে বললো,
-কিছু বলবে বাবা?
ছেলের কাধে হাত রাখলেন সাদিক সাহেব। মুখে হাসি রেখে করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে বললেন,
-তোমার মা মারা যাওয়ার পর থেকে এখনো অবদি, আমি সবসময়, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তোমাকে আর পিয়ালীকে সবরকম অভাব থেকে আগলে রাখার। বাবা হিসেবে কতোটুকো পেরেছি, তা তোমরাই জানো প্রাপ্ত। কিন্তু আমি সবসময় চেয়েছি তোমাদের বন্ধু হতে। আর হয়েও উঠেছি বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তাই হয়তো কোনো আড়াল সেভাবে ছিলোই না আমাদের মাঝে। আজও আমি তার ব্যতিক্রম চাইনা প্রাপ্ত। তাই সরাসরিই বলতে চাইছি তোমাকে।
প্রাপ্ত দাড়িয়ে গেলো। স্বতন্ত্রস্বরে বললো,
-এভাবে কেনো বলছো? কি হয়েছে বাবা? কোনো সমস্যা?
-সমস্যা না প্রাপ্ত। সমাধান। আমার হাজারো ব্যাকুলতার সমাধান তুমি।
-মানে? কি হয়েছে বলোতো বাবা!
সাদিক সাহেব আবারো মুচকি হাসে বলতে লাগলেন,
-আমি জানি, তুমি খইকে পছন্দ করো। আর খইও এ কয়দিনে যথেষ্ট সাচ্ছন্দ্য হতে শুরু করেছে তোমার সাথে। তাই তোমাদের দুজনের বিয়েটা এবার সেরে ফেলতে চাইছি আমি প্রাপ্ত। এ বিষয়ে তুমি কি বলো?
নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ ” নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ” এবং ফলো করে সাথেই থাকুন।
বাবার কথা শুনে খুব বেশি চকিত হলো না প্রাপ্ত। এমন ভাবনা যে সাদিক সাহেবের আগে থেকেই ছিলো, তা ও জানতো। কিন্তু কথাটা আজ বলছে বলেই যা। ও ভেবেছিলো ইচ্ছেকে বলার পরই বাবাকে বলবে, ও ইচ্ছেকেই ভালোবাসে। কিন্তু সাদিক সাহেব আগেই বলে বসলেন কথাটা। প্রাপ্ত এটা খুব ভালোমতোই জানে, ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনোই ওকে জোর করবে না ওর বাবা। আজ যখন কথাটা উঠেছেই, ও ঠিক করলো, পরিস্কারভাবে বলবে বাবাকে, ইচ্ছেকে ভালোবাসে ও। খইকে নয়। এটা জানলেই মিটে যাবে সবটা। মুচকি হেসে প্রাপ্ত বললো,
-আসলে বাবা, তুমি যেমনটা ভাবছো, তেমনটা নয়। কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তোমার।
সাদিক সাহেব একটু থেমে বললেন,
-ভুল বোঝাবুঝি মানে?
-সত্যি বলতে, আমিও ধারনা করেছিলাম, তুমি যা ভেবেছিলে সেভাবেই হওয়ার কথা ছিলো সবটা। কিন্তু হয়নি। বরং তার বিপরীতে ঘটে গেছে সবকিছু। বিশ্বাস করো বাবা, আমার অগোচরেই হয়েছে এসবের রদবদল। তোমাকে, আমাকে ভুল প্রমানিত করে আমার মন আজ বিপরীতে আটকেছে। আসলে আমি খইকে ভ্…
-প্রাপ্ত?
ভালোবাসি না বাবা- বলার আগেই মাহীমের গলা শুনে প্রাপ্ত থামলো। দরজায় ঝুকে দাড়িয়ে হাটুতে দুহাত রেখে সমানে হাপাচ্ছে ও। ও যে ছুটতে ছুটতে এ বাসা অবদি পৌছেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রাপ্ত বললো,
-কি হয়েছে? এভাবে হাপাচ্ছিস কেনো?
মাহীম সোজা হয়ে দাড়িয়ে, জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে ভেতরে ঢুকলো। কিছুক্ষন সাদিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে থেকে কি ঘটেছে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো হয়তো। আগের মতোই হাপিয়ে ওঠা কন্ঠে বললো,
-তোর সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।
প্রাপ্ত ওর কথাকে উপেক্ষার স্বরে বললো,
-পরে। বাবার সাথে কথা আছে আমার।
-কিন্তু প্রাপ্ত এটা তারচেয়েও বেশি জরুরি। তোর…
-তোকে বললাম না? এখন বাবার সাথে কথা বলছি আমি। পরে দেখছি তোর বিষয়টা। সোফায় গিয়ে বস কিছুক্ষন।
কড়া গলায় মাহীমকে থামিয়ে দিয়ে বাবার দিকে ফিরলো প্রাপ্ত। মাহীম অস্থিরভাবে কপাল চেপে ধরে এদিকওদিক পায়চারী করতে লাগলো। সাদিক সাহেব মৃদ্যু হেসে বললেন,
-আগে মাহীম কি বলে, সেটা শুনে এসো প্রাপ্ত। আমরা নিজেদের কথা একটু পরে আলোচনা করলেও কোনো সমস্যা নেই তো।
-কিন্তু বাবা…
-কোনো কিন্তু নেই। শুনে এসো তুমি। মনে হচ্ছে খুব জরুরি কিছু বলবে ও। ছুটে এসেছে ওভাবে।
শীতল দৃষ্টিতে মাহীমের দিকে তাকালো প্রাপ্ত। মাহীম অসহায়ভাবে ইশারায় বুঝালো, আমার কথাটা শোন ভাই। বাবার সামনেই দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে ওর শার্ট ধরে টেনে নিজের সামনে নিয়ে পিঠে ধাক্কা লাগালো প্রাপ্ত। এক ধাক্কাতেই দরজা ঠেলে ভেতরের রুমে ঢুকেছে মাহীম। প্রাপ্ত শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে, ওর দিকে এগোতে এগোতে বললো,
-সমস্যা কি তোর? তোর জন্য কি বাবার সাথে নিজের বিয়ের আলাপও করতে পারবো না ঠিকমতো? বল তোর জরুরি আলাপ। আমি তো শুনি। তবে যদি তোর আলাপে জরুরি কিছু না থাকে, আমি নিজ দায়িত্বে তোকে জরুরি খাতিরের মাধ্যমে হসপিটালের জরুরি বিভাগে পাঠিয়ে দেবো। বল এবার।
-বিয়ের আলাপ মানে? কার সাথে? খই?
মাহীমের বিস্ময়ের সুর। প্রাপ্ত বললো,
-না। যাকে ভালোবাসি তার সাথে। তুই বল কি বলবি।
-তুই কি সাদিক আঙ্কলেকে রকস্টার ইচ্ছের বিষয়ে বলতে যাচ্ছিলি?
প্রাপ্ত থামলো। মাহীমের সাথে ওর ওঠাবসা বেশি। ইচ্ছেকে নিয়ে ওর অনুভূতিগুলোও ও টের পেয়ে যাবে, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। শান্তভাবে বললো,
-হেয়ালী না করে আগে বল কি বলতে এসেছিলি। তাড়া আছে আমার।
-তুই রকস্টার ইচ্ছেকে ভালোবাসিস।
চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছাড়লো প্রাপ্ত। অস্বীকার করার উপায় নেই। অস্বীকার করতে ইচ্ছে করছে না ওর। শুধু মাহীম কেনো, চিৎকার করে পুরো পৃথিবীকে বলতে ইচ্ছে করছে ওর, ও ইচ্ছেকে ভালোবাসে। ঠোটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে একধ্যানে কিছুক্ষন মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো ও। তারপর মাথা তুলে মাহীমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-হ্যাঁ ভালোবাসি। ভালোবেসে ফেলেছি ওই রকস্টারকে। প্রচন্ড! ওকে ছাড়া থাকা দায় হয়ে গেছে আমার মাহীম। খুব বেশি ভালোবাসা আর তার থেকে দুরুত্ব, এতো বেশি ভয়ানক হয় বুঝি? পাগল করে দিয়েছে আমাকে সে। লিটরেলি পাগল করে দিয়েছে। তাকে ছাড়া মনমস্তিষ্কে আর কোনো কিছুই আসছে না। কি করি বলতো?
ওর কথা শুনে মাহীম নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো। প্রাপ্ত হেসে বললো,
-থাক। তোকে বলতে হবে না। বাবার সাথে ওকে নিয়েই কথা আছে আমার। বাবাকে বলে, তারপর ওকে প্রোপোজ করতে যাবো ভাবছি। সময় নষ্ট করিস না আমার। কিছু বলার থাকলে বল, নইলে আমি আসছি।
নিরবে ওর দিকে চেয়ে রইলো মাহীম। রাগ নিয়ে তেড়ে এগোতে গিয়েও নিজেকে সামলালো প্রাপ্ত। ওকে জ্বালাতেই মাহীম এসময় এসেছে এমনটা ভেবে পেছন ফিরলো বেরিয়ে আসবে বলে। মাহীম ডাক লাগিয়ে বললো,
-যাস না প্রাপ্ত।
-শা’লা! কুসংস্কার বলেও একটা কথা আছে! এই কাজেও পিছনডাক দিলি? ফিরবো না আমি।
চোখ বন্ধ করে নিজেকে সংবরন করতে গিয়ে বিরক্তি বাড়লো। মাহীমের দিকে ফিরে না ফিরে হাটতে হাটতেই বললো ও কথাটা। মাহীম ধরা গলায় বললো,
-ইচ্ছের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে প্রাপ্ত। সামনের পনেরো তারিখ ওর বিয়ে।
#চলবে…