#এক_মুঠো_রোদ
#Writer_নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা
#part_22
#collected Sk Galib
রাস্তার মাঝ বরাবর বসে আছে তীর্থ। তারপাশে পড়ে আছে রোজা আর তীর্থর লাগেজ। তীর্থর ফোনটাও ছিটকে গিয়ে পড়েছে মেইনহলের পাশে। একটুর জন্য বেঁচে গেছে ফোনটা। রোজা তীর্থকে টেনে তুলে দাঁড় করালো। ঠিকমতো হাঁটতে পারছে না বেচারা। হাঁটু নাড়াতেই চিনচিনে ব্যাথা করে উঠছে। রোজাও হাতে আর হাঁটুতে সামান্য ব্যাথা পেয়েছে। একটা জায়গায় চামড়া উঠে গিয়ে জ্বালাপোড়াও করছে। রোজা নিজের শাড়িটা খানিক ঝেড়ে নিয়ে লাগেজ দুটো তুলে তীর্থর পাশে রাখলো। রিক্সাওয়ালাকে টেনে তুলতেই কানে এলো কারো কন্ঠ,
— শিট! হেই রাসকেল, রাস্তার মাঝখান দিয়ে রিক্সা চালালে তো এমনটাই হবে। শুধু ঠুকে দিয়ে ভুল করেছি রিক্সাটার সাথে তোকেও ওপরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছি…
এটুকু বলে গাড়ি থেকে নামতেই রোজা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রোজাকে দেখে বাকিটুকু আর বলা হয়ে উঠলো না। নিঃশব্দে গাড়ির দরজাটি লাগিয়ে রোজার দিকে তাকালো সে। রোজা হাসিমুখে এগিয়ে এসে বললো,
— ওহ! মিষ্টার চৌধুরী? হ্যালো!
রাফিন খানিকটা ভড়কে গেলো। সে ভেবেছিলো রোজা ইচ্ছেমতো ঝাড়ি দিবে তাকে কিন্তু তার ধারনা মিথ্যে করে দিয়ে রোজা হাসছে। অদ্ভুত! “মেয়েদেরকে বোঝা দায় ” — কথাটা এই মুহূর্তে ১০০% সত্য বলে মনে হচ্ছে রাফিনের। রাফিনকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলো রোজা,
— আমার ধারনা অতিরিক্ত ভালো এবং অতিরিক্ত খারাপ মানুষের অহংকার থাকতে নেই। অহংকার শব্দটা তাদের সাথে ঠিক মানায় না। এই বিষয়টা এতোদিন আমার ভাবনার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু আজ বিষয়টি সত্যি প্রমাণ করে দিলেন আপনি।
রাফিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে কনফিউসড হয়ে বলে উঠলো,
— আমি?
রোজা চকচকে চোখে বলে উঠলো,
— অবশ্যই আপনি। এই দেখুন না, আমি ভাবতাম আপনার মতো গ্যাংস্টার হয়তো আকাশছোঁয়া খারাপ কাজের সাথে আকাশছোঁয়া এটিটিউট বহন করে চলে কিন্তু আই ওয়াজ রং। আপনি যে মাপের মানুষ আপনার উচিত প্লেন ক্রাশ করা বাট আপনি নিজের ইমেজের খেয়াল না রেখে রাস্তায় ছোটখাটো রিক্সা ক্রাশ করছেন শুধু তাই নয় রাস্তার মানুষদের মতো রিক্সাচালককে গালিগালাজ করছেন এসব কিন্তু আপনার নিরহংকারীতার পরিচিত। একদম রাস্তার মানুষের সাথে মিলিয়ে দিচ্ছে আপনাকে।
রাফিন কি বলবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটা আজও হাসিমুখে সুনামের নাম করে দুর্নাম করে চলেছে তার। রাফিনকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলো রোজা,
— এনিওয়ে, রিক্সাচালক মামার পক্ষ থেকে আই এক্সট্রেমলি সরি। যদিও রিক্সাটা রাস্তার মাঝখানে ছিলো না তবুও আপনি যখন বলছেন থাকতেও পারে। কথায় আছে যারা দিনে শ’খানেক মার্ডার করে তাদের চোখ দারুন শার্প থাকে। সে হিসেবে আপনার চোখ মাশআল্লাহ অসাধারণ শার্প হওয়ারই কথা! তাই আপনার এই কথা নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়, তাই না তীর্থ?
তীর্থ এতোক্ষণ রিক্সার সামনের দিকে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছিলো। রাফিনকে দেখেই ভয়ে হাঁটুর ব্যাথা ভালো হয়ে গিয়েছিলো তার। কিন্তু রোজা ওর নাম ধরে ডাকতেই চমকে ওঠে আবারও হাঁটুর ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। ব্যাথায় চোখ-মুখ কুঁচকে কোনোরকম মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো সে। রাফিন তীর্থর দিকে তাকাতেই মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে তাড়াহুড়ো করে অন্যদিকে ফিরে গেলো সে। তীর্থর মুখ থেকে চোখ সরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো রাফিন —– ৯ঃ১৫। আজ শনিবার, ঠিক ১০ টায় হসপিটালে একটা সার্জারি আছে তার। কিন্তু রাস্তায় খুঁজে খুঁজে রোজা নামক ঝামেলার সামনেই পরে গেলো সে। অন্যকোনো সময় হলে রাফিন ভয়ানক বিরক্ত হতো কিন্তু আজ তেমনটা হচ্ছে না। রাফিনের মুখ দেখে তার মনের ভাবটা বোঝা যাচ্ছে না। রোজা নামক ঝামেলাটা তার কাছে তেমন খারাপ লাগছে না বরং বেশ ভালোই লাগছে। রোজা ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে আরেকটা রিক্সা ডাকলো। রাফিনের দিকে তাকিয়ে কিছু মনে পড়েছে এমন ভাব করে বললো,
— ওহ,ভুলেই গিয়েছিলাম। এখন তো আপনার টার্ন। সরি, বলুন।
রাফিন অবাক চোখে তাকালো। প্রশ্নমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
— সরি কেনো?
— আমার রিক্সা রাস্তার মাঝে ছিলো আমি সরি বললাম। তো আপনার গাড়িও তো রাস্তার মাঝে ছিলো তারজন্য আপনাকেও সরি বলা উচিত। পেছন থেকে আঘাত করাকে কাপুরুষতা বলে আর আপনি তো রিক্সাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছেন। আপনি নিশ্চয় কাপুরুষ নন ব্যাপারটা নিশ্চয় এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে,রাইট? উই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড কিন্তু ব্যাপারটা যে ইচ্ছেকৃত ছিলো না সেটা প্রমাণ করতে হলেও আপনাকে সরি বলা উচিত।
রাফিন কনফিউজড হয়ে বললো,
— সরি!
“সরি” শব্দটি উচ্চারণ করে নিজেই চমকে উঠলো রাফিন। আর যায়হোক “সরি” শব্দটা কখনোই উচ্চারণ করে না রাফিন তাতে তার দোষ থাকলেও না আর দোষ না থাকলেও না। অথচ রোজার কথার বেড়াজালে অবিশ্বাস্য রকম কাজটা করেই ফেললো সে। রোজা হাসলো। হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
— আসি মিষ্টার.চৌধুরী। ভেরি বেড টু মিট ইউ।
রাফিনও হাত বাড়ালো তবে কিছু বললো না। রোজা তীর্থকে রিক্সায় উঠতে সাহায্য করে নিজেও উঠে বসলো । রিক্সাচালক লাগেজগুলো তুলে দেওয়ার পর ছুটে চললো এয়ারপোর্টের পথে। রাফিন সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। নিজের মনে বিরবির করে বললো,
— সরি! সরি! লাইক সিরিয়াসলি? ওহ মাই গড!!
কথাটা বলে ভ্রু চুলকে নিজের মনেই হেসে উঠলো সে। একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে গাড়ি নিয়ে ছুটে চললো নিজস্ব গন্তব্যে।
এয়ারপোর্টে এসে এয়ারপোর্ট গ্রাউন্ডেই দেখা মিললো মৃন্ময়ের। সাদা রঙের পাতলা শার্ট আর হালকা ব্রাউন জিন্স পড়েছে সে। পায়ে হোয়াট কেটস, মাথায় সিল্কচুলগুলো সুন্দর করে গোছানো। চোখে কালো চশমা ডানহাতে ঘড়ি আর বামহাতে লাগেজ। তীর্থ- রোজা সামনে এসে দাঁড়াতেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো মৃন্ময়। তীর্থর পায়ের দিকে ইশারা করে বললো,
— পায়ে কি হয়েছে?
রোজা স্মিত হেসে বললো,
— ছোট খাটো এক্সিডেন্ট তেমন কিছু না।
মৃন্ময় কপাল কুঁচকে উদ্বিগ্ন গলায় বললো,
— তীর্থ? তুমি সিউর তুমি ঠিক আছো?
তীর্থ হাসার চেষ্টা করে বললো,
— ইয়েস স্যার। আই এম ফাইন।
মৃন্ময় মাথা নাড়লো কিছু বললো না। ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট হতেই এয়ারপোর্টের বাকি কাজ শেষ করে তিনজনেই ফ্লাইটে উঠে গেলো কিন্তু বিপত্তি হলো সিট নিয়ে। তীর্থ আর মৃন্ময়ের সিট পাশাপাশি কিন্তু রোজার সিট দ্বিতীয় সারিতে একটা মেয়ের পাশে। তীর্থর কথা হলো সে মৃন্ময়ের পাশে নয় ওই মেয়েটার পাশে বসবে। রোজাকে ডেকে এনে বললো,
— দোস্ত? তুই আমার সিটে বসে যা না দেখ মেয়েটা কি কিউট! হাসিটা তো হাসি নয় যেন মুক্তোর মালা।
রোজা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রাগী গলায় বললো,
— শালা ফাজিল। এখানেও তোর লুচ্চামি? মালিহাকে বলবো?
মৃন্ময় পানি খাচ্ছিলো।”মালিহা” নামটা শুনেই মুখ থেকে পানি ফেলে দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
— মালিহা?
রোজা দাঁত বের করে হাসলো। তীর্থর কাঁধে হাত রেখে বললো,
— এটা আপনার জন্য খুব কষ্টের হলেও সত্য যে তীর্থর দর্জালি গার্লফ্রেন্ড আর আপনার মায়ের নাম সেইম। আপনি বরং পানি খান.. কিছুটা বেটার ফিল করবেন।
মৃন্ময় কিছু বললো না হালকা কেশে জানালার বাইরে তাকালো। তীর্থ ফিসফিস করে বললো,
— প্লিজ দোস্ত। তুই আমার বন্ধু না দুশমন? মাইয়াটাকে দেখ একবার…আহা! মেয়ে তো নয় সিলেটের আস্ত চা বাগান।
— কিহ!
— আরে, উপমা দিলাম। ফিলিংসটা বোঝার চেষ্টা কর। তোর এই বয়ফ্রেন্ডের সাথে ৪৫ মিনিট বসে থেকে টাইম নষ্ট না করে এই মেয়ের পেছনে খরচ করা ঢের ভালো।
রোজা রাগী গলায় বললো,
— ও আমার বয়ফ্রেন্ড কেমনে হলো রে? বেয়াদপ। সবাই কি তোর মতো নাকি?
— আচ্ছা মেরি মা, তুই ধোয়া তুলশিপাতা এবার তো এই সিটে আয় প্লিজ,প্লিজ!
রোজা কিছু না বলে মৃন্ময়ের পাশের সিটে বসলো। মৃন্ময়ের কানে হেডফোন হয়তো গান শুনছে। রোজা একবার সেদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
— নিজেই তো গায়ক তবুও কিসের ছাতার মাথা গান শুনে!
মৃন্ময়ের থেকে চোখ সরিয়ে তীর্থের দিকে তাকালো রোজা। এই দুই মিনিটেই মেয়েটির সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে সে। কিভাবে পারে কে জানে? এই ছেলেটাকে দেখলে কে বলবে, মালিহা নামের একটি মেয়ের জন্য পাগলাপ্রায় সে। মালিহা দু’দিন রাগ করে ফোন বন্ধ করে রাখলেই বেচারা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে মালিহার বাড়ির সামনে রাতভর দাঁড়িয়ে থাকে। দু’বারে ফোন না তুললেই টেনশনে চোখ-মুখ শুকিয়ে যায়। রোজা নিজের মনে হাসলো। চারপাশে কতো অদ্ভুত সব মানুষের বসবাস। সবাই পুরুষজাতির অন্তর্ভুক্ত তবুও একেকজন কতোটা আলাদা। কাউকে ভালোবাসা, ঘৃণা করা সবকিছুরই কতো আলাদা সজ্ঞা। সিলেটে পৌঁছে ভাড়া করা গাড়িতেই হোটেলে পৌঁছালো তারা। হোটেল রোজভিউ। পাশাপাশি তিনটিরুম বুক করেছে মৃন্ময়। মাঝেরটা রোজাকে দিয়ে দুপাশে দুজন। রুমে ঢুকার আগ মুহূর্তে রোজা-তীর্থকে উদ্দেশ্য করে বললো মৃন্ময়,
— ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে নাও তোমরা। ঘড়িতে ২ টা বাজতেই বেরিয়ে পড়বো আমরা। আমি টাইম মেইনটেইন করে চলতে পছন্দ করি আই থিংক ব্যাপারটা মনে রাখবে।
যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলো সবাই। মাত্র ১১ টা বাজে, তাদের হাতে ঘুমোনোর জন্য ২ ঘন্টারও বেশি সময় আছে। দেড়টার দিকে ঘুম ভাঙলো রোজার। তীর্থকে ফোন দিয়ে রেডি হতে বলে নিজেও তৈরি হয়ে নিলো। শাড়ি পাল্টে স্কার্ট আর টপস পড়ে নিয়েছে রোজা। লম্বাচুলগুলো উঁচু করে খোঁপা করে গলায় ওড়না জড়িয়ে বেরিয়ে এলো। ততক্ষণে তীর্থ আর মৃন্ময়ও বেরিয়ে এসেছে। মৃন্ময় রোজার দিকে একনজর তাকিয়েই নজর সরিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলো। রোজাকে এর আগে মাত্র একদিন শাড়ি ছাড়া স্কার্ট পড়া অবস্থায় দেখেছিলো সে। দুটো ড্রেসে একদমই দু-রকম লাগে তাকে।
# চলবে…
#part_23
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943501996499928/
#part_21
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943501403166654/