#এক_মুঠো_রোদ
#Writer_নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা
#part_30
#collected Sk Galib
ভিজে চুপচুপে শরীর নিয়েই খাসিয়াপুঞ্জিতে পৌঁছালো রোজা-মৃন্ময়। মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি একটা উঁচু টিলার উপর। আর সেই টিলা বেয়ে উঠে গেছে মাটি কেটে বানানো সিঁড়ি। রোজা-মৃন্ময় সামনে সামনে হাঁটছে, তীর্থ-আলী পেছনে। ততক্ষণে বৃষ্টি কেটে গিয়ে উজ্জল রোদে ঝলমল হয়ে উঠেছে চারদিক। কিছুটা সামনে এগিয়েই একজন খাসিয়া মেয়েকে কাপড় শুকাতে দেখলো তারা। সেখান থেকে খানিক দূরেই একদল বাচ্চারা মাটিতে দাগ টেনে অদ্ভুত এক খেলায় মেতে উঠেছে। মৃন্ময় রোজাকে ইশারা করতেই এগিয়ে যায় রোজা। স্মিত হেসে বলে,
—” এইযে? একটু শুনবেন?”
মেয়েটি বিস্ময় নিয়ে তাকায়। রোজা আবারও বলে,
—” এখানে তাহেরা পতামের বাড়িটা কোনটা বলতে পারবেন?”
মেয়েটি হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,
— “৪ নম্বর বাড়িটাই ওদের।”
রোজা ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসে। দেখিয়ে দেওয়া বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শ্বাস টেনে নিয়ে বলে,
— “অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছালাম।”
মৃন্ময় জবাব দেয় না। তীর্থ তাড়াহুড়ো করে রোজার পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ফিসফিস করে বলে,
— “দেখছিস? খাসিয়া মেয়েরাও কিরকম স্মার্ট। সেই সাথে হটও..”
রোজা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তীর্থ চোখ টিপে হাসে। রোজা তীর্থের পায়ে শক্ত করে পাড়া দিয়ে বিরবির করে,
— “জিন্দেগীতে শুধরাইবি না তুই।”
রোজার পায়ের চাপে নিজের পা ধরে লাফিয়ে ওঠে তীর্থ। রোজার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। রাগী গলায় বলে,
—” রাক্ষসী মহিলা। জামাইয়ের হাতে দিনে দশবার পাড়া খাবি তুই। তোর জামাই তোরে পাড়াইতে পাড়াইতেই মাইরা ফেলাইবো।”
রোজা সেদিক কান দিয়ে হাঁটায় মনোযোগ দেয়। আলী হো হো করে হেসে উঠে। মৃন্ময় মুচকি হেসে তীর্থর পিঠ চাপড়ে বলে,
— ” দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? বদদোয়াটা নাহয় হাঁটতে হাঁটতে দাও। চলো .. ”
তাহেরা পতামের বাড়িতে গিয়ে প্রথম যে ঝটকাটা খেলো তীর্থ তা হলো, “তাহেরা পতাম একজন পুরুষ।” তাহেরার স্ত্রী আর দুই মেয়ের সাথে দেখা হলো ওদের। খাসিয়ারা অতিথিপরায়ণ জাতি। মৃন্ময়দের সাধ্যমতো আপ্যায়ন করলো। তাহেরা পতামের কথা জিগ্যেস করায় বললো, এখান থেকে দশ পনেরো মিনিট দূরত্বে একটা চা বাগান আছে। ওখানেই কাজ করছেন তাহেরা পতাম। অফিস স্টাফ বলে খুঁজে বের করতে তেমন একটা অসুবিধা হবে না তাদের। মৃন্ময়-রোজা বেরিয়ে এলো। তাহেরার ছোট মেয়ে আংইতা দাওয়ায় বসে পানের বিরা বানাচ্ছে। রোজা-মৃন্ময় দাওয়া ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠে রোজা,
— “কতো দ্রুত পান গুছাচ্ছে দেখেছেন?মনে হচ্ছে চোখের পলকে কাজ সেরে ফেলছে।”
মৃন্ময় হেসে বলে,
— “এটা তো ওদের কাজ, তাই পারে। ওরা কিন্তু পানকে পান বলে না। ওরা বলে তুমপেও। ”
রোজা সরু চোখে তাকায়,
—” তুমপেও! ”
মৃন্ময় মাথা নাড়ায়। রোজা বিরবির করে,
— “পানের মতো একটা সহজ শব্দকে এতোটা ভয়ানক শব্দে কনভার্ট করার কি প্রয়োজন আল্লাহ মালুম! ”
গাড়িতে উঠে চা বাগানের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তারা। মৃন্ময়-রোজা দুজনের কাপড়ই অনেকটাই শুকিয়ে এসেছে এখন। গাড়িতে বসে সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলে উঠে মৃন্ময়,
—” খাসিয়াদের একটা প্রবাদ বাক্য আছে। প্রবাদটা তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে বলেই তারা মাতৃপ্রধান।”
তীর্থ উদাস গলায় বলে,
—” প্রবাদ বাক্যটা কি রকম?”
—” লং যেদনা কাকির থেই!”
তীর্থ চোখমুখ কুঁচকে বলে,
— “মানে? কাকি! কাকি মানে তো চাচার বউ তাই না? কিন্তু থেই অর্থটা কি? ”
তীর্থের কথায় তিনজনেই হাসিতে ফেঁটে পড়ে।আলী হাসতে হাসতেই বলে,
— “এখানে কোনো কাকি, চাচির কথা বলে নাই তীর্থ ভাই। এর অর্থ হলো, নারী থেকেই মানব জাতির উৎপত্তি। ”
তীর্থ মুখ কালো করে তিনজনের দিকেই তাকায়। রোজা এখনও খিলখিল করে হেসে চলেছে। মৃন্ময়ের মুখে নিঃশব্দ হাসি। কয়েক মিনিটের মাঝেই চা-বাগানে পৌঁছে গেল তারা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো তাহেরা পতাম চা বাগানের ডান দিকে আছে। সেদিকে এগিয়ে যেতেই চোখ জুড়িয়ে এলো তাদের। চারপাশে সবুজ চা গাছের সারি। সবুজের উপত্যকা! মেয়েরা ঝুড়ি কাঁধে পাকাপোক্ত হাতে চা পাতা সংগ্রহ করে চলেছে ক্রমাগত। চায়ের সারির মাঝ বরাবর হাঁটতে হাঁটতে রোজার মনে হলো, এ জীবনে চায়ের শ্রমিক হলেও খুব একটা খারাপ হতো না। মন ভরে চারপাশটা দেখা যেত। প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া যেত। ঝিরিঝিরি বাতাসে চা গাছের মতো ঢেউ খেলানো যেত! মৃন্ময়-তীর্থ নিজেদের মাঝে কথা বলতে বলতে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারলো রোজা তাদের সাথে নেই। দু’জনেই ব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই আলী হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো তাকে। রোজা চা-শ্রমিকের থেকে ঝুড়ি আর মাথায় পড়া হেড নিয়ে শ্রমিকদের মতো চা তুলছে। যার ঝুড়ি নিয়েছে সে পাশে দাঁড়িয়ে কিভাবে তুলতে হয় তাই দেখিয়ে দিচ্ছে। রোজা মুখে দীর্ঘ হাসি ঝুলিয়ে চা তুলছে তো কখনো খিলখিল করে হেসে উঠছে। মৃন্ময় অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবুজের মাঝে স্নিগ্ধ এক পরী নেমে এসেছে যেন। কি কোমল তার ঠোঁট, গাল আর সেই চোখ! রোজাকে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে যায় তীর্থ। বিভিন্ন পুজে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে দু’জনেই। আলী পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তীর্থ-রোজাকে খুবই পছন্দ করে সে। কিন্তু পছন্দ করার কারণটা কিছুতেই ধরতে পারে না আলী। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে ফিরে এলো রোজা। মৃন্ময় অন্যদিকে তাকায়। চা বাগানের এই সবুজের ভীরেও যেন রোজার মুখটাই ভাসতে তার চোখে। তারসাথে রোজার ওই টোল পড়া স্নিগ্ধ গালদুটো ছুঁয়ে দেওয়ার ইচ্ছেটাও যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। কিন্তু মৃন্ময় সামলে নেয়। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার অসাধারণ ক্ষমতা দিয়ে ঢেকে ফেলে সব কম্পন। লুকায়িত দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে যায় তাহেরা পতামকে খুঁজতে। খানিকবাদে পেয়েও যায়। তাহেরা পতাম মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ। রোদে পোড়া চামড়ায় মোড়া শক্তপোক্ত শরীর। মৃন্ময় নিজের পরিচয় দিতেই অবাক চোখে তাকায় সে। মৃন্ময় ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতেই মাথা দোলায় তাহেরা। মৃন্ময় প্রশ্ন করে,
— “শাইয়াম চাং এখন কোথায় থাকে জানেন? উনার ঠিকানা আছে আপনার কাছে?”
লোকটি মাথা হেলিয়ে বলে,
— “সে তো অনেক বছর আগের কথা। ১৪ বছর আগে যে বাড়ি ফিরেছে তারপর আর কখনো সিলেটে আসে নি সে। কেন আসে নি , কে জানে! শাইয়ামের ঠিকানা তো আমার কাছে নাই তবে ওর বাড়ি থুইসাপাড়া।”
তীর্থ ভ্রু কুঁচকে বলে,
— “থুইসাপাড়া? এটা তো বান্দরবানে তাই না?”
তাহেরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
— “হ্যাঁ। বান্দরবানে। আপনারা সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।”
৫৬.
পাখির কিচিরমিচিরে ঘুম ভাঙে আরুর। পিটপিট করে তাকিয়ে ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখে —– ১০ঃ০৫। আরু ঝটপট ওঠে বসে। এতো দেরী হয়ে গেছে অথচ কেউ জাগায় নি তাকে? অদ্ভুত! আড়মোড়া ভেঙে ঘর থেকে বেরিয়েই লিনা আর আরিফকে চোখে পড়ে। লিনা টোলে বসে মুখ টিপে হাসছে আর আরিফ রান্না করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। আরু মুচকি হেসে সেদিকে পা বাড়িয়েও ঘুরে ঘরের পেছন দিকটাই চলে যায়। পুকুর পাড়ে পা ভিজিয়ে বসে। ঠিক তখনই দুটো গাড়ি এসে থামে তাদের বাড়ির সামনে। আরু ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ভাবে, এখানে কে আসতে পারে? তাও আবার গাড়ি দিয়ে? আচ্ছা? রাফিন নয়তো? আরু নিজের মাথায় গাট্টু মেরে বলে,
— ” ধেৎ! ওই লোক এখানে কেন আসবে? আর জানবেই বা কিভাবে যে তারা এখানে আছে?”
কপাল কুঁচকে কিছুক্ষন আজগুবি কিছু চিন্তা করে ওঠে দাঁড়ায় আরু৷ গাড়িগুলোর দিকে দু’পা এগিয়ে যেতেই পিলে চমকে ওঠে তার। রাফিন! রাফিন ব্রাউন শার্ট আর হোয়াট জিন্স পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।দুই হাত পকেটে ঢুকানো আর মুখে দীর্ঘ হাসি। ভয়ে আরুর হাত-পা কাঁপছে। মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরছে, রাফিন এখানে কেন? কেন? কেন? আরুকে দেখতে পেয়ে হাসিটা আরো দীর্ঘ হয় রাফিনের। বাঁকা হেসে বলে,
—” হ্যালো জানু? লুকিং প্রিটি।”
আরু ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে একটা দম টেনে নেয় সে
খানিকটা এগিয়ে এসে বলে,
— “আপনি এখানে কেন এসেছেন?”
রাফিন যেন আকাশ থেকে পড়ছে এমন ভাব নিয়ে বলে,
— “কেন এসেছি মানে? তুমি এই গ্রামের ভাঙা বাড়িতে থাকবে আর আমি রাজমহলে তা কি হয় জানু? এনিওয়ে? তোমার ভাই কোথায়?”
ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছে আরিফ আর লিনা। রাফিনকে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে আরিফ তারথেকেও বেশি রেগে গেছে। আরিফ দু’পা এগিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— “এখানে কেন এসেছেন মিষ্টার.চৌধুরী?”
রাফিন অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে,
— “আহা! আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন ব্রাদার- ইন- লো। আমার শশুড়বাড়ির আর আমি আসবো না তাই কি হয়? তবে আমি কিন্তু এমনি এমনি আসি নি। আরু কাল রাতে জেদ করলো বলেই এলাম। আমি তো ওকে এটাও বলেছিলাম, “আরু জানু? তোমার ভাই তো তার বোনের পালিত কুকুরকে সহ্য করতে পারে না সোনা। আমি না গেলে হয় না?” কিন্তু সে কি কথা শুনতে রাজি বলুন? ডিরেক্ট বলে দিলো, সহ্য না করতে না পারলো। বেশি কথা বললে সেদিনের মতো আরো দু’ঘা লাগিয়ে দিবেন তবু আপনি আসুন। ”
রাফিনের কথায় চোখ বড়বড় করে তাকায় আরু। রাগী গলায় বলে,
— “কি সব ফালতু কথা বলছেন আপনি? চলে যান এখান থেকে।”
রাফিন শান্ত গলায় বলে,
— ” জানু? তুমি তোমার ভাইকে দেখে ভয় পাওয়াটা বন্ধ করো তো। এবার নাটক না করে তাড়াতাড়ি চলো। কাল তো চেঁচিয়ে মাথা খেয়ে ফেলছিলে এই গ্রামে ভালো লাগছে না। বিদ্যুৎ নেই। কিসব হাবিজাবি খেতে হয়। এখন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি চলো…”
রাফিনের কথার মাঝ পথেই শান্ত গলায় বলে উঠে আরিফ,
— “আপনার নাটক শেষ হলে আপনি যেতে পারেন মিষ্টার.চৌধুরী।আপনার নাটক দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছেও আমাদের নেই।”
রাফিন হেসে বলে,
—” আপনার ধারনা আমার কাজকর্ম ফেলে এখানে আপনাদের নাটক দেখানোর মতো সময় আছে আমার? নাটক আমি নই আপনার বোন করছে। আরু এসব বন্ধ করে তাড়াতাড়ি চলো তো। দু’ঘন্টা পর আমার একটা মিটিং আছে সোনা। ”
কথাটা বলে পকেট থেকে ফোন বের করে রাফিন। আরিফের সামনে ফোনটা ধরে বলে,
— “ম্যাসেজগুলো দেখলে আপনার হয়তো আমার কথা বিশ্বাস হবে ব্রাদার-ইন-লো। এটা আপনার বোনের আইডি না? ম্যাসেজগুলো পড়ুন। আসলে আপনার বোন একটু বাচ্চা তো…”
আরিফ ভ্রু কুঁচকে ম্যাসেজগুলো পড়ে। ম্যাসেজগুলোতে আরু আর রাফিনের লুতুপুতু কথা আর আরিফকে নিয়ে বাজে কথার ছড়াছড়ি। রাফিন হুট করে ফোনটা সরিয়ে নিয়ে বলে,
— “আর পড়তে দেওয়া যাবে না। নিচে আপনার বোনের সাথে প্রাইভেট কথা আছে। ওসব ভাই হিসেবে আপনার দেখাটা ভালো দেখায় না।”
আরু দ্বিধাগ্রস্তভাবে তাকায়। আরিফের হাত খামচে ধরে বলে,
— “এসব মিথ্যা ভাইয়া। বিশ্বাস কর!”
আরিফ একহাতে বোনকে জড়িয়ে ধরে। রাফিনের দিকে তাকায়। বাঁকা হেসে বলে,
—” এসবে কোনো কাজ হবে না মিষ্টার.চৌধুরী। আমার বোন আপনাকে আসতে বলে থাকলেও আমার বোনই এখন আপনাকে যেতে বলছে। চলে যান। জাস্ট গো।”
রাফিন পকেটে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়।
—” তা তো সম্ভব নয়। এখন ফিরে গেলে একটু পরই ফোন দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করবে আপনার বোন। শী লাভস্ মি আ লট। আপনাকে দেখে ভয় পায় বলেই এমন করছে। এমনটা ও আমায় ফোনেও বলেছিলো। বিশ্বাস হচ্ছে না? ওয়েট!”
রাফিন আবারও ফোন ঘেঁটে রেকর্ডিং চালু করে। সাথে সাথেই ভেসে আসে আরুর কন্ঠস্বর। রাফিন আর আরুর কথামালা। আরু চমকে উঠে। ফোনে নিজের কন্ঠস্বর শুনে অবাক হয় সে। এটা কিভাবে সম্ভব? আরু ফোনে আরিফকে বাজে কথার ফোয়ারায় ঢুবিয়ে এখান থেকে উদ্ধার করতে বলছে ওকে। এখানে নাকি ওর দমবন্ধ হয়ে আসছে। আরিফ-লিনাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না হেন তেন। আরিফ স্থির দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলে উঠার আগেই রাফিন আরুর হাত টেনে নিজের কাছে দাঁড় করিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
—“আরু বেবি? তোমার পেছনে যারা দাঁড়িয়ে আছে সবার হাতেই রিভলবার আছে। খেয়াল করে দেখো। আমার কথামতো চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ো নয়তো তোমার ভাই,ভাবি,বাপ সবাইকেই মেরে রেখে যাবো। ইউ নো হোয়াট? রাফিন চৌধুরী প্রতিশোধের জন্য যেকোনো কিছু করতে পারে। যেকোনো কিছু! ”
আরু টলমলে চোখে তাকায়। রাফিন এবার হাসিমুখে বলে,
—” জানু? দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও গাড়িতে গিয়ে ওঠো। গো..”
রাফিন চোখ রাঙাতেই দৌড়ে যায় আরু। প্রায় সাথে সাথেই হাত আটকে তাকে থামায় রাফিন। শয়তানী হাসি দিয়ে বলে,
— “সুইটু, তুমি তো ভীষণ দুষ্ট হয়েছো দেখি। বাড়ি যাওয়ার এতো তাড়া? আমি জানি তুমি আমার কাছাকাছি থাকতে চাও বাট আমার একমাত্র ব্রাদার ইন লো আমায় ভুল বুঝবে তা তো হতে পারে না। তাই না? ”
আরুর শরীর ঘিনঘিন করছে। রিভলবারগুলো ছিনিয়ে নিয়ে সবকটা বুলেটই ঢুকিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে রাফিনের বুকে। রাফিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “আসিফ? কাজিকে ডাক।”
কথাটা বলে আবারও আরিফের দিকে তাকায়। শান্ত কন্ঠে বলে,
—” আপনার মনে হচ্ছে আমি গেইম খেলছি তাই তো? কিন্তু আপনার ধারনাটা মিথ্যে। সবকিছু আরুর ইচ্ছেতেই হচ্ছে। দেখুন কাজি আমাদের সাথে আছে। আপনার বোন যদি আমার সাথে যেতে না চায় তো আমি ওকে জোড় করবো না।ও যদি কবুল না বলে তবে বুঝবো সে আমায় চাইছে না। এমনকি কখনো ওর সামনে এসেও দাঁড়াবো না। আর যদি কবুল বলে তাহলে আর…”
এটুকু বলে থামে রাফিন। অমায়িক হাসি দেয়। সবার অগোচরে ফিসফিসে বলে,
— “কান্না নামক ন্যাকামো না করে দ্রুত কবুল বলবে নয়তো তোমার জায়গায় তোমার ফ্যামিলিকে কবুল করতে হবে —- বিয়ে নয় জানু, “আনফরচুনেট ডেথ!” এতোদিনে নিশ্চয় আমার নৃশংসতা সম্পর্কে ধারনা জন্মে গেছে তোমার? সো, হাসি হাসিমুখে কবুল বলে দাও। ওকে জানু?
আরুর হাত-পা নিশপিশ করছে। ঠাটিয়ে একটা চড় বসাতে ইচ্ছে করছে রাফিনের গালে। আরিফ অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। ফোনের রেকর্ডিং শোনার পরও তার মনে হচ্ছে আরু কবুল বলবে না। কিছুতেই না। কিন্তু আরু কবুল বললো। বলতে বাধ্য হলো। আরিফকে অবাক করে দিয়ে কবুল বলেই দৌঁড়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো আরু। আরিফ-লিনা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিনের শেষের গা জ্বালানো কথাগুলো তাদের কানে ঢুকলো না। তারা শুধু তাকিয়ে আছে। স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। কি হলো এসব?
# চলবে…
#part_31
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943508383165956/
#part_29
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943503726499755/