#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৭,০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
০৭
*ছেলেটি অর্শির মুখ চেপে ধরলো। যাতে অর্শি চিৎকার না করে। ছেলেটি অর্শিকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলছে “প্লিজ চিৎকার করিস না। আমার কাছে টিকেট নাই। প্লিজ ভাই”! অর্শি ভয়ের কারনে ছেলেটির বলা কোনো কথাই কানে নিলো না। ছেলেটি অর্শির মুখ চেপে ধরতেই অর্শি ভয় পেয়ে যায়। আত্নরক্ষার চেষ্টা করার জন্য অর্শি ছেলেটির মুখের উপর থাকা কাপড়টা টেনে খুলে ফেললো। ছেলেটির মুখের কাপড় সরে যেতেই অর্শি অবাক হয়ে যায়। চিৎকার এর শব্দ ছোট হয়ে এসে তার চোখে মুখে কৌতুহলের ছাপ উঁকি দিতে লাগলো। ছেলেটি আর কেউ নয় আয়াদ। আয়াদ অর্শির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু তা ছিলো কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি। আয়াদ কোনো শব্দ করছে না। অর্লির কোমল পিংকালার ঠোঁট জোড়া তার হাতের তালুতে স্পর্শ করছে। আয়াদ সেই স্পর্শের আবেশ নিজের মনের মধ্যে মাখছে। চোখ দিয়ে আয়াদ বারংবার প্রকাশ করে চলেছে অর্শিকে নিয়ে তার হৃদয়ের অনুভুতি। প্রকাশ করে চলেছে অর্শির প্রতি তার মুগ্ধতা অবিরত। অর্শি আয়াদের মতিভ্রম দেখে ভিশন বিরক্ত হয়ে যায়। রেগে গিয়ে অর্শি আয়াদের হাতের তালুতে নিজের পিওর দাঁত জোড়া বসিয়ে দিলো শক্ত করে। আয়াদ নিজের হাতের তালুর মধ্যে ব্যথা অনুভব করতেই নিজের ঘোরে ফিরে আসে। অর্শির মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে মৃদু চিৎকার করে উঠলো আয়াদ।
— উফফফফ! খোদা কি মেয়েরে বাবা! হাতে কামড় দিয়ে দিলো। এই তুই আমায় বলতে পারতিস তো কিছু? তা না করে কেনো আমার হতে কামড় বসিয়ে দিলি?
— আহহহহ রে…..! আপনি আমার মুখের উপর হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছেন আর আমি আপনাকে কিছু বলবো তাই না। কি লজিক ভাই! আপনি এখানে কেনো আগে সেটা বলুন।
— আমি এখানে কেনো মানে? তুই একা একা কোথাও যেতে পারিস না। তাই তোকে নিরাপত্তা দিতে আমি নিরাপত্তা কর্মী হয়ে তোকে পাহাড়া মানে তোকে সেভ করতে এসেছি। যাতে করে তোর ভ্রমণ পিপাসু মন বিনা ভয়ে ভ্রমণের মজা নিতে পারে।
— বাহহহ, বাহহহ! কবে থেকে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিলেন?
— যবে থেকে তুই একা চলতে ভয় পেতে শুরু করেছিস। তবে থেকে।
— তাই আয়াদ ভাইয়া! আচ্ছা আপনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ। কথাটার মানে জানেন?
অর্শির কথা আয়াদের হাস্যজ্বল মুখটার মধ্যে কালো আঁধার জমিয়ে দিলো। অর্শির কথার মনে সেই দিনকার কথা যে দিন অর্শির সাথে সে বাজে ব্যবহার করে ছিলো। আয়াদ এক মিনিটের মধ্যে নিশ্চুপ হয়ে যায়। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। আয়াদ মাথাটা নিচু করে ফেললো। “ভুল না হয় সেই দিন আমি করে ছিলাম। হ্যাঁ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি। তবে তার সম্পূর্ণ দোষ আমার একার না। যদি ঐ দিনের জন্য আমাকে অপরাধী হতে হয় তবে সেই একি ভুলের সমান অপরাধী অর্শি তুই নিজেও। তুই আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে ছিলি বলেই এতো কিছু হয়েছে। কিন্তু অর্শি আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে তোর থেকে দূরে চলে এসেছি। ক্ষমা চেয়েছি বারবার কিন্তু তুই ক্ষমা করতে পারছি না। নির্লজ্জ বেহায়া হয়তো আমি তাই বারবার তোর কাছে ফিরে আসি। যেচে অপমানিত হতে”। মাথাটা নিচু করে কথা গুলো ভাবতে লাগলো আয়াদ। অর্শি ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো। আয়াদ অর্শির পাশে বসে থাকলেও একটা ভাবনার উপর ভর করে আছে সে।”অর্শির কাছে বারবার অপমানিত হবার থেকে দূরত্ব তৈরি করে ফেললেই হয় তো ভালো হবে। কারন অর্শি আমার উপস্থিতিতে চরম বিরক্তি বোধ করে। একটা মানুষকে শুধু শুধু বিরক্ত করার কোনো মানে হয় না”।
— আরে আয়াজ ভাইয়া কখন এসেছেন?
কৌতুহলপূর্ণ কন্ঠেস্বর টি অনুর। অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটি। আসলে আয়াদের আসার কথা না থাকার পরেও আয়াদ চলে এসেছে তাই হঠাৎ করে আয়াদকে দেখতে পেয়ে যে কেউ একটু অবাক হবেই। আয়াদ অনুকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে জবাব দিলো
— তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে ছুটে আসলাম।
— সত্যি ভাইয়া আপনি না থাকলে ট্রিপে মজা নেই। আপনি কি ফ্রি আছেন?
— হ্যাঁ, ফ্রি আছি। কিছু বলবে?
— ভাইয়া আপনার সাথে গল্প করতে ভিশঞ ইচ্ছে হচ্ছে। আপনি আমার সাথে চলুন। কফি খেতে খেতে গল্প করা যাবে।
আয়াদ অনুর কথার অমর্যাদা করলো না। অর্শির পাশ থেকে উঠে গিয়ে চলে আসে অনুর সাথে। অর্শি ভাবনায় মগ্ন থাকায় আয়াদের চলে যাওয়া উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়। আয়াদ অনুর সাথে অনুর কম্পার্টমেন্টে চলে আসে। অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে একটু লাজুক কন্ঠস্বর নিয়ে বলতে লাগলো
— আচ্ছা আয়াদ ভাইয়া আপনি এতো সুন্দর করে গল্প লিখেন! জানেন আমি আপনার বিরাট ফ্যান। আপনার গল্প পড়ে আপনার প্রেমে পরে গেছি।
অনুর কথা শুনে আয়াদ মৃদু হেসে ফেললো। কফির কাপে আলতো চুমুক দিতে দিতে আয়াদ অনুকে বলল
— ধন্যবাদ। কিন্তু যতটা বলছো ততটা ভালো গল্প লিখতে আমি পারি না। যাই হোক পড়াশোনার কি অবস্থা?
— আসলে ভাইয়া পড়াশোনার অবস্থা বেশ ভালো নয়। কারন আমি লেখকদের উপর ক্রাশ খেয়ে পড়াশোনা করতে ভুলে যাই। আর কতকাল যে সিঙ্গেল থাকবো! আমার সমস্যা গুলোর সমাধান কি? একটু বলবেন?
— এই সব শুধু মাত্র মনের ফাজলামি। আর কিছু না। মনকে শান্ত করে ফোকাস করো হয়ে যাবে।
— আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলুন। আপনার জিএফ আছে? সত্যি বলবেন প্লিজ!
কথাটা বলা শেষ করতেই অনু আয়াদের হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করে নিলো। অনুর ব্যবহার আয়াদকে একটু বিচলিত করলো। এটা কেমন ব্যবহার? আয়াদ নিজের হাত অনুর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে যাবে এমন সময় আয়াদের কাঁধের উপর থেকে কেউ একজন ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠল
— বাহহহহ! ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট কে কি করে নিজেদের বেড রুম বানিয়ে ফেলতে হয়? তা মিস্টার আয়াদের থেকে শিখতে হবে।
আয়াদ মুখ ঘুরিয়ে দেখতে পেলো অর্শি দাঁড়িয়ে আছে। অর্শিকে দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। অনু আয়াদের হাত ছেড়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এই সব কি বলছিস তুই? কাকে কি বলতে হয় ভুলে গেছিস?
অর্শি অনুর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে বলতে লাগলো
— উঁহু। আমি ঠিক ঠাক কথা বলি সব সময়। আর যাকে যা বলতে হয় তাই বলছি।
অর্শির কথা শেষ হতেই আয়াদ সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো
— অর্শি নিজের লিমিট ক্রস করিস না। আমি অনুর সাথে এমনি গল্প করছিলাম। এই সাধারণ ব্যাপারটাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা আমি সহ্য করবো না।
— তাই আয়াদ ভাইয়া! আপনি যে কি তা আমার খুব ভালো জানা আছে। অসহ্যকর।
অর্শি কথাটা শেষ করতেই রেগে গিয়ে হনহন করে চলে গেলো আয়াদের সামনে থেকে। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে যায়। কিছু না করেও বার বার কেনো আমায় অপমানিত হতে হয়? কথাটা ভাবতে লাগলো আয়াদ। আয়াদকে চিহ্নিত দেখে অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— সরি ভাইয়া। আমার জন্য আপনাকে বাজে কথা শুনতে হলো। ওর কথায় কিছু মনে করবেন না প্লিজ! ও পাগল হয়ে গেছে তাই যা তা বকে। প্লিজ, ওর কথায় কষ্ট পাবেন না।
আয়াদ অনুকে থামতে বলে অনুর সামনে থেকে চলে যায়। অর্শির উপর রাগ উঠার থেকে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হতে লাগলো আয়াদের। আয়াদ নিজের কম্পার্টমেন্টে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। অর্শি নিজের সিটে বসে আছে।
*চট্টগ্রাম আসতেই আয়াদ নিজের ব্যাগ পত্র নিয়ে অর্শি অনু ও তার বান্ধবীদের সাথে ট্রেন থেকে নেমে পরলো। সন্ধ্যা হবে প্রায়। হোটেল বেশি দূরে নেই। যেতে প্রায় আধঘন্টার মত সময় লাগবে। আয়াদ অর্শির সাথে গাড়ি করে চলে আসে হোটেলের সামনে। ট্রেনের ঐ ঘটনার পর আয়াদ অর্শির সাথে বা অনু কারো সাথেই কোনো কথা বলেনি। কি করে বলবে? আপসেট মন নিয়ে কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে থাকে না। আয়াদ ভাবছে এখানে আসা টাই কি ভুল ছিলো? কিন্তু না আসলে অর্শিকে চোখে চোখে রাখতাম কি করে? ওকে চোখের আড়াল করলেই যে আমার বুকের মধ্যে তীব্র অশান্তির সৃষ্টি হয়।
আয়াদ গাড়ি থেকে নামতেই অর্শি অনু কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— অনু তুই আর ফারজানা এক সাথে থাকবি। আমি আর মিলি এক সাথে দুটো রুম বুক করা আছে।
কথাটা শেষ করতেই অর্শি আয়াদের দিকে আড়চোখে তাকালো। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে আছে। দুটো রুম বুক করলে সে থাকবে কোথায়? “ওহহহ সিকিউরিটি গার্ডের বোধ হয় রুম থাকে না”। আপন মনে কথাটা বলল আয়াদ। অর্শি নিজের চুল গুলো ঝাপটা মেরে হনহন করে চলে যায় হোটেলের মধ্যে। অর্শি চলে যাবার পরেও অনু আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদ অর্শির চলে যাওয়ার দিকে এক ঘোরে তাকিয়ে আছে।
— ভাইয়া আপনার জন্য কি একটা রুম বুকিং করে দিবো?
অনুর মায়া ভরা কন্ঠস্বর আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ অভিমানী মন নিয়ে অনুকে বলে উঠলো
— উহু আমার ব্যবস্থা আমি নিজেই করে নিতে পারবো। তুমি যাও তা না হলে পরে তোমাকেও আমার মতো বাহিরে থাকতে হবে।
— হুম।
* হোটেলের নিচে রেস্টুরেন্টে বসে আয়াদ সিগারেট ফুকছে আর হালকা করে ড্রিংক করছে। স্বভাবত মাঝে মধ্যে ড্রিংক করাটা আয়াদের একটা হ্যাবিট। আয়াদ ড্রিংক শেষ করে নিজের বুক করা রুমের দিকে চলে যেতে লাগলো। করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে আয়াদের চোখ পরলো অর্শির রুমের দিকে। আয়াদ অর্শির রুমের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। আয়াদ দেখতে পেলো অর্শির রুমের মধ্যে………………………..
#চলবে……………………..
#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৮
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ দেখতে পেলো অর্শির রুমের মধ্যে অনু সহ বাকি মেয়েরা বসে আছে। সকলের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আয়াদ ভাবছে “সব তো ঠিক ছিলো। হঠাৎ করে সবাই এক রুমের মধ্যে অর্শিকেও দেখতে পাচ্ছিনা। কোনো ঝামেলা হলো না তো”? আপনমনে কথাটা বলল আয়াদ। আয়াদ করিডোর থেকে অর্শির রুমের দিকে এগিয়ে এলো। অর্শির রুমের কাছে আসতেই অনু আয়াদকে দেখে দৌড়ে আয়াদের দিকে ছুটে চলে এলো। আয়াদ অনুকে বিচলিত দেখে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তোমাকে দেখে চিহ্নিত দেখাচ্ছে ভিশন। সব ঠিক আছে তো? অর্শি কোথায়?
অনু আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বিচলিত কন্ঠে বলতে লাগলো
— আয়াদ ভাইয়া অর্শি রুমে নেই। এখনে আসার পরে হঠাৎ ও রুম থেকে বেরিয়ে কোথায় যেনো চলে গেছে। ওর বোনটাও বন্ধ।
অনুর কথাটা আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। এই সব কি বলছে অনু? অর্শি একা একা কোথায় গেলো? অচেনা জায়গা। অর্শি তো এই অচেনা শহরের কিছুই চেনে না। মিনিটের মধ্যে আয়াদের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। আয়াদকে নিশ্চুপ হয়ে যেতে দেখে অনু মৃদু কান্না ভেজা কন্ঠে আয়াদকে বলতে লাগলো
— ভাইয়া কিছু একটা করুন আপনি। অচেনা শহরে অর্শির কোনো বিপদ হলো না তো? আপনি একটু ওকে খুঁজে নিয়ে আসুন। প্লিজ!
আয়াদ অনুকে শান্ত করতে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— তোমরা চিন্তা করো না। নিজেদের রুমে যাও। আমি অর্শিকে নিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, আমার ফিরে আসার আগ পর্যন্ত কেউ রুম থেকে বের হবে না। ওকে
আয়াদ কথাটা শেষ করতেই দৌড়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে আয়াদ পরলো মহা ঝামেলায় এতো বড় শহরে অর্শি কোন দিকে গেছে? সেটা সে আঁচ করবে কি করে? আয়াদ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো রাস্তার পাশে কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ দৌড়ে তাদের দিকে চলে যায়। পকেট থেকে ফোন বের করে আয়াদ তাদেরকে অর্শির ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো
— ভাইয়া এই মেয়েটিকে দেখেছেন? ঘন্টা খানেক আগে এখানেই ছিলো। আপনারা কেউ কি দেখেছেন?
— না ভাই। আমরা একটু আগেই এখানে এসেছি। সঠিক বলতো পারবো না।
— ওহহ।
আয়াদ আবারও ছুটতে লাগলো। একে একে রাস্তার পাশের সব গুলো দোকান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা লোককে জিজ্ঞাসা করলো অর্শির ব্যপারে কিন্তু সবার থেকে হতাশার উত্তর ছাড়া আর কোনো উত্তর পেলো না সে। আর কোথায় খুঁজবে অর্শিকে? নানা ধরনের চিন্তা মাথায় এসে ভর করে চলেছে। অর্শি ঠিক আছে তো? আমায় না বলে কেনো হোটেল থেকে বের হলি? এতো জেদ তোর। এখন আমি কোথায় খুঁজবো তোকে? চিন্তায় চিন্তায় আয়াদের হাত পা কাঁপছে। চিন্তার ছাপ স্পষ্ট আয়াদের মুখে। আয়াদ আরো একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলো রাস্তাটা ক্রমশ নিরব হয়ে আসছে। আয়াদ নিজেও জানে না সে কোথায় এসেছে? আয়াদ আরো একটু এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো একটা চা এর ছোট্ট দোকান। আয়াদ চা এর দোকানের দিকে দৌড়ে ছুটে আসতেই দেখতে পেলো একটা ষাট উর্ধ্ব বয়স্ক লোক চা বানিয়ে চলেছে। আয়াদ সেই লোকটির দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলো
— আংকেল একটু দেখুন তো এই মেয়েটিকে কি আপনি দেখেছেন কি না! আনুমানিক ঘন্টাখানেক…….!
আয়াদকে সম্পূর্ন কথা শেষ করার পূর্বেই লোকটি ফোনের স্ক্রিনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে উঠলো
— হ্যাঁ, কিছুক্ষণ আগেই এই মেয়েটি এখানে এসেছিলো। ফোন রিচার্জ করাতে। কিন্তু আমি তো রিচার্জ করাই না। তাই ফিরিয়ে দিয়েছি।
আয়াদের মলিন ফ্যাকাশে মুখের কোনে সেকেন্ডের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ উঁকি দিলো। আয়াদ লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— আংকেল দয়া করে আমায় বলুন যে এই মেয়েটি তারপর কোন দিকে গেছে? প্লিজ! একটু মনে করে বলুন।
লোকটি আয়াদের কথা শুনে একটু চিন্তা করে উত্তর দিলো
— বাবা একদম সিওর হয়ে তো বলা যাবে না। কিন্তু আমার যতদূর মনে পরে তারপর এই মেয়েটি এদিকে দিয়ে চলে গেছে।
— ধন্যবাদ আংকেল। অনেক ধন্যবাদ।
আয়াদ চা এর দোকান থেকে বেরিয়ে ঐ চা এর দোকানির বলা পথে ধরে দৌড়ে ছুটে চলল আর অর্শি অর্শি বলে চিৎকার করতে থাকলো। পথটা একদম নিরব। আশে পাশে কোনো মানুষের শব্দ নেই। এমন একটা পরিবেশে অর্শি কি করে আসতে পারে তাও একা এটাই মাথায় ঢুকছে না তার। আয়াদ চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে গলা প্রায় শুকিয়ে ফেলেছে। এখন চিৎকার করতেও পারছে না ঠিক মতো। মনে হচ্ছে গলা ফেটে যাবে তার। আয়াদ আরো কিছু সময় দৌড়াতে থাকার পরে হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে পরে যায় সে। পিচ ঢালা পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতেই আয়াদের হাত ও পা এর কিছু অংশ ছিঁড়ে যায়। অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে আয়াদের। কিন্তু এই যন্ত্রণার থেকে মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অসহ্যকর যন্ত্রণাটা বড্ড বেশি কষ্ট দিচ্ছে তাকে। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার দৌড় দিলো। কিছু সময় দৌড়ে এগিয়ে আসতেই আয়াদ দেখতে পেলো দূরে একটা আবছা আলোয় কারো অবয়ক দেখা যাচ্ছে। আয়াদ দৌড়ে ছুটে চলল সেই অবয়ককে অনুসরন করে। চিৎকার করে ডাকছে আয়াদ। এটাই অর্শি। আয়াদের ডাকে অবয়কটা দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ আরো দ্রুত গতিতে ছুটে চলল। অবয়কটা পূর্ণ একটা মানুষ। আয়াদ অর্শিকে দেখতে পেলো। অর্শির কাছে আসতেই আয়াদ হাঁটুর উপর ভর করে হাঁপাতে হাঁপাতে অর্শির দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অর্শির মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আয়াদকে দেখতে পেয়ে অর্শি দৌড়ে আয়াদের কাছে চলে আসে। আয়াদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অর্শির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে গজগজ করতে করতে বলতে লাগলো
— তোর কোনো কমনসেন্স নাই? মাথার নাট বল্টু কি ঢিলে সব? একা একা কেনো বেশ হলি? যা প্রয়োজন ছিলো আমায় বললে কি পাপ হয়ে যেতো? আজ যদি একটা অঘটন ঘটে যেতো তখন কি হতো? কে দায় দিতো? বাবা মা কে বা কি জবাব দিতাম? আমার থাকার পরেও…..!
অর্শি আয়াদকে সম্পূর্ন কথা বলার সুযোগ দিলো না। দৌড়ে ছুটে চলে আসে আয়াদের বুকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়াদকে। অর্শির সম্পূর্ণ শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। ভয়ে মেয়েটা কাঁপছে। আয়াদ অর্শির অবস্থা ঠিক বুঝতে পারলো। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে অর্শির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো
— আরে পাগলি মেয়ে আমি চলে এসেছি আর ভয় পেতে হবে না তোকে।
অর্শি আয়াদের কথা শেষ হতে না হতে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। আয়াদ অর্শিকে শান্ত করার জন্য অর্শিকে নানা রকম কথা বলতে লাগলো। কিন্তু অর্শির কান্না থামছে না। অর্শি কান্না করতে করতে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— আপনি অনেক খারাপ লোক। আমি আপনার উপর জেদ করে বেরিয়েছি। আমি রিচার্জ না করতে পেরে আবার হোটেলেই ফিরে যেতে নিয়েছি কিন্তু আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। এই নির্জন জায়গায় একা একা ভয়ে আমি মরেই যাচ্ছিলাম। আমাকে প্লিজ বাড়ি নিয়ে চলুন। আমি আর এখানে থাকবো না।
আয়াদ অর্শির কথা শুনে মৃদু হেসে বলতে লাগলো
— এএএ এতো রাতে বাড়ি যাবি কি করে? আর শোন আমি তোর সিনিয়ার ওকে। আর আমাকে যাই ভাবিস না কেনো তাতে আমার কিছুই আসবে যাবে না। কিন্তু অর্শি একটা কথা। জেদের বসে কখনও আর এমনটা করবি না। আজ হয়তো কোনো বিপদ হয়নি তোর। কিন্তু সব সময় তো আর সেইফ থাকবি না। তাই বলছি রেগে গেলেও কিছুর দরকার হলে যাস্ট আমায় বলবি। হয়তো তোর আপন হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু বিশ্বাস কর তোকে নিজের থেকেও বেশি আপন মনে করি আমি। আমার সব থেকে কাছের হলি তুই। আর কখনও এমন করিস না। চল হোটেলে ফিরে যাই।
* আয়াদ অর্শিকে নিয়ে হোটেলের দিকে চলতে শুরু করলো। অর্শি এখনও ভয় পেয়ে আছে। আয়াদের হাত জোড়া শক্ত করে চেপে ধরে আছে অর্শি। আয়াদ অর্শির সাথে কথা বলতে থাকলো। যাতে করে একটু হলেও অর্শির ভয়টা কমে যায়। হোটেলে ফিরতেই অর্শিকে নিজের রুমে দিয়ে এসে আয়াদ নিজের রুমে চলে এলো। নিজের রুমে এসে আয়াদ আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে এসে আয়াদ সোফায় বসে একটা শান্তির নিশ্বাস ফেললো। এতো সময় পরে নিজের মনকে একদম শান্ত লাগছে। প্রিয়জনের বিপদে বিচলিত হয়ে পরে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দায়।
* সকাল হতেই আয়াদ বিছানা থেকে উঠে পরলো। হাত পা এর অনেক জায়গা ছিঁড়ে গেছে বলে সামান্য একটু যন্ত্রণা হচ্ছে। আয়াদ ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই চমকে গেলো। আয়াদ রুমে এসে দেখতে পেলো অনু বসে আছে সোফায়। এতো সকাল সকাল অনু আমার রুমে! এই বিষয়টা একটু অদ্ভুত লাগলো। আয়াদ অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— কি ব্যাপার অনু? এতো সকাল সকাল আমার রুমে!
আয়াদের কন্ঠেস্বর পেতেই অনু সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো
— না আসলে ভাইয়া কাল রাতে তো আপনার সাথে কথা বলার তেমন একটা সুযোগ পাইনি। তাই সকাল সকাল চলে আসলাম ভাবলাম চা খেতে খেতে গল্প করা যাবে। আপনি কি ফ্রি আছেন?
— হুম ফ্রি আছি।
“আজ আবার গল্প করতে আসার ছিলো? গতকাল ট্রেনের কথা মনে নেই মনে হয়। অর্শি এতো সকালে অনুকে আমার রুমে দেখতে পেলে আবার আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা শুরু করে দিবে। কি অশান্তি রে বাবা”। আপন মনে কথাটা শেষ করে আয়াদ ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা এঁকে অনুর বিপরীতে বসে পরলো। চা এর কাপ হাতে নিয়ে তা খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো আয়াদ।
— এই মিলি শোন আমি একটু আয়াদ ভাইয়ার রুম থেকে ঘুরে আসছি। সকাল সকাল বেরিয়ে আসবো সাগর পাড়ে। তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা শেষ করে দয়া করে আমার ব্যাগটা গুছিয়ে দিস।
— ওকে। জানু তাই হবে।
”এই মেয়ে হয়েছে সারা দিন বয়ফ্রেন্ডের সাথে কি কথা বলে আল্লাহ ভালো জানে। এতো কথা বলার কি হলো? আর কথা বলতে বলতে কি এদের কাছে কথা শেষ হয়ে যায় না? কি জানি আমি তো কারো সাথে দু লাইনের বেশি কথা বলতেই আর কথা খুঁজে পাই না। যাই হোক আমি বরং আয়াদ ভাইয়ার রুম থেকে ঘুরে আসি”। কথাটা আপন মনে বলতে বলতে অর্শি চলে যায় আয়াদের রুমে। আয়াদের রুমের দরজার কাছে আসতেই অর্শি শুনতে পেলো অনুর হাসির শব্দ। হাস্যজ্বল মুখটার এক মিনিটের মধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে যায় অর্শির। “আয়াদ ভাইয়ার রুমে অনু। এতো সকালে”! মনে মনে কথাটা বলল অর্শি। আয়াদের রুমের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ আর অনু গল্প করছে। অর্শির মুডটাই খারাপ হয়ে যায় এই দৃশ্য দেখার পরে। অর্শি আয়াদের রুমে প্রবেশ না করে আবার নিজের রুমের দিকে ফিরে আসে।
* অনুর সাথে গল্প শেষ করে আয়াদ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে অর্শির সাথে দেখা করতে অর্শির রুমে চলে আসে। অর্শির রুমে আসতেই আয়াদ অবাক হয়ে যায়। আয়াদ অর্শির রুমে এসে দেখতে পেলো অর্শি………………………
#চলবে…………………….