#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৯,১০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
০৯
*আয়াদ অর্শির রুমে এসে দেখতে পেলো অর্শি তার রুমে নেই। অর্শিকে রুমের মধ্যে না দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু অবাক হলো। এই সময়ে অর্শি গেলো কোথায়? অর্শির রুমমেট অর্শির বান্ধবীকে আয়াদ জিজ্ঞেস করলো
— আচ্ছা আপু অর্শি কোথায়? ওকে দেখছি না যে!
অর্শির বান্ধবী আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল
— আয়াদ ভাইয়া অর্শি তো আপনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। আপনার সাথে কথা হয়নি ওর?
মেয়েটার কথা শুনতেই আয়াদ থ মেরে যায়। আপনমনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো আয়াদ “অর্শি আমার সাথে দেখা করতে গেলে আমার সাথে দেখা না করেই যে চলে এলো! অনুকে আমার রুমে আবার দেখে কি রাগ করলো নাকি? আচ্ছা রাগ কেনো করবে? আমি কি ওর বর নাকি যে আমার পাশে অন্য কেউ আসলে তাতে রিয়েক্ট করতে হবে! এখন আবার কোথায় গেলো আল্লাহ জানে। মেয়েটা আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না” আয়াদ কথাটা ভাবতেই অর্শির বান্ধবী আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— আয়াদ ভাইয়া সব ঠিক আছে তো? আপনি কি চিহ্নিত?
মেয়েটির কথায় আয়াদের ঘোর কাটলো। আয়াদ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলতে লাগলো
— উহু। আসলে ভাবছি অর্শি গেলো কোথায়? মেয়েটা বড্ড জেদি। দেখছি কোথায় গেলো!
*আয়াদ হোটেল থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলো। এই সময়ে অর্শি হোটেল থেকে বেরিয়েছে মানে আমি নিশ্চিত ও সাগর পাড়ে গিয়েছে। ওখানেই গিয়ে দেখতে হবে।
— অর্শি এমন ভাবে মন মরা হয়ে বসে আছিস কেনো? সাগর পাড়ে এসেছিস চল একটু গোসল করে যাই।
মিলির আনন্দিত কন্ঠেস্বর অর্শির কানে আসতেই অর্শি একটা বিরক্তি মাখা কন্ঠ নিয়ে মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— তোর মনের মধ্যে এতো আনন্দ থাকলে যা না সাগরে গিয়ে ডুব দে। আমায় কেনো জ্বালাচ্ছিস? আমি একটু ডিপ্রাইজড। একটু একা থাকতে দে আমায়।
— ওমা ডিপ্রেশনের কারন কি? আমায় বল। আমি তোকে সাহায্য করছি।
— পারবি না রে। আচ্ছা আয়াদ ভাইয়া সব সময় এমন করে কেনো? মানে অনুর সাথে ওনার এতো কিসের কথা থাকবে? উনি কেনো অনুর সাথে আলাদা করে সময় কাটাবে? আমি কি এতোটাই খারাপ তার চোখে যে আমার সাথে বসে একটু কথা বলা যায় না।
অর্শির অভিমানি কন্ঠে বলা এক দীর্ঘশ্বাস যুক্ত কথার মানে মিলির কাছে স্পষ্ট। মিলি অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— ইমা এসব কি বলছিস? আচ্ছা তুই আবার আয়াদ ভাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করলি নাকি? এই সত্যি করে বল আমায়।
— মানে? ওনার মতো একটা হনুমানের বংশধরকে আমি ভালোবাসবো! হাউ ফানি। আমি ওনাকে ভালো টালো কিছু বাসি না। অনু ভালো মেয়ে না তাই আর সাথে আয়াদকে দেখলে আমার সহ্য হয় না। এছাড়া আর কিছু না।
— কিন্তু অনু খারাপ কি? ওকে তো যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে মনে হয়। আর ওর পরিবার ও ভালো।
মিলির কথাটা শুনতেই অর্শি রেগে আগুন হয়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে অর্শি মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— তুই সব সময় বেশি বুঝিস। অনু অনেক খারাপ আয়াদের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায়। যা আমার সহ্য হয় না। আর আমার সহ্য না হলে কি? মানুষ তো ঠিক অনুর সাথে ভালোই থাকে। আমি আর কি বলবো?
অর্শির কথাটা শেষ হতেই অর্শির পিছন থেকে একটা কন্ঠেস্বর ভেসে এলো
— অনুর সাথে আমি গল্প করেছি শুধু আমাদের মাঝে কি প্রেমের সম্পর্ক আছে নাকি? আর যদি থাকেও তাতে তোর কি? আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের দু চারটা গার্লফ্রেন্ড থাকবে না। সেটা কি জাতি মেনে নিবে?
অর্শি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে আয়াদকে দেখতে পেয়ে তার রাগ চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অর্শি রাগে গজগজ করতে করতে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— ওরে আমার জাতির জনক রে। সবাক ঘরে ভালোবাসা পৌচ্ছে দেবার দায়িত্ব নিয়েছেন উনি। দেখলেই গা জ্বলে যায়। শুনুন আপনার চরিত্র সম্পর্কে আমার জানা আছে। আপনি একটা……
— হয়েছে হয়েছে আর গভীরে না যাই। আমার সরল মনের একটাই প্রশ্ন আমায় কিছু না বলে কেনো এখানে এসেছিস?
— আপনি কে ভাই? আপনাকে কেনো বলে আসতে হবে?
— কাল রাতের ঘটনা মনে নেই মনে হচ্ছে।
— এখন সকাল আর আমার সাথে মিলি আছে।
— ওহহহ।
* আয়াদ আর কথা পেঁচালো না। অর্শি এমনিতেই রেগে আছে। এখন আর লাগানো ঠিক হবে না। আয়াদ একটা পাথরের উপর কোনো রকমভাবে বসে পরলো। অর্শি আয়াদের দিকে একটা মুখ ঝামটা মেরে মিলিকে বলতে লাগলো
— চল মিলি আমরা একটু গোসল করে আসি।
অর্শির কথাটা শুনতেই আয়াদ চমকে উঠলো। এই সব কি বলছে অর্শি? এর আগে কখনও তো অর্শি সবার সামনে গোসল করার কথা বলেনি। তবে আজ কেনো বলছে? তাছাড়া অর্শি তো একটা পাতলা পোষাক পরে আছে। কি করতে চায় ও? আয়াদ অর্শির উদ্দেশ্যে কিছু না বলে চুপ করে বসে অর্শির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সাগরের দিকে চলে যায়। আয়াদ অর্শির এমন অদ্ভূত আচরণে হতবাক। অর্শি সাগরে গিয়ে নিজের শরীরে একটু একটু করে পানি দিতে লাগলো। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে রাগে ফেটে যাচ্ছে। এতোটা নোংরা দেখাচ্ছে অর্শিকে। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পাতলা কাপড় ভেদ করে অর্শির শরীরের অবয়ক বাহির থেকে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। আশে পাশের মেয়েরাও ঠিক একি কাজ করছে। পানিতে নেমে শরীরের বিশেষ কিছু অঙ্গ দেখাচ্ছে সবাইকে। বাকিদের নিয়ে আয়াদের মাথা ব্যথা না থাকলেও অর্শিকে নিয়ে যথেষ্ট মাথা ব্যাথা আছে তার। অর্শি পানি নিয়ে ভালোই ইনজয় করছে। আয়াদ আর ধৈর্য ধারন করতে পারলো না। বসা থেকে উঠে রেগে গিয়ে দৌড়ে ছুটে চলে আসে অর্শির দিকে। আয়াদকে অর্শি নিজের সামনে হঠাৎ করে দেখতে পেয়ে একটু অবাক ও অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অর্শি আয়াদকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠল
— আপনি এখানে কেনো?
আয়াদ অর্শির কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। সজোরে কসিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো অর্শির গালে।
— ঠাসসসসস, ঠাসসসসস। নোংরামির লিমিট আছে। আজ তুই সব লিমিট ক্রস করেছিস। ব্লাডি স্টুপিট গার্ল। নিজের দেহ সবাইকে দেখাতে ভালো লাগে তাই না।
আয়াদের চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে আসবে। অর্শি থাপ্পর খেয়ে মাথা নত মস্ত করে আছে। লজ্জায় মাথা উঁচু করার সাহস করতে পারছে না অর্শি। জেদের বসে কি করে ফেললো অর্শি? আয়াদ নিজের শরীরের উপর থেকে ব্লেজারটা খুলে অর্শির দিকে ছুড়ে মারলো। ব্লেজারটা অর্শির দেহের উপর পরতেই অর্শি ব্লেজারটা ধরে নিলো। আশেপাশের সবাই অর্শি আর আয়াদের দিকে নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি মাথাটা নিচু করে ব্লেজারটা পরে নিলো। আয়াদ অর্শিকে রেখেই হনহন করে চলে এলো সাগর পাড় থেকে। আয়াদের মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে। অর্শির কাজে ভিশন কষ্ট পেয়েছে আয়াদ।
— এই অর্শি কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে?
সাগর পাড় থেকে ফিরে এসে অর্শি কান্না করতে লাগলো। অর্শির কান্নার কারন হলো আয়াদের করা অপমান। কিন্তু এতে আয়াদের দোষ নেই। আয়াদ যা করেছে তা ঠিক করেছে। কিন্তু জেদের বসে অর্শি এতোটা অশ্লীল কাজ কি করে করতে পারলো? এটা ভেবেই তার চোখে জল চলে আসছে। অর্শিকে শান্ত করতে তার মিলি বলল
— দেখ অর্শি যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন কান্না করিস না। একটু শান্ত হয়ে যা।
— উহু। আয়াদ ভাইয়া ভিশন কষ্ট পেয়েছে আমার কাজে। ওনার চোখে সারা জীবনের জন্য আমি ছোট হয়ে গেলাম।
— ধূর পাগলি এসব কিছুই না। মানুষ মাত্রই ভুল। আয়াদ ভাইয়া তোকে ক্ষমা করে দিবে। দেখে নিস।
— হুম।
* সন্ধ্যার দিকে অর্শি একটু শান্ত হয়ে যায়। আয়াদের সাথে কথা বলার জন্য খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তার। অতিরিক্ত কান্না করার জন্য অর্শির চোখ ফুলে গেছে। অর্শি নিজের রুমে থেকে বেরিয়ে আয়াদের রুমের দিকে চলে যায়। আয়াদকে সরি বলে আয়াদের থেকে ক্ষমা চাইতে হবে তার। এমন ভুল আর কখনও করা যাবে না। অর্শি আয়াদের রুমের সামনে আসতেই অর্শি অবাক হয়ে যায়। অর্শির চোখ জোড়া থমকে যায় একদম। অর্শি দেখতে পেলো আয়াদ তার রুমের মধ্যে…………………………..
#চলবে……………
#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি দেখতে পেলো আয়াদ তার রুমের মধ্যে বসে বসে ড্রিংক করছে। অর্শি এর আগে কখনও আয়াদকে নেশা করতে দেখেনি। তাই প্রথমবার আয়াদকে এই অবস্থায় দেখে একটু চমকে যায় অর্শি। অর্শি দরজার নিকট দাঁড়িয়ে ভাবছে আপন মনে “আয়াদ ভাইয়া নেশা কেনো করে? এর আগে তো কখনও তাকে এমন অবস্থায় দেখি নাই আমি! কি এমন কষ্ট আয়াদ ভাইয়ের? তার কারনে এই নেশা হঠাৎ করে তার আপন হয়ে গেলো”? অর্শি আপন মনে ভাবছে কথা গুলো। একটা মানুষকে এতো কাছ থেকে দেখার পরেও ঠিক চিনতে পারলো না অর্শি। আয়াদ ড্রিংক করা শেষ করতেই দরজার দিকে চোখ পরলো তার। আয়াদের চোখের সামনে অর্শির ছবিটা দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু বেসুরো কন্ঠে বলে উঠলো
— কিরে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে পাহারা দিচ্ছিস নাকি?
আয়াদের কন্ঠেস্বর অর্শির কানে পৌচ্ছোতেই অর্শি একটু হকচকিয়ে উঠলো। সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে অর্শি বলতে লাগলো
— না না। কাউকে পাহারা কেনো দিবো আমি? এমনি দাঁড়িয়ে আছি।
— ওহহ।
আয়াদ বসা থেকে উঠে ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। ব্যল্কনি থেকে সাগরের দৃশ্যটা স্পষ্ট। আয়াদ ঐ সাগরের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের কিছু অব্যক্ত অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। মানব জীবন অদ্ভুত। আর অদ্ভুত তার প্রতিটি মোড়। আয়াদ পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে গুজে দিলো। লাইটার টা অন করতেই অর্শির কন্ঠ শুনতে পেলো সে। অর্শি তার পিছনে দাঁড়িয়ে একটু গভীর কন্ঠে বলল
— কবে থেকে নিকোটিনের ধোঁয়া আর এই মদের নেশা শুরু করেছেন?
আয়াদ মুখ ঘুরিয়ে অর্শির দিকে না তাকিয়ে ঠোঁটের কোণ থেকে সিগারেটটা নামিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল
— যবে থেকে নিজের জীবন নিজের মতো করে বাঁচতে শুরু করেছি। তবে থেকে এই নিকোটিন আর মদ আমাকে সামলাতে শুরু করেছে।
— কি হয়েছে আমায় কি বলা যাবে?
— উহু, হাসিটা আমার সবার জন্য আর কষ্ট বলি বা বেদনা সেটা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত।
অর্শি আর কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারলো না। এতোটুকু অর্শির কাছে স্পষ্ট যে আজ তার সামনে এক ভিন্ন আয়াদ দাড়িয়ে আছে। এই আয়াদের সাথে পূর্বের আয়াদের বিন্দুমাত্র মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্শি কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে মুখটা মলিন করে আয়াদের রুমের থেকে বেরিয়ে যায়।
— হ্যালো অর্শি কেমন আছো?
করিডোর থেকে নিজের রুমে যাওয়ার আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে অর্শি শুনতে পায় তাকে কেউ ডাকছে। আনমনে অর্শি কথাটাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমের মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বে আবারও অর্শি শুনতে পায়
— কি হলো? জবাব দিলে না যে?
অর্শির মুখ ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো ভার্সিটির সেই ছেলেটি তার সামনে। অর্শি একটু অবাক হয়ে যায় রিহানের উপস্থিততে। রিহান হলো অর্শির ক্লাসমেট। এই রিহান খুব ভালো একটা ছেলে। ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে অর্শির প্রতি একটু বেশিই দূর্বল সে। তবে কখনও অর্শিকে কিছু বলল সাহস করেনি। কারনটা হলো আয়াদ। ভার্সিটির মধ্যে হোক বা বাহিরে অর্শির দিকে যে তাকায় তাকে আয়াদ খুব ভালোবেসে সাজা দিয়ে থাকে। আয়াদ আর রিহানের মধ্যে তফাত হলো রিহান ভদ্র ছেলে। আর আয়াদ হলো অসভ্য। যদিও সবার কাছে আয়াদ ভালো ছেলে হলেও অর্শির কাছে সে বরাবরই খারাপ। রিহানকে দেখে অর্শি একটু অবাক হয়ে বলে উঠলো
— তুমি এখানে? হঠাৎ! বেড়াতে এসেছো বুঝি?
— উহু, আমি শুনেছি তোমরা সবাই চট্টগ্রামে এসেছো। তাই ভাবলাম আমিও চলে আসি। এক সাথে ঘুরতে যাওয়া যাবে। আর সময় ও কাটবে।
— ওহহহ। আচ্ছা তো সবার সাথে দেখা করে যাও।
— না না। একটু আগেই আসলাম। এখন ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট করবো। তারপর আসবো। আর তাছাড়া যার সাথে দেখা করার ছিলো তাকে তো দেখে নিলাম। বাকিদের পরে দেখা যাবে।
রিহানের কথাটা অর্শির ভিশন অবাক লাগে। যাকে দেখার মানে কি? অর্শি রিহানকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী হয়ে বলে উঠলো
— মানে? যার সাথে দেখা করার ছিলো মানে কি?
— না মানে হলো একজনের সাথে দেখা করার ছিলো। তো এসেই তার দেখা পেয়ে গেছি। এখন একটু রেস্ট করতে চাই।
— ওহহহ। আচ্ছা আসছি আমি।
অর্শি কথাটা শেষ করতেই নিজের রুমে চলে যায়। আয়াদের কথা গুলো ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। “ছেলেটা কি এমন কারনে নিজের জীবনটা নষ্ট করেছে? জানতেই হবে আমাকে”।
* সকাল হতেই আয়াদ নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিতে লাগলো। আজ চলে যাবে সবাই। অর্শিও নিজের সব কিছু গুছিয়ে নিলো।
— মিলি তোর হলো? ট্রেন ছেড়ে দিবে তো। তারাতাড়ি কর।
— হুম এই তো শেষ।
অর্শি মিলি রেডি। অনু রেডি হয়ে আয়াদের রুমের দিকে চলে যায়। আয়াদ রেডি হয়েছে কি না তা দেখার জন্য। অনু আয়াদের রুমে আসতেই দেখতে পায় আয়াদ একদম রেডি। অনু দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— আয়াদ ভাইয়া আপনি রেডি হয়ে গেছেন?
দরজার দিকে তাকিয়ে আয়াদ অনুকে দেখতে পেয়ে একটু বিরক্ত হলো। আসলে এই মেয়ে কেনো যে আয়াদের পিছনে পরে থাকে আয়াদের মাথায় আসে না। অনুর বদলে অর্শি আসলে কি হতো? আয়াদ ঠোঁটের কোণে একটা মিছক হাসির রেখা টেনে বলতে লাগলো
— হ্যাঁ, আমি রেডি। তোমরা রেডি তো?
— জ্বি ভাইয়া। আচ্ছা আপনি আসুন কেমন। আমি যাই রিহানের সাথে দেখা করে আসি।
— রিহান এখানে এসেছে?
ভ্রূকুচকে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো আয়াদ।
— জ্বি ভাইয়া। শুনেছি কাল রাতেই এখানে এসেছে।
— ওহহহ। আচ্ছা দেখা করে এসো।
* অনু আয়াদের রুমে থেকে বেরিয়ে চলে যায় অর্শির রুমের দিকে। অর্শি, মিলি, ফারজানা, অনু সবাই মিলে চলে যায় রিহানের সাথে দেখা করতে। রিহানের রুমের সামনে আসতেই দেখতে পেলো সবাই রিহানের রুমের দরজা খোলা। অনু দরজায় নক করে একটু চেঁচিয়ে বলতে লাগলো
— ভিতরে আসবো?
প্রচন্ড ব্যাথা মাখা কন্ঠে ভিতর থেকে রিহান বলতে লাগলো
— হ্যাঁ আসো।
সবাই ভিতরে আসতেই ভিশন অবাক হয়ে যায়। অর্শি চোখ জোড়া ছানা বড়া করে বলে উঠলো
— একি রিহান তোমার একি হাল হয়েছে? কে কেলালো তোমায়?
রিহান বিছানার উপর পরে আছে। পুরো শরীরে আঘাতের ক্ষত। হঠাৎ করে রিহানাকে এমন অবস্থায় দেখবে আশা করেনি কেউ। রিহান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— না না। কেউ মারবে কেনো? আমি ওয়াসরুমে স্লিপ করে পরে গেছিলাম। তাই আরকি….!
— ওয়াসরুমে পরে গিয়ে এই অবস্থা? কেনো জানি অবিশ্বাস্য লাগছে ব্যাপারটা।
কৌতুহল পূর্ণ কন্ঠে বলল অর্শি।
— ঐ আরকি একটু অসাবধানতায় পরে গেছি।
— ওহহ। আচ্ছা আমরা চলে যাচ্ছি। নিজের কেয়ার করো কেমন।
অর্শি তার বান্ধবীদের নিয়ে রিহানের রুম থেকে চলে যায়। ট্রেনে বসে সবাই রিহানের বিষয় কথা বলছে। অর্শি কিছু বলছে না। আয়াদের দিকে তাকিয়ে ভেবে চলেছে আয়াদ কেনো এমন করছে? আয়াদ ও নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। কোনো কথা বলছে না।
* বাড়ি আসতেই আয়াদ নিজের রুমে হনহন করে চলে যায়। অর্শি বাড়ির মধ্যে এসে একটু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ রিতিমত তাকে উপেক্ষা করছে? কিন্তু কেনো? কি করেছে সে? অর্শি আয়াদের মা বাবার সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে অর্শি আপন মনে ভাবতে থাকে আয়াদের কথা। অর্শি ভাবছে “আয়াদ হয়তো তাকে ঐ গোসল করার ব্যাপারটার জন্য এমন উপেক্ষা করে চলছে। কিন্তু আমি তো ওর থেকে ক্ষমা চাইতেই গিয়েছি। আমার এটার সাথে ওর নেশা করার কি সম্পর্ক আছে”? এখন আয়াদ ভাইয়ার রুমে যাওয়া ও যাবে না। এখন আয়াদ ভাইয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করলে উনি চিৎকার চেঁচামেচি করে সবাইকে জানিয়ে দিবে। রাতে দেখি ওনার থেকে সত্যি টা জানতে পারি কি না”! অর্শি কিছুই মাথায় নিতে পারছে না।
রাত হয়ে আ এসেছে। অর্শি নিজের রুমেই বসে আছে। হঠাৎ করে অর্শি দেখতে পেলো কোনো এক লোক তার রুমের সামনে দিয়ে বেশ দ্রুত গতিতে ছুটে বেরিয়ে যায়। অর্শি একটু ভয় পেয়ে যায়। এমনিতেই সবাই নিজের রুমে আছে। মা বাবা এমনকি আয়াদ ভাইয়া হলেও তো আমায় ডাকবে। কখনও চোরের মতো পালিয়ে যাবে না। অর্শি নিজূর রুম থেকে পা টিপে টিপে বেরিয়ে আয়াদের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। লোকটা এই দিকেই গিয়েছে। অর্শি আয়াদের রুমের জানালার কাছে যেতেই বেশ অবাক হয়ে যায়। অর্শি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। অর্শি দেখতে পেলো…………………
#চলবে………