#অপ্রিয়_প্রেয়সী৫২ বোনাস_পর্ব
#লিখা_তানজিলা
বিছানার একপাশে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো পাখি। এই মুহুর্তে কে যেন ক্রমাগত ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে ওকে। প্রথম ভেবেছিলো পাত্তা না দিলে এমনিই থেমে যাবে। কিন্তু তা হলো না। শেষপর্যন্ত সেই অধৈর্য্যের অধিকারী ব্যক্তি হেঁচকা টানে শোয়া থেকে বসিয়ে দিলো ওকে। আকস্মিক হাম*লায় ধরফরিয়ে উঠলো পাখি। ওর ঘুম ভাঙানোয় সামনের ব্যক্তির দিকে না তাকিয়েই কষে এক চ*ড় মে*রে বসলো ও।
-“পাখি!!!!”
কিঞ্চিৎ ক্রোধ নিয়ে রাজিয়ার দিকে পিট পিট করে তাকালো পাখি। মেয়েটা গালে হাত দিয়ে ওকে চোখ রাঙাচ্ছে!
-“কোথায় আগুন লেগেছে! একটু পরে আবার কাজে যেতে হবে! ডিস্টার্ব করছিস কেন?”
-“রায়হানের ব্যপারে জানোস?”
-“হ্যাঁ!”
স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে উঠলো পাখি।
-“তুই করছিস না এসব? আমাগো প্ল্যান তো এক সপ্তাহ পর আছিলো!”
-“আমি কিছু করিনি।”
কথাটুকু বলেই পাখি আবারও কাঁথা মুড়ি দিয়ে নিলো।
-“তো কেডা করছে?”
-“যে-ই করছে আমাদের কী! এখন যা সর, ঘুমাতে দে!!”
পাখিকে আর বিরক্ত করলো না রাজিয়া। পরে দেখা যাবে লা*থি মেরে বিছানা থেকে ফেলে দেবে! কিন্তু পাখি এসব না করলে কে করলো!!”
***
যেমনটা ভেবেছিলো সীমান্ত। রায়হান শক্ত মুখে ওর সামনে বসে আছে। যেন কোন কিছুতেই পরোয়া নেই তার!
-“আপনাকে রিহ্যাবে পাঠানো হবে।”
-“একদম না! আমি কোন রিহ্যাব টিহ্যাবে যাবো না। বাবাকে বল্ যেভাবে হোক আমাকে এখান থেকে বের করার ব্যবস্থা করতে!”
-“বাবা এবার কিছু করবেন না!”
-“তুই তো চাস আমার জীবন শেষ হয়ে যাক! তোর বৌ এসব….!”
-“আপনি নিজের দোষে ধরা খেয়েছেন! আইজার কাছে তো শুধু ঐ ক্লাবের ফুটেজ ছিলো! কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে যেসব প্রমান পাওয়া গেছে সব এক মাস আগের! আইজার কাছে সেগুলো থাকার কথা না!”
সীমান্তর গলার জোর হুট করে বেড়ে যাওয়ায় খানিকটা দমে গেলো রায়হান। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওর। প্রতিবারের মতো এবারও একা হয়ে যাবে ও! সীমান্ত হোক বা রায়হানের নিজের বাবা কেউই ওকে এখান থেকে বের করবে না!
-“দোষ আপনার একার না; আমারও আছে। আপনার ওপর নজর রাখা উচিত ছিলো আমার। আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকতে তো পারবো না। কিন্তু একটা কথা বলে রাখছি, নিজেকে কখনো একা ভাববেন না!”
সীমান্তর কথায় কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না রায়হান। শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে সে। রায়হান যাই ভাবুক না কেন; চার দেয়ালের মাঝে ব*ন্দী অবস্থায় নিজের ভাইকে কখনোই দেখতে চায়নি সীমান্ত!
***
মৃদু চোখ লেগে এসেছিলো আইজার। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে কাঁচা ঘুমটা ভেঙে চুরমার প্রায়! মধ্য রাতের নিস্তব্ধতাও কড়া। তীব্র শীতের তাড়নায় কম্বলে পেচিয়ে রেখেছে নিজেকে আইজা। তার পদচালনার জোরালো শব্দ টের পেয়েও ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে ও। সীমান্ত ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা বিছানায় বসে পড়লো। উল্টো দিকে ফিরে থাকলেও তা টের পেয়েছে আইজা। তবে নিজেকে জাগ্রত অবস্থায় প্রকাশ করেনি ও। ইচ্ছেও নেই। লোকটার হাত প্রচন্ড ঠান্ডা। বিছানায় গা এলিয়েই আইজার মাথায় বিলি কাটতে শুরু করলো সে। সেই ঠান্ডা স্পর্শ কপাল ছুয়ে যাচ্ছে।
-“সাহিলকে এখনো ভালোবাসেন?”
হুট করেই প্রশ্ন করে বসলো সীমান্ত। সাথে সাথে আইজার বন্ধ চোখ জোড়া খুলে গেলো। ঘুম ঘুম ঘোরের বদলে চাহনিতে ভর করলো একরাশ বিস্ময়! সীমান্তর এ উদ্ভট প্রশ্নের সোজা উত্তর দিতে ইচ্ছে হলো না আইজার। তাই পাল্টা প্রশ্ন নিক্ষেপ করলো ও,
-“আপনি ফিহাকে এখনো ভালোবাসেন?”
অবশ্যই আইজার প্রশ্ন ভালো লাগেনি সীমান্তর। আইজাকে নিজের দিকে টেনে নিলো সে। রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠলো,
-“কথা ঘুরাবেন না!”
ক্ষুব্ধ গতিতে উঠে বসলো আইজা,
-“অযথা প্রশ্ন করলে উত্তরও এমনিই হবে!”
বেশ কয়েক সেকেন্ড রুমে বিরাজ করলো পিনপতন নিরবতা। আইজার মনে হয়েছিলো সীমান্ত হয়তো আর কিছু বলবে না। কিন্তু তখনই আইজার এ ধারণা ভুল প্রমান করে হেঁচকা টানে বিছানায় ফেলে ওর ওপর চড়াও হলো সে। আঁটকে ধরলো বিছানার সাথে। ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো,
-“আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি আইজা!”
ঘটনার আকস্মিকতায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধই করে ফেলেছিলো আইজা। যদিও চোখ মেলেও কোন লাভ হয়নি। এই অন্ধকারে তার মুখভঙ্গি তেমন একটা দেখতে পারছে না ও!
-“শুধু একটা কথা!”
আইজার কন্ঠে ব্যঙ্গাত্মক রেশ। সীমান্তর পেট থেকে সবচেয়ে বেশি কথা তখনই বের হয় যখন সে রেগে থাকে।
আইজা সীমান্তর মুখ অতটা ভালো ভাবে দেখতে না পেলেও এটুকু বুঝতে পারছে যে হাসছে সে। যাকে বলে নিঃশব্দের হাসি! তৎক্ষনাৎ তার ওষ্ঠদ্বয় গিয়ে ঠেকলো আইজার কানে!
-“এ রুমের বারান্দায় একটা হিডেন ক্যামেরা সেট করা আছে! প্রায়ই চেক করা হয় আমার!”
আইজার মনে হচ্ছে ওর শরীরে কোন শীতল হাওয়ার স্রোত বয়ে গেছে। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ও। শী*ট! আইজার মাথায় এটা আগে কেন আসেনি! গতকাল রাত তো ও..!”
-“আপনি হঠাৎ চুপ হয়ে গেলেন কেন! শরীর খা*রাপ করছে!”
এবার সীমান্তর কন্ঠে ব্যঙ্গাত্মক ভাব। যেন আইজাকে অপ্রস্তুত করাই তার মুখ্য উদ্দেশ্য।
-“দেখুন আমি..!”
-“আপনি কী আইজা! কাল এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনি নিজের এক্স বয়ফ্রেন্ডকে ফোন করেননি!!”
শেষের বাক্যে সীমান্তর গলার স্বর অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় কেঁপে ওঠে আইজা। করেছিলো সাহিলকে ফোন ও। কারণ সাহিল নাজিম আর জাফর শিকদারের সাথে অল্প সময়ের জন্য হলেও জড়িত ছিলো। সাহিলের কাছ থেকে অনেক কিছুই জানার আছে আইজার। তাই আজ দেখা করতে চেয়েছিলো ও। যদিও সেটা আর হয়ে ওঠেনি!
-“আপনার সাহিলের সাথে যোগাযোগ করার কারণ নিয়ে আমার মোটেও মাথাব্যথা নেই! আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু আপনি যে আমার আড়ালে ঐ সাহিলের সাথে নিজ থেকে কথা বলতে চেয়েছেন সেটা ভাবতেই আপনাকে খু*ন করতে ইচ্ছে করছে আমার!”
-“আপনি যদি একবার সাহস করতেন তাহলে আমাকে এসব করতে হতো না!”
মৃদুস্বরে বলে উঠলো আইজা। নিজের কোন প্রিয় মানুষের অপ্রিয় রূপ কেউই দেখতে চায় না। সীমান্তও একই। কিন্তু তাই বলে নিজের চোখ বন্ধ করে নেবে সে!
-“কী বলতে চাইছেন আপনি?”
কন্ঠে ক্ষুব্ধতার ছাপ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো সীমান্ত।
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আইজা। ব্যঙ্গাত্মক গলায় বলে উঠলো,
-“আপনি একজন ইচ্ছেকৃত অন্ধ! যে অন্ধ হয়েই থাকতে চায়! নইলে এখন আমি যেটা করছি সেটা আপনি করতেন!”
-“আপনার কী মনে হয়, আপনি সাহিলের কাছে যাবেন আর সে আপনাকে মুখ উবলে সব বলে দেবে!”
-“চেষ্টা তো আমি করবোই!”
-“আইজা, আপনি আমার কাছে চশমা চেয়েছেন আমি দিয়েছি কিন্তু কোন পরপুরুষের সাথে আপনাকে একা কখনোই ছাড়বো না আমি!”
-“একা ছাড়তে বলেছে কে? সাহস থাকলে আপনিও আমার সাথে চলুন!”
আবারও ঘরজুড়ে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো। সীমান্ত আইজার কথা নিয়ে কী ভাবছে সেটা বুঝতে না পারলেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে ও।
-“আমি আপনাকে সাহিলের আশেপাশেও দেখতে চাই না। এটাই ফাইনাল! আর জাফর শিকদারের বিরুদ্ধে যাই করুন বাবাকে এর মাঝে টানবেন না! তার শুধু রাগটাই বেশী। কিন্তু খু*ন অনেক বড় একটা অপবাদ!”
-“আপনার বাবাকে আমি কোথাও টানছি না! সে নিজে আমার পথের কাঁটা হয়ে আছে। নইলে জাফর শিকদার এতোটাও চতুর না! সে নিশ্চয়ই আপনার বাবার কাছ থেকে হেল্প নিচ্ছে!”
-“বাবার কাছে এতো ফালতু সময় নেই!”
সীমান্তর মুখনিঃসৃত বাক্যে আইজার মুখে লেপ্টে থাকা তাচ্ছিল্যের হাসির বেগ যেন এবার দ্বিগুন বেড়ে গেলো!
-“কত ভরসা করেন আপনি তাকে! আমার তো আপনার জন্য খারাপ লাগছে! আমি একজন পরপুরুষের সাথে কথা বলেছি দেখে আপনার এতো ক্ষোভ! অথচ আপনার বাবা তো আমাকে বেচেই দিতে চেয়েছিলো!!!”
চলবে…