#নিভৃতে_যতনে Part_36

0
529

#নিভৃতে_যতনে Part_36

#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

রৌদ্রজ্বল দুপুরে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসে আছি টিএসসির মোরে। কপালে মুক্তার ন্যায় চিকচিক করছে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা। বন্ধুমহলের সকলেই আজ উপস্থিত। সকলের মধ্যেই চলছে গবেষণা। এই গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে চিঠিটা। চিঠিটার দাতা কে? চিঠি দাতা কি আমার পূর্বপরিচিত? সে কি আমার আশেপাশেই থাকে নাকি? এই ভার্সিটির কেউ? সে কি আসলে কি চায়? সে কি জানতো না আমি বিবাহিত? সে সামনে আসছে না কেন? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সকলের মনে। কিন্তু উত্তর মিলছে না একটারও। একসময় এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সকলেই। বিরক্তি ভঙ্গিতে একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকে অনায়াসে। হঠাৎ ইফতি মুখ-চোখ ঘুচে বলে উঠে,

— এত রহস্য করার কি আছে বাল। সাহস দেখিয়ে যখন চিঠি দিসে তখন সামনে আসতে পা কাঁপে কে পোলার? বুকের পাটা শেষ?

আদিব তাল মিলিয়ে বলে,

— শালারে একবার সামনে পাইয়া লই। এমন কেলানি দিমু যে মরণের আগ পর্যন্ত প্রেমপত্রের নাম শুনলেও প্যান্ট ভিজিয়ে দিব।

স্নেহা আদিবকে উদ্দেশ্য করে বলে,

— হুহ! দেখুম নে। কে কার প্যান্ট ভিজায়।

আদিব ফুঁসে উঠে বলে,

— স্নেহার বাচ্চা চারকোনাইচ্চা দেখতে পেত্নী, মুখে বেয়াদব। ঠাডা পরুক তোর উপর। আবিয়াত্তা মোর আজীবন।

স্নেহা রেগে দুই একটা কথা শোনাতেই আমি গলা উঁচিয়ে বলি,

— থামবি তোরা? এমনেই চিঠিটা নিয়ে মাথা খারাপ হয়ে আছে তার উপর তোরা দুইটা শুরু করেছিস। কোন গর্দভে যে চিঠিটা দিসে আল্লাহ জানে৷

হঠাৎ সুরাইয়া দুঃখী দুঃখী গলায় বলে,

— মিঙ্গেলরাই খালি প্রপোজাল পায় কেন? আমার মত কিউট পিউর সিঙ্গেল মাইয়াকে কি এদের চোখে পড়ে না?

নূর রসিকতা করে বলে,

— চিন্তা নেই দোস্ত আমি দোয়া করে দিলাম, তুই সারাজীবন সিঙ্গেল বলে হায়-হুতাশ করতে করতেই মরবি। নো চাপ, জাস্ট চিল।

সুরাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,

— হারামি একটা। তোর মত বন্ধুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা ঘষেটি বেগমের জন্যই আজ আমার মত মেয়েরা প্রতারিত হয় বুঝলি। তোর মত ঘষেটি বেগমের বাঁচার অধিকার নাই। এখনই এক বালতি পানিতে ডুবে মর তুই।

নূর ভেংচি কেটে বলে,

— বললেই হলো? হুহ!

আদিব মাঝ দিয়ে বলে উঠে,

— তুই নিজে মর না বইন আমার বউরে মরতে বলোস কেন? এমনেও সিঙ্গেল মানুষ আছোস মরলে তেমন কেউ কষ্ট পাইবো না।

সুরাইয়া সেন্টি খেয়ে বলে,

— অহ আচ্ছা। এই ছিল তোদের মনে? বন্ধু নামে কলঙ্ক তোরা।

আমি হেসে বলি,

— তোরা পারিসও বটে।

হঠাৎ স্নেহা বলে উঠে,

— সিয়া তুই স্বীকার কর আর নাই কর, চিঠিটা কিন্তু সেই ছিল। আহা অনুভূতি যেন কাপ ভরে ঢেলে ঢেলে দিসে। ইশশ!

আমি মুখ ঘুচে বলি,

— থাপ্পড় খাইতে না চাইলে এখনোই মুখ অফ কর। অনুভূতি তো ছিলই না, ছিল এক বস্তাপঁচা সিনেমার পুরানো ডায়লগ। অনুভূতির আসল গভীরতা যদি জানতে হয় তাহলে উ..

‘উনার’ বলার আগেই থেমে গেলাম আমি। কি বলতে নিচ্ছিলাম তা ভেবেই জুতা পারতে ইচ্ছে করছে নিজেকে। এদের সামনে যদি এখন রোয়েনকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলি তাহলে হইসেই। আমার উপর সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে ডিটেলস জানার জন্য। আর এদের মত নির্লজ্জদের সামনে কিছু বলা মানেই আজীবনের জন্য নিজের পায়ে কুড়াল মারা। আমাকে চুপ হয়ে যেতে দেখে আদিব ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

— তাহলে ‘উ’ কি? কার কথা বলতে চাইছিস?

আদিবের কথায় সব তাল মিলাতে শুরু করলে আমি আমতা আমতা স্বুরে বলি,

— উ…উ..উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কথা বলতে চাচ্ছিলাম আমি। তার গল্পের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ খুবই নিখুঁত বুঝলি।

কথাটা বলে মেকি হাসি দিলাম। সকলে কিছুক্ষণ আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে অন্য টপিকে চলে যায় আর আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর যেই না উঠতে যাব ঠিক তখনই আমাদের একটা হ্যাংলা-পাতলা গড়নের ছেলে এসে হাজির হয়। পড়নে জিন্স আর ব্ল্যাক শার্ট। চোখের নীল রাঙ্গা রোদচশমা। আমরা সকলে ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলে,

— হাই!

পিছন থেকে ইফতি বলে উঠে,

— তুমি রিফাত না? আমাদের ডিপার্টমেন্টেই তো পড়ো তাই না?

রিফাত নামের ছেলেটি চুলের হাত গলিয়ে বলে,

— হ্যাঁ।

আমি একবার ভালো মত রিফাতকে দেখে নিলাম। ও আমার পূর্বপরিচিতই। ভালো স্টুডেন্ট হওয়া সুবাদে মিড এক্সামের সময় কিছু নোটসের জন্য ওর থেকে হ্যাল্প নিয়েছিলাম আমি। তখনই মোটামুটি পরিচয় হয় ওর আমার সাথে। ক্লাসেও কয়েকবার কথা হয়েছে। কিন্তু আজ হঠাৎ এইখানে কি চায়? আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব তার আগেই আদিব জিজ্ঞেস করে উঠে,

— কোন দরকার?

রিফাত মাথা দুলিয়ে বলে,

— হ্যাঁ! সিয়াশাকে দরকার।

আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করি,

— আমাকে কেন?

রিফাত অস্ফুটস্বরে বলে,

— ইয়ে না মানে..

— কি?

— কাল তোমাকে চিঠিটার উত্তরটা জানতে চাইছিলাম।

কথাটা কর্ণপাত হওয়া মাত্র সকলের ঠোঁটযুগলের মধ্যভাগে কিঞ্চিৎ ফাঁক সৃষ্টি হয়ে যায়। ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রিফাতের দিতে। আমি তো অবাকে কিংকর্তবিমূঢ়। নিজের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মানে কেমনে কি ভাই? পাশ থেকে নূর বলে উঠে,

— তার মানে ওই চিঠিটা তুমি গিয়েছিলে?

রিফাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,

— হ্যাঁ।

বেশ কিছুক্ষণ লাগে আমার নিজের স্তম্ভিত ফিরে পেতে। অতঃপর আমি কাঠ কাঠ গলায় বলি,

— তুমি কি জানো আমি বিবাহিত?

কথাটা শোনার পর রিফাতের নয়ন দুইটির মাঝে ফুটে উঠে অপার বিস্ময়। ঠোঁট দুইটি আপনা-আপনি ফাঁক হয়ে তার। সে অবিশ্বাস্য সুরে বলে,

— তুমি মজা করছো তাই না?

আমি ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসি ঝুলিয়ে বলি,

— একদম না! বিয়ে নিয়ে বুঝি কেউ মজা করে? অবশ্য তোমার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আর কয়েকটা মাস করো। ইনশাআল্লাহ মামা ডাকটা শুনিয়ে বিশ্বাস করিয়ে দিব।

কথাটা শোনামাত্র রিফাত কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। অপমানে মুখটা ছোট হয়ে আসে তার। আমতা আমতা করে বলে,

— না মানে, আমি জানতাম না। সরি!

কথাটা বলেই সে দ্রুত কেটে পড়ে আর এইদিকে সকলে দম ফাটানো হাসিতে মেতে উঠে। স্নেহা হাসতে হাসতে বলে উঠে,

— কি উত্তর দিলিরে দোস্ত। আমি তো পুরা ফিদা হয়ে গেলাম।

আমি হালকা হেসে বলি,

— ফিদা পড়ে হইস আগে ক্লাসে চল। বিপ্লব স্যারের ক্লাস শুরু হতে বেশি দেরি নেই।

____________________

সময়ের স্রোত যে কিভাবে অতিবাহিত হয় তা বুঝাই যায় না। সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে সবই যেন একেক করে স্রোতে ভেসে যায়। একমাস হতে চললো দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছি। পুরো দমে ইঞ্জয় করছি ভার্সিটি লাইফটা। রোয়েনের সাথেও দিন যাচ্ছে আমার বেশ। খুনসুটির মাঝে অতিবাহিত হচ্ছে আমাদের দিনগুলো। এইতো, কয়েক মাসের ব্যবধানেই রোয়েন আর আমার বিয়ের দুইবছরও পূর্ণ হয়ে যাবে। এখন পিছনের দিকে তাকালে সবই যেনো মনে হয়, এইতো কালকের কথা। সবই যেন এখন নিছক স্বপ্ন মনে হয়।

নিশিরাতের মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে সকলে। আঁধার প্রগাঢ় হতেই সকলে তলিয়ে যাচ্ছে ঘুমের তলদেশে৷ শৈত্যপ্রবাহ হওয়ায় নিশাচর পাখি ডাক শোনা যাচ্ছে প্রখরভাবে। আমি গায়ে মোলায়েম কম্বল জড়িয়ে আয়েস করে ঘুমিয়ে আছি। ঠিক এমন সময় নাকে সিগারেটের কড়া গন্ধ এসে বারি খেতেই ঘুম ছুটে যায় আমার। ক্ষণেই সিগারেটের গন্ধ তীব্রতর হয়ে আসে। আমি আর থাকতে না পেরে উঠে বসি। পাশে তাকাতেই দেখি রোয়েনের জায়গায় খালি। আমার অন্ধকারের মধ্যেই বৃথা চেষ্টা করলাম তাঁকে খোঁজার। বাথরুমে লাইট অফ বলে বুঝতে পারলাম উনি সেখানে নেই। হঠাৎ সিগারেটের গন্ধের কথা মনে পড়তেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে। গন্ধটা বারান্দা থেকে আসছে বলে সেই দিকে এগিয়ে যাই। বারান্দার সামনে এসে রোয়েনকে নজরে পড়েই। সেই সাথে দৃষ্টি আমার আটকে যায় উনার হাতে থাকা সিগারেটের দিকে। ক্ষণেই আমি থমকে যাই, অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে থাকি সেদিকে।

#চলবে
কাল আমার বার্থডে ছিল বিধায় সারাদিন সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। লিখার সুযোগ পাইনি। সল্প সময়ের মাঝে যতটুকু পারলাম দিয়ে দিলাম। তাই কেউ ছোট হয়েছে বলে অভিযোগ করবেন না।

#বিঃদ্রঃ রাত ১২ টা বেজে গিয়েছে বিধাত কাল বলছি। ৩০ মে আমার বার্থডে ছিল।❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here