#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 19…….
-_- আচ্ছা আগে কেকটা বানিয়ে ফেলি তারপর নাহয় বিয়ে,হানিমুন, বাচ্চা কাচ্চার সব প্লান হবে।
— ধুর….
তীব্র নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল তার তুর ওকে দেখতে লাগল।
— এখানে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে না দেখে রুমে যাও। আমি কেকটা বানিয়ে নিয়ে আসছি।
— আজকে আর কেক খাওয়া.. [ একটা ভেংচি কেটে চলে গেল ]
এইটা দেখে তীব্র এক গাল হেসে দিলো।
তুর কেকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ঘুমিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তখনি তীব্র আসে….
— এই নেও হয়ে গেছে…
তুর বড় সড় একটা হাই তুলে কেকটা দেখে। দেখে অবাক হয়ে তীব্রের দিকে তাকায়।
— Wow… এত সুন্দর একটা কেক। ভাবা যায়… [ আজকে খাওয়াটাই মাটি ]
— আচ্ছা তুমি দেখ আমি আসছি।
তীব্র চলে আসতে নেয় ঠিক তখনি তুর ডাকে….
— আচ্ছা আমাদের বিয়ে কোথায় হবে? এই বাড়িতে….
কথাটা শুনে তীব্রের পা থমকে গেল। ও শান্ত ভাবে তুরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে একটা হাসির রেখা ফুটিয়ে তোলে….
— তুমি কোথায় চাও?
— আমি তো চাই যে শহরে আমার জন্ম হয়েছে সেই শহরে। কিন্তু আমি তো মেবি এখন চট্টগ্রামে তাই না।
তীব্র একটা হাসি দিল। কারন ওরা যে চট্টগ্রামে নেই তা তুরের অজানা।
— তুমি যা চাইবে তাই হবে….
তারপর চলে যায় তীব্র…. তুর কেকটা দেখে নেয়। অনেকটা পুরে গেছে। কিন্তু সেটা খাওয়ার রুচি বা মানসিকতা কোনোটাই ওর নেই। পোড়া নয় বলে তীব্রের হাতের ছোয়া আছে বলে। অতীত মন থেকে মুছে তীব্রের জন্য মনে একটা অতিরিক্ত বিষাদময় কিছু বিষ বৃক্ষের চাষ হয়েছে ওর মনে। তীব্রের কথা ভাবলেও সেখান থেকে হয় কাটা পায় না হয় বিষ……
ও কেকটাকে দেখে। কিন্তু তা ছুতেই যেন গা গুলিয়ে আসে তুরের। অথচ দিনের পর দিন মুখ বুজে ওর ছোয়াগুলো সহ্য করে যাচ্ছে তাও আবার মুখে হাসি ফুটিয়ে।
,
,
,
,
,
,তীব্র বাইরে গিয়ে রিদ্ধকে ফোন করে কিন্তু কল ট্রান্সফারের মাধ্যমে। কারন তীব্র কোথায় সেটা যেন কেউ চাইলেও ট্যাপ করতে না পারে। এমনকি রিদ্ধ নিজেও জানেনা তীব্র কোথায় আছে….. কোন দেশে তা জানলেও কোথায় তা জানে না।
_- হ্যাল রিদ্ধ..…
— স্যার আপনি কবে ফিরবেন। বিগত ১ মাস আপনার কোনো খোজ নেই। এখানে সবাই আপনার খোজ করছে বিশেষ করে তায়ান ভাইয়া। আমি প্রতিদিন ওনাকে কিছু না কিছু বলে ম্যানেজ করছি.….
— আমি দেশে ফিরছি ৩দিনের মধ্যে….
— ওকে স্যার। আমি আপনার জন্য সব রেডি করে রাখছি…. আর আপনার দেশে আসার ব্যবস্থা করছি…..
— একদম না রিদ্ধ।
-_ মানে…
— মানে আমি যে আসছি তা যেন কেউ জানতে না পারে। আমি এসে আমার বাড়িতে যাব না। গাজিপুরে যে বাংলোবাড়ি আছে সেখানেই যাবো।
— কিন্তু কেন স্যার?
— কারন আমি তুরকে নিয়ে আসছি।
— স্যার আপনি কি তুরকে ফিরিয়ে দেবেন।
— নাহহ….
— তাহলে…
— বিয়ে করব। আমি তুরকে বিয়ে করতে চাই। আর তার সমস্ত ব্যবস্থা করো। তবে সাবধান ভুলেও যেন এটা কেউ টের না পায়। আমি ওখানে বেশিদিন থাকব না। বেশি হলে ২ দিন তারপর আবার তুরকে নিয়ে ফিরে আসব। আর যেখানে আমরা থাকব তার সিকিউরিটির ব্যবস্থা এমন ভাবে করো যাতে ভিতরে একটা মাছি মশাও না গলতে পারে।
— সেটা ঠিক আছে স্যার। কিন্তু বিয়ে…..
— সেটা তুমি বুঝবে না। ওকে আমি ধর্ম মতে নিজের স্থী হিসেবে গ্রহন করতে চাই।
— স্যার সেটা ঠিক আছে কিন্তু এত রিক্স নিয়ে এখানে আসার কি দরকার যেখানে আপনি নিজেই তুরকে খোজার জন্য এতকিছু করেছেন। সেখানে যদি কোনোভাবে কেউ জানতে পারে তুর আপনার কাছে কিহবে ভাবতে পারছেন? এতটা রিক্স নেয়া ঠিক হবে স্যার..
— সেইজন্য তোমাকে সবটা গোপনে করতে বলেছি। যে ২দিন আমি সেখানে থাকব তার মাঝে কেউ যেন কিছু জানতে না পারে।
— ওকে স্যার….
— সব রেডি করো….
তারপর ফোনটা কেটে দেয় তীব্র। অদ্ভুত এক অনুভুতি গ্রাস করছে তীব্র। কিন্তু তা নিয়ে বেশিক্ষন ভাবলে চলবে না। ও দ্রুত তুরের কাছে যায়। তুর ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছিল। তীব্র গিয়ে রিমোট টা দিয়ে টিভি বন্ধ করে সোফায় বসে। তুরের দিকে তাকাতেই দেখে ও ঠোঁট উল্টে কান্নার ফেস করে রেখেছে…
— কিহল কাদঁছো কেন?
— আপনি টিভিটা বন্ধ করলেন কেন? [ চিপস খেতে খেতে ]
তীব্র কিছুক্ষন চুপ করে রইল। অনেক ভার নিয়ের তুরকে বলল..…
— তৈরি হও তুর। এই সপ্তাহের মাঝে তোমার আর আমার বিয়ে হবে।
কথাটা শুনে দুজনের মাঝেই কিছুক্ষন নিরবতা বিরাজ করল। পিনপন নিরবতাকে কাটিয়ে তুর বলে উঠল….
— ঠিক কবে….
ওর চোখের চাওনীতে অন্যরকম কিছু চাওয়া দেখতে পেল তীব্র। ইচ্ছে করছে না বলতে কিন্তু তবুও বলল….
— সেটা কবে বলতে পারছি না তুর। এইটুকু যেন রাখ সেই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দিন হবে। আর তোমার কাঙ্ক্ষিত আশার….. দেখি কারটা পুরন করে ভাগ্য….
তুর কিছু বলল না। তীব্রের কথাটাই এমন এলোমেলো ছিল তা গোছানোর ধৈর্য তুরের নেই। ও বসা থেকে উঠে তীব্রের কাঁছে গেল। এটা দেখে জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকাতেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তীব্রকে…. তীব্র কোনো রিয়েক্ট করে না শুধু নিজের চোখ জোরা বন্ধ করে নেয়। নিজের বুকে তুরের গরম নিশ্বাস আর হালকা ঠোঁটের ছোয়া পায়….
— আপনি নিজেও জানেন না তীব্র আপনার বন্ধ দরজার বন্দীনী আপনার তুমি হওয়ার জন্য কতটা অপেক্ষা করছে। নিজের ভালোবাসার মানুষের স্ত্রী হওয়ার মত সৌভাগ্য কয়জনের হয়।
তীব্র কিছু বলল না। শুধু শুকনো ঠোঁটে আলত মলিন হাসি ফুটিয়ে তুলল…. গভীর ভাবে ওর কপালে ভালোবাসার মৃদু পরশ আকে। শুধু এই কথাটাই ওর মুখে উচ্চারিত হয়….
— তৈরি থেক নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নেওয়ার জন্য।
এটা শুনে কিছুটা অবাক হয় তুর.…
— আপন করব মানে…..? আমি তো….
— কিছুনা।
[ আবার মৃদু হাসিতে তুরকে ছাড়িয়ে চলে যায়। তুর বোকার মত ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে বুঝতে পারে না লোকটাকে।
,
,
,,
,,
,
,
,অদ্ভুত ভাবে সারাদিনে তুর তীব্রের দেখা পায় না। অনেকরাত হয়ে গেলেও তীব্র ফেরে না। ওর অপেক্ষায় এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে যায় তুর। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখে তীব্র ওর কাছে। হতবাক হয়ে সরে যায়। কারন তীব্র খাটে মাথা দিয়ে মেঝেতে বসে ঘুমিয়ে আছে তাও তুরের পায়ে হাত দিয়ে…. এমনটা আশা করেনি তুর। ও গিয়ে তীব্রের মাথায় হাত বুলাতেই তীব্রের ঘুমের রেশ কাটে…. ও তীব্রের দিকে তাকাতেই একটা প্রশান্তির হাসি দেখতে পায় ঠোঁটে…..
— কি হয়েছে আপনার? আমার পায়ের কাছে পরে আছেন কেন?
— পায়ের কাছে কোথায়? আমি তো তোমার সামনে বসে.….
— সেটা তো আমি নিয়ে এসেছি।
— ও আচ্ছা….
উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
— পাগল তো আগেই ছিল এখন কি বিবাগী হতে চায় নাকি রে বাবা। সেটা যাই হোক আমার বিয়েটা হলেই হবে….
,
,
,
,
,,
,
,ফ্রেশ হয়ে আসতেই তুর ফ্রেশ হতে চলে যায়। এসে দেখে তীব্র খাচ্ছে… এটা দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে…. এই মাসের ১দিনো তুরকে ছাড়া খায়নি তাহলে আজ। তীব্র ওর দিকে না তাকিয়ে বলে উঠল….
— কাল সারাদিন আমি কিছুই খায়নি। তার খবর নেওয়ার প্রয়োজন পরেনি তোমার। আমি এখন খাচ্ছি বলে চোখে বাধছে নাকি।ন
কথাটা শুনে তুরের শুকনো গলায় কাশি উঠে। এই লোকটা আসলেই কি?
— আরে আজব ত আপনি খাননি তো আমি কি করব? আমি কি আপনার বউ নাকি?
— তাহলে আমি বিয়ে করছি কাকে?
— দেখুন আগে বিয়েটা করুন তাহলে বউয়ের মত খেয়াল রাখব। তার আগে আপনার বউ হবার ফরমায়েশ খাটতে পারব না।
_- মানে কি? বিয়ের পর দাসী থাকতে রাজী অথচ রানী হয়ে থাকতে রাজি নয় তাই না। [ খেতে খেতে ]
— আপনি…. [ রেগে গিয়ে ] আমিও বা কি কার কাছে কি বলছি? আপনার সাথে কথা বলাটাই বেকার।
তীব্র নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে…. তুর চলে যেতে ধরেও থেমে গেল। তারপর অভিমানী গলায় বলে উঠল.. ….
— বিয়ের পর স্বামীর সেবা করতে মেয়েরা কখনো দাসী হয় না। বরং তার সংসারের কাজ আর স্বামীর সেবা করেই সে সেই ঘরের রানী হতে পারে। আর সেটা যে কি সন্মানের হয় সেটা আপনি বা আপনাদের মত কিছু পুরুষ বুঝবেন না।
বলেই তুর চলে গেল। আর তীব্র খাবারটা মুখে দিতে গিয়েও দিল না। খাবারটা যেন গলায় আটকে গেল। তীব্র তা ছেড়ে উঠে গেল…..
,
,
,
,
,
তুরের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কেন এমনটা হচ্ছে বুঝতে পারছে না। একটা মুহূর্ত যেই তীব্র ওকে শান্তি দিত না। একটার পর একটা আবদার নাহলে অর্ডার করে ক্লান্ত করে দিত আজ সারাদিনে বাসায় থেকেও তুরের সাথে একটা কথাও বলেনি। এমনকি ভালোভাবে ওর দিকে তাকিয়েও দেখেনি। কিসব পেপার আর ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। তুর বার বার ওর সাথে কথা বলার জন্য গেলেও বার বার ইগনোর করেছে ওকে… তুরের রাগটা যেন এবার কন্ট্রোল করার মত না। ও গিয়েই তীব্রের ল্যাপটপটা কেড়ে নিল। বেশ বিব্রত হলো তীব্র….
— আমার ল্যাপটপটা দেও।
_- দেব না।
— তুর দেখ আমার মেজাজ গরম করোনা। ল্যাপটপ টা দেও।
— বললাম তো দেব না।
বলেই ল্যাপটপ টা ধরে একটা আছাড় মারল। এটা দেখে তীব্র বেশ রেগে যায়….
— এটা কি করলে তুমি? [ প্রচন্ড রেগে ]
— বলেছি তো দেব না। তাহলে।চাইলেন কেন?
— বেশি লাই দিয়ে মাথায় উঠিয়ে দিয়েঁছি। আমার মুখে মুখে তর্ক করছ….
— করেছি বেশ করেছি।
— তুর….
তুরকে থাপ্পড় মারতে ধরলেই ও চোখ বন্ধ করে নেয়। এটা দেখে তীব্র নিজের হাত নামিয়ে নেয়।
— কি করবেন মারবেন? তাই করুন। যেটা বাকি আছে সেই স্বাদও পুরন করে নিন। [ ছলোছলো চোখে ]
এটা শুনে তীব্র হালকা হাসে… তারপর ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
— আচ্ছা বাদ দেও এবার বলো কি হয়েছে?
— আপনি আমার সাথে আজ সারাদিনেও কথা বলেননি কেন?
— ও এই ব্যাপার… ১ মিনিট…
বলেই তুরের মুখে কিছু স্প্রে করে। মুহুর্তেই ওর কাশি উঠে যায়।
— এটা কি তীব্র….
— একটু পর বুঝতে পারবে।
মুহূর্তেই তুর ওর কোলে ঢোলে পরে। তীব্র তুরকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কপালে চুমো দেয়…
— আমার দুর্বলতা এভাবে কাজে লাগানো উচিত হয়নি তোমার। তোমাকে আমি মারব না তুমি জানো আর তাই…..
ওকে শুইয়ে নিজের কাজ শেষ করতে চলে যায়। ওকে সব কিছু গুছাতে হবে তাও তুরের অলক্ষে। আজ রাতেই ওর বাংলাদেশের ফ্লাইট। তবে এবার আর ও আগের মত তীব্রের ওয়াইফ হিসেবে যেতে পারবে না। ওকে sR হাসপাতালের পেসেন্ট হিসেবে নিয়ে যাবে। যার পুরো দায়িত্ব হাসপাতালের উপর।
— বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার কারন দুটো। তোমার ইচ্ছে…. আর আমার প্রাপ্তি…
তারপর সবকিছু গুছিয়ে তুরকে নিয়ে ফিরে আসে বাংলাদেশে…… বাংলাদেশে আসতে Sr হাসপাতালের একটা অ্যাম্বুলেন্সে এয়ারকমিটি নিজেই তুলে দেয় ওর কাগজপত্র দেখে। সেখান থেকে মাঝ পথে তুরকে নিজের গাড়িতে নিয়ে নিজের বাংলো বাড়িতে নিয়ে যায় তীব্র। রিদ্ধ আগে থেকেই সবটা রেডি করে রেখেছিল।
তীব্র সোজা তুরকে ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। তীব্র ওকে শুইয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর নিজেক তুরের পাশে শুয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তীব্র আর দেরি করতে চায় না। কালই বিয়ে হবে ওর আর তুরের….
চোখে আলো পরতেই ঘুমটা হালকা হয়ে আসে তুরের। হঠাৎ ওর চিরচেনা কিছুর আভাস পায়। বাতাসে অন্যরকম কিছু ফিল হচ্ছে… অনেক দিন পর চেনা কিছুর আভাস পেল। জানিনা কেন এতদিন আবহাওয়াটা অচেনা লাগত নিজের না। আজ যেটা নিজের মনে হচ্ছে….. ও বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠে তুর…. তখনি কারো গলার গম্ভীর আওয়াজ পায়…
— গুড মর্নিং মাই লেডি…..
— গুড মর্নিং…
বলে আবার শুয়ে পরে। এটা দেখে তীব্র হ্যাচকা টানে বিছানার কোনে নিয়ে এসে ওকে কোমর ধরে বসিয়ে দেয়….. ঘটনাটা এতটা দ্রুত ঘটে সবটা তুরের মাথার উপর দিয়ে যায়। ও চোখ বড় বড় করে তীব্রের দিকে তাকায়….
— তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। কাজ আছে আমার…
একহাতে তুরের কোমর আরেকহাতে তুরের থুতনি ধরে। তুর সম্পুর্ন ভর তীব্রের কাধে যদি সরে তাহলে একেবার মাটিতে মুখ থুবড়ে পরবে…..
— কি বলেছি বুঝেছ..…
— হুমম… [ মাথা নাড়ায় তুর ]
তীব্র ওকে সোজা করে দিতেই ওয়াসরুমে ভো দৌড়।
— এ আমি কাকে বিয়ে করেছি রে বাবা….
তুর ফ্রেশ হয়ে আসতেই। তীব্র ওকে ধরে খাটে বসিয়ে দেয়…. তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র ওকে বলে….
— এখনি দেখতে পাবে….
তীব্র মেহেদী দিয়ে তুরের হাতে মাঝ বরাবর ছোট করে কিছু লেখে। পুরোটা না বুঝলেও উপরের লেখাটা T সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
তীব্র লেখা কমপ্লিট করে কাকে যেন আসতে বলে। তখনি দুটো মেয়ে রুমে প্রবেশ করে। তীব্র সরে যেতেই তারা ওর হাতে মেহেদী লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। তুর অবাক হয় কিন্তু কিছু বলে না। একদিকে সকাল বেলা অনাগত অতিথি তার উপর পেটের ইদুর। দুহাতে মেহেদির জন্য খেতেও পারে না। বেশ বিরক্তি নিয়েই বলে….
— আচ্ছা না খেয়ে মরে গেলে আমি মরব। তাতে আপনার কি আসে যাবে আপনি তো ঠিকি আরেকমেয়েকে বিয়ে করে সুখে থাকবেন…. 😡
তীব্র আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেল। রাগ উঠলেও তা প্রকাশ করল না। ও গিয়ে তুরের জন্য নাস্তা নিয়ে তুরের সামনে দিল…
— আল্লাহ নাক দিলা মানলাম কিন্তু হাতির মত শুড় দিলা না কেন? তাইলে নাক দিয়েই খেতাম হাত তো বাধা…
তীব্র রেগে গিয়েই ওকে খাওয়াতে থাকে। এটা দেখে তুর আরো বেশি অর্ডার করে। কারন জানে এই মেয়েদের সামনে ও কিছুই বলবে না। আর মেয়েদুটো মুখ টিপে টিপে হাসতে থাকে। খাওয়ানো শেষ হলে ওরা আবার নিজেদের কাজে মন দেয়। হাতে মেহেদি পরানো শেষ হলে ওরা বিদায় নেয়। আর তীব্র ওর পাশে বসে….. ব্যাথায় হাত টনটন করছে তখনি হাতটা পরে যেতে নেয়। আর তীব্র ধরে ফেলে। মেহেদী শুকানো না পর্যন্ত তুরের দুহাতের ভর তীব্রের হাতে। আর তুর ওর বুকে মাথা দিয়ে নিজের অলসতা দুর করে। এভাবে কতক্ষন বসে থাকে তীব্র জানা নেই। মেহেদী শুকানোর পর তীব্র নিজেই তুলে দেয়। আর বিছানা থেকে না নামার কথা বলে…. তখনি তুর ওকে ডাকে…
— আচ্ছা আমরা এখন কোথায় আছি…
— গাজিপুর আমার বাংলো বাড়িতে….
তারপর চলে যায়।
,
,
,
,
,
,,
দুপুরের দিকে তুর শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াসরুমে ঢুকতেই তীব্র বাধা দেয়… তুরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে লক করে দেয়.….
— একি আপনি…. 🙄
— কেন কোন সমস্যা…
—- নাহহ.. এই নাহ সমস্যা আছে। আমি এখন গোসল করব।
— আমিও তো সেইজন্যই এসেছি কারন তুমি গোসল করবে…
—- মানে… 😱
— মানে আবার কি?
বলেই পিছনে ফিরে কিছু একটা করে তীব্র। য়ুর উকি মেরে দেখার চেষ্টা করে…
— সালা লম্বু জানি কোথাকার..
হঠাৎ পিছলে পরে যেতে নেয় আর তীব্র ধরে নেয়। তীব্রের দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে কিছুটা সন্দেহ নিয়ে ওকে দেখে…
— আচ্ছা “কানচানা” মুভির মত আপনার ঘাড়েও কি ভুত উঠছে….
— মানে?
— তাহলে মেয়েদের মত পুরো মুখে হলুদ কেন?
— সেটা এখনি দেখতে পাবে.…
এক ঝটকায় তুরের হাত দুটো দেয়ালে চেপে ধরে। নিজের গালের হলুদ তুরের গলায় গালে মেখে দেয়। তুর প্রথমে ছটফট করলেও পরে শান্ত হয়ে যায়। তীব্র আলত করে একটু একটু হলুদ নিয়ে ওর হাত জোরা আর গলায় মাখিয়ে দেয়….
— শুনেছি বিয়ের সময় হলুদ ছোয়াতে হয় বরের গায়ের। এখানে তো তেমন কেউ নেই তাই আমি দিয়ে দিলাম।
তুর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্রের দিকে।
— হলুদ তো লাগালাম বাকি আছে মিষ্টি।
তীব্র আলত করে ওর ঠোঁটে আলত পরশ বুলায়।
— তারাতাড়ি বের হয়ে এসো… [ মুচকি হেসে ]
তীব্র বেড়োতেই তুর হাটু গেড়ে বসে পরে। ওর কেমন রিয়েক্ট করা উচিত জানা নেই।
,
,
,
,
,
,
সারাদিন বিছানায় শুয়েই কেটে যায় তুরের। সন্ধ্যার পর পার্লারের মেয়েগুলো আসে। তীব্রের কথা অনুযায়ী হালকা মেকাপ আর লাল শাড়িতে বউয়ের মত সাজায় তুরকে।
এখন শুধু অলংকার পরানো বাকি। তখন তীব্র ওদের বেড়িয়ে যেতে বলে। ওরা চলে যায় আর তুর উঠে দাড়ায়… কিন্তু তীব্র ওকে আবার বসিয়ে দিয়ে আয়নার নিজেদের দুজনকে দেখে বলে…..
— আমার চাদ এতটা আলো দেয় জানা ছিল না। এই আলোতে সারাজিবন ভিজলেও হয়তো স্বাদ মিটবে না।
তুর কোনো কথা বলে না। তীব্র সবটা গহনা এক এক করে তুরের শরীরে জড়িয়ে দিতে থাকে।
— হয়ে গেছ তীব্র আপনার বউ সাজানো।
— নাহহহ.…
— আর কত?
— নজর ফোটা যে এখনো বাকি মানে…
— মানে….
— মানে….
আলত হেসে তুরের গলার নিচের সেই বাইটের জায়গায় স্পর্শ করে। আলত করে স্পর্শ করে সেখানে গভীর চুমো আকে তীব্র। তারপর তুরের হাতের পিঠে চুমো দিয়ে বলে….
— তৈরি হও তুর। একটু পর শরীয়ত মোতাবেক তুমি আমার স্ত্রী হতে চলেছ। আমাদের সম্পর্ক ধর্মীয় ভাবে বৈধ হতে চলেছে।
তুর কিছু বল না। শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে মাথা নাড়ল। কিন্তু চোখের পানি কিসের জন্য তা বুঝতে পারল না।
তীব্র চলে গেল রুম থেকে। রিদ্ধ আর ম্যানেজার এসেছে। ম্যানেজারকে খুশি দেখাচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। হয়তো ওনি এটাই চেয়েছেন। যে হুজুরকে ডেকে আনা হয়েছে তিনি সবটা তৈরি করে নিচ্ছেন।
,
,
,বেশ খানিকক্ষণ পর হুজুর তুরকে নিয়ে আসতে বলে। তীব্র তুরকে আনার জন্য রুমে যেতেই থমকে যায়।
কিছুক্ষন পর রিদ্ধ আসে….
— স্যার সবাই অপেক্ষা ক….. স্যার…
তীব্র খাটের উপর বসে একটা পুতুল নিয়ে খেলছে।
_- স্যার আপনি বসে আছেন কেন? নিচে সবাই অপেক্ষা করছে…. আর তুর মেম কই?
— ও তো চলে গেছে রিদ্ধ….
— চলে গেছে মানে…… [ বেশ অবাক হয়ে ]
— ওদিকে দেখ….
,
,
,
,
,
,
তুর রাস্তায় দিয়ে বউয়ের বেশে কোন মতে দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে কোনোমতে মেইন রাস্তায় এসে পরে….
— আপনার বিয়ে আপনাকে মোবারক হোক মি. তীব্র। আপনার মত পশু রুপী মানুষকে বিয়ে করার চেয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়াটা বেশি সহজ মনে করব।
তখনি দুর থেকে একটা আলো দেখতে পায়। আলোটা ধীরে ধীরে কাছে আসছে….
_- সরি মা… সরি বাবাই.. তোমাদের সাথে হয়ত দেখা হবে না। আমি যদি আজ বেচে যাই আর ওই লোকটার হাতে পরে যাই তাহলে আমার কি হবে আমি জানিনা। এতদিন ওনার পুতুল থাকলেও এবার আমি জানিনা আমার কিহবে? এর চেয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়াই ভালো…..
বলেই সামনে আসা গাড়ির নিচে ঝাপ দেয় তুর……
,
,
, ওদিকে…
— স্যার বসে আছেন কেন? ওনাকে খুজতে হবে?
— যে নিজে চলে যায় তাকে পাওয়া যায় না।
— কিন্তু স্যার।।।।
— I need her… যেখান থেকে পারো নিয়ে আসো। আমি ওকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।
রিদ্ধ কিছু বুঝতে পেরে বেড়িয়ে গেল।
— অভিনয় তুমি ভাল করলেও অতটা ভালো অভিনেত্রী নয় তুমি তুর। আমাকে নিজের মন থেকে বিয়ে করতে চাও না আমি জানতাম। কিন্তু আমাকে ছেড়ে গিয়ে একদম ঠিক করোনি তুমি। মিথ্যে অভিনয় হলেও তুমি আমার কাছে আমার হয়েই ছিলে। কিন্তু তা তুমি করলে না। শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে….
,
,
,
,
,
,
,
,
ওদিকে…. গাড়ি দ্রুত ব্রেক করার কারনে বাড়ি খেয়ে তুর নিচে পরে যেতেই গাড়ি থেকে একটা ছেলে দ্রুত নেমে আসে…. তুর ঝাপসা চোখে কোনো ছেলেকে দেখে….
— এইযে শুনছেন..
কিন্তু তুর কোন জবাব দিতে না পেরে জ্ঞান হারায়।।।
,
,
,
,
,
,
,,
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
যাহহ তীব্র কিছু করল না। বেচারা খাটাস এবার নির্দোষ। তুর আপামনি পালাইয়াছে….
আরে বউ পালাইছে বিয়ে থেকে….কেউ মিষ্টি বিলাও🤣🤣
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr