#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_১৮

0
865

#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_১৮

#মিদহাদ_আহমদ

*দেরি হওয়ার কারণ শেষে যুক্ত করেছি। দেখবেন🙂

ইফতারের পর ননাসকে এসে নিয়ে গেলেন দুলাভাই৷ ডাক্তার দেখাতে গেলেন৷ এদিকে শাশুড়ি মা সন্ধ্যার পর থেকে জায়নামাজে বসে আছেন। একাগ্রচিত্ত নিয়ে প্রার্থনা করছেন আল্লাহর কাছে, সবকিছু যেনো ঠিকঠাক হয়৷ কোন গড়মিল যেনো না হয়৷ ডাক্তার যেনো রিপোর্টে সবকিছু ঠিকঠাক জানায়। আমি চা বানিয়ে শাশুড়ি মায়ের রুমে নিয়ে গেলাম। বিছানার এক কোণে বসে ওনাকে বললাম,

‘মা আপনি চিন্তা করবেন না। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।’

শাশুড়ি মা আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। আজ থেকে এক সপ্তাহ আগেও এমন কথা বললে নিশ্চিত শাশুড়ি মা আমাকে গালমন্দ করা শুরু করতেন। গরীব ঘরের মেয়ে, ছোটলোক এসব বলা শুরু করতেন। আজ একদম নীরবে শুনলেন শুধু।

রাত এগারোটা নাগাদ ননাস বাসায় চলে এলো। ডাক্তার কয়েকটা টেস্ট করাতে দিয়েছেন। আগামীকাল রিপোর্ট দিবে সবকিছুর ফাইনাল। শাশুড়ি মা আগ্রহভরে জানতে চাইলেন,

‘ডাক্তার এমনি কী বলেছে? কোন চিন্তার কারণ নেই তো? তুই মা হতে পারবি তো?’

ননাসের সোজা সাপ্টা জবাব ছিলো এমন,

‘আমি জানি না। আগামীকাল সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে’

পরেরদিন সকাল হতেই শাশুড়ি ব্যস্ত হয়ে উঠলেন আমার ননদের হবু শ্বশুরবাড়িতে ইফতার পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে৷ বিকাল নাগাদ শ্বশুর ইফতারি নিয়ে রওয়ানা হলেন৷ শাশুড়ি বারবার বলে দিলেন,

‘সব দুই মণের কম যেনো না হয় মিষ্ঠিমিঠাই। মানুষজন দেখবে৷ আর এই অনুপাতেই আমাদের সমাদর করবে। বলে দিলাম আগে ভাগেই’

শ্বশুরও মাথা নাড়ালেন শাশুড়ির কথায়।

ইফতারের মিনিট দশেক আগে ঘটে গেলো এক মহা অঘটন। যে আমেজ, সমারোহ নিয়ে এই ইফতারি পাঠানো হয়েছে আমার ননদের বাসায়, সেই ইফতারি, সেই আয়োজন, সেই আনন্দ সমেত ফিরে এলেন আমার শ্বশুর। শাশুড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেলেন। শ্বশুর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়। শাশুড়ি বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন কী হয়েছে, ফিরে এলেন কেন। শ্বশুর কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে বললেন,

‘তারা এই বিয়েতে রাজি নয় ‘

‘বিয়েতে রাজি নয় মানে? কী বলছো এসব তুমি?’

শ্বশুরের চোখ বেয়ে পানি নামলো। আমি অনুভব করতে লাগলাম মেয়ের জন্য বাবার চোখের অশ্রুসিক্ত নয়ন! শাশুড়ি আর থামতে পারলেন না। কল দিলেন আমার ননদের হবু শ্বশুরবাড়ি। স্পিকারে রাখা ছিলো মোবাইল। শাশুড়ি কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে আমার ননদের হবু শাশুড়ি বললেন,

‘আমরা আপনাদের ঘরে খেসি করতে পারবো না৷’

‘কেন? এটা আগে মনে ছিলো না? বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, মানুষ জানাজানি হয়ে গিয়েছে তারপর আপনি বলছেন৷? ‘

‘জানাজানি হয়েছে তো? বিয়ে তো আর হয়নি। ভাগ্য ভালো যে আমরা আগে জানতে পেরেছি। আর নাহলে আমাদের সাথেও একই অবস্থা হতো। আপনারা পারেন কীভাবে এসব গোপন করে রাখতে?’

আমরা কেউ বুঝতে পারলাম না কী বলছেন তিনি। শাশুড়ি কিছুটা মৌণসুরে বললেন,

‘বেয়ান আমাকে খুলে বলবেন আমাদের ভুলটা কোথায়?’

ওপাশ থেকে মহিলাটা হাসলো। তারপর বললো,

‘কে বেয়ান? আমি? আপনার? হাসালেন। আমাদের তো কোন সম্পর্কই হয়নি। আর যা জানতে চান, তা জানার কি আর আপনার বাকি আছে? আপনার বড় মেয়েকে দেখেই আমাদের বুঝা উচিত ছিলো যে তার বাচ্চা হয়নি কেন। আমরা তখন আমলে নেইনাই। কিন্তু যখন আপনার বড় বেয়ান কাল রাতে কল দিয়ে জানালেন সব, জানালেন যে আপনার মেয়ের এত বছর হলো বিয়ের তার পরও বাচ্চা হচ্ছে না, আপনারা তাবিজ দোয়া করেছেন তার ছেলের উপর, তখনই আমার সব শখ আহ্লাদ মিটে গেলো আপনার মেয়েকে আমার ঘরের বউ করে আনার। কে গ্যারান্টি দিবে এক মেয়ে বন্ধ্যা যে ঘরের, সেই ঘরের আরেক মেয়ে এমন হবে না?’

শাশুড়ি আর কোন কথা বলার অবস্থায় রইলেন না। আমি মোবাইল হাতে নিলাম। বললাম,

‘কী বলছেন আপনি এসব? সাইন্টিফিক ভাবে এর কোন প্রমাণ নেই। আর আজকাল সব সমস্যার সমাধান আছে। আপনি তানিয়া আপার উদাহরণ টেনে এনে তামান্নার জীবন নষ্ট করতে পারেন না।’

‘নষ্ট? কে করছে? আমরা? আমাদের ছেলের জীবন তো তোমরা নষ্ট করার পথে ছিলা। আমাদের থেকে গোপন করে রেখেছিলা সব।’

‘আমরা কি বলেছি যে তানিয়া আপার বাচ্চা আছে দুই পাঁচটা? এইটা বললে হয়তো গোপন করা হতো।’

‘এই মেয়ে! খবরদার! যে ঘরের ছেলের বউ এমন মুখবাজ, সে ঘরের মেয়ে না জানি কত খারাপ হতে পারে! সাবধান! আমি আগেভাগে এই বিয়ে থেকে সরে আসতে পেরেছি এজন্য দরগায় জোড়া খাসি মানত করবো৷ আল্লাহ বাঁচিয়েছেন এমন পরিবার থেকে।’

কথাগুলো বলেই মহিলাটা কল কেটে দিলো। শাশুড়ি জ্ঞান হারালেন৷ আমার ননাস কেমন জানি চুপসে গেলো! ননদের মুখে কোন কথা নেই।

শাশুড়িকে নিয়ে আমি আর আসিফ হসপিটালে গেলাম৷ ডাক্তার স্যালাইন পুষ করলো। ঘন্টাখানেক পরে আমরা তাকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম। এ যেকো এক গভীর ঘনঘটা আমাদের পরিবারে ভর করেছে। আসিফকে দেখলাম ভীষণ চিন্তিত। তার পাশে গিয়ে বসে বললাম,

‘চিন্তা করো না আসিফ। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে দেখো৷ কোন চিন্তা না। আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছেন হয়তো। এই পরীক্ষা থেকে উতরে যেতে পারলেই সব সুন্দর হয়ে যাবে।’

রুম থেকে আমি চিৎকার শুনতে পেয়ে বের হলাম। শাশুড়ি আকাশ ফাটিয়ে কান্না করতে কর‍তে বলছেন,

‘আমার ঘরে অলক্ষ্মীর ছায়া পড়েছে। সে আসার পর থেকেই এমিন হচ্ছে। অলক্ষ্মী, অপয়া মেয়েটা আসার পর আমার ঘরের সব সুখ শান্তি এক নিমিষে শেষ হয়ে গিয়েছে। এই সকল অশান্তির মূল। সে সব অশান্তি নিয়ে এসেছেন তার ভাগ্য করে।’

শাশুড়ির মুখে এই কথাগুলো আমার অভ্যাস ছিলো এতদিন। আর আজ যেনো সরাসরি বিধলো আমার বুকে এসে! একজন মানুষ কীভাবে পারে নিজেদের খারাপ সময়ের ভাগীদার আমাকে বানিয়ে দিতে! অথচ আমার মন, প্রাণ, ইচ্ছা সব জুড়েই ছিলো তাদের ভালো থাকা, ভালো লাগা। কোনভাবেই তাদের খারাপ চাওয়া আমার উদ্দেশ্যে ছিলো না। শাশুড়ি সবকিছু জেনে শুনেও এসব বলছেন!

ননাস আমাকে এসে বললো,

‘নুপুর তোমার রুমে চলে যাও এখন। মায়ের অবস্থা তো বুঝতেই পারছো। কিছু মনে নিও না।’

আমি ভেতরে চাপা কষ্ট নিয়ে নিজের রুমে এলাম। আসিফ জিজ্ঞেস করলো,

‘মায়ের আবার কী হয়েছে?’

আমি এড়িয়ে গেলাম আসিফকে। বললাম,

‘কিছু না। সব ঠিকঠাক আছে।’

এদিকে আমার ভেতরটা যেনো কষ্টে ফেটে যাচ্ছে একেবারে! আমার শাশুড়ি মায়ের কোন কথাই এতদিন আমার বুকে বিধতো না। আমাকে কষ্ট দিতো কিন্তু কষ্টে রাখতো না। আর আজ? আজ তিনি কী অবলীলায় নিজের উপর আসা দুঃখগুলো আমার উপর চাপিয়ে দিলেন! আমি গ্রামের মেয়ে, কখনো কথা বলি না মুখের উপর, কোন প্রতিবাদ করি না, কোন উত্তর দিতে গিয়েও দেই না, এই কি আমার অপরাধ? নাকি আমার সরলতাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে? মানুষ মানুষের ভালো মানুষীকে কীভাবে ভন্ডামিতে রূপ দিয়ে দেয় সহজে! অবাক হতে হয়ে। নিজের মনের সাথে পিষিয়ে যেতে হয় মানুষের এহেন আচরণে। মনের কষ্টের চেয়ে বড় কোন কষ্ট সাগর আর কিছু হতে পারে না। হতে পারে না।

এদিকে রাত এগারোটা নাগাদ তানিয়াকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে রিপোর্ট আনতে গেলো তানিয়ার স্বামী। তানিয়ার অস্থির মন জুড়ে শুধু একটা খবর পাওয়ার সাধ এখন। সে যেনো মা হতে পারে। আজ ডাক্তারের এই একটা হ্যাঁ বলার উপর তানিয়ার জীবনের অনেক কিছুই নির্ভরশীল। এগারোটা চল্লিশ নাগাদ তাদের সিরিয়াল এলো৷ কাপা মন আর আশার প্রদীপ নিয়ে ঢুকলো ডাক্তারের রুমে। ডাক্তার তানিয়াকে আর তানিয়ার স্বামীকে বললেন….

[এতদিন আমার নিয়মিত ৭ টায় গল্প দেয়া মিস হয়নি। আজ স্টুডেন্টের বাসায় ছিলাম। ভাবছিলাম তাদের ওয়াইফাই কানেক্ট করে ঠিক ৭ টায় দিয়ে দিবো গল্পটা। কিন্তু তারা সম্ভবত পাসওয়ার্ড চেইঞ্জ করে দিয়েছে। আমি আর কানেক্ট করতে পারিনি। মোবাইলে টাকাও ছিলো না যে এম্বি নিয়ে নিবো। ওয়াইফাই ইউজ করার এই এক সমস্যা। এখন স্টুডেন্ট পড়ানো শেষ করে এসে এম্বি কিনে পোস্ট করলাম। বিলম্বিত হওয়ার জন্য দুঃখিত। গল্প কোনদিন পোস্ট না করার হলে আমিই আগে জানিয়ে দিবো যাতে আপনাদের অপেক্ষা করতে না হয়। ]

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here