#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৮
“ভালোলাগা”শব্দটায় একটা সুপ্ত অনুভূতি মিশে থাকে।সেই সুপ্ত অনুভূতি টা যখন প্রকট আঁকার ধারণ করে
তখনই সেটাকে”ভালবাসা”বলে।ভালবাসার মানুষটার সবকিছুই তোমার ভালো লাগবে।আবার কারো প্রতি ক্ষুদ্র ভালোলাগাকে কেন্দ্র করেই তুমি তাকে ভালোবেসে ফেলবে।কি অদ্ভুত তাইনা!
সবে মাত্র মায়ার ভার্সিটি থেকে বেরোলো আরিয়ান।এতোদিন পড়াশোনা একপ্রকার বন্ধ ছিলো মায়ার।কয়েকদিন পর পরীক্ষা।আর দেরি করলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।
সে নিজে প্রফেসর দের সাথে কথা বলে এসেছে।মায়ার নোট’স গুলো যেন তারাই তৈরি করে দেয়।প্রয়োজনীয় বইপত্রগুলো গাড়িতে রেখে উঠে বসলো।এখন আবার অফিসে যেতে হবে।
॥
মায়ার রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে মায়া।আরিয়ান একটু কেঁশে উঠতেই মায়া পেছনে ফেরে।আরিয়ানকে দেখে একবার ঘড়ির দিকে তাকায়।সে অনেকক্ষন যাবত অপেক্ষা করছিলো।বলে,
—“আপনার এতো দেরি হলো কেন আজ?”
—“তোমার ব্যাপারে একটা জরুরি কাজে গিয়েছিলাম।”
—“আমার ব্যাপারে?…কি কাজ?”
আরিয়ান জবাব না দিয়ে একটু হাসে।তখনই তন্ময় ঢুকে।তার হাতে দুইব্যাগ বই।টেবিলে রেখে দিয়ে বেরিয়ে যায় সে।মায়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।তবে ঠোঁটের কোঁণে খেলা করছে মৃদু হাসির কণা।
—“তোমার বইখাতা।খোঁজ নিয়েছি আমি।একমাস পর পরীক্ষা।হেলাফেলা করলে সেমিসটার ড্রপ দিতে হবে।তোমার একটা বছর লস যাক আমি চাইনা।সেজন্যই কাল থেকে সিরিয়াসলি পড়তে হবে।ঠিকাছে?
—“কিন্তু…
—“নোটসগুলো তো?আগের সব নোটস কাল সকালে পেয়ে যাবে।আর নতুনগুলা রোজ সন্ধ্যায় এসে দিয়ে যাবে।ওকে?
মায়া মিষ্টি করে হাসে।দু’দিন যাবত সে ভাবছিলো আরিয়ানকে বলবে এই ব্যাপারে।কিন্তু বলেনি পাছে আরিয়ান রাগ করে এই ভয়ে।অথচ আজ আরিয়ান নিজেই সব ব্যবস্থা করে ফেললো।কিভাবে যে লোকটা সব আগে আগে বুঝে যায় ভেবে পায়না মায়া।
——————
আরিয়ানের ঘুমন্ত চেহারার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে মায়া।আরিয়ানের শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ সে।এতটা কাছাকাছি থাকে তারা তবুও মাঝে কেমন একটা দুরত্ব।অদ্ভুত একটা জড়তা!
মায়া হাত বাড়িয়ে আরিয়ানের গালে রাখে।তার গালে হাল্কা চাঁপদাড়ি সেগুলো বিঁধে বিধায় সে সরিয়ে চোখের পাপড়ির উপর হাত রাখে।আরিয়ানের পাপড়িগুলো তুলনামূলকভাবে বড়।সে একআঙ্গুলের ডগা দিয়ে নাড়াচাড়া করতেই আরিয়ান চোখ কুচকে ফেলে।ঘুমের মধ্যই ষ্পষ্ট কন্ঠে বলে,
—“কি করছো?”
মায়া ভ্রু কুচকিয়ে ফেলে।তার মানে উনি ঘুমায়নি।
—“আপনি জেগে আছেন?
—“উহু,আমিতো ঘুমাচ্ছি।”
—“ঘুমাচ্ছেন তো কথা বলছেন কিকরে?”
ফট করে চোখ খুলে আরিয়ান।মায়া লক্ষ্য করে তার চোখে এখন ঘুম নেই।তবে একটু আগে দেখে তো মনে হচ্ছিলো সে গভীর ঘুমে।
মায়া চোখের উপর থেকে দ্রুত হাত সরাতে গেলে আরিয়ান হাত ধরে ফেলে।ঠোঁটের কাছে এনে হাতের তালুতে উষ্ম স্পর্শ এঁকে দেয়।মায়ার মুখে লজ্জামাখা মৃদু হাসি ফুটে উঠে।
আরিয়ান একটু উঠে মায়ার উপর ঝুকে যেতেই মায়া চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।
আরিয়ান তার হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মায়ার গালে হাল্কা ছোয়াঁ দিয়ে বলে,
—“আমি ঘুমিয়েই ছিলাম।তুমিইতো জাগিয়ে দিলে।…তুমি কি জানো তোমার হাতে কতটা মোহময়ী সুবাস আছে?সেই হাত যদি আমার চোখে মুখে এভাবে বিচরণ করে তবে ঘুম না ভেঙে উপায় আছে বলো?
মায়া উওর দেয়না।তার শ্বাস ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে।আরিয়ানের তপ্ত নি:শ্বাস গুলো মুখের উপর ছড়িয়ে পরায় ক্ষনে ক্ষনে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।
আরিয়ান হঠাৎ মাথা বাকিয়ে তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার হাতদুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে ধীরকন্ঠে বলে,
—“আচ্ছা,তোমার ভয় হয়না?এইযে আমার রুমে তুমি আমি একদম একা,এক বিছানায়।দরজা বন্ধ।বাতি নিভানো।তার উপর তুমি এতটা আবেদনময়ী।শত হলেও আমি একজন পুরুষ।তুমি ছোট মানুষ..আমাকে বাঁধা দিতে পারবেনা।এখন যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করে ফেলি?
মায়া আরিয়ানের চোখে চোখ রাখে।আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে তার দিকে উওরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে।
—“আপনি কি ঘুমের ঘোরে কথা বলছেন?একটু থেমে আবার বলে”এ্যাই,আপনার জ্বর টর এলো নাতো আবার?দেখি..”বলে তার বিছানায় চেপে রাখা হাত উঠাতে চায়।কিন্তু আরিয়ান তা শক্ত করে ধরে রেখেছে।
—“আমি সম্পূর্ণ সজাগ মায়া।কোন ঘোরে নেই।তুমি আমার কথার উওর দাও।”
মায়ার ভয় লাগেনা।সে নিশ্চিত আরিয়ান তার সাথে মজা করছে।তার দৃঢ় বিশ্বাস আরিয়ান কখনোই এমন কিছু করবেনা তার সাথে।
—“আপনি ভয় দেখাচ্ছেন তাইনা?আমি জানি আপনি ওরকম না”
—“ভয় দেখাবো কেন?আমি শুধু সত্যিটা বলছি।এটা হতেই পারে,সবসময় আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রনে নাই রাখতে পারি।আফটার অল ইউ আর টু মাচ এট্রাকটিভ”।বলে মায়ার সারা মুখে চোখ বুলায় আরিয়ান।
মায়া অবিশ্বাসের কন্ঠে বলে,
—“এরকম মজা করছেন কেনো?আমার ভালো লাগছেনা।ছাড়ুনতো”।
আরিয়ান এমন ভাব করে যেন তার কথা শুনতেই পায়নি।সে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে বলতে থাকে,
—“এরকম খোলা চুল,ঘুম ঘুম চেহারা,আর তোমার ঠোঁট গুলো তো জাস্ট…,গায়ে ওড়নাও নেই।আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ মায়া।ডু ইউ নো হাউ মাচ্ হট্ ইউ আর লুকিং?”
~চলবে~