#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৮
দুই হাতে মাথা চেপে লকআপে বসে আছে রাশেদ চৌধুরি।চোখদুটো বন্ধ করে যথাসম্ভব ঠান্ডা মাথায় কিছু একটা চিন্তা করছে ।হঠাৎ জুতার শব্দে মাথা তুলে তাকায় সে।ভাবে আজিজ এসেছে তাকে ছাড়িয়ে নিতে।কিন্তু তার বদলে আরিয়ানকে দেখে দ্রুত উঠে সামনে এগিয়ে যায়।।ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে,
—“এসব কিছু তুই করেছিস তাইনা?আমাকে ফাঁসিয়েছিস?
আরিয়ান দু’হাত পকেটে গুঁজে দাড়ায়।ব্যঙ্গাত্তক কন্ঠে বলে,
—“আমি তোকে ফাঁসাইনি রাশেদ।শুধু তোর নোংরা সত্যিটা জনগনের সামনে নিয়ে এসেছি।
রাশেদ চৌধুরি রাগে গজগজ করে।
আরিয়ান আবার বলে,
—“তুই ই বল তোর বিরুদ্ধে করা একটা অভিযোগও কি মিথ্যা?নিজেকেই জিজ্ঞেস করে দেখ।
রাশেদ চৌধুরি হিংস্র চোখে তাকিয়ে থাকে আরিয়ানের দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বলে,
—“তুই কি ভেবেছিস আমাকে আটকে রাখা এত সহজ?কয়েক ঘন্টার মধ্যই জামিন হয়ে যাবে আমার।টাকা দিয়ে এই পৃথিবীতে সব হয় সব।একবার শুধু বের হই।তোর এই নীতিকথা তখন নিজেকেই শোনাস।
আরিয়ান তাচ্ছিল্যর স্বরে হেসে বসে,
—“বের হয়ে কি করবি তুই?ইলেকশনে তোকে দাঁড়াতে দিবে ভেবেছিস?মিনিস্টার পদ থেকে বহিষ্কার করার পর তোর থাকার বাড়িটা থেকেই তোকে বের করে দিবে।আর সেখানে তুই টাকার গরম দেখাচ্ছিস?হাউ ফানি।
—“খুব বড় ভুল করছিস তুই আরিয়ান।খুব বড় ভুল।আমার সাথে শত্রুতা করার পরিণাম তোর জন্য ভালো হবেনা।”বলেই জেলের লোহার শিঁকগুলোতে জোরে বাড়ি মারে রাশেদ চৌধুরি।
দু কদম পিছিয়ে ভয় পাওয়ার অভিনয় করে আরিয়ান।মুহুর্তেই চোখ মুখে কাঠিন্য ভাব ফুটে ওঠে তার।
কাঠ কাঠ কন্ঠে সে বলে,
—“তুই খুব বোকা রাশেদ।খুব বেশিই বোকা।আমাকে এখনো চিনতে পারলিনা।কি আর করার?আমিই চিনিয়ে দেই।
বলে পকেট থেকে একটা ছবি বের করে আরিয়ান।রাশেদ চৌধুরির সামনে ধরে বলে,”চিনতে পারছিস?”
রাশেদ চৌধুরি চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।ছবিটা দেখে মুহুর্তেই চমকে উঠে সে।শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।কোনরকম তোতলাতে তোতলাতে সে বলে,
—“এই..এই ছবি তো..তোর কাছে..কি করে এলো?এর সাথে..তো..তোর কি সম্পর্ক?কে তুই?”
আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে,
—“ভয় পেলি?আর আমি কে এতটুকু বোঝার ক্ষমতা তোর আছে আশাকরি।”
রাশেদ চৌধুরি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।এতবছর আগের স্বৃতি আবারো তার সামনে।মাথায় কিছু ঢুকছেনা তার।
রাশেদ চৌধুরির এমন চেহারার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হাসে আরিয়ান।ছবিটা সন্তর্পণে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে।তারপর ক্ষোভ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
—“তুই যেমনটা করেছিলি ঠি ক তেমনটাই তোকে ফিরিয়ে দিব।বি রেডি।”
আর একমিনিটও সেখানে দাড়ায়না আরিয়ান।গটগট শব্দ তুলে বেরিয়ে যায়।রাশেদ চৌধুরি ভীত চোখে দাড়িয়ে থাকে।তাহলে কি তার পরিণতিটাও হবে ঠি ক ততটাই ভয়াবহ?
—————
—“বাবা এমনটা কখনোই করতে পারেনা ইতি।আমি কখনোই এসব বিশ্বাস করিনা।”
—“কিন্তু ম্যাম পুলিশতো বাড়িতেই প্রমান পেয়েছে।”
—“তো তুমি কি বলতে চাচ্ছো?এসব বাবা করেছে?হ্যাঁ বলো?উওর দাও।”
চিৎকার করে উঠে মায়া।
—“ম্যাম আপনি শান্ত হন।এতটা স্ট্রেস নিয়েন না প্লিজ।”
শব্দ কান্না করে দেয় মায়া।তার বাবা এরকম নোংরা কাজে জড়িত থাকতে পারে ভাবতেই পারছেনা না সে।কান্না গুলো আটকে যাচ্ছে গলায়।বাড়ির বাইরে আবার হইচই শোনা যাচ্ছে।সাংবাদিকরা এসেছে মনেহয়।
কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যায় মায়ার।ইতি খুব সাবধানে পানির সাথে ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে খাইয়ে দেয় তাকে।কিছুক্ষনের মধ্যই ঘুমে ঢলে পরে সে।ইতি তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
চোখমুখ পানি দিয়ে মুছিয়ে দিয়ে গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে দীর্ঘ: শ্বাস ফেলে।
রাশেদ চৌধুরির নোংরা খেলার শিকার সে ও হয়েছিলো।দু’বছর আগে তাকেও বিক্রি করার জন্যই নিয়ে এসেছিলো রাশেদ চৌধুরি।কিন্তু সেদিন কোন ঝামেলা হওয়ায় একদিনের জন্য এ বাড়িতে রাখা হয়েছিলো তাকে।সেদিন রাতেই ভাগ্যক্রমে মায়ার চোখে পরে যায় সে।দয়া হওয়ায় মায়াই রাশেদ চৌধুরিকে বলে তাকে এ বাসায় কোন কাজ দিয়ে দিতে।তখন থেকেই সে এখানে আছে।মায়ার কাছে সে অনেক কৃতজ্ঞ।
তবে রাশেদ চৌধুরির ভয়ে সে কখনো এই ব্যাপারে কিছু বলেনি মায়াকে।
——–——
গ্লাসে ড্রিংক নিয়ে বসে আছে আরিয়ান।পরপর দুই বোতল ড্রিংক শেষ করেছে সে।তবুও নেশা হচ্ছেনা।
গ্লাসের ড্রিংকটা এক চুমুকে শেষ করে শব্দ করে কাঁচের গ্লাসটা টেবিলে রাখে আরিয়ান।
আরো একগ্লাস ঢালতে গেলে তন্ময় এসে থামিয়ে দেয় তাকে।বোতলটা ছুড়ে ফেলতেই সেটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।আরিয়ান ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
—“কি সমস্যা?ভাঙলি কেন?যা আরেক বোতল নিয়ে আয়”
—“আপনি আর কত খাবেন এগুলা?সকাল থেকে কিছু খাননি।এখন বোতলের পর বোতল এসব খেলে হবে?”
—“কি করবো বল?ওই রাশেদ চৌধুরি….”
—“আপনি অসুস্থ হলে রাশেদ চৌধুরিকে শাস্তি দিবেন কি করে?আর মাত্র একটা দিন।তারপরই তো এতদিনের ক্ষোভ মেটাতে পারবেন।এত বছর অপেক্ষা করেছেন আর একটা দিন পারবেননা?”
—“তুই…তুই জ্ঞান দিচ্ছিস আমাকে…?একটু থেমে গলার স্বর নামিয়ে সে আবার বলে,আচ্ছা মায়ার কোন খবর নিয়েছিস?মেয়েটাকি খুব কান্নাকাটি করছে?
তন্ময় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নরম গলায় বলে,
—“ভাই আপনার কন্ঠ জড়িয়ে আসছে।দয়া করে একটু রেষ্ট নেন।একা আর কতদিকে সামলাবেন?”
আরিয়ান নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকায়।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার।সোফায়ই মাথা এলিয়ে দেয় সে।চোখ বন্ধ করতেই মায়ার হাস্যজ্জল মুখটা ভেসে উঠে।
তন্ময় যেয়ে ঠি ক করে শুইয়ে দেয় তাকে।সার্ভেনট দিয়ে কাঁচগুলো পরিষ্কার করিয়ে দেয়।আরিয়ানের ঘুমন্ত মুখটায় দিকে তাকিয়ে মাথার নিচে একটা বালিশ দিয়ে দেয়।সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,আরিয়ান মায়ার প্রতি দুর্বল।একটু হলেও দুর্বল।নয়তো শত্রুর মেয়ের প্রতি কে এতটা কেয়ার করে?”
তন্ময় নিজেও জানেনা এর ভবিষ্যত কি।এখন শুধু কালকের অপেক্ষা।সব তাদের প্ল্যানমতো হলেই হয়।
~চলবে~