#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৯
মায়া এবার জোরে কান্না করে দেয়।আরিয়ান আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা।মায়ার হাত ছেড়ে দিয়ে তার উপর থেকে সরে গিয়ে শব্দ করে হেসে ফেলে।আরিয়ানের হাসি দেখে মায়ার কান্নার বেগ বেড়ে যায়।হেঁচকি তুলে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে সে।আরিয়ানের হাসি যেন থামছেই না।সে হাসতে হাসতেই উঠে বসে।
ব্যাঙ্গ করে বলে,
—“আমি মজা করছিলাম মায়া।ডোন্ট ক্রাই।”
মায়ার কান্না থামেনা।দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে সে।আরিয়ান এখনো হাসছে।সে শুধু একটু মজা করতে চাচ্ছিল।তবে তার অভিনয় মনে হয় একদমই ভালোনা।এজন্যই মায়া তার কথাগুলো বিশ্বাস করছিলোনা।
লাস্টে হয়তো একটু বেশিই বলে ফেলেছে।আরিয়ান বহু কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে মায়াকে টেনে তুলল।
পাশে বসিয়ে মাথায় পিছের দিকে হাত রেখে বললো,
—“আচ্ছা,আর কাঁদেনাতো।তুমিতো আমার কথাগুলো বিশ্বাসই করোনি।তো এভাবে কাঁদছো কেন?”
কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে মায়া।কোনরকম থেমে থেমে সে বললো,
—“আ..আপনি ওরকম..বি..বিশ্রিভাবে কেন..ক..কথা বলছিলেন?”
আরিয়ান ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।সে বুঝতে পারছে সে একটু অতিরিক্তই বলেছে।তার মায়াবতী খুবই নরম,কোমল।এসব কথা তার সইবেনা।
—“ভয় পেয়েছো?”
—“উহু,আমি..আমি জানি আপনি ওমন নন”
আরিয়ান শুধু এতটুকুই জানতে চেয়েছিলো যে মায়া তাকে কতটা বিশ্বাস করে।তার এসব বলার পরও মায়ার চোখে তার প্রতি কোনরকম ভয় দেখেনি।দেখেনি কোন অবিশ্বাস।ভাবতেই অন্যরকম ভালোলাগায় ছেঁয়ে যাচ্ছে ভেতরটা।
মায়ার মুখ থেকে হাত সরাতেই মাথা নিচু করে ফেললো মায়া।এখনো কাঁদছে সে।মায়ার হাতদুটোকে একহাতের মুঠোয় বন্দি করলো আরিয়ান।মায়ার হাতগুলো বাচ্চাদের মতো।আরিয়ানের একহাতেই তার দুইহাত এসে যায়।
মুখের উপর আসা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে আরিয়ান বললো,
—“এত বিশ্বাস করো কেন আমাকে?”
মায়া মাথা উঠিয়ে আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।তার কাঁদতে কাঁদতে লাল হয়ে যাওয়া চোখগুলো দেখে আরিয়ানের কোথাও একটা “ধক্” করে উঠে।তৎক্ষনাত সে চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
মায়া আবারো কয়েকফঁটা জল বিসর্জন দিয়ে উওর দেয়,
—“জানিনা”।
আরিয়ান তাকে কাছে টেনে একহাতে আগলে ধরে।মাথাটা বুকে চেপে দৃঢ় কন্ঠে বলে,
—“আর কাঁদবেনা।কান্না বন্ধ কর।”
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে মায়ার কান্না থামে।ঘাসের উপর যেভাবে শিশির লেপটে থাকে ঠিক সেভাবেই আরিয়ানের প্রশস্ত বুকের সাথে মিশে থাকে সে।
আরিয়ান হঠাৎ ডেকে উঠে,
‘মায়া?’
‘বলেন’
‘আমি না হয় মজা করছিলাম।কিন্তু কথা গুলো কিন্তু সত্যি ছিলো।তোমাকে কিন্তু এখন খুবই…
এটুকু বলতেই মায়া চোখ রাঙিয়ে তাকায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
—“আপনি আবারো…।
আবছা আলোয় মায়ার এমন চাহনীতে নি:শব্দে হেসে ওঠে আরিয়ান।
——————
——————
সকালে নিজের রুমে ওয়ার্ক-আউট করছিলো আরিয়ান।জীম-ম্যাট বিছানো মেঝেতে।পাশে দুটো ডাম্বেল রাখা।
মায়া তখনো ঘুমে।আরিয়ানও ডাকেনি।কালরাতে এতো কেঁদে এখন ঘুমাচ্ছে!ঘুমাক!।
পুশ-আপ দিতে দিতে হঠাৎই থেমে যায় আরিয়ান।তার দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়ে যায় মায়ার সদ্য ভাঙা ঘুমঘুম চেহারায়।মায়া আধো আধোভাবে চোখ খুলছে।একহাত দিয়ে তার পাশে হাতরাচ্ছে।আরিয়ানকে খুঁজছে হয়তো।পাশে না পেয়ে ঝট করে চোখ খুলে মায়া।চারপাশে চোখ বুলাতেই আরিয়ানকে চোখে পরে।
ততক্ষনে মাথা নামিয়ে পুশ-আপে মনোযোগ দিয়েছে আরিয়ান।
তার পেটানো সুঠাম দেহ থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে।গায়ের চাদর সরিয়ে মায়া উঠে বসে।চোখ-মুখ ফুলে আছে তার।চোখ কচলিয়ে সামনে তাকাতেই আরিয়ানের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়।
একটা হাই তুলে মায়া বলে,
—“এই সকাল সকাল আপনি এসব করছেন কেন?”
—“এখন সকাল সকাল?সাড়ে দশটা বাজে”।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে মায়া।আসলেইতো বেলা হয়ে গেছে। বালিশের পাশ থেকে ওড়না নিতে যাবে তখনই বালিশের উপর রাখা আরিয়ানের ফোন বেজে ওঠে।ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকানোর আগেই আরিয়ানের দ্রুত ফোনটা নিয়ে নেয়।নামটা দেখে কপালে সুক্ষ ভাঁজ পরে।দাড়িয়ে যায় সে।গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে মায়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে,”তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও,আমি আসছি”।অত:পর ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায় সে।
মায়া মাথা ঘামায় না।হয়তো জরুরি কারো ফোন।
বিছানা থেকে নেমে সামনে যাবে তখনই নিচে রাখা ডাম্বেলে হোঁচট খায়।কোনরকম বিছানা ধরে পরা থেকে বেঁচে যায় মায়া।পায়ের ব্যাথায়”উফ” বলে আর্তনাদ করতেই পেছন থেকে আরিয়ানের কন্ঠ শুনে,
—“কি হলো?ব্যাথা পেয়েছো?”
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়।আরিয়ান ফোন কানের থেকে অনেকটা দুরে রেখে তার উপর একহাত রেখে দিয়েছে।যেন তাদের কথোপকোথন ওপাশের মানুষটা শুনতে না পায়।মায়া সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে,
—“না ঠিক আছি।আপনি যান,কথা বলুন”।
আরিয়ান তার পায়ের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করে কানে ফোন লাগিয়ে চলে যায়।মায়া ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে।আরিয়ান যে কেন তার এত কেয়ার করে?
––—–———
সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে আরিয়ান।এখন নিচে নামবে ব্রেকফাস্ট করতে।মায়া অপেক্ষা করছে।
দরজা খোলার আগমুহুর্তে তার কানে ভেসে আসে ইতির চিৎকার।অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে আরিয়ানের।
জলদি দরজা খুলে বাইরে যেয়ে দেখে সিঁড়ির কাছে কাঁপতে কাঁপতে দাড়িয়ে আছে ইতি।আরিয়ানকে দেখেই সে চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বললো,
—“স্যার,,,ম্যাম…
আরিয়ান এগিয়ে যেতেই দেখলো উঁচু সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে নিচে পরে আছে মায়া।।মাথা থেকে বেয়ে যাচ্ছে লাল রক্তের ধারা…
~চলবে~
[কেমন লাগলো আজকের পর্ব?আর হ্যাঁ,কাল থেকে আবার রাতেই গল্প দিব।একয়দিন সময়টা একটু উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে]