আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা পর্ব-২১

0
1013

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২১

আরিয়ানের গম্ভীর কন্ঠের ভারি ধমকে মূহুর্তেই কোলাহল থেমে গেল।সাংবাদিকদের সাথে মায়াও খানিকটা চুপসে গেলো।আরিয়ানের ধমকে সে যারপরনাই ভয় পেয়েছে।পিনপতন নিরবতা ভেঙে একজন বলে উঠলো,

—“কিন্তু স্যার,আপনিতো আনম্যারিড।ইনি যে আপনার স্ত্রী প্রমান কি?এমন তো নয় আপনি কোন নারী কেলেঙ্কারি তে জড়াতে চাচ্ছেননা।এজন্য উনাকে স্ত্রী বলছেন।ম্যাম কিছু বলুন।আপনি কি উনার সাথেই থাকেন?আপনাকে কি উনি জোর করে…

মায়া লজ্জায় কুঁকরে যায়।এদের কথাবার্তার ইঙ্গিত বুঝতে পারছে সে।ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে মাথা নুইয়ে আরিয়ানের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকে।

সাংবাদিকটা আরো কিছু বলার আগেই আরিয়ান চোখ গরম করে আবারো ধমকে উঠে,
—“হাউ ডেয়ার ইউ!আপনার সাহস কি করে হয় ওকে কোন প্রশ্ন করার?আর এতোটা বাজে চিন্তাধারা কিভাবে আসে আপনাদের মাথায়।আরিয়ান খানের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট নিশ্চয় আপনাদের মুখ থেকে শুনতে হবেনা।আমি যখন বলেছি ও আমার স্ত্রী।তখন এই ম্যাটারটা এখানেই ক্লোজ হওয়া উচিত না?এটা নিয়ে আর একটা ওয়ার্ডও শুনতে চাচ্ছিনা আমি।রাস্তা ছাড়ুন।

আরিয়ানের উপর আর কিছু বলার সাহস পেলোনা কেউ।সাইড দিতেই দ্রুত হেটে মায়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিল আরিয়ান।দরজা আটকে নিজে গাড়িতে ঢোকার আগে যেই ছেলেটা মায়াকে প্রশ্ন করছিলো তার চেহারাটা একবার দেখে নেয়।অত:পর গাড়িতে বসে জানালার কাঁচ উঠিয়ে দেয় সে।
মায়ার সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে সজোরে গাড়ি টান দেয়।মাথায় আগুন জ্বলছে তার।রাগ নিয়ন্ত্রন সে কোনোকালেই করতে পারে না।
হঠাৎ ডুকড়ে কেঁদে উঠে মায়া।আরিয়ান সেদিকে তাকায় না।সে জানে মায়া কেন কাঁদছে।মায়ার কান্নার শব্দে রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে তার।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে সে রাগী কন্ঠে বলে,
—“মায়া,কাঁদবেনা।রাগ উঠে যাচ্ছে।স্টপ ক্রাইং”

আরিয়ানের ধমকে আরো জোরে কেঁদে দেয় মায়া।ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে,

—“উনারা তো ঠি কই বলছিলো…আমরাতো…”

হুট করে ব্রেক কষে আরিয়ান।মাথা ঠি ক নাই তার।রাগে শরীর কাঁপছে।উঠে গিয়ে মায়ার দিকে ঝুকে সিটের দু’পাশে সজোরে বাড়ি মেরে বলে,
—“আমরাতো কি?হুম?কি আমরাতো?ওরা ঠি ক বলছিলো?কখনো জোর করেছি আমি তোমাকে?একসাথে থাকার পরও ফিজিক্যালি ইনভলভ্ হয়েছি কখনো?এখন চুপ করে আছো কেন?স্পিক আপ,ড্যাম ইট্।

—“আ..আমি সেটা ব..বলিনি…”

—“তো কি বলছো?বলো?কি বোঝাতে চাচ্ছো?”

মায়া একবার আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।রাগে যেন চোখ দিয়েই ঝলসে দিবে সে।ভয়ে মাথা নিচু করে সশব্দে ফুঁপিয়ে উঠে সে।

আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।মাথা কাত করে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নেয়।নিজের সিটে বসে স্টেয়ারিং এ হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে।মিনিট দুয়েক পর চোখ খুলে সে।এখনো মায়ার ফোঁপানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে।শীতল গলায় বলে,

—“আমাদের বিয়ে হয়নি এটাইতো বলতে চাচ্ছো?”

মায়া উওর দেয়না।কেবল মৃদুভাবে উপর নিচে মাথা নাড়ায় ।মুখে কিছু বলতে ভয় লাগছে তার।আরিয়ান যদি আবার ধমকে উঠে।

আরিয়ান ফোনে কাওকে কিছু একটা মেসেজ করে ফোনটা গাড়ির সামনে রেখে বলে,
—“বেশ,আজকেই বিয়ে করবো আমরা”।

মায়া চমকে তাকায়।চোখে মুখে বিস্ময়।এখন বিয়ে করবে মানে?রাত হয়ে গেছে এখন হুট করে কিভাবে?
আরিয়ান তার চোখে চোখ রাখে।মায়ার কান্না তার সহ্য হয়না তবুও মেয়েটা তার সামনেই বারংবার কাঁদে।
সামনের দিকে দৃষ্টি স্হির করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে বলে,

—“চোখ মুছো মায়া।অযথা কাঁদবে না।তোমার চোখের পানির প্রতিটা ফোঁটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।সেগুলো ঝরলেও শুধু আমার জন্য ঝরবে।অন্য কোন কারণে নয়।”
————–——
মাত্র প্লাস্টার করা হাত দিয়েই কোনরকম রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দেয় মায়া।মায়ার সাইন করার পর আরিয়ানও সাইন করে দেয়।রুমে শুধু পাঁচজন মানুষ।একজন উকিল,তন্ময়,ইতি,মায়া,আরিয়ান।
তন্ময় হাপাচ্ছে।কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার।এতক্ষন বেশ দৌড়-ঝাপের মধ্য ছিলো সে।আরিয়ান-মায়া সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সেও ইতিকে নিয়ে অন্য গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিল।পথিমধ্য হঠাৎই আরিয়ানের মেসেজ পায়,এখনই রেজিস্ট্রি পেপারের ব্যবস্থা করতে।সে এখনি মায়াকে বিয়ে করবে।
ব্যাস,আরিয়ানতো বলেই ক্ষান্ত।আর এই রাতের বেলা এসব মেনেজ করতে করতে সে ক্লান্ত।

রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরিয়ে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসালো আরিয়ান।মায়া একেবারেই চুপচাপ।সে কি রিয়েক্ট করবে তার জানা নেই!তার কি আদৌ রিয়েক্ট করা উচিত?বিয়েটা তার সম্মতিতে হলো নাকি অসম্মতিতে সেটাই তো বুঝতে পারছেনা।তবে এতটুকু জানে,আরিয়ান যা করছে তার ভালোর জন্যই করছে।
______________
বাসায় ফিরে আগেই তাকে এতগুলো খাবার খাইয়েছে আরিয়ান।সে নাকি খুব দূর্বল।এখন নাকি বেশি বেশি খেতে হবে।এত খেয়ে এখন ক্লান্ত লাগছে মায়ার।ঘুম আসছে।বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে সে।আরিয়ান গেছে ওয়াশরুমে।শাওয়ার নিতে।সবকিছুই স্বাভাবিক।রোজকার মতো।শুধু এখন তারা বিবাহিত।আরিয়ানের বিয়ে করা বউ সে।এসব ভাবতে ভাবতেই দরজা খুলে বেরোয় আরিয়ান।শুধু টাওয়াল পরা সে।মায়া একবার তাকিয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।লজ্জা লাগছে তার।লাল হয়ে যাচ্ছে ফর্সা গালদুটো।
আরিয়ানের যে এতো রাগ আজ না দেখলে বুঝতোই

কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে আরিয়ান।টাউজার আর টি-শার্ট পরে বেরিয়ে আসে।
ঘরের লাইট নিভিয়ে মায়াকে সোজা করে শুইয়ে দেয়।কারণ কাত হলে মায়া হাতে ব্যাথা পাবে।তবে কথা বলেনা কোন।মায়াও নিশ্চুপ।
অত:পর মায়ার পাশে তার পেট জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।কিছুক্ষন অতিবাহিত হতেই মায়া ধীর কন্ঠে অভিমানের স্বরে বলে,

—“আপনি আজ আমাকে ধমক দিয়েছেন।”
—“বেশ করেছি”।

আরিয়ানের এমন গা ছাড়া ভাবে অভিমানের পাল্লাটা আরো ভারি হলো মায়ার।মুখে কুলুপ এঁটে শুয়ে থাকলো সে।কিছুক্ষন পরই আরিয়ান তার গালে নাক ঘষে বললো,
—“তখন মাথা ঠিক ছিলনা মায়াবতী।রাগ হচ্ছিল খুব।তার উপর তুমি কাঁদছিলে।যেটা আমার সবচেয়ে অপছন্দের।তাই রাগের মাথায়…”

—“রাগের মাথায় আমার উপর চিল্লিয়ে দিলেন”।

আরিয়ান হেসে ফেলে।এই বাচ্চা মেয়েটার মায়াজালে সে কিভাবে যে ফেঁসে গেছে?

—“বাদ দাও সেসব।ঘুমিয়ে পরো।আর ঘুমের মধ্য নড়াচড়া করবেনা।হাতে বা মাথায় ব্যাথা পাবে কিন্তু।…
শরীর খারাপ লাগলে আমাকে ডাকবে।ঠিকাছে?”

—“হু”।

মায়া পরম শান্তিতে আরিয়ানের বাহুডোরে ঘুমিয়ে পরে।সে জানে এই জায়গাটা তার জন্য নিরাপদ।একেবারেই নিরাপদ।কোন খারাপ কিছু তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা এখানে।কখনো পারবেনা।

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here