#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৬
মায়া চিৎকার দেয়ার আগেই একটা শক্ত হাত তার মুখ চেপে ধরলো।মুখ দিয়ে কোনরকম আওয়াজ করতে পারলোনা সে।ছেলেটা তার পিছে দাড়িয়ে আছে তার উপর চারিদিকে অন্ধকার।হৃদপিন্ডটা তুমুল গতিতে লাফাচ্ছে তার।গলা শুকিয়ে আসছে।ছেলেটা তাকে ওই অবস্থায় ধরেই বাগানের আরো ভেতরে নিয়ে যায়।আরিয়ানের কন্ঠও আর শোনা যাচ্ছেনা।
ছেলেটা তার মুখটা কানের সামনে এনে অনেকটা শীতল কন্ঠে বলে,
—“দেখেন,আপনার মুখ চেপে রাখতে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।তাই বলছি যে,আমি হাতটা সরাচ্ছি,কিন্তু আপনি একদম চিৎকার করবেন না।ওকে?”
মায়া উপর নিচে মাথা নাড়ায়।তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনাজল।কন্ঠটা শুনে সে বুঝতে পেরেছে এটা রাহাত।
মুখ থেকে হাত সরাতেই জোরে জোরে শ্বাস নেয় মায়া।রাহাত তার হাত ছেড়ে দিতেই সে দৌড় দিতে চায় কিন্তু পারেনা।রাহাত তাকে কাছে টেনে নিয়ে একহাতে কোমড় পেচিয়ে ধরে।অসহ্য লাগে মায়ার,রাহাতের স্পর্শ তার সহ্য হচ্ছেনা।সকালে তার সম্পর্কে ওসব শোনার পর এখনতো গা গুলিয়ে যাচ্ছে।
—“যেতে দেন বলছি।এখানে কেন এনেছেন?”
—“আমি জানি আরিয়ান হয়তো আপনাকে আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছে।এবং আপনি হয়তো একদমই সেফ ফিল করছেন না আমার সাথে।বাট আই প্রমিস,আমি খারাপ কিছু করবোনা আপনার সাথে।আরিয়ান হয়তো চলে আসবে একটু পরেই।আপনাকে শুধু একটা জিনিস দেখানোর জন্য এনেছি।বলেই নিজের ফোন বের করে রাহাত।কিছু একটা খুঁজে বের করে বলে,আপনি জাস্ট এটা একটু দেখুন।”
মায়া তার বাহুতে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।না পেরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
—“আমি কিছু দেখবোনা।আপনি প্লিজ আপনার হাতটা সরান।যেতে দিন আমাকে।”
রাহাত হাত সরায়না।বরং আরেকটু নিজের সাথে লেপ্টে নিয়ে বলে,
—“কাঁদবেননা প্লিজ।একদম সময় নেই।এটা দেখুন।বলে একটা ভিডিও প্লে করে রাহাত।জার্নালিস্ট জীবনকে মারার ভিডিও।মায়া জলভরা দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়।এটা না দেখা ছাড়া উপায় নাই তার।
স্ক্রীনে আরিয়ানকে দেখে অবাক হয় মায়া।আরিয়ানের সামনে আরেকটা লোক।এরপর ভিডিও চলতে থাকে।
আরিয়ানের হাতে ছুড়ি নিয়েছে মাত্র তখনই ফোনটা পরে যায় রাহাতের হাত থেকে।মায়া চমকে পেছনে তাকায়।আরিয়ানকে দেখে কলিজায় পানি আসে তার।এতক্ষন ভিডিওতে দেখা সবকিছু মাথা থেকে ঝড়ে যায়।রাহাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আরিয়ান।মায়াকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।পকেট থেকে বন্দুক বের করে রাহাতের দিকে তাক করে রেখে মায়াকে বলে,
—“এই অসভ্যটা কিছু করেছে তোমাকে?”
মায়া উওর দেয়না।সে আরিয়ানকে জাপটে ধরে কাঁদছে।
আরিয়ান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।চুলের ভাঁজে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।রাহাত মাটিতে পরে আছে।
—“কি করেছিস তুই ওর সাথে?এতো স্পর্ধা তোর?তোকে আমি সাবধান করেছিলাম রাহাত,ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।কিন্তু তুই শুনলিনা।মায়াকে….
—“উনার সাথে কিছু করিনি আমি।শুধু তোমার আসল চেহারাটা উনাকে দেখাতে চেয়েছিলাম।এ্যান্ড আই এম অলমোস্ট সাকসেসফুল।যদিও পুরোটা দেখেননি।তবুও”
আরিয়ান তার বাহুতে শুট করে।কঁকিয়ে উঠে রাহাত।
—“জাস্ট শাট আপ!কার আসল চেহারা?..কি দেখাচ্ছিলি তুই ওকে?তোর ওসব মিথ্যা কথা অন্তত মায়া বিশ্বাস করবেনা।আসল কথা হলো,তোর নষ্ট নজর পরেছে মায়ার উপর”
রাহাত হাত চেপে ধরে উঠে দাড়ায়।গড়গড় করে রক্ত পরছে তার হাত থেকে।দাঁতে দাঁত চেপে সে বলে উঠে,
—“মায়া,আমি আপত্তিকর কিছু করেছি আপনার সাথে?বলুন!”
মায়া দু’পাশে মাথা নাড়ায়।রাহাত তাকে ধরেছিলো ঠি ক কিন্তু তার কথায়ই সে বুঝতে পেরেছে তার কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলনা।।রাহাতের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।মায়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।রাহাতের হাত থেকে রক্ত গড়াচ্ছে।রক্তে ভয় লাগে তার।
চারপাশে লাইট জ্বলে উঠে।আরিয়ানের মামা-মামি দৌড়ে আসে।রাহাতের হাতের রক্ত দেখে মামি দ্রুত তাকে ধরে।কাঁদতে কাঁদতে আরিয়ানকে বলে,
—“ও কি করেছে বাবা?”
—“সেটা তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো মামি।”
রাহাত হাসতে হাসতে মায়াকে দেখিয়ে বলে,
—“উনাকে তোমার ভাগ্নের সত্যিটা দেখাতে চেয়েছিলাম মা।উনি যাকে এতটা বিশ্বাস করে সে যে কতটা ভয়ংকর তাই দেখাচ্ছিলাম।কিন্তু পারলামনা।তবে একদিন দেখাবো অবশ্যই।”
আরিয়ান আবার তার দিকে বন্দুক তাঁক করে।আরিয়ানের মামা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
—“ওকে ছেড়ে দাও আরিয়ান।আর কখনো এমন কিছু হবেনা।আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে।”
আরিয়ান বন্দুক নামায়।রাহাত ঠোঁটে তখনো হাসি।
আরিয়ান জোরে একটা শ্বাস নিয়ে রাগ সংবরণ করে।আর একমুহূর্তও সেখানে না থেকে মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
____________
গাড়ি চলছে নিজস্ব গতিতে।রাস্তা ফাঁকা।তবুও জোরে ড্রাইভ করছেনা আরিয়ান।গাড়ির জানালা খোলা।শীতল বাতাস ঢুকছে।মায়া বাইরে তাকিয়ে আছে।একটা কথাও বলেনি সে।বাইরের অন্ধকারেই সে কিছু একটা
খুঁজে বেরাচ্ছে সে।হঠাৎই সে নিরবতা ভেঙে বলে,
—“একটু শুনবেন?”
আরিয়ান একবার তার দিকে তাকায়।তারপর আবারো ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিয়ে বলে,
—“বলো”।
—“আপনি কি করেছিলেন ওই সাংবাদিকটার সাথে?”
আরিয়ান চমকায় না।সে জানে এমন কিছুই হতো।একটু আগেই রাহাত তাকে সেই ভিডিওটা পাঠিয়েছে।সাথে মেসেজে লেখা ছিল,ভিডিওটা কেমন হলো ভাইয়া?”তখনই সে বুঝতে পেরেছিলো রাহাত এটাই দেখিয়েছে মায়াকে।সে চলে আসায় হয়তো পুরোটা দেখাতে পারেনি।
আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
—“তুমি পুরো ভিডিওটা দেখেছিলে?”
—“না”।
আরিয়ান গাড়ি থামায়।পকেট থেকে ফোন বের করে মায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“নাও দেখো।”
মায়া কাঁপা হাতে ফোনটা ধরে।আরিয়ান যখনই ছেলেটার গালে ছুড়ি ঢুকায় তখনই চিৎকার করে উঠে মায়া।
হাত থেকে ফোনটা ফেলে দেয় সে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে।মাথা ঘোরাচ্ছে।
আরিয়ান সিটে মাথা এলিয়ে বসে ছিলো।ফোন পরার শব্দে সে তাকায়।মায়া দুহাতে মুখ চেপে রেখেছে।
ক্রমাগত কাঁপছে।চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।আরিয়ান কখনো মায়ার চোখে নিজের প্রতি কোন ভয় দেখেনি।আজ দেখছে।সে ধীরগতিতে ফোনটা উঠায়।পকেট রেখে বলে,
—“তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো মায়াবতী?”
~চলবে~