#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৭
মায়া চুপ করে থাকে।নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে জানালা ঘেঁষে বসে।প্রচন্ড রাগ উঠে আরিয়ানের।
মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।হাতের মুঠি শক্ত করে সে সজোরে স্টেয়ারিংয়ে বাড়ি মারে।মায়া সচকিত দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায়।ব্যস্ত কন্ঠে বলে,
—“এরকম করছেন কেনো?ব্যাথা পাবেন তো।”
আরিয়ান রক্তলাল চোখগুলো দিয়ে মায়ার দিকে তাকায়।ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে মায়া।
আরিয়ান তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
—“এই ভয়ার্ত চোখগুলো আমাকে কতটা ব্যাথা দিচ্ছে তুমি জানো মায়া?”
মায়া এবারো নিরব।ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়ার মুহুর্তটা মনে আসতেই গা শিড়শিড় করে উঠছে।লোকটার গাল থেকে কিভাবে রক্ত বেরোচ্ছিল।মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে।ভাবে,আরিয়ানের কি একটুও দয়া হলোনা লোকটার উপর?এতটা নির্দয় সে?
পরক্ষনেই চোখ খুলে মায়া।জিজ্ঞেস করে,
—“আপনার কি একটুও দয়া হয়নি লোকটার উপর?”
—“না হয়নি”বলেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পরে আরিয়ান।মায়া হতভম্ব হয়ে যায়।কিছু বলার আগেই আরিয়ান তার পাশের দরজা খুলে তাকে হাত ধরে বের করে।বিকট শব্দ করে গাড়ির দরজা লাগাতেই মায়া আৎকে উঠে বলে,
—“কি করছেন?”
গাড়ি থেমেছে একটা ব্রিজ এর উপর।আরিয়ান মায়াকে টানতে টানতে ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে দাড় করায়।তার দুইপাশে হাত রেখে দৃঢ় গলায় বলে,
—“কেন ভয় পাচ্ছো আমাকে?আর দয়া?আমার কারো উপর দয়া হয়না।আমি নির্দয়,হিংস্র।কিন্তু সেটা ক্ষেত্রবিশেষে।বাকিদের সাথে আমি একরকম।আর তোমার সাথে অন্যরকম।গট ইট?”
মায়া একটা ফাঁকা ঢোঁক গিলে বলে,
—“কেন?কয়টা রুপ আপনার?”
—“মায়া ডোন্ট ডু দিস।রাগাবেনা আমাকে।আমার রাগ সহ্য করার ক্ষমতা তোমার হবেনা।”
—“কি করবেন রেগে গেলে?মেরে ফেলবেন আমাকেও?”
এবার বাঁধ ভেঙে যায় আরিয়ানের।রেলিংয়ে ঘুষি মারতেই হাত ছিলে রক্ত বেরিয়ে আসে।মায়া দ্রুত পাশে তাকিয়ে হাতের রক্ত দেখে জোর করে তার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্থিরভাবে বলে,
—“পাগল নাকি আপনি?গাড়িতে ফাস্ট এইড বক্স আছেনা?চলুন।”
আরিয়ান ঝামটা মেরে তার হাতদুটো সরায়।দু হাতে শক্ত করে মায়ার কোমড় চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।হঠাৎ এমন হওয়ায় অপ্রস্তুত হয়ে পরে মায়া।কি হচ্ছে বোঝার পর বার দুয়েক আরিয়ানের বুকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করে।ফলস্বরুপ আরিয়ান তাকে আরো শক্ত করে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে।হাল ছেড়ে দেয় মায়া।হাতদুটো আরিয়ানের বুকের উপর রেখে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।প্রায় দশ মিনিট পর আরিয়ান কিছুটা শিথিল হয়।হাতের বাঁধন ঢিলা করে দেয়।একহাত মায়া ঘাড়ে রেখে এতক্ষনের রুড ভাবটা ছেড়ে সফ্টলি কিস করতে থাকে।মায়ার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে।আরিয়ান নিজের গালে পানির অস্তিত্ব পেতেই আলতো করে একটা চুমু খেয়ে মায়ার ঠোঁট ছেড়ে দেয়।মায়া ফুঁপিয়ে ওঠে।আরিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,
—“খুব বেশি ভালোবাসি মায়াবতী।তুমি অন্তত আমাকে ভয় পেয়োনা।ঘৃনা করোনা।”
বলে সরে দাড়াতে নিলেই মায়া তার বুকের শার্ট দুহাতে খামছে ধরে।বুকে মাঝখানটায় কপাল ঠেকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে,
—“আমি কি একবারও বলেছি আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি?বলেন?বলেছি একবারও?”
আরিয়ান তাকে স্বস্নেহে জড়িয়ে ধরে।পিঠে হাত রেখে বলে,
—“না বলোনি”।
—“তবে?কেন বারবার বলছেন আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি?”
এবার আরিয়ান উওর দেয়না।মায়া আবারো বলে,
—“আমিতো আপনাকে ভয় পাচ্ছিনা।আমি ভয় পাচ্ছি ভিডিওর সেই হিংস্র,পাষাণ লোকটাকে।আমি হিংস্রতা পছন্দ করিনা।আমি যে খুবই ভীতু সেটা আপনার থেকে ভালো কেও জানেনা।আমি নিতে পারিনা এইসব।কাঁটাছেড়া,রক্তারক্তি দেখলে আমার কলিজা কাঁপে।আমি এরকমই।…আপনি একবার অন্তত আমার কথাটা ভাবতেন।এরকমটা করলেন কেন যা দেখে আমি ভয় পাবো?আমি আপনাকে ভয় পেতে চাইনা।কখনো ভয় পেতে চাইনা।…আপনি না আমাকে ভালোবাসেন।তবে কেন করলেন এমনটা?কেন করলেন?”বলে আরিয়নের বুকে ধরে রাখা শার্ট সজোরে ঝাঁকায় মায়া।
আরিয়ান তার হাতের উপর হাত রাখে।নিজের বুক থেকে সরিয়ে দুই হাতের উল্টোপিঠে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলে,
—“আই প্রমিস,এমনটা আর কখনো হবেনা।তোমার আরিয়ান আর কখনো হিংস্র হবেনা।আই প্রমিস মায়াবতী”।
মায়া একদম শান্ত হয়ে যায়।চোখ নামিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,
—“গাড়িতে চলুন।আপনার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।”
আরিয়ান হেসে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে বসায়।গাড়ির পেছন থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে নিজেও ঢুকে দরজা আটকে দেয়।মায়ার হাতে বক্সটা দিয়ে মায়ার কোলের উপর হাত রেখে বলে,
—“নাও,ব্যান্ডেজ করে দাও।”
মায়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে থাকে।কাজ শেষ হয়ে গেলে সবকিছু আবার সুন্দর করে বক্সের ভিতর ঢুকিয়ে গাড়ির সামনে রেখে দেয়।আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেনা দেখে বলে,
—“আর কতক্ষন বসে থাকবেন এখানে?বাসায় যাবেন না?”
আরিয়ান তার দিকে ঝুঁকে যায়।সেকেন্ডের মধ্য মায়ার ঠোঁটে চুমু খেয়ে আবারো নিজের সিটে বসে বলে,
—-“এই জায়গাটা চিনেছো মায়াবতী?সামনে তাকিয়ে দেখো,ওইযে রাস্তার মোড় দেখা যাচ্ছে,সেখানেই তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেই যে রাতের বেলা তুমি আমাকে আচমকাই জড়িয়ে ধরেছিলে।মনে আছে?”
মাথা মৃদুভাবে মাথা নাড়ায়।সে রাস্তাঘাট এতো চিনেনা।এখন আরিয়ান বলায় বুঝতে পেরেছে এটা ওই জায়গাটাই।আরিয়ান আবার বলে,
—“আবার,এইখানেই প্রথম তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছি।এই জায়গাটা খুব স্পেশাল আমাদের জন্য।তাইনা?”
মায়া স্বলজ্জায় আরিয়ানের দিকে তাকায়।পরমূহুর্তে ঠাট্টার ছলে বলে,
—“সারারাত কি এখানেই থাকবেন?”
—“আরে না না।বাসায় যাচ্ছিতো।”বলে গাড়ি স্টার্ট দেয় আরিয়ান।
______________
মায়ার মুখের উপর বই ধরা।আর এক সপ্তাহ বাদে পরীক্ষা তার।সেমিস্টার ড্রপ যাতে না দিতে হয় সেজন্যই বেশ পড়াশোনা করছে সে।
আরিয়ান বসে আছে সোফায়।আরিয়ানের কোলের উপর তার মাথা রাখা।সামনের টেবিলে ল্যাপটপ রেখে কানে হেডফোন দিয়ে ভিডিও কলে জরুরি মিটিং করছে আরিয়ান।তার একহাত রাখা মায়ার চুলের ভাজে।আরেকহাত ল্যাপটপের কী-বোর্ডে।মায়া সোজা হয়ে শুয়ে আছে পুরো সোফা নিয়ে।আরিয়ান এককোণায় চেপে বসেছে।তার উপর তার কোলে মাথা রেখে পড়ছে মায়া।
হঠাৎ মায়া আরিয়ানকে ইশারা করে সে কিছু একটা বলবে।আরিয়ান দ্রুত নিজের মাইক্রোফোন মিউট করে বলে,”হুম বলো’।
—“আপনি চুলে হাত বুলালে আমার ঘুম আসে।তাই বলছি,সেটা বন্ধ করেন।”
আরিয়ান ল্যাপটপের স্ক্রীন থেকে চোখ সরায়না।সেদিকে তাকিয়েই বলে,
—“এরকম খোলা চুলে কোলের উপর শুয়ে থাকলে আমি হাত বুলাবোই।সো,আই কান্ট হেল্প ইউ।”
—“মিটিং কখন শেষ হবে?”
—“অনেকক্ষন পরে শেষ হবে।শুরুই তো হলো এখন।তোমার পড়া শেষ?”
—“না,আমার পড়াও শেষ হবে অনেএএএকক্ষন পরে।”
আরিয়ান ভিডিও অফ করে মায়ার কপালে চুমু খায়।তারপর আবার ভিডিও অন করে মিটিংয়ে মনোযোগ দেয়।
মায়া আর বিরক্ত করেনা।যদিও সে শত চেষ্টা করেও কখনো বিরক্তবোধ করাতে পারেনা আরিয়ানকে।কারণ আরিয়ান কখনো তার উপর বিরক্ত হয়ই না।কেন হয়না?কারণটা সে জানে।খুব ভালো করেই জানে।
ভাবতেই মুচকি হাসি ফুটে উঠে মায়ার ঠোঁটের কোঁণ ঘেঁষে…
~চলবে~
[এবার প্রমিস ডে তে সবাই আমাকে প্রমিস করেন যে সবাই সব সময় সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করবেন😝😜]