আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️পর্ব-১৩

0
1041

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৩

অফিস থেকে ফিরেছে আরিয়ান।রাতের খাবার কখনোই খায়না সে।তাই রোজকার মতো সিগারেট হাতে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে।
চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার।বাড়ির সামনের লাইটগুলোও তার নির্দেশে এসময় বন্ধ করে দেয়া হয়।অন্ধকার খুব পছন্দের আরিয়ানের।তার এক সমুদ্র আঁধারে ঢাকা নি:সঙ্গ জীবনে এই যান্ত্রিক আলো গুলো একেবারেই বেমানান,অনর্থক লাগে।একবার মায়ার খোঁজ নিয়েছিলো।শুনেছে মেয়েটা নাকি সারাদিন রুমেই ছিলো।বের হয়নি।
শূন্য শূন্য লাগছে তার।কালরাতে মায়া ছিলো সাথে।সারারাত শান্তি মত ঘুম হয়েছে।আশ্চর্যজনক হলেও কালকে কোনরকম নেশাও করেনি।তবুও ঘুমটা হয়েছে একদম মনের মত।আবারও সিগারেটে টান দেয় আরিয়ান।পুরো ব্যালকনি গুমোট ধোঁয়ায় ভরে গেছে।অ্যাশ-ট্রে তে জমা হয়েছে অনেক গুলো আধপোড়া সিগারেটের অংশবিশেষ।আরিয়ানের অবচেতন মন বারবার মায়াকে খুব করে কাছে চাইছে।সেই চাওয়াটাকেই সিগারেটের ধোঁয়ায় সাথে উড়িয়ে দেয়ার নির্মল প্রচেষ্টা করছে সে।

দরজায় জোরে জোরে নক করার শব্দ হয়।আরিয়ান ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার তাকায়।তার রুমের দরজা লক করা না।কিন্তু কারো নক না করে প্রবেশ করার অনুমতি নাই।তন্ময় এসেছে ভেবে জোর গলায় সে বলে,
—“দরজা খোলাই আছে…কাম ইন”।

ধীরপায়ে আরিয়ানের রুমে প্রবেশ করে মায়া।ঘরের আলো নিভানো।কোনরকম পা ফেলে সামনে এগোয় সে।
ব্যালকনিতে প্রবেশ করার সময় অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেয়ে ধুম করে মাথায় বাড়ি খায়।”উফ”বলে কঁকিয়ে উঠতেই আরিয়ান সচকিত হয়ে পেছনে ফিরে।অবয়ব দেখে বুঝতে পারছে এটা মায়া।

—“তুমি এখানে?”

—“আপনাকে ডাকতে এলাম।রাতে খাবেননা?”

—‘তন্ময় বলেনি?আমি রাতে খাবার খাইনা।”

তার দিকে এগিয়ে এলো মায়া।যেই হাতে সিগারেট ধরা সেই হাতের কব্জি ধরে মুখের সামনে এনে বললো,
—“তো কি খান?এসব ছাইপাঁশ?ফেলুন এটা।ইশ্ কি বিশ্রি গন্ধ!!।

সিগারেট পুড়ে ধোঁয়া উড়তেই হাত ছেড়ে একটু দুরে সরে যায় মায়া।একটু কেঁশে বলে,
—“ওটা ফেলে চলুন,খাবেন”।

আরিয়ান জোরে একটা টান দেয় সিগারেটে।প্রায় শেষের দিকে ওটা।মায়ার দিকে না তাকিয়েই সে বুঝতে পারে মায়া তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

—“তুমি যাও মায়া।রোজকার অভ্যাস আমার।রাতে আমি কখনোই খাইনা।তুমি খেয়ে নাও”।

জেদ চেপে বসে মায়ার।তন্ময় কে সে জোর গলায় বলে এসেছিলো সে আরিয়ানকে রাতে খাইয়ে ছাড়বে।
তন্ময় তাকে ঠাট্টার স্বরে বলেছিলো,”সে নাকি জীবনেও পারবেনা”।

মায়া একদম আরিয়ানের কাছাকাছি এসে দাড়ায়।একহাত বাড়িয়ে সিগারেটটা নিতে গেলেই আরিয়ান হাত উঁচু করে ফেলে।আরিয়ান তার থেকে বেশ লম্বা হওয়ায় হাতের নাগাল পায়না সে।

—“দিন ওটা।আপনি এখন খেতে না গেলে আমিও সিগারেট খাব।”

আরিয়ান তার দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে,
—“পাগলামি করোনা।যাও।”

মায়া আরিয়ানের এককাঁধে হাতের ভর দিয়ে পা উঁচু করে।আরেকহাত উপরে বাড়াতেই তার সম্পূর্ণ ভর যেয়ে পরে আরিয়ানের উপর।ব্যালেন্স রাখতে আরিয়ান একহাতে তার কোমড় পেচিয়ে ধরে।উঁচু হয়ে যাওয়ায় মায়ার গরম নি:শ্বাসগুলো আরিয়ানের গলার সামনে পরছে।ক্ষনে ক্ষনে নিজের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে সে।

—“হাত নামান বলছি।আমি খাবোই”

—“এসব তুমি খেতে পারবেনা মায়া।জেদ করোনা!।

একরকম ধস্তাধস্তি করেই সিগারেটটা নিয়ে নেয় মায়া।যদিও ঠি ক মতো সেটা ধরতেও পারেনা সে।আনাড়িভাবে কাঁপা হাতে সেটা মুখে দিতে নিলেই আরিয়ান দ্রুত বলে উঠে,

—“ওটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে মায়া।ঠোঁট পুড়ে যাবে।”

আরিয়ানের বলতে দেরি কিন্তু মায়ার ছেঁকা খেতে দেরি হয়না।গোলাপি ঠোঁটে জলন্ত ছেঁকা খেতেই আর্তনাদ করে উঠে সে।আরিয়ান তার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে ব্যালকনির লাইট অন করে দেয়।একহাতে ঠোঁট চেপে ধরে চোখ ছোট ছোট করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে মায়া।
আরিয়ান এগিয়ে আসে।

—“আপনার জন্য আমার ঠোঁটটা পুড়ে গেল।”

আরিয়ান তার হাত সরিয়ে দেয়।গোলাপি ঠোঁটগুলো রক্তিম লালবর্ণ ধারণ করেছে।ঘোর লেগে যায়।একটা শুকনো ফাঁকা ঢোক গিলে সে।
আরিয়ান মুখ ক্রমশ এগিয়ে গালে হাত রেখে বিরবির করে বলে,
—“আমি তোমাকে সিগারেট খেতে বলিনি,তুমিই তো জেদ করলে,তবে আমার দোষ দিচ্ছো কেন?।”

মায়া উওর দেয়না।প্রচন্ড অসস্তি হচ্ছে তার।দুরত্ব কেবল এক ইন্চি পরিমাণ হলেও আরিয়ান ঠোঁট মেলায় না।
ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
—“এই ঠোঁটে কেবল ঠোঁটের ছোঁয়াই মানায় মায়াবতী।পোড়া সিগারেটের ছোয়াঁ নয়।”

মায়া শিঁউরে উঠে।শরীরের পশম কাঁটা দিয়ে উঠে।আরিয়ানের কথার মানে বুঝতে অসুবিধা হয়না তার।ঝট করে মাথা নামিয়ে সে চাপা স্বরে বলে,
—“খেতে চলুননা প্লিজ।”

—————
ডাইনিং টেবিলে বসে ঠোঁটে বরফ ঘঁষছে মায়া।ছেঁকা টা যে বেশ ভালোভাবেই লেগেছে এখন বুঝতে পারছে।
প্রচন্ড জ্বলছে যে!আরিয়ান খাচ্ছে তার পাশের চেয়ারে বসে।
তন্ময় মুখে বিস্ময় নয়ে সোফায় বসে আছে।তার ভালো লাগছে আবার অবাকও লাগছে।আরিয়ান যত যাই হোক রাতের খাবার খায়না।মদ,সিগারেট খেয়েই রাত পার করে।আর আজকে মায়া বলতেই খেতে চলে এলো।মায়া তার দিকে ঠাট্টার দৃষ্টি নি:ক্ষেপ করলে সে হেসে ফেলে,”মেয়েটার আসলেই অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।”

আরিয়ান খাওয়া শেষ করে বলে,
—“এখনও জ্বলছে?”

—“উহু,কমে গেছে।”

—“পাগল নাকি তুমি?এরকম কেও করে?”

—“আপনি প্রথমে আমার কথা শুনলেই পারতেন।আমার আর এমন করা লাগতোনা।”

আরিয়ান দীর্ঘ:শ্বাস ফেলে উঠে যায়।মায়াও আর কিছু বলেনা।
——————
বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে মায়া।বারবার সেই শ্বাসরুদ্ধকর সময়ের কথা মনে পরছে।আরিয়ানের কথাগুলো কানে বাঁজছে।আরিয়ান আজ তাকে মায়াবতী বলে সম্মোধন করেছিলো কেন?কোন বিশেষ কারণে?

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here