কাঠগোলাপ🍁পর্ব-১৮

0
609

কাঠগোলাপ🍁

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব আঠারো

🍁

নাশতার টেবিলে ধ্রুব আর রাহি বসে আছে,সামনে দুইটা ওয়েস্টার্ন মহিলা দাড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,ধ্রুভ চেয়ার টেনে রাহিকে বসালো..আর নিজেও বসে পরলো।।

“এই হলো রিবা(বাম দিকে আঙ্গুল করে),আর এই হলো লেনা(ডান দিকে আঙ্গুল করে)…এরা দুজন আমার এখানে অনেক আগে থেকে কাজ করে,পুরোনো কর্মচারী.. এতোদিন আমি না থাকায় তারাই এই প্যালেসের দেখভাল করছিলো..গতরাতে তারা বাড়িতে ছিলো না কারন,তাদের আমি বাড়ি থেকে কয়েকদিন ঘুরে আসতে বলেছিলাম..তোমার যখন যা প্রয়োজন এদের বলবে মীরা!!আমি এদেরকে বাংলাদেশি ফুড বানানোও শিখতে বলেছি?”রাহির দিকে তাকিয়ে বললো ধ্রুভ।।

” এন্ড ইউ বোথ!!তোমাদের দায়িত্ব দিয়েছি আমার মীরার ঠিক ততক্ষন যতক্ষন আমি বাড়িতে উপস্থিত না থাকবো!!তোমরা থাকার পরেও যদি আমার মীরার কষ্ট হয়,তোমাদের কি হাল করি সেটা তোমরা আমাকে আগে থেকে যেহেতু চিনো সেই ব্যাপারে ভালো করে জানো!!আমার মীরার খেয়াল রাখায় তোমাদের প্রধান কাজ!!’ধ্রুভ আবারো ওই মেয়ে দুটির দিকে তাকিয়ে বললো।।

মেয়েগুলোকে দেখে রাহি একটু তাকালো তাদের দিকে,তারা যে বেশ ভয় পায় ধ্রুভকে তা তাদের চেহারাতে বেশ প্রকাশ পেয়েছে।।

“গো এন্ড গেট আওয়ার ফুড!!’ধ্রুভ তাদের বললো,মেয়ে দুটো সুরসুর করে চলে গেলো।।

রাহি মাথা নিচু করে আছে,ধ্রুভর হুট করে রাহির গলার দিকে নজর গেলো..সকালবেলা ধ্রুভ বেশ করে একটা কামড় দিয়ে লাল দাগ করে ফেলেছে রাহি গলায়,রাহির দিকে একটু ঝুকে আসলো ধ্রুভ..রাহি পিছু সরলে,ধ্রুভ তার হাত টান দিয়ে আটকে দেয়।।

” কাছে আসার বাহানা খুজো কিন্তু দূরে যাওয়ার নয় মীরা এন্ড মার্ক মাই ওয়ার্ডস!!”ধ্রুভ রাহির হাতে চুমু খেয়ে বললো।।

মিনিট দশেক পর, লেনা খাবার নিয়ে আসলো..খাবার সার্ভ করতে দিলো না ধ্রুভ,রাহিকে বললো করে দিতে..রাহি করে দিলো..রাহির জন্য রুটি আর ডিম ভাজি,ধ্রুভের জন্য লাইট স্যুপ আর সালাদ..ধ্রুভ নিজের খাবার একটু পর পর খাচ্ছে,আর রাহিকে রুটি ছিড়ে খাওয়াচ্ছে একটু পরপর।।

নাশতার টেবিলে কালো জুতা চোখে চশমা আর গায়ে এপ্রোন দিয়ে এক বিদেশি বেশভূষায় উপস্থিত হলো অতি ফর্সা লোক..রাহিকে সবার সাথে ধ্রুভ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে মীরা নামে..

“হোয়াট আর ইয়্যু ডুয়িং হেয়ার!!” ধ্রুভের যখন চোখ গেলো এপ্রোন পরা লোকটিক উপর তখন চোখ মুখ কুচকে বললো।।

“তোমার ত দেখা পাওয়া যায় না আজকাল তাই আমি নিজেই এসেছি দেখা করতে!!” ভদ্রলোক জানালো।।

“কাম এন্ড সিট!!” ধ্রুভ নাক গুলিয়ে বললো,ধ্রুভের বলার সাথে সাথে লোকটির ডান পাশের চেয়ার টেনে বসলো।।

“সো দিস ইজ ইউর মীরা??” লোকটি বললো।।

“ইয়েস শি ইজ মাই মীরা!!মীরা? ইনি হলো ডাক্তার স্মিথ!!” ধ্রুচ রাহির মুখে খাবার পুরে দিয়ে বললো।।

রাহি খাবারটা কোনরকমের গিলে সালাম দিলো স্মিথ কে,স্মিথ সালামটা ধরতে পারলো না যে রাহি কি বললো।।

“শি গিভস ইউ সালাম!!মুসলিমরা সবাইকে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় আরম্ভ করে?!” ধ্রুভ বললো।।

“ওহ আই সি!!হ্যালো?” স্মিথ রাহির দিকে হাত বাড়ালে ধ্রুভ রাহিকে খাইয়ে দিয়ে বললো,

“ইউ গো টু আওয়ার রুম রাইট নাও!!” ধ্রুভ রাহিকে চেয়ার থেকে টেনে তুলে তাকে উপরে যাওয়ার জন্য বললো,ধ্রুভ রাহিকে যখন কথাগুলো বলছিলো তখন তার গলার আওয়াজ ভারী লাগছিলো।।

রাহি আর কি করবে,নিরব দর্শক হয়ে চেয়ে রইলো..তারপর ধীর পায়ে ডাইনিং ত্যাগ করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।।

“লিসেন?আগে আমি একা ছিলাম যখন তখন আপনি আমার বাড়িতে আসতেন!! এখন আমার সাথে আমার মীরাও আছে?আমাদের প্রাইভেসি আছে,হুটহাট এইভাবে আসবেন না??আর আমার মীরার দিকে হাত বাড়ানোর সাহস করেন কিভাবে??আপনি নেহাৎ ই আমার ডাক্তার নইতো আজ আপনার হাত আপনার শরীরের সাথে থাকতো না!!” ধ্রুভ চোখমুখ শক্ত করে বললো।।

স্মিথ ত অবাক হয়ে গেছে,আসলে তারও ভুল হয়েছে এইভাবে হাতবাড়ানো টা..অন্তত উনিও জানেন মীরাকে ধ্রুভ কতটা পজেসিভ..মীরার ছবি লুকিয়ে দেখাতে,পরেরদিন যেরকম তাকে জেরা করে আজও ভুলবার নয়..ধ্রুভের পাগলামির সম্পর্কে উনি অভিহিত তারপরেও উনি বোকার মতো কাজ করেছেন।।

“সরি মাই মিসটেক!!” স্মিথ বললো।।

“কিজন্য আসছিলেন এখানে??এরপর আসার আগে আমাকে কল করে আসবেন?কলে না পেলে টেক্সট ছেড়ে যাবেন!!”ধ্রুভ বললো।।

” আজকে তোমার ইঞ্জেকশন দেয়ার ডেট!!সেইটাই দেয়ার জন্য এসেছিলাম!!”স্মিথ বললো।।

“দিস ব্লাডি শিট!!” ধ্রুভ ইঞ্জেকশনের কথা শুনে নাক মুখ কুচকে বললো।।

“হ্যা তোমার ডোজের এটা!!যেটা ছয়মাস পর পর দেয়া লাগে তোমাকে??তুমি এই কয়দিন ছিলে না এইজন্য দেয়া হয় নি!!” স্মিতজ বললো।।

ধ্রুভ ভ্রু কুচকে সোফায় বসে হাত বাড়ালো,স্মিথ ও তার ব্যাগ থেকে ইঞ্জেকশন আর এম্পুল বের করলো..ধ্রুভকে ইঞ্জেকশন দেয়ার জন্য..ইঞ্জেকশন দিতে যাবে ওই মুহূর্তে কোথা এসে একটা কুকুত এসে ধ্রুভের কোলে উঠে পরলো,আর পরমহূর্তে ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জটা নিচে পরে ভেঙ্গে গেলো..কাঁচের হওয়াতে সেটা গুড়িয়ে গেলো।।

“হোয়াটস হ্যাভ ইউ ডান বিচ!!” স্মিথ প্রায় রেগ্র চেচিয়ে বললো।।

“শাট আপ!!” ধ্রুভ দাঁত কিড়মিড় করে বললো।।

“তুমি দেখলে না এই বজ্জাত কুকুরটা কিভাবে তোমার মেডিসিন ভেঙ্গে দিলো??এই মেডিসিন টা তৈরি করতে আমার ছয়মাস লাগে আর সেটা ও ভেঙ্গে দিলো??ওকে ত আমি!!” স্মিথ তেড়ে ধ্রুভের হাতে থাকা কুকুরটাকে মারতে গেলে,ধ্রুভ রক্তিম চোখ নিয়ে তাকালো স্মিথদের দিকে..স্মিথ ওই তাকানোটা দেখে ভয়ে পেয়ে যায়।।

“আপনার তৈরি করা মেডিসিন মানে??আর আপনার সাহস কি করে হয় আমার টমিকে মারার??হ্যাভ ইউর লস্ট ইউর মাইন্ড??” ধ্রুভ চিল্লিয়ে বললো।।

“রিল্যাক্স ধ্রুভ?তুমি ভালো করে জানো,এই মেডিসিন সচরাচর পাওয়া যায় না??আমি জাপান থেকে মেডিসিন তোমার জন্য বানিয়ে আনি,এটা তৈরি হতে কমসে কম সিক্স মানথ লাগে আর এক নিমিষে তোমার বাড়ির কুকুরটা সেটা ভেঙ্গে দিলো!!” স্মিথ জবাব দিলো।।

মেডিসিনের কড়া গন্ধে ধ্রুভের মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে,এইরকম সে তখন ফিল করে যখন এই ইঞ্জেকশন টা তার হাতে পুশ করা হয়..কেমন শুন্য শুন্য লাগছে তার মাথার ভেতর..মাথাটা ধরে বসে পরলো..রিবাকে বললো টমিকে নিয়ে যেতে।।

“ইয়ু গো নাও!!” ধ্রুভ কোন রকমে বিড়বিড়িয়ে বললো স্মিথকে,স্মিথের মেজাজ চরম খারাপ মেডিসিন নষ্ট হয়ে যাওয়াতে..তাই সে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেলো।।

চলবে🍁

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,কেমন লাগছে জানান যেন আপনাদের মন্তব্য শুনে পরের পর্ব দ্রুতভাবে দিতে পারি..আজকে বাবার ফোন হাতে থাকাই গল্প লিখে আপলোড করে দিচ্ছি..যেদিন আপলোড করা হবে না ভেবে নিবেন পরের দিন করবো বুঝতে পারছেন আমার ফোন নাই..আর একটা সাজেশন চাই,রাহিকে রাহি নামে সম্ভোধন না করে মীরা নামে সম্ভোধন করলে কেমন হয়??জানাবেন!!ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here