#আলো-আঁধার🖤পর্ব১২

0
499

#আলো-আঁধার🖤পর্ব১২
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১২.
রাণী দৌড় দিয়ে তূর্যয়ের কেবিন থেকে বের হলো ঠিকই।কিন্তু সে অফিস থেকে বের হয়নি।তূর্যয়ের কেবিন থেকে কিছুটা দূরে এসে রাণী একটা সোফা দেখতে পেলো।রাণী তার ব্যাগ কোলে নিয়ে সেই সোফায় বসে পড়লো।রাণীর চোখে পানি টলমল করছে।তবে রাণী তার চোখ থেকে পানি বেরুতে দিচ্ছে না।মাথা উঁচু করে চার পাঁচ বার চোখের পলক ফেলে রাণী নিজের চোখের পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।হুটহাট কাজ করা রাণী মোটেও পছন্দ করে না।এইযে এখনো,রাণীর ইচ্ছা করছে তূর্যয়ের এই অফিস থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে যেতে।কিন্তু, এইভাবে হুটহাট কাজ করলে পরে রাণীর ক্ষতিই হবে বেশি।এইভাবে হুট করে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলে একে তো সে তূর্যয়ের কোনো সাহায্য পাবে না।তার উপর এইভাবে ধুম করে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলে রাণী তূর্যয়ের জীবনের রহস্য সম্পর্কেও জানতে পারবে না।অগত্য রাণী সোফায় বসে নিজের মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছে।রাণী তার ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এক চুমুক পানি খেয়ে নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে নিচ্ছে। আশে পাশের কালো রঙের পোশাকের লোকগুলো হাঁটাচলা করছে সাথে রাণীর দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। তাদের এমন কাজে রাণী বেশ বিরক্ত হচ্ছে।রাণীর তার নিজের বিরক্ত ভাব কমিয়ে নিজের মাথায় অন্য একটা প্ল্যান করছে।রাণীর চোখ এখন হ্যারিকে খুঁজছে।রাণীর মতে, হ্যারিই একমাত্র মানুষ যে রাণীকে সাহায্য করতে পারবে।রাণী তার বয়সের একটা ছেলেকে দেখতে পেলো কালো রঙের কাপড় পড়ে বেশ ভাব নিয়ে হাঁটছে।রাণী ছেলেটিকে দেখে মনে মনে বলে উঠলো,”এই ছেলেকে একটু কম ভয়ংকর লাগছে।এর থেকে হেল্প নেওয়া যায়।” রাণী কথাটা ভাবতেই দাঁড়িয়ে পড়লো।ছেলেটা রাণীর সামনে আসতেই রাণী তাকে বলে উঠলো,”এই যে শুনুন?” ছেলেটা থেমে গেলো রাণীর ডাকে।ছেলেটা রাণীকে উত্তর দিলো,”হ্যাঁ,বলুন।” রাণী অসহায়ের সুর করে ছেলেটিকে বললো,”আপনি কি আমার সাথে হ্যারি স্যারের কথা বলিয়ে দিতে পারবেন?” ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে তার মোবাইল বের করলো।মোবাইলে হ্যারির নাম্বারে কল দিয়ে ছেলেটি তার মোবাইল দিলো রাণীকে। অপর পাশ থেকে হ্যারি “হ্যালো” বললে রাণী তাকে বলে উঠলো,”ভিনদেশী ভাই!আমি রাণী।আপনি তূর্যয়ের কেবিন থেকে একটু দূরে যেখানে ওয়েটিং জোন আছে সেখানে আসুন,প্লিজ।” হ্যারি অবাক হলো রাণীর কথায়। সে রাণীকে অবাকের সুরে বললো,”হুয়াই?তুমি ঐখানে কেনো?তোমাকে তো ব্রোয়ের অফিসে ওয়েট করতে বলেছিলাম আমি! হুয়াট হ্যাপেন্ড, সিস?” রাণী হ্যারির চিন্তিত কণ্ঠ শুনে বলে উঠলো,”আপনি আসুন।এরপরই আমি বলবো।” হ্যারি “কামিং” বলেই মোবাইল রেখে দিল।হ্যারি কল কেটে দিলে রাণী সেই ছেলেটাকে মোবাইল দিয়ে দিলো। ছোট্ট করে একটা “ধন্যবাদ” দিলো রাণী ছেলেটাকে।ছেলেটা তার মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো অন্যদিকে।রাণী আবারও সোফায় বসলো।মনে তার নানা কথা ঘুরছে।সাথে সে তূর্যয়কে সমানতালে গালি দিয়ে যাচ্ছে,”শয়তান, সন্ত্রাসী।কিভাবে আমাকে অপমান করে বের করে দিয়েছে লোকটা।এতো খারাপ মানুষ আমার জীবনে আমি একটাও দেখিনি।উনার অন্তরে কি একটুও দয়া মায়া নেই?তার উপর সুন্দর এক মেয়ের ছবিও রেখেছেন তার টেবিলের উপর।নিশ্চয় উনার কাছের কেউ হবে ছবিতে থাকা মেয়েটি।সেই মেয়েটি কি পারে না তূর্যয়কে এই হিংস্রতা থেকে দূরে যেতে বলতে?” রাণীর মনের কথনের ধ্যান ভাঙলো হ্যারির কথায়।রাণী মাথা উচুঁ করে দেখলো হ্যারিকে।হ্যারির কথা বুঝতে না পেরে রাণী হ্যারিকে বলে উঠলো,”বুঝিনি।” হ্যারি রাণীর পাশে বসে পড়লো সোফায়।এরপর সে ধীরে ধীরে রাণীকে বলতে লাগলো,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?এইখানে কেনো তুমি?ব্রো কিছু বলেছে তোমাকে?” রাণীর চোখ লাল হয়ে এলো।সে রেগে হ্যারিকে বলতে লাগলো,”আপনার ব্রো একটা শয়তান,
একটা পাথর।উনি আমাকে কেবিন থেকে বের করে দিয়েছেন। অথচ, এতে আমার কোনো দোষ ছিলো না।আপনার ভাই একটা শয়তান,সন্ত্রাসী।একটা ভিলেন আপনার ভাই।আমার যদি ক্ষমতা থাকতো আপনার ভাইকে আমি এক থাপ্পর দিয়ে ভালো মানুষে পরিণত করতাম।আর এইখানে চাকরি তো কখনোই করতাম না।কিন্তু, চাকরি না করলে আপনার ব্রো আমাকে সাহায্য করবে না। এতে আমার বদনাম বাড়বে আরো।তাই না পারতে সেই জলহস্তীর উপস, মানে আপনার ব্রো এর চাকরি করতে হবে আমার।” রাণী কথাগুলো বলে দম ফেললো। পরক্ষণে সে হ্যারির দিকে তাকালে,সে দেখলো হ্যারি তার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে।রাণী নিজের মুখে হাত রাখলো।রাণী মনে মনে ভাবছে,”এক ভাইয়ের সামনে অন্য ভাইয়ের এতো ভালো দুর্নাম করেছিস তুই। যা এইবার তোর মরণ কাছে এসেছে, রাণী।”
রাণী হ্যারির দিকে তাকিয়ে বিভ্রান্তিমূলক হাসি দিয়ে বললো,”ইয়ে মানে,সরি।একটু বেশি বলে ফেলেছি কী?” হ্যারি নিশ্চুপ।রাণীর মনের ভয় বাড়তে লাগলো।রাণী ভয়ে নিজের কোলে থাকা ব্যাগকে চেপে ধরলো।রাণী মাথা নিচু করতেই হারির অট্টহাসি শুনতে পেলো রাণী। মাথা উঠাতেই রাণী দেখলো হ্যারি পেট চেপে হাসছে।রাণী অবাক হলো হ্যারির এমন কাহিনী দেখে।রাণী হাসার চেষ্টা করছে হ্যারির হাসি দেখে।হ্যারি নিজের পেট চেপে বললো,”ইউ নো?ব্রো এইসব শুনলে আমাদের দুইজনকে আস্তো রাখবে না।হাহাহা।ইউ আর সো ফানি অ্যান্ড ব্রেভ।ব্রো নিজেও তোমাকে কেনো জানি সহ্য করে নিচ্ছে।আদারওয়াইজ,ব্রো অন্যসব মেয়েদের যা কঠিন শাস্তি দেয়।হাহা।নাও, লেটস গো।ব্রো এর কাছে চলো।আমি সব ওকে করে দিচ্ছি।” রাণী নিজের মাথা নাড়লো হ্যারির কথায়। সে হ্যারিকে বললো,”নাহ,আর দরকার নেই সেখানে যাওয়ার।আমি আপনার সাথেই থাকবো,
ভিনদেশী ভাই।” হ্যারি রাণীর হাত ধরে তাকে আশ্বাস দিয়ে বললো,”আমি তোমার ভাই। সো,আমি থাকতে নো টেনশন। ওকে?” রাণী কিছু বললো না হ্যারির কথায়।সে হ্যারির হাত ধরেই হ্যারি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই যাচ্ছে।কেনো যেনো রাণীর হ্যারিকে বড্ড বিশ্বস্ত মনে হয়।যদিও হ্যারির গতকালের চালাকির ব্যাপারটায়, রাণী তূর্যয়কেই দোষী হিসেবে জানে।কিন্তু রাণী এটা জানে না, হ্যারি নিজেই তূর্যয়ের অগোচরে অন্য প্ল্যান করেছে রাণী আর তূর্যয়ের ভালোর জন্যে।রাণী হ্যারির হাত শক্ত করে ধরে রইলো।
হ্যারি তূর্যয়ের কেবিনে এসে নক করলেই, তূর্যয় তাকে ভেতরে আসার অনুমতি দিলো।তূর্যয় ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কিছু করছে।এর মধ্যেই হ্যারি তূর্যয়কে বললো, “তুমি আমাকে সিসকে কেবিন থেকে কেনো বাহির করে দিয়েছো?” তূর্যয় মাথা উঠালো হ্যারির কথায়।তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে হ্যারিকে বললো,”এই মেয়ে এখনো যায়নি?কাজ না পারলে তাকে কাজে রেখে কি হবে?আমার সব ফাইলের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে এখন তোমার পেছনে লুকিয়ে আছে মেয়েটি!” হ্যারি রাণীকে তার পাশে দাঁড় করালো।সে তূর্যয়কে বললো,”শুনো ব্রো,তুমি যেমন আমার ব্রাদার।তেমনি এই মেয়েটা আমার সিস। সো, আমাকে যেমন লাভ করো; তুমি তাকেও সেভাবে লাভ করবে।” হ্যারির কথায় কেশে উঠলো তূর্যয়।রাণী প্রথমে হ্যারির এমন বাংলা ইংরেজি কথা বুঝতে না পারলেও, একটু পরে হ্যারির কথার অর্থ তার মাথায় আসতেই রাণী চিল্লিয়ে উঠলো,”মরে যাবো আমি।তাও এই স্বার্থপর লোকের ভালোবাসা আমার লাগবে না।আরে এই লোকের কি হৃদয় আছে নাকি,যে উনি অন্যকে ভালোবাসবে?রাগ,হিংস্রতা আর খুন ছাড়া উনি জানে আর কিছু?” রাণী গড়গড় করে কথাগুলো বলে তাকালো তূর্যয়ের দিকে।তূর্যয়ের রাগী লাল চোখ দেখে রাণী নিজের মুখ চেপে ধরে আবারও হ্যারির পিছে গিয়ে দাঁড়ালো।রাণী জোরে চিল্লিয়ে তূর্যয়কে বললো,”সরি।” হ্যারি নিজেই তূর্যয়কে বলতে শুরু করলো,”আমার সিস এখনো বেবি।তাই একটু মুখটা বেশি স্লিপ করে।আমিও তার সাইড থেকে সরি বলছি।” তূর্যয় চেয়ারে হেলান দিলো।সে রাণী আর হ্যারির সব কান্ড ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে।তূর্যয় ভেবে পায় না,রাণীর সাথে হ্যারি এতো দ্রুত কিভাবে একটা সুন্দর বন্ডিং তৈরি করেছে!
তূর্যয় সেইসব মাথা থেকে ছেড়ে দিয়ে হ্যারিকে বললো,
“চুপ।দুইজনই একদম চুপ।মেয়েটাকে ঠিক কোন কাজের জন্যে রেখেছো, হ্যারি?চা, কফি বানানোর জন্যে?এই কাজের মানুষ তো আমাদের আছে।তাহলে?”
হ্যারি মিনমিন করে বলে উঠলো,”তোমার জীবনকে আলোকিত করানোর জন্যে।” হ্যারির মিনমিন কথায় রাণী আর তূর্যয় দুইজনই বলে উঠলো,”হ্যাঁ?” হ্যারি চুপ করে গেলো।পরক্ষণে হ্যারি বলে উঠলো,”আমাদের সাথে মিশনে যাবে রাণী।আগেও তো বলেছি তোমায়,ব্রো।আমাদের সাথে থাকবে সে।” তূর্যয় হ্যারির কথায় তাকে বললো,” এই মেয়ে যাবে মিশনে?এই মেয়েকে মিশনে নিয়ে গেলে তাকে সামলাবে কে?তুমি সামলাবে,হ্যারি?সেদিন তো দেখলে গুলির এক শব্দ শুনেই মেয়েটির অবস্থা কি হয়েছিল।” হ্যারি মাথা চুলকালো তূর্যয়ের কথায়।হ্যারি মাথা চুলকানো অবস্থায় তূর্যয়কে বললো,
“দেখা যাক,মিশনে গিয়ে কি হয়।ধরো অনেক সময় আমরা ইঞ্জুর্ড থাকি।তখন আমাদের দুইজনকে নিজেরা সামলানো একটু কষ্ট হয়।ফার্স্ট এইড নিতে অনেক দেরী হয়ে যায়।কিন্তু রাণী থাকলে সাথে সাথেই আমাদের ফার্স্ট এইড দিতে পারবে। সো,ঠিক এই কাজেই তাকে রাখলাম আমি। যদিও তুমি অনেক স্ট্রং।তোমার ফার্স্ট এইড না লাগলেও আমার লাগবে।আমার কথা শেষ।আর কোনো কিছু শুনতে চাই না আমি।গাড়ি রেডি করছি।আমরা এক্ষুনি মিশনে বের হবো।সো হারি আপ, ব্রো।” হ্যারি কথাটা বলে রাণীর হাত ধরে বেরিয়ে গেলো সেই কেবিন থেকে দ্রুত। হ্যারি নিজেও জানে, হ্যারি রাণীকে কাজে রাখে জন্যে যেই বর্ণনা দিয়েছে,সেটি একদম বাজে ছিল।হ্যারি মনে মনে বলতে লাগলো,”কি পরিমান লাইয়ার তুই!যত্তসব ননসেন্স যা আসলো মাথায় মুখে সব বলেছিস তুই তোর ব্রোকে।তূর্যয় ব্রো যথেষ্ট স্ট্রং।তার কখনোই ফার্স্ট এইড এর দরকার হয়না।হাতে গুলি লাগলেও তূর্যয় ব্রো ইজিলি হ্যান্ডেল করতে পারে।কিন্তু,ব্রো অলয়েজ বাইরে থাকে।রাণীকে ব্রোয়ের জীবনে আনতে হলে দুইজনকে কাছাকাছি রাখতে হবে।তাই, রাণীকে মিশনে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।আমার সিস্টাকে সেখানে দেখে রাখার রেসপনসিবিলিটিও আমি নিলাম। গড,হেল্প আস।” হ্যারি মনে মনে প্রার্থনা করলো।

তূর্যয় নিজের কোমরের পেছনে গুলি নিয়ে নিলো। একটু আগে হ্যারির দিয়ে যাওয়া যুক্তি কোনো মতেই তূর্যয়ের মাথায় ঢুকছে না।তারপরও তূর্যয় হ্যারির সব কাজ,যুক্তি সবটাই মেনে নিলো। তাছাড়া,তূর্যয় সব সময় নিজের স্বার্থ হাসিল করে অন্যকে সাহায্য করে।তাই হয়তো, হ্যারি এই ভেবে রাণীর জন্যেও একই কনট্র্যাক্ট রেডি করেছে;এমনটাই ভাবছে তূর্যয়।তাই তো রাণীকে কাজে রাখার ব্যাপারটাতে হ্যারিকে কিছু বললো না সে।তূর্যয় মনে মনে ভাবছে,”ঐ মেয়েটা কোনো একটা সাহায্য চেয়েছিল।কিছুদিন যাক,এরপর আমি নিজেই মেয়েটা থেকে সব পরিষ্কারভাবে জিজ্ঞেস করে নিবো।সাথে মেয়েটাকে কেনো চেনা মনে হয়,এই ব্যাপারটাও আমি উদঘাটন করতে পারবো এতদিনে।মেয়েটাকে হেল্প করা হয়ে গেলে, এই চাকরিটা তাকে ছেড়ে দিতে বলবো।বুদ্ধিহীন একটা মেয়ে,কখন কি দুর্ঘটনা ঘটে যায় আল্লাহ্ জানে।যাক,এইসব ভেবে লাভ নেই।মিশনে ফোকাস কর তূর্যয়।পঞ্চাশ লাখ টাকার মিশন এটা।খুব ভালোভাবে শেষ করতে হবে।”
তূর্যয় নিজের সবকিছু চেক করে নিলো।পায়ের বুটে রাখা ধারালো ছুরিটাও ঠিক ভাবে নিয়ে নিলো সে।এরপর তূর্যয় বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।

হ্যারি আর রাণী গাড়িতে আগেই উঠে পড়লো।আজকের মিশনে শুধু যাবে রাণী,তূর্যয় আর হ্যারি।তূর্যয়ের ধারণা,
আজকের মিশন শেষ করতে হ্যারি আর তূর্যয় একাই শেষ করতে পারবে।তাই তারা আজ বাড়তি লোক নেয়নি।রাণী হ্যারির সাথে গাড়িতে বসে হেসে হেসে কথা বলছিল।তখনই তার চোখ আটকে গেলো তূর্যয়ের দিকে।রাণীর চোখ যেনো তার উপরই স্থির হয়ে গেলো।বাম সাইডের পকেটে হাত রেখে তূর্যয় অন্যদের সাথে কথা বলছে গাড়ির পাশে।অন্য হাতে তূর্যয় সিগারেট ফুঁকে যাচ্ছে।ভ্রু উঠিয়ে তার কথা বলার দিকেই রাণী অপলক তাকিয়ে আছে।রাণীর বুকটাও অল্প অল্প ধুকধুক করছে তূর্যয়কে দেখে।তূর্যয় গাড়ির দিকে উঠতে গেলেই,রাণী অন্য পাশের জানালার দিকে ফিরে গেলো।রাণী আর হ্যারির দিকে একটু তাকিয়ে তূর্যয় গাড়িতে উঠে গেলো। তূর্যয় সিগারেট হাত দিয়ে নিভিয়ে দিলো গাড়িতে উঠে।রাণী চুপ হয়ে আছে তূর্যয় গাড়িতে উঠার পর থেকেই।হঠাৎ সেই তূর্যয়ের টেবিলে রাখা সেই সুন্দর মেয়ের কথা তার মাথায় আসতেই রাণী হ্যারিকে ধীরে করে বললো,”এই জল্লাদ মানুষটার টেবিলের উপর একটা সুন্দর মেয়ের ছবি রাখা আছে।উনি কে?উনি কি পারেন না,আপনার হিংস্র ভাইয়ের বুকে একটু ভালোবাসার যোগান দিতে?” রাণীর এমন কথার উত্তর হ্যারি দেওয়ার আগেই তূর্যয় বলে উঠলো,”এই কথা বলার জন্যে, উনি এই দুনিয়ায় নেই।” রাণী অবাক হলো
তূর্যয়ের কথায়।রাণী মনে মনে ভাবলো,” অনেক ধীরে প্রশ্ন করেছিলাম, ভিনদেশী ভাইকে।তাও এই লোক সব শুনে গেলো?” পরক্ষণে হ্যারি রাণীকে বলে উঠলো,
“ছবির মহিলাটি তূর্যয় ব্রোয়ের মা।” কথাটা রাণীর কানে যেতেই রাণীর মন ধুক করে উঠলো।রাণীর চোখজোড়া বড় হয়ে গেলো হ্যারির কথায়।রাণী তার বুকে হাত রেখে ভাবছে,”তূর্যয়ের মা বেঁচে নেই?তাহলে সাবিনা উনার সৎ মা?আর আমি কিনা কতো কি বলেছি তূর্যয়কে!তূর্যয়ের মায়ের ছবি দেখে বোঝায় যাচ্ছিলো উনি তখন যুবতী ছিলেন।তাহলে কি তূর্যয় অনেক ছোট বয়সে নিজের মাকে হারিয়েছে?” রাণীর মনটা একদম নরম হয়ে এলো এই কথাগুলো ভাবতে গিয়ে।

চলবে….
কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here