#আলো-আঁধার🖤পর্ব ৭
#লেখিকা: সালসাবিল সারা
৭.
রোদে ঝিলমিল করছে সম্পূর্ণ শহর। এই রোদের তেজ অন্যদিনের রোদের তেজ থেকে আরো বেশি।শান্তি মহলের উঠোনে দাড়িয়ে আছে রাণী আর রিয়া।তাদের চার হাতে আছে মাটির ব্যাগ আর সাথে কিছু রঙের পট।নাজিম এই মাত্র মাটির জিনিস বানানোর জন্যে জরুরি কাঠের যন্ত্রটা রেখে গেলো এই উঠোনে।আজ সাবিনা বেগমের কড়া ফোন পেয়ে রাণীকে এইখানে পাঠাতে বাধ্য হলো সালেহা।যদিও সাবিনা কাল তার বাড়ি ফিরেছে,এরপর থেকেই সে রাণীকে এইখানে এসে জিনিস বানিয়ে দেওয়ার জন্যে উঠে পড়ে বারবার ফোন করছিল।সালেহা নানান বাহানা দিয়ে কাল ঘটনা আর আগাতে দেয়নি।তবে আজ সাবিনা ফোন করে সালেহাকে এতিম খানা দখলের হুমকি দিলে,সালেহা রাণীকে এইখানে আসার অনুমতি দিলো।সালেহার বিশ্বাস রাণী ঠিক সব সামলিয়ে নিবে।তবে,মনের ভেতর এই সাবিনা বেগমকে নিয়ে নানান বাজে ভাবনা ঘুরছে সালেহার মাথায়।অন্যদিকে,সাবিনার মুখে শয়তানি হাসি।সে দ্বিতীয় তলায় বসে জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখছে রাণী আর রিয়ার অবস্থা।এই গরমে খালি রোদের নিচে দাঁড়িয়ে থাকাটা বড্ড কষ্টদায়ক। যা রাণী আর রিয়ার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠছে।পাশ থেকে মনি তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”এইভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে তারা?ওরাও মানুষ, মা।ওদেরও কষ্ট হয়।তোমার এইসব পাপ,আল্লাহ্ কখনোই ক্ষমা করবে না।” মনির কথায় সাবিনা চিল্লিয়ে উঠলো,”রাখ তোর পাপ।আমার কিছুই হবে না।এইসব ভিখারী মানুষদের জন্যে আমার কোনো পাপ লেখা হবে না।তারা কষ্ট পাক,আমি মজা নিই।আমি সাবিনা কখনোই আমার শত্রুদের ক্ষমা করি না।” সাবিনার এমন কথায় মনি আহত চোখে তার মায়ের দিকে তাকালো।সে কন্নামাখা কণ্ঠে তার মাকে বললো,”আল্লাহ্ কোনো পাপী আর পাপকে কখনোই ছাড় দেন না।তুমি শুধু তোমার বিনাশের সময়ের অপেক্ষা করো।আল্লাহ্ তোমাকে শাস্তি দিবেই।” মনি কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তার মনে উঠোনে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের জন্য বড্ড মায়া জমেছে।রাণী আর কলির অবস্থা বেগতিক হচ্ছে।দারোয়ান সাবিনার নির্দেশে তাদেরকে এই উঠোনের মাঝখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। তাদের এক চুল পরিমাণ নড়ার অনুমতি দিচ্ছে না দারোয়ান।অগত্য রাণী আর কলি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু এইভাবে রোদে দাড়িয়ে থাকার কোনো মানে রাণী খুঁজে পাচ্ছে না।তাই সে চেঁচিয়ে দারোয়ানকে বললো,”আমরা কি মানুষ না?এইভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো এই রোদে?গায়ের চামড়া একেবারে রোদে ছারখার হলে এরপর কি আপনাদের মালকিন আমাদের কাজ শুরু করতে বলবে?” দারোয়ান যেনো বেশ রেগে গেলো রাণীর কথায়।উনি একটা লাঠি হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো রাণীদের দিকে।রাণী আর রিয়া একটু পিছিয়ে গেলো।তবে রাণীর সাহসের কমতি নেই।সে আবারও জোর গলায় বললো,”রাণী,এইসব লাঠিকে ভয় পাই না।গায়ে একটা আঘাত করলে একেবারে পুলিশে কেস করে দিবো।এরপর এই লাঠির মজা পুলিশ বোঝাবে।” দারোয়ান তার হাতের লাঠি পেছনের দিকে নিয়ে নিলো।তবে সে বলে উঠলো,”এতিমের তেজ কতো!মা,বাপ নেই সে নাকি আবার কেস করবে। দাঁড়িয়ে থাক এইখানে,ম্যাডাম আসা পর্যন্ত।” রাণীর রাগ যেনো আরো বেড়ে গেলো। সে দারোয়ানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,””এতিম বলে কি মানুষের মতো লাগে না?আপনাদের ম্যাডামকে ডাকুন।নাহলে আমরা গেলাম। কারো কেনা গোলাম না আমরা।এইভাবে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের শরীর খারাপ করানোর কোনো মানে আমি দেখছি না।” রাণীর কথায় দারোয়ান খেঁকিয়ে উঠলো।। রাণীও থেমে নেই।দুইজনই ঝগড়া করে যাচ্ছে।সাবিনা সব কিছুই দেখছিল উপর থেকে।এখন যেহুতু রাণী যাওয়ার ফন্দি কেটেছে তাই সাবিনা তড়িঘড়ি করে নিচে নামতে লাগলো।সাবিনার মেজাজ ভীষন খারাপ রাণীর উপর।কারণ, এই মেয়েটাই সাবিনাকে তার বদলা নেওয়ার জন্যে আরো উস্কিয়ে দিচ্ছে।সাবিনা নিজেও জানে না,রাণীর এমন আচরনের জন্যে সাবিনা কি শাস্তি দিবে তাকে। সাবিনা মনে মনে রাণীকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,”এই এতিমের বাচ্চাটা বেশি বকবক করে।এই মেয়ের বকবক এর জন্যেই তো এই মেয়েকে আমি শাস্তি দিতে চাই।হবে না এক পয়সার মেয়ে,ভাব নেয়; সে যেনো অনেক বড় কিছু।আজ তোর অবস্থার দূরবস্থা করবে এই সাবিনা।” সাবিনা ধপ ধপ পা ফেলে বাহিরে চলে এলো। সাবিনার দেখাদেখি মনিও বাহিরে আসলো।সাবিনার কলকল শব্দ শুনে রাণী দারোয়ান থেকে চোখ ফিরিয়ে সাবিনার দিকে তাকালো।সাবিনার চেহারাটা তার অস্পষ্ট লাগছে।সেই যে দূর থেকেই এই মহিলা রাণীকে চিল্লিয়ে যাচ্ছে নানান গালি গালাজ করে।সাবিনার মাথার উপর ছাতা ধরে আছে এক মহিলা।একটু কাছে আসতেই রাণী সাবিনার মুখ স্পষ্ট দেখতে পেলো।পাশে থাকা এক সুন্দর মেয়ের চেহারাও দেখতে পাচ্ছে রাণী।মেয়েটি রোদ থেকে বাঁচার জন্য এ তার মাথার উপরের ওড়নাটি দুইহাতে আলগা করে রেখেছে।হঠাৎ সাবিনা বেশ জোরে ধমকে উঠলো রাণীকে,”আমার বাড়ির কাজের লোকেরাও কখনো গলা উচুঁ করে কথা বলেনি আমার সাথে।আর তুই, এতিমের বাচ্চার চেঁচামেচিতে আমার কান ফেটে যাচ্ছে।তোর এত সাহস আসে কোথা থেকে?” এই রোদে দাঁড়িয়ে সাবিনার ঘৃণা যুক্ত কথা যেনো রাণীর সহ্যর সীমাকে অতিক্রম করে ফেলছে।রাণী নিজের হাতের জিনিস মাটিতে রেখে তার কোমরে দুই হাত রেখে সাবিনাকে বললো,” সমস্যা কি আপনার,সাবিনা মালকিন?আপনি কি বেশি করছেন না?প্রথমত আমরা আপনার এইখানে কাজ করতে এসেছি।কিন্তু কাজ কই শুরু করবো,কি বানিয়ে দিবো এর কিছুই তো আপনারা জানাচ্ছেন না।শুধু আমাদের এই কাঠ ফাটা রোদে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।আপনি কি শুধু এটাই চান নাকি কিছু জিনিসও আমরা বানাবো?না মানে,এইভাবে তো রোদে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো ভালো দিক আমি দেখছি না।আর কথায় কোথায় এতিমের বাচ্চা বলবেন না।এর আগেও আপনাকে বলেছি আমি,আমার বাবা মা এতিম ছিলো নাকি আমি জানিনা।আর না জেনে কিছু বলা আমার পছন্দ না।এখন বলুন কাজ কি শুরু করবো?” সাবিনা হাঁ হয়ে আছে রাণীর এমন কথা শুনে।মনিও সমান অবাক,রাণীর এমন আচরণে।সাবিনা তার মুখে আঁধার নামিয়ে ফেলেছে।রাণী বুঝতে পারছে এখন সাবিনা আর রাণীকে ছেড়ে কথা বলবে না।সাবিনা মুখ খোলার আগেই রাণী সাবিনার পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েকে বলে উঠলো,
“আপু,আপনি হয়তো এই বাড়ির কোনো সদস্য হবেন।আমাকে দয়া করে বলবেন আমি মাটির জিনিসে কি কি বানাবো আর কোথায় বানাবো?আসলে মালকিনের মনে হয়তো আজ আমাদের দিয়ে কাজ করানোর ইচ্ছে নেই।তবে আমরা যেহুতু এসেছি, কাজটা করেই যায়।” মনি হাসি দিল রাণীর এমন কথায়।মনি হেসে রাণীকে বললো,” এইযে ডান দিকে যাও।একটা খালি জায়গা দেখতে পাবে।সেখানেই বসে দুইটা ফুলদানি বানিয়ে নাও।ঠিক বলেছি আমি,মা?”সাবিনাকে মা ডাকতে শুনে রাণী বুঝে গেলো এই মহিলা তূর্যয়ের বোন।এই মেয়ের ব্যবহার রাণীর বেশ ভালো লাগলো।রাণী নিজের মাথা নাড়িয়ে হাতে আবারও জিনিসগুলো তুলে নিলো।রাণী আর রিয়া সামনে এগিয়ে যেতেই সাবিনা তেজি কণ্ঠে বললো,”যা করার এইখানেই করবি।তোদের মতো নোংরা মানুষের বিচরণে আমার ঘরের চারদিক নোংরা করতে চাই না।” সাবিনা মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে কথাগুলো বলে।মনি চিল্লিয়ে উঠলো তার মায়ের কথায়,” এই রোদে কিভাবে কাজ করবে?” সাবিনা কিছু না বলেই চলে গেলো বাড়ির ভেতরে।মনি দ্বিধা মাখা হাসি দিয়ে রাণী আর রিয়ার উদ্দেশ্যে বললো,”কাজ করো তাহলে তোমরা।আমি যায়।” রাণী মাথা নাড়ালো।অতঃপর রাণী এবং কলি মিলে নিজেদের কাজ শুরু করার জন্যে সেখানেই বসে পড়লো।দূর থেকে এতক্ষণ যাবত এইসব ঘটনা দেখে ছিল তূর্যয়।সাবিনার সাথে এই প্রথম কোনো মানুষকে এতো তর্ক করতে দেখেছে তূর্যয়।সাবিনার জন্যে তার মনে আগেও ঘৃণা ছিলো।আজকে তার মনে সাবিনার প্রতি আরো বেশি ঘৃণার জন্ম হলো।রিয়া আর রাণী ইতিমধ্যে গরমে হাসফাস করছে।অন্য মানুষের এমন কষ্ট দেখে তূর্যয়ের মনের কোনো পরিবর্তন কখনোই হয়নি।কিন্তু, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা রাণীর চেহারা উপেক্ষা করতে পারেনি তূর্যয়ের মন।কিছুদিন আগেও রাণীর রোদ্র মাখা চেহারা দেখে তূর্যয়ের রাণীকে অনেক পরিচিত মনে হয়েছিল।তাই আজও সে নিজের মনকে উপেক্ষা করে সামনে যেতে পারেনি। ।তূর্যয় মনে মনে বলে উঠলো,”মেয়েটা,এই মেয়েটার এমন মুখ দেখলেই মনে হয় এই মেয়েটা আমার খুব পরিচিত।কিন্তু,কোথাও একটা বাধা কাজ করে যার কারণে আমার মাথাটা কাজ করে না।আর আমার মনেও আসে না এই মেয়েটা কে!” অন্যদিকে রাণী মাটির সব গুছিয়ে নিয়ে মাটিতে বসতেই তার চোখ গেলো দূরে দাঁড়িয়ে তূর্যয়ের দিকে। রোদে রাণীর চোখ ভালো করে খুলতেই পারছে না।তাও সে কষ্ট করে মিটমিট চোখে তূর্যয়ের দিকে তাকালো।তূর্যয়ের ভেতরকার রহস্যের কথা ভাবতে ভাবতে কবে যে রাণী তূর্যয়ের মায়ায় ডুবে গেলো এটা সে নিজেও জানে না।তবে,রাণীর মন এখনো তূর্যয়কে সন্ত্রাসী উপাধি থেকে সরাতে পারলো না। রাণী দ্রুত নিজের নজর ফিরিয়ে নিলো তূর্যয়ের দিক থেকে।আর তূর্যয়ও বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্যে পা আগালো। কাল রাত থেকে তূর্যয়ের বাড়ি আসা হয়নি।কালো বাজারীর কিছু মিটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল সে।তারপর একজনকে মারার কাজ শেষ করে হ্যারির সাথে সে বারে গিয়েছিল।সেখানে অনেক মদ খেয়ে নিজের হুঁশে ছিলো না তূর্যয়।হ্যারি নিজেও নিজের আয়ত্বে ছিলো না।তাই দুই জনেই মদ খেয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল টেবিলের উপর।চব্বিশ ঘণ্টা সেই বার খোলা থাকায় হ্যারি আর তূর্যয়ের একটুও কষ্ট হয়নি রাতটা বারে কাটাতে।সকালে উঠে মাথা ব্যাথার কারণে ড্রাইভিং করতে পারছিল না তূর্যয়।কিন্তু বেশি সময় গড়িয়ে যাওয়ার কারণে সেই মাথা ব্যাথা নিয়ে তূর্যয় প্রথমে হ্যারিকে তার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিয়ে পরে নিজের বাসায় চলে এলো নিজে গাড়ি চালিয়ে।একটু আগেই রাণীকে দেখে তূর্যয়ের মাথা ব্যাথাটাও যেনো উবে গেলো।এই মেয়ের প্রতি তূর্যয়ের কেমন একটা অনুভুতি হয়,কিন্তু এই অনুভূতি কেনো যেনো তূর্যয়ের হিংস্র দিকটার জন্যে প্রকাশিত হতে পারছে না।তূর্যয় ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে নানান কথা ভাবছে। পিঠে পানি পড়তেই মুখ কুঁচকে এলো তূর্যয়ের। সে দ্রুত আয়নার সামনে এসে নিজের পিঠ দেখতে লাগলো।অনেক কষ্ট করেই তূর্যয় নিজের পিঠে কিছু দেখতে পাচ্ছে।হুট করেই তূর্যয়ের মনে এলো কাল রাতে মারপিটের সময় লাঠির কিছু আঘাত লেগেছিল তার পিঠে।সেই কারণে পিঠে রক্ত জমাট বেঁধেছে। যার কারণে এখন তার পিঠে পানি লাগাতে অনেক ব্যাথা লাগছে তূর্যয়ের।কিন্তু, তূর্যয় নিজের মুখ খিচে ঝর্নার পানির নিচে আবারও দাঁড়িয়ে পড়লো।নিজের ঠোঁট চেপে হাত মুঠ করে তূর্যয় সব ব্যথা সহ্য করে নিচ্ছে।গোসল সেরে তূর্যয় শুয়ে পড়লো উবুত হয়ে। মনি তার দরজায় অনবরত বারি দিয়ে যাচ্ছে।নিশ্চয় মনি এখন তাকে খাবার খেতে ডাকছে,এমনটাই ভাবছে তূর্যয়।কিন্তু, তূর্যয়ের এখন কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।সে শোয়া থেকে উঠে নিজের রুমে থাকা ছোট্ট ফ্রিজ থেকে দুইটা আপেল আর ফ্রুট জুস বের করে খেয়ে নিলো।আবারও তূর্যয় শুয়ে পড়লো বিছানায়।আজ তার সব মিটিং বিকালের দিকে ফিক্স করেছে সে।তাই আপাতত এখন তূর্যয় ঘুম দিবে একটা।
‘
খুব দ্রুত হাত চালিয়ে দুইটা ফুলদানি বানিয়ে নিলো রাণী আর রিয়া।মাটির জিনিস পোড়ানোর জন্যে দারোয়ান একটা উনুনের ব্যাবস্থা করে দিয়েছিল তাদের,সাবিনার নির্দেশে।এই কাঠ ফাটা রোদে কাজ করে রাণী আর রিয়ার অবস্থা বেশ খারাপ।সবকিছুই এখন শেষের দিকে শুধু রঙ করা বাকি। ফুলদানিও বেশ শক্ত পোক্ত হয়েছে।রাণী কাজ করছে আর রিয়া রাণীর সামনে দাঁড়িয়ে তাকে রোদ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।রাণীর সম্পূর্ণ মুখ লাল রং ধারণ করেছে রোদের কারণে।চোখজোড়া অনেক ব্যাথা করছে রাণীর।কোনমতে দুইটা ফুলদানি সুন্দর করে রং করলো রাণী।এরপর সে সোজা হয়ে দাড়িয়ে ফুলদানিগুলোকে রোদের নিচে রেখে দিল রং শুকানোর জন্যে।পাশের একটা রেস্ট রুমে রিয়াকে মুখ ধুতে পাঠিয়ে রাণী ছায়ায় দাঁড়ালো।রাণীর মুখ হাত সব যেনো জ্বলছে।এই সাবিনাকে নানান গালি দিয়ে চলছে রাণী।ওড়না দিয়ে বাতাস করা অবস্থায় রাণী আপনমনে বলতে লাগলো,”এই মুটি সাবিনা, ঠাডা পড়বে তোর উপর।আমার মুখ,হাত অনেক জ্বলছে এই রোদের কারণে।এই রোদে একদিন আমি তোকে একটা শুটকি বানাবো,সাবিনা ভুটকি।বাহ্,সাবিনা ভুটকি শুটকি কি সুন্দর নাম!” কথাগুলো ভাবতেই বিরক্তির মধ্যে হেসে উঠলো রাণী।রিয়া আসতেই রাণী হেসে উঠলো আবারও।রিয়াকে দেখে রাণী নিজের হাসি থামিয়ে রিয়াকে বললো,”জানিস,আমি তোকে একদিন মজার একটা শুটকি খাওয়াবো।” রিয়া অবাক হয়ে বললো,”শুটকি! শুটকি তো আমি খাই না।” রাণী তার দাঁত দেখিয়ে বলে উঠলো,” এটা যেই সেই শুটকি না।এটা হলো,সাবিনা মুটকির শুটকি।” রাণীর কথায় দুইজনেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।”সাবিনা ভুটকির শুটকি!বাহ্,কি সুন্দর শুটকি।চুপ কর।কেউ শুনলে আমাদেরই বানিয়ে দিবে শুটকি”,কথাগুলো বলল রিয়া।রাণী মুখ বাঁকিয়ে রিয়াকে বললো,”ওহ হ্যাঁ।ঠিক আছে আমি চুপ।তুই সব গুছিয়ে নে।আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি।” রাণী নিজের ওড়না ঠিক করে সেদিকে চললো মুখ ধুতে।
গাড়ি থেকে নেমে আহমেদ তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিল রাণীর দিকে।সে এতদিন যাবত রাণীর খোঁজ করছিল।রাণী মমতা এতিম খানায় থাকে দেখে বেশ অবাক হলো আহমেদ।কারণ, সেই এতিম খানার অনেক মেয়ের সাথে রাত কাটা হয়ে গিয়েছে তার।এর মধ্যে রাণী কিভাবে মিস গেলো,সেটাই ভাবতে পারছে না আহমেদ।তাদের বাড়িতে রাণীকে দেখে আহমেদের লালসা যেন হুট করেই বেড়ে গেলো।রিয়া জিনিসপত্র গুছিয়ে আড়ালে চলে গেলো ছায়ায় বসতে।সেই সুযোগে আহমেদও রাণীর দিকে চলে গেলো।রাণী তার ওড়না খুলে রেখে গলায় আর ঘাড়ে ভালো করে পানি দিচ্ছিলো।হঠাৎই দেখলো রাণীর ঘাড় কেউ চেপে ধরেছে।মুহূর্তেই রাণী জোরে চিল্লিয়ে উঠলো।সাথে সাথেই আহমেদ চেপে ধরলো রাণীর মুখ।রাণীর চিৎকার শুনে রিয়া দৌড় দিয়ে রেস্ট হাউজের দিকে যাচ্ছিল,কিন্তু দারোয়ান সেদিকে যেতে দিচ্ছে না তাকে।রিয়া জোরে চিল্লিয়ে যাচ্ছে রাণীর নাম ধরে।মনি আর সাবিনা একটু আগেই রাণীদের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বাহিরে চলে গিয়েছে।সাবিনার মুখে তখন ছিল শয়তানি হাসি।কারণ, রোদে রাণীর অবস্থা কতটা খারাপ হয়েছিল সেটা রাণীর মুখে স্পষ্ট ছিল। সাবিনার সব বদলা যেন পূরণ হলো আজ,রাণীর কষ্টে। রোদের তেজে রাণীর অবস্থা আগের থেকে খারাপ ছিল আর এখন আহমেদ তার সাথে জোর জবস্তি করাতে রাণী আহমেদের সাথে একটুও ট্যাকেল দিতে পারছে না।আহমেদের নখের আঁচড়ে রাণীর গলায় রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে।তবে রাণী তার সবটা দিয়ে আহমেদকে নিজের কাছে,নিজের ইজ্জতের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না।
হ্যারির ফোনে সময়ের একটু আগে বেরিয়ে পড়লো তূর্যয়।গাড়িতে বসার আগেই সে রিয়াকে দেখতে পেলো রিয়া একাই “রাণীর” নাম ধরে চিল্লিয়ে যাচ্ছে।পাশে আহমেদের গাড়ি দেখতে পেয়ে তূর্যয়ের মনে একটা ভয় ঢুকে গেলো।আর রাণীর নামটা শুনে তূর্যয়ের মনে আবারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।এই নামটাও তার অনেক পরিচিত।তবে তূর্যয়ের স্মৃতিতে কিছুতেই পরিষ্কার হয়ে ভেসে উঠছে না।তূর্যয় দেরী না করে রিয়ার হাতের ইশারায় সেদিকে এগিয়ে গেলো।রেস্ট রুমের দরজা বন্ধ।সাথে রুমের ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ ভেসে আসছে।আজ অনেক বছর পর তূর্যয়ের মনে ভয় দেখা দিল।তূর্যয়ের মনে অন্য এক অচেনা মেয়ের জন্যে এমন ভয় দেখে তূর্যয় নিজেই অবাক হলো। সে তার বুকের উপর হাত রেখে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে এক লাথি দিলো দরজায়।হয়তো দরজার লক হালকা করে লাগানো ছিল,তাই ধপ করে দরজাটা খুলে গেলো।ভেতরের দৃশ্য দেখে তূর্যয়ের মেজাজ যেনো আকাশ সমান হয়ে গেলো।রাণীকে আহমেদ জোর করে রাণীকে বিছানায় শোয়াতে চাচ্ছে।কিন্তু রাণী তা হতে দিচ্ছে না।দরজা খোলার শব্দ শুনে আহমেদ নিজের হাত হালকা করে নিলো রাণীর উপর থেকে।রাণী সেই সুযোগে উঠে পড়লো বিছানা থেকে।দৌড় দিয়ে সে জড়িয়ে ধরলো তূর্যয়কে।রাণীর কান্নার শব্দে তূর্যয়ের বুকটা যেনো এখনই ব্লাস্ট হবে।আহমেদের মেয়েদের সাথে এমন কাহিনী মোটেও অজানা নয় তূর্যয়ের।কিন্তু রাণীর সাথে এমন ব্যবহার মোটেও তূর্যয়ের সহ্য হচ্ছে না।আহমেদের প্রতি তূর্যয়ের রাগ, ঘৃণা সব কিছুই জমে যাচ্ছে।তার উপর রাণীর কান্নাটা বুকের মধ্যে গিয়ে লাগছে তূর্যয়ের।রাণী তূর্যয়ের বুকে মুখ গুঁজে কান্না করে যাচ্ছে,” উনি খারাপ লোক।আপনি উনাকে মারেন।উনাকে আপনি মেরেই ফেলুন।” তূর্যয় নিজের হাতটা চেপে ধরলো রাণীর মাথায়।রাণীর হাত তূর্যয়ের কোমর জড়িয়ে আছে।তূর্যয়ের চোখ ধীরে ধীরে লাল হয়ে যাচ্ছে।তূর্যয়ের মেজাজ আহমেদকে ভস্ম করে দিচ্ছে।আহমেদ নিজের কাপড় ঠিক করে তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,”কিছু করিনি এখনো।খুব আফসোস থেকে যাবে।সুযোগ পেলে তাকে নষ্ট করতে আমি দেরী করবো না।” আহমেদ চলে যেতে নিলেই তূর্যয় আহমেদের সামনে হাত দিয়ে দিলো। তূর্যয় রাগী কণ্ঠে আহমেদকে বলে উঠলো,” হিসাব এখনো বাকি আছে তোর সাথে।তূর্যয় তার হিসাব না মিলিয়ে কাউকে ছেড়ে দেয় না।” তূর্যয়ের মুঠ করা হাত আঘাত করলো আহমেদের নাকে।আর আহমেদ ছিটকে পড়লো একটু দূরে।তূর্যয় রাণীর জন্যে কেনো আহমেদের গায়ে হাত তুললো এটা ভাবতেই তূর্যয়ের বেশ স্বস্তি লাগছে।তূর্যয়ের কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে এখন আহমেদকে পেটালে রাণীর সকল কষ্ট দুর হবে।তার এমন চিন্তায় তূর্যয় নিজেই একটু ভাবনায় পড়লো।পরক্ষণে সে খুব জোরে আহমেদকে একটা লাথি দিলো।
চলবে….
কপি করা নিষেধ।শনিবার থেকে প্রত্যেকদিন পাবেন গল্প।