#আলো-আঁধার🖤পর্ব১৪

0
498

#আলো-আঁধার🖤পর্ব১৪
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১৪.
দুইদিন ধরে রাণী অফিস যাচ্ছে না।তূর্যয়ের কোনো খবর পেলো না সে এই দুইদিনে।তূর্যয়ের শরীরের কি অবস্থা এটাও রাণীর জানা নেই।হঠাৎ কি হলো তূর্যয়ের সেদিন, এই নিয়েই রাণীর যতো চিন্তা।যদিও সে তূর্যয়কে অনেক ঘৃণা করে।কিন্তু হাজার হলেও,রাণী তো একজন সাধারণ মানুষ।মনুষত্ববোধ আছে তার মাঝে।তাই তো আজ দুইদিন ধরে রাণী তূর্যয়ের চিন্তায় আছে।অফিসে জয়েন করার দ্বিতীয় দিনে হ্যারি তাকে একটা মোবাইল দিয়েছিল।তূর্যয়ের অফিসের সব স্টাফদের মোবাইল ফোন হয় তূর্যয়ের দেওয়া।সেই মোবাইলের সিম পর্যন্ত অফিস থেকে দেওয়া হয়।যে সিমে শুধু তূর্যয়, হ্যারি,
অফিসের ওয়াচম্যান এবং ম্যানেজারের নাম্বার থেকে ফোন আসতে পারবে। সেই সিম থেকে অফিসের সকল স্টাফ শুধু তাদেরকেই ফোন দিতে পারবে।রাণী অফিস থেকে দেওয়া সেই মোবাইল হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে আছে।একটু পর পর সেই মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে রাণী।সে ভাবছে,হ্যারিকে ফোন দিয়ে তূর্যয়ের কথা জিজ্ঞেস করবে কিনা! বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।যাকে বলে তুমুল বৃষ্টি।রাণী সেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে নিজের মনের সাথে নানান কথা বলে যাচ্ছে।সে ভেবে পাচ্ছে না আদৌ তূর্যয়ের জন্যে হ্যারিকে ফোন করা তার ঠিক হবে কিনা! রাণী মনে মনে ভাবছে,”লোকটা,সেদিন এমন করলো কেনো?এর উত্তর আজ দুইদিনেও পেলাম না।ভিনদেশী ভাই থেকে শুনলাম লোকটা হাসপাতালে ভর্তি আছে।কিন্তু,কি হয়েছে উনার!কি কারণে সেখানে ভর্তি আছে কিছুই জানিনা আমি।আর না জানি তূর্যয়ের ভেতরকার রহস্য।আমার মনে হয়,তূর্যয়ের এমন হিংস্র হওয়ার পেছনে একটা রহস্য আছে।তাছাড়া উনার মা অনেক কম বয়সেই মারা গিয়েছে।তার মানে,তূর্যয় ছোট কাল থেকেই নিজে নিজেই মানুষ হয়েছে।সাবিনা ভুটকির সাথে তূর্যয়ের কথা শুনে মনে হয় তারা দুইজন দুইজনকে সহ্য করতে পারে না।কিন্তু,হাসান সাহেব?উনি তো তূর্যয়ের আসল বাবা। উনি কি পারেননি তূর্যয়কে একটা সুন্দর জীবন দিতে?নিজের ছেলেকে এইভাবে সন্ত্রাসী হতে কিভাবে উনি সমর্থন করলেন?আমার এখনো মনে আছে,তূর্যয়ের সাথে তার বাবার সম্পর্কও ঠিক নেই।তূর্যয় তার বাবাকে নাম ধরে ডেকেছিল সেদিন।কিজানি বাবা!তাদের মধ্যে কি সমস্যা আছে,
আল্লাহ্ ভালো জানেন।নাহলে,কি সুন্দর একটা পরিবার হতো।তূর্যয়ের জীবনটাও আজ স্বাভাবিক হতো।” বজ্রপাতের তীব্র শব্দে রাণী হালকা কেঁপে উঠলো আর রাণী বেরিয়ে এলো নিজের কল্পনা থেকে।রাণী একবার বাহিরে তাকিয়ে আবারও তাকালো মোবাইলের দিকে।রুমে এসে মোবাইলটা রেখে দিলো সে।হ্যারিকে ফোন করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার।একে তো হ্যারি ফোন করা নিয়ে কি না কি ভাববে,আর দ্বিতীয়ত তূর্যয়ের মতো শক্তিশালী লোক এতো সময় ধরে অসুস্থ থাকবে, এটাও রাণীর মানতে কষ্ট হচ্ছে।রাণী ভাবছে,”হয়তো বা সেই দুইজন কোনো গোপন মিশনে গিয়েছেন,তাই তাদের আর খবর নেই।গোপন মিশন থাকায়, হতে পারে ভিনদেশী ভাই আমাকে মিথ্যে বলেছেন ঐ তূর্যয় দানবের কথায়।নাহলে তূর্যয়ের মতো দানবের আবার শরীর খারাপ হবে নাকি?আমিও না অন্যের চিন্তায় মরিয়া হয়ে যাচ্ছি।নিজের চিন্তা কর তুই রাণী।কিভাবে নিজের সবকিছু ঠিক করবি!সারাজীবন তো এইভাবে এতিম খানায় বসে থাকলে আর চলবে না।নিজের জীবনকে আমার নিজেই গড়তে হবে।” রাণী আবারও বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে।বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দিচ্ছে রাণীর সম্পূর্ণ শরীর।রাণীর ইচ্ছে করছে এক কাপ গরম চা আর কিছু ভাজা পোড়া খেতে এখন।কিন্তু,রাণী থাকে তো এতিম খানায়।এইখানে সে নিজের ইচ্ছে মতো কিছুই কি খেতে পারবে?পারবে না।তাছাড়া এতিম খানার সবাই এখনো রাণীর দিকে নিচু চোখে তাকায়।তাই খাবারের সময়, আর মাটির কাজ করার সময় ছাড়া রাণী তার রুম থেকে বের হয় না।রাণী চুপ করে বাহিরে দেখছে। আশে পাশের সবকিছুই বৃষ্টিতে চুপচুপ হয়ে আছে।হঠাৎই দ্রুতগামী একটা জিপ দেখে রাণীর চোখ থমকে গেলো।এক মিনিটের জন্যে মনে হলো,সে তূর্যয়কে দেখেছে।কিন্তু নাহ!রাণীর মনের সাথে সত্যিটা মিলল না।জিপে বসা ছেলেগুলো ছিলো অন্য ছেলে।অজান্তেই রাণীর বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।রাণী হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরছে।চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে বৃষ্টির ঝপঝপ শব্দ আর এই ঠান্ডা বৃষ্টির পানি।রাণীর বন্ধ চোখে ভেসে এলো এমনই একদিন বৃষ্টির কাহিনী।যেদিন রাণীর সাথে তূর্যয়ও বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েছিল।যদিও সেদিনের বৃষ্টিতে ভেজার কোনো স্মৃতি রাণীর মনে নেই।কিন্তু রাণী এখনো পাঞ্জাবি পড়া তূর্যয়ের চেহারাটা ভুলতে পারেনি।চোখ বন্ধ অবস্থায় তূর্যয়কে বড্ড শান্ত লাগছিল সেদিন।সাথে তূর্যয়ের মুখে যেনো ভর করেছিল এক মায়া!যে মায়াময় চেহারা আজও রাণী ভুলতে পারেনি।রাণী একটু মুচকি হাসছিল সেদিনের কথা ভাবতেই।আর আপনমনে সে বললো,”তূর্যয়!” নিজের মুখের কথায় নিজেই চমকে উঠলো রাণী।চোখ খুলতেই রাণী দেখলো, সে আপাতত বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।রাণী জলদি রুমে চলে এলো।গায়ে থাকা ভেজা কাপড় খুলে রাণী শুকনো কাপড় পড়ে নিলো। বিছানায় শুয়ে আবারও রাণী মোবাইল নিয়ে বারবার হ্যারির নাম্বার দেখছে।এইভাবে নাম্বার দেখতে দেখতেই হঠাৎ করে রাণীর আঙ্গুলের চাপে হ্যারির নাম্বারে ফোন চলে গেলো রাণীর মোবাইল থেকে।রাণী কিছু বুঝে উঠার আগেই হ্যারির মোবাইলে গড়গড় করে রিং বাজছে।রাণী যেই কাটতে যাবে ফোন,এর আগেই হ্যারি কল রিসিভ করে ফেললো।যার কারণে রাণী আর ফোন কাটতে পারলো না।রাণী কানে ফোন ধরতেই শুনতে পেলো হ্যারির কথা,”হ্যালো,সিস। হাউ আর ইউ?” হ্যারির কথায় রাণী নরম কণ্ঠে বললো,”আছি ভালো। আপনার কি খবর?” হ্যারি দ্রুত কণ্ঠে বলে উঠলো,”আমি ফাইন আছি। বাট, ব্রো সিক।কালকে ব্রোকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিবে।” রাণী অবাক হলো হ্যারির কথা শুনে। এই মুহূর্তে রাণীর নিজের প্রতি খুবই অনুশোচনা বোধ হচ্ছে। বরাবরের মতো রাণী আজও তূর্যয়কে ভুল বুঝলো।রাণী কিছুক্ষণ চুপ থাকলে হ্যারি বলে উঠলো,
“হ্যালো সিস! ক্যান ইউ হেয়ার মি?” রাণী প্রথমে আনমনে বললো,”উম!” পরক্ষণে রাণী আবারও হ্যারিকে বললো,
“আসলে আমি ফোন করেছিলাম, অফিসে কবে থেকে আসবো সেই ব্যাপার নিয়ে। কিন্তু এখন তূর্যয়ের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো।উনার আসলে কি হয়েছিল?” হ্যারি মুচকি হাসলো রাণীর কথায়।হ্যারি বুঝতে পারছে,
রাণী অফিসে নয় বরং তূর্যয়ের খোঁজেই ফোন দিয়েছে।হ্যারি রাণীকে জবাব দিলো,”কালকে হাসপাতাল আসো। আমি হাসপাতাল আসার সময়, তোমাকে এতিমখানা থেকে পিক করে নিবো।এরপর ব্রোকে নিয়ে তার বাড়িতে যাবো।ব্রো যেদিন সুস্থ হয়ে অফিসে যাবে তুমিও সেদিন অফিসে যাবে।আর এর আগ পর্যন্ত তাকে বাসায় টেক কেয়ার করতে হবে তোমার।তুমি আমাকে ফোন না দিলে আমি নিজেই তোমাকে ফোন দিতাম আজ।আমার ব্রোকে কিন্তু খুব ভালো টেক কেয়ার করতে হবে। গট ইট?” রাণী ছোট্ট করে “হুঁ” বললো হ্যারির কথায়।রাণীর “হুঁ” শুনে হ্যারি আবারও রাণীকে বললো,”ভাইয়ের প্রেসার লো ছিলো অনেক।যার কারণে সেদিন ব্রোয়ের সেন্স চলে গিয়েছিল। হয়তো, ব্রোয়ের অতীত নিয়ে কিছু মনে এসেছিল যার কারণে ভাই সেন্সলেস হয়েছিল।” রাণী এইবার নিজের মুখ খুললো। সে নরম কণ্ঠে বললো,
“তূর্যয়ের অতীত কি খুবই ভয়ংকর?” যার কারণে এই অতীতের কথা মনে আসতেই উনি এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?” হ্যারির কন্ঠ গম্ভীর হয়ে গেল রাণীর কথা শুনে। হ্যারি দৃঢ় গলায় রাণীকে বলল,”আমার নিজেরেই সবটা জানা নয় ব্রোয়ের অতীত সম্পর্কে। বাট ডোন্ট ওয়ারী। আমি আর তুমি মিলে সব ইনভেস্টিগেশন করে বের করবো। এখন রাখছি। টুমোরো সকাল নয়টায় পিক করবো,সিস। স্টে ব্লেসড।” হ্যারির কথায় রাণী বিদায় জানিয়ে হ্যারির ফোন রেখে দিলো।গায়ের উপর কাঁথা টেনে রাণী বিছানায় শুয়ে পড়লো।তূর্যয়ের ব্যাপারটায় বড্ড ভাবাচ্ছে রাণীকে।রাণী আনমনে বলতে লাগলো,
“কি এমন মনে এসেছিল সেদিন উনার অতীত সম্পর্কে, যার কারণে উনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন?উফ,
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।আচ্ছা,তূর্যয় যতোই হিংস্র হোক না কেনো;উনি কি সত্যি অনেক একা?উনার সাথে কথা বলার মানুষ কি খুবই কম? উনি যে এইভাবে সবার সাথে গম্ভীর আর রাগীভাবে কথা বলেন,উনার মনের কথাগুলো শোনার মতো কি কেউ নেই?উনি কি ছোট কালের কোনো ঘটনার জন্যেই এতো হিংস্র দানবে পরিণত হয়েছেন?কি হয়েছিল উনার জীবনে?তোকে এইসব বের করতেই হবে রাণী।তূর্যয় যেমন হোক, দানব হোক আর হিংস্র হোক এর আগে উনি একজন মানুষ।তুই যতটুকু পারবি রাণী,উনার এই রহস্য বের করার চেষ্টা করবি।” রাণী তার মনে হাজারো কথা ভাবছে। আজ রাতের খাবার খাওয়া হলো না রাণীর।নানান কথা ভাবতে ভাবতে রাণী ঘুমের দেশে চলে গেলো।

হ্যারির ফোনে ঘুম ভাঙলো রাণীর। হ্যারির সাথে কথা বলে মোবাইলে চোখ পরতেই সে দেখতে পেলো ঘড়িতে নয়টা পনেরো বাজে।তাড়াহুড়ো করে রাণী নিজের বিছানা ছাড়লো।কোনো মতে হাত মুখে ধুয়ে কাপড় চেঞ্জ করেই রাণী নিজের ব্যাগ আর অফিস থেকে দেওয়া মোবাইল ফোন নিয়ে নিলো। তার এমন তাড়াহুড়া দেখে সিমি রাণীকে জিজ্ঞেস করলো,”আরে এমন করছিস কেনো?কোথাও যাবি?” রাণী বোতল থেকে অল্প পানি খেয়ে সিমিকে বললো,”হ্যাঁ,অফিস যেতে হবে।ভিনদেশী ভাই এসেছে নিতে।” সিমি মুখ বাঁকালো রাণীর কথায়,
“আচ্ছা, পরে যাবি অফিসে।আগে নাস্তা করে নে।তোর সেই ভিনদেশী ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলে আসছি।” রাণী মাথা নাড়ালো,”নাহ,আমার খাওয়ার সময় নেই।আর দেখা করবি তো জলদি আয় আমার সাথে।” রাণী নিজের পায়ে জুতা জড়িয়ে নিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলো।রাণীর পিছে সিমি হুইল চেয়ার নিয়ে যতো সম্ভব জলদি আসতে লাগলো।এতিম খানার গেইটের সামনে আসতেই হ্যারি গাড়ির জানালা থেকে মুখ বের করে রাণীকে বললো,”হারি আপ, সিস।ব্রো অপেক্ষা করছে।” সিমির সাথে হ্যারির চোখাচোখি হতেই সিমি মুচকি হাসলো।সিমিকে দেখে হ্যারির বুক ধুক করে উঠলো।আর সিমির এমন হাসি দেখে হ্যারি তার বুকে হাত রেখে বললো,”ডোন্ট স্মাইল কিউটি।এইখানে হার্ট করে অনেক।” রাণী হ্যারির কথা শুনে হাসলো।গাড়ি চলে যাওয়ার সময় হ্যারিকে হাত নাড়িয়ে “বিদায়” বলে উঠলো সিমি।আর এতেই হ্যারি খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।গাড়ি চলতেই হ্যারি মাথা ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে রাণীকে জিজ্ঞেস করলো,”সেই প্রিটি মেয়েটি কে?” রাণী দাঁত দেখিয়ে হ্যারিকে বললো,আমার বান্ধবী।কলিজার বন্ধন আমাদের।” হ্যারি আরো খুশি হয়ে রাণীকে আবারও জিজ্ঞেস করলো,”ইজ সি সিঙ্গেল? আই মিন কিউট মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড নেই তো আবার?” হ্যারির কথায় রাণী জোরে হেসে বললো,”উহু,ভিনদেশী ভাই।আমার বান্ধবী পিউর সিঙ্গেল।” হ্যারি মুচকি হেসে রাণীকে বলে উঠলো,”ইয়াহু,বাসায় গিয়ে আস্ক করবে তাকে,তার আমাকে ভালো লেগেছে কিনা?দা ওয়ে সি ওয়াজ স্নাইলিং!ওহ গড, আই অ্যাম ডেড। আই থিংক ইটস মাই,লাভ এট ফার্স্ট সাইট।” রাণী অবাক হলো হ্যারির কথায়।রাণী অবাক হয়ে হ্যারিকে বললো,
“এইভাবে এক নজর দেখার পর কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে?আমার মনে হচ্ছে,আপনি বেশি তাড়াহুড়ো করছেন।” হ্যারি নিজের কপাল চুলকিয়ে বলতে লাগলো,”হুইল চেয়ারে বসা ডলের মতো দেখতে একটা মেয়ে।আমাকে দেখে আবার স্মাইল করলো,তখন মেয়েটাকে দেখতে মনে হয়েছিল একটা ফেইরি।হাত নাড়িয়ে যখন আমাকে বাই বলছিল,তার লিপ্স দেখে আমার হার্ট জাস্ট ব্লাস্ট হওয়ার অবস্থা হয়েছিল।” কথাগুলো বলে হ্যারি, রাণীর হাত ধরে আবারও বলে উঠলো,”উফ,সিস!তোমাকে আমার হেল্প করতে হবে কিন্তু।বাসায় গিয়ে আমার নাম্বার দিয়ে আসবে তাকে। গট ইট?” হ্যারির কথায় রাণী মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো,”ওকে,ভিনদেশী ভাই।” হ্যারির মুখ চিকচিক করে উঠলো রাণীর উত্তর শুনে।

হাসপাতালে পৌঁছে রাণীকে হ্যারি নিয়ে গেলো তূর্যয়ের কেবিনের সামনে। হ্যারি রাণীকে ভেতরে ঢুকতে বললে রাণী মাথা নাড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো।কিন্তু,হ্যারি কেবিনে যাওয়ার আগেই ডাক্তার তাকে ডেকে নিয়ে গেলো।অন্যদিকে রাণী কেবিনে ঢুকতেই দরজা নিজে নিজে বন্ধ হয়ে গেলো।রাণী অবাক হয়ে দরজার দিকে একবার তাকিয়ে সামনে ফিরতেই রাণীর চোখ যেনো রসগোল্লার আকার ধারণ করলো।রাণী তার অবাক হয়ে যাওয়া চোখজোড়া দিয়ে দেখছে তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তূর্যয়কে।তূর্যয় অন্যদিকে ফিরে নিজের কাপড় চেঞ্জ করছে।অন্যদিকে ফিরে থাকায় তূর্যয় না রাণীকে দেখতে পেলো,না শব্দহীন দরজার কোনো শব্দ শুনতে পেলো।তাই এই রুমে এখন রাণী আছে এটা তূর্যয়ের একেবারেই অজানা।রাণী অবাক হয়ে দেখছে তূর্যয়ের পিঠ।তার পিঠের বেশির ভাগ অংশই মোটা মোটা লাঠির আঘাতের মতো দাগ।আবার কিছু সেলাইয়ের দাগ দেখতে পাচ্ছে রাণী তূর্যয়ের গায়ে।তূর্যয় তার হাতে থাকা শার্ট পড়ার জন্যে সামনে ফিরতেই রাণীকে দেখে অবাক হলো।আর রাণী!সে তো তার ছলছল চোখে তূর্যয়ের গায়ের দাগ দেখে যাচ্ছে।তূর্যয় এখন সামনে ফিরতেই তার পেটের খন্ড খন্ড মাংস আর হাতের, বাহুর খন্ড মাংসেও অনেক দাগ দেখতে পাচ্ছে সে।রাণী ভেবে পাচ্ছে না,তূর্যয়ের গায়ে এইসব কিসের দাগ?রাণী মনে মনে ভাবছে,”এই লোককে কেউ মারবে, এমন দুঃসাহস কারো নেই।তাহলে উনার গায়ে এইসব কিসের দাগ?দাগগুলো দেখে তো মনে হচ্ছে, এই দাগ অনেক আগের।” দাগ থেকে চোখ সরাতেই রাণীর চোখ আটকে গেলো তূর্যয়ের চোখের দিকে।তূর্যয়ের চোখজোড়া এখন আপাতত রাণীর দিকেই।
রাণীর ঘুম ঘুম চোখ,এলোমেলো চুল সবটাই যেনো তূর্যয়কে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে।রাণীর হাত দিয়ে চুল সরানোটা তূর্যয়ের কাছে জগতের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস বলে মনে হচ্ছে।কিন্তু তূর্যয়ের ভাবনায় ইতি ঘটলো রাণীর কথায়,”আপনার গায়ে এইসব কিসের দাগ?আপনাকে কি ছোটকালে কেউ মারতো?” রাণীর কথায় ঘোর ভাঙলো তূর্যয়ের।ছোটকালের কথা তার কানে প্রবেশ করতেই তূর্যয়ের ভেতরকার রাগ,দানবী ভাব যেনো আবারও তাকে জেঁকে ধরলো।সে দ্রুত এসে রাণীর দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে তাকে বললো,
“সালেহাকে তুই কখন থেকে চিনিস?” রাণী তার হাতে ব্যাথা অনুভব করা সত্ত্বেও সে তূর্যয়কে বললো,”যখন থেকে বুদ্ধি হয়েছে তখন থেকে উনাকে দেখছি আমি।”
তূর্যয় আরো জোরে চেপে ধরলো রাণীর বাহু।ব্যাথায় রাণী “আহ্” করে উঠলো।তাও তূর্যয় ছাড়লো না রাণীকে। সে রাগী গলায় রাণীকে বললো,”সেই কারণেই তো, ঐ স্বার্থপর মহিলার মতো হয়েছিস তুই।একদম সেইম।একদম একই তোরা দুইজন।তোদের কথা,চালচলন, স্বার্থপরতা সব একদম একই।” রাণী অবাক হয়ে শুনছে তূর্যয়ের কথা।সালেহা কি এমন করলো তূর্যয়ের সাথে এটাই মাথায় ঢুকছে না রাণীর।রাণী নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো তূর্যয়ের কাছ থেকে।তূর্যয় রাগে গর্জন করে যাচ্ছে।রাণী এইবার মুখ না খুলে পারলো না।রাণী তূর্যয়কে বলে উঠলো,”দেখুন,আপনার মনে কোনো কষ্ট থাকলে আমাকে বলতে পারেন।মনের কষ্ট মনে না রাখায় ভালো।” তূর্যয় রাণীর হাত টেনে ধরলো যার কারণে রাণী গিয়ে ঠেকলো তূর্যয়ের বুকে।তূর্যয়ের খালি বুকে রাণীর মুখ লাগতেই দুইজনই কেমন নড়ে উঠলো। রাণীর গাল জোড়া যেনো এখনই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।তূর্যয়ের বুকে রাণীর গাল লাগতেই তূর্যয় যেনো এক অন্য দুনিয়ায় চলে এসেছে।কিন্তু তূর্যয়ের রাগ তাদের দুইজনের এমন অনুভূতি বেশিক্ষণ থাকতে দিলো না।তূর্যয় রাণীর ঘাড় চেপে ধরে তাকে রাগী গলায় বলে উঠলো,”সালেহার কাছে পালিত মেয়েকে আমি আমার মনের কষ্ট বলবো?তোদের মতো নিচু জাতের মেয়ের কাছে আমি তূর্যয় ফিরেও তাকায় না।” রাণী আবারও নিজেকে ছড়িয়ে নিলো তূর্যয়ের কাছ থেকে।রাণীর চোখের টলটল পানি,তার চোখের পলক ফেলতেই রাণীর গালে চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো।রাণী তূর্যয়ের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,” আপনি আসলেই একটা গুন্ডা।ভেবেছিলাম,গুন্ডা হলেও আপনার মনেও একটা কষ্ট থাকতে পারে।তবে,আপনি তো দানব।আর দানবের কোনো কষ্ট থাকে না।কিন্তু, আমিও রাণী।আমি সব ঠিকই জেনে ছাড়বো।আর না আমি ছাড়বো আপনার এই চাকরি।এই রাণীকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করে নিন এখন।বুঝতে পেরেছেন, মিস্টার দানব সন্ত্রাসী?আর আমার হাত চেপে যে ব্যাথা দিয়েছেন,এটার শাস্তি আমি আপনাকে ঠিকই দিবো।দানব একটা!”
রাণী কথাগুলো বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।তখনই হ্যারি ঢুকলো কেবিনে।হ্যারিকে দেখে তূর্যয় চিল্লিয়ে হ্যারিকে বললো,”এই মেয়ের এতো সাহস! আমার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলে?”
কয়েক মিনিট পরে তূর্যয় তার রাগটাকে দমিয়ে নিলো।এরপর সে আবারও হ্যারির দিকে ফিরে তাকে বললো,
“আমার রাগ এতো বেড়ে গিয়েছিল, কি কি বলে ফেলেছি আমি তাকে!হ্যারি গিয়ে দেখো তো, ঐ চঞ্চল মেয়েটার হাত ঠিক আছে কিনা?রাগে বেশি জোরে চেপে ধরেছিলাম তার হাত।সালেহার রাগ সবটাই দেখলাম এই নির্দোষ মেয়েটার উপর।উফফ,আমার রাগ! ধেত!” বলেই তূর্যয় কেবিনে থাকা টেবিলে লাথি দিলো।

হ্যারি অবাক হয়ে তূর্যয়কে দেখে যাচ্ছে।তূর্যয়ের কোনো কথায় হ্যারির মাথায় ঢুকছে না।
আর তূর্যয়, নিজের চুল টেনে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।

চলবে….
কপি করা নিষেধ।কালকে গ্রুপে সবার সাথে লাইভে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো।তাই ভাবছি,এখন থেকে সবার সাথে কমেন্টে কথা বলবো।আর সবার কমেন্টের রিপ্লাই দিবো।ভালোবাসা অবিরাম সবার প্রতি❤️।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here