#আলো-আঁধার🖤পর্ব ১৬
#লেখিকা: সালসাবিল সারা
১৬.
ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমের ঠিক মধ্যখানে বিছানার উপর তূর্যয় বসে আছে।তূর্যয়ের পাশে হালকা একটা টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে।অবশ্য এই টেবিল ল্যাম্পের আলোতে শুধু তূর্যয়ের হাতে থাকা মদের গ্লাস আর তূর্যয়ের বিশাল দেহের অবয়ব দেখা যাচ্ছে।একটু আগেই সে শান্তি মহলে ফিরলো।মনির এতো বলার পরেও রাতের খাবার খায়নি সে।রুমে ঢুকে গোসল সেরে উদোম গায়ে কোমরে তাওয়াল পেঁচিয়ে সে মদের গ্লাস নিয়ে বসে আছে।তূর্যয়ের দৃষ্টি বর্তমানে তার হাতে থাকা মদের গ্লাসে।তূর্যয়ের জীবনে তার অতীতের সুন্দর একটা অংশ আজ সে ফিরে পেলো।যদিও তার সেই সুখের অতীতে তূর্যয় আর রাণীর দুইজনের নাম থাকলেও,রাণী এইসব ব্যাপারে সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন। কারণ,তূর্যয় যখন অত্র স্কুলে ক্লাস টেনে ভর্তি হয়েছিল তখন রাণী ক্লাস থ্রিতে পড়তো।তূর্যয় রাণীকে মায়ার নজরে দেখতো তখন,এই ব্যাপারে রাণী একেবারেই অজ্ঞ।ক্লাস টেনে তূর্যয়ের বয়স ছিল তখন বিশ।এর পেছনেও একটা বিশাল কারণ আছে।তূর্যয়ের মা মারা যাওয়ার পর জীবনের সবচেয়ে কালো অধ্যায় দেখেছিল সে।অতীতের নানান কালো অভিজ্ঞতা তূর্যয়ের অতীতকে বিষিয়ে দিয়েছে।তার মা মারা যাওয়ার পর পরই তূর্যয়কে স্কুল থেকে নামিয়ে ফেলে হাসান।এরপর তাকে এক মাদ্রাসায় ঠেলে দেয় হাসান। যেখানে তূর্যয় তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন কাটিয়েছিল।সেখানে তার পড়ালেখা ছুটে গেলো অনেক বছর।এরপর মোল্লা সাহেবের অনুপ্রেরণায় তূর্যয় তার গায়ের আঘাতের যন্ত্রণার সাহায্যে শক্তিশালী হতে শুরু করে।মাদ্রাসার আঘাত তূর্যয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে অনেকটা বছর সময় নিয়ে নেয়।এরপর মোল্লা সাহেব,তূর্যয়ের বিশ বছর বয়সে দশম শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দেয় বোর্ড পরীক্ষার জন্যে।তূর্যয়ের জীবনে ততদিনে ছেয়ে গিয়েছিল আঁধার।স্কুলের কারো সাথেই তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। উচ্চতায় লম্বা হওয়ার কারণে তূর্যয়কে স্কুলের এসেম্বলি করার সময় সবসময় পেছনে দাঁড়াতে হতো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অধিকারী তূর্যয় সেই পেছন থেকেই সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পেতো। এমনই একদিন এসেম্বলি করার আগে,যাদের জামা অপরিষ্কার তাদের সামনে এনে শাস্তি দেওয়ার জন্যে কিছু স্টুডেন্টকে দাঁড় করিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। সামনে দাঁড়ানো সেই স্টুডেন্টদের মধ্যে ঠিক তখনই তূর্যয়ের নজরে এসেছিল রাণী।রোদের কারণে ঠিক এখনের মতো চোখ মুখ কুঁচকে রাখতো রাণী।যেই মুখের মায়া তূর্যয় আজও ভুলেনি।রাণী প্রায় সবসময় এসেম্বলিতে এমন শাস্তি পেতো।আর তূর্যয় তার মন জুড়িয়ে সেই ছোট্ট মেয়েটির মায়ামাখা মুখ দেখতো।সারাদিনের নানান অবহেলায় বড় হওয়া তূর্যয়ের রাতের বেলা সুখের আবেশ ছিল তার মা আর রাণীর সেই মায়া মাখা চোখের চাহনি।রাণীকে এতো বছর পর ফিরে পেয়ে তূর্যয়ের মনে হচ্ছে তার জীবনটা সত্যি এইবার আলোকিত হবে।এইসব ভাবতেই মুহূর্তেই তূর্যয়ের কপালের রগ ফুলে উঠলো।হাতে থাকা মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে সবটাই খেয়ে নিলো সে।এরপর খুব জোরে গ্লাসটি টেবিলের উপর রেখে তূর্যয় দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,
–“কখনোই না তূর্যয়।তোর জীবনটা এখন একেবারে আঁধারে ঘেরা।এই জীবনে আর আলো জ্বালানোর মতো কিছু নেই,কেউ নেই।তোর এই অন্ধকার জীবনের ভবিষ্যৎ শুধু অন্ধকারই হবে।এইখানে রাণীর আগমন আমাদের দুইজনের জন্যেই ক্ষতি হবে।জেনে শুনে আমি সেই ছোট মেয়েটাকে কষ্ট দিতে পারবো না।কখনোই না।উফফ,তূর্যয়!কেনো খুঁজে পেয়েছিস তুই তাকে?কেনো?খুঁজে পাওয়ার হলে আগে পাসনি কেনো?এখন তোর জীবনে কারো অস্তিত্ব নেই।তোর এই জীবনে শুধু অন্ধকারই আছে।”
তূর্যয় নিজের বুকে হাত চেপে বসে পড়লো বিছানায়।আজ তার কথাগুলো ভাবতে এক প্রকার কষ্ট অনুভব হচ্ছে।এমন চাপা কষ্ট তূর্যয় আগে কখনোই অনুভব করেনি।
“আমার জীবনে,আমি রাণীর অস্তিত্ব কখনোই আসতে দিবো না।আমি জেনে শুনে এক অসহায় মেয়েকে বিপদে ঠেলে দিতে কখনোই রাজি না।”
তূর্যয় মনে মনে বললো কথাগুলো।কিন্তু নাহ,তূর্যয় তার মনের কথার সাথে আজ তাল মেলাতে পারছে না।সবকিছু একপাশে রেখে তূর্যয় শুয়ে পড়লো বিছানায়।মাথা থেকে সবকিছু ঝেড়ে ফেলতে চাইছে সে।কিন্তু,
তূর্যয় কিছুতেই ভুলতে পারছে না।না চাওয়া সত্বেও তূর্যয়ের চোখে ভাসছে রাণীর সেই রোদ মাখা চেহারা।এমনটা তূর্যয়ের নজরে আসতেই তূর্যয় নিজের মুখে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
–“ইসস, রোদ্র কন্যা!”
‘
রাণীকে দেওয়া রাহেলার এক সপ্তাহ শেষ হলো তিনদিন আগে।এই নিয়ে রাণীর চিন্তার কমতি ছিল না।কারণ রাণী তূর্যয়কে এখনো তাকে সাহায্য করার কথা কিছু বলেনি।তবে, এখন রাহেলা শহরে না থাকায় রাণী আরো কিছুদিন সময় পেলো হাতে।এই বিষয়ে রাণী আল্লাহ্ এর কাছে শোকরিয়া করেছে।সেদিন রাণী তূর্যয়ের বাসা থেকে এসে সিমিকে হ্যারির কথা বলেছিল।সিমি বিনা সংকোচে হ্যারির সাথে কথা বলতে রাজি হয়ে গেলো।তবে রাণী জানেনা এখন হ্যারি আর সিমির মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা! হ্যারি রাণীকে তাদের ব্যাপারে কিছুই বলেনি।হ্যারি আর সিমির ব্যাপারটা খেয়াল না করলেও রাণী ঠিক খেয়াল করে,হ্যারি সারাদিন এমন এমন কাজ এর ব্যাবস্থা করে যাতে রাণী আর তূর্যয় একসাথে থাকতে পারে।হ্যারির এইসব কাজকর্ম রাণীর মাথায় একদম ঢুকে না।রাণী সমুদ্রের পাশে অবস্থিত তূর্যয়ের সেই বাড়িতে যাওয়ার জন্যে টেম্পুতে উঠে পড়লো।রাণীর মাথায় প্রত্যেকদিন মতো আজও নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।অবশ্য এইসব কথা তূর্যয়কে ঘিরেই।প্রত্যেকদিন রাণী অফিসে যাওয়ার আগে তূর্যয়ের সমুদ্রের পাড়ের বাড়িতে যেতে হয়।সেখানে রাণী, হ্যারি আর তূর্যয়ের জন্যে সকালের নাস্তা বানায়।এই কাজের জন্য অবশ্য হ্যারি রাণীকে জোর করেছে।রাণীর স্পষ্ট মনে আছে কিছুদিন আগে হ্যারি রাণীর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে তাকে বলেছিল,
–“আমি জানি বাঙালি গার্ল তুমি,কুকিং ভালো পারবে।একটা রিকোয়েস্ট করছি,তুমি এভ্রিডে প্রথমে অফিসে না গিয়ে ব্রো এর নিউ বাসায় আসবে।ব্রো প্রত্যেকদিন প্রোটিন শেইক আর অ্যালকোহল খায় বেশি,খাবার খায় কম।তাই আমি চাচ্ছি,ব্রো এর মর্নিং শুরু হোক;টেস্টি অ্যান্ড গুড ব্রেকফাস্ট দিয়ে।আমি একা বললে ব্রো আমার কথা কখনোই শুনবে না।কিন্তু তুমি যদি জোর খাটিয়ে এইখানে এসে নাস্তা বানিয়ে দাও, সাথে আমিও যদি ব্রো এর সাথে নাস্তা করি;তাহলে ব্রো কখনো মানা করবে না।প্লিজ,হেল্প মাই ব্রো।”
রাণী হ্যারির কথায় কিছু বলেনি।শুধু মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বলেছিল রাণী হ্যারিকে।এমনিও রাণীর কিছু বলার ছিল না।সে চাকরি করে ।তাই দ্বিতীয় বস যা বলবে তা তো তাকে মানতেই হবে।আর তূর্যয়ের খাবার খাওয়ার নিয়ম শুনে, রাণী নিজেও হ্যারির চিন্তাকে খারাপ মনে হলো না বরং বেশ ভালই লাগলো তার কাছে।সেই থেকে প্রত্যেকদিন রাণী তূর্যয়ের সমুদ্রের পাড়ের বাসায় যায় নাস্তা বানাতে।এরপর তিনজনই একসাথে অফিস চলে যায়।তূর্যয় ভোরে ঘুম থেকে উঠে জগিং সেরে এরপর এই বাড়ি চলে আসে।অফিসের জন্যে রেডি হয় সে এই বাড়ি থেকে। মোট কথা,তার মায়ের ওয়াদা রক্ষার্থে তূর্যয় রাতে শান্তি মহলে ফিরে।আর বাকিটা সময় তূর্যয় তার নতুন বাড়িতে কাটানোর চেষ্টা করে।
টেম্পু থেকে নেমে রাণী তূর্যয়ের বাড়ির সামনে এসে থেমে গেলো।বাড়ির সামনে লেগে থাকা নেইম প্লেট দেখে সে মনোযোগ দিয়ে সেই নেইম প্লেট দেখছে।নেইম প্লেটে হাত রেখে রাণী চোখ ছোট করে ইতালিয়ান স্টাইলে লেখা ইংরেজি লেখাটা পড়ার চেষ্টা করতে লাগলো,
–“কি যে লিখেছে এটা! ঐ দানবের ঘরের দেখি নাম দিলো এতদিনে।যাক আক্কেল এসেছে উনার।কিন্তু কিসব লিখেছে ইংরেজিতে পেঁচানো পেঁচানো।উফফ এটা কি ‘ ডি’ লিখেছে নাকি?ধুর বাবা,কিসব লিখা বুঝায় যায় না।কি আর হবে, ‘হিংস্র রাজার ঘর’ নাহলে ‘তূর্যয়ের ঘর:দা কাটাকুটি হাউজ’ এইসব কিছু এটা হ…”
রাণী কিছু একটা বলতে নিয়েও থেমে গেলো।কারণ রাণী বুঝতে পারছে তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।রাণী কিছু বলার আগেই তার পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
–“ডার্ক হাউজ।আমার বাড়ির নাম ডার্ক হাউজ। যার অর্থ অন্ধকার ঘর।”
এমন কথা শুনে রাণী পেছনে ফিরতেই, তার মুখ হাঁ হয়ে গেলো।কারণ,রাণীর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে তূর্যয়।তূর্যয়ের গায়ে জগিং এর কাপড় দেখে রাণী বুঝতে পারলো তূর্যয় এখনো বাড়িতেই ঢুকেনি।রাণী তার মুখ থেকে বিস্ময় ছেড়ে দিয়ে মুখে হাসি টেনে বলতে লাগলো,
–“আম..আমি জানি।আপনি কি ভেবেছেন আমি পড়তে জানি না?আমি ইন্টার পাশ। বুঝেছেন আপনি?”
–“হুম,অনেক কিছু। ডি ডি করতেই পুরো সময় পার করেছিস।আবার নাকি ইন্টার পড়ুয়া!সর সামনে থেকে।”
কথাগুলো বলে তূর্যয় রাণীকে হাত দিয়ে তার সামনে থেকে সরিয়ে দিলো।তূর্যয় ধপ ধপ পা ফেলে ভেতরের দিকে যাচ্ছে। আর রাণী চোখ ছোট করে হাত মুঠ করে রাগী গলায় মিনমিন করে বলতে লাগলো,
–“এসেছেন আমাদের মাস্টার মশায়।শয়তান, গুন্ডা,দানব!মারামারি ছাড়া আপনি নিজে কি পারেন?হ্যাঁ?আমি ইন্টার পড়ুয়া।আর আপনি আমাকে নিয়ে হাসছেন?আপনি…আপনি একটা সন্ত্রাসী!”
–“হাহাহা,এতো রাগ কেনো আজ?”
হ্যারির কথায় রাণী তাকিয়ে দেখলো। হ্যারি একটা মোটর সাইকেল থেকে নামছে।রাণী হ্যারির সামনে গিয়ে বললো,
–“আপনি মাত্রই এসেছেন।তাহলে কেমনে বুঝলেন আমি রেগে আছি?”
–“গাড়ি থামানোর আগে দেখলো হাত মুঠ করে তুমি নিজে নিজে কিছু বলছিলে,সিস।এতেই আমি বুঝে গেলাম তুমি রেগে আছো।আফটার অল,আম ইউর ব্রাদার!”
হ্যারি রাণীর কাঁধে হাত রেখে বললো।
রাণী এবং হ্যারি দুইজনই হাঁটতে লাগলো বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্যে।এরমধ্যেই রাণী মুখ ফুলিয়ে হ্যারিকে বলতে লাগলো,
–“আপনার ব্রো কতটুক পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে, হ্যাঁ?আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে উনি।পড়ালেখার প্রতিযোগিতায় লাগিয়ে দিলে না এই রাণীকে কেউ হারাতে পারবে না। ঐ দানবটাও না।”
হ্যারি হাসলো রাণীর কথায়। রাণীর কাঁধে হাত রাখা অবস্থায় হ্যারি রাণীকে বললো,
–“ভাই গ্রেজুয়েশন শেষ করেছে দেশেই।তবে,নরমাল পিউপল যে টাইমে গ্রেজুয়েশন শেষ করে সে টাইম থেকে অনেক বেশি টাইম লেগেছিল ব্রোয়ের।কারণ, ব্রোয়ের পাস্ট লাইফ একদম হেলের মতো ছিল। যার কারণে, তার স্টাডিতে একটা বিরাট খারাপ প্রভাব পড়ে।ব্রো তো গাংস্টার হয়েছিল তার কলেজ লাইফ থেকে।উফ, ব্রোয়ের নাকি সেই দাপট ছিল। সাম টাইম, কোম্পানির মিটিং এ ব্রো এর আগের কিছু মানুষের সাথে মিট হয়।এদের থেকেই জানতে পারি,আমার ব্রো সুপারহিট ছিল মারপিটে সেই কলেজ থেকেই।ভাই যখন কলেজে এন্ট্রি নিতো,সবাই নাকি ভয়ে শিভার করতো।হা হা হা। স্টিল,
আমার ব্রো এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার মানুষ আমি একটাও খুঁজে পায় না,শুধু তুমি ছাড়া।হাহাহা।”
হ্যারি হাসতে লাগলো কথাগুলো বলে।কিন্তু,রাণীর মাথায় ঘুরছে হ্যারির মধ্যখানের কথাগুলো যেখানে হ্যারি বলেছে,তূর্যয়ের অতীতের জন্যে তার পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হয়েছে।রাণী হ্যারিকে কিছু বলতে যাবে,
এর আগেই দেখলো তারা ঘরের লিভিংরুমে চলে এসেছে।যেখানে তূর্যয় হাতপা ছড়িয়ে সোফায় বসে প্রোটিন শেইক খাচ্ছে।তূর্যয়ের নজর আপাতত টিভির দিকে।যেখানে সংবাদ চলছে।রাণী নিজের মনের কথা ভাবতে ভাবতে নাস্তা বানাতে চলে গেলো।রুটি,
ডিমভাজি,কফি,আর পাউরুটির টোস্ট সাজিয়ে নিলো রাণী টেবিলে।যদিও সে একেবারে রান্নায় সেরা না,তবে এইসব নাস্তা বানাতে সে ভালই পারে।রাণী মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো,
–“ভাগ্যিস, আমাকে ভাতের আইটেম কিছু বানাতে হয় না।নাহলে তো ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যেতো।কিন্তু, ব্যাপার না।আজকাল সব কিছু ইন্টারনেটে পাওয়া যায়।এই বাড়িতে প্রথম রান্না করার আগেই আমার ভিনদেশী ভাই আমাকে একটা ল্যাপটপে ইন্টারনেট দেখে কিভাবে রান্না করতে হয় সব শিখিয়ে দিয়েছিল।ভাত আর এর সব আইটেমও আমি সহজে রান্না করে নিবো ইন্টারনেট দেখে।কারণ,আমি রাণী আমি সেরা।কোনো কাজই আমার জন্যে কঠিন না।”
কথাগুলো বলে রাণী নিজের চুল দুলিয়ে নিলো।
রাণীর এইসব কান্ড তূর্যয় দ্বিতীয় তলা থেকে লক্ষ করছিল।রাণীর এমন কান্ড দেখে তূর্যয় মনে মনে ভাবছে,
–“এই মেয়ে এমন কেনো?কোনো কিছু নিয়েই এই মেয়ের চিন্তা নেই।তাকে দেখলে মনে হয়,এই পৃথিবীতে শুধু সুখ আর সুখ, বেঁচে থাকার জন্যে এই পৃথিবীতে কোনো কষ্ট করতেই হয় না।আশ্চর্য এক মেয়ে!”
এইসব ভাবতে ভাবতে তূর্যয় খাবারের টেবিলে চলে এলো।তূর্যয়কে দেখে রাণী নিজের হাসি বন্ধ করে ফেললো।আর মুখ গম্ভীর করে তূর্যয়ের প্লেটে নাস্তা দেওয়া শুরু করলো।হ্যারি আসলে রাণীও তাদের সাথে নাস্তা করতে বসলো। নাস্তার মাঝে রাণীর মোবাইলে ফোন আসলে রাণী মোবাইল বের করতে গিয়ে নিজের ব্যাগের সব কিছু বের করে ফেললো।রাণী এতো দ্রুত ব্যাগ থেকে জিনিস বের করছিল,তার অফিসের আইডি কার্ড কাঁচের টেবিলে স্লিপ করে তূর্যয়ের কাছে এগিয়ে গেলো।রাণী,হ্যারি,তূর্যয় তিনজনের দুরত্ব একদম কাছাকাছি।টেবিল অনেক বড় হলেও তিনজন বেশ কাছাকাছি দূরত্বে বসেছে।ফলে খুব সহজেই রাণীর আইডি কার্ড তূর্যয়ের কাছে পৌঁছে গেলো।তূর্যয় রাণীর দিকে দৃষ্টি দিতেই তার চোখে পড়লো রাণীর আইডি কার্ড।সেখানে রাণীর নাম শুধু “রাণী” লেখা থাকায় বেশ অবাক হলো তূর্যয়।রাণীর দিকে আবারও তাকালে সে দেখলো রাণী মুখে পাউরুটির টোস্ট ঢুকানো অবস্থায় ফোনে বলে যাচ্ছে,
–“ঠিক আছে,ওয়াচম্যান আঙ্কেল।নিয়ে নিবো।”
ফোন রেখে রাণী মুখে টোস্ট নিয়েই হ্যারির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
–“আপনাদের অফিসে কি বেতন ভাগ ভাগ করে দেওয়া হয়?আমি নতুন বিধায় ওয়াচম্যান আঙ্কেল আমাকে ফোন দিয়ে অর্ধেক বেতন নিয়ে নিতে বললো।”
–“ইয়াহ।আসলে,মাসের শেষে টাকা দিলে অনেকেই মাসের মাঝখানে মানির প্রবলেমে থাকে।তাই ব্রো এর নির্দেশ,সবার টোটাল স্যালারির এমাউন্ট মাসের মাঝখানে একবার আর মাসের শেষে বাকি হাফ দেওয়া হয়।বাট তোমার বেতন আমি দিবো।আমি ওয়াচম্যানকে তোমার ব্যাপারে বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম।”
হ্যারি কথাগুলো বলে কফির কাপে চুমুক দিলো।এর মাঝে হঠাৎ করে তূর্যয় রাণীকে বলে উঠলো,
–“তোর নামের আগে পরে কিছু নেই কেনো?”
–“কারণ আমার নাম শুধু রাণী।”
রাণীর হাসিমুখের জবাব।
–“এমন কারো নাম হয়?এমন ভাবে বলছিস,তুই যেনো কোনো রাজ্যর রাণী?”
তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে রাণীকে বললো।
–“ব্রো,আমার কল এসেছে আমার।আমি আসছি কথা বলে।”
হ্যারি কথাটা বললো,তার মোবাইলে ফোন এসেছে সেই নাম্বারের দিকে তাকিয়ে।
তূর্যয় কিছু বললো না হারিকে। সে এখনো রাণীর জবাবের অপেক্ষা করছে।
আর অন্যদিকে তূর্যয়ের কথার জবাব দেওয়ার জন্যে রাণীর মন আনচান করছে।কমবেশি সবাই রাণীকে এই প্রশ্ন করে। রাণীর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বেশ খুশি লাগে।এখনো রাণী অতি খুশি হয়ে চেয়ার ঠেলে নিলো।রাণীর হাত ছিল তার কামিজের নিচে। যেটা রাণী একেবারে খেয়াল করেনি।চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে রাণী তার দুই হাত উঠিয়ে বলতে লাগলো,
–“আমি আমার রাজ্যের রাণী!”
কিন্তু, ঘটনা হলো উল্টো। রাণীর হাত কামিজের নিচে থাকায়,হাত উঠিয়ে কথাটা বলার সময় রাণীর কামিজটা উল্টে গেলো আর রাণীর পেটের কিছু অংশ ভেসে উঠলো।
রাণীর এমন উন্মুক্ত পেটের অংশ দেখে তূর্যয় “পুত” করে তার মুখে থাকা কফি বের করে দিলো।আর রাণী! সে তো জলদি নিজের হাত জামা সব ঠিক করে নিতে ব্যস্ত।রাণী নিজের ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো,
–“প্লিজ বলুন,আপনি কিছুই দেখেননি!”
তূর্যয়ের মুখ যেনো বন্ধ হয়ে গেলো।সে রাণীর চিকচিক চোখ দেখে কোনো মতে মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো,
–“উঁহু।”
–“আল্লাহ্ গো, শোকর।আমি দারোয়ানকে বলছি কাজের লোকদের ডেকে সব পরিষ্কার করিয়ে দিতে।আমি এই মুহূর্তে আপনার সামনে থাকতে পারছি না, সরি।”
কথাগুলো বলে রাণী ভোঁ দৌড় দিলো।
তূর্যয় নিজের মাথা চেপে ধরলো।রাণীর পেটের কথা মনে আসতেই তূর্যয় নিজের মাথা চেপে ধরলো। তার ধুকধুক করা বুকে এক হাত দিয়ে অন্য হাতে মাথা চেপে তূর্যয় বলে উঠলো,
–“সরি রোদ্র কন্যা, যা দেখার সবটাই দেখেছি আমি। মিথ্যা বলার জন্যে সরি! হায়, আমার হৃদস্পন্দন!তুই কি এইবার সেই মেয়ের কথা ভেবে জোরে বিট করা বন্ধ করবি?”
হ্যারি এসে রাণীকে না দেখে তূর্যয়কে অনেক কিছু বলতে লাগলো।কিন্তু,তূর্যয়ের মন এইখানে নেই।রাণীর পেটের দৃশ্য যেনো তূর্যয়ের মনে নকশা এঁকেছে।চোখ বন্ধ করে তূর্যয় রাণীর সেই অদ্ভুত মুখ বানানো আর রাণীর লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটাকে স্মরণ করছে বারবার।সাথে রাণীর উন্মুক্ত পেটের কথাটা তূর্যয়ের মাথায় আসতেই তূর্যয়ের গালগুলোও যেনো জ্বলছে।তূর্যয় আপাতত মুখে হাত দিয়ে একটু আগের ঘটনা ভেবে চলছে।
চলবে…
কপি করা নিষেধ।অনেকদিন পর লিখলাম।এইবার আর বন্ধ হবে না লিখালিখি ইন শাহ্ আল্লাহ্।আগে থেকে অনেকটাই সুস্থ আছি আমি।সবার সাথে কমেন্টে কথা হবে।