#আলো-আঁধার🖤 পর্ব১৭

0
444

#আলো-আঁধার🖤 পর্ব১৭
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১৭.
রাণী নিজের মাথায় ওড়নার সাহায্যে ঘোমটা দিয়ে রেখেছে।লজ্জায় তার নাক কাটা যাচ্ছে।রাণী তার মাথায় দেওয়া ঘোমটার ভেতর নিজের ডান হাতের নখ কাটছে।কিভাবে কি হয়ে গেলো সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।জোরে দৌড়ে আসার কারণে রাণীর বুকটা এখনো ধুকধুক করছে।বাম হাত দিয়ে সে তার বুকের উপর হাত রেখে হালকা মালিশ করছে। লজ্জায় তার মুখের জ্বালা ভাব যেনো ক্রমশই বাড়ছে।রাণী দাঁড়িয়ে আছে তূর্যয়ের গাড়ির পাশে।রাণী এইখানে আসার সাথে সাথেই বাড়ির ওয়াচম্যানকে, কাজের লোকদের পুনরায় আসতে বলে দিয়েছিল।ওয়াচম্যান সাথে সাথেই ফোন দিলো তাদের আর কাজের লোকেরাও চলে এসেছে খুব কম সময়ে। তা দেখে রাণী স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।রাণী তার ঠোঁট প্রশস্থ করে বললো,
–“যাক,এখন সেই নোংরা টেবিল উনারা পরিষ্কার করবেন।কি এক লজ্জাজনক কান্ড ঘটে গেলো!শেষে কিনা সেই দানব লোকটাকে আমি নিজের পেট…?নাহ নাহ,উনি তো বলেছিলেন আমার কিছুই উনি দেখেননি।যতটুক উনাকে চিনি, উনি মিথ্যা বলেন না।তাহলে ঠিকই দেখেননি।কিন্তু,তখনকার উনার নজরে আমি এক অজানা বিস্ময় দেখেছিলাম।তার মানে!”
রাণী আর কিছুই ভাবতে পারলো না। এর আগেই তূর্যয় আর হ্যারির কথার শব্দ শুনে রাণী একটু চোখ বাঁকা করে তাকালো সেইদিকে।তূর্যয়কে দেখে রাণীর গাল আবারও জ্বলতে শুরু করলো।লজ্জায় আজ রাণীর অস্থির লাগছে।তূর্যয়ের নজর রাণী দেখতে পাচ্ছে না,তূর্যয়ের চোখের কালো রঙের চশমা থাকার কারণে।তূর্যয়কে দেখে রাণীর মুখটা জ্বলার পাশাপাশি রাণীর মুখ অনায়াসে হাঁ হয়ে গেলো।তূর্যয়ের চুল,কাপড়,স্টাইল সবকিছুতে যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে রাণী।তূর্যয় তার হাতের গুলি ঠিক করে নিতে নিতে রাণীর সামনের এসে দাঁড়ালো।

তূর্যয় অনেক আগে থেকেই রাণীকে খেয়াল করেছে।তবে রাণী যেনো কোনো অস্বস্তিতে না পড়ে তাই অযথায় নিজের পিস্তল নিয়ে সেটা ঠিক করার ভং করেছে সে।রাণীর এইভাবে ঘোমটা দেওয়ার কারণটা তূর্যয় বেশ ভালো বুঝতে পারছে।

রাণীকে এইভাবে ঘোমটা দিয়ে থাকতে দেখে হ্যারি রাণীকে বলে উঠলো,
–“সিস!তোমার মাথায় এমন ভেইল দিয়ে রেখেছো কেনো? হুয়াট হ্যাপেন্ড?”
তূর্যয় গাড়িতে উঠে গেলো হ্যারির কথা শুনে।জেনে শুনে তূর্যয় রাণীকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইছে না।তূর্যয়কে গাড়িতে উঠতে দেখে রাণী নিজের মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে হ্যারিকে বললো,
–“ভিনদেশী ভাই!শুধু হুয়াট হ্যাপেন্ড না।অনেক কিছুই হয়ে গিয়েছে।নাউজুবিল্লাহ!”
হ্যারি কিছু বলার আগেই তূর্যয় রাগী গলায় বলে উঠলো,
–“দেরী হচ্ছে আমার কাজের।এইখানে কি আড্ডার আসরে বসার ইচ্ছা আছে এখন?”
তূর্যয়ের রাগী কণ্ঠ শুনে রাণী একটু চমকে গেলো।আর হ্যারি ফিসফিস করে রাণীকে বললো,
–“লেটস গো, সিস। নাহলে আজ আমাদের আর রক্ষে হবে না।এই অ্যাংরি ম্যান আমাদের পটেটো ভর্তা বানাবে।”
রাণীর মুখে হাসি না আসলেও হ্যারির কথায় সে অল্প হাসলো।রাণী এবং হ্যারি গাড়িতে উঠে পড়লো।রাণী ভুলেও তূর্যয়ের দিকে তাকাচ্ছে না।রাণীর মাথা থেকে সকালের কথাটা যেনো একেবারেই জেঁকে বসেছে।একটু পরপর রাণীর চোখে সকালের দৃশ্য ভেসে আসছে।রাণী নিজের মন অন্য দিকে ফেরানোর জন্যে হ্যারিকে বলে উঠলো
–“ভিনদেশী ভাই?আপনি কি সিমির সাথে কোনো সম্পর্কে গিয়েছেন?”
হ্যারির মুখটা লাল হয়ে গেলো রাণীর কথা শুনে।হ্যারি হাসিমুখ করে রাণীকে উত্তর দিলো,
–“নো।এখনো প্রপোজ করিনি।সামনে সুযোগ পেলে দেন করবো।সিমি ইজ রিয়েলি এ সুইটহার্ট।”
রাণী খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো হ্যারির কথায়।নিজের বান্ধবী হ্যারির মতো এমন একটা ছেলের সাথে সারাজীবন থাকবে,এটা ভাবতেই রাণীর বুকে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।রাণী তার চিকচিক চোখজোড়া দিয়ে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো,
–“বাহ্!আমার ভিনদেশী ভাই তো বেশ রোমান্টিক দেখছি। ইস,সিমি কতো ভাগ্যবতী।”
হ্যারি রাণীর কথার প্রতুত্ত্যরে আবারও জবাব দিলো।

তূর্যয় চুপচাপ রাণী আর হ্যারির কথা শুনছে।হ্যারি শেষ পর্যন্ত প্রেমে জড়িয়ে যাবে এটা ভাবতেই তূর্যয়ের খুশি লাগছে।নিজের জীবনে এমন একটা সুখময় দিন কখনো আসবে কিনা তূর্যয়ের জানা নেই।অচিরেই তূর্যয়ের মন থেকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।

রাণী,তূর্যয়,হ্যারি তিনজন প্রথমে অফিসে গেলো।সেইখানে একটা মিটিং শেষ করে সেই তিনজন বেরিয়ে গেলো মিশনে।আজ অনেক গার্ড নিয়েছে তূর্যয় তাদের সাথে।রাণী চুপ করে গাড়িতে বসে আছে।সে বুঝছে না আজ তাকে মিশনে যাওয়ার অনুমতি দিবে কিনা তূর্যয়! তূর্যয়ের হাবভাব আজ পর্যন্ত রাণী বুঝে উঠতে পারেনি।মাঝে মাঝে মনে হয় তূর্যয় অনেক ভালো মনের মানুষ।কিন্তু,তার হিংস্রতা দেখে রাণীর এই ভাবনা নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়।

অন্যদিকে হ্যারি আছে অন্য চিন্তায়।রাণী আর তূর্যয়ের মধ্যকার কোনো উন্নতি হ্যারি দেখতে পাচ্ছে না।তবে তূর্যয়ের রাণীর দিকে নেশাযুক্ত তাকানোর দৃষ্টি চোখ এড়ায়নি হ্যারির।কিন্তু,তূর্যয় নিজের ভালো লাগার কথা কখনোই রাণীকে বলবে না,এটা হ্যারি বেশ জানে। যার কারণে হ্যারি মনে মনে একটা পরিকল্পনা এঁটেছে।হ্যারি নিজের মুখে সিরিয়াস ভঙ্গি এনে রাণীকে বললো,
–“সিস,তুমি রেডি থাকো আজ।তুমি ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আজ আমাদের সাথে মিশনে যাবে।”

রাণী মাথা নেড়ে “ঠিক আছে” বললো।

কিন্তু হ্যারির কথায় অমত জানিয়ে তূর্যয় হ্যারির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–“আজকের ক্রিমিনাল দল কি পরিমান ভয়ঙ্কর এই ব্যাপারে কি তুমি অজানা,হ্যারি?সেখানে এই মেয়েকে কেনো নিবে?একে সামলাবে কে?ওর কিছু হলে আমি কিন্তু…”
তূর্যয় তার কথা শেষ করলো না।চুপ হয়ে গেলো সে।

তূর্যয়ের চুপ করে যাওয়া দেখে রাণী তূর্যয়কে বললো,
–“আপনি কিন্তু কি?আপনি আমাকে ঐ লোকগুলোর মতো হিংস্রভাবে মেরে ফেলবেন?”
রাণীর কথায় হ্যারি চুপ করতে বললো রাণীকে ইশারায়।

অন্যদিকে তূর্যয়ের বুকটা কেঁপে উঠলো রাণীর মুখে মৃত্যুর কথা শুনে।মুহূর্তেই তার চোখে ভেসে এলো তার মায়ের মৃত চেহারা।রাণীর কথার সাথে তার মায়ের মৃত চেহারা ভেসে উঠতেই তূর্যয় বুঝতে পারলো,রাণীর অস্তিত্ব তূর্যয়ের জীবনে এখন পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছে অনেক ‌বেশী।নাহয়,রাণীর মৃত্যুর কথা শুনে কখনোই তার মায়ের মৃত্যুর কথা মনে আসতো না তার।তূর্যয় নিজের হাত মুঠো করে নিলো। রাণীর মুখে বলা “আমাকে মেরে ফেলবেন” কথাটি তাকে যেনো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাচ্ছে।ছোট্ট রাণীর প্রতি সেই অনেক বছর আগে থেকেই তার মনে মায়া কাজ করে।আর এই বড় রাণীর জন্যে তূর্যয়ের মনে এক অন্য অনুভূতি কাজ করে ইদানিং।সেই অনুভূতির সাথে রাণীর প্রতি তূর্যয়ের মায়াটা যে যেনো বেড়েছে হাজার গুণ।সেই মেয়েকে তূর্যয় খুন করবে?মাথা ফাঁকা লাগছে আজ তূর্যয়ের।তূর্যয় রাণীর কথার উত্তরে কিছু না বলে চুপ করে রইলো।মিশনের গন্তব্যে পৌঁছালে তূর্যয় হ্যারিকে বললো,
–“এই মেয়েটা যাবে না আমাদের সাথে।”

হ্যারি নিজের মনে তূর্যয় আর রাণীর জন্যে একটা জবরদস্ত পরিকল্পনা করে নিয়েছে।তাই হ্যারি তূর্যয়ের কথা অমান্য করে তাকে বলে উঠলো,
–“কুইনকে আমি রেখেছি জবে।তাই আমি যা বলবো সে তাই করবে।অ্যান্ড ডোন্ট বি এফরেইড ব্রো।আমি আমার সিসের বেশ ভালো টেক কেয়ার করব।”
তূর্যয়ের কপালের রগ ফুলে উঠলো হ্যারির কথায়।আজ পর্যন্ত হ্যারি কখনোই তূর্যয়ের কথা অমান্য করেনি।কিন্তু,
আজ হ্যারির কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে।তূর্যয় রাগী মাখা কন্ঠে হ্যারিকে বললো,
–“লাস্ট কবে কার জন্যে মায়া অনুভব করেছি আমি জানিনা। তবে এই মেয়ের কিছু হলে আমি কিন্তু কাউকে ছাড়বো না হ্যারি।”
কথাগুলো বলে রাণীর দিকে তাকালো তূর্যয়।রাণীর চোখ জোড়া যেনো এখনি চোখের কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।তূর্যয়ের কথা রাণীর মাথায় যেনো গোলক ধাঁধার মতো ঘুরছে।রাণীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্যয় ঝাঁঝালো গলায় রাণীকে বলে উঠলো,
–“আমার মাথা যেভাবে খাস, ঐ জায়গায় এমন কোনো কাজ করবি না।গার্ডদের আড়ালে থাকবি।তুই আর তোর ভাই তোদের নিজেদের সুরক্ষায় থাকবি।আমি এইসব ব্যাপারে কিছু জানিনা। ভাই বোনের অতিরিক্ত প্রেমের টানে উল্টো পাল্টা কিছু হলে বা কেউ ব্যাথা পেলে,
দুইজনকে সেখানেই আমি লটকিয়ে রাখবো গাছের সাথে।”
তূর্যয় ধুম ধুম পা ফেলে হাঁটতে লাগলো।
আজ রাণীর মুখ বন্ধ।তূর্যয় কথাগুলো বলার সময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল রাণী। আজ তূর্যয়ের চোখে নিজের জন্যে মায়া দেখতে পেলো সে।রাণীর চোখে খুশির পানি চলে এলো।এই প্রথম কোনো বাহিরের একজন রাণীর জন্যে চিন্তা করছে,এটা ভাবতেই রাণীর চোখ ছলছল করছে।রাণী নিজের চোখের পানি দুই তিন পলক ফেলে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো।হ্যারি তূর্যয়ের কথায় মন খারাপ না করে,উল্টো হাসছে মনে মনে।সে মনে মনে বলতে লাগলো,
–“আই নো ব্রো, ইউ হ্যাভ ফিলিংস ফর কুইন।জাস্ট,
তোমার চোখে আঙুল দিয়ে এটা তোমাকে দেখিয়ে দিতে হবে।নাহলে তোমার এই হিংস্রতার আড়ালে তোমার লাভ লাইফ ভ্যানিশ হয়ে যাবে।বাট,আম হ্যারি। আই উইল মেক শিউর, ইউ হ্যাভ এ ভেরি বিউটিফুল লাভ লাইফ উইথ মাই কুইন সিস।”
হ্যারিকে অন্যমনস্ক হতে দেখে রাণী হ্যারির হাতে হালকা চড় দিয়ে হ্যারিকে বলল,
–“ভিনদেশী ভাই!আপনার ব্রো কি আজ আমাদের জন্যে বেশি চিন্তা করছে?দেখুন না,যেখানে আমাকে উনি ঘৃণা করে সেখানে আজ উনি আমার জন্যে কতো চিন্তা করছে।কিন্তু শেষে উনি কি বললো?আমাদের নাকি গেছে ঝুলিয়ে রাখবে।আসলেই উনি একটা হিংস্র মানুষ।দানব সন্ত্রাসী একটা!ভালো করে অন্যর কেয়ারও করতে পারেন না উনি।”
হ্যারি রাণীর হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।আর রাণীকে হ্যারি বললো,
–“কেয়ার তো করেই। তোমার জন্যে আরো স্পেশাল কেয়ার করে আমার ব্রো।নাহলে ব্রো তার ত্রি সীমানায় কোনো মেয়েকেই ঘেঁষতে দেয়না।সেখানে তুমি ব্রোয়ের সাথে মিশনে যাচ্ছো,ব্রো এর বাসায় যাও।তুমি কি বুঝতে পারো না কিছু,সিস?আর হ্যাঁ,ব্রো এর কেয়ার একদম আলাদা।অ্যান্ড,তুমি আমার ব্রোকে এইসব সন্ত্রাসী ডাকবে না।আমার ব্রো একটা বড় মাপের মাফিয়া অ্যান্ড ব্ল্যাক বিজনেসম্যান।আমার ব্রো এর অনেক রেপুটেশন,
বুঝেছো?”

–“আহারে,কি সুন্দর করে ব্রো এর গুণগান গাচ্ছেন আপনি, ভিনদেশী ভাই।বাট উনি যেভাবে জীবনটা কাটাচ্ছেন, এতে উনারই ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেশি।উনার তো শত্রুর অভাব নেই।উনার যা টাকা আছে সেগুলো দিয়ে ভালো একটা কোম্পানি তো খুলতেই পারে উনি।এইসব গুন্ডাগীরি কি বাদ দেওয়া যায় না?”
রাণী বললো হ্যারিকে।

–“উমমম,ব্রোকে এইসব থেকে ছুটানোর ক্ষমতা আমার নেই।আমিও থিঙ্ক করি এইসব সাবজেক্টে।এইভাবে কিল করে,মারপিট করে,ব্ল্যাক কোম্পানি চালিয়ে লাইফটা একেবারে শেষ হয়ে যাবে।এইগুলোর চক্করে রিয়েল লাইফকে এনজয় করতেই পারি না।বাট,ব্রো যতদিন এইসবে থাকবে আমি ততদিন আমার ব্রো এর সাথে থাকবো। পাস্টে এইসব আমি না ভাবলেও,ইদানিং আমার মনে ভয়ংকর সব থটস আসে।তূর্যয় ব্রো এর জন্যে আমার অনেক চিন্তা হয়।ভয়ংকর চিন্তা। অনলি তুমি পারবে এইসব থেকে ব্রোকে বাঁচাতে।বাট,আমার মনে হয়,ব্রো কখনো এইসব ছাড়বে না।কারণ, ব্রো এর ব্লাডে এইসব মাফিয়াগীরি ফ্লো করে।এইসব না ছাড়ুক ব্রো। তারপরও আমার ব্রোকে কেউ খুব করে লাভ করুক তার জীবনে, আমি এটাই চাই।অ্যান্ড তুমি পারফেক্ট আমার ব্রো এর জন্যে।”
রাণীর মনে নানান প্রশ্ন ছেয়ে গেলো হ্যারির কথায়।তূর্যয়ের ভয়ংকর বিপদের কথা ভাবতে রাণীর কপালে হালকা ঘাম বেয়ে পড়লো অজানা কারণে। তূর্যয়ের বিপদটা মেনে নিতে পারছে না সে।তবে রাণী অবাক হলো হ্যারির কথায়। সে নিজের দিকে আঙুল দিয়ে বললো,
–“আমি?”
–“ইয়াহ,তুমি।সময় হলে দেখতে পাবে,সিস।”
রাণীর মাথায় কিছু ঢুকলো না।তবে সে আপাতত তূর্যয়কে নিয়ে চিন্তিত।একটা জায়গায় যেতেই রাণীকে দুইজন গার্ড তাদের আড়ালে নিয়ে নিলো।রাণী তাদের মাঝে একহাতে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে দেখতে লাগলো যুদ্ধ।যে যুদ্ধের ভয়ংকর এক অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে তূর্যয়কে।দুইহাতে পিস্তল নিয়ে সে এলোপাথাড়ি সবাইকে শুট করছে।একটু পরেই তূর্যয় ঘাড় বাঁকিয়ে রাণীর দিকে ফিরলো।রাণী যেহুতু তূর্যয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল তাই রাণীর সাথে তূর্যয়ের চোখাচোখি হয়ে গেলো।হঠাৎই তূর্যয়ের উপর আক্রমনের হার বাড়তে লাগলো। ভয়ে রাণীর জান বেরিয়ে যাচ্ছে।এতো লোককে কিভাবে তূর্যয় শায়েস্তা করছে এটাই তার মাথায় আসছে না।তূর্যয় নিজের কোট খুলে ফেলে দিয়েছে।শার্টের হাতা ফোল্ড করে নিজের পায়ের বুটে থাকা ছুরি বের করলো সে।পিস্তল দুইটি নিজের কোমরের গুঁজে নিয়ে এলোপাথাড়ি একে একে সবাইকে ছুরি দিয়ে গলা কাটছে তূর্যয়। একটু পর পর রাণীর দিকেও তাকাতে ভুল করছে না তূর্যয়।আর এই ব্যাপারটা রাণীকে মরিয়া করে তুলেছে।হ্যারি আর বাকিসব গার্ড দৌড় দিয়ে কই যেনো গেলো।রাণী,দুইজন গার্ড আর তূর্যয় আছে এইখানে।হঠাৎ করেই রাণী খেয়াল করলো তার দুই পাশের গার্ড তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো সাথেই তারা আর্তনাদ দিলো তূর্যয়ের উদ্দেশ্যে “বস” বলে।

রাণী ভয় পেয়ে পেছনে ফিরলো।গার্ড দুইজন মাটিতে শুয়ে আছে নিথর হয়ে।একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে হাতে বড় একটা ছুরি নিয়ে।তূর্যয়ের দিকে আপাতত কোনো শত্রু পক্ষ নেই।কারণ সব কটার লাশ তূর্যয় মাটিতে শুয়ে রেখেছে।আর বাকি শত্রুদের পেছনে হ্যারি আর বাকি টিম রয়েছে।রাণী ভয়ে কাঁপছে।লোকটা এসে খপ করে রাণীর হাত ধরে তার গলায় ছুরি ধরলো।এই দৃশ্য দেখে তূর্যয়ের দুনিয়া থমকে গেল।তূর্যয়ের মনে হলো,রাণীর কিছু হলে সে কিছুতেই নিজেকে সামলে নিতে পারবে না।রাণী কবে তার জীবনে এতো কাছের হয়ে গেলো,এটাই তূর্যয় বুঝতে পারছে না।রাণীকে হারানোর ভয়ে তূর্যয়ের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।রাণীর প্রতি নিজের মনের অজানা অনুভূতির কোনো একটা নাম দিতে চলেছে আজ তূর্যয়।

অন্যদিকে রাণী এক পর্যায়ে ভয়ে কান্না করতে শুরু করলো। ঐ লোকটা রাণীর গলায় ছুরি ধরে বলতে লাগলো,
–“তূর্যয়ের সাথে কাজ করিস বুঝি?কতো দেয় একরাতে তোকে?এরচেয়ে বেশি টাকা দিবো আমি তোকে।ভেবেছিলাম তোকে মেরে দিবো।কিন্তু তোর গায়ের ঘ্রাণ আর রূপ আমাকে তো মরিয়া করে দিয়ে…”
লোকটা কথা শেষ করতে পারলো না।এর আগেই তূর্যয় কৌশলে লোকটার কপালে শুট করে দিলো।রাণীর কান যেনো ভন ভন করে উঠলো।এক মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না সে।কিন্তু, চোখ তুলে তূর্যয়ের দিকে তাকালেই সে দেখলো তূর্যয় এক দৌড়ে তার কাছে এসে তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে।রাণী যেনো মিশে যাচ্ছে তূর্যয়ের শক্ত হাতের ছোঁয়ার সাথে।তূর্যয় লোকটার দিকে গুলি তাক করে আরো কয়েকটা বুলেট লোকটার বুকে চালিয়ে দিলো সে।রাণীর কোমর আরো জোরে শক্ত করে চেপে ধরে তূর্যয় মাটিতে পড়ে থাকা লোককে বিশ্রী গালি দিয়ে বলতে লাগলো,
–“এই মেয়েটা শুধু আমার জিনিস।এই মেয়ের দিকে তাকানোর সাহস আমি কাউকে দিলাম না এই মুহূর্ত থেকে।এতদিন এর গুরুত্ব বুঝতে না পারলেও, আজ যখন তুই মেয়েটার গলায় ছুরি ধরেছিস আমি বুঝেছি মেয়েটা আমার কাছে অতি আপন।তোকে ধন্যবাদ দিচ্ছি তূর্যয়ের মনের কথা আর এই মেয়েটা তার জন্যে কতো জরুরী এই কথাটা আমাকে বুঝানোর জন্যে।এতো বছর পর আমার মনে হলো,আমার মনে এই মেয়েটার জন্যে মায়ার সীমানা নেই।অতীতের মায়াময়ী সে আমার।এতো বছর পর তাকে আমি পেয়েছি।তাকে আমি আর আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।সবার থেকে আগলে রাখবো আমি তাকে।তার দানব সন্ত্রাসীর রোদ্র কন্যা সে।আমার রোদ্র কন্যা।”
তূর্যয় স্বস্থীর নিঃশ্বাস ফেললো কথাগুলো বলে।নিজের মনে এতো কথা জমে ছিল এইসব ভেবে তূর্যয় নিজেই অবাক হচ্ছে বারবার।কিন্তু,সে আজ এটাই বুঝেছে রাণীর প্রতি তার ভালোলাগার অনুভূতিটা আজ ভালোবাসতে পরিণত হয়েছে।রাণীর দিকে তাকাতেই সে দেখলো রাণী চোখ বুজে আছে।রাণী যে নিজের হুঁশ হারিয়েছে এটা বুঝতে দেরি হলো না তূর্যয়ের।রাণী তূর্যয়ের কথাগুলো শুনেনি,এটা ভেবে তূর্যয় একটু নিশ্চিন্ত হলো।কারণ,এইসব তূর্যয় এখনই রাণীকে বলতে চায় না।আজ রাগের মাথায় তার মুখ দিয়ে সব বেরিয়ে গিয়েছিল।রাণীকে কোলে নিয়ে নিল তূর্যয় সাবধানে।এরপর সে গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে রাণীর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
–“পিচ্চি মেয়েটা বড্ড বড় হয়েছে।এই যে মেয়ে,তূর্যয় নামক আঁধারকে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের আলো দিয়েছিস তুই?ভাগ্যিস,আজকে হ্যারি তোকে এইখানে এনেছে।নাহলে, তোর এই দানব সন্ত্রাসী কখনোই তার মনের কথা বুঝতেই পারতো না।তোর গলায় ছুরি দেখে আমার মনে হলো,আমি আবারও তোকে হারিয়ে ফেলেছি।বিশ্বাস কর,তখন আমার নিজেকে একেবারে নিঃস্ব মনে হচ্ছিলো।কাউকে হারানোর ভয়ে নিজেকে নিঃস্ব মনে হওয়াটাই তো ভালোবাসা। তাই না?কিভাবে তুই এতো দ্রুত আমার জীবনে জায়গা করে নিয়েছিস? হু?উফ,চঞ্চল মেয়েটার মুখ আজ একেবারে বন্ধ।নাহলে আমার কান তো আস্ত থাকতো না।চঞ্চল মেয়ে একটা!উহু,তুই তোর দানব সন্ত্রাসীর একমাত্র রৌদ্র কন্যা।”
রাণীকে হালকা উচুঁ করে তার কপালে শব্দ করে চুমু খেলো তূর্যয়।সাথে সাথে তূর্যয়ের ঠোঁট জোড়া খুশিতে চওড়া হলো।আজ যেনো তূর্যয় তার অতীতে হারানো সব সুখ, পুনরায় খুঁজে পাচ্ছে রাণীর মধ্যেই।

চলবে….
কপি করা নিষেধ।
গল্পটা দ্রুত শেষ করে দিবো।এমনিও গল্পে আগের মতো রিচ হয় না।রেসপন্স কম, তাই লিখতেও ইচ্ছে কম করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here