#আলো-আঁধার🖤পর্ব১৯

0
472

#আলো-আঁধার🖤পর্ব১৯
#লেখিকা: সালসাবিল সারা

১৯.
দুইদিন ধরে রাণী চেষ্টা করছে তূর্যয়ের সাথে কথা বলার জন্যে।কিন্তু,তূর্যয়ের ব্যস্ততার কারণে কোনো ভাবেই রাণী তূর্যয়ের সাথে কথা বলতে পারেনি।তাছাড়া তূর্যয় আগে থেকে আরো বেশি রাণীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলো।সাথে রাণীর কোনো কথায় শুনতে নারাজ তূর্যয়।রাণী ভেবে পাচ্ছে না তূর্যয় হঠাৎ তাকে এমন করছে কেনো?রাণীর মনে তূর্যয়ের জন্যে একটা ভালো জায়গা তৈরি হয়েছে।আর এখনই তূর্যয় রাণীর সাথে এমন এমন ব্যবহার করছে,যার কারণে রাণীর মন একেবারে খারাপ থাকে। তাছাড়া রাহেলার ব্যাপারটা নিয়েও রাণী চিন্তিত অনেক।রাণী বেশ বুঝতে পারছে,
তূর্যয়ের এমন কিছু হয়েছে যার কারণে তূর্যয়ের মেজাজ খারাপ থাকে।তূর্যয় স্বাভাবিক থাকলেও সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আর এখন যেহুতু তূর্যয়ের মেজাজ খারাপ, তাই রাণী কোনো কালেই এখন তূর্যয়ের পক্ষ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করছে না।কিন্তু,রাণীর মাথা থেকে রাহেলার কথাটা যাচ্ছেই না।গত দুইদিন ধরে রাণী নিজের মাথার মধ্যে রাহেলার চিন্তা নিয়ে ঘুরছে।রাণীর মনে ভয় হচ্ছে,সামনে তার সাথে নিশ্চয় খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে।তবে রাণীর এখন কিই বা করার আছে?তূর্যয় কিছুতেই রাণীর সাথে কথা বলছে না।একদিকে তূর্যয়কে দেখলে রাণীর বুকের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আর অন্যদিকে রাণীর মনটা আকুপাকু করছে রাহেলার ব্যাপারে। মোট কথা,রাণীর এখন নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।তূর্যয়কে দেখলে তার মনের যে অনুভূতি হয়,এটা রাণী একদমই সামলাতে পারছে না।তূর্যয়কে দেখলেই কেমন যেনো হাঁ করে তাকিয়ে থাকে রাণী।যে দানব সন্ত্রাসীকে রাণী এতো ঘৃণা করতো, সেই দানব সন্ত্রাসী তথা তূর্যয়কে দেখলে রাণীর এখন শুধু বুকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

তূর্যয়ের বাড়িতে এসে রাণী সকালের নাস্তা বানিয়ে নিলো।চেয়ারে বসে সে তূর্যয় এবং হ্যারির অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পরে হ্যারি আর তূর্যয় এলে রাণী তাদের নাস্তা এগিয়ে দিলো।রাণীর নজর তূর্যয়ের দিকে।তূর্যয় এক হাতে পরোটা দিয়ে ডিমভাজি খাচ্ছে আর অন্য হাতে মোবাইলে কিছু করছে।মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তূর্যয়ের বিভিন্ন রকম মুখভঙ্গি রাণীকে আরো বেশি তূর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।রাণী বুঝতে পারে না,তূর্যয় হঠাৎ রাণীকে কি এমন করলো যার কারণে রাণী চেয়েও তূর্যয়কে আর ঘৃণা করতে পারছে না! রাণীকে বারবার সবকিছু থেকে বাঁচানো,রাণীর প্রতি তূর্যয়ের রাগ মাখা চিন্তা সবটা যেনো রাণীকে তূর্যয়ের প্রতি বেশ দূর্বল করে দিয়েছে।রাণীকে তূর্যয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হ্যারি রাণীকে বলে উঠলো,
–“শুধু ব্রোকে দেখলে হবে? ব্রেকফাস্টও তো করা লাগবে। তাই না,সিস?”
হ্যারির কথায় রাণীর হুঁশ ফিরে এলো।রাণী নিজের দৃষ্টি নিচে নামিয়ে নিলো।সে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে হ্যারিকে জবাব দিলো,
–“আমার ক্ষিদে নেই,ভিনদেশী ভাই।আপনারা করুন নাস্তা।”

রাণীর কথায় তূর্যয়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।রাণীর কণ্ঠ শুনে তূর্যয়ের মনে হচ্ছে,রাণী কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছে।রাণীর জবাবে তূর্যয় রাণীকে রাগী কণ্ঠে বললো,
–“কেনো নেই ক্ষুদা?এতিম খানার বাতাসে কি নাস্তার মতো পেট ভরে?”

–“আপনাকে এতো দরদ দেখাতে হবে না।নিজের খাওয়ার নিজে খান আপনি।দুইদিন ধরে তো আমার সাথে কথা বলারই ফুরসৎ নেই আপনার।আর এখন এসেছেন ঢং করতে?”
রাণীর উল্টো জবাব শুনে তূর্যয়ের মেজাজ ভীষণ চটে গেলো।তূর্যয় জোরে একটা থাপ্পর দিলো টেবিলে আর বেশ কর্কশ স্বরে রাণীকে বলে উঠলো,
–“এই মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হই আমি। যেখানে বড় বড় দলের মানুষ আমার দিকে চোখ তুলে তাকায় না,সেখানে এই ছোট্ট -কোন দেশের রাণী এসেছে আমার সাথে তর্ক করতে?হ্যারি,এই মেয়ের এতো সাহস কিভাবে হয়?”
তূর্যয়ের ধমকে রাণীর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।রাণীর মনে তূর্যয়ের জন্যে ভালোলাগার অনুভূতি থাকলেও,
অন্য সবার মতো তূর্যয়কে প্রচন্ড ভয় পায় সে।শুধু বাহিরে সেই ভয় প্রকাশ করে না রাণী।রাণীর চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।রাণী ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্যয়কে বলল,
–“আমি নাস্তা করবো না।আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।আপনার সা…”
রাণীর সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই তূর্যয়ের ফোন বেজে উঠলো।ফোনের নাম্বারটি দেখে তূর্যয়ের মাথায় নানান কথা ভর করলো।কারণ, তূর্যয়কে ফোন করেছে তার আন্ডারে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। যাকে তূর্যয় কাজে লাগিয়েছিল আকবর হুসাইন আর তার অন্য সব শত্রুপক্ষের খোঁজে।তূর্যয় সাউন্ড বাটন টিপে তার মোবাইলের রিং বন্ধ করে দিলো কিন্তু কল কাটলো না।মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে পড়লো তূর্যয়।এরপর রাণীর দিকে তাকিয়ে তূর্যয় রাণীকে বলে উঠলো,
–“নাস্তা করা ছাড়া এইখান থেকে উঠতে পারবি না।আর তোর অহেতুক ক্যাঁচ ক্যাঁচ শোনার সময় নেই আমার।”
কথাটা বলে তূর্যয় কল রিসিভ করে অন্য দিকে চলে গেলো।

রাণী তূর্যয়কে বকে যাচ্ছে তার কথা শুনে।এই দেখে হ্যারি রাণীকে বললো,
–“কি হয়েছে তোমার,সিস?”
–“যেই কারণে আমি আপনাদের অফিসে এসেছিলাম,
সেই কারণটা আমি জানাতে চাই আপনার ব্রোকে।অর্থাৎ,আমার সাহায্য লাগবে তূর্যয়ের।নাহলে,নাজানি কি হয় আমার সাথে! আপনার ব্রো আমার কোনো কথা শুনতেই রাজি না।এইভাবে চললে আমাকে কোনো এক খারাপ জায়গায় বিক্রি করে দিবে রাহেলা, সুষ্টু প্রমাণ দিতে না পারলে।আপনি কি আমার হয়ে আপনার ব্রোকে কথাগুলো বলবেন?”
হ্যারি রাণীর কথা শুনে ভাবতে লাগলো,
–“ইয়াহ, ইটস এ গ্রেট অপরচুনিটি ফর মাই ব্রো অ্যান্ড সিস।এই সাবজেক্টে কথা বললে,তারা দুইজন একসাথে এই প্রব্লেম সলভ করবে। এতে দুইজনের মধ্যে ক্লোজনেস বাড়বে।”

হ্যারি কেঁশে উঠলো হালকা।এরপর রাণীকে সে বললো,
–“তুমি বলো, সিস। ব্রোকে আমি বললে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না।যেহুতু,ব্রো তোমাকে বাঁচিয়েছিল ঐ রাস্কালের হাত থেকে; তাই তুমি বলো তাকে তোমার হেল্প দরকার।ব্রো অবশ্যই তোমাকে হেল্প করবে।”
রাণীর মাথায় তীরের মতো প্রবেশ করলো হ্যারির কথা।সে আপনমনে ভাবছে,
–“ঠিক বলেছে, ভিনদেশী ভাই।আমার সমস্যার কথা,
সাহায্যর কথা, আমাকেই বলতে হবে উনাকে।এই দানবের মেজাজ ঠিক হোক প্রথমে।”
–“আচ্ছা, আমিই বলবো উনাকে।”
রাণী হ্যারিকে বললো।

অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সাথে সব কথা শেষ করার পূর্বে তূর্যয় তাকে নির্দেশ দিলো,
–“যতো ফোর্স কাজে লাগাতে হয় লাগাও।তবে আকবরকে যেনো খুঁজে পায় দ্রুত।আর আমার যেসব শত্রুর খোঁজ পেয়েছো তাদের তালিকা আমার ইমেইলে পাঠিয়ে দাও।যে যেখানে লুকিয়ে থাকুক না কেনো,
সবাইকে যেনো জীবিত পায় আমার সামনে।”
–“ঠিক আছে,বস।কাজ হয়ে যাবে।”
অপর পাশ থেকে লোকটি বললো।

ফোন কেটে দিয়ে তূর্যয় আবারও খাবারের টেবিলে চলে আসলো।এসে দেখে,তূর্যয়ের খাবার ছাড়া আর বাকি সব কিছু গোছানো হয়ে গেলো টেবিল থেকে।রাণী,হ্যারি কাউকে দেখতে পাচ্ছে না সে।নিজের নাস্তা শেষ করে তূর্যয় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।বাড়ির সামনে তূর্যয়ের গাড়ি রেডি করা আছে।সে দেখতে পেলো,রাণী আর হ্যারি সেই গাড়িতে না উঠে; রাণী এবং হ্যারি বসে রয়েছে
হ্যারির মোটর সাইকেলে। যা দেখে মেজাজ প্রচুর খারাপ হলো তূর্যয়ের।নিজের চোখ থেকে খয়েরী রঙের চশমা খুলে সেটি শক্ত হাতে ধরে হ্যারির উদ্দেশ্যে সে বললো,
–“বাইক সবসময় আমার এইখানে পার্ক করা থাকে।তাহলে আজ বাইকে উঠেছো কেনো তুমি?সাথে এই মেয়েকেও নিয়েছো!এই মেয়ে জীবনে এইসবে উঠেছে কখনো?পড়ে রাস্তায় চ্যাপ্টা হলে,দুইজনের মনে বেশ আনন্দ লাগবে তাই না?”
তূর্যয়ের কথায় হ্যারি বলে উঠলো,
–“ইয়াহ ব্রো।আজকে আমার সিস বায়না করেছে সে আমার বাইকে করে যাবে।সো,আমরা আজ এটা করেই মিশনে যাবো। লেটস গো,এমনিও লেইট হয়ে যাচ্ছে আজ মিশনের জন্যে।প্রত্যেকদিন রাতে এইখানে এসে আমি বাইক পিক করি।টুডে নাহয় বাইক নিয়ে একেবারে মিশনে যায়?”
হ্যারির কথা মোটেও পছন্দ হলো না তূর্যয়ের।তার ধারণা মোটর সাইকেলে রাণী একেবারে ঠিক ভাবে বসতে পারবে না।তাছাড়া রাণীকে হ্যারি যতোই নিজের বোন বলে মনে করুক না কেনো,তূর্যয় চায় না মোটর সাইলেকে বসে রাণী হ্যারির কাছাকাছি যাক।কারণ,
তূর্যয় ভালো জানে,মেয়েরা মোটর সাইকেলে ঠিকভাবে বসতে হলে সামনের জনকে আকড়ে ধরতে হয় শক্ত ভাবে,যেটা রাণীর ব্যাপারে তূর্যয় কিছুতেই সহ্য করে নিবে না।তূর্যয়ের পুরো শরীর রাগে গিজগিজ করছে।সে দেরী না করে এগিয়ে গেলো তাদের দিকে।রাণীর হাত ধরে নামিয়ে নিলো মোটর সাইকেল থেকে।রাণী তূর্যয়ের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু রাণী ব্যর্থ হয়ে তূর্যয়কে বললো,
–“হাত ছাড়ুন!আমি আমার ভাইয়ের সাথে যাবো।”
তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে নিলো।রাণীর হাত পেছনে মুচড়ে ধরে তূর্যয় রাণীকে জবাব দিলো,
–“তূর্যয় যা বলে তাই করে।তুই,তোর ভাই দুইজনই আমার সাথে যাবি।আমার গাড়ি করে।”
তূর্যয়ের কথায় হ্যারি সুরসুর করে বাইক থেকে নেমে গেলো।আর আগে ভাগে উঠে পড়লো তূর্যয়ের গাড়িতে।তূর্যয় রাণীর হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গাড়ির দিকে।রাণী তূর্যয়ের হাতে কিল দিয়ে যাচ্ছে সাথে রাণী চেঁচিয়ে যাচ্ছে তূর্যয়কে,
–“সন্ত্রাসী একটা,ছাড়ুন আমার হাত।দরকার হলে আমি হেঁটে হেঁটে যাবো।তাও আমি আপনার সাথে যাবো না।”
–“তূর্যয় আজ পর্যন্ত কারো কথা শোনেনি। সেখানে তোর কথা শুনবে, তূর্যয়?”
তূর্যয়ের রাগী জবাব।
–“হ্যাঁ,তূর্যয় তো জলহস্তী। তাই,অন্য মানুষের কথা শোনার সময় নেই তার কাছে।”
রাণী মুখ ভেংচিয়ে বললো।

তূর্যয় রাণীর হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।এরপর নিজেই রাণীর পাশে চেপে বসলো।হ্যারি মুখ চেপে হাসছে তূর্যয়ের কান্ড দেখে।তূর্যয়কে নিজের পাশে চেপে বসতে দেখে রাণীর শরীর কাঁপছে। আড় চোখে তাকাতেই রাণী দেখলো তূর্যয় নিজের পিস্তল ঠিক করে নিচ্ছে।তূর্যয়ের বাহুর সাথে নিজের হাত লাগতেই রাণী নিজের জামা খামচে ধরলো।রাণীর এমন অবস্থা দেখে তূর্যয় আনমনে হাসলো।
রাণী তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকার কারণে খুব সহজেই সে তূর্যয়ের হাসি দেখতে পেলো।এই নিয়ে সে দুইবার তূর্যয়কে হাসতে দেখেছে।তূর্যয়ের হাসি দেখে রাণীর সম্পূর্ণ শরীর যেনো প্রশান্তিতে ভরে গেলো।রাণী জানালার দিকে ফিরে মুখে হাত দিয়ে মনে মনে ভাবছে,
–“এই সন্ত্রাসী মানুষটা আমাকে তার হাসি দিয়েই মারবে।আমার কথা শোনার সময় নেই তার,আবার আমাকে তার পাশেই বসিয়েছে।জলহস্তী একটা!”

তূর্যয় ইচ্ছা করেই রাণীর সাথে আরো চেপে বসছে।রাণীর হাতের সাথে তার বাহু লাগতেই তূর্যয়ের বেশ সুখ অনুভব হচ্ছে। সে আপনমনে চিন্তা করছে,
–“হ্যারিকে বারবার ধন্যবাদ জানাতে ইচ্ছে করে আমার।যাক,আমার রোদ্র কন্যাকে আমার পাশে বসিয়ে বেশ আরাম পাচ্ছি।এই শত্রু পক্ষের কারণে আমার রোদ্র কন্যাকে আমি নিজের মনের কথা বলতে পারছি না। কবে আমি আমার জীবনে সুখ খুঁজে পাবো?”
কথাগুলো ভাবতে তূর্যয়ের মনে আবারও আঁধার ছেয়ে গেলো।

মিশন স্পটে পৌঁছে হ্যারি রাণীকে বলে উঠলো,
–“সিস,তুমি গাড়িতে বসে অপেক্ষা করো।আমরা আসছি।গুড বাই।”
হ্যারি চলে যেতে নিলে তূর্যয় হ্যারির মাথা ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
–“কাজে রেখেছো তাকে গাড়িতে বসিয়ে রাখার জন্যে?মিশনে যাবে রাণী আমাদের সাথে।”
হ্যারি মাথা চুলকালো তূর্যয়ের কথায়।আর রাণী গাড়িতে বসে আছে, কি সিদ্ধান্ত নিবে সেই দুইজন তার আশায়।হ্যারি মাথা চুলকিয়ে তূর্যয়কে বললো,
–“বাট ব্রো!সেদিন দেখলে না আমার সিস সেন্সলেস হয়েছিল?তাহলে?”
–” বেশি কথা বলতে আমি পছন্দ করি না, হ্যারি। এটা কি তোমার অজানা?”
কথাগুলো বলে তূর্যয় উল্টো দিকে ফিরে দাঁড়ালো।তূর্যয় ভেবে চলছে,
–“রাণীকে একা রাখা একদম রিস্কের ব্যাপার।আকবর কই,কিভাবে আমার উপর হামলা করবে কিছুই বুঝতে পারছি না।গোয়েন্দা এখনো তাকে খুঁজছে।তাই,গাড়িতে বোম্ব লাগালে বা গাড়িতে হামলা করলে রাণীর ক্ষতি হতে পারে।তাছাড়া রাণীকে সুরক্ষিত জায়গায় দেখে,শত্রু পক্ষ ঠিকই বুঝে যাবে রাণী আমার আপন কেউ;নাহলে আমি রাণীকে কখনোই গাড়িতে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখতাম না।গুড জব,তূর্যয়।তাছাড়া এতিম খানার বাইরে যতক্ষণ রাণী বাহিরে থাকবে ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকবো।”

তূর্যয়কে উল্টো দিকে দাড়াতে দেখে রাণী হাতে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে।রাণীর মনে সেদিনের ভয়ংকর দিনের ভয়টা এখনো নাড়িয়ে তুলছে।রাণী হ্যারির উদ্দেশ্যে বললো,
–“ভিনদেশী ভাই,আমি কিন্তু আপনার সাথে থাকবো।”
হ্যারি রাণীর হাত ধরে তাকে আশ্বাস দিলো,
–“অবশ্যই।”

সবাই মিলে হেঁটে যাচ্ছে সামনে একটা গোডাউনের দিকে।তূর্যয় সামনে যেতে যেতে নিজের কোমরের পিছে থেকে পিস্তল বের করে নিলো।সামনে এগিয়ে গিয়ে তূর্যয় রাণীকে ইশারা দিলো তার অন্য গার্ডের সাথে দাঁড়াতে।
কিন্তু, একটু পরে রাণী সেই গোডাউনে ঢুকলো অন্য গার্ডদের সাথে একটু দেরি করে।ভেতরে ঢুকতেই রাণীর বুক ধক করে উঠলো।অনেক লোকের লাশ নিচে পড়ে আছে।কিছু লোককে তূর্যয় বেঁধে রেখেছে নিজের সামনে।লোকগুলোর মুখ,কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে।চেয়ারের উপর বসে পায়ের উপর পা তুলে তূর্যয় বেশ রিল্যাক্স হয়ে সামনে থাকা লোকদের বলে উঠলো,
–“অস্ত্র পাচার করার সময়,তার সাথে ড্রাগস সাপ্লাই দিতে বলেছিল কে তোদের?”
লোকগুলো চুপ করে রইলো।হ্যারি একজন লোকের চুল টেনে ধরে তাকে বললো,
–“বেশি পেইন সহ্য করতে না পারলে,আনসার দে ব্রোকে।নাহলে এমন টর্চার সহ্য করতে পারবি না।”
হ্যারির কথা তাও কেউ কিছু বললো না।এইবার তূর্যয় পাশে থাকা গার্ড থেকে একটা “ফিঙ্গার কাটার” নিলো।এই দেখে রাণী,সাথে উপস্থিত সবাই ঢেঁকুর গিললো।তূর্যয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসা লোকটার হাতের বাঁধন খুলে দিলো একজন গার্ড।এরপর লোকটার হাত এনে ধরলো তূর্যয়ের সামনে।তূর্যয় শেষবার বললো,
–“লাস্ট বার বলছি।কে ছিল তোদের লিডার?”
লোকটা কিছু না বলাতে,তূর্যয় লোকটার বাম হাত ধরে মধ্যখানের একসাথে তিনটা আঙ্গুলই কেটে দিলো।তূর্যয়ের গার্ড লোকটার মুখ চেপে রাখায় লোকটির আর্তনাদ শোনা গেলো না।কিন্ত,রাণীর মুখ বন্ধ নেই।এমন নৃশংস ঘটনা দেখে রাণী জোরে চিল্লিয়ে উঠলো,
–“ইয়া আল্লাহ্!”
রাণীর চিৎকারে সবাই রাণীর দিকে ফিরলো।রাণীকে তূর্যয় এইখানে দেখে বেশ ভরকে গেলো।কারণ,রাণীর উচিত ছিল তার গার্ডের সাথে বাহিরে থাকা।রাণী তার মুখ চেপে রইলো দুই হাত দিয়ে।তূর্যয়ের শরীর রাগে কাঁপছে।স্বাভাবিক মানুষের কাছে এইসব কাটাকাটি মোটেও সুবিধার লাগে না।তূর্যয় নিজে মাফিয়া সাথে এইখানে সবাই গ্যাংস্টার দলের মানুষ হওয়ায় তাদের কাছে এইসব একেবারে সহজ বিষয়।কিন্তু,রাণীর মতো সাধারণ মানুষের কাছে এইসব বিষয় বেশ ভয়ানক।তূর্যয় রক্ত চক্ষু দিয়ে তাকালো গার্ডদের দিকে।এরপর সে চিল্লিয়ে গার্ডদের বললো,
–“এই মেয়ের সেন্স হারানোর আগে তাকে এই জায়গা থেকে সরিয়ে নে।এই মেয়ের কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না।”
গার্ডরা রাণীকে বলছে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে তাদের সাথে।কিন্তু রাণী এখনো মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তূর্যয় ইশারা করলো হ্যারিকে।সাথে সাথে হ্যারি রাণীর হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো সাথে কিছু গার্ডও সেখানে গিয়েছে।সেদিক থেকে নজর সরিয়ে তূর্যয় তার হিংস্র নিয়মে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলো।

রাণী ‘ থ ‘ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।একটু আগের দৃশ্য যেনো রাণী কিছুতেই ভুলতে পারছে না। পারবেই বা কিভাবে?এমন নৃশংস দৃশ্য রাণী আগে কখনোই দেখেনি।ভেতরটা কাঁপছে তার।রাণী গোডাউনের সামনে থাকা একটা বেঞ্চে বসে পড়লো।সে তার মাথায় হাত দিয়ে আনমনে বলতে লাগলো,
–“হায়রে,এই কোন জল্লাদের মায়ায় পড়লাম আমি?কিভাবে আঙ্গুল কেটে ফেললো?উনার কি একটুও দয়া হয়নি এই কাজ করতে?আমি কিনা শেষ পর্যন্ত এই হিংস্র লোকের মায়ায় পড়লাম,আল্লাহ্ রে! কিন্তু, উনারও কি করার আছে?উনি হলেন মাফিয়া লিডার।উনার মন মানসিকতা কি আর আমার মতো সাধারণ মানুষের মতো হবে?থাক রাণী,সমস্যা নেই।এই হিংস্র মানুষকে নিজের ভালোবাসা দিয়ে কাবু করে নিবি তুই।তোকে এই কাজ করতেই হবে।তোর ভালোবাসায় যদি এই লোকের হিংস্রতা একটু কমে!”
শেষের কথাগুলো ভাবতেই রাণী বসা থেকে উঠে পড়লো।সে নিজের দিকে আঙুল দিয়ে বলতে লাগলো,
–“ক..কি,কি বল.. বললি তুই?ভালোবাসা?তুই তাহলে তূর্যয়কে ভালবেসে ফেলেছিস?কিন্তু কিভাবে?উফফ, না।এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।তূর্যয়ের প্রতি আমার মনের অনুভূতি একেবারে নতুন।এই অনুভূতি বুঝতে আমার আরো সময় লাগবে।আগে আগে কথা বলিস না তুই, মন।দয়া করে চুপ করে থাক।সেই হিংস্র দানব যদি জানে তোর এইসব মনের কথা!তাহলে,তোকেই ঝুলিয়ে রাখবে গাছের সাথে।”
রাণী নিজের বুকে হাত দিয়ে বুকের ধুকধুক ভাব কমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
একটু পরেই তূর্যয় আর বাকি সবাই বের হলো গোডাউন থেকে।তূর্যয় রাণীর দিকে এক নজর তাকিয়ে হাত ধুয়ে নিল।তূর্যয়ের হাত থেকে সকল আলগা রক্ত পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে।রুমালে হাত মুছে তূর্যয়কে তার এক গার্ড সিগারেট ধরিয়ে দিল।তূর্যয় সিগারেটে দুই তিন টান দিয়ে হ্যারিকে বললো,
–“সকল গার্ডকে নিয়ে গোডাউনের চারদিক ভালো করে সার্চ করে দেখো ড্রাগস এর বক্সগুলো কোথায় আছে।তাদের মতে,তারা ড্রাগস এর বক্সগুলো গাছের গোড়ায় মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল।এইখানে তেমন গাছ নেই।কাজটা সহজ হবে তোমাদের।আমরা সামনে ছাউনির দিকে থাকবো।সেদিকটা একেবারেই জনমানবহীন আর সুরক্ষিত।কাজ শেষে সেখানে চলে এসো।”
হ্যারি সিরিয়াস মুড নিয়ে বললো,
–“ওকে ব্রো।”
হ্যারির পিছু পিছু রাণী যেতে নিলেই তূর্যয় রাণীকে বলে উঠলো,
–“রাণী,তুই আমার সাথে থাকবি।”
রাণী তূর্যয়ের কথা পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে তূর্যয় রাণীর হাত চেপে ধরলো।বাকি সবাই চলে গেলো তূর্যয়ের ইশারা পেয়ে।রাণী বকবক করে যাচ্ছে।কিন্তু তূর্যয় সেদিকে পাত্তা না দিয়ে একটু সামনে হেঁটে ছাউনির পাশে চলে এলো।সেখানের বেঞ্চে তূর্যয় বসে নিজের গায়ের কোট খুলে পাশে রাখলো।রাণী মুখ ফুলিয়ে তূর্যয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।তূর্যয় রাণীর দিকে তাকিয়ে তাকে বললো,
–“বসে পড়।”
রাণী অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেও এখন রাণীর মুখে বুলি ফুটলো,
–“নাহ বসবো না।বাবা গো বাবা!কিভাবে আঙ্গুল কেটেছেন আপনি ঐ লোকের।আপনার কি একটুও ডর ভয় নেই?মায়া দয়া নেই?”

–“সেই লোকগুলো যদি নিজেদের বাজে কাজের জন্যে কোনো নিরীহ মানুষের জান নিয়ে নেয়,নিরীহ মানুষকে ষড়যন্ত্রের জালে ফেলে,তাদের পরিবারে ক্ষতি করে তখন তাদের মনেও তো কোনো দয়া মায়া থাকে না।আমি জাস্ট,আসল কাহিনী উদ্ধারের জন্যেই তাদের মেরেছি।কারণ,তাদের মারার আগে তারা নিজেই অনেক নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়েছে।এইসব অনিয়ম আমি সহ্য করিনা।তাই তো তোর মতো মানুষের কাছে আমি খারাপ।আর হ্যাঁ,আমি মাইন্ড করিনা খারাপ মানুষ হতে।তোকেও এই খারাপ মানুষকে সহ্য করতে হবে সারাজীবন।আফটার অল,আমি তোর মতে; দানব সন্ত্রাসী, তূর্যয়।”
রাণী অবাক হলো তূর্যয়ের কথায়।কি সুন্দর করে রাণী তূর্যয়কে খারাপ ভেবেছিল।কিন্তু এইখানে কাহিনী সম্পূর্ণ বিপরীত।এখন রাণীর মনে হচ্ছে তূর্যয় যা করেছে একদম ভালো করেছে।
তূর্যয় নিজের মোবাইল বের করে কমিশনারকে ফোন দিলো। অপর পাশে ফোন ধরতেই সিগারেটে টান দেওয়ার মাঝে তূর্যয় বলে উঠলো,
–“কমিশনার সাহেব!কাজ শেষ। ঐ মানুষগুলো নির্দোষ ছিলো।ড্রাগস তাদের কাছে আছে।হ্যারি নিয়ে যাবে সেগুলো আপনার কাছে।আমার পেমেন্ট আর একটু বাড়াতে হবে।কারণ,যে নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেলো তাদের পরিবারকে আমি কিছু সাহায্য করতে চাই।”
অপর পাশ থেকে কমিশনার মুচকি হেসে বলল,
–“কোনো চিন্তা করবে না পেমেন্ট নিয়ে।তুমি আছো তাই আমি টিকে আছি।তুমি হিংস্র হলেও তোমার মধ্যে অন্যরকম একটা স্টাইল আছে।সুযোগ পেলে এসো কোনোদিন আমার বাড়িতে। কারো সাথে দেখা করাবো আমি তোমাকে।”
তূর্যয় ঠোঁট বাঁকা করে উত্তর দিলো,
–“দেখি।”
রাণী তূর্যয়ের কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।সে মনে মনে ভাবছে,
–“আসলেই তূর্যয় যতো হিংস্রতা দেখাক না কেনো,উনার মনটা ভীষন ভালো।নাহলে,আজকাল আপন মানুষেরা অন্যের চিন্তা করে না।সেখানে উনি সেই পরিবারের কথা চিন্তা করছে,যাদের উনি কখনো দেখেননি।বাহ্,আমার সন্ত্রাসী।মনটা খুশি হয়ে গেলো আমার।”

অল্প সময়ের মধ্যে আকাশের রং পরিবর্তন হতে লাগলো। হালকা বাতাস আর মেঘলা আবহাওয়ায় বিকালের পরিবেশটা বেশ সুন্দর লাগছে।হঠাৎ করে রাণী দেখলো তিন চারটা খরগোশের বাচ্চা।সে খুশি হয়ে তূর্যয়ের কাঁধে হাত রেখে তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“তূর্যয়, দেখুন কি সুন্দর খরগোশ!”
তূর্যয় রাণীর দিকে তাকাতে তাকাতেই রাণী তার পাশ থেকে উঠে দৌড় লাগালো খরগোশগুলোর দিকে।সবুজ রঙের ঘাসের উপর বসে পড়লো রাণী খরগোশের বাচ্চাগুলোর কাছে।ঘাস ছিড়ে রাণী অল্প অল্প করে সেই খরগোশদের মুখে ঘাস তুলে দিচ্ছে।তূর্যয় অবাক হয়ে রাণীর হাসিমুখ দেখছে।সারাদিনের এই মারপিটের পর রাণীর হাসিমুখটা দেখে তূর্যয়ের মনের,শরীরের সকল হিংস্রভাব আর ক্লান্তি যেনো নিমিষেই মিশে যাচ্ছে।তূর্যয় নিজের মোবাইলে রাণী আর খরগোশ ছানার ছবি তুলে নিলো।তূর্যয় মিনমিন করে বলতে লাগলো,
–“অতীতে যেমন তোমায় দেখে আমার সব কষ্ট চলে যেতো,এখনো তোমাকে দেখলেই আমার সকল ক্লান্তি চলে যাচ্ছে। আমার জীবনে সেই একটু আলোর আগমন আমি আবারও পেয়ে গিয়েছি,রোদ্র কন্যা।অনেক ভালোবাসি।”

হঠাৎ করেই তূর্যয় দেখলো বৃষ্টি নেমেছে।রাণী এখনো বসে আছে সেখানে।তূর্যয় জোর গলায় দুইবার রাণীকে ডেকে উঠলো,
–“রাণী!রাণী,বৃষ্টি নেমেছে। চলে আয়।”

কিন্তু রাণীর তূর্যয়ের কথায় কান না দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।দুইহাত মেলে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলো সে।ঝপঝপ বৃষ্টির পানিতে ভিজে যেতে লাগলো রাণীর সম্পুর্ণ সত্ত্বা।তূর্যয়ের চোখে ঘোর লেগে যাচ্ছে রাণীকে এমন দেখে।বৃষ্টিতে তূর্যয়ের সমস্যা থাকায় সে এতক্ষণ ছাউনিতে দাঁড়িয়ে রাণীর বৃষ্টি উপভোগ করা দেখছিলো। কিন্তু,এখন রাণীর মুখে ভেজা চুল লেপ্টে যাওয়া,রাণীর খিলখিল হাসি,বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা,
রাণীর ভেজা সত্ত্বা সবটা যেনো তূর্যয়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলো। বেঞ্চে রাখা কোটের উপর নিজের মোবাইল রেখে তূর্যয় ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো রাণীর দিকে। খরগোশগুলো ছানা দৌড়ে পালিয়ে গেলো তূর্যয় আসতেই।অল্পতেই তূর্যয়ও ভিজে চুপচুপ হয়ে গেলো বৃষ্টির পানিতে।তূর্যয় রাণীর কাছাকাছি যেতেই রাণী তূর্যয়কে বললো,
–“আপনি কেনো এসেছেন?বৃষ্টিতে আপনার সমস্যা হয়,এটা ভুলে গিয়েছেন?যান,ছাউনিতে যান!”
রাণীর কথায় তূর্যয় রাণীর কোমর চেপে ধরে তাকে তার কাছে নিয়ে নিলো।রাণী গিয়ে ঠেকলো তূর্যয়ের বুকে।রাণীর দুই হাত তূর্যয়ের বুকের সাথে লাগিয়ে রাখলো রাণী।তূর্যয়ের চোখে চোখ পড়লে রাণী তূর্যয়ের নজরে হারিয়ে গেলো।তূর্যয়ের গোছানো চুলে বৃষ্টির পানি লাগার কারণে সব চুল এলোমেলো হয়ে কপালের সামনে চলে এসেছে।রাণী ঘোর মাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তূর্যয়ের দিকে।ঠান্ডায় রাণীর ঠোঁট ঠকঠক করে কাঁপছে।যা দেখে তূর্যয়ের সকল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। ধীরে ধীরে সে রাণীর দিকে নিজের মুখ নিয়ে যাচ্ছে।রাণীর কোমরটাও শক্ত করে আকড়ে ধরেছে সে।ব্যাথায় রাণীর চোখে পানি জমেছে।কিন্তু তাও সে তূর্যয়ের দিক থেকে নজর ফেরাচ্ছে না।রাণী মুখ চেপে ধরে তূর্যয় রাণীর মুখ উঁচু করে নিলো।সে ধীর গলায় বললো,
–“কেনো এতো নেশা লাগাচ্ছিস আমাকে?তোর নেশাতে বুদ হয়ে যেতে যে আমার মন একটুও অপেক্ষা করতে চাইছে না।কেনো আমাকে এতো পাগল করছিস?”
তূর্যয়ের কথায় রাণী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো,
–“কো..কোমরে ব..ব্যাথা লাগছে।”
–“আমার মনের ব্যাথার থেকে এই ব্যাথা কিছু নাহ,রোদ্র কন্যা!”
রাণী অস্ফুট কন্ঠে তূর্যয়কে প্রশ্ন করলো,
–“বুঝিনি আমি।কি বলছেন এইসব?”
তূর্যয় রাণীর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,
–“বুঝতে হবে না, তোর।সব আমি পরে বুঝিয়ে দিবো সুদে আসলে।”
কথাগুলো বলে তূর্যয় রাণীকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটতে লাগলো।
এরপর পেছনে ফিরে আবার চেঁচিয়ে বললো,
–“এখনই ছাউনিতে আয়।আমি নিয়ে আসলে কিন্তু সহ্য করতে পারবি না।”
রাণী তূর্যয়ের দিকে প্রশ্নের চোখে তাকিয়ে তূর্যয়ের পেছনে হাঁটতে লাগলো।তূর্যয়ের বলা কথাগুলো রাণীর হজম হচ্ছে না।আর না হজম হচ্ছে তূর্যয়ের এই আকর্ষণীয় রূপ।তূর্যয়ের কপাল বেয়ে পানি পড়ছে।আর সে এই পানিকে হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে।চুলের উপর হাত চালিয়ে তূর্যয়ের মাথার পানি সব সে রাণীর গায়ে ঝাড়লো।রাণীর শরীর কেঁপে উঠছে। তার কপালে তূর্যয়ের ঠোঁটের ছোঁয়াটা যেনো আগুনের মতো তাপ সৃষ্টি করছে।তূর্যয়কে এতো বেশি মোহনীয় লাগছে তার কাছে, সে বারবার জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে।তূর্যয়কে এইসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার সাহস আপাতত রাণীর নেই।তাই সে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে বসে রইলো।তার দিকে তূর্যয় গভীর দৃষ্টিতে দেখে আছে এটা রাণী বেশ বুঝতে পারছে।তাই সে তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“এইভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমি আবারও চলে যাবো বৃষ্টিতে।”
–“ওড়না দিয়ে ঢেকে লাভ কি? সবই তো বোঝা যাচ্ছে।”
তূর্যয়ের কথায় রাণীর মাথা ফাঁকা লাগছে।লজ্জায় চোখ নিচে নামিয়ে নিলো সে।

তূর্যয় রাণীকে লজ্জায় ফেলতে পেরে বেশ মজা পেলো।সে ধীর পায়ে এসে বেঞ্চ কোট নিয়ে রাণীর গায়ে তার কোট দিয়ে দিলো।রাণী আকড়ে ধরলো তূর্যয়ের কোট।রাণী মাথা নিচু করে একটু আগের ঘটনা ভাবছে।তূর্যয় তার কপালে ঠোঁট ছুঁয়েছে,এটা যেনো তার কাছে অন্যরকম এক ভালোলাগা সৃষ্টি করেছে।রাণীর প্রতি তূর্যয়ের এমন যত্নে রাণী নিজের মনকে তূর্যয়ের প্রেমে পড়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলো না।রাণী আপনমনে ভেবে উঠলো,
–“শেষ পর্যন্ত এই দানব সন্ত্রাসীর প্রেমে পড়লি তুই, রাণী?এই লোককে কিভাবে সমলাবি তুই?পারবি এই লোকের আঁধার জীবনে নিজের আলো দিয়ে লোকটার জীবনের সকল কষ্ট দূর করতে?হ্যাঁ,তোকে পারতেই যে হবে।তোর দানব সন্ত্রাসীর জীবনে সুখটা যে তোকেই আনতে হবে।পারবি তুই সব পারবি।কিন্তু,এই হিংস্র লোককে কিভাবে মনের কথা বলবি তুই?উফ, শেষে কিনা এক পাথরকে নিজের মন দিয়ে বসে আছি আমি!হায়রে রাণী,তোর জন্যে সামনে কি অপেক্ষা করছে আল্লাহ্ ভালো জানে।কিন্তু,আমার মনের বিশ্বাস; আমার সন্ত্রাসী সবার থেকে একেবারে আলাদা।তার হিংস্র মনেও যে আছে একরাশ মায়া।”
রাণী আপনমনে ভাবতে লাগলো কথাগুলো।

আর তূর্যয়! সে তো দেখে আছে তার রোদ্র কন্যাকে।যে এখন গায়ে বৃষ্টি মেখে এক অন্য রূপ ধারণ করেছে।তার সেই রূপের প্রেমে যেনো তূর্যয় নতুনভাবে আবারও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।রাণীর দিকে নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তূর্যয় মনে মনে বলতে লাগলো,
–“তূর্যয়ের রাণী তুই!”
.
রাহেলাকে আজ আবারও মমতা এতিম খানা থেকে কেউ ফোন দিলে, রাহেলা রাগী গলায় সে মানুষকে খেঁকিয়ে বলতে লাগলো,
–“আরে কইছি তো আজ আসতাছি।দুইদিন ধইরা বাতের ব্যথায় আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।তবে,আজ আসমু আমি রাত এগারোটায়।এরপর রাণীকে শায়েস্তা করমু।আজ কেউ রক্ষা করতে পারবো না তারে।”

–“হুম ভালো।অপেক্ষায় রইলাম।আজই আসবেন কিন্তু।রাণীর সম্মানহানি দেখার জন্যে আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”
কথাগুলো বলে মানুষটি ফোন কেটে দিলো।
–“আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না,রাণী। ও আমাদের সর্বগুণ সম্পন্ন রাণী, তোকে আজ কে বাঁচাবে?হাহাহা।”
মানুষটি বিকট শব্দে হাসতে লাগলো।

চলবে…
কপি করা নিষেধ।
কেমন লাগছে গল্প,সবাই জানাবেন।ভালোবাসা অবিরাম❣️।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here