#আলো-আঁধার🖤পর্ব ৪০+৪১
#লেখিকা:সালসাবিল সারা
(৪০+৪১)
বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর রাণী হায়ার সাথে চুক্তি করে একটা পরিকল্পনা তৈরি করে নিলো।এতদিন যাবত রাণী দুর্বলতায় দিন কাটিয়েছে।নাহলে কবেই রাণী একটা তুখোড় পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলতো।হ্যারির হাত মুটামুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসলে সে সাথে সাথেই এই শান্তি মহল ত্যাগ করলো।বরাবরের মতোই হ্যারির কাছে এক শান্তি মহলকে অশান্তির মহল বলে মনে হয়।হ্যারি চলে যাওয়ার পর থেকে আবারও রাণীর সবকিছু একা লাগতে শুরু করলো।কারণ হারি যে কয়দিন ছিলো এইখানে,সেই কয়দিন রাণী,হায়া,মনি সবাই ধুমিয়ে মজা করেছে।মনি এখন পড়ালেখায় ব্যস্ত।তাই সারাদিন রাণীর কেটে যায় হায়ার সাথে।রাণীর এই বাড়ি থেকে একেবারে বের হওয়া নিষেধ। তার দোকানের সবকিছু তার বান্ধবীরা সামলাচ্ছে।যার দরুণ,সাবিনা বা সিমি কেউই তার ক্ষতি করতে পারছে না।তাছাড়া আহমেদের জিদের কাছে, সাথে বাড়ির কড়া সিকিউরিটির কারণে বাড়ির ভেতরে রাণীর কোনো ক্ষতি করতে পারছে না সাবিনা। এতে সাবিনা যেনো বেঁচে থেকেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করছে।যখনই সাবিনা,রাণী আর তূর্যয়ের অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখতে পায় ভুলক্রমে তখনই সাবিনার দুনিয়া ত্যাগ করতে ইচ্ছে করে।সাবিনা কিছুতেই রাণী আর তূর্যয়কে সহ্য করতে পারছে না।তাদের ক্ষতি করতে চেয়েও সাবিনার হাত পা বন্ধী।তূর্যয় রাণীর প্রতি এতটা পজেসিভ হবে,এটা সাবিনা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি।এখন সাবিনার আফসোস হয়,কেনো সে পূর্বেই তূর্যয়কে হত্যা করেনি।সাবিনা শুধু চেয়ে দেখে রাণী আর তূর্যয়ের ভালোবাসার লীলাখেলা।
আহমেদও অনেক চেয়েছে তূর্যয়কে খুন করতে। মোটা অংকের টাকা দিয়ে ভাড়া করা লোকজনের কেউই তূর্যয়ের একটা চুল পর্যন্ত বাঁকা করতে পারেনি।বরং তাদের, তূর্যয়ের গোপন শত্রু মনে করে,তূর্যয় তাদের কবরবাসী করেছে।এইসব কিছু আড়ালে দেখতো আহমেদ।সারাদিন মুখে বড় কথা বললেও,তূর্যয়ের সামনাসামনি আসার মতো দুঃসাহস আহমেদের নেই।যার কারণে,এখনো তূর্যয়ের কোনো ক্ষতি আহমেদ করতে পারলো না। রাণীকেও এখন সে খুবই কম দেখতে পায়।এইজন্যে আহমেদের রাগের শেষ নেই।কিন্তু, রাণীর জন্যে তূর্যয়ের ঠিক করা কড়া সিকিউরিটির কারণে রাণীর রুমের সামনেও ঘেঁষতে পারে না আহমেদ।রাগে, দুঃখে আহেমদ নিজের নেশা করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় পূর্ব থেকে তিন গুণে।তারপরও তূর্যয়কে শেষ করে রাণীকে তার করে নেওয়ার একটা বাসনা কল্পনায় এঁকে চলেছে আহমেদ।মনে মনে সে জপছে,কোনো দিন যেনো তার এই মনের বাসনা বাস্তবে পরিণত হয়।
________
রাণী হায়ার সাথে কাজে লেগে পড়লো।সাবিনা আর হাসানের সাথে তাদের সাক্ষাতের জন্যে অপেক্ষার প্রহর গুণছে সেই দুইজন।শীত কালের প্রকোপ অল্প কমলেও রাণী তার গায়ে সেই মোটা চাদর জড়িয়ে রেখেছে।যদিও তার প্রেগন্যান্সির সময়কাল দুইমাস শেষের দিকে, রাণীর শরীরের তেমন কোনো বাহ্যিক পরিবর্তন না হলেও রাণী নিজের সুরক্ষার জন্যে সেই চাদর জড়িয়ে রাখে।তূর্যয়ের সাথেও রাণী এক প্রকার আলো আঁধারের খেলা খেলছে।আজ পর্যন্ত তূর্যয় রাণীর গর্ভবতী হওয়ার ঘটনাটা জানতেই পারলো না।রাণী তূর্যয়কে সামাল দিয়েছে সবদিক দিয়েই।তূর্যয়ের সামনে রাণী নিজেকে ঠিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে,আর সে সফল হয়ই।
তূর্যয় রাণীর কিছু আচার আচরণের পরিবর্তন বুঝলেও,রাণীর ঠিক কি হয়েছে; এটা সে আজও বুঝতে পারলো না।রাণীর এই বিচক্ষণতার পরিচয়ই জানিয়ে দিচ্ছে, সে তার দানব সন্ত্রাসী তূর্যয়েরই একমাত্র সহধর্মিণী।তূর্যয়ের মতো বিচক্ষণ মানুষের পাশে রাণীর মতো এমন মেয়েই যেনো শোভা পায়।
রাণী আর হায়া পিলারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।হায়া নখ কামড়িয়ে যাচ্ছে নিজের দাঁত দিয়ে।রাণীর নিজেরই অস্থির লাগছে।হাসান আর সাবিনার সামনে এখন তার অভিনয় করতে হবে এই ভেবে।দুইজন মহিলা গার্ড রাণী আর হায়ার চেয়ে একটু দূরে আছে।হায়া পিলারের অগোচর থেকে মাথা বের করে তাকাতেই সামনে দেখলো সাবিনা আর হাসান আসছে।হায়ার অক্ষিযুগল প্রশস্থ হলো।সে দ্রুত রাণীর দিকে ঝুঁকে বললো,
–“আসছে।”
রাণী হায়ার কথায় বুকে হাত রেখে ফুঁস করে শ্বাস ছাড়লো।হায়ার দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে বিড়বিড় করে হায়াকে বলে উঠলো,
–“খেলা শুরু করো,হায়া।”
হায়া চোখ বুঁজে মাথা দুপাশে নাড়লো।এরপর হায়া এক প্রকার চেঁচিয়ে রাণীকে বলতে লাগলো,
–“আপনি যায় বলুন ভাবী,হাসান সাহেব এখনো যথেষ্ট স্মার্ট আর ফিট।আমার জীবন সাথী হিসেবে আমি উনাকেই কল্পনা করি।আপনি কি একবারও দেখতে পাননি,হাসান সাহেব সাবিনার সাথে ভালো নেই।সাবিনার মতো মুটকি কি আমার চিকন দেহের অধিকারী হাসানের সাথে মানায়?একদমই না।হাসান সাহেব চাইলে আমি উনার তৃতীয় বউ হতেও রাজি।”
রাণী হায়াকে ইশারায় জানালো,”ভালো হচ্ছে অভিনয়।”
এরপর রাণী হায়াকে ধমকের সুরে বললো,
–“পাগল হলে তুমি হায়া?এইসব কখনোই হবে না।সাবিনা কখনো তোমাকে আর হাসানকে একসাথে থাকতে দিবে না।তুমি এইসবে পড়ো না।তোমার বড় স্যারকে বলে তোমার জন্যে সুপাত্রের ব্যবস্থা করে দিবো আমরা।তাও..”
হায়া অভিনয়ের মাধ্যমে দুই তলার রেলিং এ হাত রেখে বলে উঠলো,
–“নাহ,ভাবী।আমার হাসান সাহেবকে চায়। উনি ছাড়া আমার জীবনসাথী আর কেউ হতে পারবে না।”
রাণী হায়ার হাত ধরে তার দিকে এক চোখ টিপে রাগী কণ্ঠে চিল্লিয়ে উঠলো,
–“বোকামি ছাড়ো,হায়া।”
সাবিনা আর হাসান চুপ করে হায়া এবং রাণীর কথা আড়ি পেতে শুনছিলো।হাসান হায়ার কথায় বেশ খুশি হলেও সাবিনা যেনো এখনই হত্যা করবে হায়াকে।হাসানের ভেতর নারীর লালসাটা যেনো ধপ করে জ্বলে উঠলো।কিন্তু এরমধ্যেই সাবিনার শব্দ শোনা গেলো,
–“মর তুই।আমি এসেই তোকে ধাক্কা দিচ্ছি।”
হায়া ভয় পেলেও মুখে তার ভাব ভঙ্গি আসতে দিলো না।হায়া সাবিনাকে দেখে রেগে বললো,
–“এই আপনার জন্যেই হাসানকে আমি পাচ্ছি না আমার কাছে।হ্যাঁ,মরে যাবো।হাসানকে না পেলে আমি মরে যাবো।”
সাবিনা তেড়ে আসতে নিলে মহিলা গার্ড এসে সাবিনাকে ধরে ফেললো।
–“আরে হায়া,হাসান তোমাকে কখনো ভালোবাসবে না।উনি শুধু সাবিনার জামাই।তোমার হবে না কখনোই।”
রাণীর নাটকীয় সুর।
–“হ্যাঁ, এতদিনে একদম ভালো কথা বলে…”
সাবিনা কথাটা শেষ করার আগেই হাসান এলো মুখে হাসি ঝুলিয়ে আর সাবিনার হাত বেশ জোরে চেপে ধরলো।তার জন্যে দুই নারীর এমন যুদ্ধ যেনো হাসানের পুরুষত্ববোধকে জাগিয়ে তুলছে।লালসার দৃষ্টিতে হায়ার দিকে তাকিয়ে হাসান বললো,
–“হাসানের জন্যে এই প্রবীণ বয়সেও মেয়েরা দেখছি পাগল।যাক,আমি রাজি।এমন কাঁচা মেয়ে পেলে যেকোনো পুরুষই তার বউকে সামলিয়ে তাকে বিয়ে করতেই পারবে।”
হাসানের কথায় সাবিনা চিল্লিয়ে উঠলো,
–“হাসান!”
–“চুপ কর,সাবিনা!”
–“নাহ,আমি চুপ করবো না।এমনিও এই সম্পত্তির ভাগ অনেকের।আর এই খাতায় কারো নাম যোগ করতে দিবো না।আসলেই তুই সেই আগেরই জানোয়ার।তুই মানুষ হবি না।”
হাসান হেসে বললো,
–“আমি মানুষ হতেও চাই না।হায়া,তোকে শীঘ্রই আমার বিছানায় নিয়ে যাবো।”
হাসানের ভয়ংকর হাসিতে তাল মেলালো হায়া।কারণ,এখন তার কাছে মুখ্য হলো হাসানের সাথে তাল মিলিয়ে সাবিনার মেজাজ খারাপ করা।যেনো তারা রাগে সত্যটা উগলিয়ে দেয়।এইসব কিছু রাণীরই শেখানো।হায়া হাসলো,
–“সত্যি,হাসান?তুমিও আমাকে ভালবাসবে?”
–“হায়া,কিসের ভালোবাসা? দেখছো না এই লোক জঘন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোমার দিকে।চলো ভেতরে।”
রাণীর জবাবে সাবিনা বলে উঠলো,
–“হ্যাঁ,নিয়ে যা তাকে।নাহলে,আমি একে..”
–“কি করবি তুই?করবো তো এখন আমি তোর সাথে।আয় রুমে আয়।”
গার্ডের হাত থেকে হাসান সাবিনার হাত ছুটিয়ে নিলো।সাবিনা নিজের হাত ছাড়া পেয়ে বেশ জোরেই একটা চড় দিলো হাসানকে,
–“শালা,বুড়ো লম্পট।আগের অভ্যাস যায়নি এখনো তাই না?তোর এই পাপ কাজের জন্যেই তো একটা খুন করেছিলাম।”
হাসান জোরে ঘুষি দিলো সাবিনার মুখে।এরপর সাবিনার চুল টেনে তাদের রুমের দিকে যেতে লাগলো হাসান,
–“এই দুনিয়ায় আজ তোর শেষ দিন।”
হাসান ধড়াম করে রুমের দরজা বন্ধ করতেই, রাণী আর হায়া দ্রুত গেলো হাসানের দরজার সামনে।ভেতর থেকে বেশ মারের শব্দ ভেসে আসছে।রাণী হায়াকে বলে উঠলো,
–“রেকর্ডিং শুরু করো।”
–“আচ্ছা,ভাবী।”
হায়া নিজের প্যান্টের ভাঁজে থাকা ব্যাগ বের করে দেখলো,সেখানে মোবাইল নেই।পরক্ষণে হায়ার মনে হলো,রাণীর রুমেই সে মোবাইল ফেলে এসেছে।হায়া রাণীকে দ্রুত বললো,
–“আসছি আমি।”
রাণী বিরক্ত হলো।এই মুহূর্তে তাদের মোবাইলটা বেশ দরকার ছিলো।হায়া চলে যেতেই রাণী কান পাতলো ভেতরে কি কথা হচ্ছে সেইসব শোনার জন্যে।
–“তুই আমাকে ছাড়,হাসান।তোর পাল্লায় পড়ে এক নিরীহ মানুষকে খুন করেছিলাম আমি।তোর জন্যেই সব করলাম আর আজ তুই অন্য মেয়েকে চাচ্ছিস!”
হাসান সাবিনার পেটে লাথি মারে বললো,
–“হ্যাঁ,আমি করবো সব।আমি হাসান,আমাকে কে থামাবে?বহু বছর আগে নিজের লালসার শিকার করেছিলাম একজনকে।কিন্তু বিয়ে করলাম আরেকজনকে।কেনো জানিস?দেহ,দেহ,দেহ।নারীর দেহ।”
–“সেই বউয়ের দেহের নেশা শেষ হতেই তো আমার কাছে এসেছিলি।”
সাবিনার কান্নারত কণ্ঠ।
তাদের কথোপকথন চলছে।রাণী আর হায়াকে গার্ড দুজন পাহারা দিচ্ছে।হায়ার ফোনে রেকর্ডিং চলছে।এক পর্যায়ে সাবিনা বলে উঠলো,
–“আমি আজই বলে দিবো তূর্যয়কে, তুই মেরেছিস তার মাকে।”
হাসান হেসে উঠলো জোরে।সাবিনার চুল ধরে তাকে মাটিতে শয়ন অবস্থা থেকে উঠিয়ে বসলো।তার গাল বেশ জোরে চেপে ধরে হাসান সাবিনাকে করুণ কণ্ঠে বললো,
–“আচ্ছা?আমি একা মেরেছি? নাকি তুইও তার পা চেপে ধরেছিলি,যখন আমি তার মাকে বালিশ চাপায় হত্যা করছিলাম?”
রাণীর চোখে পানি জমলো।হায়া রাণীর কাঁধ চেপে ধরলো।এতো জঘন্য এই দুইজন মানুষ তারা সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি।হাসান আবারও বলতে লাগলো,
–“মারতাম তাকে প্রচুর।তোর সাথে আমার রঙ্গলীলা যে ধরে ফেলেছিল।এক পর্যায়ে সে থানায় যাবে বললে,
তাকে না মেরে আর উপায় ছিলো না। কি করবো বল?সুদর্শন ছিলাম,যৌবনে শরীর টগবগ করতো,তখন কি আমার জেলে যাওয়ার সময় ছিলো। তোকেও তো বিয়ে করেছিলাম তোর মোহে পড়ে।কিন্তু,তোর দেহের নেশাও তো চলে গিয়েছিল এক বছরেই।কখনো তুই আমাকে অন্য নারীর দেহের গন্ধ নিতে মানা করিসনি,তাই আমার মাইর থেকে বেঁচে গিয়েছিস।তুইও যে কতো পাপী আমি জানি।তূর্যয়ের মাকে মারার জন্যে পরিকল্পনা তো তোরই ছিলো রে সাবিনা।”
সাবিনা ফোঁপাচ্ছে।ব্যাথায় তার শরীর গিরগির করছে।সাবিনার মুখটা এইবারও থেমে নেই, সে চেঁচিয়ে উঠলো হাসানকে,
–“তো হায়াকেও নে বিছানাতে,এরপর ধর্ষণ করে মেরে ফেল নাহলে বাঁচিয়ে রাখ।তোর ব্যাপার এটা।তাই বলে বিয়ে কেনো করবি?”
–“তোর পাশে এক ঘরে শুতে আর ভালো লাগছে না।এতো বছর সবাই আমার সাথে রাত কাটিয়ে চলে যেতেই আমি তোর কাছে এসে ঘুমাতাম।এখন তো একটা নতুন গন্ধের পাশে থাকতে ইচ্ছে করছে।বিয়ে না হলে হায়া থাকবে কিভাবে আমার পাশে?সে তো বিয়ে ছাড়া আমার পাশে শুতে নারাজ হবে।বিয়ে তো একটা বাহানা। জোর করার চেয়ে স্ব-ইচ্ছায় ভোগ করতে বেশি মজা। হায়াকে ভোগ করতে হলে বিয়ে করতে হবে।নাহলে তার সাথে জোর জবরদস্তি করা লাগবে।এই বয়সে এইসব ভালো লাগে না।”
–“নাহ,আমি এই বিয়ে হতে দিবো না।তূর্যয়কে আমি সব বলে দিবো।”
সাবিনা জোরে বললো।হাসান এইবার নিজের বুদ্ধি হারিয়ে বসে বেশ জোরে লাথি দিলো সাবিনার বুকে।সাবিনা লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।হাসান আলমারির সামনে যাওয়ার আগে জোরে ফুলদানি পড়ে ঝনঝন শব্দ হলো।গার্ড দুইজন এসে রাণীকে সেখান থেকে সরিয়ে রুমে চলে এলো।রাণী কাঁপছে।এখন সাবিনা আর হাসানের মাঝে যাওয়া মানে সবচেয়ে বড় রিস্ক।হায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।গার্ড দুজন রাণীদের রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।একটু পরে জোরে গুলির শব্দ হলো।পরপর তিনবার গুলির শব্দে রাণী চিল্লিয়ে উঠলো,”মা” বলে।হায়া এসে রাণীকে জড়িয়ে ধরলো।
হাসান অতি ক্রোধে এসে সাবিনাকে হত্যা করলো।সাবিনার নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে।হাসান দেরী না করেই কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে।কিছুদিন গা ঢাকা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই বেরিয়ে পড়লো সে।সাবিনার মৃত্যুতে তার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই।গার্ডের মধ্যে কেউ আটকালো না হাসানকে।কারণ হাসানের হাতে বন্দুক ধরা আছে।বন্দুকের শব্দে পুরো ঘরে গার্ডের ছড়াছড়ি।রাণীর রুমের সামনে কড়া নিরাপত্তা বিরাজ করছে।হাসান যতক্ষণ বাড়ির বাহিরে যাচ্ছিল না ততক্ষণ তার দিকে পিস্তল তাক করে রেখেছিল গার্ডরা।হাসান বেরিয়ে যেতেই গার্ডের প্রধান পুলিশ আর তূর্যয়কে ফোন করে।মনি বাড়িয়ে নেই।আহমেদ বাড়ির ভেতরই ছিলো নেশায় বুদ হয়ে।গুলির শব্দে একবার নড়ে উঠলেও সে, তার নেশাগ্রস্ত মগজ তাকে কিছু ভাবতেই দেয়নি।আবারও গভীর নিদ্রায় চলে গেলো সে।
____________
গার্ডের প্রধানের ফোন পেয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো তূর্যয়।সাবিনাকে সে কখনো ভালোবাসেনি।তারপরও একটা খারাপ লাগা কাজ করছে তূর্যয়ের মনে।কিন্তু কেনো, সেটা তার জানা নেই।অথচ তারাই তূর্যয়ের অতীতটা বাজে হওয়ার অন্যতম কারণ।তূর্যয়ের এই মন খারাপ এক মিনিটও স্থায়ী হলো না।এর আগেই অতীতের সব কথা ভেবে তূর্যয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।সে নিজের অফিসের কেবিনে বসে আছে।হাত মুঠ করে বলতে লাগলো,
–“প্রত্যেক মানুষকেই তার কর্মের ফল ভোগ করতে হয়।অন্যায় ভাবে কতজনকে হত্যা করেছে এই সাবিনা তার হিসেব নেই।যাক,মরেছে ভালোই হয়েছে।নাহলে একদিন না একদিন আমার হাতেই মরতে হতো তাকে।”
তূর্যয় রাণীকে ফোন করলো।রাণীর সাথে কথা বলতে চেয়েছিল সে,কিন্তু হায়া জানালো রাণী ঘুম।
আসলেই রাণী ঘুম ছিলো।কান্না করার এক পর্যায়ে রাণী গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলো।হাসান আর সাবিনার ভয়ংকর সত্যিটা জানার পর রাণী কান্নায় ভেঙে পড়ে।এরপর দুর্বলতার এক পর্যায়ে রাণী নিদ্রায় মগ্ন হয়ে গেলো।
তূর্যয় নিজের ঘাড় দুইদিকে দুলালো।নিজের মনে ঠিক করে নিলো সে,আজই ডার্ক হাউজে ফিরবে সে রাণীকে নিয়ে।রাণীর কোনো কথাও আর কর্ণপাত করবে না তূর্যয়,এমনটা ভাবনায় সে হেঁটে চললো লিফটের দিকে। প্যান্টের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে সে।কয়েকজন কর্মচারী তাকে কুশল বিনিময় করলে বিনিময়ে সে শুধু নিজের মাথা নাড়ালো।লিফটের সামনে গিয়ে তূর্যয় দাঁড়ালো।তার উদ্দেশ্য এখন মিশনে যাওয়া।হ্যারিকে সে কাজে আসতে মানা করেছে।তাই আজ মিশনে আজ তূর্যয় একাই যাবে তার অন্যসব গার্ডের সাথে।তূর্যয় দাঁড়িয়ে লিফটের অপেক্ষা করছে।লিফট মাত্রই গ্রাউন্ড ফ্লোরে।তূর্যয় নিজের পিস্তলের সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে নিচ্ছে। একজন কর্মচারী তূর্যয়কে দেখে দ্রুত তার দিকে হেঁটে এসে তাকে ডেকে উঠলো,
–“বস!”
তূর্যয় পেছনে ফিরলো না।তবে ঘাড় বাঁকিয়ে পাশ ফিরতেই দেখলো তার অফিসের একজন কর্মচারী হাসিমুখে তাকে দিকে চেয়ে আছে।তূর্যয় চুপ করে থাকলে লোকটি আবারও তূর্যয়কে বললো,
–“ধন্যবাদ বস,অফিসের কর্মচারীদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে টাকা নেওয়ার ফান্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যে। এইখানের সাহায্যে আমি আমার ছেলের জীবন বাঁচাতে পেরেছি।ধন্যবাদ অনেক আপনাকে।”
তূর্যয় ঘাড় কাত করলো।লোকটা হেসে চলে যাচ্ছে।সে জানে,তূর্যয়ের এই ঘাড় কাত করাটাই তার জন্যে তূর্যয়ের উত্তর ছিলো।তূর্যয় তার দৃষ্টি আবারও লিফটের দিকে দিলো।যখনই কেউ তূর্যয়ের গুণগান গায়,তখন তূর্যয় বুঝে উঠতে পারে না কি অভিব্যক্তি দিবে সে।তবে মনে মনে সে খুশি হলো,তার জন্যে একটা প্রাণ যে বাঁচতে পেরেছে।লিফট তার ফ্লোর বরাবর আসতেই একটা টুং শব্দ করে লিফটের দরজা খুলে গেলো।বত্রিশ দাঁতের পাটি দেখিয়ে হ্যারি লিফট থেকে বের হলো।তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে তাকালো।হ্যারির বুকের উপর ঝুলন্ত হাতের দিকে ইঙ্গিত করে তূর্যয় হ্যারিকে বললো,
–“তুমি কখনো মানুষ হবে না।মানা করেছিলাম অফিসে আসতে!তারপরও কথা শুনোনি কেনো?”
–“ইয়াহ ইয়াহ,আমি অমানুষ।বাট তুমি মানুষটাকে না দেখে আমার হার্ট পেইন করছিল।বাই দা ওয়ে,আম ফাইন নাও।আর রেস্ট করলে আমার বুকটা ব্লাস্ট হয়ে যাবে,এমনিও অনেকদিন মিশনে যায়নি।”
লিফট বন্ধ হতে নিলে তূর্যয় হাত দিয়ে দেয় লিফটের মাঝে। এতে সেন্সর থাকার কারণে লিফটের দরজা আর বন্ধ হলো না।তূর্যয় হ্যারির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে লিফটে উঠে পড়লো।হ্যারিও তূর্যয়ের পেছনে পেছনে লিফটে উঠলো।
–“ব্রো,সাবিনা ইজ ডেড।হাসানকে কি পুলিশ ধরে নিয়েছে?”
–“জানিনা।আমার ব্যাপার না এটা।তারা বেঁচে থাকুক বা মরুক,আমার কিছু যায় আসে না।”
তূর্যয়ের স্বাভাবিক কণ্ঠ।
তূর্যয়কে অনুভূতিহীন দেখে হ্যারি তূর্যয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,
–“আর ইউ স্যাড,ব্রো?”
তূর্যয় হ্যারির মাথায় ধীরে চড় দিয়ে তাকে জবাব দিলো,
–“একদমই না।কিন্তু,তুমি মিশনে যাচ্ছো না।অ্যাপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিবো তোমাকে।”
লিফট থেমে গেলো।লিফটের দরজা খুলতেই হ্যারি দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে পড়লো।হ্যারি হাত নাড়িয়ে তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“তুমি যেখানে আমি সেখানে,সে কি জানোনা?”
তূর্যয় ঠোঁট চেপে হাসলো।হ্যারির এইসব বাচ্চামো দেখেই হ্যারির প্রতি এতো আস্থা এসেছিল তূর্যয়ের।যেই আস্থার প্রতি তূর্যয় এখনো শতভাগ নিশ্চিত।তূর্যয় কোটের বোতাম খুলে গাড়িতে উঠে পড়লো।হ্যারি আগেই উঠে বসে আছে তূর্যয়ের গাড়িতে।তূর্যয় নিজের চুল পেছনের দিকে ঠেলে হ্যারিকে বলে উঠলো,
–“দু একদিনের ভেতর তোমার সিসের সাথে দেখা করতে যাবে ডার্ক হাউজে।তোমার কথা বারবার বলছিলো সে।”
–“ইয়াহ,যাবো।বাট, সিসকে দেখতে একটু সিক সিক লাগে। ডক্টর দেখিয়েছো তাকে?”
–“নাহ।তবে আমারও মনে হয় ওর শরীর খারাপ।কিন্তু,
মুখে স্বীকার করে না। আগামীকালই ডাক্তার এনে সব চেকাপ করাতে হবে রৌদ্রের।সকালেও রুমে বমি করে একেবারে ভাসিয়ে দিয়েছিলো।এতো বললাম,ডাক্তার দেখাতে; তবে সে নারাজ।উল্টো কান্না করে আমার বুকে হামলা করে বাচ্চার মতো।একদম তোমার মতো জিদ হয়েছে তোমার বোনের।আজ আমরা ডার্ক হাউজে শিফট হয়ে যাবো।বিরক্ত লাগে আমার সেই ঘরে।”
তূর্যয় হ্যারির কথার জবাব দিলো।
–“গুড।এমন একটা মার্ডারার এর বাড়িতে থেকেই বা কি গেইন হবে।আন্টি হয়তো বুঝবে এখন,উনার প্রমিজ আর কোনো কাজের না।বিকজ,হাসান নিজেই তো কারো কেয়ারের যোগ্য না।আন্টি হেভেন থেকে সব দেখছে।সো,ডোন্ট ওয়ারি।”
তূর্যয় কিছু বললো না।চুপ করে রইলো।
মিশনে যথেষ্ট মারপিট হয়েছে।তাদের প্রত্যেক মিশনই এমন ভয়ংকর হয়।তূর্যয় এক হাতে শত্রুকে সামলিয়েছে আরেক হাতে হ্যারিকে সামলিয়েছে।আজ তারা বেশ কিছু নারীকে পাচারের হাত থেকে রক্ষা করেছে।এই মিশনটা তূর্যয়কে কমিশনার দিয়েছিল।তাই এইখানে অনেক পুলিশ ফোর্সও আছে।প্রধান আসামীকে বের করেই তূর্যয় আর পুলিশ প্রধান যৌথ ভাবে কথা বললো কমিশনারের সাথে।কমিশনার তার মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া কাণ্ডে লজ্জায় তূর্যয়ের সাথে কথা বলতেই হিমশিম খায়।তবে তূর্যয়ের সেদিকে কোনো মাথা ব্যাথা নেই।তূর্যয় যেনো তার রৌদ্র,হ্যারি,মোল্লা সাহেব,মনি ছাড়া আর বাকি সবার প্রতি একেবারে অনুভূতিহীন।
কমিশনারের সাথে কথা শেষ করে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো তূর্যয়।হ্যারি গার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে।তূর্যয়কে দেখে হ্যারি তূর্যয়ের দিকে সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
–“ওয়ানা ট্রাই?”
–“অবশ্যই।”
কথাটা বলে তূর্যয় নিজের প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেট বের করে,হ্যারির দেওয়া সিগারেটের জ্বলন্ত দিকটার সাথে লাগিয়ে নিজের হাতের থাকা সিগারেট ফুঁকতেই তূর্যয়ের সিগারেটে লাল আভা জ্বলে উঠলো। ফুঁ করতেই তূর্যয়ের মুখ দিয়ে ধোঁয়ার সমাহার বেরিয়ে এলো।বুড়ো আংগুল দিয়ে কপালের এক পাশ চুলকিয়ে হ্যারিকে তূর্যয় বলে উঠলো,
–“চলো।”
–“নো নো,অফিসে একটু কাজ আছে।তুমি বাড়ি যাও,
আমি গার্ডের সাথে অফিসে যাচ্ছি।দেন,বাসায় যাবো।”
–“বিশ্রাম করো,হ্যারি।আমার কথা অমান্য করে এসেছো মিশনে।এখন তো রেস্ট নাও!”
তূর্যয়ের তীক্ষ্ণ কণ্ঠ।
–“তুমি ভালো বস,তাই আমাকে অনেক দিন টাইম দিয়েছো রেস্ট নিতে।আমি আমার ব্রো এর উপর সব কাজ চাপিয়ে দিয়েছিলাম।বাট এখন টাইম হলো,হার্ড ওয়ার্ক করার। সি ইউ সুন,ব্রো।”
কথাটা বলে হ্যারি তূর্যয়ের সাথে কোলাকুলি করলো।তূর্যয় আলতো হাতে হ্যারির পিঠে চড় দিলো।হ্যারি তূর্যয়ের গাল টেনে দিতেই তূর্যয় ঘুষি দিলো হ্যারির পিঠে।হ্যারি পেছনের দিকে হেঁটে গাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো।তূর্যয় রেগে চিল্লিয়ে বললো হ্যারিকে,
–“হাতের কাছে পেলে আছাড় দিতাম।অসভ্য ছেলে তুমি,হ্যারি।তোমার বোনই শুধু আমাকে আদর করবে, আর কেউ না।”
–“আই লাভ ইউ,ব্রো।তোমাকে বিরক্ত করতে আমার ভালো লাগে।”
হ্যারি হেসে গাড়িতে উঠে পড়লো।তূর্যয় হ্যারির সামনে না হাসলেও,হ্যারির গাড়ি চলে গেলে নিজের গালে হাত ঘষে হেসে উঠলো তূর্যয়,
–“অসভ্য,কোথাকার।”
তূর্যয় শান্তি মহলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সন্ধ্যার সময় হয়ে এসেছে।একটু পরে মোবাইলে মেসেজ এলে,সে দেখলো, কমিশনার আজকের মিশনের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে।তূর্যয় মোবাইল রেখে বাহিরের দিকে তাকালো।রাণীর ব্যাপারটা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে।রাণীর হঠাৎ এতটা দূর্বল হয়ে যাওয়া যেনো তূর্যয়ের মাথায় আসছে না।রাণীর কথা ভাবার মাঝে তূর্যয়ের মোবাইল বেজে উঠলো।পকেট থেকে মোবাইল হাতে নিতেই তূর্যয় রাণীর সেই মেয়ে ডাক্তারের নামটা দেখতে পেলো।এই সময়ে এই ডাক্তারের ফোন দেখে তূর্যয় একটু অবাক হলো।পরক্ষণে সে ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে ডাক্তার মহিলাটি বলে উঠলো,
–“তূর্যয় সাহেব,কেমন আছেন?আপনার ওয়াইফ কেমন আছে?”
–“হুম,ভালো।”
তূর্যয়ের শান্ত জবাব।
–“আপনি কি আপনার ওয়াইফের চিকিৎসা অন্য কোথাও করাচ্ছেন?না আসলে,আপনার ওয়াইফের রিপোর্টে আমি লিখে দিয়েছিলাম এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ পরে এসে আলট্রাসনোগ্রাফি করিয়ে নিতে।কিন্তু উনি তো এলেন না।আসলে,উনার প্রেগন্যান্সির পজেটিভ রেজাল্টের সময়ই তখন উনার প্রেগন্যান্সির এক মাস ওভার হয়েছিল।এখন তো প্রায় দুইমাস শেষের দিকে।তাই,ভাবছিলাম উনি তো এখনো আসেননি।আপনি পরিচিত মুখ দেখে,আপনার ওয়াইফের এই সুখবরের কথাটা আমার এখনো মনে আছে।”
–“আমি পরে ফোন করছি।”
কথাটা বলে তূর্যয় মোবাইল রেখে দিলো।তূর্যয়ের শরীরটা রাগে জ্বলে যাচ্ছে।এখন তূর্যয়ের মাথায় সবটা পরিষ্কার হচ্ছে।রাণীর তাকে কাছে আসতে না দেওয়া,
খাবারে অনীহা,বমি করা,অতিরিক্ত চিন্তা করা,কিছু শারীরিক পরিবর্তন,সবই তূর্যয়ের মাথায় একেবারে কাঁচের মতো স্বচ্ছ হয়ে গেলো।তূর্যয় রাগে দুইবার ঘুষি দিলো গাড়ির সিটে।দাতে দাঁত চেপে তূর্যয় বলতে লাগলো,
–“এতো বড় সাহস,তোর।আমার থেকে আমারই বাচ্চার খবর লুকিয়েছিস?নিজেকে কি ভাবিস তুই?আজ তোকে এমন শাস্তি দিবো,ভুলেও যেনো আমার থেকে আর কিছুই লুকানোর সাহস না পাস।”
রাগে তূর্যয়ের কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
_______
সাবিনার লাশ নিচে রাখা আছে।মনি তার মায়ের লাশ দেখে প্রথমে কান্না করতে করতেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।রাণীর নির্দেশে মনিকে তার ঘরে নেওয়া হলো। হুঁশ ফিরতেই রাণী মনিকে সামলিয়ে নিয়েছে।রাণী নিজেই অসুস্থ বোধ করছে।কিন্তু,মনিকে তার বাবা এবং মায়ের সব কর্মকান্ড এর রেকর্ডিং শোনালে মনির মনটা ঘৃণায়,বিদ্বেষে ভর্তি হয়ে গেলো।তারপরও মা তো মা ই হয়।তাই মায়ের হাজারো কুকীর্তির কথা জেনে মুখ চেপে কান্না করতে লাগলো সে।রাণী তূর্যয়ের অপেক্ষা করছে।মনিকে সামলাতে গিয়ে তার আর ফোন করা হলো না তূর্যয়কে।
আহমেদ নিজেই হতদন্ত হয়ে বসে আছে ফ্লোরে।নেশা কাটলেও মায়ের মৃত্যুর শোকটা কাটিয়ে উঠতে পারছে না সে।এই প্রথম হয়তো আহমেদের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।তার হিংসাত্মক মনটা যেনো আজ কোথায় মিলিয়ে গেলো।বাবার হাতে নিজের মা খুন হবে,এটা সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি;যদিও সে বাসায়ই ছিলো।তার একটাই আফসোস; আজ নেশা না করলে,মায়ের চেঁচামেচিতে সে তার মাকে বাঁচাতে পারতো।আহমেদ চোখের পানি মুছতে লাগলো।তার মা আর সে মিলে কতো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে,কতো মানুষকে মেরেছে সেটা সেই জানে।তার মাকেই তো ছোট বেলা থেকে সব সময় কাছে পেয়েছিল সে।বাবা তো নাম মাত্র ছিলো।আহমেদ বুঝতে পারছে,তার মায়ের খারাপ কৃতকর্মের ফলই আজ সে পেয়েছে।তবে আজ যেনো আহমেদের দুনিয়াটাকে খুব নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে।নিজেকে বেশ নিকৃষ্ট মনে হচ্ছে।নিজের কৃতকর্মের কথা ভাবতেই আহমেদ কুঁকড়ে উঠছে বারবার।তার মা তো ভালই ছিলো,অথচ আজ নেই তার মা দুনিয়ায়।নিজের মৃত্যুর ভয়টাও হঠাৎ স্মরণে এলো আহমেদের।অপরাধবোধ আর নিজের নিষ্ঠুরতার কি ফল ভোগ করতে হবে তাকে, এটা ভাবতেই আহমেদের মাথায় চক্কর দিতে লাগলো।নিজের মায়ের লাশটা দেখে এসে আহমেদ নিজেকে ঘর বন্ধী করে নিলো।বাবার কথা মনে আসতেই আহমেদের বুকটা ভার লাগছে।তার মনে হচ্ছে এখন হাসানকে মেরে তার মৃত মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে।নিচে গিয়েই জেনেছিল আহমেদ,তার বাবাই তার মাকে মেরে পালিয়েছে। আহমেদের মেজাজ চড়তে লাগলো।সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছে,
–“পাপ কাজের ইতি ঘটাবো তোমাকেই মেরে, বাবা।আমি তোমাকে মারলে আমার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি নিতে পারবো। কার মৃত্যু কখন হবে সেটা কেউ জানিনা।মায়ের মৃত্যুর মাধ্যমেই জীবনের মূল্যটা বুঝে উঠতে পেরেছি।মিস্টার হাসান তোমাকে মেরেই ভালো কাজের দিকে আমার জীবনটা আরম্ভ করবো আমি।”
আহমেদ বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলো।মায়ের মৃত্যুতে যেনো তাকে একেবারে ভেঙে দিয়েছে।শত চেষ্টা করেও মায়ের মৃত চেহারা আর দেখতে পারছে না সে।সেইসব কষ্টের মাঝেও আহমেদ কাউকে ফোন করলো হাসানের খোঁজ নেওয়ার জন্যে।
শান্তি মহলের ভেতরে যেতেই অনেক পুলিশ দেখতে পেলো তূর্যয়। বাহিরেও কিছু রিপোর্টার আর সাধারণ মানুষের দেখা মিলেছে।দুই তিনজন রিপোর্টার তূর্যয়ের সামনে আসতে নিলে ইকরাম হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিলে তাদের,তারা আর সামনেই এলো না।তূর্যয় উপরে উঠার সময় দেখলো সাবিনারর মৃত দেহ নিচে শায়িত আছে।সাবিনার মুখ খোলা রাখা হয়েছে। যার দরুণ,
তূর্যয় সাবিনার কপালে গুলির চিহ্ন দেখলো।একজন পুলিশ এসে তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“পোস্টমর্টেম করার জন্যে লাশ নিয়ে যেতে চাই।কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না লাশ নিয়ে যাওয়ার কাগজে স্বাক্ষর করার জন্যে।আপনি কি স্বাক্ষরটা করবেন?”
–“আমি উনার কেউ না।”
কথাটা বলে তূর্যয় উপরে চলে গেলো।
পুলিশ অফিসার আবারও হাবিলদারকে চিল্লিয়ে বললো,
–“এই কাগজ নিয়ে উপরেই যাও।আহমেদ স্যার থেকে সাইন নিয়ে এসো। মহা মুসিবতে পড়লাম। সাইন করতে না চাইলে বলবে,লাশ পঁচে যাবে দেরী হলে।”
হাবিলদার মাথা নাড়িয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
.
রুমে নক করতেই হায়া দরজার কাছে গেলো।তূর্যয়ের কণ্ঠ শুনে দরজা খুলে দিলো সে।মনিকে জড়িয়ে বসে আছে রাণী।তূর্যয়কে দেখতেই মনি দৌড়ে এসে তূর্যয়কে জড়িয়ে ধরলো।তূর্যয় মনির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“তুই চাইলে আমার বাড়ি যেতে পারিস।তোর ভাবীকে নিয়ে আমি আজই ব্যাক করবো সেখানে।”
মনি কিছু বললো না।সে এইখানে কার সাথেই থাকবে!আহমেদ নাম মাত্রই তার ভাই।কখনো ভাইয়ের মতো আচরণ করেনি।তার ধারণা,আহমেদ তারই মা বাবার মতো অমানুষ হয়েছে।হায়া মনিকে নিয়ে তার রুমে গেলো।রুম থেকে যাওয়ার সময় হায়া দরজা বন্ধ করে গেলো।
তূর্যয় নিজের কোট খুলে ছুঁড়ে মারলো মেঝেতে।রাণী একটু চমকে উঠলো তূর্যয়ের আচরণে।হায়ার মোবাইল ভুলক্রমে নিয়ে গিয়েছে হায়া।রাণীর মাথায় ঘুরছে,
হাসানের কথাটা এই মুহূর্তে তূর্যয়কে জানানো দরকার।কিন্তু,তূর্যয়ের রাগী চোখ জোড়া দেখে রাণীর সেই সাহস হচ্ছে না।সাথে রাণী অবাক হলো আজই ডার্ক হাউজে ফেরার কথা শুনে।রাণী তূর্যয়ের দিকে যেতে নিলেই তূর্যয় আলমারির দিকে চলে যায়।একে একে সব কাপড় ছুঁড়তে থাকে সে।রাণীকে যে সে আজ কি করবে এটাই ভেবে পাচ্ছে না।রাণী অস্থির হয়ে উঠলো।রাণী তূর্যয়ের কাছে গিয়ে তাকে বলতে লাগলো,
–“কি করছেন কি?আমি করছি সব।আপনাকে কিছু করতে হবে না।”
তূর্যয় থেমে গেলো।রাণীর দিকে ফিরে তার বাহু স্পর্শ করে তাকে চেঁচিয়ে উঠলো তূর্যয়,
–“তোর মেডিকেল রিপোর্ট কই?”
রাণীর পা শক্ত হয়ে গেলো মুহূর্তেই।সে বুঝতে পেরেছে রাণীর অবস্থা আজ তূর্যয় শেষ করবে।রাণীর বুঝতে দেরী হলো না,তূর্যয় তার প্রেগন্যান্সির খবর জেনে গিয়েছে।রাণীর প্রতি অতিরিক্ত কঠোর হতে গিয়েও কঠোর হলো না তূর্যয়।শুধুমাত্র রাগী কণ্ঠে সে রাণীকে বলে উঠলো,
–“কি সমস্যা?মুখ বন্ধ কেনো?”
রাণীর অশ্রুসিক্ত নয়ন থেকে গড়িয়ে পড়ল নোনা জল।আতংকে,ভয়ে,সবকিছুতে রাণীর শরীরটা খারাপ করছে।রাণী এক হাতে তূর্যয়ের গাল স্পর্শ করে তাকে বললো,
–“সরি।আমি আসলে…”
–“কি আসলে?আসলে কি?”
রাণীর কান্না মাখা কণ্ঠ আরো জোরালো হলো।সে ভীত হয়ে জবাব দিলো,
–“আম…আমি প্রেগন্যান্ট।”
তূর্যয় চোখ বন্ধ করলো।নিচের ঠোঁট গালের ভেতরে পুরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো সে।রাণীর এই কথাটাই যেনো তূর্যয়ের সব রাগ ভাঙিয়ে পানি করে দিয়েছে।কিন্তু,সেটা তূর্যয় রাণীর সামনে প্রকাশ করলো না।পূর্বের ন্যায় সে রাণীর গাল চেপে ধরে তাকে প্রশ্ন করলো,
–“আগে বলিসনি কেনো?”
–“আগে বললে,আমাকে এইখানে কখনোই রাখতেন না আপনি।এইসব আলো আঁধারের খেলা আর আমার ভালো লাগছিল না।তাই,আমি ভেবেছি সবটা ঠিক হলে তবেই আপনাকে বলবো।”
তূর্যয় রাণীর কোমরে হাত রাখলো কঠোর ভাবে।রাণী তূর্যয়ের শার্টের বুকের দিকের অংশ শক্ত করে চেপে ধরলো।
–“যদি তোর কিছু করে ফেলতো এরা?আমার বাচ্চার কথা শুনলে ওরা তোকে বাঁচিয়ে রাখতো?বল?ঠিকই বলেছিস,যদি আমি জানতাম এক মুহূর্তেও এইখানে থাকতে পারতি না তুই।অনেক তো করেছিস নাটক, সত্যি জানার। জানতে পেরেছিস?শখ মিটেছে এইখানে থাকার?আমার বউ বাচ্চার যদি কিছু হতো রাণী,
তোকে আমি!”
রাণী আর কিছু শুনতে পেলো না।অতিরিক্ত ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে তূর্যয়ের বুকে লুটিয়ে পড়লো রাণী।তূর্যয় বিচলিত হয়ে পড়লো।রাণীকে জড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।রাণীর মুখের চুল সরিয়ে রাণীর ঠোঁটে গভীর ভাবে চুমু দিলো তূর্যয়।রাণী ঘেমে যাচ্ছে।শার্টের হাতা দিয়ে রাণীর ঘাম মুছে দিয়ে তূর্যয় রাণীর গায়ের উপর থাকা মোটা চাদর সরিয়ে দিলো।রাণীর গায়ে হাত বুলিয়ে নিজের অধর জোড়া স্পর্শ করলো তার পেটে,
যেখানে তাদের ভালোবাসার চিহ্ন দিনদিন বেড়েই চলেছে।তূর্যয়ের ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত হলো আনন্দে।বাবা হওয়াটা যেনো প্রত্যেক ছেলের কাছেই স্বপ্নের মতো।তূর্যয়ের বুকটা ধুকধুক করছে।রাণীর উপর অর্ধেক ঝুঁকে রাণীকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে তার মুখোশ্রিতে হাজারো চুমু দিলো তূর্যয়।অতিরিক্ত স্ট্রেসে রাণী হুঁশ হারিয়েছে এই বুঝে তূর্যয় রাণীর শাড়ি ঠিক করে দিলো।তূর্যয় তাদের লাগেজে যাবতীয় সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।আর কখনোই তূর্যয় এই বাড়িতে ফিরবে না।
রাণীর জ্ঞান ফিরতেই দেখলো, তূর্যয় তিনটা লাগেজ ঠিক রেখেছে।রাণী উঠে বসলো।কিন্তু তূর্যয় তার দিকে ফিরলো না।অন্যদিকে ফিরেই রাণীকে সে বলে উঠলো,
–“এই মুহূর্তে যে ঘুম থেকে উঠেছে,সে যেনো নিজে ফ্রেশ হয়ে নেয়।আমরা এখনই বাসায় ফিরবো।”
রাণী হাসানের সত্যিটা জানতে চাইলো তূর্যয়কে।কিন্তু তূর্যয় সেইদিকে কর্ণপাত করলো না।রাণী তূর্যয়ের কোনো জবাব না পেয়ে রেগে নিজেই চলে গেলো ওয়াশরুমে। সে বাথরুমে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
–“বলবো না।এই সন্ত্রাসীকে কিছুই বলবো না।বউ প্রেগন্যান্ট জানা সত্বেও,লোকটা কি ব্যবহার করেছে আমার সাথে!এই লোকটা আসলেই একটা দানব।”
রাণী নিজের মুখে পানি ছিটালো।একটু পরেই বাথরুম থেকে বের হলে সে দেখলো,রুমে একটাও লাগেজ নেই।রাণী মুখ মুছলো নিজের আঁচলে।তূর্যয় রাণীর জুতা তার পায়ের কাছে রাখতেই রাণী স্যান্ডেল ছেড়ে সেগুলো পড়ে নিলো।রাণীর এক হাত ধরে তূর্যয় রাণীকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো।ধীরে হাঁটছে সে রাণীর জন্যে। সিঁড়ি পার করে নিচে নামতেই মনিকে আর হায়াকে দেখলো সে।আহমেদ নিচেই ছিলো।
সাবিনার লাশ নিয়ে গেলো পুলিশ।আহমেদ একবারও তাকালো না রাণীর দিকে।বুকটা যেনো তার ফেটে যাচ্ছে।তূর্যয়ের দিকে তাকালে আহমেদ,তূর্যয় অন্যদিকে ফিরে গেলো।আহমেদ মনির দিকে তাকিয়ে বললো,
–“চলে যাবি আমাকে একা রেখে?”
–“তুমি আমার সাথে কথা বলো না ভাইয়া।তোমাকে আমার সহ্য হয় না।তূর্যয় ভাইয়া আমি গাড়িতে যাচ্ছি।”
মনি চলে গেলো।হায়া রাণীকে ধরে তাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে।তূর্যয় আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
–“আশা করি,এইবার মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করবি।তোর মায়ের মৃত্যু থেকে কিছু শিখ।আলবিদা।আশা করি আমাদের আর কোনো দিন দেখা হবে না।”
আহমদের চোখ ভিজে এলো।রাণীর প্রতি তার ভাবনাটা মুহূর্তেই মিলে গেলো হওয়ায়।আহমেদ আর চায় না, কারো জীবন নষ্ট করতে।আহমেদ আপন মনে বলে উঠলো,
–“মায়ের মৃত্যু আমার জীবনের শেষ শিক্ষা।তোমার জীবনে আমি আর আসবো না,রাণী।ভালো থেকো তূর্যয়ের সাথে।সে তোমাকে সবকিছু থেকেই রক্ষা করবে,নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও।”
.
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ।রাণী রুমে বসে আছে।তূর্যয় সোফায় বসে কাজ করছে।এক মুহূর্তের জন্যেও দেখলো না সে রাণীকে।রাণী উঠে ব্যালকনিতে গেলো।খুবই বিরক্ত লাগছে রাণীর।তূর্যয় যেনো রাণীকে দেখেও দেখছে না।রাণী খুব চাচ্ছে তূর্যয় তার সাথে কথা বলুক।রাণী মনে মনে ভাবছে,
–“এই সন্ত্রাসী আমার সাথে কথা বলা তো দূরে থাক,
ফিরেই দেখছে না আমার দিকে।এখন যদি হাসানের আসল কথা মুখ দিয়ে বাহির করি আমি,তবে আমাকেই চিবিয়ে খাবেন উনি,সাথে হাসানকে মারতে বেরিয়ে পড়বেন।যেই সেই আমারই অবহেলার দিন আসবে।হাসান কিছুদিন হাওয়া খাক,এরপরই আমি বলবো এর আসল কথা উনাকে।”
পেটে হাত রেখে রাণী আবারও ভাবতে লাগলো,
–“এই বাবু,তোমার বাবা এমন কেনো?তুমি আসাতে সে কি খুশি হয়নি?নাহ,তোমার বাবা তো এমন না।তোমার বাবা তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে,এটাই আমার বিশ্বাস।”
কথাটা ভেবে রাণীর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।সে চেয়ারে একটু জোরে ধাক্কা দিতেই জোরে শব্দ হলো।রাণী মিথ্যা শব্দ করলো,”আহ্”।”
তূর্যয় ছুটে এলো বুলেটের গতিতে।রাণীর দুই বাহু ঝাঁকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কিসের শব্দ হলো,রৌদ্র?তুমি ঠিক আছো?”
রাণীর পেটে হাত রেখে আবারও সে রাণীকে প্রশ্ন করলো,
–“বাবু ঠিক আছে?”
রাণী মুখ বাঁকা করলো।সে তূর্যয়ের হাতে ধাক্কা দিয়ে বললো,
–“ঠিক আছি।”
রাণীকে এইবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তূর্যয়।
–“এই ছাড়ুন।আমার বাবু আর আমাকে আপনি ধরছেন কেনো?”
–“ভয় পেয়েছিলাম,রৌদ্র।খুব ভয় পেয়েছিলাম।”
তূর্যয়ের ভীত কণ্ঠ।
–“মাফ করে দিন না,সন্ত্রাসী।আর কখনোই কিছু লুকাবো না আপনার থেকে।সত্যি,প্রমিজ।”
তূর্যয় রাণীর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো।তূর্যয় রাণীর পেটে হাত ছুঁয়ে বললো,
–“বাবু আর তুমি দুইজনই আমার জান।তোমরা এসে আমার জীবনটা একেবারে সার্থক করে দিলো।”
রাণী তূর্যয়ের ঘাড়ে দুইহাত রাখলো।তূর্যয় বেশ গভীরভাবে স্পর্শ করলো রাণীর গলায়।রাণী আবেশে তূর্যয়ের ঘাড়ে খামচি দিলো।তূর্যয় মুহূর্তেই রাণীকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
–“কাল ডাক্তারের কাছে যাবে।আর আজ, উম না।সব সময় তোমার এই দানব সন্ত্রাসীর অতিরিক্ত ভালোবাসায় সিক্ত হতে হবে।”
রাণী লজ্জায় রাঙা হয়ে তূর্যয়কে বলে উঠলো,
–“বাবু আছে কিন্তু এখন।”
–“তাই,আরো দ্বিগুণ ভালোবাসা বাড়বে এখন তোর প্রতি,রৌদ্র। উফ,রৌদ্র! তোকে আজ আমি টুপ করেই গিলে ফেলবো।”
রাণী তূর্যয়ের দিকে তাকাতেই তূর্যয়ের অধর জোড়া রাণীর অধরের ভাঁজে চলে গেলো।
সিমি কান্না করছে।সাবিনার মৃত্যু তাকে যেনো সত্যি পঙ্গু বানিয়ে দিলো।পরক্ষণে সে চোখের পানি মুছে হাত মুঠ করে বলতে শুরু করলো,
–“তোকে মেরেই আমি দম নিবো রাণী।তোকে মারার পর,নিজের মৃত্যুকেও আমি পরোয়া করবো না।যতোই দেরী আর সুযোগের দরকার হোক।আমি নিবো।হাসান এখনো বেঁচে আছে।তোদের বিনাশ করতে সেই আমাকে সাহায্য করবে।বাদ বাকি আহমেদকে দিয়ে আমার কাম নেই।”
কথাটা ভেবে সিমির মেজাজ আরো ভীষন চটে গেলো তার দল থেকে একে একে মানুষ কমতেই লাগলো।
চলবে….
কপি করা নিষেধ।একদিন দেওয়া হয়নি গল্প,তাই আজ দুইদিনের টা দিয়ে দিলাম, ২পর্ব হিসেবে।অনেক বিশাল পর্ব।লিখতে আমার অবস্থা খারাপ হয়েছে।তাই সবাই জানাবেন কেমন হয়েছে গল্প।ভালোবাসা সবার প্রতি,
যারা আমাকে ভালোবাসেন,সাথে যারা বাসেনা তাদের প্রতিও।যেতে হবে অনেক দূর,সবার দোয়া কাম্য করছি।