#আলো-আঁধার🖤 পর্ব ৪৪
#লেখিকা:সালসাবিল সারা
৪৪.
রাণী প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছে।সেই যে তূর্যয়ের কোলে নিদ্রায় শায়িত হয়েছিল,সেই নিদ্রা থেকে এখনো জাগ্রত হলো না সে।রাণীর শরীরের অসুস্থতা তাকে সে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতে দেয়নি।তূর্যয় চিন্তিত মনে রাণীর দিকে তাকিয়ে আছে।রাণীকে গাড়ি থেকে নিজ কোলে করেই তূর্যয় তাকে রুমে নিয়ে এসে কাপড় বদলিয়ে দিয়েছে।অথচ রাণীর কোনো হুঁশই ছিলো না এইসবে।তূর্যয় ধীরে রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তার মাথায় যেনো আজ রাজ্যের চিন্তা।এইদিকে রিয়ার আত্মহত্যার ব্যাপারটাও তূর্যয়কে বেশ ভাবিয়ে তুলছে।রাণীর মুখে ক্লান্তির ছাপ ফুটে উঠেছে।তূর্যয় রাণীর পেটে হাত রাখলো।আজ উল্টো পাল্টা কিছু হলে রাণী আর তার বাচ্চা,দুইজনকেই হারাতে হতো তূর্যয়ের।আজকের হামলাকারী সেই লোক তূর্যয়ের শত্রুদের মধ্যে যে কোনো একজন শত্রু হবে,এমনটা ভাবছে সে।রাণীর কপালে নিজের অধর ছুঁয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো তূর্যয়।ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই তার মোবাইল বেজে উঠলো।রাণীর ঘুম ভেঙে যেতে পারে সেই চিন্তায় তূর্যয় লম্বা কদম ফেলে মোবাইলের দিকে এগিয়ে গেলো।ফরহাদের নাম্বার দেখে তূর্যয় ফোন রিসিভ করে চলে গেলো ব্যালকনিতে।তূর্যয় “হ্যালো” বলতেই অপর পাশ থেকে ফরহাদ বলে উঠলো,
–“বস,আপনাদের উপর আক্রমনকারী লোকটা আর বেঁচে নেই।সম্ভবত উনি আপনার কোনো শত্রু হবে।উনি পালাতে চাইলে হেড গার্ড উনাকে শুট করে, গুলি মাথার মাঝ বরাবর লাগায় লোকটার স্পট ডেথ হয়ে গেলো।”
তূর্যয় মাথা চুলকিয়ে ফরহাদকে বললো,
–“ঠিক আছে।”
ফরহাদ সালাম দিতেই তূর্যয় ফোন রেখে দিলো।রুমে এসে রাণীর পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো তূর্যয়।সারাদিনের ক্লান্তিতে থাকা তার চোখ জোড়া মুহূর্তেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
গভীর রাত।ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তিনটা ছুঁই ছুঁই।এমন সময় আবারও তীব্র শব্দে তূর্যয়ের মোবাইল বেজে উঠলো।তূর্যয়ের সাথে সাথে রাণীর ঘুমটাও ভেঙে গেলো।তূর্যয়ের বুকের উপর রাখা রাণীর হাতটা তূর্যয়ের টিশার্ট আঁকড়ে ধরলো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে তূর্যয়কে রাণী বলে উঠলো,
–“এই ফোন এসেছে তো আপনার।”
তূর্যয় একহাতে রাণীকে চেপে ধরে তাকে নির্দেশ দিলো,
–“ঘুমাও তুমি।আমি দেখছি।”
বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে নিতেই তূর্যয় দেখলো হাসানকে খোঁজার জন্যে যে লোককে ঠিক করেছিলো সে,সেই লোকটিই ফোন দিয়েছে এখন।রাণীর পিঠে হালকা ম্যাসাজ করে তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে তূর্যয় ফোন রিসিভ করে বললো,
–” নতুন কোনো খবর এসেছে?”
–“সরি স্যার,এই সময়ে ফোন করলাম।আসলে জনাব হাসানের হাদিস পাওয়া গিয়েছে।এতদিন যাবত উনি একটা গ্রামে লুকিয়ে ছিলেন নিজের বেশভূষা পরিবর্তন করে।তাই তাকে চিনতে পারছিলাম না।তবে আজ খবর এসেছে,আপনার এলাকার দিকেই জনাব হাসান এসেছেন কিছু জায়গা বিক্রি করবেন বলে।তাকে হাসান বলে কেউ চিনতে পারবে না।তবে জায়গার কাগজে তার স্বাক্ষর আর নাম চেক করে আমি ঠিক বুঝেছি,সেই লোকটি হাসান।উনি বর্তমানে একটা গেস্ট হাউজে উঠছেন।কিন্তু এখন উনি “নাইটমেয়ার বারে” আছেন আমার সামনেই।”
ডিটেক্টিভের কথায় তূর্যয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।সে বেশ কড়া ভাষায় ডিটেক্টিভকে নির্দেশ দিলো,
–“চোখে চোখে রাখো তাকে।আজ হাসানের এই দুনিয়ায় শেষ দিন।আমি আসছি।”
ফোন রেখে রাণীর দিকে ফিরতেই রুমের মিহি রঙের আলোয় তূর্যয় রাণীর অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকা মায়াবী চোখগুলো দেখতে পেলো।তূর্যয় রাণীর কপালে কপাল ঠেকিয়ে তাকে প্রশ্ন করলো,
–“রৌদ্রের ঘুম শেষ?ঘুমোতে বলেছিলাম,আর তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছো?ঘুমিয়ে পড়ো দ্রুত।আমার মিশন আছে এখন।”
–“আপনাকে কিছু বলার ছিলো।অসুস্থতার কারণে এই জিনিসটা আমার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।আসলে আপনার মাকে হাসা..”
রাণীকে সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে তার অধরে আঙ্গুল ঠেকালো তূর্যয়,
–“আমি সব জানি,রাণী।তাকে খুঁজতেই তো এতো মাস সময় লেগেছে আমার।তুমি এইসব নিয়ে বাড়তি চিন্তা করো না।তুমি শুধু আমার আর আমার বাবুর চিন্তা করো।”
রাণী তূর্যয়ের বুকে মাথা ঠেকালো।তূর্যয়ের নরম হাতের স্পর্শ রাণীর কোমরে বিচরন করছে।
–“এখনই বেরিয়ে যাবেন মিশনে?”
রাণীর চিন্তিত কণ্ঠ।
–“তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।এরপর বেরুবো।কাজ শেষ হলেই চলে আসবো। ঘুমা রৌদ্র।”
তূর্যয় রাণীর মাথায় আলতো ছুঁয়ে দিচ্ছে,এই কাজটা করলে রাণীর দ্রুত ঘুম চলে আসে। হলোই তা, অল্প সময়ে রাণী ঘুমের দুনিয়ায় হারিয়ে গেলো পুনরায়। হায়াকে ফোন দিয়ে তূর্যয় রাণীর কাছে আসতে বললো।তূর্যয় নিজের অস্ত্র নিয়ে রুম থেকে বেরুতেই হায়া তাদের রুমে প্রবেশ করলো। আড় চোখে তূর্যয় হায়ার কাজকর্ম লক্ষ্য করলো।নিশ্চিন্ত হয়ে তূর্যয় পকেটে হাত ঢুকিয়ে দ্রুত পা ফেলে হাঁটতে লাগলো।
হায়া তূর্যয়দের রুমে থাকা সোফায় শুয়ে পড়লো।তার এখন অন্যতম কাজ হলো,রাণীর দিকে খেয়াল রাখা।
____________
“নাইটমেয়ার বারে” আহমেদের প্রবেশ ঘটেছে।তূর্যয়ের ডিটেক্টিভের পূর্বে আহমেদের লোকেরা আহমেদকে হাসানের এইখানে আসার সংবাদটা দিয়েছিলো।সেই সূত্রেই আহমেদ এইখানে এসেছে।আহমেদের গায়ে নিজের মায়ের মৃত্যু প্রতিশোধ নেওয়ার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে।আহমেদ বারে প্রবেশ করে দুই তিনটা ফাঁকা গুলি ছুড়তেই বারের সবাই আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগলো।হাসান উঠে যাওয়ার পূর্বে আহমেদ গিয়ে হাসানের সামনে দাঁড়ালো।আহমেদকে দেখে হাসানের অল্প ভয় লাগলো।আহমেদের জায়গায় তূর্যয়কে দেখলে হয়তো হাসান এই জায়গায়ই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতো।হাসান আহমেদের গালে হাত রেখে তাকে বলে উঠলো,
–“কেমন আছিস আহমেদ?মনি কেমন আছে?”
–“বেশ ভালো। মনিও বেশ ভালো আছে।শুনেছি তূর্যয় তাকে কলকাতায় পাঠিয়েছে পড়ালেখার জন্যে।মায়ের মৃত্যু,নিজের পরিবারের ভেঙে পড়ার শোক নিতে পারছিলো না আমার বোন।তূর্যয়কে ঘৃণা করা ছোটকাল থেকেই শিখিয়েছো তুমি আর মা।অথচ দেখো,সেই ছেলেটাই আমার বোনের মনের শোক দূর করতে তাকে ভালো একটা জায়গায় পাঠিয়েছে। আর তুমি,বাবা হয়ে নিজেই নিজের সন্তানদের মাকে মেরে ফেলেছো।সবকিছুর শুরু তুমি করলেও বাবা,শেষ করবো আমি।আজ তোমাকে মেরে আমি আমার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবো,বাবা।”
আহমেদের কথায় চমকে উঠলো হাসান।সে পালাতে গেলে আহমেদ গুলি করলো হাসানের পায়ে।আহমেদ নানা কথা বলছে হাসানকে আর তাকে মারছে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে।ইতোমধ্যে হাসানের নাকমুখ দিয়ে রক্ত চুইয়ে পড়ছে।তূর্যয়ের ডিটেক্টিভ তাকে এইসব জানালে তূর্যয় নিজের গাড়ির স্পিড দুইগুণ বাড়িয়ে দিলো।অল্প সময়ে সে বারে আসলেও হাসানকে আর জীবিত অবস্থায় পেলো না।কিন্তু,নিজের মায়ের হত্যাকারীকে এইভাবে ক্ষমা সে করতে পারে না।তাই হাসানের মৃত দেহে তূর্যয় নিজের পিস্তল দিয়ে শুট করলো কয়েকবার।তূর্যয়ের গায়ের রক্ত যেনো কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছে না।রাগে সে রীতিমত থরথর করে কাঁপছে।চিল্লিয়ে তূর্যয় বলে উঠলো,
–“এতো অপরাধীকে আমি নিজ হাতে খুন করি,সেখানে আমি কেনো তোকে খুন করতে পারলাম না?কেনো আমার কাছে আগে ধরা পড়িসনি তুই?কেনো আমি এতবছর তোর সাথে থেকেও তোর আসল সত্যিটা জানলাম না?কেনো?”
আহমেদ উঠে এসে তূর্যয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,
–“তূর্যয় ভাই!সে যেমন তোমার মায়ের হত্যাকারী তেমন আমার মায়েরও।তাই নিজের রাগটা দমাতে পারলাম না আর।নিজ হাতেই নিজের বাবাকে খুন করেছি।তুমি আসবে জানলে আমি তাকে বাঁচিয়ে রাখতাম এরপর দুইজন একসাথে তাকে মারতাম।সরি।”
তূর্যয় আহমেদের দিকে রাগী চোখে তাকালো।তূর্যয় বারে উপস্থিত মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
–“এই ঘটনা কি কেউ দেখেছে?”
সবাই মাথা নেড়ে জবাব দিলো,
–“নাহ,দেখিনি।”
–“এই বারের ঘটনা বাইরে লিক করলে তাকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো না। মেরে দিবো একেবারে।তাও আমার নিজ হাতে।”
উপস্থিত সবাই বেশ ভয় পেলো তূর্যয়ের কথায়।তূর্যয়ের হিংস্রতা সবাই বেশ ভালো জানে।আহমেদ তার লোকদের উদ্দেশ্য করে বললো,
–“নদীতে ভাসিয়ে দাও এই লাশ।”
কয়েকজন এসে ধরে নিয়ে যাচ্ছে হাসানের লাশকে।তূর্যয় বসে পড়লো সেখানকার চেয়ারে।নিজের মায়ের মৃত্যুর সেই দৃশ্যগুলো আজও তার চোখে স্পষ্ট।নিজের মায়ের মৃত্যুটা যেনো তার জীবনের সবচেয়ে আঁধারময় অধ্যায়।হাসান আর সাবিনা তার মায়ের মৃত্যুর জন্যে দায়ী ছিলো।কিন্তু,তাদের একজনকেও তূর্যয় নিজ হাতে মারতে পারেনি।তারপরও তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পেয়েছে।প্রথমত সাবিনা মরলো তারই স্বামীর হাতে আর দ্বিতীয়ত আজ হাসান মরলো তারই ছেলের হাতে।এই ঘটনা দুইটি তূর্যয়ের মাথায় ঘুরঘুর করছে।এই যেনো এক প্রকৃতির লীলা খেলা।তার মায়ের ওয়াদাবদ্ধ হয়ে তূর্যয় হাসানদের সাথেই ছিলো সেই অত্যাচারের মধ্যেও।তার মায়ের ভাষ্যমতে; তূর্যয় কখনো হাসান,
সাবিনা বা তাদের পরিবারকে কোনো ক্ষতিই করেনি।হয়তো তার মায়ের সেই ওয়াদা আর ভালোবাসার জোরেই তূর্যয় হাসান আর সাবিনাকে নিজ হাতে মারতে পারেনি।কথাগুলো তূর্যয়ের মাথায় বারি খাচ্ছে বারবার।নিজের কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে পড়লো তূর্যয়।তারই পাশে বসলো আহমেদ।বিড়বিড় করে আহমেদ তূর্যয়কে বলতে লাগলো,
–“ছোট থেকেই তোমাকে অনেক হিংসা করেছি,ভাইয়া।আমাকে ক্ষমা করে দিও।বিদেশে চলে যাবো এইখানের শান্তি মহল বিক্রি করে।তবে তোমার মায়ের অংশটুকু রেখে যাবো।সেটা তোমার নামেই লিখে দিবো।জীবনে অনেক পাপ করেছি আর করতে চাইনা।মাফ করে দিও।”
আহমেদ নিজের দুই হাতের তালু এক করে মাফ চাওয়ার ভঙ্গি করলো তূর্যয়ের সামনে।
তূর্যয় মাথা তুলে তাকালো আহমেদের চোখের দিকে।তার চোখে যেনো আজ আকাশ সমান অনুশোচনা।তূর্যয় আহমেদকে থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,
–“নিজের ভুল বুঝেছিস এটাই অনেক।ভালো থাক।ক্ষমা করেছি তোকে।”
তূর্যয় নিজের ডিটেক্টিভকে তার মিশনের টাকা বুঝিয়ে দিলো।ঘড়ির কাঁটা এখন সাতটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।থানা,কেইস,সবকিছু সামাল দিতে অনেকটাই সময় লেগেছে আহমেদ আর তূর্যয়ের।কারণ,হাসান অনেক প্রভাবশালী একজন মানুষ।তবে আহমেদ আর তূর্যয় কোনো ক্লু রাখেনি সেই বারে।বার থেকে বেরিয়ে আসার সময় আহমেদ ডেকে উঠলো তূর্যয়কে,
–“তূর্যয় ভাই!”
তূর্যয় ঘাড় বাঁকা করে পিছে ফিরলো,
–“বল।”
–“শেষ বারের মতো একবার জড়িয়ে ধরতে দিবে আমায়?”
তূর্যয় কোনো জবাব দেওয়ার আগেই আহমেদ তূর্যয়কে জড়িয়ে ধরলো,
–“আমি জানি,তুমি কখনোই ‘হ্যাঁ’ বলতে না।রাণীকে নিয়ে সুখে থাকো অনেক।ভবিষ্যতের বাবুটার জন্যেও শুভকামনা রইলো।সবকিছুর জন্যে আবারও আমি দুঃখিত অনেক।”
–“ভালো থাকিস।ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা কর।”
আলতো হাতে আহমেদের মাথায় হাত বুলিয়ে তূর্যয় হাঁটতে আরম্ভ করলো।আহমেদ অশ্রুসিক্ত নয়নে সেদিকে তাকিয়ে আছে।চেয়েও সে এখন তূর্যয়ের পরিবারে আসতে পারবে না।অগত্য আহমেদ সবার থেকে দূরে ভিনদেশে চলে যাবে বলে সেই সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে।
_______
বাসায় ঢুকতেই তূর্যয়ের নজর পড়লো লিভিংরুমের দিকে।এতো সকালে সেইখানে লাইট জ্বলন্ত দেখে তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে নিলো।লিভিংরুমের দরজায় যেতেই তূর্যয় দেখলো রাণী হায়ার কাঁধে মাথা রেখে কান্না করছে।তূর্যয়ের অন্তর কেঁপে উঠলো।সে রাণীর কাছে যেতেই হায়া উঠে পড়লো রাণীর পাশ থেকে।তূর্যয় রাণীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রাণীর পেটে হাত রেখে বললো,
–“রৌদ্র?ঠিক আছো তুমি?কান্না করছো কেনো?বউ?”
তূর্যয়ের হাত সরিয়ে দিলো রাণী।কোনো কথা না বলে আবারও সে কান্নায় ভেঙে পড়লো।তূর্যয় হায়ার দিকে তাকাতেই হায়া বলতে শুরু করলো,
–“ভাবীর বান্ধবী সিমি আপু ফোন করেছিলো একটু আগে।উনার বান্ধবী রিয়াকে আজ জোহরের নামাজের পর দাফন করা হবে এটাই জানিয়েছে।রিয়া আপুর মৃত্যুর কথা শুনে কান্না করছে ভাবী।”
–“কেনো ফোন করেছে ঐ মেয়ে?আমি সালেহা মাকে বলেছিলাম আমি সকালে রাণীকে সব বুঝিয়ে নিয়ে যাবো সেইখানে।আমি বুঝি না,মেয়ে মানুষেরা সবসময় বেশি বুঝে কেনো!এই মেয়ের মধ্য রাত পর্যন্ত কোনো হুঁশ ছিলো না।তাকে আমি তার বান্ধবীর মৃত্যু খবর জানাবো কিভাবে?রৌদ্র!কান্না বন্ধ কর।দেখ তোর শরীর খারাপ করবে কিন্তু।”
রাণীর ভাঙ্গা কণ্ঠে তূর্যয়কে জবাব দিলো,
–“আপ..আপনি আসলেই একটা দানব।কিভাবে আমাকে বললেন না রিয়ার মৃত্যুর খবর।আমার জলজ্যান্ত বান্ধবী কিভাবে আত্মহত্যা করলো!আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।আপনি আমাকে কাল রাতে জানাননি কেনো?আমি এখনই যাবো সেখানে।”
রাণীর কান্নার মাত্রা বাড়তে লাগলো।
–“চুপ চুপ।একদম চুপ।হায়া নাস্তা রেডি করো।তোমার ভাবীর ওষুধ খাওয়া লাগবে।গো ফাস্ট,হায়া।”
হায়া মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
রাণীর পাশে তূর্যয় বসতেই রাণীর হাত দিয়ে তাকে দূরে সরিয়ে দিলো।তূর্যয় নিজের হাতের তালুর সাহায্য রাণীর গাল থেকে চোখের পানি মুছে দিয়ে তাকে বলে উঠলো,
–“এই রৌদ্র!সরি বাবা।আর কান্না করা লাগবে না।দেখো পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়।জন্ম হলে মৃত্যু অনিবার্য।এইযে আমাকে তোমাকে রিয়ার মতোই একদিন চলে যেতে হবে না ফেরার দেশে।তুমি কান্না করলেও তো সে আর ফিরে আসবে না।এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো নাস্তা করে ওষুধ খাও।এরপর আমরা যাবো একসাথে সেখানে।”
রাণীর মনটা যেনো কিছুতেই মানছে না।তূর্যয় তার দিকে হাত এগিয়ে দিলে রাণীর তূর্যয়ের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলো।
.
বেলা এগারোটা নাগাদ তূর্যয় এবং রাণী সেখানে
পৌঁছালো।রিয়াকে শুইয়ে রাখা হয়েছে ফ্লোরে সাদা কাপড়ে মুড়ে।সে যে আত্মহত্যা করেছে,এটা এতিম খানার মানুষেরা ছাড়া কেউ জানেনা।রাণীকে তূর্যয় বেশ কায়দায় সামলিয়ে রেখেছে।বাচ্চার কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে তূর্যয় রাণীকে।যেনো রাণীর এমন কান্নাকাটি বাচ্চা বা রানীর ক্ষতি করতে না পারে।সিমির চোখে পানি থাকলেও তার মনে কোনো আফসোস নেই।কারণ,রিয়াকে তো সেই খুন করেছে নাজিমের সাহায্যে।গতকাল রাতে রাণীকে মারার জন্যে ঠিক করা সেই লোককে ফোনে নির্দেশনা দিতে গেলে রিয়া সব শুনে নেয়।রিয়া তূর্যয়কে সব বলে দিবে বললে,সিমির মেজাজ এতোই খারাপ হয়ে যায়;সে নিজের হিংস্র বেশে এসে রিয়াকে বিছানায় ফেলে বালিশ চাপা দিয়ে প্রথমে কাবু করে ফেলে।রিয়া নিঃশ্বাস না নিতে পেরে হুঁশ হারালে সিমি নাজিমকে ফোন করে রুমে আনিয়ে রিয়াকে বেহুঁশ অবস্থায় সিলিংয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিল।অতঃপর রিয়ার মৃত্যু তখনই সংঘটিত হয়।
নাজিম এর পর থেকেই একটা শকে আছে।তার চোখজোড়া স্থির। কাল সবাই এতিম খানার নতুন দিকটা দেখতে গেলে,সেই সুযোগ নিয়েই এতো বড়ো একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললো নাজিম আর সিমি।নাজিমের মুখে আতংকের ছাপ থাকলেও,সিমি ভাবলেশহীন।
সব রীতি শেষ করে রিয়াকে দাফন করা হলো।বাসায় চলে যাওয়ার মুহূর্তে রাণী তূর্যয়কে অনুরোধ করলো,
–“আজ এইখানে থাকি আমি,প্লিজ?সবার সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে আমার।”
–“হ্যাঁ,ভাইয়া।রাণী আজ আমাদের সাথেই থাকুক।রিয়ার শোক আমাদের সবাইকে ভেঙে দিয়েছে।তাই রাণী আজ আমাদের সাথেই থাকুক।”
সিমির নাটকীয় কণ্ঠ।তার মনোভাবে যেনো অন্যকিছু চলছে।
–“রাণীকে একা থাকার নির্দেশ দেওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে।আমিও থাকবো আজ এই রাত এইখানে।”
রাণী খুশি হলো।
–“এই দানবটা ‘না’ বললো না, এটাই বড় কিছু।তাছাড়া আমি নিজেও উনাকে ছাড়া থাকতে অভ্যস্ত নই।”
রাণী মনে মনে ভাবলো।
সেই রাত রাণী আর তার বন্ধুবীরা রিয়ার স্মৃতিচারণ করে কাটালো।শেষ রাতের দিকে তূর্যয় জোরপূর্বক রাণীকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।সালেহার জন্যে থাকা আরাম করার রুমেই থেকে ছিলো রাণী আর তূর্যয়।বেশ সকালে খবর এলো তূর্যয়ের অফিসের কিছু গার্ড নিহত হয়েছে।তূর্যয়ের অফিসে ঢুকে জরুরী গোপন তথ্য চুরি করার সময় এই ঘটনা ঘটে। অপরাধীরা তারই অফিসের লোক ছিলো।কেউ সেই তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি,তূর্যয়ের কড়া গার্ডের জন্যে।এই মামলা অনেক সিরিয়াস হওয়ায় তূর্যয় সকাল সকাল উঠে পড়লো।অগত্য রাণীর কোমরে কিছু একটা গুঁজে দিয়ে, রাণীকে রেখে তূর্যয় কলি,সালেহা আর সিমিকে তাকে দেখে রাখতে নির্দেশ দিয়ে বলে উঠলো,
–“আমি হায়াকে আসতে বলেছি।রাণী ঘুম থেকে উঠলে হায়ার সাথে বাড়ি চলে যাবে।আশা করি রৌদ্রের খেয়াল রাখবে সবাই।একটু কিছু ভুল হলে,আমি কিন্তু একজনকেও ছাড়বো না।ঘুম অবস্থায় তাকে নিয়ে গেলে আবারও কান্নাকাটি করবে সে।সালেহা মা,একটু বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিবেন তাকে বাসায়।আর এখন ঘুম ভাঙিয়ে দিলে তারই ক্ষতি হবে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলো।একটু দেখে রাখবেন।”
–“হ্যাঁ বাবা।যাও।আমি আছি তো।চিন্তা করবে না একদম।”
সালেহার কণ্ঠ।
তূর্যয় মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো।রাণীকে নিয়ে যেনো সে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।তাই রাণীর জন্যে একজন গার্ড রেখে গেলো সে,যে তার বেশ পরিবর্তন করে এতিম খানার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
সিমি রাণীকে একা পেয়ে মাথায় একটা পরিকল্পনা সাজিয়ে নিলো।নাজিমকে শামিল করলো সে এটাতে।নাজিম এতো অপরাধ করেছে,এখন সে সিমির কথায় ‘না’ বললে তারই ক্ষতি হবে।তাই নিজের অপরাধ ঢাকতে সে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়লো।নাজিম সিমির পরিকল্পনা মতো কাজ করতে লাগলো।
হায়া আসার আগেই,সিমি রাণীর রুমে গিয়ে সেখানে থাকা একটা চেয়ার জোরে ফেলে দিলো। এতেই রাণীর ঘুম ভাঙলো।রাণী চমকে উঠতেই সিমি রাণীকে বলতে লাগলো,
–“উঠেছিস তুই?চল না রিয়ার কবর দেখে আসি!”
রাণী চোখ কচলে বসে সিমিকে বললো,
–“উনি কোথায়?”
–“অফিসে গিয়েছেন জরুরি কাজে।তূর্যয় ভাই তোকে কখনোই রিয়ার কবরে নিয়ে যাবে না।তাই,চল আমরা গিয়ে দেখে আসি।”
–“আচ্ছা।”
রাণী একমত হলো সিমির সাথে।ফ্রেশ হতে গিয়ে নিজের কোমরে গুজানো সেই জিনিসটির আভাস পেলো রাণী।এই ডিভাইসের সাহায্যে তূর্যয় রাণীর লোকেশন দেখতে পাবে।রাণী আর মাথা ঘামালো না সেদিকে।ডিভাইসটি আবারও নিজের কোমরে গুঁজে দিয়েছে সে।তূর্যয় তার সব কথা শুনে,তাই রাণী তূর্যয়কে আর না রাগিয়ে সেই ডিভাইসটি বন্ধ করলো না। সিমির কথায় সালেহা থেকে লুকিয়ে তারা বেরিয়ে পড়তেই সেই লোকটি তূর্যয়কে ফোন করে সব জানিয়েছে।লোকটিকে তাদের ফলো করতে বললো তূর্যয়।এইদিকে নিজের মোবাইলের ডিভাইসে সে রাণীর লোকেশন দেখছে।রাণী বা সিমি কারো হাতেই মোবাইল নেই।তূর্যয় সকল কাজ রেখে গাড়ি বের করে রাণীর ডিভাইসে দেখানো লোকেশনে যেতে লাগলো।রাণীকে নিয়ে কোনো রিস্ক তূর্যয় নিতে চাই না।
বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর, এক পর্যায়ে সিমি আর রাণীর সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালে সিমি হুইল চেয়ার থেকে উঠে রাণীকে টেনে সেখানে বসিয়ে দিলো।রাণী সিমিকে হাঁটতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।রাণী কিছু বলার আগে তার হাত,মুখ,চোখ বেঁধে দেওয়া হলো।তূর্যয়ের ঠিক করা লোকটিকে লক্ষ্য করতেই সিমি তাকে গাড়ি চাপা দিতে বললো ড্রাইভারকে।অগত্য লোকটি তূর্যয়কে ফোন করার আগেই লোকটি গাড়ির নিচে চাপা পড়লো।তার দম সেখানেই শেষ।
এইদিকে রাণীর লোকেশন দেখে তূর্যয়ের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ঐ লোকটিও ফোন ধরছে না।তূর্যয়ের বাকি রইলো না বুঝতে, সিমিই এইসব কুকর্মের প্রধান আসামি।তূর্যয় তার কিছু গার্ডকে সেই লোকেশন পাঠালে তারাও রওনা দিলো সেই জায়গায়।তূর্যয় গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে বলতে লাগলো,
–“আজই তোর দুনিয়ায় শেষ দিন,সিমি।আমার রৌদ্র আর বাচ্চার একটু ক্ষতিও আমি সহ্য করবো না।বন্ধু নামক শত্রুকে আজ চিরবিদায় জানানোর সময় এসেছে তোমার,রাণী।চিন্তা করো না রৌদ্র,আমি আসছি। সব ঠিক থাকবে ইন শাহ্ আল্লাহ্।”
.
আবছা অন্ধকার রুমে বাহির থেকে কিছু আলো আসছে।রাণীর পেট প্রচুর ব্যাথা করছে।রাণীর বুকটা ধকধক করছে সমান তালে।চোখে কিছুই দেখছে না সে এখনো।কিন্তু তার বুঝতে দেরী নেই,তার বান্ধুবি সিমি একটা খারাপ মেয়ে।ঠিক একটু পরে সিমি হেঁটে এসে রাণীর চোখ,মুখ,হাতের বাঁধন খুলে দিলো।রাণী প্রথম কয়েক মিনিট চোখে অন্ধকার দেখলো।এরপর ধীরে ধীরে তার চোখের সামনে সব পরিষ্কার হতে শুরু করলো।সে সিমিকে হাঁটতে দেখে অবাক হয়ে ধীর গলায় বলে উঠলো,
–“তুই দাঁড়িয়ে আছিস!”
–“হ্যাঁ,সেই আগে থেকেই দাঁড়াতে পারি।কিন্তু তোদের সেবা পেতে আমার ভালো লাগছিলো তাই এই পঙ্গু হওয়ার নাটক করেছি আমি।রিয়ার মতো এখন তুইও মরবি।যদিও আমি রিয়াকে মারতে চাইনি,তবে তোকে মারার প্ল্যান শুনে নিয়েছিল সে।এরপর যদি তূর্যয় আমাকে মেরে ফেলতো,তাহলে কি আমি তোকে মারতে পারতাম?তূর্যয় আমাকে এর আগেই মেরে ফেলতো।আমি জানি,এখন তোকে মেরে ফেললে আমিও মরবো তূর্যয়ের হাতে।কিন্তু আফসোস নেই আমার।তোকে মেরে আমি মরলেও, আমার শান্তি লাগবে।”
–“এতো রাগ আমার প্রতি?কিন্তু কেনো?”
রাণীর কষ্ট মাখা কণ্ঠ।
–“হিংসা।তোর প্রতি হিংসায় আমাকে এমন বানিয়েছে।দেখ না, তুই ই বল।ছোটকালে ম্যাডাম ভালো স্কুলে পড়িয়েছে তোকে,মাটির জিনিস ভালো বানিয়ে নাম বানিয়েছিলি তুই,সবাইকে তুই টাকা দিয়ে নিজেকে মালকিন ভাবতিস,আমার এক্সিডেন্ট এর পর আমাকে কেমন যেনো করুণা দেখাতি তুই।সব ভালো তোর সাথেই হতো।আমার সাথে কিছুই না।তোর উপর হিংসা জমেছিল আমার সেই ছোট কালেই।ছোটকাল থেকে ভাবতাম,কিভাবে তোকে নিঃশেষ করা যায়।সাবিনা আর রালেহার সাথে হাত মিলিয়ে অনেক কুকাজ করেছি অন্যের সাথে তোর সাথে।তোকে মারার প্রত্যেকটা প্ল্যান আমিই তাদের বলতাম।আদর করে আমার কাছেই তোদের জমানো টাকায় কেনা মোবাইল দিয়ে রাখতি।তোর সেই আদরের ফায়দা তুলেই আজ আমি এইসব করেছি।আমি তোকে ঘৃণা করি,রাণী।অনেক বেশি ঘৃণা করি।তোর এই রূপ,এই সুখ আমার সহ্য হয় না।আমি তোকে মেরেই ফেলবো।”
হাতে একটা লাঠি নিয়ে কান্না করে বসে পড়লো সিমি।
রাণীর সব এলোমেলো লাগছে।যাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালো বন্ধু ভাবতো, সেই আজ এতো বড় শত্রু তার।এমনকি রাণী এটা ভেবেই অবাক হচ্ছে,রাহেলা আর সাবিনার সাথে এই সিমি তাকে খুন করতে চেয়েছে।রাণীর গা হিম হয়ে উঠে।রাণী চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।সে সিমির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলতে থাকে,
–“তোর ধারনা একেবারে ভুল,সিমি।আমি কখনোই তোর ক্ষতি চায়নি বা তোকে করুণা করিনি।তুই ভুল ভাবছিস,দোস্ত।আমি তোকে আমার বোনের মতোই ভালোবাসি।”
–“বোন?বোন মানিস তো আমাকে!তবে এই বোনের হাতেই মর।আল্লাহ্ হাফেজ,রাণী।”
কথাটা বলে রাণীর পেটের দিকে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে লাঠির সাহায্যে আঘাত করতে এগিয়ে গেলো সিমি।আতংকে রাণীর চোখ বিশাল আকার ধারণ করলো নিমিষেই।এখনই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে তার,
একেবারেই শেষ।
চলবে।
কপি করা নিষেধ।নেক্সট পার্ট আগামীকাল দিবো ইন শাহ্ আল্লাহ্।সম্ভবত আগামীকাল শেষ পর্ব হবে এই গল্পের।সবাই সাথে থাকার জন্যে ধন্যবাদ অনেক।আর,বেশিরভাগ সাইলেন্ট রিডার্স এর কাছে গল্প পৌঁছায় না।আপনারা লাইক,কমেন্ট না করলে নিউজফিডে গল্প যায় না হয়তো।তাই জানিয়ে দিলাম ব্যাপারটা।কেমন লেগেছে গল্প অবশ্যই জানাবেন।