#চৈত্রের_বিকেল
#পর্ব_২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
চৈত্রীর গালে চারটা থা’প্প’ড় গুনে গুনে যদি দিতে পারত তাহলেই মনে শান্তি পেত কাব্য। বেশি জোরে দেওয়া যাবে না। ছোটো ছোটো করে চড় দিতে হবে। নতুবা মেয়েটা আবার ব্যথা পাবে। সে গায়ে পাঞ্জাবি জড়াতে জড়াতে এসব ভাবছিল আর হাঁচি দিচ্ছিল। গ্রামের নদী কিংবা পুকুরের পানিতে গোসল করার স্বভাব তার নেই একদম। সে আয়নায় দেখল চৈত্রী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এ ঘরের দিকেই আসছে।
কাব্য রেগে তেড়েমেড়ে এগিয়ে যায় চৈত্রীর দিকে। তখন সবাই ছিল বলে কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু এখন তো শিকার নিজে থেকে ধরা দিয়েছে। অবশ্য এই রুমে কাব্য ছাড়াও বাকি বন্ধুরা রয়েছে। বন্ধুদের টপিক আলাদা। খু’ন করে লাশ গুম করে ফেললেও ওরা কাউকে কিছু জানাবে না। তবে এখানেও একটা ‘কিন্তু’ রয়েছে। বাকিদের থেকে শুভ্র তো আলাদা। চৈত্রী যেহেতু তার কাজিন সে নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবে না। সেসব চিন্তা তার মাথায় এলেও মনের মধ্যে বেশিক্ষণ রাখতে পারল না। সে একদম চৈত্রীর নিকটে এগিয়ে গিয়ে বলল,
‘তুমি আমার সাথে এমনটা কেন করলে?’
চৈত্রী দরজা ধরে পেছনের দিকে হেলে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ এমন আক্রমণে একটু ভয় পেয়েছে বটে! তবে সে পুরোদমে এবার সাহসী হয়ে উঠল। কিছু বলতে যাওয়ার পূর্বে রুমে একবার চোখ বুলিয়ে দেখল সবাই রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে আছে।
হুট করে চৈত্রী ফ্লোরে বসে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে কাব্য। চৈত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেন কেন?’
কান্না শুনে উপস্থিত সবাই এগিয়ে আসে। শুভ্র চৈত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘কী হয়েছে চৈত্রী? কাঁদছিস কেন?’
চৈত্রী ঠোঁট বাঁকিয়ে আঙুল দ্বারা কাব্যর দিকে ইশারা করল। ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,
‘উনি ফেলে দিছে।’
কাব্য হকচকিয়ে বলে,’আমি ফেলি নাই।’
‘আপনি না ফেললে আমি পড়লাম কীভাবে?’
‘তুমি ইচ্ছে করে পড়েছ।’
‘মিথ্যে কথা। ফেলে দিয়ে আবার মিথ্যে কথাও বলছেন।’
শুভ্র ভ্রুঁ কুঁচকে কাব্যর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে জানে কাব্য কতটা দূরন্ত প্রবণ আর ফাজিল। অন্যদিকে সে তার বোনকেও খুব ভালো করেই চেনে। পিচ্চিগুলাও এত চঞ্চল নয়; যতটা চৈত্রী নিজে! সে কাকে রেখে কাকে বিশ্বাস করবে বুঝতে পারছে না। এদিকে আজ তার বিয়ে। কোনো রকম ঝামেলা না হলেই তো ভালো। সে গম্ভীর হয়ে বলল,
‘আচ্ছা ঠিক আছে। বাদ দে এখন এসব। কাব্য হয়তো খেয়াল করেনি।’
শুভ্র চৈত্রীকে ধরে উঠাতে চাইল। হাত সরিয়ে নিল চৈত্রী। সে গাল ফুলিয়ে বলল,
‘এখন তো বন্ধুর সাফাই-ই গাইবে।’
এরপর সে তিতাসের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,’আমায় একটু উঠান তো।’
তিতাস হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে চৈত্রীকে ধরে ওঠায়। চৈত্রী চলে যাওয়ার পর শুভ্র মুখ গোমড়া করে কাব্যকে বলে,
‘শুধু শুধু ও-কে ফেলে দিয়ে কী হলো?’
কাব্য বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’তুই ওর কথা বিশ্বাস করছিস?’
‘তাহলে কি তোর কথা বিশ্বাস করব?’
কাব্য আর কিছু বলল না। শুধু মনে মনে এইটুকু ঠিক করে রাখল, সে এবার আর চৈত্রীকে ছেড়ে কথা বলবে না। ছোটো বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। বাট এই মেয়ের ভেতরে যে শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল করে সেটা সে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। সে যখন ক্রোধ নিয়ে তখনো দাঁড়িয়ে ছিল, চৈত্রী উঁকি দিয়ে কাব্যকে চোখ টিপ দিয়ে যায়। কাব্য বেশ বুঝতে পারে, এতক্ষণ সে লুকিয়ে শুভ্রর বলা কথাগুলো শুনেছে। এবং সে তার উদ্দেশ্যে সাক্সেস। এবার কাব্যর ক্রোধ আরও বেড়ে যায়। সে বিড়বিড় করে বলে,
‘অ’স’ভ্য পিচ্চি বাচ্চা! তোমার বারোটা যদি না বাজাই আমি তো দেখিও।’
.
বরযাত্রীতে যারা যাবে সবাই রেডি। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে চৈত্রী। তার বরযাত্রীতে যাওয়া হবে না। এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কি আর বউ আনতে যাওয়া যায়? বাচ্চাপার্টি সব হুড়মুড় করে দৌঁড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠেছে। সমুদ্র মাঝপথ থেকে ফিরে আসে। চৈত্রীকে বলে,
‘তুমি মন খারাপ কোরো না সুইটহার্ট। আমি খুব জলদি বউ নিয়ে ফিরে আসব।’
চৈত্রী ভ্রুঁ কুচকে তাকায়। সমুদ্রের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, সে সমুদ্রের দুঃখের সাগরে ভাসছে। শুভ একটা দিন, তাই সে সমুদ্রকে বকল না। কাব্য তখন পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইচ্ছে করে চৈত্রীকে ধাক্কা দিয়ে যায়। পড়তে গিয়ে সে আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছিল না। সামনে তখন কাব্য ছিল সীমানার মধ্যে। সে আর উপায়ন্তর না পেয়ে কাব্যর পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরে ঝুলে পড়েছে।
সমুদ্র তখন চেঁচিয়ে উঠে বলে,’হায় আল্লাহ্! হায় আল্লাহ্! তুমি আমার সুইটহার্টকে গলায় ঝুলিয়ে নিলে কেন? সুইটহার্ট আমার। আমার গলায় ঝুলবে।’
কাব্য চৈত্রীকে সরিয়ে দেয়। চাপাস্বরে বলে,’গলায় ঝুলে পড়ার স্বভাব কেন এত?’
‘বাজে কথা বলবেন না একদম।’
‘বাজে কথা তুমি বলো মিথ্যাবাদী!’
কাব্যকে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র। সে ভীষণ রেগে আছে। রেগে রেগে কাব্যকে বলছে,
‘তুমি আমার সুইটহার্ট থেকে দূরে থাকবে বলে দিচ্ছি।’
কাব্য যাওয়ার আগে আঙুল নাড়িয়ে ইশারায় চৈত্রীকে বলে,’তোমার খবর আছে।’
চৈত্রী ভেংচি কাটিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
.
বাড়ি বলতে গেলে এখন প্রায় ফাঁকা। আত্মীয়-স্বজন সবাই গেছে বউ আনতে। শুভ্রর মা, রুহানিয়া আর চৈত্রী রয়ে গেছে। সকালে ঘুম ভাঙার পর আর রুহানিয়ার দেখা পায়নি চৈত্রী। হুট করেই সে উধাও। শুভ্ররা যাওয়ার পর বাড়িতে ফিরেছে। কোথায় ছিল জানতে চাওয়ায় বলেছে,
‘বান্ধবীর বাসায়।’
চৈত্রী উদাস নয়নে ধীরে ধীরে হাঁটছিল। বাড়ির পেছন দিকটায় ঢোলকলমির গাছ। পেয়ারা গাছ বেয়ে ওপরে ওঠছে। বেগুনি রঙের বেশ কয়েকটা ফুলও আছে। একটা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে সে রুহানিয়ার ঘরে যায়। বিছানার ওপর আধশোয়া রুহানিয়ার শরীর কাঁপছিল। দূরত্ব কমার পর বোঝা গেল সে কাঁদছে।
‘আপু? কী হয়েছে?’
চৈত্রীর গলা শুনে উঠে বসে রুহানিয়া। শব্দ করে কেঁদে জড়িয়ে ধরে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে চৈত্রী। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’
চৈত্রী জানে না কী হয়েছে। কেনই বা রুহানিয়া এভাবে কাঁদছে! তবুও সে রুহানিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সে জিজ্ঞেস করারও সাহস পাচ্ছে না কীসের এত কষ্ট আপুর!
রুহানিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে নিজে থেকেই বলে,’এক তরফা ভালোবাসায় এত কেন কষ্ট বলতে পারিস?’
চৈত্রীর ভালোবাসা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। অসংখ্য ভালোবাসার প্রস্তাব পেলেও কখনো সম্পর্কে জড়ানো হয়নি তার। বান্ধবীদের দেখলে হঠাৎ মনে শখ জাগত, প্রেম কী জিনিস জানার জন্য! কিন্তু বাবা-মায়ের ভয়ে সেই শখ শখ পর্যন্তই আটকে আছে। তবে সে তার বান্ধবীদের হাসতে যেমন দেখেছে, কাঁদতেও দেখেছে। কিন্তু এমনভাবে তো দেখেনি। রুহানিয়া আপু ভালোবাসে কাকে?
‘শুভ্র ভাইয়ের বিয়েটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।’
এবার বিস্ময়ের পালা চৈত্রীর। সে তো ভাবতেও পারছে না রুহানিয়া শুভ্রকে ভালোবাসতে পারে!
‘তুমি শুভ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো? ভাইয়া জানে?’
রুহানিয়া কেঁদে মাথা নাড়ায়। চৈত্রী কী বলে সান্ত্বনা দেবে বুঝতে পারছে না। সে শুধু জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে আছে। হঠাৎ করেই রুহানিয়া চোখ মুছে বলল,
‘অন্য ঘরে যা চৈত্রী। আমার কিছু ভালো লাগছে না।’
‘আমি থাকি আপাই?’
‘যা প্লিজ! অসহ্য লাগছে সবকিছু।’
চৈত্রী ভয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এখন তার মন প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেছে। সে যদি আগে এসব জানতো তাহলে শুভ্র ভাইয়াকে বলত সে যেন অন্য কোথাও বিয়ে না করে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সে বড়ো কাকির ঘরে যায়। কিছু মানুষ এখানেও রয়েছে। চৈত্রীকে দেখে বড়ো কাকি বললেন,
‘কী হয়েছে চৈত্রী? খাবি কিছু?’
চৈত্রী মাথা নাড়াল। সে খাবে না কিছু। কাকি অন্য ঘরে গেলেন খাবার আনতে। চৈত্রীও গেল পিছু পিছু। নিচুস্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘রুহানিয়া আপাইকে তোমার কেমন লাগে কাকি?’
বড়ো কাকি চৈত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। বললেন,’কেমন লাগবে আবার? তোরা সবাই-ই তো আমার ছেলে-মেয়ের মতোন।’
‘মানে আপু বাড়ির বউ হিসেবে কেমন হবে?’
‘রুহানিয়া চমৎকার একটা মেয়ে চৈত্রী। ও যেই বাড়ির বউ হবে সেই বাড়ির লোকেরা সোনার বউ পাবে। ওর মতো মেয়েই হয় না।’
চৈত্রী উৎসাহি কণ্ঠে বলল,’তাহলে শুভ্র ভাইয়ার জন্য রুহানিয়া আপাইকে বউ করে আনলে না কেন?’
বড়ো কাকির হাসিমুখটা মলিন হলো। ম্লান হেসে বলল,’এমনটা আমরা ভাবিনি তো কখনো। তুই হঠাৎ এসব কথা কেন বললি?’
‘এমনিই। কাজটাজ কিছু নাই তো। উদ্ভট সব কথা মাথায় হাসতেছে।’
বড়ো কাকি হেসে খাবারগুলো হাতে নিয়ে বললেন,’তুই বোস। আমি রুহানিয়াকে খাবার দিয়ে আসি। সকাল থেকে মেয়েটা কিছু খায়নি। মাথা ব্যথার জন্য বউ আনতে যেতেও পারল না।’
চৈত্রী আতঙ্কিত হলো। অস্থির হয়ে বলল,’না, না। আপাই তো ঘুমায়। এখন জাগিও না। মাথা ব্যথা বাড়বে তাহলে।’
‘ঠিক আছে। উঠলে খাবার দিয়ে আসিস।’
_________
সন্ধ্যা থেকে ঝুমবৃষ্টি শুরু হয়। রাতে বৃষ্টির মধ্যেই বউ নিয়ে বাড়িতে ফেরে সবাই। কাদামাটি পেরিয়ে বাসায় ঢোকে। চৈত্রী সামনে থেকে প্রথম দেখল শুভ্রর বউকে। নাম পুতুল। সত্যি সত্যিই দেখতে একদম পুতুলের মতো। আল্লাহ্ তা’য়ালা সব সৌন্দর্য যেন ঢেলে দিয়েছেন। চৈত্রী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুতুলের দিকে। হঠাৎ করে রুহানিয়ার কথা মনে পড়ায় তার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। সকালের পর আর দরজা খোলেনি সে। সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চৈত্রী এতক্ষণ কাকির ঘরেই ছিল। বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। রুহানিয়া আপুর একটা খবর নেওয়া প্রয়োজন। সে ছাতা নিয়ে বের হয় রুহানিয়ার রুমে যাওয়ার জন্য।
.
.
জিহাদ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে রুমে যখন পোশাক পাল্টাচ্ছিল তখন জানালা দিয়ে দেখতে পায় একটা মেয়ে বাড়ির পেছনের বাগানে ভিজছে। মৃদুমন্দ আলোতে মনে হচ্ছে মেয়েটা রুহানিয়া। সে বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারল না। তাই বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে গেল।
‘রুহানিয়া না? কী করছেন আপনি?’
রুহানিয়া গাছের শক্ত একটা ডালে দড়ি বাঁধার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ করে পুরুষালী কণ্ঠস্বর শুনে সে ভীত দৃষ্টিতে তাকায়। জিহাদকে দেখতে পেয়ে পালটা প্রশ্ন করে,
‘আপনি এখানে?’
‘আমি এসেছি আপনার জন্য। কিন্তু আপনি এখানে কেন? কী করছেন?’
দড়িটা হাতের পেছনে লুকিয়ে ফেলে রুহানিয়া। বৃষ্টিতে ভিজে এখন ঠাণ্ডা লাগছে। শীতে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
‘কিছু করছি না। আপনি ভেতরে যান।’
‘আপনিও চলুন।’
‘আমি যাব না।’
‘কেন? বাড়ির লোকজনকে ডাকব আমি?’
রুহানিয়া চুপ করে থাকে। জিহাদও কিছুক্ষণ নিরব থাকে। দড়িটা দেখতে পায় সে। ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
‘আপনি সুই’সাইড করতে এসেছেন?’
.
রুহানিয়ার রুমের দরজা খোলা। ঘরও ফাঁকা। বাকি কারও রুমেও খুঁজেও পাওয়া গেল না। এবার তার ভয় লাগছে। রুহানিয়া আপা কোথায় চলে গেল। ভয়ে তার কান্না পাচ্ছে। সে গুটিগুটি পায়ে শুভ্রর বন্ধুদের রুমে যায়। দরজায় নক করতেই দরজা খুলে দেয় কাব্য।
চৈত্রীকে দেখে কর্কশকণ্ঠে বলে,’এইযে মিস বাচ্চাপার্টি এখানে কী? জ্বালাতে চলে এসেছ?’
চৈত্রী এসব কথার কোনো উত্তর দিলো না। জিজ্ঞেস করল,’রুহানিয়া আপাই কি এখানে?’
‘কী আজব! সে এখানে কেন থাকতে যাবে তাও এতগুলোর ছেলের রুমে! মাথা কি গেছে নাকি?’
‘মাথা যাবে কেন? কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই জিজ্ঞেস করেছি। না এলে বলবেন নেই। অযথাই এসব বলেন কেন?’
চৈত্রীর কথা বলার ভঙ্গিটা অন্যরকম ছিল। আগের মতো চঞ্চলতা কিংবা কুটিলতা ছিল না। বরঞ্চ কথা বলার সময় তার গলা কাঁপছিল। সে পূণরায় কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই চৈত্রী চলে যায়। তবে সে যাচ্ছিল বাড়ির পেছনের দিকে। এত রাতে বৃষ্টির মধ্যে বাগানের বাইরে যাওয়ায় কাব্য নিজেও ছাতা নিয়ে বেরিয়ে আসে। পেছন থেকে বলে,
‘এই? তুমি এত রাতে কোথায় যাও?’
চৈত্রী প্রশ্ন শুনেও কোনো উত্তর দিলো না। পাশাপাশি হাঁটছে দুজন। কাব্য প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দেও চৈত্রী ভয় পায়নি এটা দেখে কাব্য বেশ অবাক হয়। বিড়বিড় করে বলে,
‘কী মেয়েরে বাবা! ভয় লাগে না?’
‘আমি আপনার মতো এত ভীতু নই।’
‘অ’স’ভ্য মেয়েরা এমনই হয়।’
কিছুটা সামনে এগিয়ে ছিল চৈত্রী। কাব্যর এই কথা শুনে রাগে সে কিছু বলার জন্য ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল,’শুনেন…’
পেছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই। ভয় পেয়ে যায় চৈত্রী। কোথায় গেল? এটা কাব্য ছিল নাকি ভূত! গোঙানির শব্দে তখন ভেসে আসে,
‘আ..আমি এখানে!’
চৈত্রী চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বুঝতে পারে গোঙানির শব্দ আসছে পাশের কচুর ঝোপ থেকে। ওখানে নোংরা পানির অভাব নেই। সে এগিয়ে যায়।
‘আপনি এখানে কী করছেন?’
চৈত্রীর বোকা বোকা কথা শুনে মেজাজ চটে যায় কাব্যর। একই তো স্লিপ খেয়ে এখানে পড়ে গেছে, তার ওপর এমন উদ্ভট প্রশ্ন! সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘কচু খেতে আসছি! কচু…কচু।’
চলবে..