বিষাক্তফুলের_আসক্তি লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা পর্ব-১৭

0
294

#বিষাক্তফুলের_আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-১৭

শীতের ঝরা পাতার মতো সবার জীবন থেকে ঝরে গেছে অনেকগুলো মাস। চোখের পলক ফেলার মতো যেনো দিনগুলো কেটেছে। লন্ডনের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করছে তিতির। নয় মাসের ভরা পেট নিয়ে চলাফেরা কষ্ট হয়ে গেছে তিতিরের। প্রেগনেন্সির গত কয়েকটা মাস তিতির নিজের শরীরের সাথে যেনো নিজে যুদ্ধ করেছে। একেকটা মাস পার হয়েছে আর একেকটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তিতিরের প্রেগনেন্সি কমপ্লিকেশনের কথা আহান জানতে পারে প্রেগনেন্সির পাঁচ মাসে। তখন এবরশন করাও অনেক বেশি রিস্ক। সেদিন আহান তিতিরের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো তুই কোনো সবটা আমার থেকে লুকিয়ে গেলি তুতুল। সেদিন কোনো উত্তর দিতে পারেনি তিতির। বলতে পারেনি তাজকে সে কতটা ভালোবাসে। সে পারেনি তার অংশ নিজের থেকে সরিয়ে দিতে। অদৃশ্য এক মায়ায় জড়িয়ে গেছে ভেতরে থাকা ছোট প্রাণটারও। গত কয়েকটা মাস আহান যেনো তিতিরকে নিজের হাতের তালুতে আগলে রেখেছে। আহানের আজ একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে, তাই বাধ্য হয়ে ভার্সিটিতে গেছে। সকাল থেকে পেটে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে তবু আহানকে বলেনি, তাহলে সব ফেলে বাসায় বসে থাকতো। এমনি নিজেকে আহানের বোঝা মনে হয় তিতিরের কাছে। আবার তার জন্য আহানের পড়াশোনার ক্ষতি হোক সেটা চায় না তিতির। হাতের কলম ডাইরির ভাজে রেখে দিলো। গত আট মাসে তিতির দুটো ডায়েরি লিখেছে, একটা তার ছেলে ধ্রুবর জন্য আর আরেকটা তাজের জন্য। হ্যাঁ তিতিরের ছেলে হবে সেটাই জানিয়েছে ডক্টর। তিতিরের মন বলছে তার সময় ফুরিয়ে এসেছে এই পৃথিবীতে। তাই তাজকে না বলা কিছু কথা লিখে রেখেছে যদি কোনোদিন তাজ তার খোঁজে আসে তাহলে যেনো ডায়েরিটা পায় তাই লিখেছে। আর ছেলের সাথে তার কথা হবে না তাই ছেলের জন্য সব লিখে রেখেছে।

তিতির দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে পাখিকে ডাকলো কিন্তু পাখির সাড়াশব্দ নেই, তিতির এবার ন্যান্সিকে ডাকলো। আহান তিতির আর পাখির দেখাশোনার জন্য ন্যান্সিকেই রেখেছে। ন্যান্সিও নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে আগলে রেখেছে তিতিরপাখিকে। তিতিরের একটু ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন এখন কাউকে পাচ্ছে না। দিনদিন শরীরটা বয়ে চলাও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তিতিরের। নিজের কাছে নিজের শরীরের ওজন মণ খানেক মনে হয়। তিতির দূর্বল শরীর নিয়ে বেড আর দেয়াল ধরে ধরে ওয়াশরুমে গেলো। ওয়াশরুমে পা রেখে মুচকি হাসলো। যাতে কোনো এক্সিডেন্ট না হয়, তাই ওয়াশরুমে ফ্লোর মেট বিছিয়ে দিয়েছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আতঙ্কিত গলায় ন্যান্সিকে ডাকলো তিতির। র*ক্তপাত হচ্ছে তার, যেটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।

তিতিরের ডাক শুনে দৌড়ে এলো ন্যান্সি, কী হয়েছে মাম ?

তিতির দূর্বল গলায় বললে, মাম র*ক্তপাত হচ্ছে আমার।

ভয়ে চোখমুখ কালো হয়ে গেলো ন্যান্সির। তিতিরের ডাক শুনে পাখিও দৌড়ে এসেছে তার কাছে।

কী হয়েছে আপুনি ?

ন্যান্সি বললো, আমি এখনই আহানকে কল দিচ্ছি।

তিতির ন্যান্সিকে আটকানোর জন্য এক কদম যেতেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলো। ধপ করে পাখির চোখের সামনে ফ্লোরে পড়ে গেলো, অবুঝ পাখি ধরে ফেলার আগেই।

পাখি চিৎকার করে বললো, আপুনি ?

পা থেমে গেলো ন্যান্সির। পেছনে ফিরে দেখলো ফ্লোরে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে তিতির। ন্যান্সি দৌড়ে তিতিরের কাছে এলো।

তিতির ঠোঁট কামড়ে ধীর গলায় বললে, খুব কষ্ট হচ্ছে মাম আমার সময় বুঝি ফুরিয়ে এলো।

ন্যান্সি নিজের বুকে চেপে ধরলো তিতিরকে। কয়েক মাসে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে ফেলেছে।

তোর কিছু হবে না মাম। একটু সহ্য কর আমি আহানকে কল দিচ্ছি।

ন্যান্সি খেয়াল করলো ইতিমধ্যে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে র*ক্তে। কী করবে দিশাহারা হয়ে গেছে ন্যান্সি। পাশে পাখি কিছু না বুঝে তার আপুনিকে কাঁদতে দেখে চিৎকার করে কাঁদছে। এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠলো। পাখি কী বুঝে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

দরজার ওপাশে আহান দাঁড়িয়ে আছে পাখি কাঁদতে কাঁদত বললো, আহান আপুনি কাঁদে।

কান্নার ফলে পাখির কথা বুঝা যাচ্ছে না। আহান পাখিকে কাঁদতে দেখে ভয় পেয়ে গেছে। তিতিরের নাম শুনেই দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো।

তিতিরের দরজার সামনে এসে চিৎকার দিয়ে বললো, তুতুল।

ন্যান্সি কাঁদতে কাঁদতে বললো, আহান কিছু করো মাই সান।

আহান কিছু না ভেবে দ্রুত কোলে তুলে নিলো তিতিরকে। তিতিরের চোখ বুজে আসছে। এখন আর ব্যাথা অনুভব হচ্ছে না, শরীরটা কেমন তুলোর হালকা লাগছে তিতিরের। তিতির ঝাপসা চোখে আহানের জায়গায় যেনো তাজকে দেখলো।

বিড়বিড় করে বললো, আপনি এসেছেন ? এতো দেরি কেনো করলেন, আমার যে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

তিতিরের বলা কোনো কথা কারো কানে গেলো না। আহান তিতিরকে নিয়ে গাড়িতে শুইয়ে দিলো। ন্যান্সি তিতিরের মাথা নিজের কোলে নিয়ে বসেছে। পাখি যেনো আজ বুঝদার হয়ে গেছে, নিজে নিজে সামনের সীটে গিয়ে বসলো। শীত কাল চলছে লন্ডনে, চারদিকে সাদা বরফে ঢাকা। বাসা থেকে মাত্র পাঁচমিনিটের রাস্তা হসপিটাল কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও গাড়ি স্টার্ট করতে পারলো না আহান। প্রকৃতি বোধহয় আজ তিতিরের সাথ দিতে চাইছে না। গাড়িতে সময় নষ্ট না করে আহান নেমে তিতিরকে কোলে তুলে ছুটলো হসপিটালের দিকে। তার পেছনে ন্যান্সি আর পাখি। বরফের নিচে লুকিয়েছে রাস্তা, আহান পনেরো মিনিটে পৌঁছাল হসপিটালে। এক মিনিটের জন্যেও থামেনি তিতিরের র*ক্তপাত। দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো তিতিরকে।

ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার আগে আহান তার সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে করুন গলায় বললো, স্যার প্লিজ বাঁচিয়ে দিন আমার তুতুলকে।

ডক্টর আহানের ভার্সিটির স্যার সে হতাশ গলায় বললো, I will try to my best but you know the condition of the patient.

ডক্টর ভেতরে চলে গেলে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাতে মুখ লুকিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে আহান। সে কী হারাতে চলেছে তার তুতুলকে ?

২০.
হসপিটালের করিডোরে বসে আছে তাজ। প্রায় আট মাস পর দেশের মাটিতে পা রেখেছে। সে ঘটনার পরদিন দেশ ছাড়ে। যাওয়ার আগে প্রেস মিডিয়া ডেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে অফিশিয়ালি বিদায় নিয়ে যায় আর যাই হোক কারো সেক্রিফাইসের ক্যারিয়ার বয়ে চলা সম্ভব নয় তার পক্ষে। বাবা-মাও ভুল বুঝেছিলো তাকে। কেনো থাকবে সে এই দেশে। কিন্তু দু’দিন আগে হার্ট অ্যাটাক করেছে ইকবাল খান। তাজ প্রথমে মনে করেছিলো তাকে দেশে ফেরানোর জন্য মিথ্যা বলেছে কারণ এর আগেও এমন করেছিলো কিন্তু এবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সবটা সত্যি। তাই পারেনি দূরে থাকতে, ছুটে এসেছে বাবা-মায়ের কাছে। এখনও আইসিইউতে রাখা হয়েছে ইকবালকে। ইরিনাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই তাকেও ভর্তি করা হয়েছে।

কেমন আছো ?

পরিচিত কণ্ঠে মাথা তুলে তাকালো তাজ।

মৌ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। আট মাসে পরিবর্তন হয়েছে মৌয়ের। আগের তুলনায় শুকিয়ে গেছে অনেকটা, তবে দেখতে সুন্দর লাগছে।

তাজ কিছু বলার আগেই মৌ বললো, ভয় নেই আজ আর ভালোবাসার দাবি নিয়ে তোমার সামনে আসিনি। একজন ডক্টর হিসাবেই এসেছি।

তাজ আর কিছু বললো না। মৌ চুপচাপ তাজের পাশে বসলো।

আঙ্কেলের হার্টের অবস্থা ভালো না। এটা উনার দ্বিতীয় এ্যাটাক সেটা হয়তো তোমারও জানা আছে। আবার কোনো মানসিক চাপ বা উত্তেজনা সহ্য করার মতো শক্তি উনার নেই। চেষ্টা করো উনাকে হাসিখুশি রাখতে। উনাদের ছেড়ে আর দূরে যেও না, আমি তো মেনে নিয়েছি আমার নিয়তি।

তাজ তাকালো মৌয়ের দিকে, মৌ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, তাজ রায়হানকে আমি আগে অনেকবার তোমার পথ থেকে সরে যেতে বললেও গান রেকর্ডিং ছাড়তে বলিনি। সেটা নিজের ইচ্ছেতে ছেড়েছে রায়হান। তবু তোমার শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছি তবে কেনো তুমি তোমার বাবা-মা ফেলে দূরে গিয়ে পরে আছো।

তাজ সোজা হয়ে বসলো, তোর জন্য বাবা-মাকে ছেড়ে যায়নি আমি। তারাও নিজের সন্তানকে বিশ্বাস করেনি তার শাস্তি দিয়েছি।

আঙ্কেলের অবস্থা এখন মোটামুটি ভালো। তাকে কেবিনে শিফট করা হবে একটু পর। তোমার সাথে দেখা করতে চাইছে।

তাজ কিছু বললো না। মৌ কিছুটা সময় তাজের পাশে চুপচাপ বসে থেকে উঠে চলে গেলো। একটু পরই ইকবালকে কেবিনে দেওয়া হলে তাজ সেখানে উপস্থিত হলো। চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো ইকবাল। তাজ বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ইকবাল তাকালো ছেলের দিকে।

অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিলো আবার, এসেছো কেনো এখন ? একেবারে মরে গেলেই আসতে, দাফন কাফন করতে।

তাজ অসহায় গলায় বললো, বাবা এভাবে বলো না প্লিজ আর কোথাও যাবো না তোমাদের ছেড়ে৷ আজ থেকে যা বলবে তাই করবো তবু রাগ করে থেকো না, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও।

ইকবাল আবার তাকালো তাজের দিকে, তুমি আমার একমাত্র সন্তান তাজ। খান বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী। সব বাবা-মা চায় তার সন্তান ভালো থাকুক আর আমরাও সেটা চাই। এটাই কী আমাদের অপরাধ ?

না বাবা কোনো অপরাধ নেই তোমাদের।

ইকবাল ছেলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, আমার একটা কথা রাখবি বাবা কথা দে।

ইকবাল হাত বাড়িয়ে দিলে তাজ হাতটা ধরে বললো, বললাম তো বাবা তোমাদের সব কথা শুনবো।

ইকবাল কোনো ভুমিকা ছাড়াই বললো, মৌকে বিয়েটা করে নে বাবা। মেয়েটা সত্যি ভালোবাসে তোকে। আমি আমার ছেলেকে সুখী দেখতে চাই।

ইকবালের হাত ছেড়ে দিলো তাজ। উত্তেজিত হয়ে গেলো ইকবাল, ক্রমশ হার্টবিট বাড়ছে তার। নার্স ডেকে আনলো মৌকে।

মৌ এসে ব্যস্ত গলায় বললো, তোমাকে বললাম আঙ্কেলকে উত্তেজিত করো না৷ এবার এ্যাটাক হলে কিছু হাতে থাকবে না।

পাথরের মতো বসে আছে তাজ। গত আট মাস ধরে পাগলের মতো খুঁজেছে তিতিরকে। কিন্তু মেয়েটা যেনো কর্পূরের মতো উবে গেছে রাতারাতি। মেয়েটার কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত সে পারবে না নিজের জীবন এগিয়ে নিতে। তাজ বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। এমনিতে আজ মনটা বড্ড বেশি অস্থির হয়ে আছে তাজের, হয়তো বাবা-মা অসুস্থ তাই।

তাজ বাইরে গিয়ে বসতেই মৌ বের হয়ে বললো, আঙ্কেল তোমাকে ডাকছে। আমি বারবার বলছি তাজ, উনার উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়।

তাজ বাধ্য হয়ে ভেতরে যেতেই ইকবাল ঘনঘন শ্বাস টেনে বললো, তাজ তুমি আমার হাত ধরে কথা দিয়েছো।

তাজ অসহায় চোখে তাকালো বাবার দিকে। কী করবে এবার সে ?

২১.
অপারেশন থিয়েটার থেকে ডক্টর বের হতেই আহান দৌড়ে সমানে গেলো। ন্যান্সি আর পাখিও হসপিটালে পৌঁছে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে পাখির ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।

আহান বললো, স্যার আমার তুতুল ?

ডক্টর মাথা নিচু করে বললো, Sorry Ahan. I tried my best. রোগীর হাতে বেশি সময় নেই তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে।

আহান মুহুর্তে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলো যেনো। রোবটের মতো এগিয়ে গেলো অপারেশন থিয়েটারে দিকে। অক্সিজেন মাস্ক মুখে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে তিতির। আহানকে দেখে কাঁপা হাত উঁচু করলো বেড থেকে। আহান এগিয়ে গিয়ে তিতিরের হাতটা নিজের মুঠোয় নিলো।

অক্সিজেন মাস্ক খুলে তিতির কাঁপা গলায় ভেঙে ভেঙে বললো, তুই বলেছিলি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোকে আমার পাশে পাবো। তুই তোর কথা রেখেছিস। তাই আজ তোর থেকে আরো একটা কথা চাইছি আহু। আমাকে ছুঁয়ে কথা দে আমার বোনু আর আমার ধ্রুবকে তুই আগলে রাখবি।

আহান পাশে তাকিয়ে দেখলো নার্সের কোলে সাদা কাপড়ে মোড়ানো ফুটফুটে একটা বাচ্চা কান্না করছে। নার্স টলমল চোখ তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে।

আহান কান্না গিলে বললো, কথা দিলাম তোকে। একটা ফুলের টোকাও পড়বে না ওদের গায়ে।

হাজার যন্ত্রণায় তিতিরের ঠোঁটের কোণে ফোটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। প্রত্যেকটা কথা বলতে তার তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে, তবু বলছে নাহলে আর যে বলা হবে না। তিতির নার্সকে ইশারা করলো বাচ্চাটাকে তার কোলে দিতে। নার্স বাচ্চাটাকে তিতিরের বুকের উপর শুইয়ে দিলো।

তিতির চুমু খেলো ছেলের মাথায়, মা থাকবে না সোনা তুমি মিষ্টি বাচ্চা হয়ে থেকো।

তিতির আহানের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার ছেলের জন্য একটা উপহার রেখেছি আর একটা তার বাবার জন্য। সেগুলো ঠিক সময়ে তাদের দিয়ে দিস।

আহান চোখ মুছে বললো, তোর কষ্ট হচ্ছে প্লিজ কথা বলিস না তুতুল।

আহান অক্সিজেন মাস্ক পড়ানোর জন্য হাতে নিতেই তিতির লম্বা শ্বাস টেনে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেলো। ডক্টর পাশেই ছিলো সে তিতিরের পালস চেক করে জানালো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে তিতির। আহান পিছিয়ে গেলো দু’পা। তিতিরের বুকে লেপ্টে থাকা ছোট্ট ধ্রুব গলা ছেড়ে কাঁদছে। কী জানি সেও হয়তো বুঝে গেছে, জীবনের মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছে সে। নার্স তিতিরের বুক থেকে বাচ্চাটা সরিয়ে নিতে গেলে আহান বাঁধা দিলো।

কাঁপা গলায় বললো, থাকতে দিন না আর কিছুটা সময়। এটাই তো ওর মায়ের প্রথম এবং শেষ স্পর্শ আর কোনদিন চাইলেও কোথাও খোঁজে পাবে না এই স্পর্শ।

আহানের চোখে বাঁধ ভেঙেছে। শব্দ হচ্ছে না কেবল গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল। বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে কিন্তু বুঝাতে পারছে না কাউকে। এ কেমন দম বন্ধ করা কষ্ট। নাহ্ আর সহ্য করা গেলো না। তিতিরের বুক থেকে ধ্রুবকে তুলে নিয়ে বের হয়ে গেলো আহান। তার যে এখন অনেক দ্বায়িত্ব, তাকে ভেঙে পড়লে চলবে নাকি ?

চলবে,,,

(গতপর্বেও কয়েকজন বলেছে ফা*ল*তু গল্প। আরে ভাই আপনাদের বলেছি আমি ফা*ল*তু গল্প পড়তে। আরো অনেক ভালো ভালো গল্প আছে সেগুলো পড়েন না। গল্পও পড়ছেন আবার আ*জেবা*জে কমেন্টও করছেন আর যদি জেনেই থাকেন পরবর্তীতে কী হবে তাহলে পড়েন কেনো ? আমি আগেই বলেছি এটা গতানুগতিক গল্পের মতো হবে না। আপনাদের আমি ডেকে এনেছি গল্প পড়তে ? যারা আমাকে ভালোবাসে, আমার গল্প ভালোবাসে আমি তাদের জন্য লিখি শুধু তারা পড়লেই হবে। গল্পটা কেমন হবে আগেই ভেবে রেখেছিলাম তাই চেঞ্জ করা সম্ভব হয়নি। চেঞ্জ করে এলোমেলো হয়ে গেলে পরে গোছাতে পারবো না। হ্যাপি রিডিং, আল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here