#বিষাক্তফুলের_আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-২৬
শুনেছি বেদনার রঙ নীল আবার বিষের রঙ ও নীল। তাই বিষাক্তফুলের কথাগুলো বিষাক্ত রঙেই ফুটিয়ে তুললাম। তাজওয়ার খান তাজ আপনি যদি আমার হতেন না, আমি সত্যি আপনাকে আমার মাথার তাজ করে রাখতাম। কিন্তু আপনি আমার নন, তাই আপনি যার তার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কেমন আছেন নিজের আসল ভালোবাসার মানুষের কাছে ? নিশ্চয়ই খুব ভালো আছেন। আমিও মন থেকে চাই আপনি খুব ভালো থাকেন। নিজের ভালোবাসার মানুষের খারাপ থাকা কেউ চায় না। অবাক হচ্ছেন আপনাকে নিজের ভালোবাসার মানুষ বলায়, অবাক হবেন না প্লিজ। কারণ আপনি এতোটাও অবুঝ ছিলেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি আর আপনি সেটা বুঝতেই পারেননি। তবু যদি না বুঝে থাকেন তাহলে আজ স্পষ্ট করেই বলি। আপনাকে আমি ভালোবাসি, প্রচন্ড ভালোবাসি। ভালোবাসতাম বলবো না, কারণ ভালোবাসার কোনো পাস্ট ফর্ম হয় না। আজ আমার বলতে কোনো বাঁধা নেই কারণ আপনি যখন এই ডায়েরি পড়ছেন তখন আমার অস্তিত্ব মুছে গেছে পৃথিবীর বুক থেকে। আপনি ভালোবাসতে জানেন না তাজ, ভালোবাসতে জানেন না। আপনি জানেন না, আপনি আমার ক্রাশ ছিলেন আগে থেকেই। আপনার গান শুনেই মুগ্ধ হয়েছিলাম আর আপনাকে দেখে ক্রাশড। একটু ফাঁকা সময় পেলেই আপনার গান শুনতাম মুভি দেখতাম। কিন্তু আপনি যখনই কোনো হিরোইনের সাথে ক্লোজ হতেন রেগে টিভি অফ করে দিতাম। শান্ত মেয়েটার মাঝের এমন পাগলামো কেউ জানতো না, কেউ না।
আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার দিনের কথা মনে আছে ?
এতদিন যাকে টিভিতে, ফোনে দেখে এসেছি তাকে সামনে থেকে দেখবো। উত্তেজনায় আমার হাত-পা কাঁপছিলো। আপনি এলেন এক ভদ্রলোকের সাথে কথা বলতে বলতে। আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম আপনার দিকে। আপনার হেয়ারস্টাইল থেকে পায়ের শো পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আপনার হাঁটার স্টাইল, হাত নেড়ে কথা বলা, মনে হচ্ছিল আমি জ্ঞান হারাবো। আপনি যখন ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। দৃষ্টি ফ্লোরে নিবদ্ধ, যেনো সামনে তাকালে অনেক বড় অপরাধ হয়ে যাবে। আমাকে দেখে আপনার এক্সপ্রেশন দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। আপনি নাম জিজ্ঞেস করলেন কাঁপা গলায় উত্তর দিলাম। সেদিনের প্রতিটা সেকেন্ড আমার মনে গাঁথা। সেদিন থেকেই হয়তো ক্রাশ ভালোবাসায় রুপ নিতে থাকে। আপনি অন্যদের সাথে কথা বললে আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর যখনই আমার দিকে তাকাতেন আমার দৃষ্টি মাটিতে।
একদিন আপনি আমার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম মুসকান কে রেখেছে ?
আমি নিচু গলায় বলেছিলাম, বাবা রেখেছে।
মুসকান নামের অর্থ জানো তুমি ?
জী স্যার জানি, মুসকান নামের অর্থ হাসি।
মুসকান মাহমুদ তিতির। মুসকান মানে হাসি আর তিতির মানে পাখি। দু’টো নামের সাথে মিশে আছে চঞ্চলতা কিন্তু তোমাকে আমি যখনই দেখি মাথা নিচু করে গম্ভীর মুখে কাজ করছো, এখন পর্যন্ত হাসতে দেখিনি। অদ্ভুত না ব্যাপারটা, যার নাম হাসি সে হাসতেই জানে না।
সেদিন আপনাকে বলতে পারিনি আমি হাসতে ভুলে গেছি। জানেন তো আমি এমন ছিলাম না। আমার হাসির আওয়াজে মাহমুদ ভিলার প্রতিটা বস্তু যেনো হাসতো। আমার মুখের হাসি আমার বাবার সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতো। কিন্তু একটা রাত আমার জীবনের সব হাসি কেঁড়ে নিয়েছে। মাত্র নয় বছর বয়স তখন আমার। আমার বোনুটা কখন আমার কোলে আসবে সেই আশায় প্রহর গুনছিলাম। টানা দু’দিন বৃষ্টি হচ্ছিল সিলেট শহরে। বিকেলে আহুর সাথে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর উঠেছে আমার গায়ে। মা নিজের ঐ অবস্থায় আমার মাথার কাছে বসে উদ্বিগ্ন হয়ে মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে আর বাবার ফোনে কল করে যাচ্ছে। জ্বরের ঘোরে তখন আমি শুধু বিড়বিড় করে বাবার নাম নিচ্ছি। বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে বাড়ি ফিরলো বাবা সাথে তার বডিগার্ড নুরুল মামা। ছোটবেলা থেকে তাকে মামা বলেই ডাকতাম আমি। আমার জ্বর দেখে মামা নিজের রুমে গেলেন না। মামার কেউ ছিল না, ছোটবেলা থেকে বাবার কাছেই বড় হয়েছে, বাবাকে ভাইয়া বলেই ডাকতো। বাবা-মা দু’জনে মাথার কাছে বসে রইলো আর মামা সোফায় বসে রইলো। মধ্যরাতে সবাই তখন খানিকটা ঝিমাচ্ছে আর আমার জ্বর কমায় আমি ঘুমিয়ে আছি। মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙলো আমার। বাবা মাকে ধরে জানতে চাইছে কোথায় কষ্ট হচ্ছে। লিভার পেইন শুরু হয়েছিলো মায়ের। ঝুম বৃষ্টি তখন বাইরে। বাবা কী করবে বুঝতে পারছে না। একদিকে অসুস্থ আমি আর অন্যদিকে মা। বাবা ড্রাইভারকে বললো দ্রুত গাড়ি বের করতে। বাবা মাকে নিয়ে গাড়ির পিছনের সীটে বসলো আর মামা আমাকে নিয়ে ড্রাইভারের পাশে। ততক্ষণে আবার ধুম জ্বর উঠেছে আমার। হসপিটালে গিয়ে আমাকে আলাদা কেবিনে নিলো মামা আর মাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হল। মামা একবার বাবার কাছে যায় একবার আমার কাছে। হঠাৎ আমি মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য বায়না শুরু করলে মামা আমাকে শান্ত করার জন্য আমার কাছেই থেকে গেলেন। মামা আমার কাছে বসে অস্থির অস্থির করছিলো ওদিকে মায়ের কী অবস্থা জানার জন্য কিন্তু আমাকে রেখে যেতেও পারছিলো না। ঘণ্টা খানেক পার হওয়ার আগেই র*ক্তা*ক্ত অবস্থায় তোয়ালে মোড়ানো ছোট পুতুল বুকে জড়িয়ে হুড়মুড়িয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো বাবা।
মামা ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো, আপনার এই অবস্থা কীভাবে হলো ভাইয়া ?
পাখিকে মামার কোলে তুলে দিলো বাবা, আমি তোর পায়ে পরছি নুরুল আমার মেয়ে দু’টোকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যা। ওরা আমার মেয়ে দুটোকেও মে*রে ফেলবে।
এসব কী বলছেন ভাইয়া ? কী হয়েছে, আপনার এই অবস্থা কে করলো ?
নুরুল আপনজন বিশ্বাসঘাতক হয়ে যায় কেনো রে ? এতো ভালোবাসার বিনিময়ে কীভাবে পিঠে ছু*রি বসালো ? আমার পারুকে কী নিশংসভাবে মে*রে ফেললো রে নুরুল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। এবার আমার মেয়ে দুটোকেও মে*রে ফেলবে, আমি কিছু করতে পারবো না। তুই দয়া করে ওদের নিয়ে দূরে চলে যা। আমার বোনটাকে আমি একটা জানোয়ারের হাতে তুলে দিয়েছি নুরুল। জানি না আমার বোনটার কপালে কী আছে।
এবার আর মামার বুঝতে বাকি রইলো না এসবের পেছনে কে আছে। ফুপির কথা শুনে বুকটা খা খা করে উঠে মামার। মনের সুপ্ত অনুভূতিগুলো মনেই কবর দিয়ে বড্ড ভুল করেছে মনে হয়েছিল।
নিজেকে সামলে বললো, আপনাকে এভাবে একা ফেলে আমি কোথাও যাবো না ভাইয়া।
বাবা দেয়াল ঘেঁষে ফ্লোরে বসলো, আমার হাতে সময় নেই নুরুল। তুই যদি আমাকে নিজের ভাই মনে করে থাকিস তবে দয়া করে আমার মেয়েদের বাঁচা আমি তোর পায়ে,,
বাবা কথা শেষ করার আগেই মামা বাবার বাড়িয়ে দেওয়া হাত নিজের হাতে শক্ত করে ধরে কেঁদে দিলো। বাবার জায়গা মামার জীবনে কোথায় সেটা একমাত্র মামাই জানতো।
বাবার অনুরোধে মামা আমাকে আর বোনুকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে আসে ঐ বিশ্বাসঘাতকের শহর থেকে। দু’জনকে বুকে আগলে বড় করতে থাকে। নয় বছরের ছোট মেয়ের কাঁধে এসে পরে নিজের ছোট বোনুকে বড় করার দ্বায়িত্ব। সেই রাত আমার জীবন থেকে সব হাসি, সুখ, আনন্দ কেঁড়ে নিয়েছিলো।
কিন্তু আপনার জন্য আবার হাসতে শিখেছিলাম আমি। আপনার সেদিনের কথা শুনে বাসায় এসে আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখেছি। আয়নাটা আপনি মনে করে হাসার চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই হয় না। অথচ আপনার কথা চিন্তা করে কত আনমনে হেসেছি তার হিসাব আমার কাছে নেই কিন্তু আপনার দিকে না তাকাতে পেরেছি, না হাসতে। আসলে মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তার চোখে চোখ রাখতে পারে না। আপনার দিকে তাকাতেই লজ্জা লাগলো, সেখানে হাসি অসম্ভব।
আপনার সাথে আমার প্রতিটা মুহূর্ত কাটতো মুগ্ধতায়। এতো মেয়ে আপনার জন্য পাগল কিন্তু আপনি তাদের প্রতি আগ্রহ দেখান না। আমি মাঝে মাঝে ভয় পেতাম যদি আমার দুর্বলতা টের পেয়ে যান আর চাকরি থেকে বের করে দেন। চাকরিটা ভীষণ প্রয়োজন ছিলো আমার। তাই সবসময় নিজেকে একটা কঠিন আবরণে আবৃত করে রাখতাম। তবু মাঝে মাঝে মনের প্রফুল্লতা কচ্ছপের মতো শক্ত আবরণ ভেদ করে বেরিয়ে আসতো কিন্তু আপনি খেয়াল করতেন না।
তাজ এতটুকু পরে ডায়েরি বন্ধ করে দিলো। চোখে ভাসছে তিতিরের সাথে কাটানো হাজার স্মৃতি। আজ স্মৃতিগুলো অনুভব করতে পারছে তাজ। তিতিরের আঁড়চোখে তাকানোর মানে বুঝতে পারছে। মজার ছলে বলা তার সামান্য অ্যাডাল্ট কথায় তিতিরের লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছে। তার প্রতি মেয়েদের এতো ইন্টারেস্ট দেখানো ভালো লাগতো না তাজের। হঠাৎ একদিন সিম্পল সাদা চুড়িদার পড়া, মাথায় রঙচঙে চুলের বদলে সাদাসিধা একটা বেনি করা মেয়ে চোখের সামনে দেখে থমকে গিয়েছিলো তাজ। যেখানে সব মেয়ে তার দিকে ঘন্টা খানেক হা করে তাকিয়ে থাকতো, সেখানে মেয়েটা মাথা নিচু করে ছিলো। ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠেছিলো তাজের। প্রথম দেখার সেই দিনের কথা তাজেরও খুব ভালো করেই মনে আছে। যেখানে সবাই তাজের সাথে ভাব জমাতে ব্যস্ত হতো সেখানে তিতির প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলতো না। তাজ যা বলতো ছোট ছোট উত্তর দিতো। তাজের তাই ভালো লাগতো তিতিরকে কিন্তু সেটা কখনো গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি তাজ। তবে আজ সেই ছোট ছোট স্মৃতিও তাজের চোখে ভাসছে। বুকের বা পাশটায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তাজ আবারও ডায়েরি খুলে পড়তে লাগলো।
আপনার মনে আছে তাজ, একবার আপনার মুভির শুটিংয়ের জন্য আমরা ভারতের কাশ্মীর গিয়েছিলাম। শীতের প্রকোপে কাশ্মীর তখন সাদা বরফে ঢাকা পড়েছে। আপনি শুটিংয়ে ব্যস্ত আর আমি কাশ্মীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রকৃতির মাঝে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম কোনো দিকে হুশ ছিলো না।
হঠাৎ আপনার গম্ভীর আওয়াজে চমকে উঠলাম, আচ্ছা কেয়ারলেস মেয়ে তো তুমি মুসকান।
সেদিন প্রথম আমাকে মুসকান বলে ডেকেছিলেন আপনি। কতগুলো বছর পর এই নামে কেউ ডেকেছিলো। আপনি হয়তো খেয়াল করেননি আমার চোখে চিকচিক করতে থাকা পানি। বাবা যখন বাড়ি ফিরে আমার মুসকান মা কোথায় বলতো, আমি যেখানেই থাকতাম এক ছুটে চলে আসতাম। এতগুলো বছর পর কেউ আবার সেই নামে ডাকলো। প্রত্যেক মেয়ে তার নিজের জীবনে বাবার মতো কাউকে চায়। যে তার সব আবদার হাসিমুখে পূরণ করবে, যেমনটা তার বাবা করে। আমি সেদিন আপনার মাঝে আমার বাবার ছায়া দেখতে পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিলো আপনি সেই মানুষ যাকে আমার জীবনে প্রয়োজন।
আপনার ধমকেই ঘোর কাটলো আমার, তুমি এই পাতলা ফিনফিনে চাদর গায়ে জড়িয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কোন সেন্সে ?
আমি কোনোমতে নিজেকে সামলে বললাম, আমার ঠান্ডা লাগছে না স্যার। আমি একদম ঠিক আছি।
দেখেছো আমি ঠিক জানতাম তুমি একটা রোবট। নাহলে সাধারণ কোনো মানুষের মাইনাস ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঠান্ডা লাগবে না এটা অসম্ভব। এই মেয়ে হাসে না, কাঁদে না, কথা বলে গুনে গুনে এখন আবার বলছে তার শীতও লাগে না। আস্ত একটা রোবট তো তুমি মুসকান।
আমি মাথা নিচু করে আপনার বকা শুনছিলাম। বাবাও ঠিক এভাবে শাসন করতো যখন আমি কারো কথা শুনতে চাইতাম না। আপনি সেদিন দেখেননি আমার চোখের আনন্দ অশ্রু। তাহলে আর আমাকে রোবট বলতে পারতেন না। আমাকে চরম পর্যায়ে অবাক করে দিয়ে আপনি নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন।
শুনো মেয়ে নিজের খেয়াল রাখো, এখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে কে দেখবে তোমাকে ? আমি তো নিজের কাজেই ব্যস্ত হয়ে থাকবো।
কথাগুলো বলে আপনি নিজের রুমে চলে গেলেন আর আমি আপনার জ্যাকেট আঁকড়ে ধরে ঘ্রাণ নিতে লাগলাম। (লেখনীতে তাহমিনা তমা)
তাজ আপনি ভালোবাসতে জানেন না কিন্তু আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে ঠিকই জানেন। কোনো মেয়ে এমন একজন মানুষকে ভালো না বেসে থাকতে পারবে, বলতে পারেন ?
এমন ছোট ছোট অনেক ঘটনার কথা লিখে রেখেছে তিতির। ঘটনাগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে তাজের স্মৃতিতে। তাজ অর্ধেক পড়ে-ই ডায়েরি বন্ধ করে ফেলেছে। কেউ কী বিশ্বাস করবে একজন মৃত মানুষকে ভালোবেসে ফেলছে তাজ। এতোটা ভালোবাসা লুকিয়ে রেখেছিলো জেনে ভালোবেসে ফেলছে তিতিরকে। হয়তো অনুভুতিগুলো তাজের মনে আগেই ছিলো কখনো বুঝতে পারেনি। কই মৌও তো কত ভালোবেসেছে কিন্তু সেটা জেনে তার প্রতি তো তাজের অনুভূতির জন্ম হয়নি। কিন্তু তিতিরকে হয়তো প্রথম থেকেই ভালোবেসেও উপলব্ধি করতে পারেনি কিন্তু এখন পারছে, বুকের ভেতর জ্বালাপোড়া করছে। দু’টো বছর তার ছোট থেকে ছোট জিনিসের খেয়াল রেখেছে তিতির। তাজের কখন কী চাই মুখ দেখে বুঝে যেত। এতো ভালোবাসার বিনিময়ে তাজ তাকে কী দিয়েছে ? অপমান, অবহেলা, অপবাদ, ঘৃণা। আচ্ছা একটা ডায়েরি পড়ে কাউকে ভালোবাসা যায় ? তার প্রতি আসক্ত হওয়া যায়, তাও একজন মৃত মানুষের ? তবে তাজ কীভাবে ভালোবেসে ফেলেছে তিতিরকে ? ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদলো তাজ।
ফিরে এসো মুসকান, একবার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দাও। একবার ভালোবাসি বলার সুযোগ দাও। এতো ভালোবাসার ঋণ মাথায় নিয়ে কীভাবে বাকি জীবন বাঁচবো আমি ? একটু ভালোবাসার সুযোগ দাও, ফিরে এসো।
কে বলে ছেলেরা কাঁদে না। এই তো তাজ কাঁদছে, আশপাশের বাতাস ভারী হচ্ছে তার কান্নায়। কিন্তু আজ আফসোস ছাড়া কিছুই করার নেই তার। কারণ সে নিজের ভালোবাসা অনুভব করতে পেরেছে মানুষটাই চলে যাওয়ার পর।
চলবে,,,,