#হৃদ_মাঝারে_তুমি,১১,১২
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১১
,,
,,
-“আরশিকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।”
-“কিহহ!” ফারহানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই একসাথে কথাটা বলে উঠলো।
-“কিডন্যাপার’রা এখন আমায় কল দিয়েছিল আর আমাকে _____ এই জায়গায় যেতে বলেছে। আমায় এক্ষুণি যেতে হবে।”
-“ঠিক আছে চল আমরাও তোর সাথে যাব।”
-“ওরা আমায় একা যেতে বলেছে। আমার সাথে যদি কেউ যায় তাহলে ওরা আরশির ক্ষতি করতে পারে তাই আমি একাই যাব। তোরা এক কাজ কর দু’জন মিলে রুহিকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যা।”
-“আরে কি বলছিস তুই এইসব! তুই একা যাবি মানে? সেখানে কয়জন মানুষ রয়েছে তা তোর জানা আছে? সেখানে যাওয়ার পর দেখা গেল কিডন্যাপার’রা ৫-৬ জন মানুষ। তখন তুই একা কীভাবে তাদের সাথে পেরে উঠবি। তারা সবাই মিলে তো তোকে…”
-“আমাকে নিয়ে তোদের এতো চিন্তা করতে হবে না। তোদের মধ্যে দু’জন রুহিকে হাসপাতালে নিয়ে যা আর বাকিরা যার যার বাসায় চলে যা।” কথাগুলো বলেই ফারহান সেখান থেকে চলে গেল।
ফারহানকে তার বন্ধুরা পিছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করল কিন্তু ফারহান তাদের কারও কথায় সায় দিল না। যখন ফারহান তাদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেল তখন শুভ বাকিদের উদ্দেশ্য করে বললো, “ফারহানকে একা যেতে দেওয়া ঠিক হবে না। এক কাজ করি আমি আর রনি ফারহানকে লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করে তার সাথে চলে যাই আর রহিম আর অভি তোরা দু’জন আরশির বান্ধবীকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যা। তারপর সে কিছুটা স্বাভাবিক হলে তাকে তার বাসায় দিয়ে আসিস।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে, তোরা তাহলে যা আর সেখানের অবস্থা বেশি কঠিন মনে হলে আমাদেরকে আগে থেকে জানিয়ে দিস। আমরাও সেখানে চলে আসবো।” অভি বললো কথাগুলো।
-“আচ্ছা তাহলে আমরা যাই, চল রনি।”
তারপর শুভ আর রনি দু’জনে ফারহানকে ফলো করে তার পিছনে পিছনে যাওয়া শুরু করলো। আর রহিম আর অভি এক সিএনজি ভাড়া করে রুহিকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেল।
.
-“আপনি আমায় এইখানে নিয়ে এসেছেন কেন রাফি?” কতগুলো ছেলেদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো আরশি।
-“যাতে তোমার জন্য তোমার ভাই ফারহান আমাদের কাছে এসে ধরা দেয়। বলতে পার তোমার ভাইকে এইখানে আনার জন্য তোমাকে আমরা একটা টুপ হিসেবে ব্যবহার করেছি।”
-“কিন্তু আপনি চাইলে তো ফারহান ভাইয়ার সাথে ভার্সিটিতেই দেখা করতে পারতেন। তাহলে শুধু শুধু এমনটা কেন করতে গেলেন?”
-“তোমার ভাই আগে আসুক তারপর এমনিতেই সব বুঝতে পারবা। এখন একটু চুপ করে থাক। এই রডগুলা কোথায় রেখেছিস?” রাফি তার সাথের একটা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো কথাটা।
-“ভিতরেই আছে ভাই।”
-“ভিতরে কেন রেখেছিস? যা সবগুলো বাহিরে নিয়ে আয়।” খানিকটা রাগী গলায় কথাটা বললো রাফি।
-“আচ্ছা ভাই।” বলেই সেই ছেলেটা রড আনতে চলে গেল।
রাফির কথাগুলো শুনে আরশি কিছুটা চমকে উঠলো। রাফি তার সাথের ছেলেটাকে রড আনতে বলছে কেন? রড এনে তারা কি করবে? তাকে মা*রবে নাকি? কিন্তু সে তো তাদের কোনো ক্ষতি করেনি। আরশির মাথায় যেন এইসবের কিছুই ঢুকছে না।
.
কিডন্যাপারের দেওয়া ঠিকানায় ফারহান চলে এসেছে। কিন্তু এখানে এসে আশেপাশে সে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। ফারহান কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সেখানে থাকা একটা গোডাউনের ভিতর ঢুকে পরল। গোডাউনের ভিতর ঢুকতেই ফারহান বেশ চমকে উঠলো। কেন’না সেখানে একটা চেয়ারের মধ্যে আরশি বসে আছে আর তার চারপাশে ৫-৬ জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলেকে ফারহানের খুব চেনা চেনা মনে হলো। কিন্তু ফারহান কেন জানি ছেলেটাকে চিনতে পারছে না।
-“কি মিস্টার ফারহান, আমায় চিনতে পার না?” রাফি বললো কথাটা।
-“তুমি সেই ছেলে না যাকে ওইদিন…”
-“যাকে ওইদিন তুই চ*ড় মে*রেছিলি। হ্যাঁ আমি সেই ছেলে। চিনতে পেরেছিস আমায়?” খানিকটা রাগ দেখিয়ে কথাগুলো বললো রাফি।
-“ওহ তাহলে তুই আমার থেকে সেই চ*ড়ের প্রতিশোধ নিতে আরশিকে এইখানে কিডন্যাপ করে এনেছিস? প্রতিশোধ নিবি ভালো কথা, এইখানে আরশিকে আনার কি দরকার? আমায় বললেই পারতি তোমার সাথে আমি মা*রামা*রি করতে চাই তাহলে আমি এমনিতেই তোর কাছে চলে আসতাম। যাইহোক, তোর হিসাব যেহেতু আমার সাথে তাহলে আরশিকে যেতে দে ও চলে যাক।”
-“হ্যাঁ যাবে তো, তবে আমাদের মা*র খেয়ে তুই আধমরা হয়ে যাবি না তখন তোর আধমরা শরীরটা নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন তো থাকতে হবে তাইনা? তার জন্য নাহয় আরশি থাকুক।”
-“ওকে বস তাহলে আর সময় নষ্ট না করে মাঠে মেনে পর।”
ফারহানের কথাটা শুনে রাফি তার এক সঙ্গীর হাত থেকে একটা রড নিয়ে ফারহানকে মা*রার জন্য এগিয়ে গেল। প্রথমে ফারহানের বুকে আঘাত করতে নিলে ফারহান খানিকটা পিছনে চলে গেল। এরপর আবার একইভাবে ফারহাকে মা*রতে নিলে ফারহানও আগেরমতো একইভাবে পিছনে চলে গেল। এবার রাফি খানিকটা রেগে ফারহানের মাথা বরাবর মা*রতে যাবে ওমনি ফারহান খানিকটা সাইডে সরে হাত দিয়ে রডটা ধরে ফেললো রাফির থেকে টান মে*রে রডটা চিনিয়ে নিয়ে তার বুক বরাবর সজোরে একটা লা*ত্থি মে*রে বসলো। লাত্থি খেয়ে রাফি সাথে সাথে মাটিতে পরে গেল। এ দৃশ্য দেখে রাফির দলের একটা ছেলে রড নিয়ে ফারহানকে মা*রতে এগিয়ে আসলো। যেই ছেলেটা ফারহানকে আঘাত করতে যাবে ওমনি ফারহান খানিকটা পিছু হটে ওই ছেলেটার গাল বরাবর একটা চ*ড় বসিয়ে দিল। চ*ড় খেয়ে ছেলেটা স্তব্ধ হয়ে ওইখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। এরপর ফারহান সেই ছেলেটাকে হাত দিয়ে সরিয়ে বাকিদেরকে ইশারায় আসতে বললো। এদিকে ওই ছেলেগুলো খানিকটা ভয় পেলেও হাতে একটা করে রড নিয়ে ফারহানকে মা*রার জন্য এগিয়ে আসতে লাগলো। ফারহানও ওই ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের হাতে থাকা রড দিয়ে ছেলেগুলোকে ইচ্ছামতো মা*রতে আরম্ভ করলো। মা*র খেয়ে সব ছেলেগুলো যখন আধমরা হয়ে পরল তখন হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন ফারহানের পিঠে জোরে একটা লা*ত্থি মে*রে বসলো। আচমকা এমন কাণ্ডে ফারহান খানিকটা দূরে গিয়ে পরল তার সাথে তার হাত থেকে ওই রডটাও পরে গেল। ফারহান পিছনে ফিরে দেখল তার ঠিক পিছন বরাবর রাফি একটা রড হাতে দাঁড়িয়ে আছে। লা*ত্থিটা যে তাকে রাফি মে*রেছে এটা বুঝতে ফারহানের আর অসুবিধা হলো না।
রাফি এবার সেই রড নিয়ে ফারহানকে মা*রার জন্য এগিয়ে এলো। যেই রাফি ফারহানকে মা*রতে যাবে ওমনি ফারহান তার পা দিয়ে রডের মা*র আটকে ফেললো আর সাথে সাথে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালো। ফারহান রাফির সোজাসুজি না দাঁড়িয়ে ভুলবশত পিছনে দাঁড়িয়েছে। এই দৃশ্য দেখে রাফি এবার তার হাতের রড দিয়ে ফারহানের পিঠের দিকে তাক করে সেই রডটা চুরির ন্যায় চালিয়ে দিল। ফারহানও তৎক্ষনাৎ পিছনে ঘুরেই তার হাত দিয়ে রডটা ধরে ফেললো আর রাফির থেকে মোচড় মে*রে সেই রডটা চিনিয়ে নিল। অতঃপর রাফির সঙ্গীদের মতো ফারহান রাফিকেও রড দিয়ে ইচ্ছামতো ধোলাই দিতে লাগলো। প্রায় ৪-৫ টা আঘাত করার পর আচমকা কে যেন ফারহানকে এসে থামিয়ে দিল। ফারহান সেই ব্যাক্তিটার দিকে তাকিয়ে দেখে সে তারই বন্ধু শুভ। শুভকে দেখে ফারহান বেশ চমকে উঠলো আর রাফিকেও মা*রা থামিয়ে দিল। শুভ তখন ফারহানের হাত থেকে রডটা নিচে ফেলে দিয়ে বললো,
-“অনেক তো মে*রেছিস আর কত মা*রবি? যে মা*র খেয়েছে তাতে আগামী ২-৩ সপ্তাহ বিছানা থেকে উঠতে পারবে না।”
-“হ্যাঁ শুভ ঠিকই বলেছে। এবার ওকে ছেড়ে দে, বেচারা অনেক মা*র খেয়েছে।” হঠাৎ সেখানে রনি এসে কথাটা বললো।
-“শুভ! রনি! তোরা এইখানে! তোরা এইখানে কীভাবে এলি?” ফারহান বেশ চমকিত কণ্ঠে কথাটা বললো।
-“তুই চলে আসার পর তোকে ফলো করতে করতে পায়ে হেঁটে এই অবধি আসলাম।” শুভ বললো কথাটা।
-“তার মানে তোরা আমার কথা অমান্য করে…”
-“আরে আমরা তো তোকে বিপদে পরলে বিপদ থেকে উদ্ধার করবো বলে এসেছিলাম। কিন্তু এইখানে এসে তোর যেই সিন দেখলাম তাতে আমি আর রনি তোদের মধ্যে না এসে এক কোণে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে সিনটা এনজয় করতে লাগলাম।”
-“বন্ধু তুই এমন ফাইট কখন, কীভাবে, কার থেকে শিখলি বল তো?” রনি বললো কথাটা।
-“এইসব আবার শিখতে হয় নাকি? পরিস্থিতিতে পরলে এমনিতেই নিজের লুকিয়ে থাকা প্রতিভা বেরিয়ে আসে।” খানিকটা নায়কীয় ভঙ্গিতে কথাগুলো বললো ফারহান।
-“কীভাবে কীভাবে এদের সঙ্গে পেরে উঠেছিস তাই এখন বড় বড় কথা বলছিস। যাইহোক এবার আরশিকে নিয়ে ওর বাসায় চলে যা।”
-“আর এদের কি হবে?”
-“তোর ফাইট দেখে আমি আগেই ইমরানকে কল করে বলে দিয়েছি তার এলাকার ছেলেরা তোর সাথে মা*রামা*রি করছে সে যেন এইখানে এসে এদেরকে নিয়ে যায়। এবার তোকে আর এদেরকে নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না। তুই আরশিকে নিয়ে বাসায় চলে যা।”
-“যাক ভালোই করেছিস ইমরানকে এদের ব্যাপারে জানিয়ে। এই আরশি চল।” ফারহান পিছনে ঘুরে আরশির দিকে তাকিয়ে বললো কথাটা।
আরশি কিছুক্ষণ আগে অবাক হয়ে ফারহানের ফাইট দেখে যাচ্ছিল। ফাইটের মধ্যে হঠাৎ ফারহানের বন্ধুরা চলে আসাতে আরশি চুপ করে তাদের কথাবার্তা শোনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল। ফারহানের ডাক দেওয়াতে এখন আরশি চুপচাপ তার কাছে চলে আসলো। তার কাছে এসে দাঁড়াতেই আরশি লক্ষ্য করলো ফারহানের ডান হাতের তালু থেকে চুইয়ে চুইয়ে র*ক্ত পরছে। ফারহানের হাতে র*ক্ত দেখেই আরশি কিছুটা চেঁচিয়ে উঠে বললো, “একি তোমার হাতে র*ক্ত এলো কীভাবে!”
আরশির কথাটা শুনে ফারহান তার হাতের দিকে তাকালো সাথে তার বন্ধুরাও। ফারহান দেখল তার ডান হাতের তালু থেকে হালকা র*ক্ত পরছে। একি তার হাতে র*ক্ত এলো কীভাবে! তখনই ফারহানের মনে হলো পিছন থেকে রাফি যখন চুরির ন্যায় তার দিকে রডটা চালিয়ে দিয়েছিল আর সে সেটা হাত দিয়ে ধরে ফেলেছিল তখনই হয়তো রডের ধারালো অংশের দ্বারা তার হাতের তালু ফেটে গেছে আর এখন সেখান থেকে র*ক্ত বের হচ্ছে।
-“আরে তোর হাত থেকে র*ক্ত বের হচ্ছে কীভাবে?” শুভ বললো।
-“আরে এই রাফির দেওয়া রডের আঘাত আটকাতে গিয়ে হয়তো হাতের তালু ফেটে এখন র*ক্ত বের হচ্ছে। সমস্যা নেই বেশি র*ক্ত বের হয়নি।”
-“বেশি র*ক্ত বের হয়নি মানে! আমি তো দেখতে পাচ্ছি কত র*ক্ত বেরিয়েছে তোমার হাত থেকে। আর তুমি বলছ বেশি র*ক্ত বের হয়নি! চল এক্ষুণি তোমায় নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে আর হাতে ব্যান্ডেজ করাতে হবে।”
-“আরে তুই এতো…”
-“এই তুমি চুপ থাক। কতটুকু কে*টে গেছে দেখছি না আমি। এইসব আমার জন্য হয়েছে। আমাকে যদি এরা এইখানে নিয়ে না আসতো…”
-“আরশি এইখানে তোর কোনো দোষ নেই তাই শুধু নিজেকে দোষী ভাবিস না। আমার সাথে এই রাফির এমনিতেই একটা বিষয় নিয়ে একদিন কথা কা*টাকাটি হয়েছিল তাই সে আজ আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।”
-“হয়েছে এখন এইসব কথা বাদ দাও আর চল এইখান থেকে। হাসপাতালে গিয়ে তোমার হাত ব্যান্ডেজ করাতে হবে।”
-“হ্যাঁ আরশি ঠিক বলেছে তোর হাত ব্যান্ডেজ করাতে হবে নাহলে পরে হাতে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। চল এবার এইখান থেকে এইখানে আর থেকে লাভ নেই।”
তারপর ফারহান, আরশি আর ফারহানের বন্ধুরা সেই গোডাউন থেকে বেরিয়ে একটা সিএনজি ভাড়া করে হাসপাতালে চলে গেল ফারহানের হাতে ব্যান্ডেজ করাতে। সেখানে গিয়ে একটা নার্সের দ্বারা ফারহানের হাত ব্যান্ডেজ করা হলো। অতঃপর ফারহান তার বন্ধুদেরকে যার যার বাসায় চলে যেতে বলে আরশিকে নিয়ে বাসায় চলে গেল। আরশিকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফারহান নিজের বাসায় চলে আসলো।
.
.
Loading…….
#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১২
,,
,,
-“তোর হাতে কি হয়েছে ফারহান? তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেন?”
ফারহান বাসায় ঢুকতেই রোকসানা বেগম তার হাতে ব্যান্ডেজ দেখে উক্ত কথাটা বললেন। রোকসানা বেগমের কথা শুনে ফারহান কিছুটা ভাবনায় পরে গেল তার আম্মুকে এখন কি বলবে এ নিয়ে। সত্যিটা বললে হয়তো তার আম্মু তাকে মাসখানেক ভার্সিটিতেই যেতে দিবেন না। তাই এখন মিথ্যা বলা না ছাড়া তার কাছে কোনো উপায় নেই। ফারহান এবার কিছু না ভেবেই বলে উঠলো,
-“আরে আম্মু আজ একটা বন্ধুর বাইক চালাতে গিয়ে হঠাৎ এক জায়গায় স্লিপ খেয়ে পরে যাই। তাই হাতটা একটু কে*টে গেছে।”
-“কোন বন্ধুর বাইক চালাতে গিয়েছিলি? আর একটু কা*টলে কেউ হাতে ব্যান্ডেজ করে নাকি? নিশ্চয়ই অনেক কে*টেছে।”
-“আরে রনি আছে না তার বাইক চালাতে গিয়ে এমনটা হয়েছে আরকি। আর হাত বেশি কা*টেনি তবে ডাক্তার বললো ব্যান্ডেজ করে নিলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে তাই ব্যান্ডেজ করলাম।”
-“তোর নিজের একটা গাড়ি থাকতে তুই কেন আরেক জনের বাইক চালাতে গেলি বলতো? দেখ এখন সেটার জন্য তোর হাতের কি অবস্থা হলো।”
-“আরে আম্মু বেশি কিছু হয়নি তো, অল্প কে*টেছে মাত্র। দেখবে দু’দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। যাইহোক, এখন এইসব বাদ দাও অনেক খুদা লেগেছে খেতে দাও।”
-“তোর তো হাত কা*টা খাবি কীভাবে?”
-“খাইয়ে দেওয়ার জন্য তুমি তো আছই আম্মুজান।”
-“আচ্ছা তুই টেবিলে গিয়ে বস আমি তোর জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসছি।” বলেই রোকসানা বেগম রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালেন।
কিছুক্ষণ পর রোকসানা বেগম ফারহানের জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে এসে ফারহানকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন। খাওয়া শেষে ফারহান নিজের রুমে চলে আসলো। রুমে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ফারহান কাপড় পালটিয়ে তার আব্বুর অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে আসলো। নিচে আসতেই রোকসানা বেগম ফারহানকে বাহিরে যেতে দেখে বলে উঠলেন,
-“কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
-“অফিসে যাচ্ছি।”
-“অফিসে যাচ্ছিস মানে! তুই এই অবস্থায় অফিসে গিয়ে কি করবি?”
-“আরে আম্মু আমার তো হাত’ই কে*টেছে পা তো আর কা*টেনি যে কোথাও যেতে পারবো না। তা ছাড়া অফিসে গিয়ে আমার তো কোনো কাজ করতে হয়না। আমি অফিসে যাই যাতে আব্বু এইসময় বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে পারেন। আর ওদিকে আমি বসে বসে কিছুক্ষণ অফিস দেখাশোনা করি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে যা তাহলে। আর গাড়ি তো নিয়ে যেতে পারবি না তাহলে এক কাজ করিস রিক্সা করে চলে যাস।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে রিক্সা করেই যাব। এখন তাহলে আমি যাই।” কথাটা বলেই ফারহান বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো।
.
-“তুমি এসেছ, আরে তোমার হাতে ব্যান্ডেজ কেন?”
ফারহান অফিসে ঢুকে তার আব্বুর ক্যাবিনে ঢুকতেই রফিক আহমেদ তাকে দেখে উক্ত কথাটা বলে উঠলেন। ফারহানও ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে রফিক আহমেদের প্রশ্নের প্রতিউত্তরে বললো, “বাইক চালাতে গিয়ে একটা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাই হাতটা একটু কে*টে গেছে।”
-“একটু কা*টলে কেউ হাতে ব্যান্ডেজ করে নাকি? আর বাইক চালাবে একটু সাবধানে চালাবে না।”
-“সাবধানেই তো চালাচ্ছিলাম কিন্তু এক জায়গায় গিয়ে হঠাৎ স্লিপ খেয়ে পরে যাই আর হাতটা কে*টে যায়।”
-“দুপুরের খাবার খেয়েছ?”
-“হ্যাঁ খেয়ে এসেছি।”
-“আচ্ছা তাহলে তুমি থাক আমি বাসায় গেলাম।” বলেই রফিক আহমেদ ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন।
রফিক আহমেদ চলে গেলে ফারহান গিয়ে উনার চেয়ারে বসে পরল। আর পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফেসবুকিং করতে লাগলো। ফারহান ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রোল করছে এমন সময় তার ফোনে একটা কল আসলো। ফারহান স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ইমরান কল দিয়েছে। সেও সাথে সাথে কলটা রিছিভ করলো।
-“হে ইমরান বল?”
-“ভাই আপনি ঠিক আছেন তো? মানে রাফিরা আপনার কোনো ক্ষতি করেনি তো?”
-“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। আর ওরা আমার কি ক্ষতি করবে, ওরা আমার যে ক্ষতি করতে চেয়েছিল আমিই উলটা তাদের সেই ক্ষতি করে দিলাম। এখন বল ওদের অবস্থা কি? সবক’টাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিস?”
-“হ্যাঁ ভাই, শুভ ভাই কল দেওয়ার পর পর-ই আমি ওইখানে চলে আসি। আমি আসতে আসতে ততক্ষণে আপনারা ওইখান থেকে চলে গিয়েছেন।”
টুক টুক…
-“May I Come In Sir?”
ফারহান ইমরানের সাথে ফোনে কথা বলছিল এমন সময় রুমের দরজায় কে যেন ঢুকা দিয়ে ভিতরে আসার অনুমতি চায়। ফারহান ফোনটা নিজের থেকে একটু সরিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটাকে ভিতরে আসার অনুমতি দেয়। ফারহানের অনুমতি পেয়ে নীলা মেয়েটা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। আর ঢুকেই ফারহানের সামনা-সামনি এসে দাঁড়িয়ে রইলো।
-“শুন ইমরান, তোর এলাকার ছেলেগুলোকে বলে দিস নেক্সট টাইম যেন আমার সাথে আর লাগতে না আসে। নাহলে এইবার তো শুধু হাসপাতালে পাঠিয়েছি, পরেরবার হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তাদের লা*শও থাকবে না।”
-“আচ্ছা ভাই ঠিক আছে আমি ওদেরকে বুঝিয়ে বলবো নে ওরা যেন আর আপনার সাথে লাগতে না যায়। আর ভাই ওরা আজ যা করেছে তার জন্য আমি আপনার কাছে দুঃখিত। আসলে ভাই ওরা তো…”
-“ওদের কাজকর্মের জন্য তুই দুঃখিত হবি কেন? এইখানে তো আর তোর কোনো হাত নেই। তা ছাড়া ওদের কাজকর্মের ফল তো ওরা পেয়েছেই। তবে তোকে যেটা বললাম তুই ওদেরকে তা বুঝিয়ে বলিস।”
-“আচ্ছা ভাই।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাক। এখন তাহলে রাখছি।” বলেই ফারহান কল কে*টে দিল।
ইমরানের সাথে কথা বলা শেষে ফারহান সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নীলা মেয়েটার দিকে তাকালো। সে দেখল নীলা তার দিকে কেমন যেন একটা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে। সেই চাহনিটা অবাকে ভরপুর নাকি ভয়ে সেটা বুঝা মুশকিল। মূলত নীলা ফারহানের কথাগুলো শুনেই তার দিকে এমন চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে। তার কথাগুলো শুনে নীলা ভাবতে থাকে, “স্যারের ছেলে কি মানুষের সাথে মা*রামা*রি করেন নাকি? তা না হলে উনি কাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ওদের লা*শও থাকবে না বললেন? আর উনার হাতে ব্যান্ডেজ কেন? মা*রামা*রি করে কি হাত কে*টে ফেলেছেন নাকি?”
-“কিছু বলবেন?”
নীলা নিশ্চুপ। আনমনে শুধু ফারহানের বিষয় নিয়ে ভেবে চলছে।
-“হ্যালো মিস? কিছু বলবেন নাকি?” নীলার দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে তুরি মে*রে বললো কথাটা।
-“হ্যাঁ হ্যাঁ, বলবো স্যার বলবো।” ধ্যান থেকে বেরিয়ে।
-“তো বলেন কি বলবেন? এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
-“না মানে সরি স্যার।”
-“It’s Okay. এবার বলেন কি বলবেন?”
-“আসলে স্যার আমার আম্মু একটু অসুস্থ। আমার একটু ছুটি লাগতো এখন।”
-“ছুটিই যখন নিবেন তাহলে আম্মুকে অসুস্থ রেখে অফিসে আসার কি দরকার ছিল?”
-“না মানে ইয়ে মানে…”
-“মানে মানে করা লাগবে না আর। একটু ওয়েট করেন, আমি আব্বুকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখি উনি কি বলেন।”
ফারহানের কথায় নীলা শুধু মাথা নাড়ালো। তারপর ফারহান তার আব্বুর নাম্বারে কল দিল। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর তার আব্বু কল রিছিভ করলেন।
-“হে ফারহান বল?”
-“আব্বু অফিসের একজন ছুটি নেওয়ার জন্য এসেছে। কি করবো?”
-“কে সে?”
-“দাঁড়াও জিগ্যেস করে বলছি। এই আপনার নাম কি?” নীলাকে উদ্দেশ্য করে।
-“জি নীলা।”
-“আব্বু নীলা নামের একজন এসেছে।”
-“ওহ নীলা এসেছে। আচ্ছা তাহলে ছুটি দিয়ে দাও।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।” বলেই ফারহান কল কে*টে দিল।
-“যান আপনাকে ছুটি দেওয়া হলো।” নীলার দিকে তাকিয়ে।
-“Thanks You Sir.” আমি তাহলে আসি স্যার।” কথাটা বলেই নীলা চলে যেতে নিচ্ছিল তখনই সে আবার ফিরে এসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বললো, “স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
-“কি কথা?”
-“স্যার আপনার হাতে ব্যান্ডেজ কেন?”
-“মানুষ কখন হাতে ব্যান্ডেজ করে?”
-“যখন হাত খুব বেশি কে*টে যায়।”
-“আমার বেলায়ও একই অবস্থা।”
-“কিন্তু স্যার হাত কা*টলো কি করে?”
-“সেটা কি তোমায় বলতে হবে?” রাগী গলায়।
-“সরি স্যার। আমি তাহলে আসি স্যার।” বলেই নীলা ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
.
পরেরদিন সকালবেলা ফারহান ভার্সিটিতে যেতেই তার বন্ধুরা তাকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। ফারহান তাদের কাছে গিয়ে সবার তাকানো দেখে বসতে বসতে বললো, “কিরে সবাই আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? আমার কি নতুন চেহারা বেরিয়েছে নাকি?”
-“আরে তুই গতকাল এতো ফাইট করলি আর তোর হাতেও আঘাত পেলি। তারপরও তুই আজকে ভার্সিটিতে এসেছিস দেখেই আমরা অবাক হচ্ছি।”
-“এইখানে এতো অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তো আর ওদের থেকে মা*র খাইনি যে ভার্সিটিতে আসতে পারবো না।”
-“যাইহোক এই অবাক হওয়ার কথা উঠাতে একটা বিষয় মনে পরে গেল। গতকাল যে তোর হাত কা*টা দেখে আরশি কেমন রিয়েকশন করেছিল তা একবারও খেয়াল করেছিস?”
-“কেমন রিয়েকশন করেছিল?”
-“আরে তুই আরশির দিকে তাকাসনি তখন? ওর চেহারা একদম কাঁদো কাঁদো হয়ে পরেছিল। যেন তুই ওর প্রেমিক আর তোর হাত কা*টা দেখে ও সহ্য করতে পারছিল না।”
-“আরে আমি তো আর আরশির দূরের কেউ না। আমি ওর কাজিন। তাই আমার হাত কা*টা দেখে হয়তো ওর একটু খারাপ লেগেছে। এইখানে প্রেমিক কথা কোথা থেকে আসলো?”
-“আরে এইটা তো কথার প্রসঙ্গে বললাম। যাইহোক এইসব বাদ দে। গতকাল যে ছেলেগুলোদের মে*রেছিলি তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে?”
-“হ্যাঁ ইমরান সবাইকে ভর্তি করে দিয়েছে।”
তারপর ফারহান আর তার বন্ধুরা এই সেই নিয়ে কথা বলতে বলতে একসময় আড্ডায় মেতে উঠলো। কিছুক্ষণ পর ক্লাসের সময় হয়ে গেলে সবাই মিলে ক্লাসে চলে গেল।
.
.
Loading…….