মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸 #পর্ব- ২

0
422

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

অর্ষার চুলের মু/ঠি ধরে টানতে টানতে সকলের সামনে ফেলে দিয়ে, পেটে অনাবরত লা/ত্থি মারতে থাকে সামনে থাকা অমানুষটা । সঙ্গে সঙ্গে নিজের আখিজোড়া খুলে পিটপিট করে তাঁকায় অর্ষা। কথা বলার মাঝে, যখন সে অনুভব করলো, কেউ তার চুল ছেড়ে দিয়েছে, তখনি তার নেত্রপল্লব বন্ধ হয়ে যায়। ভেঁসে উঠে অতীতের কিছু ভয়ংকর দৃশ্য। অর্ষা পরক্ষনেই রাগে ক্ষোভে নিজের হাতজোড়া মুঠো করে, সামনে থাকা ব্যক্তিকে ঠাটিয়ে /চর বসিয়ে দেয়। চর খেয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বর্ণ, কিন্তু তার আখিজোড়া এক মুহুর্তের জন্যে স্হীর হয়ে পরে অর্ষার দিকে। অর্ষার কালো কোকড়া , ঘন চুল, কোমড় ছাড়িয়ে হাটু অব্দি ছুই ছুই করছে। বর্ণ কিছুক্ষনের মাঝেও ঘোরে চলে গেলেও, অর্ষার দিকে তাকিয়ে বাস্তব জগতে ফিরে আসে। অর্ষা রক্তচক্ষু নিয়ে তাঁকিয়ে আছে বর্ণের দিকে। অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ আপনি সেই অভদ্র লোকটা না? আবারো আমাদের পিছনে পিছনে চলে এসেছেন অসভ্যতামী করতে? হাউ ডেয়ার ইউ ইডিয়েট! আমার চুলে হাত দেওয়ার সাহস কীভাবে হয়? আজকে আপনাকে আমি…’

কথাটি সম্পূর্ন শেষ না করে, অর্ষা পুনরায় বর্ণের দিকে হাত উঁচু করতে নিলে, বর্ণ খপ করে হাত ধরে ফেলে। অর্ষা শত চেষ্টা করেও নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না বর্ণের থেকে। বর্ণের বিশাল পেশিবিশিষ্ট হাত দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে, লোকটা নিয়মিত জিম করে। এতো বিশাল পেশিবিশিষ্ট হাতের কাছে, নিজের হাতকে অত্যান্ত নঘন্য মনে হচ্ছে অর্ষার। অর্ষার মনের ভাব কিছুটা হলেও বুঝতে সক্ষম হয়েছে বর্ণ। বর্ণ বাঁকা হেসে বলে, অর্ষাকে নিজের দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে জবাব দেয়,

‘ আমি আপনাদের এলাকার সেই ছ্যাচরা কিংবা বখাটে ছেলে গুলো নই, তাই ওদের গাঁয়ে আপনি হাত দিতে পেরেছেন বলে, আমার সাথেও তাই করবেন! তা ভুলেও ভাবতে যাবেন না। বর্ণ আহমেদের সাথে গুন্ডামি করে লাভ নেই। একবার রেন্ডমলি চর খেয়েছি বলে, বার বার খাবো! হাউ ডেয়ার ইউ গার্ল? ‘

অর্ষা কিছু বলার পূর্বেই, একটা ছোট্ট বাচ্চা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে, অনুনয়ের সুরে অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ আন্টি! আন্টি! তুমি আংকেলকে মারলে কেন? আংকেল তো সবেমাত্র আসলো। কিছুটা মজা করে, আমি তো তোমার চুল খোপা দেখে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তুমি পানেস্মেন্ট দিতে চাইলে, আমাকে দাও। আংকেলের কোন দোষ নেই। ‘

অর্ষা বাচ্ছাটার কথা শুনে, জ্বিবে কামড় দিয়ে সামান্য মাথা চুলকায়। সে বেশ বড় ভুল করে ফেলেছে, শুধু শুধু লোকটার দোষ না থাকা সত্ত্বেও, লোকটার গাঁয়ে হাত তুলেছে। এই প্রথমবার কাউকে মেরে, লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে অর্ষা। বর্ণের দিকে তাঁকানোর সাহস পাচ্ছে না অর্ষা। সে বুঝতে পারছে বর্ণের চোখমুখ দিয়ে একপ্রকার অগ্নিশিখা বের হচ্ছে। অর্ষা একবার ভাবলো বর্ণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে, কিন্তু পরক্ষনে সে তার মত পাল্টিয়ে ফেললো। সে কেন ক্ষমা চাইবে? অর্ষা রেজওয়ান কিছুতেই ক্ষমা চাইবে না। বর্ণ অর্ষার কানে ফিসফিস করে বলে,

‘ আমি জানি আপনি ক্ষমা চাইবেন না। এলাকার বখাটেরা যেখানে আপনার পা ধরে মাফ চায়, সেখানে আমার মতো অতি সামান্য যুবকের কাছে আপনি ক্ষমা চাইবেনই বা কেন? ‘

অর্ষা বর্ণের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই, বর্ণ মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,

‘ আপনি হয়তো ভাবছেন, আমি কি করে আপনার সব খবরাখবর জানি ,তাইতো? ‘

অর্ষা দ্রুততার সাথে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানালো। অর্থাৎ হ্যা সে জানতে চায়। বর্ণ পুনরায় ঝুঁকে গিয়ে, অর্ষার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

‘ ইটস কলড ম্যাজিক! মিস ঝাঁজওয়ালী। ‘

অর্ষা বর্ণের কথার সম্পূর্ন ভাব বুঝতে সক্ষম হওয়ার পূর্বেই, বর্ণ পুনরায় বলে উঠলো,

‘ আপনার বোন আমার হবু ভাবি! সেই সুবাধে আপনার খবরও সব আজকে পেয়েছি আর কি। ‘
বর্ন অর্ষার হাত শক্ত করে হুট করে ধরে, একপ্রকার টেনেই নিয়ে যেতে থাকে। অর্ষা শত চেষ্টা করেও, নিজের হাত ছাড়াতে পারছে না। বর্ণ অর্ষার হাত ধরে বাগানের পিছনের দিকে একটা দুতালা ঘর আছে, সেখানে নিয়ে যেতে থাকে। এদিকটা একপ্রকার নিশ্চুপ! কেউ এদিকে যাতায়াত করেনা। জনশূন্য একটি জায়গা। অর্ষা বার বার জিজ্ঞাসা করছে, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবারের ন্যায়, বর্ণ চুপচাপ। মুখশ্রী অদ্ভুদ্ভাবে লাল হয়ে আছে তার। ফর্সা মুখের এক পাশে ঠায় করে নিয়েছে, অর্ষার দেওয়া সেই চরের চিহ্ন! বর্ণ দুতালার একটি অন্ধকার ঘরে নিয়ে এসে, অর্ষার হাত ছেড়ে দেয়। অর্ষা রাগে ক্ষোভে চেচিয়ে প্রশ্ন করে,

‘ আপনার সাহস দেখে আমি বার বার অবাক হচ্ছি! আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন…..’

অর্ষার কথার মাঝেই,দেয়ালের সাথে অর্ষার বাহু চেপে ধরে, দ্বিগুন চেচিয়ে গর্জে উঠে বলে,

‘ লিমিট তো আপনি ক্রস করেছেন, মিস ঝাজওয়ালী!
যার গাঁয়ে কখনো কেউ ফুলের টোকা দেওয়ার সাহস পাইনি, তাকে আপনি চর মেরেছি। আপনাকে তো তার দাম দিতেই হবে। ‘

অর্ষা নিজের থেকে সজোড়ে ধাক্কা দেয়। অর্ষা ধাক্কা খেয়ে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বর্ণ। অর্ষা পকেটের পিছনে থেকে ধারালো ছু/রি খানা বের করে, বর্ণের দিকে তাক করে ক্ষিপ্ত সুরে বলে উঠে,

‘ আমি আপনাকে আগেও বলেছিলাম, আমাকে অন্য মেয়েদের মতো অসহায় ভাব্বেন না। আপনি কি ভেবেছেন? এই অন্ধকার ঘরে আমাকে একা নিয়ে এসে, অসভ্যতামি করবেন। আপনার কু মতলব আমি কি বুঝি না? ‘

বর্ণ দেয়ালে ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে, অর্ষার চারদিকে ঘুড়তে ঘুড়তে অধরের কোণে অদ্ভুদ হাসি ঝুলিয়, বলতে থাকে, ‘ আপনি ঠিকই ধরেছেন মিস ঝাঁজওয়ালী। আমার অসৎ উদ্দেশ্য তো আছেই, কিন্তু তা আপনার কল্পনারও বাইরে। ‘

কথাটি বলার সাথে সাথে, অর্ষার হাত থেকে কৌশলে ছু/রি খানা কেড়ে নিয়ে, বর্ণ অর্ষার হাত পিছন থেকে একপ্রকার মো/চরে ধরে, অর্ষার গলা বরাবর ছু/রি ধরে। ঘটনাটি এতো দ্রুততম সময় ঘটে যাওয়ায়, কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না অর্ষা। লোকটা সত্যিই এক অদ্ভুদ রহস্যময় চরিত্র মনে হচ্ছে অর্ষার কাছে। বর্ণ বেশ দূরত্ব নিয়ে অর্ষার থেকে সরে এসে নিম্ন সুরে বললো,

‘ আমি আপনাকে বলেছিলাম মিস ঝাঁজওয়ালী। আমাকে আপনার এলাকার বখাটাদের সাথে কমপেয়ার করতে যাবেন না। আমাকে কাবু করা এত্তো সহজ না, তাও আবার এইসব সামান্য ছু/রি দিয়ে। ‘

বর্ণ কথাটি বলে, ছু/রি টা ফেলে দিয়ে। এক পা দু পা করে বাইরে বেড়িয়ে, দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। অর্ষা দ্রুত দৌড়ে, দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে,

‘ আপনি বাইরে থেকে দরজা আটকালেন কেন? এখুনি খুলুন বলছি, নাহলে আমি!..

‘ নাহলে কি? আপনি তো অন্য মেয়েদের মতো নন। খুব তো সাহসী। তাহলে আমাকেও একটু সাহস দেখান। আমিও দেখতে চাই, কতটুকু সাহস আপনার। বর্ণ আহমেদকে চর মারার জন্যে ইউ হেভ টু পে ফর দিজ!’

কথাটি বলেই বর্ণ বেড়িয়ে যায়। যদিও শুধুমাত্র দশ মিনিটের জন্যেই অর্ষাকে আটকে রাখার পরিকল্পনা বর্ণের। বর্ণ গাঁয়ে হুলুদের অনুষ্টানে গিয়ে, মিরার কাছে গিয়ে বসে বলে,

‘ আমার হবু ভাবিজ্বী! কালকের জন্যে আমি রেইলি সরি। আমি আপনাকে চিনতে পারেনি।’

মিরা মিষ্টি হেসে বলে, ‘ আরে দূর বোকা সমস্যা নেই।’

বর্ণ কিছুটা ঠাট্টার সুরেই মিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ আচ্ছা ভাবি আগে এইটা বলুন তো? আপনি এত্তো মিষ্টি, কিন্তু আপনার বোন অর্থাৎ মিস ঝাঁজওয়ালী এতো ঝাল কেন? পুরাই যেন মিরচি। ‘

বর্ণের কথা শুনে মিরাসহ, মিরার বাকি কাজিনেরা সকলে হেসে উঠে। তখনি মিরার একজন কাজিন অর্পি স্টেজে এসে, বর্ণের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ শুধু কি ভাবির সাথেই কথা বললে হবে জনাব? একটু বেয়াইনদের দিকেও নজর দেন। ‘

বর্ণ প্রতিউত্তরে মুচকি হাসি দেয়। মিরার হবু বর আরফান এখনো উপস্হিত হয়নি। সে গত ৫বছর ধরে ক্যানাডা ছিলো বর্ণের সাথে। বর্ণ কিছুদিন আগে চলে এলেও, আরফান তার চাকরীর সুবাধে ক্যানাডায় থেকে যায়। আজকে তার দেশে ল্যান্ড করার কথা। মিরার সাথে পারিবারিকভাবেই বিয়েটা ঠিক হয়েছে আরফানের। আরফানের বাবা বার বার তার ছেলেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে অনাবরত, কিন্তু আরফান রিসিভ করছে না। আরফানের বাবা বেশ চিন্তিত তা নিয়ে। সময়ের মধ্যে তার ছেলে আসতে ব্যর্থ হলে, পুরো অনুষ্টানেই নষ্ট হয়ে যাবে। মেয়েপক্ষের সামনে সব মান – সম্মান শেষ হয়ে যাবে আরফানের বাবার।
_________

অপরদিকে অর্ষা অন্ধকার রুমের দিকে তাকিয়ে হুট করে কেঁদে উঠে। জায়গাটা তার কাছে, কেমন যেন অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে। অর্ষার কানে ভেসে উঠে, কোন এক মেয়ের আর্তনাদ। অর্ষা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ধপ করে মেঝেতে বসে,ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। চিৎকার করে বলে উঠে,

‘ আমার বাচ্চা। ‘

কথাটি বলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পরে যায় সে। এদিকে বার বার অর্ষার ফোনে প্রতিনিয়ত ফোন করে যাচ্ছে মিরা, কিন্তু কিছুতেই রিসিভ করছে না অর্ষা। মিরা স্টেজ থেকে উঠে গিয়ে, নিজের কাজিনদের কাছে যায়। সেখানে বর্ণও ছিলো। মিরা সকলের কাছে গিয়ে, চিন্তিত সুরে বললো,

‘ অর্ষার কোন খবর পাচ্ছি না, সে যে ফোনে কথা বলতে কোথায় গেলো। তারপর থেকে কোন খবরই নেই। তোরা কেউ জানিস? অর্ষা কোথায়? ‘

সকলে মাথা নাড়িয়ে না জানায়। অর্থাৎ তারা জানে না। বর্ণ একপলক ঘড়ির দিকে তাঁকালো। প্রায় ২০ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে। আড্ডার মাঝে সে অর্ষার কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলো।

বর্ণ মুখ দিয়ে ‘ ওহ শিট’ উচ্চারণ করে দ্রুত দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। সকলের বর্ণের হুট করে করা এমন আচরণে বেশ খানিক্টা অবাক হয়ে গেলো। বর্ণ দৌড়ে সেই বাগানের শেষে থাকা দোতলার ঘরের কাছে গিয়ে দেখলো সেখানে দরজা খুলা। এতে বেশ অবাক হলো বর্ণ। বর্ণের মনে অজানা এক ভয়ের উৎপত্তি ঘটলো। বর্ণ রুমের ভিতরে ঢুকে গিয়ে দেখে……….

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

চলবে কী????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here