#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ৫,৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
৫
নিজের হবু বরের রুমে এসে নিজের বোনকে এবং হবু স্বামীকে কিছুটা কাছাকাছি দেখে বুক ছেদ করে উঠলো মিরার। মিরা এবং অরু রুমে এসেই দেখলো অর্ষা আরফানের শার্টের কলার ধরে রয়েছে। মিরা একপ্রকার চিৎকার করেই বললো, ‘ কি হচ্ছে এখানে?’ অর্ষা দ্রুত আরফানের কলার ছেড়ে দেয়। কারো পায়ের শব্দ শুনে দ্রুত আরফানের গলা ছেড়ে দিলে, পা হোচট খেয়ে পুনরায় আরফানের গাঁয়ের উপর একপ্রকার পরে গিয়েছিলো অর্ষা, ঠিক সেই মুহুর্তে অরু এবং মিরা প্রবেশ করে আরফানের রুমে। অর্ষা আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে। মিরা এবং অরু কেমন এক সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আরফান এবং অর্ষার দিকে। আরফান ও এক অপ্রস্তুতকর অবস্হায় তাকিয়ে রয়েছে। হাত নাড়িয়ে নিজের শার্টের কলার ঠিক করে নিলো আরফান। যদিও মিরার আগমনে সে মিরার কাছে কৃতজ্ঞ। আজ মিরা সঠিক সময় না এলে হয়তো, অর্ষা আজ তাকে মে/রেই ফেলতো। মিরা অর্ষার কাছে এসে বললো, ‘ তুই এখানে কি করছিস অর্ষা? ‘
‘ আমি এবং মিস ঝাঁঝওয়ালী আরফান বাবুকে একটু টাইট করতে এসেছিলাম। ‘
কথাটি বলতে বলতে বর্ণ আরফানের কক্ষের বারান্দা থেকে কক্ষে প্রবেশ করে। বর্ণকে দেখে বেশ বড়সরভাবে অবাক হয় আরফান এবং অর্ষা। বর্ণ কি বারান্দায় ছিলো? তাহলে রুমে এতোকিছুর শব্দে রুমে মিরার আসার পূর্বে আসেনি কেন? আরফান এবং অর্ষার ভাবনার মাঝেই, বর্ণ পুনরায় বলে উঠে,
‘ আসলে আরফানকে নিয়ে আমরা দুজনে মিলে একটা প্রাংক করবো ভেবছিলাম, তাই মিস ঝাঁঝওয়ালী এবং আমি দুজনেই আরফানের রুমে আসি। তার মধ্যে হুট করে কল আসায় আমি বারান্দায় চলে যাই, অতঃপর মিস ঝাঁঝওয়ালী হোচট খেয়ে পরে….’
‘ আহ বাকিটুকু বলতে হবেনা বর্ণ ভাইয়া আমি বুঝে গিয়েছি। ‘
অরুর কথা শুনে বর্ণ সামান্য মাথা চুলকে মুচকি হাসলো। মিরা স্বস্হির নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ‘ ওহ আচ্ছা, এই ব্যাপার? আচ্ছা এখন তো অনেক রাত হয়েছে, আমাদের যাওয়া উচিৎ। ‘
অর্ষা অধরের কোণে আলতো হাসি ফুটিয়ে সায় জানায়। মিরা আরফানের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে জানায়, ‘ আমি আসি কেমন? ‘
আরফানও হাত উঁচু করে মিরাকে বিদায় জানায়। মিরা এবং অরু বেড়িয়ে যেতেই, অর্ষা এবং আরফান একই দৃষ্টিতে বর্ণের দিকে তাকালো। বর্ণ হয়তো অর্ষা এবং আরফানের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রশ্ন অনুভব করলো, তাই বর্ণ তার কানে থাকা এয়ারফোন খুলতে খুলতে বললো, ‘ আমি অনেক আগেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান শুনছিলাম, যখন আমি রুমে ঢুকি তখন মিরার রিয়্যাকশন দেখে আমি আন্দাজ করতে পারি যে, কোন একটা গন্ডগল হয়েছে। তাই নিজ থেকেই কিছু একটা বানিয়ে বলে ফেললাম। ‘
অর্ষা বর্ণের কথা বিশ্বাস না করলেও, আরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যাক তবে বর্ণ কিছু দেখিনি, দেখবে কি করে? সে বারান্দায় উপস্হিত থাকলেও, কানে এয়ারফোন থাকা বিধায়, কক্ষের কোন আওয়াজ বর্ণের কান অব্ধি আদোও পৌঁছেই নি। আরফান নিশ্চিন্তের সহিত একপ্রকার হাক ছেড়ে মিরাকে বললো, ‘ মিরা দাঁড়াও, আমিও আসছি তোমাদের এগিয়ে দিতে। ‘
মিরা এবং অরু সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো, আরফানের হাক শুনে, মিরা জবাব দেয়, ‘ ঠিক আছে, আসুন তবে। ‘
আরফান দ্রুত মিরা এবং অরুর কাছে যায়। আরফান বেড়িয়ে যেতেই, অর্ষা বর্ণের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে, ‘ মতলব কি আপনার? কি চাইছেন আপনি? ‘
‘ আপনাকে চাইছি মিস ঝাঁঝওয়ালী। ঝাঁঝওয়ালীকে দিবেন আমায়? ‘
অর্ষা বর্ণের অদ্ভুদ কথায় এক প্রকার চুপ হয়ে পরে। পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে বর্ণের দিকে আঙ্গুল তাক করে ঝাঝিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে, ‘ কি বললেন আপনি? ‘
‘ যা আপনি শুনলেন। হুট করে রেগে যাচ্ছেন কেন? ‘
হাতে থাকা ফোনটি টিপতে টিপতে বর্ণ প্রশ্ন করলো। অর্ষা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। অর্ষার রাগ দেখে খানিক্টা হেসেই বর্ণ বললো, ‘ মরিচ আমার খুব ফেভারিট। তাই বললাম ঝাল লাগবে। ‘
‘ এইসব হেয়ালির মানে কি? আপনার কথা আমি সত্যিই বুঝতে পারিনা। ‘
‘ আমাকে বুঝতে হলে, আমার মনের ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। মিস ঝাঁঝওয়ালী। ‘
_______________________
অর্ষা নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেখে তার বাবা রফিক সাহেব পেপার পরছেন। অর্ষার মাকে তাকে চা দিয়ে কিছু বলছিলেন। অর্ষাকে দেখেই, তিনি অর্ষাকে প্রশ্ন করেন,
‘ মিরার গাঁয়ে হলুদ কেমন কাটলো? আমি তো আমার অসুস্হতার জন্যে কোন অনুষ্টানই এটেন্ড করতে পারছি না। তার মধ্যে তোর বাবাও খানিক্টা অসুস্হ হয়ে পরেছেন। ‘
নিজের মাকে থামিয়ে দিয়ে, অর্ষা নিজের শার্টের হাতা ফ্লোড করে ড্রাইনিং টেবিলে গিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে বলে, ‘ তোমার কথা বলছো ঠিক আছে, যার তার কথা আমাকে কেন শুনাচ্ছো? দুনিয়ার সকলের অসুখের কথা জেনে কি আমার কিছু হবে? ‘
রফিক সাহেব তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মেয়েটার এইসব কথা নতুন কিছু নয়।এমন ব্যবহার দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত তিনি পেয়ে যাচ্ছেনই। অর্ষার মা কপাট রাগ দেখিয়ে, অর্ষাকে হুকুমের সুরে বলে, ‘ অর্ষা! প্রতিনিয়ত এসব বলে নিজের বাবাকে ছোট করবে না। ‘
অর্ষা কথাটি শুনেই, তার হাতে থাকা গ্লাস নিচে ছু/ড়ে ফেলে। তা মুহুর্তেই গুড়ো/গুড়ো হয়ে যায়। অর্ষার মা মেয়ের রাগ দেখে দমে গেলেন। অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘ কতবার বলবো মা? ওই লোকটাকে আমার বাবার পরিচয় দিবে না। আই জাস্ট হেইট হিম!’
অর্ষা কথাটি বলে উপরে গটগট করে চলে যায়। অর্ষার মা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তার মেয়ের চলে যাওয়ার পানে। অর্ষার বাবা রফিক সাহেব তার স্ত্রীর হাত ধরে, নিজের পাশে বসিয়ে বললেন,
‘ মেয়েকে বকে কি হবে? আমি তো এইসব কথারই যোগ্য। আমি কি কম অন্যায় করেছি বলো? আমি যা করেছি, তার কোন ক্ষমা হয় না সোহা। ‘
অর্ষার মায়ের আখিজোড়া থেকে নিরবে অশ্রুপাত হতে থাকে।
________________
অপরদিকে অর্ষা ঘরে এসেই, নিজের চেয়ারে বসে পরে। মাথায় তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই, একদিকে আরফান! যার নোংরা চেহারাকে নিজ চক্ষে দেখেছে দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে। সেই নোংরা মানুষটা কিনা, মিরার হবু বর? নিজের প্রানের প্রিয় বোনের সাথে এমন নোংরা লোকের বিয়ে কিছুতেই হতে দিবে না সে। কিন্তু অন্যদিকে বর্ণ! যে অচেনা হয়েও কেমন এক চেনা! কিন্তু এমন কেন হয়? আচ্চা লোকটা এতো অদ্ভুদ কেন? অনেক অনেক রহস্য লোকটার মাঝে! যার উত্তর নেই অর্ষার কাছে। অর্ষার ভাবনার মাঝেই, তার ফোন বেজে উঠে। অর্ষা ফোন রিসিভ করে। তাদের এলাকার ছেলেপেলে! বিপদে পরেছে। অর্ষাকে বেড়োতে হবে। এত্তো রাতে বিপরীত দলের ছেলেপেলে তাদের দলের ছেলেদের হামলা করেছে। তৎক্ষনাৎ এর ব্যবস্হা নিতে হবে তাকে।
_________
এদিকে বর্ণ আরফানের কাছে এসে দাঁড়ালো। আরফান বর্ণকে দেখেই প্রশ্ন করলো, ‘ কি হয়েছে বর্ন? সব ঠিক আছে তো? ‘
বর্ণ আরফানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘ একদম। সবই ঠিক আছে, বেঠিক তো শুরু হবে। ‘
কথাটি বলেই বর্ণ নিজের গাড়িতে বসে, আরফানকে বিদায় জানালো। আরফান ভ্রু কুচকালো।
__________
অর্ষা তার মাকে না জানিয়েই, তৈরি হয়ে নিলো। চুলে লম্বা করে ঝুটি করে,মাথায় ক্যাপ পরে নিলো। অতঃপর বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। অনেকটা স্প্রীডের সাথেই সে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে, তার কোন দিকে খেয়াল নেই, রাতের মধ্যে বাইক চালিয়ে নেওয়াতে বেশ অনেকটাই ঝামেলা পহাতে হচ্ছে তাকে। অর্ষা খেয়াল করলো একটি বড় গাড়ি তার দিকে ছুটে আসছে, সে কিছু বুঝার আগেই গাড়িটা তার বাইকের……
চলবে কি?
#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মিরার নেত্রকোণে শুধু আরফান এবং অর্ষার ঘনিষ্টমুহুর্ত ভেঁসে উঠছে। নিজের হবু বরকে যথেষ্ট ভালোবেসে সে, অপরদিকে অর্ষা তার কাছে জীবনের থেকেও প্রিয় । সে জানে সে যা ভাবছে এমন কিছুই নয়, কিন্তু তবুও মনে একটা খটকা রয়ে যায়। সে শুধু ভাবে কোন একটা যোগসুত্র তো বিরাজমান রয়েছে অর্ষা এবং আরফানের মাঝে কিন্ত তা কী? হলুদের আসরেও সে লক্ষ্য করেছিলো, আরফান এবং অর্ষা অনেক্ষন যাবত নিজেদের মধ্যে কথা বলে যাচ্ছিলো, অথচ এর আগে অর্ষা কখনো আরফানের ছবিটুকু দেখার কোন কৌতহূল প্রকাশ করেনি। ফোন কথাটুকু অব্দি কখনো বলেনি, তাহলে? একদিনের পরিচয়েই এত্তো কথা? কিছুই ভাবতে পারছে না মিরা। মাথা হেলিয়ে দিলো সে। ফোন বালিসের তলা থেকে বের করে, আরফানের নাম্বারে ডায়াল করলো। ব্যাস্ত শুনাচ্ছে অপাশ থেকে।কিসের এতো ব্যস্ততার মানুষটার? মিরা আর ফোন করলো না। রেখে দিলো। রাত প্রায় সারে বারো’টা। অন্ধকার নিস্তব্ধ রাত। নিজের দিকে গাড়ি এগিয়ে আসতে দেখে অর্ষা দ্রুত বাইকের হেন্ডেল ধরে, দ্রুততার সাথে সাইডে চলে গেলো। গাড়িটাও সময়মতো ব্রেক কষে থেমে গেলো। অর্ষা বুকে হাত রেখে সুদীর্ঘশ্বাস ফেললো। সময়মতো ব্রেক না কষলে, নিশ্চিত আজ অঘটন ঘটে যেতো। অর্ষা নিজের বাইককে সাইড করে রেখে, শার্টের হাতা ফ্লোড করতে করতে, মুখে একরাশ রাগ নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে, চেচিয়ে বলতে লাগলো, ‘ ইউ নোনসেন্স ম্যান! গাড়ি চালাতে পারেন না যখন, তখন গাড়ি নিয়ে বের হোন কেন? ‘
তৎক্ষনাৎ কেউ সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ভিতর থেকে পাল্টা জবাব দিয়ে বলে, ‘ বাইক চালাতে পারেন না যখন, তখন বাইক নিয়ে বের হন কেন? ব্লাডি গার্ল!’
অর্ষার রাগ তো সঙ্গে সঙ্গে একেবারে শীর্ষে পৌঁছে গেলো। হাত থরথর করে কাঁপতে লাগলো রাগে। বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘ নিজে দোষ করে, ক্ষমা না চেয়ে উল্টো আমারই নকল করছেন? আপনাকে এখুনি মজা দেখাচ্ছি আমি। ‘
অর্ষা কথাটি বলেই, নিজের বাইকের কাছে গিয়ে নিজের হ/কিস্টিক নিয়ে গাড়ির সামনে এসে, গাড়ির কাচে আ/ঘাত করতে নিলে, কেউ তার হাত ধরে ফেলে। অর্ষা তাকিয়ে দেখে বর্ণ খুবই স্বাভাবিক হয়ে, তার হাত ধরে তাকিয়ে আছে। বর্ণকে দেখে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে অর্ষা বলে,
‘ আবারো আপনি? আমার কাজে বাঁধা দিতে এসেছেন?’
‘ তো? আপনি আমার ফেভারিট গাড়ির গ্লাস ভে/ঙ্গে ফেলবেন , আর আমি? বর্ণ আহমেদ তা চেয়ে চেয়ে দেখবো? ‘
‘ আপনার গাড়িকে আমার বাইকের সামনেই পরতে হলো? ‘
‘ আপনার বাইককে আমার গাড়ির সামনেই পরতে হলো? আর দোষ আমার না, আপনার। নিজে এত্তো রাতে হাউওয়েতে, যথেষ্ট স্প্রিডে বাইক চালাচ্ছিলেন। নিজের দোষ স্বাকীর করুন, মিস ঝাঁঝওয়ালী। ‘
বর্ণের কথার বিপরীতে, অর্ষা নিজের হাত ছাড়িয়ে, তেজি গলায় বলে, ‘ দোষ আমার নয়, আপনার। আর হ্যা যখন তখন আমাকে টাচ করবেন না। নাহলে আপনাকেও….’
‘ কি করবেন মিস ঝাঁঝওয়ালী? ‘
বর্ণ খানিক্টা এগিয়ে অর্ষার দিকে ঝুঁকে প্রশ্ন করলো। সঙ্গে সঙ্গে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো অর্ষার। বুকটা ধক করে উঠলো। শ্বাস- প্রশ্বাস তড়িৎ গতিতে উঠতে থাকলো। এই মানুষটা এমন কেন? অর্ষার খুব কাছের মনে হয় মানুষটাকে। অচেনা হয়েও, চেনা। খুব আপন। বর্ণ ভ্রু নাড়িয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ নিশ্চুপ থাকলে, আপনার মুখে অদ্ভুদ মায়া এসে হানা দেয়। এতো মায়াবী কেন আপনি? ‘
অর্ষা বর্ণের প্রশ্নে দ্রুত পায়ে সরে গিয়ে নিজের বাইকে গিয়ে উঠে বসে। বর্ণ তা দেখে আলতো হেসে বলে, ‘ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো পায় নি মিস ঝাঁঝওয়ালী। ‘
‘ আপনার মতো অদ্ভুদ লোকের, অদ্ভুদ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করছি না। ‘
অর্ষা কথাটি বলতে বলতে নিজের বাইক স্টার্ট দিতে থাকে।
‘ জীবন একটা ধাঁধার মতো। জীবন নামক যুদ্ধে হাজারো প্রশ্নের মোকাবেলা করে এগোত হয়। নাহলে কখনোই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় না। ‘
বর্ণের কথার বিপরীতে কিছু বলতে পারলো না অর্ষা। নিজের বাইক স্টার্ট দিতে লাগলো সে। কিন্তু হুট করেই তার বাইকটা স্টার্ট হচ্ছে না। সে বেশ বিপত্তিতে পরে গেলো। এদিকে তার দলের ছেলেরা তাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে, যথেষ্ট দেরী হয়ে যাচ্ছে তার। বর্ণ হয়তো বুঝতে পারলো। তাই নিজ থেকেই এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘ আপনি চাইলে আমার গাড়িতে উঠতেই পারেন মিস ঝাঁঝওয়ালী। আই ডোন্ট মাইন্ড। ‘
অর্ষা বর্ণের দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে বললো, ‘ বাট আই মাইন্ড। আপনার হেল্পের কোন দরকার নেই। আমি হেটেই যেতে পারবো। ‘
অর্ষা নিজের বাইকটাকে তালা মেরে, দ্রুত পায়ে হেটে যেতে থাকে। অনেক রাত হয়েছে। এখনো বেশ পথ বাকি। হেটে গেলে অনেক বেশি দেরী হয়ে যাবে। বর্ণ গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে, গাড়ি অর্ষার পিছনে নিয়ে আসে। অতঃপর ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে, ‘ লাস্ট চান্স! আপনার ভালোর জন্যেই বলছি উঠে বসুন। ‘
অর্ষা কি আদোও শুনলো? না! সে নিজের রাগ জেদ নিয়েই হাটতে লাগলো। বর্ণের কাছে বেশ বিরক্তকর লাগলো বিষয়টা। সে গাড়ি থেকে বের হয়ে, একপ্রকার টেনেই অর্ষাকে নিজের গাড়িতে, নিজের পাশের সিটে বসিয়ে দিলো। অর্ষাও বাধা দিলো না। তাকে আপাতত দ্রুত ঘটনাস্হলে পৌঁছতে হবে।
_______________
আরফান নিজেকে আয়নায় দেখে নেয়। গলায় তার অর্ষার হাতের দাগের ছাপ পরে গেছে৷ গলার কিছু জায়গায় প্রায় ছি/লে গিয়েছে, অর্ষার ন/খের আ/চরে। আরফানের বিশ্বাস হচ্ছে না, গত পাঁচ বছরে অর্ষার এতোটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আরফান সোফায় বসে মাথায় হাত রেখে, আখিজোড়া বন্ধ করে। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠে অর্ষার অসহায় মুখস্রী। অতীতের কিছু বিষাদময় স্মৃতি। অর্ষা আরফানের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বার বার বলছে, ‘ দয়া করে বাঁচাও আরফান। ‘
আরফান শুনলো না বরং পা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলো অর্ষাকে। অর্ষা মাটিতে পরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আরফানসহ বাকিরা হেসে উঠে। সেদিন অর্ষার অসহায়ত্বে আনন্দ পেয়েছিলো আরফান, কিন্তু আজ সেসব কথা ভাবলে কেমন করে উঠে আরফানের। আরফানের পুনরায় ফোন আসে। আরফান ফোন রিসিভ করে চিন্তার সহিত। অতঃপর কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দেয়। কাল বাদে পরশু বিয়ে, তার মধ্যে এত্তোসব ঝামেলা!
__________________
অপরদিকে অর্ষা এবং বর্ণ এসে পৌঁছে আসে ঘটনাস্হলে। এখনো মা/রামা/রি চলছে। অর্ষা দেখতে পায় তাদের দলের বেশিরভাগ লোকেরাই আ/হত হয়ে পরেছে। অর্ষা সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে তাদের কাছে যায়। হাতে তার হকি স্টি/ক। বর্ণ নিজেও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে। প্রথমে অর্ষা ঝামেলা বুঝে, নিজেদের লোকদের বুঝানোর চেষ্টা করে, বিপরীত দলের লোকদের সাথে এখন ঝামেলায় যাওয়া মানে, সামনের নির্বাচনে এক বড় বিপদ! আপাতত নিজেদের ইমেজ ধরে রাখতে হবে অর্ষাদের৷ তাই সে তার দলের লোকদের বুঝিয়ে কোনরকম শান্ত করলেও, বিপরীত দল নাছড়বান্দা। তারা কিছুতেই থামছে না। এই সুযোগে অর্ষা রিপোর্টরদার ফোন করে জানায়, তারা যেন ঘটনস্হলে আসে, রিপোর্টটারদের দেখে, বিপরীত দলের লোকেরা থেমে যাবে। বর্ণ দূর থেকেই বুঝতে পারছে বেশ ঝামেলা হয়েছে। বর্ণ কি ভেবে যেনো সামনের দিকে এগিয়ে গেলো, কিন্তু তার ফোন হুট করে বেজে যায়। সে তা রিসিভ করে, ফোনের অপাশ থেকে বর্ণের মা বলে উঠে , ‘ বর্ণ কোথায় তুই? তোর বন্ধুর অনুষ্টান কি এখনো শেষ হয়নি? ‘
বর্ণ চারদিকে হট্টগলে কিছুই শুনতে পারছে না। অপরদিকে ফোনের অপাশ থেকে মানুষের চিৎকার চেচামেচি শুনে বর্ণের মায়ের বুকটা ধক করে উঠলো। বর্ণের মা ভয়ের সহিত তার ছেলেকে প্রশ্ন করেন, ‘ বর্ণ, তুই কোথায়? কিসের চেচামেচি হচ্ছে? ‘
বর্ণ কিছু শুনতে না পেরে বললো, ‘ মা, আমি কিছু শুনতে পারছি না। ‘
বর্ণের মা কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণ হুট করে ফোনটা কেটে সামনের দিকে দৌড়ে যায়। বিপরীত দলের একজন মা/রামা/রির এক পর্যায়ে অর্ষাকে আ/ঘাত করতে নিলে, বর্ণ…….
চলবে কি?