#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্বঃ- ১৮
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
ফারহানের কথাগুলো শুনে আরশি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহানের কথাগুলো শুনে আরশির মনে হচ্ছে ফারহান মিথ্যা বলছে না। কেননা ফারহান যা যা বলেছে সবকিছুই সে গত ১০ বছর ধরে করে এসেছে। কিন্তু ফারহান যে তাকে ভালোবাসে সেটা আরশি কখনো আন্দাজ করতে পারেনি। কীভাবে করবে? ফারহান যে কখনো তার সাথে ওই ধরণের কোনো আচরণই করেনি। কিন্তু এখন ফারহানের কথাগুলো শুনে আরশির মনে হচ্ছে ফারহান হয়তো সত্যিই তাকে ভালোবাসে।
তা ছাড়া কাজিনের সাথে কেউ কখনো এইসব নিয়ে কস্মিনকালেও মজা করে না। অবশ্য একে অন্যের সমবয়সী কাজিন হলে সেটা আলাদা কথা। কেননা সমবয়সী কাজিনরা সম্পর্কে ভাই-বোন হলেও সবসময় তারা একে অন্যের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে বা তাকে নিজের বন্ধুর মতোই মনে করে।
বর্তমানে ফারহান আরশির থেকে কিছু একটা শোনার জন্য তার মুখ পানে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আরশি ফারহানকে কি বলবে সে বুঝে উঠতে পারছে না। এদিকে আরশিকে চুপ করে থাকতে দেখে ফারহান বলে উঠলো,
-“চুপ করে আছিস কেন আরশি? কিছু তো বল?”
-“এক তো তুমি আমার কাজিন। আরেক তো তুমি আমার চেয়ে ৪-৫ বছরের বড়। আর মূল কথা ছোট থেকেই আমি তোমাকে ভাইয়ের মতো ভেবে এসেছি। আর এখন তুমি বলছ তুমি আমায় ছোটবেলা থেকেই ভালোবেসে আসছ। আচ্ছা মানলাম তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু আমাদের মধ্যে এটা কীভাবে সম্ভব বল? আমাদের পরিবারের মানুষরাই তো আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে না। ওরা এইসব শুনলে কি না কি ভাববে বল?”
-“শুন আগেরকার যুগে বেশিরভাগ মানুষদের বিয়ে তার বংশের ছেলে-মেয়ের সাথেই হতো। আর আমাদের মা-বাবারাও তো আগের যুগের এইসব বিষয় দেখে অভস্ত্য। এখন আমরা যদি আমাদের পরিবারের কাছে গিয়ে বলি আমরা একে অপরকে ভালোবাসি তাহলে তারা আমাদের সম্পর্কটাকে অবশ্যই মেনে নিবে।
-“কিন্তু আমি তো তোমাকে ছোট থেকেই বড় ভাইয়ের নজরে দেখে এসেছি। এখন তোমাকে নিয়ে কীভাবে অন্যকিছু ভাবব? না না আমি এটা করতে পারবো না।”
-“কেন পারবি না? তুই পারবি। একটু চেষ্টা করেই দেখনা। তুই আমাকে ফিল কর, দেখবি একসময় ঠিকই আমার জন্য তোর মনে ফিলিংস তৈরি হচ্ছে।”
-“না না আমি এটা কিছুতেই পারবো না। আর তুমি যা চাচ্ছ তা কখনোই সম্ভব না। আমার মনে হয় তুমি পাগল হয়ে গেছ। একটা ভালো ডাক্তার দেখাও দেখবে তোমার সব মানসিক রোগ ঠিক হয়ে যাবে।” কথাগুলো বলেই আরশি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো।
আরশি এক কদম এগুতেই ফারহান পিছন থেকে তার হাত টেনে ধরলো আর তাকে টান মে*রে ব্রেঞ্চে বসিয়ে তার গাল বরাবর সজোরে একটা চ*ড় বসিয়ে দিল। চ*ড় খেয়ে আরশি কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। চ*ড়টা এতোই জোরে মা*রা হয়েছে যে এক মূহুর্ত পরেই আরশি সেটার ব্যাথা অনুভব করে সঙ্গে সঙ্গে গালে হাত দিয়ে কেঁ*দে উঠলো। আরশির কান্না দেখে ফারহানের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। ফারহান সাথে সাথে আরশিকে একটা ধমক মে*রে বসলো।
-“এই চুপ। একদম কাঁদবি না। কাঁদলে একদম মে*রে ফেলবো।”
ফারহানের ধমক শুনে মূহুর্তের মধ্যেই আরশির কান্না থেমে গেল। মূলত আরশি ফারহানের ধমকের ভয়ে কান্না থামিয়েছে কিন্তু সে ভিতরে ভিতরে ঠিকই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ফারহান এটা বুঝতে পেরে আরশির দিকে রক্তিমবর্ণ চোখে তাকালো। আরশি এবার আগের ন্যায় ফারহানের রক্তিমবর্ণ চেহারা দেখে তার ভিতরের কান্নাটা থামিয়ে বাচ্চাদের মতো ফেস করে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান এবার আরশির দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে আলতো করে আরশির দুই গালে হাত রেখে তার কপাল নিজের কপালের সাথে এনে ঠেকাল আর কণ্ঠনালী নরম করে বললো,
-“আমার চোখের দিকে তাকা আরশি। দেখ এই চোখের মধ্যে তোর জন্য আমার ভালোবাসা রয়েছে কি-না।”
ফারহানের কথায় আরশি ইচ্ছা না থাকা সত্তেও তার চোখের দিকে তাকালো। তবে আরশি বেশিক্ষণ ফারহানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না। কেননা সে বর্তমানে ফারহানের অনেকটা কাছাকাছি বসে আছে। এতে করে আরশির হার্টবিট উঠা মানা শুরু করে দিয়েছে। তাই সে চটজলদি নিজেকে ফারহানের থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে সরে বসলো।
-“আমি বাসায় যাব।” ভাঙা গলায়।
ফারহান দ্বিতীয়বারের ন্যায় এবারও আরশির কাছাকাছি এসে বসলো আর আরশির গালে আলতো করে হাত রেখে নরম স্বরে বললো, “চ*ড়টা খুব জোরে লেগেছে তাইনা? সরিরে আসলে তুই যখন বললি তুমি পাগল হয়ে গেছ একটা ডাক্তার দেখাও তখন কথাটা শুনে রাগ সামলাতে না পেরে চ*ড়টা দিয়ে ফেলেছি।”
-“আমি বাসায় যাব বললাম না।” ফারহানের হাত সরিয়ে দিয়ে।
-“আচ্ছা ঠিক আছে আয় তোর জন্য একটা রিক্সার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
-“আমি একাই যেতে পারবো।” কিছুটা রাগ দেখিয়ে।
আরশির কথা শুনে ফারহান কিছুটা রাগী চোখে তার দিকে তাকালো। ব্যস আরশিও আর কথা না বলে চুপ হয়ে গেল। এরপর ফারহান আরশিকে নিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা ডেকে আরশিকে রিক্সায় উঠিয়ে দিল সাথে রিক্সা ভাড়াটাও দিয়ে দিল। তারপর আরশি সেই রিক্সা করে চলে গেল আর ফারহান যতক্ষণ পর্যন্ত সেই রিক্সাটা দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত রিক্সার দিকে তাকিয়ে রইলো। রিক্সাটা একসময় ফারহানের চোখের আড়াল হয়ে গেলে ফারহান সেখান থেকে অফিসে চলে আসলো।
.
আরশি বাসায় এসে তার রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর নিজের গালে বসে থাকা চ*ড়ের দাগটাকে বারবার স্পর্শ করছে। দীর্ঘ একটা বছর পর আবারও আরশির গালে ফারহানের আঙ্গুলের চাপ পরেছে। কিন্তু আরশির এ নিয়ে এখন আর কোনো দুঃখ নেই। কেননা আরশি এখন অন্য একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে। আরশির ভাবনা জুড়ে এখন শুধু ফারহান আর তার বলা কথাগুলো। আরশির মন বলছে ফারহান তাকে সত্যিই ভালোবাসে। কিন্তু সে তো ছোট থেকেই ফারহানকে বড় ভাইয়ের ন্যায় দেখে এসেছে। এখন হুট করে সেই মানুষটাকে সে কীভাবে অন্য দৃষ্টিতে দেখবে? আর যেই মানুষটা ছোট থেকে আজ অবধি কথায় কথায় তার গায়ে হাত তুলে এসেছে সেই মানুষটার সাথে সে কীভাবে নিজের বাকিটা জীবন কা*টাবে? যদি কখনো তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয় তাদের পরিবারের লোকজন কি আদৌও তাদের এই সম্পর্কটাকে মেনে নিবে? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তরই আরশির জানা নেই। এসব ভাবনায় মধ্যে দিয়ে হঠাৎ আরশির ফোনটা বেজে উঠলো। আরশি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রুহি কল করেছে। প্রথমবার আরশি কল কে*টে দিল। কেননা এখন তার কারও সাথে কথা বলার ইচ্ছা করছে না। কিন্তু কল কে*টে দেওয়ার পর মূহুর্তে আবার তার ফোনে রুহির নাম্বারে কল আসলো। আরশি এবার ইচ্ছা না সত্তেও কলটা রিছিভ করলো।
-“বার বার কল দিচ্ছিস কেন?” কিছুটা বিরক্তি নিয়ে কথাটা বললো আরশি।
-“কেন তুই কি সেলেব্রিটি হয়ে গেছিস নাকি যে তোকে বার বার কল দেওয়া যাবে না?”
-“ফাজলামি করবি না, কল দিয়েছিস কেন বল?”
-“তুই আমাকে ওয়াশরুমের কথা বলে ক্লাসে বসিয়ে রেখে কোথায় গিয়েছিলি? সেই যে গেলি আর তো ফিরেই আসলি না। শেষে আমি তোকে খুঁজে না পেয়ে মাত্র বাসায় আসলাম।”
-“বাসায় যেহেতু চলে গিয়েছিস তাহলে এবার ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নে।”
-“এই তুই এইভাবে কথা বলছিস কেন? কি হয়েছে তোর?”
-“কিছু নাহ। আমার এখন ভালো লাগছে না। কাল ভার্সিটিতে আসলে কথা হবে এখন রাখছি, বাই।” বলেই আরশি কল কে*টে দিল। কল কে*টে দিয়ে আরশি বিছানার উপর হয়ে শুয়ে রইলো আর শুয়ে শুয়ে পার্কের ঘটনাটা নিয়ে ভাবতে লাগলো।
.
সারাদিন অফিস শেষে ফারহান একেবারে রাতেরবেলা বাসায় ফিরল। বাসায় এসে কলিং বেল চাপ দেওয়ার আগেই ফারহান লক্ষ্য করলো বাসার দরজা খোলা। বাসার দরজা খোলা! বাসায় চোর টোর আসলো না তো! ফারহান তড়িঘড়ি করে বাসার ভিতরে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকতেই ড্রয়িংরুম থেকে কিছু মানুষের কথা বলা আর হাসির আওয়াজ শুনতে পেল। ফারহান এবার মনে ভাবতে লাগলো, “বাসায় ডাকাত আসলো না তো! বাসায় তো আম্মু-আব্বু ছাড়া আর কেউ নেই আর আর ড্রয়িংরুমে তো অনেক মানুষের কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।” ফারহান এবার হতদম্ভ হয়ে বাসার ড্রয়িংরুমে গিয়ে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকতেই ফারহান বেশ চমকে উঠলো। কেননা ভিতরে তার আম্মু-আব্বু আর তাদের সাথে তার খালা-খালু বসে আছেন আর একে অপরের সাথে গল্প করছেন। আচমকা ফারহানকে ড্রয়িংরুমে দেখেই সবাই কিছুটা চমকে উঠলো। ফারহানকে দেখেই তার খালামণি বলে উঠলেন,
-“আরে ফারহান! কেমন আছ বাবা?”
-“জি খালামণি ভালো। তুমি কেমন আছ?”
-“এইতো বাবা ভালো।”
-“খালু কেমন আছ?”
-“এইতো ভালো।”
-“এই তোকে না আমি গতকাল বললাম আজ তোর খালা-খালু আমাদের বাসায় আসবেন, তুই একটু তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসিস। তাহলে এতো রাত করে বাসায় আসলি কেন?” রোকসানা বেগম কিছুটা রাগান্বিত গলায় ফারহানকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেন।
-“আরে আজ অফিসে একটু বেশি কাজ ছিল তাই আসতে দেরি হয়ে গেল। এইখানে আমার কি দোষ বল?”
-“আরে আপা এইসব কথা বাদ দাও তো। ছেলেটা মাত্র বাসায় আসলো। ওকে আগে ফ্রেশ হয়ে নিতে দাও তারপর যা বলার বলিও।”
-“আচ্ছা তোমরা তাহলে থাক আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।” বলেই ফারহান ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো।
ফারহান নিজের রুমে এসে ঢুকতেই দেখলো রুমের ভিতরটা অন্ধকার। তখনই একটা মেয়েলি কণ্ঠে কেউ একজন বলে উঠলো, “কেমন আছ বাবু?”
একটা অপরিচিত মেয়েলি কণ্ঠে এমন কথা শুনে ফারহান তব্দা মে*রে রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।
.
.
Loading…….