#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্বঃ- ১৯
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
ফারহান রুমের লাইট অন করতেই দেখলো তার বিছানায় একটা মেয়ে উপর হয়ে শুয়ে আছে আর কানে ফোন লাগিয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। ফারহান প্রথমে মেয়েটাকে চিনতে না পারলেও পরে ঠিকই চিনেছে। কিন্তু এই মেয়ে তার রুমে কি করছে আর কার সাথে ফোনে কথা বলছে এটাই ফারহান ভেবে পাচ্ছে না। এদিকে রুমের লাইট অন করার পর মেয়েটাও ধড়ফড়িয়ে শুয়া থেকে উঠে বসলো আর ফারহানকে রুমের মধ্যে দেখে বলে উঠলো, “উফফ তোমার এখনই আসতে হলো? আরেকটু পর আসলে কি হতো? তোমার জন্য সানির সাথে ভালো করে কথাও বলতে পারলাম না।” বিরক্তিমাখা কণ্ঠে কথাগুলো বললো মেয়েটা।
-“কেন কথা বলার জন্য কি আর কোনো রুম খুঁজে পেলি না? আর এই সানি কে?”
-“নিচে তো কোনো রুম খালি নেই। উপরে এসে দেখলাম এই রুমটা খালি পরে আছে তাই ভাবলাম এইখানে একটু আরামে কথা বলা যাবে। কিন্তু তুমি এসে সব আরামকে হারাম বানিয়ে দিলে।” কথাগুলো বলতে বলতে তানিশা বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে নেমে পরল।
-“তা এই সানিটা কে বললি না যে।”
-“কে আবার আমার বয়ফ্রেন্ড।” স্বাভাবিক স্বরে।
-“কিহহ! তোর বয়ফ্রেন্ড মানে?”
-“বয়ফ্রেন্ড মানে বয়ফ্রেন্ড। এতো বড় হয়েছ এটার মানেও কি জান না?”
-“আচ্ছা খালামণি কি তোকে কিছু বলেননি?”
-“কি বলবেন?”
-“তুই কি কিছু জানিস না?”
-“আজব তো! কি জানব?”
-“কিছু নাহ, যা এবার আমার রুম থেকে বের হো।”
-“হু যাচ্ছি।” বলেই তানিশা ফারহানের রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
তানিশা চলে যাওয়ার পর ফারহান ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে ফারহান বিছানায় বসে বসে পার্কের ঘটনাটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। তখন আরশিকে ওইভাবে চ*ড় মা*রা তার একদমই উচিত হয়নি। কিন্তু আরশির ওই কথাটায় তখন ফারহানের মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাই রাগের মাথায় চ*ড়টা মে*রে ফেলেছে। এখন এই চ*ড় মা*রার কারণে হয়তো আরশি তার উপর অনেক রাগ করে থাকবে। যদি সে তখন আরশিকে চ*ড় না মা*রতো তাহলে হয়তো আরশি বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় তার কথাগুলো নিয়ে ভাবতো। তাকে মনে মনে ফিল করার চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন আদৌও আরশি এমনটা করবে কি-না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আরশিকে নিয়ে ভাবনার মধ্য দিয়ে ফারহানের মাথায় তানিশার বিষয়টাও চলে আসলো। ফারহানের আম্মু চাচ্ছেন তানিশার সাথে তার বিয়ে দিবেন। কিন্তু ফারহান এখন জানলো তানিশার বয়ফ্রেন্ড আছে। তা ছাড়া তানিশা তার সাথে যেভাবে কথা বলেছে তাতে মনে হচ্ছে তানিশাকে বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। বলা হলে তানিশা ফারহানকে দেখে অন্যরকম রিয়েক্ট করতো। ফারহান এখন এটাই ভাবছে তানিশাকে এই বিষয়ে জানানো হলে সে কেমন রিয়েক্ট করবে। তবে ফারহানের মনে হচ্ছে তানিশাকে দিয়ে তার আম্মুর মাথায় চেপে বসা ভূতটাকে হয়তো সরানো যেতে পারে।
.
পরেরদিন সকালবেলা আরশি আর রুহি ভার্সিটিতে এসে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে আছে। ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই আরশি চুপ করে বসে আছে। তা দেখে রুহি বলে উঠলো, “কিরে আরশি, তুই এমন মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?”
-“কোথায় আমি তো ঠিকই আছি।”
-“না তুই ঠিক নেই। আসার পর থেকেই দেখছি তুই মনমরা হয়ে বসে আছিস আর মনে মনে কি যেন ভাবছিস। আচ্ছা তুই কি ভাবছিস বল তো আমায়?”
-“আরে কই কি ভাবছি? এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না তাই চুপ করে আছি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম। কিন্তু আমায় এটা বল তুই গতকাল আমাকে রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলি?”
-“বাসায়।”
-“বাসায় মানে! তুই না যাওয়ার আগে বলে গেলি তুই থাক আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি। তাহলে এখন অন্য কথা বলছিস কেন?”
-“আরে ওয়াশরুমে তো গিয়েছিলামই। কিন্তু ওয়াশরুম থেকে বের হতেই বাসা থেকে আম্মুর কল চলে আসলো। আম্মু কল দিয়ে বললেন আব্বু নাকি হঠাৎ করে মাথা ঘুরিয়ে পরে গেছেন আমি যেন দ্রুত বাসায় চলে আসি। তাই তোর সাথে আর দেখা না করেই সোজা বাসায় চলে যাই।”
-“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। কিন্তু তোকে গতকাল কল দেওয়ার পর তুই আমাকে এই কথাটা বললি না কেন? আংকেলের ব্যাপারে তো কিছু বললিই না উলটা আরও রাগ দেখিয়ে কথা বলতে লাগলি।”
-“আরে আব্বুর বিষয়টা নিয়ে একটু মন খারাপ ছিল আর তখন তুই কল দিয়ে বসলি তাই একটু রাগ উঠে পরেছিল আর কি।”
-“ওহ তা এখন কি আংকেল সুস্থ আছেন?”
-“হ্যাঁ কিছুটা।”
-“তাহলে তুই এখন মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন?”
-“এমনিই, ভালো লাগছে না।”
তারপর রুহি আর কিছু বললো না। আরশিও আগের ন্যায় মনমরা হয়ে বসে গতকালের বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। এইভাবে বসে থাকতে থাকতে একসময় বেল বেজে উঠলে আরশি আর রুহি ক্লাসে চলে গেল।
.
রাতেরবেলা ফারহানদের পরিবারে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে। তাদের সাথে রয়েছেন ফারহানের খালা-খালু আর তাদের মেয়ে তানিশা। খাওয়ার মধ্যে হঠাৎ ফারহানের আম্মু বলে উঠলেন, “ফারহান আর তানিশা, তোমাদেরকে না জানিয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি তোমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অমত প্রকাশ করবে না।”
-“কি সিদ্ধান্ত খালামণি?” তানিশা জিজ্ঞেস করলো।
-“আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছি ফারহানের সাথে তোমার বিয়ে করাব। এখানে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো মামণি?”
রোকসানা বেগমের কথা শুনে তানিশা এক মূহুর্তের জন্যও অবাক হলো না। উল্টো সে রোকসানা বেগমের প্রতিউত্তরে যা বললো তা শুনে ফারহান অবাক হয়ে গেল।
-“উনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে আমারও কোনো আপত্তি নেই।” ফারহানের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো তানিশা।
-“ফারহান বাবা, এইখানে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?” ফারহানের খালামণি বললেন কথাটা।
-“আম্মু তানিশা আমার কত ছোট জান তুমি? আর আমাদের কারও মতামত না নিয়েই তোমরা আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেললে কীভাবে?” ফারহান তার আম্মুর কানে কানে বললো কথাগুলো।
-“আলহামদুলিল্লাহ ফারহানও রাজি। সবার সামনে বলতে লজ্জা পাচ্ছে তাই আমার কানে কানে বলেছে, লাজুক ছেলে একটা।” রোকসানা বেগম হেসে হেসে বললেন কথাটা।
রোকসানা বেগমের কথা শুনে ফারহান চমকিত দৃষ্টিতে তার আম্মুর দিকে তাকিয়ে রইলো। তার আম্মু কি কখনো কোনো এক্টিং শো তে কাজ করেছেন ফারহান এটাই ভাবছে। কেননা একজন মানুষ মুহুর্তের মধ্যেই কীভাবে তিল কে তাল বানিয়ে ফেললো এটাই তার বুঝে আসছে না। ফারহান একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। সে বিয়েতে রাজি এটা শুনে উপস্থিত সবার চেহারা হাস্যজ্বল হয়ে আছে। কিন্তু তানিশার দিকে তার চোখ পরতেই সে দেখল তানিশা তার দিকে সরো চোখে তাকিয়ে আছে। তানিশা যখন দেখলো ফারহান তার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে সে চোখ নামিয়ে নিল আর নিজের মতো করে খাবার খেতে লাগলো।
.
রাতের খাবার খেয়ে আরশি তার রুমে আসতেই দেখলো তার ফোনটা বেজে চলছে। আরশি দ্রুত ফোনের কাছে এগিয়ে এসে দেখলো ফোনের স্ক্রিনে ‘সাকিব’ নামটা ভেসে উঠেছে। মানে সাকিব কল করেছে। কল রিছিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে কলটা কে*টে গেল। আরশি ভেবেছিল কল যেহেতু কে*টে গেছে তাহলে নিশ্চয়ই সাকিব আবার কল দিবে। কিন্তু কয়েক মিনিট হয়ে গেল সাকিবের নাম্বার থেকে আর কল আসলো না। এইভাবে আরশি ১০ মিনিট কলের অপেক্ষা করলো কিন্তু কল আর আসলো না। আরশি ভাবলো এখন সে যদি কল ব্যাক না করে তাহলে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। তাই সে আর কিছু না ভেবে সাকিবের নাম্বারে কল দিল। দু’বার রিং হতেই সাকিব কল রিছিভ করলো।
-“আসসালামু ওয়ালাইকুম। সরি আমি আসলে খাবার খেতেছিলাম। তাই কলটা রিছিভ করতে পারিনি।”
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম। It’s Okay, No Problem. তা কি করছেন এখন?”
-“এইতো বসে আছি আপনি?”
-“আমিও। এখন কল দিয়ে কি ডিস্টার্ব করে ফেললাম?”
-“না না সমস্যা নেই বলেন।”
-“আচ্ছা আপনি আমার নাম্বার নিলেন অথচ একবারও কল দিলেন না কেন? আপনি কি ইদানীং খুব বিজি আছেন নাকি?”
-“না হ্যাঁ আসলে পড়াশোনা নিয়ে একটু বিজি আছি আর কি।”
-“ওহ আচ্ছা। আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি?”
-“হ্যাঁ করেন?”
-“আপনার কি আমাকে কোনোদিক দিয়ে ভালো লেগেছে? লাইক আমার চেহারা, কথা বলা এইসবের কোনো দিক দিয়ে?”
-“দেখুন একদিনেই তো কাউকে ভালো লেগে যায়না। তা ছাড়া এটা বিয়েসাদীর ব্যাপার। আপনাকে তো আমার ভালো করে বুঝতে হবে চিনতে হবে তাইনা?”
-“তার মানে আপনি একদিক দিয়ে আমায় বিয়ে করতে রাজি। কিন্তু আমার ব্যাপারে সবকিছু না জেনে আপনি নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কাউকে জানাবেন না। Am I Rigth?”
-“একদমই না, কে বললো আপনাকে এইসব?”
-“না আমার মনে হলো আর কি, তাই বললাম।”
-“ভালো।”
এইভাবে আরশি আর সাকিবের মধ্যে নানান বিষয় নিয়ে অনেক্ষণ কথা চলতে লাগলো। একসময় তাদের কথা বলা শেষ হলে আরশি ফোন রেখে শুয়ে পরলো।
.
.
Loading…….