চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস,পর্বঃ বারো

0
816

#চিত্ত_চিরে_চৈত্রমাস,পর্বঃ বারো
#মম_সাহা

(২৭)

সময় খুব দ্রুত অতিবাহিত হয়। কত কাজ করবো করবো করেও সময়ের এই দ্রুততায় আর করা হয় না। কেবল সময়ের স্রোত নিয়তিকে ভাসিয়ে যেথায় নিয়ে যায় আমরা নির্লিপ্ত ভাবে সেখানেই যাই।

গত কাল রাত পুরোটা বাহারের কেটেছে জেলে। তার এত এত বন্ধু হুট করেই যেন মরিচীকার মতন উধাও হয়ে গেলো। যাদের জন্য বাহার জান দিতে প্রস্তুত আজ তারাই নিরুদ্দেশ। বিপদে পড়লেই তো মানুষ চেনা যায়।

অবশেষে আজ দুপুর দু’টোয় বাহারকে জেল থেকে ছাড়ানো গেলো। এর জন্য আফজাল সওদাগর আর তুহিন কম কাঠখড় পোড়ায় নি। কত ছুটোছুটির পর অবশেষে তারা কাজে সফল। বাহারকে জেল থেকে বের করেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তুহিন। রাজনীতির ঝামেলায় ফেঁসে যাওয়া খুব বিরাট রকমের ঝামেলা। জীবন, ক্যারিয়ার সব ফেঁসে যাবে।

জেল থেকে ছাড়া পেয়েই সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ধকল তো আর কম গেলো না। শরীর যে ভীষণ ক্লান্ত। বিগত কত গুলো দিন ধরে সওদাগর বাড়িতে ঝড় চলছে। এ ঝড়ের শেষ কোথায়, কতটা নিঃশেষ করার পর, তা জানা নেই কারো।

(২৮)

সূর্যাস্তের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ইতালির ভ্যাটিকান সিটিতে পা রাখে অবনী সাথে তার অসুস্থ মেয়ে চেরি। আশেপাশের প্রকৃতি, মানুষজনের দিকে চোখ বুলিয়ে নেয় সে। কি সুন্দর! অথচ এ সুন্দর তো সে চায় নি। পরিচিত দেশ ছেড়ে এই ভিনদেশে তো সে কখনো পাড়ি দিতে চায় নি। তবে আজ নিয়তির খেলায় ভাসতে ভসতে সে এতদূর এসেছে! বুক চিরে বেরিয়ে এলো এক দীর্ঘশ্বাস। ব্যাগ থেকে অবনী ফোনটা বের করলো, পঞ্চম বারের মতন রিং লাগালো তার স্বামী আমজাদ সওদাগরের ফোনে। মানুষটা কেমন দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এমন সময়ে ফোন রিসিভ করছে না! অথচ এয়ারপোর্টে থেকে তাদের একসাথেই হসপিটালের উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা।

অবশেষে পঞ্চম বারের মতন ফোনটা রিসিভ না হয়েই কেটে যেতেই হতাশার শ্বাস ফেললো অবনী। মন খারাপের বিজ্ঞাপনে ভরে গেলো তার হৃদ মাঝার। এই অচেনা শহরে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে। চেরির ঘুমন্ত, নিথর দেহটার দিকে তাকাতেই অসহায়ত্ব যেন পাহাড় ছুয়ে দিলো। জীবনে অনেক কাজ সে করেছে, অনেক অন্যায় করেছে, অল্প বয়সের আবেগে ভেসে গিয়ে পুরো জীবনটা অবহেলার সমুদ্রে ঢেলে দিয়েছে কিন্তু আজকাল তো বয়স হয়েছে, বুঝও হয়েছে, মোটামুটি ভালো-মন্দ সে বুঝতে পারে। তাই তো এখন সন্তান গুলোকে আঁকড়ে ধরার প্রচেষ্টা। কিন্তু সেই সন্তানদের উপরেই আজ বিপদ। এই অচেনা প্লাটফর্মে পরিচিত মুখটা দেখতে পাওয়ার আকাঙ্খা নিয়ে সে গাড়িতে উঠে বসলো। এই গাড়ি এখানের অবস্থানরত হসপিটাল থেকে আনা হয়েছে। যেখানে চেরিকে ভর্তি করানো হবে। অবনী বেগমের হৃদয় তোলপাড় করে কান্না এলো। এত বছরের পাওয়া না পাওয়ার গল্পে ভারী হলো কান্নার সুর। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এই বারো মাসের জীবনে তার দশ মাসই কেটেছে শূণ্যতার হাহাকারে। এসব বিষাদের গল্পে তার কান্নার গতিবেগ বাড়ালো বৈ কমালো না। আমজাদ সওদাগর আসেন নি, এই কথা টা তাকে যত বেশি না কষ্ট দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে তাকে তার ভাবনা যে- আমজাদ সওদাগর হুট করে দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে গেছে।

মানুষ বরাবরই কোমল প্রাণী। তারা চায় তাদের মন খারাপ, একাকীত্ব কেউ বুঝুক। কিন্তু যখন তাদের এই চাওয়া টা পূরণ হবে না বুঝতে পারে তখন তাদের মনের ঘরে নামে ভীষণ শোক। অবনী বেগমও সেই মানুষের বাহিরের না। চৈত্রের অপ্রাপ্তি, বৈশাখের শূণ্যতা সব মনে করে বাড়াচ্ছে তার মন খারাপের খাতা। সন্তান প্রেমি,সহজ-সরল আমজাদ সওদাগরও বদলে যেতে পারেন তা অবনীর মানতে কষ্ট হচ্ছে।

(২৯)

মাথার উপর নিকোষ কালো আকাশ, হৃদয়ে ব্যাথার আন্দোলন, কণ্ঠে উন্মাদনা মাখানো গান,
“তীর ভাঙা ঢেউ আমি নীড় ভাঙা ঝড়,
উজান ভাটির দুনিয়াতে সবই হলো পর।”

কি হাহাকার সে গানে! কে জানে, কত গল্প মানুষের হৃদয়ে দাফন দেওয়া থাকে, ক’জনই বা সেসবের খবর রাখে?

হাতের গিটারে অনবরত সুর তুলে যাচ্ছে, কখনো গেয়েছে বাহার বখাটে হওয়ার গল্প, কখনো সে সুর তুলেছে বিরহের। পর পর কত গুলো গানের পর থেমে গেলো তার হাত। বিরক্তির ঢেঁকুর তুলে অসহ্য অনুভূতিদেন ঝেরে ফেলতে চাইলো। চোখ টকটকে লাল তার, মুখে অবহেলার চাপদাড়ি। হাতের গিটারটা ছাঁদের বেশ প্রশস্ত রেলিঙটার উপর রাখলো, পকেট থেকে তার অতি প্রিয় সাথী নিকোটিনকে বের করেই দুই ঠোঁটের মাঝে চেপে ধরলো। দিয়াশলাই জ্বালানোর মুহূর্তেই কেউ এসে ছোঁ মেরে টেনে নিলো ঠোঁটের ভাঁজে থাকা সিগারেট টা। বাহার অবাক এবং বিরক্ত হলো। প্রয়োজনের সময় এমন অপ্রয়োজনীয় কাজ তার বরাবরই বিরক্ত করে। সিগারেট হলো তার একান্তই ব্যাক্তিগত সম্পদ যার উপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।

বাহার কপাল কুঁচকে সিগারেট ছোঁ মারা ব্যাক্তিটার দিকে তাকাতেই বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করলো। অধৈর্য্য কণ্ঠে বললো,
“এসব কেমন আচরণ তোমার?”

চিত্রা ততক্ষণে সিগারেটটা হাতে মুঠোয় ভরে নেয়। দুষ্টু হেসে বলে,
“এমন আচরণই করা উচিৎ আপনার সাথে। বখাটে পনা ছাড়েন তো এবার। আর কত বখাটে হবেন, এখন তো অন্তত থামুন।”

“কেনো? জেল খেটেছি বলে বখাটেপনা ছাড়তে বলছো? অথচ সভ্য সমাজে বখাটে না হলে পায়ে পিষে যাবে তোমাদের মতন বড়লোকেরা।”

বাহারের তীক্ষ্ণ কথার ধারে হতভম্ব হয়ে গেলো চিত্রা। জেল থেকে এ যেন অন্য এক বাহারের আগমন। বাহার ভাই তো এমন ছিলো না। চিত্রা নিজেকে সামলে নিয়ে বোকা বোকা হেসে বললো,
“আরে না বাহার ভাই, আপনি ভুল বুজছেন। আমি তো কেবল এমনই বলেছি। সিগারেট তো ক্ষতিকারক তাই।”

“মানুষের চেয়ে কমই ক্ষতিকারক। মানুষের সঙ্গই ছাড়তে পারলাম না আর এ তো আমার একাকীত্বের পরম বন্ধু, এরে ছাড়ি কীভাবে!”

চিত্রা গোঁ ধরলো। আজ সে পণ করেছে বাহারকে আর সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে দিবে না। এখন তার যা করা লাগে সে করবে।

বাহারের বিরক্তির ভার তড়তড় করে বাড়লো। চিত্রাকে ভয়ঙ্কর রকমের ধমক দিতে গিয়েও আবার দিলো না। পকেট থেকে সে বিনাবাক্য ব্যয়ে আরও একটা সিগারেট বের করলো। যথারীতি সেই সিগারেট টাও চিত্রা ধপ করে টেনে নিয়ে গেলো। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো বাহারের। তার সবচেয়ে প্রিয় গিটার খানা সেই রাগ বশত ছুঁড়ে মারলো ছাঁদের মেঝেতে। ঝনঝনানি শব্দে ভেঙে চুড়ে একাকার হয়ে গেলো গিটারটা। চিত্রা কেবল ফ্যালফ্যাল করে চেয়েই রইলো। জীবনে এমন অবাক সে যেন কখনো হয় নি। বাহার কেবল গিটার না, ভেঙে দিলো যেন স্বয়ং চিত্রাকে। কি নিষ্ঠুর! কি নির্মম! মনে হচ্ছে চিত্রার চিত্তের একেকটা ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছাঁদ জুড়ে।

চিত্রা অবাক ভরা চোখ মুখ নিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
“বা, বাহার ভাই?”

বাহার যেন এই ডাকটার অপেক্ষায়ই ছিলো। ডাকটার সাথে সাথে সে খেঁকিয়ে উঠলো, ভয়ঙ্কর রকমের ধমকে বললো,
“একদম আমায় আটকাতে আসবে না, মেয়ে, জ্বালিয়ে দিবো। সাবধান করে ছিলাম না তোমায়? করে ছিলাম কিনা বলো? তবুও আমার ব্যাপারে নাক গলানোর সাহস কীভাবে হলো তোমার? দু একদিন হেসে কথা বলেছি বলে কী মাথা কিনে নিয়েছো? ভদ্রতা দেখিয়েছি, সেটা সহ্য হয় না তাই না? শা*লা শান্তি দিলো না এই মানুষ জাতি।”

কথা শেষ হতেই বাহার নিজের চিলেকোঠার ঘর খানাতে চলে গিয়ে সশব্দে দরজাটা আটকিয়ে ফেললো। চিত্রা কেবল দেখলো সবটা। সে হয়তো সত্যিই অতি অধিকার ফলিয়ে ফেলেছে তাই বলে এমন আচরণ করবে বাহার? অষ্টাদশীর হৃদয় তোলপাড় করে অভিমান জমলো, চোখে টলমল করলো অভিমানের অশ্রু। ভাঙা, বিধ্বস্ত গিটার খানা দেখার পর বাঁধ মানলো না সে অশ্রুর কণা গুলো। অঝোর ধারায় ঝরে গেলো কেবল। বাহার ভাই তার উপর চিৎকার করেছে এটা না যতটা কষ্ট দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে বাহার ভাই নিজেকে কষ্ট দিয়েছে সেটা ভেবে। গিটার টা তো বাহার ভাইয়ের প্রাণ ছিলো, সিগারেট আর গিটার সে কখনো হাত ছাড়া করে নি, যেন সাক্ষাৎ প্রাণ ভোমরা এখানে, অথচ সে গিটারের আজ বিধ্বস্ত অবস্থা! তাও কিনা বাহার ভাই নিজে করেছে! অষ্টাদশীর কান্নায় ভিজে গেলো নেত্র যুগল। চিবুক বেয়ে গড়িয়ে গেলো সেই অশ্রু। বুক সমান কষ্ট নিয়ে অষ্টাদশী অভিমান করলো, বাহার ভাইয়ের দিকে সে আর ফিরে চাইবে না। পাষণ্ড পুরুষ বাহার ভাই, সর্বনাশা পুরুষ সে।

(৩০)

হসপিটালের করিডোরে নতুন একটা দিনের আগমন। সূর্যের আলো হসপিটালের বাগানের বিভিন্ন রকমের রঙিন ফুলের উপর ঝিলিক দিয়ে উঠছে। নতুন সকাল, নতুন আরেকটা দিন। অবনী বেগমের ক্লান্ত শরীরটাকে অবসাদের জন্য বসিয়েছে কাঠের সুন্দর বেঞ্চ খানায়। চোখ দুটো বন্ধ করে ক্ষাণিক ঝিমিয়ে নিলো সে। সূর্যের তেজ বাড়লো, শরীরের অবসাদ টা কিঞ্চিৎ কাটলো। সাথে সতেজ হলো মস্তিষ্ক। হঠাৎ পাশে কারো কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ পেতেই চোখ খুলে তাকালো সে। কাঙ্খিত মানুষটাকে এ সময়ে দেখে ভড়কেও গেলো কিছুটা। বিষ্মিত কণ্ঠে বললো,
“আমাজাদ!”

কোট,টাই পড়া ভদ্র লোক অবনীর পাশে এসে বসলো। নরম কণ্ঠে বললো,
“কেমন আছো, অবনী?”

অবনীর অভিমান হলো। এই কি প্রথম অবনী স্বামীর প্রতি অভিমানে মুখ ফুলালো? হ্যাঁ, এত বছরের বৈবাহিক জীবনে এই প্রথমই এটা হলো। চল্লিশ উর্ধ্বো অবনী অষ্টাদশী হয়ে উঠলে নিমিষেই, মুখ ফুলিয়ে বললো,
“এতক্ষণে সময় হলো তোমার? গোটা একটা বিকেল আর রাত পার করার পর তোমার আসতে মন চাইলো?”

আমজাদ মাথা ঝুঁকালেন, বেশ অপরাধী কণ্ঠে বললেন,
“একটা ঝামেলায় পড়ে গেছিলাম অবনী। নাহয় তোমায় অপেক্ষা করাতাম না। আমার চেরি কেমন আছে?”

চেরির কথা উঠতেই অবনীর কান্না এলো। লেপ্টে গেলো আমজাদের বুকের মাঝে। হাহাকার মাখানো কণ্ঠে বললো,
“আমাদের চেরি ভালো নেই, আমজাদ। ভালো নেই।”

আমজাদ হয়তো হুট করে অবনীর এত ঘনিষ্ঠতা আশা করে নি। সামান্য বিব্রতবোধ করলেন সে। অস্বস্তি মাখানো কণ্ঠে স্বান্তনা দিয়ে বললেন,
“চিন্তা করো না, অবনী। ঠিক হয়ে যাবে সে। দেখি উঠো তো, মানুষ দেখছে।”

আমজাদের শেষের বাক্যে অবনীর বাঁধ ভাঙা কান্না থেমে গেলো। আকষ্মিক ভুল কিছু শুনে ফেলেছে এমন একটি ভাব ফুটে উঠলো তার মুখ-মন্ডলে। আমজাদ কিনা বলছে মানুষ দেখছে? আমজাদ! অথচ যখন তাদের নতুন বিয়ে হলো তখন আমজাদ সারাদিন অবনীর পিছে পিছে থাকতো। ভাবীরা ঠাট্টা করে বউ পাগলও বলতো ছেলেটাকে। অবনী মাঝে মধ্যে কেমন ব্যবহার করতো কিন্তু লোকটা হাসি মুখে সব মেনে নিতো। কেমন বোকা বোকা ধাঁচের ছিলো। একদিন অবনীর শাশুড়ি অবনীকে কি একটা যেন রান্না করতে দিয়েছিলো, অবনীর ঠিক মনে নেই, আমজাদ সবার থেকে লুকিয়ে অবনীর রান্না নিজে করে দিয়েছিলো। কই গেলো সেই দিন, কই গেলো সেই বউ পাগল আমজাদ? আজ যেন ভিন্ন পুরুষ সে। গত কয়েকবছর আমজাদ দেশে যায় নি, হয়তো তাই এ বদলটা চোখে লাগে নি। হুট করে একজন মানুষের এত বদল কীভাবে হলো!

প্রশ্নরা হাতছানি দিলো অবনীর হৃদয় জুড়ে। অবনী ক্রন্দনরত ভাঙা কণ্ঠ নিয়ে বললো,
“তুমি বদলে গেছো, আমজাদ। বদলে গেছো।”

(৩১)

ঘর বন্ধি, বিবশ,বিষণ্ণতায় গোটা একটা দিন গেলো। চিত্রা চুপ চাপ থম মারা। কারো সাথে কোনো কথা বলে নি গতকাল রাতের পর থেকে। গতকাল সারা রাত সে কেঁদেছে, কেঁদে কেটে চোখ-মুখ ফুলিয়েছে। গত এক বছর বাহার ভাইকে তার অসহ্য অসহ্য লাগে বলে সবার গোপনে হৃদয় মাঝে পুষে রেখেছিলো। সে আজ বুজছে, এই বাহার ভাইকে ছাড়া তার গোটা দুনিয়া অসহ্য কিন্তু বাহার ভাই অসহ্য না।

সময়টা ঠিক সন্ধ্যার পরের ভাগ। এসময়ে বাড়িতে হৈচৈ থাকে কম। যে যার মতন ব্যস্ত থাকে। তুহিন ভাইজান বোধহয় বাহিরে এখনো। দিশান আর তৃষান ভাই রাও বোধহয় পড়ছে। অহি আপারও পড়ার সময়। বড়রা হয়তো ঝিমুচ্ছে কিংবা কথা বলছে। পুরো বাড়ি একদম নিবিড়। একদম শীতল। চিত্রা দরজা খুলেছে সারাদিন পর এখন। বাড়ির মানুষ তাকে তেমন একটা ডাকেও নি আজ। ভেবেছে শরীর তো এমনেতে অসুস্থ, ঘুমাক নাহয়। কেউ কি আর মনের খোঁজ রাখে!

আঁধার ঘরে অন্য কারো উপস্থিতি অনুভব করতেই চমকে উঠে চিত্রা। এসময় কে আসতে পারে তার ঘরে ভাবতেই বারান্দার দরজায় উঁচা লম্বা পুরুষালীর অবয়ব ভেসে উঠলো। চিত্রা অবাক কণ্ঠে বললো,
“আ,আব্বু!”

নুরুল সওদাগর এগিয়ে এলেন মেয়ের দিকে। রেলিং এ ঠেস দিয়ে দৃষ্টি রাখলেন রাস্তায়, মানুষজন দেখা যাচ্ছে বারান্দা থেকে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কত সজীব দেখা যাচ্ছে রাস্তা টা! নুরুল সওদাগর ছোট্টো শ্বাস ফেললেন। রাস্তায় দৃষ্টি রেখেই বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“রাস্তা থেকে তো রিক্সা, গাড়ির হর্ণের শব্দ আসে তাই না. তোমার রুমটা নাহয় বদলে ফেলো। অসুবিধা হয় না?”

চিত্রা অবাক হলো। বাবার সাথে এমন কথা বলার সম্পর্ক তার নেই। তাহলে আজ বাবা অন্য সুর গাইছে যে? নতুন কোনো বার্তার আগমন তাহলে ভেসে বেড়াচ্ছে পরিবেশে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here