#হৃদ_মাঝারে_তুমি
পর্বঃ- ২১
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
তানিশা তার থাকার রুমে এসে মনে মনে ভাবতে লাগলো, “ফারহান ভাইয়া যা বললেন তা করা কি ঠিক হবে? এমনটা করলে তো সমাজে আম্মু-আব্বুর মান-সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। আবার এমনটা যদি না করি তাহলে ফারহান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যাবে। আর বিয়ের পর যে উনি আমার সাথে কি করবেন তার কোনো ঠায় ঠিকানা নেই। কি করবো তাহলে এখন আমি? ফারহান ভাইয়ার কথামতোই কাজ করবো কি তাহলে? এমনটা করলে তো এইখানে আমার কোনো দোষ থাকবে না ফারহান ভাইয়া বললেন। তাহলে উনার কথানুযায়ী কাজটা করলে আমারই লাভ।” তানিশা মনে মনে এইসব কথা ভাবলেও তার মন এতে কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। তবুও সে ভেবে চলছে কি করবে সে এখন। অনেক ভাবার পর তানিশা ঠিক করলো সে আগে একবার তার আম্মু-আব্বুর সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে। তাই সে তৎক্ষনাৎ তার রুম থেকে বেরিয়ে তার আম্মু-আব্বুর খুঁজে নিচে নেমে আসলো। এসে দেখলো তার আম্মু-আব্বু ড্রয়িংরুমে বসে বসে তার খালা-খালুর সাথে গল্প করছেন। তানিশা ভিতরে ঢুকে তার আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-“আম্মু একটু এদিকে আসবে? তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”
-“কি কথা বলবি বল?”
-“একটু এদিকে আস না। আব্বু তুমিও আস।”
তানিশার কথায় তার আম্মু-আব্বু দু’জনেই উঠে তার কাছে চলে আসলেন। তানিশা এবার দুজনকেই টেনে সেখান থেকে অন্যরুমে নিয়ে আসলো।
-“আরে কি এমন কথা বলবি যে আমাদের সেখান থেকে এইখানে নিয়ে আসলি?” তানিশার আব্বু বললেন কথাটা।
-“বলছি শুন। তোমরা যে আমাকে না জানিয়েই ফারহান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললা এটা কি তোমরা ঠিক করলে?”
-“কেন ফারহান তো অনেক ভালো স্বভাবের ছেলে। ওর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করে আমরা তো কোনো ভুল করিনি।”
-“উনি আমার থেকে ৪-৫ বছরের বড় আর উনি আমার এক সম্পর্কের ভাইও হোন। উনাকে আমি কীভাবে বিয়ে করি? তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে যে আমাকে না জানিয়েই উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললে? তা ছাড়া আমার কি এখন বিয়ের বয়স হয়েছে যে তোমরা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছ?”
-“তোর বিয়ের বয়স তো সেই ২ বছর আগেই শুরু হয়ে গেছে। আর ফারহান তোর খালাতো ভাই হয়, খালাতো ভাইকে তো বিয়ে করাই যাই।”
-“করা যায়না আম্মু তোমরা কে…”
-“তোর কোনো কথা আমরা শুনছি না। ফারহানের সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে আমাদের সবার ইচ্ছাতেই। তা ছাড়া তোর খালামণিও চান তোকে উনার ছেলের বউ বানাতে। তাই তোকে ফারহানকে বিয়ে করতেই হবে।”
-“কিন্তু আম্মু…”
-“কোনো কিন্তু না। আমরা যেটা বলছি সেটাই। এই তানিশার আব্বু চল তো এখান থেকে।” বলেই তানিশার আম্মু-আব্বু সেখান থেকে আবার ড্রয়িংরুমে চলে গেলেন।
এদিকে তানিশা দুঃখ ভরা মন নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। রুমে এসেই তানিশা ভাবতে লাগলো সে এখন কি করবে। তানিশা অনেক ভেবে দেখলো ফারহানের কথানুযায়ী কাজ করা না ছাড়া তার কাছে আর কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু শত চেষ্টার পরেও তানিশা নিজের মনকে এই কাজটার প্রতি স্থির করছে পারছে না, কিছুতেই না।
.
পরেরদিন ভার্সিটি থেকে বের হতেই আরশি দেখলো ভার্সিটি গেইটের সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফারহানকে দেখে আরশি উলটো দিকে হাঁটা শুরু করতে যাচ্ছিল তার আগেই ফারহান তাকে ডাক দিয়ে বসে। এখন ফারহানের ডাকে সায় না দিয়ে তার আর কোনো উপায় নেই। তাই অনিচ্ছা সত্তেও আরশি ফারহানের কাছে চলে আসলো।
-“তুমি এইখানে!” আরশি বললো।
-“অনেকদিন ধরে তোকে দেখছি না তাই তোকে দেখতে আসলাম। তা কেমন আছিস?”
-“ভালো। তুমি?”
-“আছি একরকম। আজ তোর বান্ধবী রুহি আসেনি?”
-“নাহ সে আজ অসুস্থ।”
-“আচ্ছা আয় গাড়িতে উঠ, আমি তোকে বাসায় দিয়ে আসছি।”
-“আমি একা যেতে পারবো।”
-“তোকে আমি উঠতে বলছি না।” রাগী গলায়।
আরশি এবার কোনো কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। এরপর ফারহানও গাড়িতে উঠে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে আরশিদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আরশি চুপটি মে*রে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ফারহান নিজের মতো করে গাড়ি চালাচ্ছে। নিরবতা ভেঙে ফারহান বলে উঠলো,
-“রাগ করে আছিস আমার উপর?”
ফারহানের কথাটা শুনে আরশি বাহিরের দৃশ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকালো আর চেহারায় প্রশ্নের চাপ ফুটিয়ে তুলে এই কথাটার মানে জানতে চাইলো। তখন ফারহান বললো, “ওইদিন পার্কে যে তোর গায়ে হাত তুলেছিলাম এর জন্য।”
ফারহানের কথার প্রতিউত্তরে আরশি কোনো জবাব দিল না। সে আবার আগের ন্যায় বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
-“মামার পছন্দ করা ছেলেটাকে তোর পছন্দ হয়েছে?”
-“একটা অচেনা ছেলেকে হুট করে পছন্দ করে ফেলাটা বোকামি।”
-“তাহলে যেই ছেলেটা তোকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভালোবেসে আসছে তার ভালোবাস গ্রহণ না করাটা কি বোকামি না?”
আরশি নিশ্চুপ।
-“আচ্ছা তোর কি ওই ছেলেটার উপর কোনো ইন্টারেস্ট আছে?”
-“অচেনা কারও প্রতি ইন্টারেস্ট কীভাবে জাগবে?”
-“তাহলে আমি তোর পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও আমার ব্যাপারে তোর মনে একটুও ইন্টারেস্ট জাগছে না?”
-“দেখ ভাইয়া, তোমাকে আমি সেদিনও বলেছিলাম আজও বলছি। ছোট থেকেই তোমাকে আমি বড় ভাইয়ের মতো ভেবে এসেছি তাহলে এখন হুট করেই তোমাকে কীভাবে অন্যভাবে ভাববো বল?”
-“এটাও আমি তোকে সেদিন পার্কে বলে দিয়েছিলাম। এখন আবার বলছি, তুই আমাকে ফিল করার চেষ্টা কর দেখবি একসময়…”
-“তুমি বুঝতেছ না কেন, সারাজীবন তোমাকে আমি বড় ভাইয়ের মতো ভেবে এসেছি। এখন যদি আমি তোমাকে ফিল করার চেষ্টা করি তাহলে বড় ভাইয়ের ন্যায়ই ফিল করবো।”
-“ঠিক আছে তোকে আর আমাকে ফিল করা লাগবে না। একটা সময় তোর মন এমনিতেই আমাকে ফিল করবে দেখে নিস।” কথাটা বলে ফারহান গাড়ির স্পিড কিছুটা বারিয়ে দিল।
৫ মিনিটের মধ্যে গাড়ি এসে আরশিদের বাসার সামনে থামলো। গাড়ি থামিয়ে ফারহান চুপ করে বসে আছে দেখে আরশিও আর কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে চলে গেল। তারপর ফারহান সেখান তার অফিসে চলে গেল।
এইভাবেই কে*টে গেল ২ দিন।
আজ ফারহান আর তানিশার বিয়ে তাও পারিবারিক ভাবে। বিয়েতে তেমন কাউকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। শুধু আরশিরা এই বিয়েতে উপস্থিত আছে। আরশি ফারহানদের বাসায় আসার পর থেকেই দেখছে ফারহান একদম চিল মোডে আছে। অথচ আজ তার বিয়ে। আজ তার বিয়ে এর জন্য ফারহান চিল মোডে থাকতেই পারে কিন্তু আরশি ভাবছে যেই মানুষটা তাকে কয়েকদিন আগে ভালোবাসার কথা বলে প্রপোজ করেছিল সে কীভাবে এই দিনটায় এমন চিল মোডে বসে আছে। তাহলে কি ফারহান তাকে ভালোবাসে না? সেদিনকার কথাগুলো কি তাহলে মিথ্যা ছিল? প্রথম আরশি যখন শুনে ফারহানের এক খালাতো বোনের সাথে ফারহানের বিয়ে ঠিক করা হয়েছে তখন আরশি বেশ অবাক হয়। ফারহান সেদিন তাকে ভালোবাসার কথা বললো তাহলে সে কীভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এটা আরশির মাথায় ঢুকছিল না। তবে আরশি বিষয়টা নিয়ে এতটা ঘাটাঘাটিও করেনি। কেননা ফারহানের বিয়ে হলেই কি বা না হলেই কি তাতে তো তার কোনো আসে যায় না। কেননা আরশি তো ফারহানকে এখনো বড় ভাইয়ের মতোই দেখে।
সন্ধ্যাবেলা বাসার সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজি সাহেবকেও একটু আগে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। একটু পরেই ফারহান আর তানিশার বিয়ে। কাজি সাহেব এসেই বিয়ের কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে লেগে পরলেন। প্রায় পনের মিনিট পর কাজি সাহেব কনেকে নিয়ে আসার জন্য বললেন। এমন সময় হঠাৎ তানিশার আম্মু দৌড়ে এসে ড্রয়িংরুমে ঢুকলেন আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, “তানিশাকে ওর রুমে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেল মেয়েটা? কেউ কি তাকে কোথাও যেতে দেখেছ?”
তানিশার আম্মুর কথা শুনে ফারহানের আম্মু উনার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, “তানিশাকে রুমে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? দেখ বাসার কোথাও আছে হয়তো। এই বাসা ছেড়ে ও কোথায় যাবে?”
-“আমি পুরো বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও তানিশাকে পাইনি। কোথায় গেল আমার মেয়েটা?”
তানিশার আম্মুর কথায় এবার বাসার সবাই প্রথমে তানিশার রুমে গিয়ে তাকে খুঁজতে লাগলো। রুমের মধ্যে তানিশাকে না পেয়ে সবাই পুরো বাসাটা তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু বাসার কোথাও তানিশাকে পাওয়া গেল না। এবার বাসার মধ্যে একপ্রকার হৈচৈ পরে গেল তানিশাকে নিয়ে। সবার ধারণা তানিশা বাসা থেকে পালিয়েছে। কিন্তু তানিশা কার সাথে পালিয়েছে সেটা কেউ আন্দাজ করতে পারছে না। তানিশার আম্মু তো তানিশাকে না পেয়ে এতক্ষণে তার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। সবাই-ই তানিশার বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তিত শুধু ফারহান ছাড়া। তানিশাকে বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না এটা শুনেও ফারহান বিন্দাস মোডে আছে। বাসার কেউ ফারহানের বিষয়টা খেয়াল না করলেও আরশি ঠিকই বিষয়টা লক্ষ্য করছে।
.
.
Loading…….
বিঃদ্রঃ তানিশা কি সত্যিই বাসা থেকে পালিয়েছে নাকি ফারহান নিজেই তানিশাকে গুম করে দিয়েছে? সামনে এইরকম আরও টুইস্ট আসতে চলেছে শুধু অপেক্ষায় থাকেন, হ্যাপি রিডিং ❤️
~সবাই নিয়মিত নামায আদায় করবেন আর নামাযের লাভ জানিয়ে অন্যদেরকে দাওয়াত দিবেন~