#আধারে_তুমি,১০,১১
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১০
সোহা খোরগোশের মতো হেটে এসে অনেকটা উত্তেজনা নিয়ে বলে
” আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি না ?”
সোহার কথাটা শুনে পরিষ্কার আকাশে বাজ পরার মতো অবস্থা মনে হলো শানের। শান হা করে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। শানের তাকানো দেখে সোহা তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বুঝতে পারছে না ভুল কিছু বলেছে কিনা ! সোহা আমতা আমতা করে বলে
” আমি কি ভুল কিছু বলেছি ?” সোহার কথা শুনে শানের ধ্যান ভাঙে। শান সোহার দিকে তাকিয়ে হতবাক স্বরে বললো
” ভুল মানে! মারাত্মক ভুল বলে এটাকে।” সোহা অবাক হয়ে বলে
” এখানে মারাত্মক ভুলের কি আছে ? আমি তো শুধু বলেছি আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি না !”
শান ঢোক গিলে বলে
” এটাই তোমার সবচেয়ে বড় ভুল। দ্বিতীয় বার এসব কথা বলা তো দূড় ভেবেও দেখবে না। মাথায় থাকে জেনো।” সোহা মুখ ফুলিয়ে নেয়। এতো ছোট একটা কথার মধ্যে ভুলের কি আছে ? শান নিজেকে স্বাভাবিক করে ভ্রু কুঁচকে বললো
” এখানে কি করছো তুমি ? একটু জ্বর কমেছে বলে কি এখনই বাদরের মতো লাফানো শুরু করে দেবে ? যাও গিয়ে রেস্ট করো। রাতে ভাইয়া এসে তোমাকে দেখবে।”
সোহা মন খারাপ করে বেরিয়ে গেলো শানের রুম থেকে। শান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে
” যেখানে তোমাতে আশক্ত হয়ে রয়েছি আমি, সেখানে ফ্রেন্ডশিপ এর কোনো জায়গা নেই। যদি কোনো সম্পর্ক হয় তাহলে সেটা শুধু আর শুধুমাত্র আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক দিয়ে তৈরি হবে।” শান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মন দেয়।
সোহা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বিরবির করতে থাকে
” আমাকে অপমান করা ! আর কখনো যাবো না উনার রুমে। পেয়েছেটা কি আমাকে ? সব সময় কথা শোনাবে নয়তো বকা দেয় আমাকে ! আমি কি উনার বকা শোনার জন্য জন্মেছি নাকি ? হুহ !”
সোহা মুখ ফুলিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। বর্ষা কাল বলে কথা ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিই হয়ে যায়। আজ সারাদিন বৃষ্টি না হলেও এখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা বাতাসে হৃদয় জুড়িয়ে যাচ্ছে। সময়টা অসম্ভব এক সুন্দর অনুভূতির। সোহা একটা চেয়ার এনে ব্যালকনিতেই বসে পড়লো। ব্যালকনির রেলিং এর উপর দুই পা তুলে বসে কানে হেডফোন গুঁজে দেয়। চোখ বন্ধ করে এই সুন্দর আবহাওয়া আর গানে মেতে থাকে।
এদিকে একজন ব্যাক্তি যে সোহাকে তার মন ভরে দেখে যাচ্ছে সেদিকে কি আর সোহা জানে ! অবশ্যই জানে না। শানের ব্যালকনি থেকে সোহার ব্যালকনি পুরোপুরি ভাবে দেখা যায়। শান কাজ শেষ করেই ব্যালকনিতে এসেছিলো গায়ের জন ছাড়াতে কিন্তু এখানে এসেই সোহাকে দেখতে পেলো। মুহূর্তেই সব ক্লান্তি কেটে যায়। মেয়েটা রুমে এসেই বৃষ্টির সময় ব্যালকনির ঠান্ডা হাওয়ায় বসে আছে ভেবেই শানের রাগ হলো কিন্তু শানের রাগ তো কখনোই দীর্ঘ সময় টিকতে পারেনি সোহার কাছে। হোক সেটা সোহার অজান্তেই কিন্তু সোহার জন্যই শানের রাগ কমে যায়। ব্যালকনির হালকা আলোয় সোহার স্নিগ্ধ চেহারা দেখে যেকেউ তার মন ভুলিয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু শানের তৃষ্ণা মোটেই কমছে না বরং দ্বিগুনের থেকেও দ্বীগুন বেড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সোহার সামনে গিয়ে তাকে চোখ জুড়িয়ে দেখে নিক কিন্তু সেটা নিতান্তই কল্পনা। ইচ্ছেটা এই মুহূর্তে কোনো ভাবেই পূরণ হবার নয়। হঠাৎ করে পাশের বিল্ডিং থেকে তামিমের ডাক শুনে শান চমকে তামিমের ব্যালকনিতে দৃষ্টি ফেলে। তামিম সোহাকে ডেকেছে কিন্তু সোহার তো সেদিকে খেয়ালই নেই। কানে যে হেডফোন গুঁজে রেখেছে সেটাতেই হারিয়ে আছে আর বৃষ্টির শব্দে তামিমের ডাক সোহার কানেও গেলো না।
তামিম তো ধরেই নিলো সোহা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। তাই মন খারাপ করে চলে যেতে নিলেই শান তাকে ডেকে উঠলো
” তামিম !” তামিম শানের ডাক শুনেই চিনে ফেললো। সাথে সাথে শানের ব্যালকনির দিকে তাকায়। শানকে দেখে বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” কেমন আছো ভাইয়া ?” শান আলতো হেসে বলে
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো ?”
তামিম হেসে উত্তর দেয়
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো।” শান আলতো হেসে বলে
” তো শুনলাম আজকে নাকি সোহা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তুমিই ওকে নিয়ে এসেছিলে !”
তামিম লাজুক হাসি দিয়ে বলে
” জি ভাইয়া। আপু আর আমি গল্প করছিলাম তখন। তুমি জানো ! আমাদের মধ্যে একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গিয়েছে।” শান বাহবা দিয়ে বলে
” বাহ ! খুব ভালো কথা। শুনে খুশি হলাম।”
” শুকরিয়া। আপু এখন কেমন আছে ?” শান সোহার দিকে ইশারা করে বলে
” তুমিই দেখে নাও কেমন আছে। খারাপ থাকলে কি এখানে এভাবে বসিয়ে থাকতো ? ভালোই আছে।” তামিম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শানের সাথে গল্প করতে থাকে।
রাতে ডিনার টেবিলে বসতে বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠে। সালমা শান আর সোহাকে খাবার দিয়ে দরজা খুলে দেখে ইশান এসেছে। সালমার প্রশ্নের ঝুড়ি শুরু হয়।
” ভাই নানি কেমন আছে এখন ? খালাম্মা, ভাবিরা কবে আসবো ? ছোট ভাই, খালু কেউই তো আসতাছে না…”
ইশান সালমাকে থামিয়ে বলে
” আরে থাম তুই ! তোর প্রশ্ন আর শেষ হয় না। বাড়িতে ঢুকতেই তো দিলি না আমাকে। সবাই ভালো আছে। কালকেই সবাই চলে আসবে এবার আমাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে দে।” সালমা মাথা নেড়ে ইশানের পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। সোহা খাবার সামনে নিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো। সোহার মাথায় হাত রেখে বলে
” কেমন আছো সোহারানি ?” সোহা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন ?” ইশান মাথা নেড়ে বলে
” আমিও ভালো আছি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তোমরা খাও।” ইশান উপরে তার রুমে চলে যায়।
শান খাচ্ছে আর ফোন টিপছে। ইমন ইম্পরট্যান্ট কিছু ই-মেইল পাঠিয়েছে সেগুলোই দেখছে। সোহা কিছুটা খেয়ে খাবার নিয়ে বসে থাকে। মুখে একদমই রুচি নেই তার। শান ফোন রেখেই সোহার দিকে তাকালো। বসে থাকতে দেখে বলে
” বসে আছো কেনো তুমি ? খাবার শেষ করো তাড়াতাড়ি !” সোহা ভেংচি কেটে বলে
” খাবো না আমি।” শান রেগে বলে
” কি করলে এটা তুমি? তুমি আমাকে ভেংচি দিচ্ছো কেনো ? ঠোঁট কেটে রেখে দেবো।” সোহা নাক ফোলাতে থাকে। শান নিজের খাওয়ায় মন দেয়। সোহা খাবার রেখে উঠে টিভির সামনে বসে পরলো। সালমাকে বলে আচারের বয়াম এনে বসে বসে খেতে থাকে আর টিভি দেখতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইশান এসে পরে। সোহাকে দেখে শানকে উদ্দেশ্য করে ধীরে ধীরে বলে
” কিরে ! সোহা খায়নি কেনো ? তুই কিছু করেছিস নাকি ?”
শান ভ্রু কুচকে বলে
” আমি কি করবো ? জ্বর তো তাই মুখে রুচি নেই। খাবে না বলে উঠে গেলো।” ইশান উত্তরে
” ওহ ” বললো। সালমা ইশানকে খাবার দেয়। ইশান সালমাকে বলে
” সোহার জন্য পারলে একটু চিকেন স্টু করে নিয়ে আয়।” সালমা মাথা নেড়ে চলে গেলো।
ইশান আর শানের খাওয়া শেষ হলে দুজন সোফায় বসে কথা বলতে থাকে। সোহা নিজের মতোই বসে বসে আচার খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সালমা গরম গরম চিকেন স্টু এনে সোহার সামনে রেখে হেসে বলে
” নেন আপা এটা খান। কিছু তো খান নাই এটা খেলে ভালো লাগবে।” সোহা খাবারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। ইশান সেটা দেখে বলে
” কি হয়েছে ? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো সোহা ?” সোহা মাথা নেড়ে কিছু না বোঝালো। ইশান হেসে বলে
” ঠিকাছে। তবে এটা পুরোটা খেয়ে নেবে নাহলে না খেয়ে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পরবে।” সোহা ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। শান সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সোহার এতো ভালো মানুষি দেখে তার কাছে সন্দেহ লাগছে। মনে হচ্ছে উল্টো পাল্টা কিছু করবেই। তবে শানের ধারণা ভুল করে দিয়ে সোহা চুপচাপ সুন্দর করে খাবারটা খেয়ে নিলো। খাবার খেয়েই রুমে চলে গেলো ঘুমানোর জন্য। সোহার কাজে শান বড্ড অবাক হলো। কিন্তু সময়ের সাথে সেটা ভুলেও গেলো।
পরদিন সকালে বাড়ির সবাই এসে পড়লো বাড়িতে। শান থানায় আর ইশান হসপিটালে চলে যায়। আর বাকিরা রেস্ট করতে থাকে। কম খাটুনি খাটেনি কেউই। দিন শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পরে। সোহা, নাইসা আর টমিকে নিয়ে খেলতে থাকে। শাহানাজ বেগম নিজেই কিছুটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে তাই রেস্ট করছে। নিলা আর সিমিও তাদের কাজ করতে থাকে। এদিকে সালমা বসে আছে শাহানাজ বেগমের সাথে কথা বলবে বলে তবে তিনি রেস্ট করায় সালমার কথা হয়ে উঠা হচ্ছে না একদমই। সোহার জ্বরও মোটামুটি কমে গিয়েছে।
রাতে সোহা ইতির সাথে কথা বলে। ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট নিয়ে দুই বান্ধবীর পরামর্শ চলছে।
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১১
রাতে সোহা ইতির সাথে কথা বলে। ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট নিয়ে দুই বান্ধবীর পরামর্শ চলছে।
আজকের সকালের শুরুটা সুন্দর ছিলো।
সোহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই নাইসা আর টমির সাথে খেয়াল ব্যস্ত হয়ে পরে। নিলা আর সিমি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে সবার জন্য আর সালমা শাহানাজ বেগমের কাছেই ঘুরঘুর করছে।
কিছুক্ষণ পর নিলা সালমার নাম ধরে হাকডেকে তাকে রান্নাঘরে নিয়ে আসলো। সালমা এসে দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ভাবি ডাকছেন কেনো ?” নিলা কাজ করতে করতে ভ্রু কুঁচকে বিরক্তের সঙ্গে বললো
” ডাকছি কেনো মানে ? কতো কাজ পরে আছে। তুমি আমাদের হেল্প না করে সকাল থেকে খেয়াল করলাম মায়ের কাছে ঘুরঘুর করছো। কেনো ? কি বলবে মাকে ?” সালমা জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বলে
” না না কিছু না। খালাম্মার কিছু লাগবো কিনা তার জন্যই সেখানে বসে আছিলাম।”
নিলা কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে
” দেখো সালমা তোমাকে আমি ভালো করেই চিনি। বিয়ের পর থেকে দেখে আসছি। কোনো গোপন কথা বলতে চাইলে এভাবে ঘুরঘুর করো। তোমার যা বলার বলো তবে মাকে অসুস্থ করে তোলার মতো কোনো কথা বলবে না। সাবধান করে দিচ্ছি কিন্তু !” সালমা মাথা নেড়ে বলে
” আচ্ছা বড়ভাবি বুঝেগেছি। এখন কোনো কাজ থাকলে দেন করে দিচ্ছি !” নিলা হাফ ছেড়ে বলে
” নাহ তেমন কোনো কাজ নেই। তুমি শুধু সবাইকে একটু ডেকে নিয়ে এসো ব্রেকফাস্ট করার জন্য।” সালমা দৌঁড়ে চলে যায় উপরে। মুসফিক চৌধুরী ভোরে উঠেই মর্নিং ওয়াকে গিয়েছে তাই তাকে বলার কষ্ট আর করতে হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই এসে টেবিলে বসে পরে।
ব্রেকফাস্ট শুরু করতে করতে মুসফিক চৌধুরীও এসে পরলো। সোহা সালমাকে বলে
” সালমা আপা আন্টিকে নিয়ে আসো। সবাই এখসাথে খাবে।” সালমা মাথা নেড়ে চলে গেলো।
সোহা খেতে খেতে বলে
” আংকেল আজকে আমরা সবাই ঘুরতে যাই ?”
মুসফিক চৌধুরী হেসে উঠে সোহার কথায়।
” আরে ঘুরাঘুরির জন্যই তো এনেছি তোমাকে। তোমার যেখানে ইচ্ছে ঘুরবে কেউ বাধা দেবে না।”
সোহা এক্সাইটেড হয়ে বলে
” তাহলে আমরা দুদিন ঘুরাঘুরি করবো অনেক। কে কোথায় যাবে বলো !” সামির খাওয়া থামিয়ে বলে
” তোমাদের ঘুরাঘুরির ডেটটা কিন্তু কয়েকদিন পিছিয়ে ফেলবে ! আমিও যাবো তোমাদের সাথে। এখন অফিসে জরুরি ডিল এর কাজ আছে তাই যেতে পারবো না।”
সোহা না সম্মতি প্রদান করে বললো
” না না একদিনের বেশি আর পেছানো যাবে না। আমার এডমিশন টেস্ট এর প্রিপারেশন নিতে হবে তাই আর মাত্র দুই, তিন পরই আমি চলে যাবো।”
শাহানাজ বেগমও ইতিমধ্যে চলে এসেছে। সোহার কথাও তিনি শুনেছেন। শুনেই ব্যস্ত হয়ে বলে
” চলে যাবে মানে ? তোমার সাথে তো ভালো করে সময়ই কাটাতে পারলাম না এতো ঝামেলার জন্য।” সোহা মুচকি হেসে বলে
” তাই তো বললাম আজকে আর কালকে তোমাদের সাথে সময় কাটাবো তারপর দুদিন ঘুরবো আর এরপরদিন চলে যাবো।” নাইসা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” মিষ্টিপাখি তুমি চলে যাবে আমাকে রেখে ? আমিও তোমার সাথে যাবো।” সোহা আদুরে কন্ঠে বলে উঠে
” ওলে ওলে আমার নাইসু ! আমি তো আমার বাড়িতে যাবো তুমিও যাবে আমার সাথে ?” নাইসা ছলছল চোখে মাথা নেড়ে হ্যা বললো। সোহা হেসে নাইসাকে চুমু দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে রাখে।
সব কথাই শান চুপচাপ শ্রবণ করছে। সোহার চলে যাবার কথা শুনে মনের ভেতরের অনুভূতি গুলো হঠাৎ করে নীরবতা পালন করছে বলে মনে হলো। শান নিঃশব্দে খেতে থাকে। সবার চোখ মুখ পর্যবেক্ষণ করে কিছুক্ষণ পর ইশান বলে উঠে
” আচ্ছা আমি বলছি সবার যখন সোহার জন্য এতো মন খারাপ সবাই ঘুরে আসো।”
সামির নিশ্বাস ফেলে বলে
” সময় কোথায় আমাদের ? নতুন ডিলের কাজ শুরু করেছি কালকে থেকেই। আমি চলে গেলে তো বাবা অর্ধেক কাজ করে নেবে কিন্তু বাকি গুলো তো আমাকে করতেই হবে।” সিমি ভ্রু কুঁচকে বলে
” একদিনের জন্য না গেলে কি হবে ? তোমরাই সব করলে অফিসের এতো এমপ্লয়িরা কি কাজ করে ?” সামির ঠোঁট বাকিয়ে বলে
” কাজের কি অভাব আছে নাকি ? সবাই সবার পোস্টের কাজ ভালোভাবেই করে। তাই বলে কি আমি ঘরে বসে থাকবো ? আর নতুন ডিলের ব্যাপার তো আমাকে বা বাবাকেই দেখতে হবে।” সোহা চেঁচিয়ে বলে উঠে
” চুপ চুপ চুপ ! তোমরা ঝগড়া করছো কেনো এতো ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে ? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি? অন্যকোনো একদিন সময় করে আসবো তারপর সবার সাথে ঘুরবো। এবার শান্তি, শান্তি প্লিজ!” সামির সিমির দিকে চোখ ছোট করে তাকাতেই সিমি ভেংচি কেটে শানের পাশে গিয়ে তার গ্লাসে জুস ঢেলে দিতে থাকে।
নিলা সবার উপর বিরক্ত হয়ে বলে
” সমস্যার সমাধান না করে শুধু ঝগড়াই করবে সবাই ! আমরা নাহয় রাতে ডিনারে চলে যাবো ! তাহলেই তো problem solve. রাতে তো কেউ ব্যস্ত থাকবে না কি বলো !” সবাই সম্মতি দেয়। শান চুপচাপ করে বসে থাকতে দেখে নিলা বললো
” শান ! তুমি যাবে তো ? দেখো একদম না করবে না। ফুল ফ্যামিলি যাচ্ছি তোমাকেও যেতে হবে।” শান চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায়। ইউনিফর্ম ঠিক করে যেতে যেতে বলে
” যা ইচ্ছে করো আমার কাজ আছে আমি যাচ্ছি।” মুসফিক চৌধুরী শানের কাজে প্রচণ্ড রেগে গেলো। একটা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেলো ! ফ্যামিলির আগে কি তার কাজই বড় ? এসব ভেবে মুসফিক চৌধুরী রেগে গেলো। ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই ইশান, সামির, মুসফিক চৌধুরী বেরিয়ে গেলো। সিমি রিয়ানা বেগমকে ফোন করে রুমে বসে কথা বলতে থাকে। অনেক দিন পর দুই মা মেয়ে কথা বলছে। নিলা নাইসা আর সোহার সাথে গার্ডেনে চলে গেলো। সোহার সাথে তো টমি আছেই। নাইসা টমিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর সোহা, নিলা কোথায় ঘুরতে যাবে সেসব প্লেন করতে থাকে। এরমাঝে তামিম এসে হাজির হলো দুজনের মাঝে। মুচকি হেসে বলে
” কি গল্প করছো তোমরা ?” নিলা কোমড়ে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললো
” আগে বলো তুমি আমাদের মাঝে কি করছো ? আমরা দুটো মেয়ে কথা বলছি দেখতে পাচ্ছো না তুমি ? হুট করে আমাদের মাঝে ঢুকলে কেনো ?”
তামিম থতমত খেয়ে যায় নিলার কথায়। আমতা আমতা করে বলে
” সরি ভাবি। আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি।” তামিম দ্রুত পায়ে চলে যেতে নিলেই নিলা শব্দ করে হেসে তাকে আটকে বলে
” আরে বোকা ছেলে মজা করছিলাম। তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছো ?” সোহা আর তামিমও হেসে দেয়। সোহা নিজেও বোকার মতো তাকিয়ে ছিলো নিলার কথা শুনে। তামিম মাথা চুলকে বলে
” আমি ভেবেছি তুমি রেগে আছো তাই ভাবলাম সত্যি। তো কি প্লেন করছিলে তোমরা ?”
সোহা হেসে বলে
” আমরা কোথাও যাওয়ার প্লেন করছি। ভাবছি কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।” তামিম চিন্তিত হয়ে বলে
” হঠাৎ ঘুরতে যাবে কেনো তোমরা ?” নিলা আর সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো। নিলা হাসতে হাসতে বলে
” ঘুরতে যাওয়ার জন্য কোনো কারণ লাগে নাকি বোকা ? যখন যার ইচ্ছা সবাই তখনই ঘুরতে যায়। তবে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার কারণ আছে। সোহারানি চলে যাবে তাই একটু ঘুরাঘুরি আর কি !” তামিম বিস্ময়ের সাথে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি চলে যাবে আপু?” সোহা তামিমের রিয়েকশন দেখে খিলখিল করে হেসে দেয় সাথে নিলাও যোগ দেয়। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” তুমি এমন রিয়েকশন দিচ্ছো কেনো ? আমি কি সারাজীবন এখানে থাকবো নাকি ?” তামিম মন খারাপ করে বলে
” তুমি চলে গেলে তো তোমার সাথে আর দেখাই হবে না।”
সোহা তামিমের কাধে হাত রেখে বলে
” সেদিনের কথা ভুলে গিয়েছো ? বললাম তো তুমি আমার কলেজেই ভর্তা হয়েছো। আমার বাড়ির কাছেই কলেজ। যখন তোমার ইচ্ছে হবে আমাকে বলবে আমি তোমার সঙ্গে দেখা করবো। তবে পারমিশন পেয়ে আবার প্রতিদিন আবদার করে বসো না !” তামিম হেসে মাথা নাড়ালো। নিলা গালে হাত রেখে বলে
” তামিম ! আরো কয়েকবছর আগে কেনো জন্মালে না তুমি ? তাহলে তোমার আর সোহার বিয়েটা দিয়ে দিতাম। তুমিও তোমার ক্রাশকে বউ করতে পারতে।” তামিম আফসোস এর সঙ্গে বলে
” হাহ ভাবি আর বলো না ! দিন রাত এই আফসোসে আমার ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। আজ ছোট বলে ! জাতি আমাকে মানবে না আপুর জন্য। কষ্টে আমার ইচ্ছে করে নিজেকে জেন্ত আপুর বাড়ির সামনে পুতে রাখি। তাহলে জাতির মানুষ গুলো দেখতে পারতো বয়সের তফাত করায় তাদের জন্য আজ কতো ছেলে প্রাণ দিচ্ছে।” তামিমের কথায় নিলা আর সোহা হাসতে ব্যস্ত হয়ে পরে। তিনজনের এতো হাসি দেখে নাইসাও টমিকে নিয়ে দৌঁড়ে চলে আসে। সোহা টমিকে দেখে হাসি থামিয়ে টমিকে দেখিয়ে তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আমার সবচেয়ে কাছের মানুষের সাথে তো তোমার দেখা হয়নি। দেখো ! এটা আমার টমি।”
তামিম নাইসাকে আদর করে টমিকে কোলে তুলে নেয়। টমির গায়ে হাত বুলিয়ে বলে
” তোমার টমি তো দেখি তোমার মতোই।” নাইসা তামিমের কথা না বুঝেই অবুঝ গলায় বললো
” আমার মতো না ?” তিনজন শব্দ করে হেসে দেয় নাইসায় কথায়। তামিম নাইসার গালে চুমু দিয়ে বলে
” হ্যা টমি তো একদম তোমার মতোই। মাশা-আল্লাহ কতো কিউট তাই না !” নাইসা খুশি হয়ে মাথা নেড়ে হ্যা বললো। নিলা, সোহা, তামিম ঘুরতে যাওয়ার জন্য জায়গা খুঁজতে থাকে কিছুক্ষণ পর সিমি এসে যোগ দেয়।
পরের একটা দিনও হাসি মজায় কেটে গিয়েছে। আজ সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। সবাই বলতে সোহা, সিমি, নিলা, নাইসা আর তামিম। তামিমকে সবাই এক প্রকার জোড় করেই নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা ফ্যামিলির একজনের মতো হয়ে গিয়েছে তাই সবাই তামিমকে নিয়ে যাচ্ছে।
চলবে……….