#আধারে_তুমি,০৪,০৫
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৪
কিছুক্ষণ পর হাতে গ্লাভস আর মুখে রুমাল দিয়ে বাধা অবস্থায় টমিকে কোলে নিয়ে চুপিসারে নিজের রুমে ঢুকে গেলো। টমিকে রুমে রেখে সোহার রুমে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শান।
সোহার এতো কান্না দেখে সবাই এবার হতাশা ভরা মন নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। শান সুযোগ বুঝে টমিকে নিজের রুমে থেকে এনে সোহার রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো। সোহা দরজা বন্ধের শব্দ শুনে দরজার দিকে তাকাতেই চমকে উঠে। সোহা কান্না বন্ধ করে দৌঁড়ে শানের কাছে গিয়ে টমিকে কেড়ে নিজের কোলে তুলে নিলো। সোহা টমিকে চুমু কে খেয়ে বলে
” কোথায় গিয়েছিলি টমি ? জানিস না তোকে ছাড়া থাকতে পারি না আমি! আমাকে না বলে কেনো চলে গিয়েছিলি তুই ?” শান বিরক্তিমাখা স্বরে বললো
” এই এবার তো করো, মেরি মা ! এই পাঁচ ছয় ইঞ্চি একটা কুকুরের জন্য আর কতো কাঁদবে বলো তো ! তোমার ফ্যাচফ্যাচানি কান্না শুনে শুনে আমার মাথা ব্যাথা করছে।”
সোহা চোখের পানি মুছে টমিকে নিয়ে বসে থাকে। কান্নার হিচকি এখনও কমেনি কিন্তু সোহার মুখে হাসি দেখে শানের মনে হলো অনেক দিন পর আকাশ থেকে কালো মেঘ সরে গিয়েছে। শান অপলক চাহনি দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সোহার মাথায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন আসতেই সোহা ভ্রু কুঁচকে তীরের মতো সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকালো। শানের চাহনি দেখলেও সেটা খেয়াল না করে টমিকে রেখে সোহা অগ্নিদৃষ্টিতে শানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সোহাকে হঠাৎ এতো কাছে দেখে শানের হুশ আসে। শান মনে করে এভাবে তাকিয়ে থাকায় সোহা বোধয় রেগে গিয়েছে তাই হচকচিয়ে বলে
” আমি আমার রুমে যাচ্ছি।” সোহা শানের পথ আটকে বলে
” দাঁড়ান কথা আছে আমার। আপনি টমিকে কোথায় পেয়েছেন ? আচ্ছা আপনিই ওকে লুকিয়ে রাখেননি তো ?” শান গম্ভীর গলায় বলে
” আমাকে কি নিজের মতো মনে করেছো ? ছোট একটা কারণে এই কুকুরকে আমি লুকিয়ে রাখতে যাবো ! তোমার মতো মানুষ দেখিনি আমি। কোথায় আমি ইমনকে দিয়ে এতো কষ্ট করিয়ে টমিকে খুঁজে বের করেছি আর তুমি আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে সন্দেহ করছো !” শানের ধমক শুনে সোহা ভয়ে কেঁপে উঠে। সোহা মুখটা ইনোসেন্ট বানিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে
” সরি ! আর ধন্যবাদ টমিকে খুঁজে বের করে আনার জন্য।” সোহার ইনোসেন্ট ফেস দেখে বড্ড হাসি পেলো কিন্তু শান একদমই হাসলো না। গম্ভীর গলায় উত্তরের বললো
” হুমমম।” শান দরজা খুলে চলে যেতে নিলে আবারও পেছন থেকে সোহা তাকে ডাকলো। শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হয়েছে ?” সোহা শানের দিকে ইশারা করে বলে
” আপনি এমন গ্লাভস, রুমাল এসব পড়ে সং সেজেছেন কেনো ?” শান রেগে চোখ বন্ধ করে নেয়। সোহা শানের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে। শান ঠাস করে চোখ খুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” আমার এলার্জি আছে কতোবার বলবো তোমাকে ? তোমার টমির পশমের থেকে বাঁচার জন্য এসব পরেছি। এবার যাবো আমি !”
সোহা দাঁত কেলিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেয় শানের কথায়। শান ধুপধাপ পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সোহা টমিকে নিয়ে নিচে চলে যায় সবাইকে বলতে।
শান গ্লাভস, মাস্ক সব খুলে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। ব্যালকনির ফুল গাছ গুলোর কাছে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। শান গিল্টি ফিল করে কিছুটা নিজের কাজের জন্য। শানই টমিকে লুকিয়ে রেখেছিলো গাড়ির ডিঁকিতে। শান ভেবেছিলো সোহা কিছুক্ষণ কান্না করে ঠিক হয়ে যাবে আর শান কালকে টমিকে সোহার বাড়িতে রেখে আসবে কিন্তু সোহার এতো কান্না দেখে শান আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। তাই টমিকে সোহার কাছে ফিরিয়ে দিলো।
দরজায় নক হতেই শান ভেতরে আসতে বলে। সালমা এসে শানের কফি দিয়ে চলে যেতে নিলে শান বললো
” শোনো সোহাকে বলে দেবে ওর কুকুর যেনো কোনোমতেই আমার রুমে না আসে।”
সালমা আমতা আমতা করে বলে
” ভাই আমি বললে কি আপু শুনবে ? উনি তো কারোর কথা শুনবে না।”
শান বিরক্তি চাহনি দিয়ে বলে
” কে বলেছে শুনবে না ? বলে দেখেছো কখনো ? যাও ! আর ওকে বলবে আমার সাথে যেনো দেখা করে যায় আমিই বলে দেবো সব।” সালমা মাথা নেড়ে চলে গেলো।
শান কফি খেতে খেতে গাছের ফুল গুলোকে ছুঁয়ে দিতে থাকে।
শান তার রুমের সোফায় বসে বসে থানার কিছু ফাইল দেখছিলো। তখন সোহা হুরমুর করে রুমে ঢুকে বলে উঠে
” আমাকে ডেকেছেন কেনো ?” শান চমকে চোখ বড় বড় করে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহা রুমে ঘুরতে ঘুরতে গান গাইতে থাকে
” লালালালা লালালা লা লা লালা।” শান ধমক দিয়ে বললো
” চুপ একদম ! এটা কেমন ভদ্রতা ? রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নিতে হয় জানো না ! আর রুমে ঢুকেই গান গাইছ কেনো ? এটা কি তোমার পারফর্মেন্স সো পেয়েছো ? নাকি তোমার রুম এটা ?”
সোহা নাক ফুলিয়ে রাগ দেখিয়ে বললো
” এই একদম আমাকে ভদ্রতা শেখাতে আসবেন না। আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো এই বাড়িতে। আর পারমিশন নেওয়ার কি আছে ! আপনি কি বিবাহিত নাকি ? বিবাহিত লোকরা বউ এর সাথে রোমেন্স টোমেন্স করে তাই পারমিশন নেওয়া দরকার। কিন্তু আপনি তো বিবাহিত না তাহলে আপনার পারমিশন নেওয়ার কি আছে ?”
শান সোহার কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়। নিজেকে সামলে সোহার কাছে দাঁড়িয়ে বলে
” বিবাহিত না হলেও আমি একটা ছেলে। ওকে ? নেক্সট টাইম পারমিশন না নিয়ে ঢুকলে হাত পা বেধে রেখে দেবো।” সোহা রেগে বলে
” গেস্ট এর সাথে কেউ এভাবে কথা বলে ? ছি! ছি! ছি! আমি আন্টি কে বলবো। এবার আসল কথায় আসুন। আমকে কেনো ডেকেছেন এখানে ?” শান গম্ভীর গলায় বলে
” তোমার টমি যেন আমার রুমে না আসে সেদিকে ভালো করে খেয়াল রাখবে। শুধু টমি কেনো তুমিও আসবে না এই রুমে। আমি পারমিশন ছাড়া আমার রুমে তোমরা কেউ আসবে। গড ইট ?”
সোহা এক ভ্রু উঁচু করে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বললো
” কেনো কেনো ? এই রুমে কি এমন জিনিস আছে যে এখানে আসা যাবে না ?”
শান চোখ রাঙিয়ে বলে
” যা বলেছি শুধু সেটুকুই শুনবে। আমার রুমে কিছু থাকুক আর না থাকুক সেটা একান্তই আমার পারসোনাল ম্যাটার। যাও এবার নিজের কাজে যাও।”
সোহা শানকে ভেংচি দিয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো। শান সোহার কাজ দেখে আলত হাসলো।
ডিনার টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসে। শাহানাজ বেগম আর নিলা, সোহা কি খাবে সেই নিয়েই ব্যস্ত। আর সবাই গল্প করছে আর খাচ্ছে। সোহা সবার সাথেই মজা করছে। শুধুমাত্র শান গম্ভীর হয়ে বসে আছে। মুসফিক চৌধুরী গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করে
” সোহা ? পড়াশোনা শেষ করে কি করতে চাও তুমি ?” সোহা দাঁত কেলিয়ে বলে
” কি আর করবো বলুন আংকেল ! মেয়েদের তো বিয়ের পিরিতে বসতে হয় তাই ভেবেছি যেকোনো সময় বিয়ে করে ফেলবো তারপর নিজে পড়বো আর বাচ্চা, হাজবেন্ড কেও পড়াবো।” সোহার কথা শুনে শান আর সিমি বাদে সবাই অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হেসে উঠে। সোহা নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। সিমি সোহার দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে
” বাবা তোকে তোর স্বপ্নের কথা জিজ্ঞেস করছে আর তুই মজা করছিস ?” সোহা সিমির দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো। সিমি এবার রেগে তাকায়। ইশান হেসে সিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আরে সিমি থাক। একটু আধটু মজা তো করবেই এটা ব্যাপার না।”
সোহা এবার সিরিয়াস হয়ে বলে
” আমি একটা NGO খুলতে চাই। ” সবাই অবাক হলো সোহার কথা শুনে। সোহা সবার চাহনি দেখে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” আমি মজা করছি না এবার। সত্যিই আমার ইচ্ছে একটা NGO খুলবো আমি। আর কোনো ইচ্ছে নেই।” সামির মাথা নেড়ে বলে
” বাহ অনেক ভালো একটা কাজ।” নিলা আলতো হেসে সোহার মাথায় হাত রেখে বলে
” তুমি সামলাতে পারবে এসব ?”
সোহা মুচকি হেসে উত্তরে বললো
” চাইলে তো সবই সম্ভব। আমি যখন চাই NGO খুলতে। তাহলে সেটা ভালোভাবে সামলানোর দায়িত্বও আমার হবে।” সোহার কথাটা শুনে সবার ভালো লাগলো। শান মনে মনে বলে
” বাদর হলেও কাজে কোনোদিক থেকে কম না।”
পরদিন সকাল হতেই সবাই যার যার কাজে চলে গেলো। শানও থানায় চলে গেলো। শান বেরিয়ে যেতেই সোহা চুপিচুপি শানের রুমে ঢুকে পড়ে। তাও আবার টমিকে নিয়ে। টমি তো তার ছোট ছোট চোখ দিয়ে পুরো রুমে চোখ দিয়েই চক্কর কেটে নিলো। সোহার আদেশ মেনে চলছে টমি। সোহা ঢোকার আগেই টমিকে সাবধান করে দিয়েছে চুপচাপ তার পেছন পেছন আসার জন্য। তাই তার জন্য আপাতত এটাই সবচেয়ে বড় কাজ। সোহা শানের ব্যালকনিটা আগে ঘুরে দেখলো তারপর একে এক রুমের আগা টু গোরা সব দেখলো। শান মানুষটা খুবই গোছালো এবং শান্ত, গম্ভীর একজন মানুষ।
সোহা দরজা আলতো ভাবে চাপিয়ে নেয় তারপর কিছু না ধরে গিয়ে সোজা আলমারি খুলে বসলো। আলমারি খোলাই ছিলো তাই সুবিধা হলো। সোহা একে একে সব জায়গা খুঁজে নিলো কিন্তু শানের পারসোনাল এর মতো তেমব কিছু খুঁজে পেলো না। তবে সব খুঁজে শেষে একটা লক করা ড্রয়ার খুঁজে পেলো। সোহা তার সব শক্তি দিয়ে টেনে টেনে খোলার চেষ্টা করে কিন্তু বিফলে গেলো। সোহা আবারও টানতে টানতে বিরবির করে বলে
” ড্রয়ারের বাচ্চা খোল বলছি ! এতো কষ্ট করছি আমি আর আমার জন্য একটু খুলতে পারবি না তুই ? কেমন বেইমানি এটা ! আরে কেমন লক দিয়েছে উনি ! বাড়িতে কোনো চোর আসলেও এটা খুলতে পারবে না। চোরের চুরি করা সফল হবে না। আরে এমন হলে আমার কৌতূহলও ক্লিয়ার হবে না কখনও।”
” চোরের আর আসার দরকার কি ? তুমি নিজেই তো চোর হয়ে এসেছো। বাদর চোর কে দেখলে আসল চোরও পালিয়ে যাবে।” সোহা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে যায়। সোহা ঢোক গিলে সামনে তাকাতেই শানকে দেখে তার হাত পা কাপাকাপি করতে থাকে।
চলবে……..
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৫
” চোরের আর আসার দরকার কি ? তুমি নিজেই তো চোর হয়ে এসেছো। বাদর চোর কে দেখলে আসল চোরও পালিয়ে যাবে।” সোহা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে যায়। সোহা ঢোক গিলে সামনে তাকাতেই শানকে দেখে তার হাত পা কাপাকাপি করতে থাকে।
বুকে দুই হাত গুঁজে কঠিন চাহনি দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সোহার তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সোহা হাতের উল্টো পিঠে কপাল থেকে ঘাম মুছে নিলো। জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বলে
” আআপনিইইই এএএএখানে ?”
শান এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” তুমি এই প্রশ্ন আমাকে করছো ? প্রশ্নটা কি আমার, তোমাকে করা উচিত নয় ?”
সোহা কাঁপতে কাঁপতে বললো
” আআমি ! আআআমি তো টটমিকে খুঁজতে এএসেছিলাম।”
শান এগিয়ে এসে আলমারিটা বন্ধ করে দিলো। আলমারির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে নিয়ে বললো
” আমার রুমে তুমি তোমার টমিকে খুঁজতে এসেছো ? তাও আবার কাপবোর্ডে ? টমিকে তেলাপোকা নাকি যে কাপবোর্ড লাগানো থাকার পরও ভেতরে ঢুকে যাবে ?”
সোহা শানের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। হাত কচলাতে কচলাতে ঢোক গিলে উত্তরে বললো
” নাহ খুঁজে দেখছিলাম ভুলক্রমে ঢুকে গিয়েছে কিনা।”
শান অবাক স্বরে বলে
” রিয়েলি ? আমি এতোদিন তোমাকে শুধু বাদর জানতাম আর এখন বাদর চোর মনে হচ্ছে। আমাকে তোমার এতোটা বোকা মনে হয় ? যা ইচ্ছে বলবে আর আমি মেনে নেবো বলে তোমার মনে হয় ? নিজের পায়ের কাছে টমিকে রেখে তুমি তাকে কাপবোর্ডে খুঁজছিলে ? হাউ ফানি ইয়ার !”
সোহা জিভ কেটে টমির দিকে তাকালো। সোহার তাকানো দেখে টমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করলো। সোহা টমির কথা উপেক্ষা করে চোখ উপরের দিকে উল্টে শানের দিকে তাকালো। শান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সোহা ধীরে ধীরে দুই পা পিছিয়ে গেলো। দৌঁড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিন্তু শান সেটা বুঝে গেলো। শান বড় বড় পা ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সোহার এবার মনে হলো শান তাকে মেরেই ফেলবে। সোহা ভয়ে ভয়ে বলে
” এটা কেমন অসভ্যতামি ? আমাকে বাইরে যেতে না দিয়েই দরজা বন্ধ করে ফেললেন কেনো ?”
শান এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে আসতে বলে
” এবার তোমাকে আমার কথা অবাধ্য হওয়ার শাস্তি দেবো। Special punishment for you darling.”
সোহা তব্দা খেয়ে গেলো শানের কথা শুনে।
সোহা অবাক হয়ে বলে
” ককিকিসের পানিশমেন্ট ?”
আচমকা শান সোহার বাহু ধরে টেনে দেয়ালে চেপে ধরে। সোহা চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে মনে হচ্ছে এখনি চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। শান এক হাত দেয়ালে রেখে অন্য হাত দিয়ে সোহার কপাল থেকে গালে স্লাইড করতে থাকে। শানের কাজের সোহা বরফের মতো জমে গেলো। শান নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে এলো। মুখে বাকা হাসি দিয়ে সোহার ভীতু চাহনিকে পর্যবেক্ষণ করছে। সোহা খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে শানকে এগোতে দেখেই। সোহা শানকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কথা বলতে গিয়ে দেখলো মুখ দিয়ে আ আ ছাড়া কোনো কথা বের হচ্ছে না তার। সোহা ঢোক গিলে নিজের গলায় হাত দেয়। কথা কেনো বের হচ্ছে না বুঝতে পারলো না সোহা। সোহার কাঁদো কাঁদো অবস্থা দেখে শানের বড্ড হাসি পেলো। শান এবার নিজেদের মধ্যে কয়েক ইঞ্চি দূরত্বটাও মিটিয়ে দিলো। সোহার মুখের উপর এবার শানের নিশ্বাস বারি খেতে থাকে। সোহার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে শানকে এতোটা কাছে দেখে। শান সোহার কানে ফিসফিস করে বললো
” আজকের জন্য তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তাই আজকে আর কোনো শাস্তি দিচ্ছি না। আজকের শাস্তিটা এখানেই শেষ করা হলো কিন্তু পরেরবার আর শাস্তি মাঝরাস্তায় বন্ধ করা হবে না। ফুল এন্ড ফাইন ভাবে শেষ করা হবে। মাইন্ড ইট। আমার কথা না শুনলে কি হয় পরের বার দেখবে।” শান তার কথা শেষ করে দূড়ে সরে আসে। সোহার কানে শানের কথা গুলো বাজতে থাকে। হুশ আসতেই কোনো কিছুর অপেক্ষা না করে দরজা খুলেই ভো দৌঁড় দিলো সোহা আর পেছনে টমিও দৌঁড়ে ছুটে গেলো।
শান নিশ্বাস ফেলে কাপবোর্ড লক করে তার ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
এদিকে সোহা রুমে ঢুকে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। শানের কাজে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছে সোহা। শান এমন কিছু করতে পারে তার ধারণার বাইরে ছিলো। সোহা বিরবির করে বলে
” এবার তো আমি পাক্কা সিউর আলমারিতে কিছু তো একটা আছেই। কিন্তু আমি আর কখনো যাবো না ওই লোকটার রুমে। আমি যেন আর উনার রুমে না যাই তাই আমার সাথে ইচ্ছে করে এমটা করলো। বজ্জাত লোক একটা !”
সোহা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর সালমা আর শাহানাজ বেগম এলো সোহার রুমে। সোহা ফোনে তার একমাত্র বেস্টফেন্ড ইতির সাথে কথা বলায় ছিলো ব্যস্ত ছিলো বিধায় তাদের লক্ষ করলো না। সোহা কথা বলতে বলতে ব্যালকনিতে চলে গেলো। শাহানাজ বেগম বেডে বসে রুমটা পর্যবেক্ষণ করলো। শাহানাজ বেগম নিঃশব্দে গা দুলিয়ে হাসলো রুম দেখে। মেয়েটা বড্ড অগোছালো। একদিনেই রুমের নকশা বদলে দিয়েছে। কথা বলতে বলতেই সোহা ব্যালকনি থেকে রুমে আসার পথে শাহানাজ বেগমকে দেখে থেমে গেলো। ইতিকে বলে ফোন কেটে দিলো। শাহানাজ বেগম সোহাকে দেখে মুচকি হেসে বলে
” কথা বলা শেষ ?” সোহা শাহানাজ বেগমের কাছে এসে বলে
” হ্যা। আপনি এসেছেন আমাকে ডাকবেন তো আন্টি !” শাহানাজ বেগম আলতো হেসে বললো
” নাহ আমি তো এমনি এসেছি। আচ্ছা বলো এই বাড়িতে কেমন লাগছে তোমার ?”
সোহা হেসে বলে
” আমার তো ভালোই লাগছে। তবে নাইসাকে দেখলাম না আজ।” সালমা তড়িঘড়ি করে বলে
” নাইসা তো পাশের বাড়ির ছেলেটার ধারে খেলতে গেছে ঘুম থেকে উঠেই। ছোটভাবি গেলো নাইসাকে আনতে গেছে। আর বড় ভাবি রান্না করতাছে। আপনার কিছু লাগলে আমারে বলবেন আপামনি। আমি সব করে দিমু।” সোহা খিলখিল করে হাসলো সালমার দ্রুত কথা বলা দেখে। শাহানাজ বেগম বলে
” সোহা রুমেই তো বসে আছো তাই তোমাকে ডাকতে এলাম। সালমা ছাদে যাচ্ছে কাপড় আর আচার নিয়ে আসতে। তুমি তো ছাদে যাওনি তাই গিয়ে ছাঁদে ঘুরে আসতে পারো তোমার ইচ্ছে হলে। বা অন্যসময় তোমার যখন ইচ্ছে যেতে পারো।” সোহা হেসে বলে
” না আন্টি আমি এখনই যাচ্ছি ছাদটা চিনে আসি। পরে যাওয়া যাবে।” শাহানাজ বেগম মাথা নেড়ে সায় দিলো।
সোহা সালমার পেছন পেছন ছাদে পৌছে গেলো।
ছাদে এসেই সোহা মুখ হা করে ফেললো। এটা ছাদ নামে কলঙ্ক বলদ মনে হলো সোহার। সোহা অবাক হয়ে বলে
” সালমা আপু ! এতোবড় আর সুন্দর একটা জায়গায় একটা গাছের অস্তিত্ব নেই ! এটা কি মানা যায় ?”
সালমা ছাঁদের অন্যপাশ থেকে কাপড় তুলতে তুলতে জোড়াল গলায় বললো
” আরে আপামনি এই ছাদেই আগে গাছের অভাব ছিলো না। প্রচুর গাছ ছিলো কিন্তু কয়েক মাস আগেই ছাদে এই গাছ ঝোপঝাড়ে একটা সাপ বেরিয়ে এসেছিলো তাই বড় বাবা সব পরিষ্কার করে ফেলেছে একদিনেই। ছোট ভাইয়ের গাছের শখ তিনিই এসবের যত্ন নিতেন সময় করে। ছাদ পরিষ্কার করার পর নিজের রুমের ছোট ছোট কয়েকটা ফুলের টব নিয়ে রেখেছেন।”
সোহা আচারের বয়াম গুলো এক তুলতে থাকে। অনেক গুলো আচারের বয়াম। এদিকে আকাশও কালো হয়ে আসছে। সালমা কাপড় গুলো নিচে রেখে এসে আচারের বয়াম গুলোও একে একে নিয়ে গেলো সোহার সাহায্যে। সালমা ঝাড়ু এনে ওড়নাটা কোমড়ে বাধতে বাধতে সোহাকে বলে
” আপা আপনি ঘরে যান। আমি ছাদটা পরিষ্কার করে আসতাছি।”
সোহা ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে পর্যবেক্ষণ করে বলে
” একটু পর বৃষ্টি হবে আর তুমি এখন ছাদ পরিষ্কার করবে ? কালকে করো আজকে করা লাগবে না।”
সালমা ইতিমধ্যে ঝাড়ু দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। ব্যস্ততার সঙ্গে বলে
” না আপা আকাশের অবস্থা তো কয়েকদিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে। দিবো দিবো করে আর পরিষ্কার করা হয়নি ছাদটা। আজকে করেই যাবো।”
সোহা ছাদের ছোট রুমটায় এরেকটা ঝাড়ু দেখতে পেয়ে সেটা এনে নিজেও ঝাড়ু দেবে বলে। সালমা মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করতে করতে বলে
” আরে আপা কি করেন ? খালাম্মা দেখলে আমারে ঝাড়ু দিয়ে পিটাইবো। আপনি ঘরে যান আমি করতাছি।” সোহা আগ্রহ নিয়ে বলে
” আরেহ না আমি একটু করি। আমার ছাদ পরিষ্কার করতে খুবই ভালো লাগে।” সালমা কয়েকবার বাধা দিলেও সোহা তার জেদ ছাড়লো না। সোহাও ছাদ পরিষ্কার করতে থাকে। সালমা হার মেনে নিজেও কাজে গেলে পরলো।
কিছুক্ষণ পর দুজনের কাজ শেষ হতেই সোহা ঝাড়ু ফেলে হাফ ছেড়ে বলে
” দেখোতো আমার কাজ হয়েছে কিনা !” সালমা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো সব জায়গা কিন্তু সোহা খুবই ভালো করে পরিষ্কার করেছে। সালমা বাহবা দিয়ে বলে
” আমি তো ভাবছিলাম আপনি পারবেন না কিন্তু অনেক সুন্দর করে করছেন।”
সোহা মিটমিট হেসে বলে
” আমাকে কি এতোটা অকর্মা মনে করো ? আমি তো সবই পারি তবে করি না। আচ্ছা আমি গিয়ে শাওয়ার নিয়ে আসি গায়ে ময়লা লেগেছে।”
সালমা মাথা নেড়ে সায় দিলো। সোহা রুমে এসে সাথে সাথে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। ধুলো বালিতে বেশিক্ষণ থাকলে সোহার এলার্জি হয় তাই বেশি দেড়ি করলো না। কিছুক্ষণ পর ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু তখনই বৃষ্টি শুরু হয়েছে একটু একটু করে। সোহা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। বৃষ্টির ধুম বাড়তেই সোহার কিছু না ভেবে হাতের টাওয়াল বেডে ছুরে ফেলে দিয়ে দৌড়ে ছাদে ছুটে গেলো। ছাদে গিয়ে সোহা বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। একটু আগেই শাওয়ার নিয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। নিজের হুশ হারিয়ে বৃষ্টিতে মেতে উঠেছে।
.
.
চলবে……….