#আধারে_তুমি,০৬,০৭
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৬
একটু আগেই শাওয়ার নিয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। নিজের হুশ হারিয়ে বৃষ্টিতে মেতে উঠেছে। অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলো। ভিজতে ভিজতে ছাদে বসে পড়লো ক্লান্ত হয়ে। বৃষ্টির বেগে তাকিয়ে থাকাও খুব কঠিন হচ্ছে। পিটপিট করে আশেপাশে তাকাতেই পাশের ছাদে চোখ পড়লো সোহার। ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে হা করে একটা ছেলে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। সোহা ভ্রুকুটি কুঁচকে তাকিয়ে মুখটাকে লটকিয়ে ফেলে। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে এবার নিজেও উঠে ছাদের কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। সেই ছাদ থেকে শানদের ছাদ প্রায় তিন, চার হাতের দূরত্ব রয়েছে। সোহা রেলিং এ হাত রেখে কিছুটা এগিয়ে জোড় গলায় বলে উঠে
” এই ছেলে এখানে হ্যাবলার মতো হা করে তাকিয়ে আছো কেনো হ্যা ?” সোহার কথা শুনে ছেলেটা ভদ্র ছেলের মতো দাঁড়িয়ে মাথা চুকলে লাজুক হাসি দিয়ে বললো
” আপু আপনি দেখতে খুবই সুন্দর। আমার আপনাকে অনেক ভালো লেগেছে।” সোহা অবাক হয়ে গেলো ছেলের কথা শুনে। ছেলেটা দেখতে লম্বা, সুন্দর আর একদম পারফেক্ট বডি তবে তাকে আপু ডাকছে কেনো বুঝতে পারলো না।
সোহা ভ্রু হাতের ইশারায় ছেলেটাকে ছাদের আরো কাছে আসতে বলে। ছেলেটাও ইশারা মতো ছাস ঘেঁষে দাঁড়ালো। সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমাকে যখন ভালোই লেগেছে তখন আপু ডাকছো কেনো আমাকে ?”
ছেলেটা মুখটা কালো বানিয়ে ফেললো। মাথা নিচু করে বললো
” আসলে আপু আমি মাত্র এসএসসি এক্সাম দিয়েছি। আর আপনি তো কলেজে পড়েন। আমার থেকে বড় আপনি তাই আপু বলেছি। নাহলে তো আপনাকে আরো আগেই প্রপোজ করে ফেলতাম।”
সোহা খিলখিল করে হেসে দিলো। ছেলেটা অনেকটা লজ্জা অনুভব করলো নিজের বোকামির জন্য। জেছে এসে বলার কি দরকার ছিলো যে পছন্দ করে !
সোহা অনেক কষ্টে নিজের হাসি কন্ট্রোল করলো। মুখে চাপা হাসি রেখে বলে
” তোমার নাম কি বলো তো ? আর আমি কলেজে পড়ি তুমি কি করে জানো ?” ছেলেটা উৎসাহিত হয়ে বলে
” আমার নাম তামিম। আমি আপনাকে সামির ভাইয়ার বিয়েতে দেখেছিলাম। তখন শান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার কথা তিনিই বলেছেন আপনি কলেজে পড়েন আর…”
তামিমের আধকথা শুনে সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” আর ! আর কি ? থেমে গেলে কেনো ?”
তামিম আমতা আমতা করে বলে
” মানে ভাইয়া বলেছিলো আপনি নাকি বাদর। যেকোনো সময় খামঁছি দিয়ে বসেন তাই আপনার থেকে দূরে থাকতে।” সোহা হা করে তাকিয়ে থাকে কথা শুনে। শান তাকে এতোবড় কথা বলেছে ? কথাটা শুনে সোহার মাথা গরম হয়ে গেলো। রেগে বলে
” আমি বাদর ? উনি নিজেই তো একটা লম্বু, খাটাশ, খচ্চর, বজ্জাত লোক একটা। আমার সাথে পুলিশ গিরি দেখাতে আসে। চিড়িয়াখানায় যখ বাঘের সাথে রাত্রি যাপন করতে রেখে আসবো। তখন দেখা যাবে সাহস কতো উনার।” তামিম হা হা করে হেসে উঠে। সোহার খেয়াল আসে আরেক বাচ্চার সামনে সে শানকে বকছে। সোহা তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” এই এসব কিন্তু একদম উনাকে বলবে না। লোকটা তো খুবই খারাপ। আচ্ছা তুমি বৃষ্টিতে এখানে কি করছো সেটা বলো !”
তামিম আবারও লাজুক একটা হাসি দিয়ে বললো
” আসলে আপু আমি আপনাকে দেখেই এসেছি।”
সোহা গলা ঝেড়ে বলে
” শোনো তামিম ! আমি তোমার বড় আপু তাই সেই দৃষ্টিতেই দেখবে আমাকে। আর পড়াশোনায় মন দাও। আমি আমার মতো কিউট মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো তোমাকে।”
তামিম এবার হাসতে থাকে। সোহা কড়া গলায় বলে
” হাসছো কেনো তুমি ?” তামিম সঙ্গে সঙ্গেই হাসি থামিয়ে ফেললো। সোহা আবারও ইশারায় একি কথা জিজ্ঞেস করতেই তামিম মিটমিট করে হেসে বলে
” আপনাকে তো আমি আপুর চোখে দেখতে পারবো না। আপনি তো আমাকে ক্রাশ। সম্মান করে আপু ডেকেছি। তবে চিন্তা করবেন না আমি অন্যদৃষ্টিতে দেখি না আপনাকে। আপনি আমার অনেক সিনিয়র। জুনিয়র হলে কিছু হলেও হতে পারতো।” তামিমের কথা শুনে সোহা আবারও হেসে দিলো। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” যাই বলো তোমার কথা গুলো আমার খুবই ভালো লাগছে। ঠিকাছে আজকে বাসায় যাও। বেশি বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর এসে পরবে। পরে তোমার এই ক্রাশ আপু আবার তোমাকে নিয়ে চিন্তায় পরে যাবে।” তামিম লাজুক হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে দৌঁড়ে চলে গেলো। সোহাও কাঁপতে কাঁপতে নিচে আসলো। সোহার জন্য বরাদ্দকৃত গেস্ট রুমে ঢোকার আগেই সিমি এসে সোহাকে ভেজা অবস্থায় দেখে ফেললো। সিমি।অবাক হয়ে হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠে
” তুই বৃষ্টিতে ভিজে এসেছিস ?” সোহা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সিমি এখনই তার বারোটা বাজাবে। সিমি দ্রুত পায়ে সোহার কাছে এগিয়ে আসে। সোহাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো খাটের উপর থেকে টাওয়াল দেখেই হাতে তুলে নেয়। টাওয়াল ভেজা দেখে সিমি সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” তুই শাওয়ার নিয়ে তারপর বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছিলি ?” সোহা তার জিভ কাটলো। তার একদমই মনে ছিলো না সে শাওয়ার নিয়েছিলো। তবে সিমির থেকে বাঁচার জন্য জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বললো
” না, না আমি তো শাওয়ার নেইনি।” সিমি রেগে বলে
” তো টাওয়াল কি নিজেই ওয়াসরুম থেকে গা ভিজিয়ে এসে এখানে শুয়ে পরেছে ?” সোহা কথা ঘোরানোর জন্য খিলখিল করে হেসে বলে উঠে
” কি যে বলো আপু ? টাওয়াল কি একা একা ভিজতে পারে ? আর ওরা কি শুয়ে থাকতে পারে নাকি ? আমি তো ফ্রেশ হয়ে ছিলাম তাই টাওয়াল ভেজা।”
সিমি সোহার চুল মুছিয়ে দিতে দিতে বলে
” তোর কাছে কিছু থাকলে সেটা জড় বস্তু হলেও শুয়ে থাকা, নাচ, গান সব শিখে যাবে। তোর জিনিস তো তোর মতোই হবে।” সোহা মুখ বাকালো সিমির নীতিবাক্য শুনে। সিমি কাপড় বের করে সোহাকে টেনে ওয়াসরুমে ঢুকালো।
দুপুর হয়ে এসেছে কিন্তু এখনও বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। রান্না শেষ হতেই বাড়ির ছেলেদের জন্য টিফিন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ড্রাইভার কে দিয়ে। এদিকে শাহানাজ বেগমের দেওয়া আচারের বয়াম কোলে নিয়ে সোহা সোফায় বসে বসে আচার খাচ্ছে। সাথে নাইসাও রয়েছে। নাইসা একটু একটু করে আচার খেয়ে শেষ করে বার বার বলছে
” আর একটু দাও মিষ্টিপাখি।” সোহাও নাইসার মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে বার বার আচার দিচ্ছে। দুজন সোহায় হেলান দিয়ে বসে বসে টিভি দেখছে আর সোহার পাশে টমি লেপ্টে শুয়ে আছে আরামে। শাওয়ার থেকে বের হয়েউ সোহা শীতের জন্য চাদর বের করে পরে নিয়েছে। বাড়ি থেকে দূড়ে কোথাও গেলে চাদর আর টমি দুটো জিনিস সোহা কাছে থাকবেই।
নিলা রুম থেকে বের হয় নাইসাকে খোঁজার উদ্দেশ্যে। সোহা আর নাইসাকে একসাথে দেখে নিলা এগিয়ে আসে তাদের কাছে। দুজনকে চেটেপুটে আচার খেতে দেখে নিলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে
” তোমরা এখনও আচার খাচ্ছো ? নাইসা ! তোমাকে না তোমার বাবা বেশি আচার খেতে না করেছে !” নাইসা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো নাইসার কিউট ফেস দেখে। নিলা কড়া গলায় বলে উঠে
” তুমি হাসছো কেনো ? সিমি আমাকে বলেছে তোমার আচার, ফুচকা এসব খেলে মাঝে মাঝেই তলপেটে মারাত্মক ব্যাথা হয় আর তুমিও কেয়ারলেস এর মতো আচার খেয়ে যাচ্ছো ? এতোবেশি খেলে দেখবে পেটে ব্যাথা করছে। পরে খাবে আবার এখন একদমই না।” নিলা আচারের বয়াম নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলো। সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” আরে আমি তো কালকেও আসার সময় কত্তো ফুচকা খেয়েছি আমার কিছুই হয়নি।”
নিলা এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” শানের সাথে খেয়েছো নিশ্চই !” সোহা মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো। নিলা মাথা নেড়ে বলে
” আগেই বুঝেছি। শান নিজেই মেয়েদের মতো ফুচকা পাগল তাই খেতে দিয়েছে। কিন্তু কালকে কিছু হয়নি বলে আজকে হবে এটার কি সম্ভবনা আছে বলো তো ?” সোহা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে
” বুঝেছি বুঝেছি তোমরা সব আপুরই দলের মানুষজন।” নিলা শব্দ করে হাসলো। নিলাও সোহা আর নাইসার সাথে টিভি দেখায় যোগ দিলো।
কিছুক্ষণ সময় কাটতেই হঠাৎ শাহানাজ বেগমের রুম থেকে কান্না আওয়াজ ভেসে আসে। সোহা আর নিলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছুটে গেলো সেই রুমে। উপর থেকে সিমিও দৌঁড়ে নেমে এলো। শাহানাজ বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বললো
” মায়ের অবস্থা অনেক খারাপ। আমাদের এখনই যেতে হবে। নিলা তোমার বাবাকে জানাও।” নিলা মুসফিক চৌধুরী, ইশান আর শানকে জানিয়ে দিলো। সামির মুসফিক চৌধুরীর সাথেই রয়েছে তাই আর তাকে আলাদা করে জানালো না। গাড়ি বের করতে করতে সবাই শাহানাজ বেগমের বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো। সোহাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু অনেক জোড় করার পরও সোহা থেকে গেলো। সোহার শরীর খারাপ লাগছিলো তাই সেই বাহানায় থেকে গেলো। নিলা আর সিমি সালমা ভালো করে বুঝিয়ে গেলো আর সোহাকে দেখে রাখতে বলে সবাই প্রবল বৃষ্টির মাঝেই তাড়াহুড়োয় বেরিয়ে গেলো।
সন্ধ্যা শেষ হয়ে এসেছে। বাড়ির কলিং বেলের শব্দে সালমা ছুটে আসে। দরজা খুলতেই শানকে চোখে পড়লো। সালমা তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করে
” ভাই নানির কি অবস্থা ? এখন কেমন আছে ? খারাপ কিছু হয়ছে ? আচ্ছা খালাম্মারা কোথায়?”
শান বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে শান্ত গলায় বলে
” আরে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস কর সব। নানির অবস্থা বেশি ভালো না তাই আজ কেউ আসবে না। মা বলেছে একটু সুস্থ হলে আসবে।”
শান সোফায় বসতেই সোহার দিকে চোখ পড়লো। টিভি চালু কিন্তু সোহা সোফায় ঘুমিয়ে রয়েছে। শান সালমাকে বলে
” কিরে সোহা এখানে কি করছে ? রুমে না ঘুমিয়ে এখানে ঘুমাচ্ছে কেনো ? তাও আবার টিভি ছেড়ে রেখে।”
সালমা সোহাকে দেখে বলে
” আপার নাকি শরীর খারাপ লাগতাছিলো তাই যায় নায় খালাম্মাদের সাথে। টিভি দেখতে দেখতে ঘুমাইছে মনে হয়। আমি ডাকতাছি।”
সালমা হাক ছেড়ে ডাকতে নিলেই শান বাধা দিলো তাকে। শান বললো
” তুই যা আমি ডাকছি।” সালমা মাথা নেড়ে চলে গেলো। শান ধীরে ধীরে দুইবার ডাকলো সোহাকে। দ্বিতীয়বার একটু নড়ে কিছু বিরবির করে আবার ঘুমিয়ে গেলো।
” সোহা !”
শান এবার গলা ঝেড়ে ডেকে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে সোহা লাফিয়ে উঠে বসে। সোহা শানের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে মাথা চেপে ধরে বসে থাকে। শান চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে ? মাথা ব্যাথা করছে ?” সোহা আলতো স্বরে
” হুমমম” বললো। শান বলে
” সরি। ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলাম আমি। তুমি বসো সালমাকে বলছি কফি করে দিতে।”
সোহার মতে সোহার একটা বাজে স্বভাব রয়েছে। সেটা হলো সোহা অন্যকারোর বানানো কফি খেতে পারেনা একদমই। সোহা মাথা ধরে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুম ঘুম গলায় বলে
” নাহ আমিই করতে পারবো। আমি অন্যকারোর বানানো কফি খেতে পারি না।” সোহা ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে চলে গেলো। শান গিয়ে রান্নাঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। সোহা শানকে খেয়ালই করেনি।
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৭
সোহা ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে চলে গেলো। শান গিয়ে রান্নাঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। সোহা শানকে খেয়ালই করেনি। কফি বানানো শেষ করে সোহা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই শান তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সোহা চমকে বলে
” কি চাই ?” শান কফির দিকে তাকিয়ে বলে
” আমিও একটা মানুষ। নিজে একা একা না খেয়ে আমাকেও তো একটু দিতে পারো ?”
সোহা মুখ বাকিয়ে বলে
” এহ ! শখ কত আপনার ! আমাকে সারাদিব বাদর বলে বেড়ান আবার আমি আপনাকে কফি বানিয়ে দেবো ? হুশ নিজেই বানিয়ে খেয়ে নিন।” শান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো কিন্তু সোহা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে উপরে চলে গেলো। শান রুমে গিয়ে ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে ওই বাড়িতে ফোন দিয়ে কি অবস্থা জেনে নিলো। অনেক্ষণ ফোনের মাঝে ডুবে থাকে।
সালমা ডিনারের জন্য ডাকতেই শান ডিনার টেবিলে গিয়ে বসে। সোহাকে না দেখে সালমাকে জিজ্ঞেস করলো
” কিরে সোহা কোথায় ? ডেকে নিয়ে আয়। সোহার ভালো করে খেয়াল রাখ মা জানলে কিন্তু রাগারাগি করবে।” সালমা মাথা নাড়ালো। শানকে খাবার দিয়ে উপরে চলে গেলো। শান খাবার নিয়ে বসে থাকে। শানের একা খাওয়ার অভ্যাস নেই। থানায় ইমন এর সাথে খায় আর বাড়িতে সবাই একসাথে বসে খায়। তাই সোহার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পায়ের শব্দ শুনেই মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সালমা একাই এসেছে। শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কিরে সোহা কোথায় ?” সালমা চিন্তিত হয়ে বলে
” আপামনিরে কেমন জানি লাগছে। খাবারের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলছে মাথা ব্যাথা করে এখন খাইবো না কিছু পরে ঘুমাইয়া গেছে। গলাও কেমন শুনা গেছে।” শান চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে ?” সালমা মাথা নেড়ে বুঝালো জানে না সে। সালমা শানকে খাবার খেয়ে নিতে বললো। শান কিছুটা খেয়ে আর খেতে পারলো না। একা একা একদমই খেতে পারে না। সালমাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তোর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আমাকে কফি দিয়ে যাবি আর সব লাইট অফ করে ঘুমিয়ে যাবি। আমি দরজা লাগিয়ে যাচ্ছি।”
সালমা মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো। শান তার সব কাজ শেষ করে রুমে চলে গেলো।
এখনও ঝিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। আজ পুরোটো দিনই বৃষ্টি হয়েছে। কিছুক্ষণের জন্যেও থামেনি। অবশ্য বৃষ্টির দিনটা খুবই মুগ্ধকর থাকে। সালমা কফি দিয়ে গেলো। শান আলমারি খুলে সেই লক করা ড্রয়ার খুলে একটা সুন্দর ডায়রী বের করলো। সেটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে কফি খেতে থাকে। ডায়রী খুলতেই একটা শুখনো গোলাপ ফুলের দেখা দিলো আর সাথে কিছু লিখিত অনুভূতি। যেগুলো আজও লুকোনো ভালোবাসার এক অনুভূতি শুধু। গোলাপ ফুলটা আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো শান। পরের কিছু পেজ উল্টাতেই কয়েকটা শুখনো বেলি ফুলের দেখা পেলো। ডায়রীটাতে কিছু ফুলের সাথে কারোর প্রতি লিখিত অনুভূতি মিশ্রিত ভালোবাসা লুকিয়ে রয়েছে। সেই ব্যাক্তিটা হলো সোহা। শান পুরো ডায়রীটা একবার দেখে মুচকি হেসে ডায়রীটা বন্ধ করে নিলো। চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস নিলো। ডায়রী দেখতে দেখতে কফিও শেষ হয়ে এসেছে। শান উঠে তার ডায়রীকে নিজের স্থানে রেখে দিলো। কফির শেষ চুমুক দিয়ে কফির মগ রেখে আসার জন্য বের হতেই কাচ ভাঙার শব্দ কানে বাজলো। শান পা চলা থামিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। শব্দটা কোথা থেকে এসেছে বুঝতে পেরে সোহার রুমে ছুটে গেলো। রুমের দরজায় আলতো ধাক্কা দিতেই দরজা পুরোপুরি খুলে গেলো। রুমে ঢুকতেই পায়ের সামনে ভাঙা কাচের গ্লাসটা দেখলো। শান সাবধানে জায়গাটা পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো। সোহার দিকে তাকাতেই দেখলো সোহা হাটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। শান আলতো স্বরে বললো
” সোহা গ্লাস ভেঙেছে কিভাবে ?”
সোহা শানের গলা শুনেই মাথা তুলে তাকালো। সোহার চোখ জোড়া লাল হয়ে রয়েছে। সোহা কাঁপাকাঁপা গলায় বললো
” পানি খাওয়ার জন্য নিচ্ছিলাম পড়ে গিয়েছে।”
সোহার কন্ঠস্বরও অস্বাভাবিক মনে হলো শানের কাছে। শান এগিয়ে এসে সোহার মাথায় হাত রাখলো। ঠান্ডায় সোহার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। শান বিস্ময়ের স্বরে বলে
” এতো জ্বর আসলো কি করে ?” সোহা ঠোঁট উল্টে বলে
” ওই একটু বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তাই।” শান রাগান্বিত চাহনি দিয়ে ধমকের স্বরে বললো
” একটু ভিজলে এমন অবস্থা হতো ? জ্বরে বসে থাকতে পারছো না এখনই পরে যাবে মনে হচ্ছে আর বলছো একটু ভিজেছো ?”
শানের কথা শেষ হতে হতেই সোহার মাথা ঘুরে যায়। পরে যেতে নিলেই শান কোনো রকমে ধরে নিলো সোহাকে। শান অস্থির গলায় বলে
” দেখলে তো কি হলো ! না ধরলে এখনই মাথা ফাটতো।” শান ধমকে সোহাকে শুয়ে ব্ল্যাংকেট দিয়ে দিলো গায়ে। সোহা দুর্বল চাহনি দিয়ে বলে
” পানি খাবো আমি।” শান মাথা নেড়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে চলে গেলো। কফির মগ রেখে সোহার জন্য পানি আর খাবার নিয়ে নিলো সাথে মেডিসিনও। রুমে আসতেই দেখতে পেলো সোহা ঘুমিয়ে গিয়েছে। শান ভাঙা কাচগুলো সরিয়ে রাখলো সাইডে। সোহাকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু সোহা উঠলো না। শান সোহার মুখে দুইবার পানি ছিটিয়ে দেয়। সোহা কাঁদোকাঁদো চাহনি দিয়ে শানের দিকে তাকালো। শান শান্ত ভাবে বলে
” উঠো পানি খাবে।” সোহা ভালো করে উঠে বসতে পারছে না দেখে শান ভালো করে বসিয়ে দিলো সোহাকে। পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়তে নিলে শান বাধা দিয়ে বলে
” খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে ঘুমাবে।”
সোহা মাথা নেড়ে না করলো কিন্তু শান সোহাকে জোড় করে নিজেই খাইয়ে দিতে থাকে। সোহা জ্বরে আধঘুমন্ত অবস্থায় খেতে থাকে। খাওয়া শেষে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। সোহা পুরোই নেতিয়ে পরে। শান সব রেখে সালমাকে গিয়ে ডেকে তুললো। সালমা দরজা খুলে ঢুলতে ঢুলতে বলে
” কি হয়ছে ভাই ?” শান চিন্তিত হয়ে বলে
” সোহার জ্বর উঠেছে। আজকের রাতটা সোহার কাছে থাক। ওর কিছু দরকার হতে পারে।” সালমা মাথা নেড়ে বিনাবাক্যে সোহার কাছে চলে গেলো।
শান তার রুমে গিয়ে বসে থাকে। সোহার চিন্তায় আর ঘুমালো না।
মাঝরাতে সালমার ডাক পড়লো সোহার আগের থেকেও জ্বর মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়েছে। শান ছুটে এসে দেখে সোহা জ্বরে অতিরিক্ত কাঁপছে। আর সোহার গায়ের তাপে ছোঁয়াও যাচ্ছে না। শান সালমাকে দিয়ে পানি এনে সোহাকে জল পট্টি দিতে থাকে আর আরেকটা ব্ল্যাংকেট বের করে সোহার গায়ে দিয়ে দিলো। সোহা জ্বরের ঘরে বিরবির করে যাচ্ছে আর শান অস্থির হয়ে উঠেছে। জ্বর একদমই কমছে না সোহার। ভোর হয়ে আসতেই সোহার জ্বর ধীরেধীরে কমতে থাকে। শানের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
সকালে সালমার ঘুম ভাঙতেই দেখতে পায় শান সোফায় আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে আছে আর সোহা এখনও ঘুমে কাতর। সালমা ঘরির দিকে একপলক তাকিয়ে নিচে চলে গেলো। অনেক কাজ রয়েছে তার আজ আবার শাহানাজ বেগম, নিলা, সিমি কেউ নেই।
গভীর ঘুমের মাঝেই শান হঠাৎ করে চোখ খুলে ফেললো। মাথা ঝেড়ে সোহার কাছে এগিয়ে আসে। সোহার মুখটা দেখে শানের মায়া লাগলো। একদিনেই জ্বরে চোখ মুখ নেতিয়ে পড়েছে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।
ব্রেকফাস্ট করে শান সালমাকে বলে
” সোহার খেয়াল রাখিস আর ভাবি, মা কেউ আজকে আসবে না। আমার কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
” আচ্ছা ভাই চিন্তা করবেন না। আমি আপামনির ভালো করেই খেয়াল রাখমু।” শান থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
সোহা একদম ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। সালমা সোহাকে দেখেই বলে
” আপা আপনার শরীর কেমন এখন ? জ্বর কমছে ? কিছু খাবেন আপা ?”
সোহা মলিন হাসি দিয়ে বলে
” না কিছু খাবো না আমি। শরীরও এখন ভালো কিছুটা।”
সালমা তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে যেতে যেতে বলে
” আপনে বসেন আমি আপনার খাবার দেই পড়ে ঔষধ খাইতে হবে।” সোহা হেসে বলে
” আচ্ছা আমি গার্ডেন থেকে ঘুরে আসছি। তুমি ধীরেধীরে কাজ করো।”
সোহা হাটতে হাটতে গার্ডেনে চলে গেলো। গার্ডেনে হাটতে হাটতে গেটের বাইরে তামিম কে দেখতে পেলো সোহা। সোহা এগিয়ে গিয়ে তামিম কে ডাকলো। সোহাকে দেখেই তামিমের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তামিম হাসিমুখে এগিয়ে আসলো।
.
.
চলবে……….