আধারে_তুমি,০৮,০৯

0
333

#আধারে_তুমি,০৮,০৯
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৮

সোহাকে দেখেই তামিমের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তামিম হাসিমুখে এগিয়ে আসলো। তামিম সোহার কাছে এসে মুচকি হেসে বলে
” কেমন আছো আপু ?” সোহা বাকা হেসে বলে
” বাহ কালকে আপনি ডাকলে আর আজকেই তুমি !” তামিম হেসে বলে
” ক্রাশকে আপনি ডাকতে কেমন লাগে তাই ভাবলাম তুমিই ডাকবো। তবে আপনি চাইলে তুমি বলবো না।” সোহা শব্দ করে হেসে বলে
” আরে না না ঠিকাছে। যা ইচ্ছে বলতে পারো। তো বলো কেমন আছো ?”
তামিম ঘারে হাত রেখে বলে
” আমি তো ভালোই আছি কিন্তু আপনি তো অসুস্থ। তাই আমার মন খারাপ।” সোহা অবাক স্বরে বলে
” আমি অসুস্থ তুমি কি করে জানলে ?” তামিম এদিক ওদিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে
” আসলে আপু আমার রুমের ব্যালকনি থেকে তোমার ব্যালকনি পর্যন্ত দেখা যায়। কালকে তোমার ব্যালকনির দরজা খোলা ছিলো। মাঝরাতে এসেছিলাম ব্যালকনিতে তখন দেখেছি শান ভাইয়া তোমার পাশে বসে বসে জলপট্টি দিচ্ছিলো আর সালমা আপু তোমার হাত পা ঘষছিল।” সোহা হেসে এক ভ্রু উঁচিয়ে বললো
” বাহ তুমি দেখি আমার সব খোঁজ খবরই রাখো। আমি তো জানতামই না সামনের ব্যালকনিটা তোমার রুমের। তো মাঝরাতে ব্যালকনিতে কি করছিলে ? গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলে বুঝি ?” তামিম শব্দ করে হেসে বলে উঠে
” না গো আপু গার্লফ্রেন্ড নেই আমার। আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো তাই ব্যালকনিতে গিয়েছিলাম। আমি তো ভেবেছি বিয়েও করবো তোমার মতো একটা মেয়ে না পেলে।” সোহা তামিম বাচ্চামো কথাই খিলখিল করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে
” আচ্ছা চলো বসে কথা বলি।” তামিম মাথা নেড়ে সোহার সাথে হাটতে থাকে। কালকে সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় গার্ডেনের অবস্থা কিছুটা খারাপ। ছোট ছোট ঘাস না থাকলে এখানে সবাই পা পিছলে পড়তো। সোহা তামিমকে নিয়ে গার্ডেনের বেঞ্চে গিয়ে বসে। এখনও রোদের কোনো আভাস নেই চারদিকে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। সোহা ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে। তামিম চিন্তিত হয়ে বলে
” আপু তুমি বাসায় চলে যাও ঠান্ডা লাগছে তো তোমার !” সোহা হাত ঘষতে ঘষতে জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বলে
” এইটুকু বাতাসে কিছু হবে না। এসব ছাড় আর বলো তো কলেজে কোথায় এডমিশন নিচ্ছো ?”
তামিম বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” আমি তো এক্সাইটেড। আমার পছন্দের কলেজে এডমিশন টেস্ট দিয়েছিলাম সেটাতে সিলেক্ট হয়ে গিয়েছে তো সেটাতেই এডমিশন নিয়েছি।”
সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” একটাতেই সিলেক্ট হয়েছো নাকি ?” তামিম মাথা নেড়ে বলে
” নাহ ৬ টাতেই সিলেক্ট হয়েছি তবে দুটো অনেক দূড়ে আর বাকি এখানে তিনটা আশেপাশেই তবে আমি তো আমার পছন্দের কলেজেই এডমিশন নেবো।” কথা বলতে বলতে জানলো তামিম সোহার কলেজেই এডমিশন নিবে। সোহা খুশি হয়ে বলে
” বাহ তাহলে তো ভালোই হলো মাঝে মাঝে আমরা দেখা করতে পারবো। কি বলো ?”
তামিম সোহার কথা বুঝতে না পেরে তাকিয়েই থাকে। সোহা হেসে বলে
” আমার কলেজ লাইফ তো শেষ তবে কলেজেই খুব কাছেই আমার বাড়ি।” তামিমের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। অবাক হয়ে বলে
” সত্যি আপু তোমার বাসা সেখানেই ? তাহলে তো আমি প্রতিদিন তোমার সাথে দেখা করতে যাবো।”
সোহা চোখ বড় বড় বলে
” এএ ! আমি কি তোমার গার্লফ্রেন্ড ? একদমই এসব ভাববে না। ওকে ?” তামিম মুখ ফুলিয়ে বলে
” আরে বললাম তো ভাববো না। আচ্ছা ঠিকাছে তুমি যখন বলবে তখনই।” সোহা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। দুজন বসে বসে গল্প করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহা অনুভব করলো তার শরীর দুর্বল হয়ে পরছে জ্বরও আসছে আবার। সোহা তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তামিম চলো আমার সাথে বাসায় চলো।” তামিম বলে
” না আপু অন্যদিন আসবো। আজ যাই আমি।”
সোহা তামিমকে জোড় করে কিন্তু তামিম আসতে চায় না। শেষে এতো জোড় করায় তামিম রাজি হয়ে যায় ভেতরে যাওয়ার জন্য। কিছু পথ হাটতেই সোহার মাথা ঘুরে উঠে। সোহা তামিমের হাত ধরে ফেলে। তামিম সোহাকে ধরে ব্যস্ত হয়ে বললো
” আপু ঠিকাছো তুমি ? আপু !” সোহা চোখ খিঁচে বন্ধ করে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়। তামিম সোহাকে ধরেই বাড়িতে নিয়ে আসে। সালমা তামিমকে দেখেই এগিয়ে এসে বলে
” তামিম ! কেমন আছো ? এতোদিন পর আমাদের কথা মনে পড়ছে তোমার ? ২ আড়াই মাস ধরে তো দেখাই নাই তোমার।”
তামিম ব্যস্তার সঙ্গে বললো
” আরে আপা আমি ভালো আছি তুমি আগে আপুকে বসাও। আপুর মাথা ঘোরাচ্ছে।” সালমা দ্রুত এসে সোহাকে ধরে। দুজন সোহাকে সোফায় বসিয়ে দেয়। সালমা সোহার মাথায় হাত রেখে বলে
” আরে আপা আপনার জ্বর বেড়ে গেছে আবার। দাঁড়ান আমি ছোট ভাইরে জানাইতাছি।”
সোহা সালমাকে আটকে বলে
” আরে আপা উনাকে ফোন করবে কেনো ? রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবো আমি।” সালমা কথা শুনলো না রান্নাঘরে গিয়ে শানকে ফোন করে গরগর করে সব বললো। খাবার এনে বসতেই সোহা বিরক্ত হয়ে বলে
” কেনো বললে উনাকে ? বাড়িতে কেউ নেই আবার উনি যদি থানার সব কাজ ফেলে চলে আসে, উফফ ! আচ্ছা আমার খাবার খাচ্ছি আগে তামিমকে কফি, চা কিছু দাও।” সালমা যেতে নিলেই তামিম বলে
” আরে আপা আমি খেতে পারবো পরেও আগে তুমি আপুকে খাওয়াও।” সোহা কিছুটা আবার মুখে দিয়ে সালমাকে বলে
” আমি খাচ্ছি তুমি যাও তো !” সালমা দোটানা পেড়িয়ে রান্নাঘরে ছুটে গেলো। তামিম সোহাকে বলে
” তুমি না জেদি একটা মেয়ে।” সোহা খাওয়া রেখে হা করে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে। অবাক হয়ে বললো
” তুমি আমাকে এতোবড় কথা বলতে পারলে ? আমি কি জেদ করেছি?”
তামিম হেসে বলে
” এই যে যা বলো তাই করতে হয় সবাইকে।” সোহা ভাব নিয়ে বলে
” এটাই তো আমার ক্রেডিট বোঝনা? তোমার ক্রাশ বলে কথা।” তামিম হেসে দেয় সোহার কথায়। সালমা তামিমের জন্য নাস্তা নিয়ে আসে। তিনজন অনেক্ষণ গল্প করলো তবে সোহা গল্প করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে গেলো। তামিমও কিছুক্ষণ থেকে সালমাকে বলে চলে গেলো।
দুপুর ৩ টায় শান বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ঢুকেই সোহাকে সোফায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে। শান সালমার দিকে বিরক্তিকত চাহনি দিয়ে বলে
” আজও এখানে ঘুমাচ্ছে ? তুই রুমে দিয়ে আসতি পারলি না ?” সালমা বললো
” আরে তামিম আসছিলো। তিনজন গল্প করতাছিলাম তখন গল্পের মাঝেই এখানেই ঘুমিয়ে গেছিলো।” শান উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে সোহার জ্বরের তাপমাত্রা চেক করে ইশানকে ফোন করে জানালো সোহার জ্বরের কথা। ইশান অনেক কিছু সাজেস্ট করলো আর বললো আজকে বাড়িতে চলে আসবে সোহাকে দেখার জন্য।
শান সালমাকে বলে সোহার জন্য টেবিলে খাবার দিতে। সালমা মাথা নেড়ে চলে যায়। শান সোহার কাছে গিয়ে সোহাকে ঘুম থেকে উঠালো। সোহা শানকে দেখে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” এই সমস্যা কি আপনার ? কালকেও ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়েছিলেন আজও ! আগে তো আমার শত্রু ছিলেন এখন আমার ঘুমেরও ?” শান হালকা ধমকে বলে উঠে
“একদম চুপ ! একটা কথাও বলবে না। কিছু না জেনে বুঝে শুধু বকবক করা !” সোহা মুখ ফুলিয়ে আবার ঘুমাতে নিলেই শান বলে
” এই আবার ঘুমাচ্ছো কেনো ? চলো খাবে মেডিসিন নিতে হবে। জ্বরের বাসা বেধে রেখেছো শরীরে।” সোহা রেগে ফুসঁতে থাকে শানের কথায়। শান সোহাকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয়। সোহা একটু একটু করে খেতে থাকে। শান তার খাওয়া শেষ করে ফেলে কিন্তু সোহার হাফ প্লেটও শেষ হয়নি এখনও। শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” পিঁপড়ের গতিতে খেলে এই জনমে আর তোমার খাবার শেষ হবে না।” সোহা মুখ কুঁচকে বলে
” আমি আর খেতে পারবো না।” শান চোখ রাঙিয়ে বলে
” খেতেই হবে তোমাকে। শরীর বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে তোমার।” শান সালমাকে বললো খাইয়ে দিতে সোহাকে। সালমা জোড় করে সোহাকে কয়েক লোকমা খাইয়ে দিতেই সোহা বমি করে ভাসিয়ে দিলো। সালমার অবস্থা বেহাল চেহারাটাও দেখার মতো হয়েছে। শানের জোড় করা করিতে তার ক্ষতি হয়ে গেলো। শান সালমার চেহারা দেখে কোনো রকমে হাসি আটকে সোহাকে বলে
” আচ্ছা আর খেতে হবে না। উপরে চলো রেস্ট করবে।” সোহা মাথা নেড়ে দুর্বল কন্ঠে বলে
” আমি পারবো না যেতে।” শান আর কোনো উপায় না দেখে কিছু না ভেবেই সোহাকে কোলে তুলে নিলো। সালমার মুখ হা হয়ে গেলো। সাথে সোহা নিজেও অবাক হয়ে গেলো। শান সোহার চাহনি দেখে বলে
” কি এভাবে তাকাচ্ছো কেনো ? হেল্প করছি ভালো লাগছে না ?” সোহা অবাক হয়েই বলে
” নাহ হজম হচ্ছে না।” শান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে সোহাকে উপরে নিয়ে যেতে থাকে।

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১০

সোহা খোরগোশের মতো হেটে এসে অনেকটা উত্তেজনা নিয়ে বলে
” আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি না ?”
সোহার কথাটা শুনে পরিষ্কার আকাশে বাজ পরার মতো অবস্থা মনে হলো শানের। শান হা করে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। শানের তাকানো দেখে সোহা তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বুঝতে পারছে না ভুল কিছু বলেছে কিনা ! সোহা আমতা আমতা করে বলে
” আমি কি ভুল কিছু বলেছি ?” সোহার কথা শুনে শানের ধ্যান ভাঙে। শান সোহার দিকে তাকিয়ে হতবাক স্বরে বললো
” ভুল মানে! মারাত্মক ভুল বলে এটাকে।” সোহা অবাক হয়ে বলে
” এখানে মারাত্মক ভুলের কি আছে ? আমি তো শুধু বলেছি আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি না !”
শান ঢোক গিলে বলে
” এটাই তোমার সবচেয়ে বড় ভুল। দ্বিতীয় বার এসব কথা বলা তো দূড় ভেবেও দেখবে না। মাথায় থাকে জেনো।” সোহা মুখ ফুলিয়ে নেয়। এতো ছোট একটা কথার মধ্যে ভুলের কি আছে ? শান নিজেকে স্বাভাবিক করে ভ্রু কুঁচকে বললো
” এখানে কি করছো তুমি ? একটু জ্বর কমেছে বলে কি এখনই বাদরের মতো লাফানো শুরু করে দেবে ? যাও গিয়ে রেস্ট করো। রাতে ভাইয়া এসে তোমাকে দেখবে।”
সোহা মন খারাপ করে বেরিয়ে গেলো শানের রুম থেকে। শান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলে
” যেখানে তোমাতে আশক্ত হয়ে রয়েছি আমি, সেখানে ফ্রেন্ডশিপ এর কোনো জায়গা নেই। যদি কোনো সম্পর্ক হয় তাহলে সেটা শুধু আর শুধুমাত্র আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক দিয়ে তৈরি হবে।” শান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নিজের কাজে মন দেয়।
সোহা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বিরবির করতে থাকে
” আমাকে অপমান করা ! আর কখনো যাবো না উনার রুমে। পেয়েছেটা কি আমাকে ? সব সময় কথা শোনাবে নয়তো বকা দেয় আমাকে ! আমি কি উনার বকা শোনার জন্য জন্মেছি নাকি ? হুহ !”
সোহা মুখ ফুলিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। বর্ষা কাল বলে কথা ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিই হয়ে যায়। আজ সারাদিন বৃষ্টি না হলেও এখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা বাতাসে হৃদয় জুড়িয়ে যাচ্ছে। সময়টা অসম্ভব এক সুন্দর অনুভূতির। সোহা একটা চেয়ার এনে ব্যালকনিতেই বসে পড়লো। ব্যালকনির রেলিং এর উপর দুই পা তুলে বসে কানে হেডফোন গুঁজে দেয়। চোখ বন্ধ করে এই সুন্দর আবহাওয়া আর গানে মেতে থাকে।
এদিকে একজন ব্যাক্তি যে সোহাকে তার মন ভরে দেখে যাচ্ছে সেদিকে কি আর সোহা জানে ! অবশ্যই জানে না। শানের ব্যালকনি থেকে সোহার ব্যালকনি পুরোপুরি ভাবে দেখা যায়। শান কাজ শেষ করেই ব্যালকনিতে এসেছিলো গায়ের জন ছাড়াতে কিন্তু এখানে এসেই সোহাকে দেখতে পেলো। মুহূর্তেই সব ক্লান্তি কেটে যায়। মেয়েটা রুমে এসেই বৃষ্টির সময় ব্যালকনির ঠান্ডা হাওয়ায় বসে আছে ভেবেই শানের রাগ হলো কিন্তু শানের রাগ তো কখনোই দীর্ঘ সময় টিকতে পারেনি সোহার কাছে। হোক সেটা সোহার অজান্তেই কিন্তু সোহার জন্যই শানের রাগ কমে যায়। ব্যালকনির হালকা আলোয় সোহার স্নিগ্ধ চেহারা দেখে যেকেউ তার মন ভুলিয়ে থাকতে পারবে। কিন্তু শানের তৃষ্ণা মোটেই কমছে না বরং দ্বিগুনের থেকেও দ্বীগুন বেড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সোহার সামনে গিয়ে তাকে চোখ জুড়িয়ে দেখে নিক কিন্তু সেটা নিতান্তই কল্পনা। ইচ্ছেটা এই মুহূর্তে কোনো ভাবেই পূরণ হবার নয়। হঠাৎ করে পাশের বিল্ডিং থেকে তামিমের ডাক শুনে শান চমকে তামিমের ব্যালকনিতে দৃষ্টি ফেলে। তামিম সোহাকে ডেকেছে কিন্তু সোহার তো সেদিকে খেয়ালই নেই। কানে যে হেডফোন গুঁজে রেখেছে সেটাতেই হারিয়ে আছে আর বৃষ্টির শব্দে তামিমের ডাক সোহার কানেও গেলো না।
তামিম তো ধরেই নিলো সোহা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। তাই মন খারাপ করে চলে যেতে নিলেই শান তাকে ডেকে উঠলো
” তামিম !” তামিম শানের ডাক শুনেই চিনে ফেললো। সাথে সাথে শানের ব্যালকনির দিকে তাকায়। শানকে দেখে বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” কেমন আছো ভাইয়া ?” শান আলতো হেসে বলে
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো ?”
তামিম হেসে উত্তর দেয়
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো।” শান আলতো হেসে বলে
” তো শুনলাম আজকে নাকি সোহা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তুমিই ওকে নিয়ে এসেছিলে !”
তামিম লাজুক হাসি দিয়ে বলে
” জি ভাইয়া। আপু আর আমি গল্প করছিলাম তখন। তুমি জানো ! আমাদের মধ্যে একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গিয়েছে।” শান বাহবা দিয়ে বলে
” বাহ ! খুব ভালো কথা। শুনে খুশি হলাম।”
” শুকরিয়া। আপু এখন কেমন আছে ?” শান সোহার দিকে ইশারা করে বলে
” তুমিই দেখে নাও কেমন আছে। খারাপ থাকলে কি এখানে এভাবে বসিয়ে থাকতো ? ভালোই আছে।” তামিম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শানের সাথে গল্প করতে থাকে।
রাতে ডিনার টেবিলে বসতে বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠে। সালমা শান আর সোহাকে খাবার দিয়ে দরজা খুলে দেখে ইশান এসেছে। সালমার প্রশ্নের ঝুড়ি শুরু হয়।
” ভাই নানি কেমন আছে এখন ? খালাম্মা, ভাবিরা কবে আসবো ? ছোট ভাই, খালু কেউই তো আসতাছে না…”
ইশান সালমাকে থামিয়ে বলে
” আরে থাম তুই ! তোর প্রশ্ন আর শেষ হয় না। বাড়িতে ঢুকতেই তো দিলি না আমাকে। সবাই ভালো আছে। কালকেই সবাই চলে আসবে এবার আমাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে দে।” সালমা মাথা নেড়ে ইশানের পথ ছেড়ে দাঁড়ায়। সোহা খাবার সামনে নিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো। সোহার মাথায় হাত রেখে বলে
” কেমন আছো সোহারানি ?” সোহা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন ?” ইশান মাথা নেড়ে বলে
” আমিও ভালো আছি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তোমরা খাও।” ইশান উপরে তার রুমে চলে যায়।
শান খাচ্ছে আর ফোন টিপছে। ইমন ইম্পরট্যান্ট কিছু ই-মেইল পাঠিয়েছে সেগুলোই দেখছে। সোহা কিছুটা খেয়ে খাবার নিয়ে বসে থাকে। মুখে একদমই রুচি নেই তার। শান ফোন রেখেই সোহার দিকে তাকালো। বসে থাকতে দেখে বলে
” বসে আছো কেনো তুমি ? খাবার শেষ করো তাড়াতাড়ি !” সোহা ভেংচি কেটে বলে
” খাবো না আমি।” শান রেগে বলে
” কি করলে এটা তুমি? তুমি আমাকে ভেংচি দিচ্ছো কেনো ? ঠোঁট কেটে রেখে দেবো।” সোহা নাক ফোলাতে থাকে। শান নিজের খাওয়ায় মন দেয়। সোহা খাবার রেখে উঠে টিভির সামনে বসে পরলো। সালমাকে বলে আচারের বয়াম এনে বসে বসে খেতে থাকে আর টিভি দেখতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইশান এসে পরে। সোহাকে দেখে শানকে উদ্দেশ্য করে ধীরে ধীরে বলে
” কিরে ! সোহা খায়নি কেনো ? তুই কিছু করেছিস নাকি ?”
শান ভ্রু কুচকে বলে
” আমি কি করবো ? জ্বর তো তাই মুখে রুচি নেই। খাবে না বলে উঠে গেলো।” ইশান উত্তরে
” ওহ ” বললো। সালমা ইশানকে খাবার দেয়। ইশান সালমাকে বলে
” সোহার জন্য পারলে একটু চিকেন স্টু করে নিয়ে আয়।” সালমা মাথা নেড়ে চলে গেলো।
ইশান আর শানের খাওয়া শেষ হলে দুজন সোফায় বসে কথা বলতে থাকে। সোহা নিজের মতোই বসে বসে আচার খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সালমা গরম গরম চিকেন স্টু এনে সোহার সামনে রেখে হেসে বলে
” নেন আপা এটা খান। কিছু তো খান নাই এটা খেলে ভালো লাগবে।” সোহা খাবারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। ইশান সেটা দেখে বলে
” কি হয়েছে ? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো সোহা ?” সোহা মাথা নেড়ে কিছু না বোঝালো। ইশান হেসে বলে
” ঠিকাছে। তবে এটা পুরোটা খেয়ে নেবে নাহলে না খেয়ে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পরবে।” সোহা ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। শান সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সোহার এতো ভালো মানুষি দেখে তার কাছে সন্দেহ লাগছে। মনে হচ্ছে উল্টো পাল্টা কিছু করবেই। তবে শানের ধারণা ভুল করে দিয়ে সোহা চুপচাপ সুন্দর করে খাবারটা খেয়ে নিলো। খাবার খেয়েই রুমে চলে গেলো ঘুমানোর জন্য। সোহার কাজে শান বড্ড অবাক হলো। কিন্তু সময়ের সাথে সেটা ভুলেও গেলো।
পরদিন সকালে বাড়ির সবাই এসে পড়লো বাড়িতে। শান থানায় আর ইশান হসপিটালে চলে যায়। আর বাকিরা রেস্ট করতে থাকে। কম খাটুনি খাটেনি কেউই। দিন শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পরে। সোহা, নাইসা আর টমিকে নিয়ে খেলতে থাকে। শাহানাজ বেগম নিজেই কিছুটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে তাই রেস্ট করছে। নিলা আর সিমিও তাদের কাজ করতে থাকে। এদিকে সালমা বসে আছে শাহানাজ বেগমের সাথে কথা বলবে বলে তবে তিনি রেস্ট করায় সালমার কথা হয়ে উঠা হচ্ছে না একদমই। সোহার জ্বরও মোটামুটি কমে গিয়েছে।
রাতে সোহা ইতির সাথে কথা বলে। ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট নিয়ে দুই বান্ধবীর পরামর্শ চলছে।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here