#আধারে_তুমি,৪৩,৪৪
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৩
নিলা সোহার মাথায় পানি ঢেলে দিতে থাকে। শান পুরো রুমে পাইচারি করতে থাকে। ইশান সোহার চেকাপ করতে থাকে। এরমাঝে শান বললো
” ভাইয়া সোহার নাকি আজকে পেটের সেলাই এর জায়গায় ব্যাথা করছিলো। আমি মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু জ্বর আসলো কেনো বুঝতে পারছি না।” ইশান চেকাপ শেষ করে বললো
” আমার মনে হচ্ছে সেই ব্যাথার কারণেই হঠাৎ জ্বর এসেছে। আমি মেডিসিন দিয়ে যাচ্ছি খাইয়ে দিবি আর সকালের মধ্যে যদি জ্বর না কমে তাহলে হসপিটালে নিয়ে যাবি আমি সব রেডি রাখবো কিছু টেস্ট করাবি।” শান সায় দিলো। ইশান মেডিসিন দিয়ে দেয়। নিলা সোহার মাথা মুছিয়ে দিয়ে সোহার খেয়াল রাখতে বলে চলে যায়। শান পানির বালতি টা ওয়াসরুমে রেখে এসে সোহার পাশে বসে। সোহাকে শোয়া থেকে উঠিয়ে নিজের বক্ষস্থলে আগলে নেয়। সোহাকে ঘুমের মাঝেই কয়েকবার ডেকে কোনারকমে ঔষধ খাইয়ে দেয়। শান সোহাকে আবার শুইয়ে দিতেই সোহা ছটফট করতে থাকে আর কাঁদতে থাকে। শান অবাক হয়ে সোহার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো
” সোহা ! কাঁদছ কেনো তুমি ? বেশি খারাপ লাগছে ?” সোহা ফুঁপাতে ফুঁপাতে সায় দিয়ে বললো
” আমি আপনার কাছে ঘুমাবো ! ভালো লাগছে না আমার।” শান নিজের আর সোহার দূরত্বের দিকে তাকালো। দুজনের মধ্যে দূরত্ব নেই বললেই চলে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
” বউ ! তুমি আমার কাছেই ঘুমিয়ে আছো। তুমি ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।” শানের কাছে আছে শুনে সোহা কিছুটা শান্ত হয় কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার ঘুমের মাঝে শানের শার্টের কোণা খামছে ধরে টানতে থাকে আর কাঁদতে থাকে। শান সোহাকে শান্ত করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না দেখে অসহায় গলায় বললো
” বউ এমন করছো কেনো ? আগের বার একদম শান্ত ছিলে ! এবার দেখি নাজেহাল অবস্থা তোমার।” সোহা কাঁদতে কাঁদতে উঠে বসে। শান সোহার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে
” কাঁদছো কেনো ? বলো আমাকে ! কিছু লাগবে তোমার ?” সোহা পানিতে জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে কাতর গলায় বললো
” আমার পেটে ব্যাথা করছে কমিয়ে দিন না !” শান অশ্রুসিক্ত চাহনিতে তাকালো। সোহার এই যন্ত্রণায় কাতরানো দেখে নিজেরই কষ্ট হচ্ছে। এই ব্যাথা কমানোর কোনো উপায় জানা থাকলে সে সারাজীবনের জন্য এই ব্যাথা নিরাময় করে দিতো। শানের ভাবনার মাঝেই সোহা শানের বুকে মাথা রেখে ধীরেধীরে কান্না কমিয়ে দেয়। আধভেজা অসুস্থ গলায় বাচ্চাদের মতো আবদার করে বললো
” আমি এখানে ঘুমাবো !” শান আলতো হাসলো। সোহার কপালে চুমু দিয়ে সোহাকে নিজের বক্ষস্থলের মাঝে নিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকে। সোহাকে ঠান্ডায় কাঁপতে দেখে ব্ল্যাংকেট দিয়ে সোহাকে সহ নিজেকে মুড়িয়ে নেয়। সোহা শানের বুকে বিড়ালের বাচ্চার মতো ঘুমিয়ে থাকে।
সকালের ঘুম থেকে উঠে দেখলো সোহার জ্বর অনেকটাই কমেছে। ঘড়ির দিকে তাকাতেই শানের চোখ কপালে। থানায় যাওয়ার টাইম হয়ে গিয়েছে অথচ সে এখনও বিছানা থেকেই নামেনি। শান সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহার এখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। চোখে মুখে অসুস্থ ভাবটার জন্য চেহারাটা নেতিয়ে রয়েছে। শান নিশ্বাস দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সোহার কপালে গভীরতার সাথে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে দ্রুত বেড থেকে নেমে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পড়েই দৌঁড়ে নিচে ছুটে গেলো। নিচে এসেই দেখে টেবিল ফাকা সবাই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গিয়েছে। শান গলা ছেড়ে হাক ডেকে বলতে থাকে
” মা ! ভাবি ! সালমা কে আছো ব্রেকফাস্ট টা দাও জলদি আমার দেড়ি হয়ে গিয়েছে।” শান চেয়ারে বসে গ্লাসে জুস ঢালতে ঢালতেই শাহানাজ বেগম রান্না ঘন থেকে খাবার নিয়ে উপস্থিত হন। শানের সামনে ব্রেকফাস্ট রেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো
” আমি এখনই উপরে খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম। নিলা আর ইশান বললো সোহার জ্বর এসেছে। আমার চিন্তা হচ্ছিলো। এখন কেমন আছে মেয়েটা ?” শান তাড়াহুড়ো করে খেতে খেতে বললো
” জ্বর রাতের থেকে অনেকটা কমেছে। আচ্ছা মা সোহার খেয়াল রেখো আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আজ কাজ আছে তাই যেতেই হবে।” শাহানাজ বেগম ধমক দিয়ে বললো
” ধীরেসুস্থে খা ! একদিন দেড়ি হলে কি কেউ তোকে খেয়ে ফেলবে ? সুন্দর করে খেয়ে যা। গলায় আটকে গেলে তখন তো আরেক বিপদ হবে।” শানের খাওয়া শেষ পর্যায়ে তাই খাওয়ার গতি কমিয়ে দেয়। খাওয়া শেষ হতেই শান বেড়িয়ে গেলো।
রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে শান। পুরো রুমে চোখ বুলিয়েও সোহাকে পেলো না। নিচে নিলা আর সিমিকে জিজ্ঞেস করেছিলো সোহার কথা। তারা বলেছে সোহা সন্ধ্যার পর থেকে শরীর খারাপ লাগায় রুমেই রয়েছে। শানের মনে হলো আগে ফ্রেশ হওয়া দরকার তাই আলমারি থেকে শার্ট আর টাওজার খুলে ওয়াসরুমে ছুটলো। কিছুক্ষণের মধ্যে বেড়িয়ে আসে। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে পুনরায় রুমে চোখ বুলিয়ে সোহাকে দেখতে পেলো না। শান টাওয়ালটা সোফায় ফেলে অস্থির দৃষ্টিতে বারান্দার দিকে উদগ্রীব হয়। বারান্দায় পা রাখতেই শানের অস্থিরতা কমে গেলো। সোহা নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে বসে বসে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে। থাই গ্লাস খুলে রাখায় বাতাস মুক্তভাবে চলাফেরা করছে। বাতাসটা একটু বেশিই সোহা গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে বসে রয়েছে। শান ধীর পায়ে সোহার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
আলতো স্বরে সোহাকে ডাকলো
” সোহা !” সোহা শান্ত ভাবেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় শানের দিকে। শানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। শান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সোহাকে আজ অন্যরকম লাগছে হয়তো অসুস্থতার জন্য তবে খুব সুন্দর লাগছে। শান সোহার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে সোহাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে। সোহা পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে শানের দিকে তাকিয়ে বললো
” কখন এসেছেন ?” শান সোহার চুল গুলো খুলে দিয়ে সোহার কোমড়ে নিজের হাতজোড়া রেখে সোহার চুলের মাঝে নিজের নাক ডুবিয়ে দিলো। সোহা কেঁপে কেঁপে উঠে শানের শীতল ছোঁয়ায়।
শান চুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে ঘোড় লাগা কন্ঠে বলতে থাকে
” বউ ! চুলে কি দাও বলো তো ! এতো সুন্দর ঘ্রাণ কেনো তোমার চুলে ? তোমার খোলা চুলের৬ আমাকে তিন হাত দূড় থেকেই ঘ্রাণে আকৃষ্ট করে ফেলে। বারবার তোমার কাছে টানে আমাকে।” সোহা লজ্জায় লা হয়ে যায়। শানের হাত জোড়া কোমড় থেকে ধীরেধীরে সোহার পেটের উপর অবস্থান করতে থাকে। সোহার নিশ্বাস উঠা নামা করতে থাকে। শান সোহার কাধে ঠোঁট ছোঁয়াতেই সোহা কেঁপে উঠে।
” আমি একটু আদর করলেই তুমি কাঁপতে থাকো। এই অল্পস্বল্প ছোঁয়াতেই এই অবস্থা আমার বউ এর। আর যখন বেশি ভালোবাসবো তখন কি হবে সেটার কল্পনা ঝল্পনা করতে করতে আমি হতাশগ্রস্থ বুঝলে বউ !” শানের দুষ্টু ভরা কণ্ঠে এমন কথা শুনে লজ্জায় সোহায় মুখ থেকে কোনো কথা বের হলো না। শান সোহার ঘাড়ে ছোট ছোট চুমু দিতে থাকে। সোহা আবেশে চোখ বন্ধ করে রাখে।
কিছুক্ষণ পর শান সোহার কাধে থুতনি রেখে বললো
” বউ ! কালকে সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সাজবে। সকালে আমি নাহয় বেলিফুলের মালা নিয়ে আসবো।” সোহা জিজ্ঞেসু কণ্ঠে শুধালো
” কেনো ? কালকে কি ? হঠাৎ শাড়ি পরে সাজবো কেনো ?” শান বিরক্ত হয় সোহার কথায়। পরমুহূর্তেই রাশভারী কন্ঠে বললো
” একরাত অসুস্থ থেকে আমার বউ সব ভুলে গিয়েছে আর বেশিদিন অসুস্থ থাকলে না জানি কি হতো ! যদি আমাকেই ভুলে যেতো ! ভাবতেই কপাল ফাটা মনে হচ্ছে নিজেকে। কালকে যে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো ভুলে গিয়েছো ?” উক্ত কথাটি সোহার কুর্নকহর হতেই সোহা চঞ্চলা দৃষ্টিতে শানের দিকে। উৎসাহিত গলায় বললো
” সত্যি ! নিয়ে যাবেন কালকে ? আমি তো
ভাবলাম অসুস্থ হওয়ায় নিয়েই যাবেন না আর তাই সব ভুলে বসে আছি। ধন্যবাদ আপনাকে।”
শান গম্ভীরতার সঙ্গে বললো
” ধন্যবাদ ! শুধু ধন্যবাদ দিলেই হবে ? আমার কষ্ট চোখে পড়ে না তোমার ? এতো কষ্টে সময় বের করলাম কালকে তোমাকে নিয়ে ঘোরার জন্য আর তুমি শুধু ধন্যবাদ দিচ্ছো ! আমি কি আরো বড় কিছুর প্রাপ্য নই ?” সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। শানের কথা শুনে বললো
” বড় কিছু কি চাই আপনার ?” শান সোহার দিকে ঝুকে বাকা হেসে বললো
” কিস মি বেবি।” সোহা চোখ বড়বড় করে তাকায়। সোহা হতবাক স্বরে বললো
” এটা আপনার বড় চাওয়া ! এ চাওয়া তো মারাত্মক চাওয়া।” শান শান্ত চোখে সোহার চোখে তাকায়। গম্ভীর গলায় বললো
” তুমি কি দেবে না আমাকে আমার প্রাপ্য ? যদি মনে করো আজ ছাড় দেবো তাহলে কিন্তু ভুল ভাবছো মেয়ে। আজ কিন্তু আমি আমার প্রাপ্য আদায় করে ছাড়বো। কিস মি কুইক !” সোহা হতবাক হয়ে তাকায়। এই ছেলে দেখি জোর করে আদায় করছে। শান সোহার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সোহা লজ্জা নিয়ে চোখ বন্ধ করে পা উঁচু করে শানের ওষ্ঠাধরের সঙ্গে নিজের ওষ্ঠাধর এক করে দেয়। শান মনে মনে হেসে সোহার ডাকে সারা দেয়।
কিছুক্ষণ পর দুজন দুজনকে ছেড়ে দেয়। সোহা মাথা নিচু করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে। শান সোহার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো
” চলো রুমে চলো এখনও তোমার জ্বর রয়েছে।” সোহা শানের সাথে রুমে এসে পড়ে।
সকালে ফযরের নামায শেষ করে শান জগিং করে একেবারে বাড়িতে ফিরে। আসার বাজার, ফুলের দোকানে ঘুরে এসেছে কিন্তু বেকিফুলের মালা পায়নি। মন কালো করে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু বাড়ির বাগানে ঢুকতে ঢুকতে এদিক ওদিক তাকাতেই ছাঁদের দিকে চোখ পরে। সোহার জন্য ছাঁদের ফুল গাছ এনেছিলো সেখানে বেলিফুলও রয়েছে। ভেবেই শানের মনে প্রশান্তি পায়। শান দ্রুত পায়ে ছাঁদে উঠে যায়। গিয়ে দেখে বেলিফুলের গাছটায় অনেক ফুল ফুটেছে। ফুলসহ অসম্ভব সুন্দর লাগছে গাছটা। শান গাছটার কয়েকটা ছবি তুলে ফুল তুলে নেয়। রুমে গিয়ে মালা বানাতে থাকে। আজ ভোর রাতেও সোহার জ্বর এসেছিলো তবে আগের তুলনায় কম। তাই সোহা এখনও ঘুমেই রয়েছে তাই পুরোরুম শুনশান।
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৪
আজ ভোর রাতেও সোহার জ্বর এসেছিলো তবে আগের তুলনায় কম। তাই সোহা এখনও ঘুমেই রয়েছে তাই পুরোরুম শুনশান। শান মনোযোগ সহকারে ইউটিউব দেখে বেলিফুলের গাজরা বানিয়ে যাচ্ছে আর মনে মনে কল্পনা করছে কেমন লাগবে তার সোহাকে। সোহা এটা দেখে নিশ্চই খুশি হবে।
দীর্ঘ সময় ত্যাগ করে বেলিফুলের গাজরা বানাতে পুরোপুরি ভাবে সক্ষম হয় শান। গাজরাটা হাতে নিয়ে বড়সড় প্রশান্তির হাসি দেয় শান। টেবিলের উপর সযত্নে গাজরাটা রেখে কাপবোর্ড থেকে সোহার জন্য শাড়ি বের করে রাখে। শান ল্যাপটপ নিয়ে ব্যালকনিতে এসে পড়ে।
সোহার ঘুম ভাঙতেই সোহা কিছুক্ষণ শুইয়ে থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। শানের জায়গাটা খালি দেখে কপালের উপর পরপর কয়েকটা ভাজের সৃষ্টি হয়। সোহা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৭ টা ৪০ বাজে। সোহা বিছানা থেকে উঠে ওয়াসরুমে যেতে যেতে সোফার সামনে থাকা ছোট টি টেবিলের উপর তার প্রিয় কালো শাড়ি আর গাজরা রাখা। সোহা অবাক হয়ে সোফায় বসে সেগুলো হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। বুঝতে বাকি নেই শান এগুলো রেখেছে। শাড়িটা বিয়ের শপিং এর সময় শানই পছন্দ করে দিয়েছিলো। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর আর শাড়ি না পড়লেও কয়েকটা শাড়ি তার পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সোহা শাড়িটায় হাত বুলিয়ে হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর সোহা বেরিয়ে আসলেও শানকে দেখতে না পেয়ে ব্যালকনির দিকে অগ্রসর হয়। শানকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকতে দেখে রেগে বলে উঠলো
” এতোক্ষণ ধরে খুঁজে মরে যাচ্ছি আমি আর আপনি এখানে শব্দহীন ভাবে বসে আছেন ? মাথা কাণ্ডজ্ঞান নেই আপনার ?” শান ভ্রু কুঁচকে সোহার দিকে তাকিয়ে নাক মুখ ঘুচে বললো
” এই সকাল সকাল রাগছো কেনো ? আজকে কি ঝগড়া করবে নাকি ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বললো
” তো আর কি করবো? আমি উঠে সেই কখন থেকে খুঁজেছি আপনাকে আর আপনি এখানে চুপ করে বসে আছেন ! মানা যায় এসব ?” শান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রুমে যেতে যেতে বলল
” আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে আমার। এবার বলো কেনো খুঁজছিলে আমাকে।” সোহা আমতা আমতা করে বললো
” এমনি খুঁজছিলাম। আমি ভেবেছি আজকেও থানায় চলে গিয়েছেন।” শান ফিচলে হেসে বললো
” বোকা মেয়ে আমি যাচ্ছি না কোথাও। গেলেও তোমাকে বলে যাবো। ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে যাবে ঠিকাছে ?” সোহা মাথা নেড়ে সায় জানায়।
ব্রেকফাস্ট শেষ করতে করতে তামিম এসে হাজির হয়। তামিমের আজকাল পড়াশোনার প্রেশার থাকে তাই আগের মতো আসতে পারে না বেশি বেশি। তবে সময় পেলেই চলে আসে। আজ তাদের কলেক বন্ধ তাই চলে এসেছে। ব্রেকফাস্ট শেষে শান, তামিম, সিমি, নিলা মিলে গল্প করায় ব্যস্ত। নাইসা টমিকে নিয়ে দৌড়চ্ছে আর খেলছে। সোহা সব সময় ধীর গতিতে খায় তাই টেবিলে বসে খেয়ে যাচ্ছিলো। খাওয়া শেষ হতেই সোহা রুমে চলে গেলো তৈরি হতে।
কালো শাড়িতে পড়ে চুল গুলো খোঁপা করে হালকা মেকাপে তৈরি হয়ে যায় সোহা। শাড়ি একদমই পড়তে পারে না সোহা তাই কোনো রকমে পড়েছে শুধু বাকিটা নিলা আর সিমিকে
বলবে ঠিক করে দিতে। দরজায় নক করতেই সোহা দরজা খুলে দেখে শান এসেছে। শান সোহাকে দেখে চোখ জুড়িয়ে নিলো। বিয়ের পর আজ আবার এতোদিন পর সোহাকে প্রথম শাড়িতে দেখছে। সৌন্দর্যটা বেশিই বেড়ে গিয়েছে। শান দু পা এগিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। সোহা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। শান সোহার কোমড়ে হাত রেখে সোহাকে জড়িয়ে ধরে সোহার চুলে গাথা বেলিফুলের মালার ঘ্রাণ নিলো চোখ বন্ধ করে। শান সোহার কোমড়ের কাপড় টুকু ভেদ করে উন্মুক্ত কোমড়ে হাত রাখতেই সোহার শরীরে কম্পনের সৃষ্টি হয়। সোহা চোখ বন্ধ করে সোহার হাত চেপে ধরে আলতো ভাবে। শান সোহার উন্মুক্ত পেটে হাত বুলিয়ে মাতাল কন্ঠে বললো
” এলোমেলো ভাবে শাড়ি পড়ে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছো আর পাগল করে দিচ্ছো তুমি।” সোহা মাথা নুইয়ে চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো। শান সোহার এলোমেলো শাড়িটুকু ঠিক করে সোহাকে পরিপূর্ণ ভাবে সাজিয়ে তুললো। সোহার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো
” খুবক সুন্দর লাগছে বউ তোমাকে।” সোহা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো
” আপনি তৈরি হবেন না?” শান উত্তর দেওয়ার আগেই ফোনের রিংটোনের বিকট শব্দ পুরো রুমে বিস্তার করতে থাকে। শান পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে থানা থেকে ফোন এসেছে। শান ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকে। ফোনের ওইপাশ থেকে কথাগুলো না শুনতে পারলেও শানের মুখ দেখে বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। শানের মুখমণ্ডল শক্ত হয়ে এসেছে। কপালে আঙুল ঘষতে ঘষতে রাগ কন্ট্রোল করছে সেটাও বুঝতে পারলো। শান ফোনে শুধু গম্ভীর বললো
” আসছি আমি।” সোহা ভ্রু কুঁচকে তাকায় শানের দিকে। কোথায় যাবে শান ! শান ফোন কেটে সোহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় বললো
” আমাকে যেতে হবে এখনই।” সোহা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। শান সোহার গালে হাত রেখে বললো
” আমি যতো দ্রুত সম্ভব চলে আসার চেষ্টা করবো। তুমি মন খারাপ করবে না প্লিজ !” সোহা নিজেকে শান্ত রেখে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। শান মলিন হেসে তাড়াহুড়ো করে তৈরি হতে থাকে। সোহা চুপচাপ বসে বসে শানের কার্যক্রম দেখতে ব্যস্ত। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর উপর মনে মনে বিশাল রাগ পুশে নেয়। যদিও রাগ দেখাতে পারবে তাও সে রেগেই থাকবে বলে ধরে নেয়। তাদের জন্য একটাদিন বউকে নিয়ে ঘুরতেও পারলো না।
শান তৈরি হতে হতে ব্যস্ততার মাঝে একটা চাবি রাখলো। সোহা সেটা সূক্ষ্ম চোখে দেখতে থাকে। দেখে বুঝতে পারে এটা আলমারির সেই কাপবোর্ডের লক করা থাকে সবসময়, সেই ড্রয়ারের চাবিটা। সোহা শানকে বলতে গিয়েও বললো না। শান জিপের গাড়ি নিয়ে সোহার কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো। সোহা দরজা লাগিয়ে সেই চাবিটা নিয়ে ড্রয়ারটা খুললো। ড্রয়ার খুলতেই সোহা ভ্রু জোড়া কিঞ্চিত কুঁচকে নেয়। শানের কথা মতো এখানে কোনো কোনো ফাইলই নেই। শুধু রয়েছে একটা ডায়েরী। সোহা সেটা হাতে উঠিয়ে নেয়। মনটা ছটফট করে উঠে কি আছে এটার ভেতর দেখার জন্য।
রাত ৯ টা নাগাল বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠতেই সালমা সদর দরজা খুলে দেয়। শান জুতো জোড়া খুলে ড্রইংরুমে আসতে আসতেই দেখতে পেলো শাহানাজ বেগম আর নিলা চিন্তিত চেহারায় বসে রয়েছে। শান দুজনকে দেখে বললো
” কি হয়েছে এভাবে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো তোমাদের ?” শাহানাজ বেগম রাগি গলায় বললো
” বাড়ির বাইরে গিয়েছো আর বাড়ির খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করো ! তুমি যাওয়ার পর থেকে সোহার দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে রয়েছে এখনও বের হয়নি। আমরা সবাই ডেকে এসেছে বারবার কিন্তু দরজা খোলেনি একবারো। খাবারের জন্য ডাকলে বলেছে পরে খাবে।” শাহানাজ বেগম বেশিই রেগে রয়েছে তাই শান আর কিছু বললো না। উপরে যেতে যেতে বললো
” আমি দেখছি চিন্তা করো না।” সোহা তো তখন রাগ করেনি তাহলে হঠাৎ এমন বিহেভিয়ার করতে কেনো বুঝে উঠতে পারলো না শান। ভাবতে ভাবতেই শান দরজায় হাত রাখতেই দরজা খুলে যায়। শান অবাক হয়ে বললো
” মা তো বললো দরজা লক করা রটা খুললো কিভাবে ?” শান ভেতরে ঢুকে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে সোহাকে দেখতে পেলো না। মাথার ক্যাপ রেখে ব্যালকনির দিকে অগ্রসর হয়। হাটুর উপর হাত রেখে তার উপর মাথা রেখে বসে থাকতে দেখলো সোহাকে। শান গিয়ে সোহার সামনে বসে সোহার মাথা হাত রেখে আলতো স্বরে ডাকলো
” সোহা !” শানের ডাকে সোহা মাথা তুলে তাকায়। সোহার চোখ মুখ দেখে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে শানের। ব্যালকনির আলো জ্বালানো হয়নি তাই পুরো অন্ধকার থাকলেও এক থেকে দু হাত দূড়ে তামিমের ব্যালকনির আবছা আলোতে সোহার চোখ মুখ ভালোই দেখা যাচ্ছে। সোহা এখনও সকালের পোশাক ছাড়েনি। সোহা কি তার জন্য এতোক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলো ? তাই রাগ করে দরজা খুলেনি ? শানের ভাবনার মাঝেই সোহা শানের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। শানের গলা জড়িয়ে ধরে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে সোহা। শানের চেহারায় বিস্ময়ের রেশের ছড়াছড়ি।
চলবে……….