বৃহন্নলার ডিভোর্স পর্ব-পাঁচ

0
253

#ধারাবাহিকগল্প
#বৃহন্নলার ডিভোর্স
পর্ব-পাঁচ
মাহাবুবা বিথী

রুমির শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে রুম্মানেরও মন খারাপ হয়ে গেলো। এই কয়দিন আপুর সাথে খুব সুন্দর সময় কেটেছে। বাড়িটা আবার খালি হয়ে যাবে। রুম্মান ভেবেছিলো, আসিফের কথাটা এবার আপুকে জানিয়ে দিবে আর ওর সাথে পরিচয়টাও করিয়ে দিবে। ওদের পাশ করে বের হতে আর বছর খানিক লাগবে। আসিফ বলেছিলো,পাশ করার সাথে সাথে বিয়ে করে ফেলবে।
এদিকে রুমির মা একটা জিনিস খেয়াল করলেন।আবীর এই কয়দিনে রুমিকে ফোন দেয়নি। ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে দিনের মধ্যে কতবার ফোন দেওয়ার কথা। উনার টেনশন হচ্ছে। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন সব ঠিক আছেতো।
আবীরকে তো ফোন দিতে দেখলাম না।
উনি রুমিকে জিজ্ঞাসা করলেন,
—-রুমি তোর সাথে কি আবীরের ঝগড়া হয়েছে?
রুমি বলে,
—-কেন মা?
ওর মা বলে,
—ওকে তো ফোন দিতে দেখলাম না।
রুমি বলে,
—মেসেঞ্জারে কথা হয় তাই ফোন দেয় না।
রুমির মা নিশ্চিন্ত হয়।আসলে উনার পরিবারে মাথার উপরে ছাদ নাই তাই খুব চিন্তা হয়। রুমির মা রুমিকে বললো,
—আজতো ছুটির দিন।শুক্রবার। আবীরতো বাসায় আছে। ওকে আসতে বল।দুপুরে খেয়ে তোকে নিয়ে যাবে।
রুমি জানে,আবীর আসবে না তাই মাকে বলে,
—-মা,ওর অনেক ব্যস্ততা আছে।আমি একাই চলে যাবো। আর ওকে ডাকলে তোমাকে আবার বাজারে যেতে হবে, রান্নাও করতে হবে। তোমার শরীরের উপর অনেক চাপ যাবে। এসব ঝামেলার দরকার নেই। মা তোমাকে সুস্থ থাকতে হবে।তুমি ছাড়া আমাদের তো কেউ নাই।
রুমির মা আর কথা বাড়ালেন না। কিন্তু মনের মাঝে একটা অস্বস্তি রয়ে গেলো।
যাইহোক প্রচন্ড মনখারাপ নিয়ে রুমি বিকালের দিকে রুম্মানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে রওয়ানা হলো।
রুম্মান রুমিকে বলে,
—-আপু আর কটাদিন থেকে গেলে পারতে।
রুমি বলে,
—-কটা দিন না আমি চিরজীবন তোদের সাথে থাকতে চাই।
রুম্মান বলে,
—-আপু তোমার কি মন বেশী খারাপ?
রুমি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—- আমার মন নিয়ে তোকে গবেষণা করতে হবে না। আমি এই কয়দিন খেয়াল করেছি তোর মোবাইলে টুংটাং করে সারারাত মেসেজ আসে। আমি পাশে শুয়ে থাকি বলে হয়ত তুই রিপ্লাই দিস না। তবে নিজের অভিজ্ঞতায় বলি আগে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করবি তারপর বিয়ের কথা ভাববি। বিয়ের আগে সবার চোখে একটা রঙ্গিন জীবনের ঠুলী পড়ানো থাকে। কিন্তু বিয়ের পর হঠাৎ ধেয়ে আসা সাইক্লোনে ওই ঠুলী উড়ে যায়। মানুষ তখন চরম বাস্তবতার জালে আটকা পড়ে ছটফট করে। আর সেখান থেকে উদ্ধার হতে অর্থের প্রয়োজন হয়। আর অর্থ থাকলে জীবনটাও অনেক সুন্দর হয়। অর্থ দিয়ে অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেক সময় ভালবাসাও কেনা যায়।
রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে। মাগরিবের সময় পার হয়ে যায়।
রুমিকে ওর শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে রুম্মানও তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যায়। রুমিও রুম্মানকে বাসায় আসার জন্য জোর করেনি। রুমি জানে, ওকে আজ হয়ত অনেক কিছুর মুখেমুখি হতে হবে তাই এইসব নোংরা মূহুর্তগুলো রুম্মানের সামনে রুমি প্রকাশ করতে চায় না।
তবে আজ নিজের মনকে শক্ত করে লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসেছে। কারণ মানুষ শক্তের ভক্ত নরমের যম। ও সহ্য করে বলে দিন দিন ওরা অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। আর ওরা ভেবে নিয়েছে রুমিকে যতটা কষ্ট দিবে ও ততটাই সহ্য করে নিবে। এতে শুধু ওর নিজের অবমুল্যায়ন হয়েছে। তাই এখন থেকে ওর উপর কোন অন্যায় ও আর সহ্য করবে না।
রুমি ডোর বেলটা বাজালো।ওর শাশুড়ী দরজা খুলে বললো,
—–নবাবজাদীর আসার তাহলে সময় হয়েছে। তা বাপের বাড়ি থেকে খালি হাতে আসা হয়েছে।
রুমি বলে,
—আপনার ছেলেই বা কোথাকার রাজপুত্তুর যে তারজন্য আমার নজরানা আনতে হবে।
ওর শাশুড়ী চিৎকার দিয়ে আবীরকে ডেকে বলে,
—-দেখ বোবার মুখে কথা ফুটেছে। মুখে মুখে কেমন তর্ক করছে।
আবীর বলে,
—–যেমন মা তার তেমন মেয়ে।
রুমি আবীরের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,
—-আমার মাকে এখানে টেনে আনবে না। কারণ আমার মাকে যদি তুমি অপমান কর তাহলে তোমার মাকে অপমান করতে আমি এক মূহুর্ত ভাববো না।
আবীর বলে,
—-কেন বলব না। তোমার মা যখন আমাকে অসম্মান করলো তখন তোমার মুখ দিয়ে কথা বের হলো না।
রুমি বলে,
—-অসম্ভব, আমার মা তোমাকে কোন অপমান করেনি। এমন মিথ্যা কথা বলো না।আল্লাহপাক নারাজ হবেন।
আবীর বলে,
—- নতুন জামাই আসলে তাকে সমাদর করে খাওয়াতে হয়। তোমার মাতো সেটা করেনি। তখন আমি অপমানিত হইনি।
রুমি বলে,
—-মা তোমাকে থাকতে বলেছিলো। তুমি রাজি হওনি। শুধু শুধু মাকে দোষারোপ করবে না।
আবীর বললো,
—-ঘুরে এসে সবার সাথে বরং ভাল ব্যবহার করবে সেটা না করে তুমি স্বেচ্ছাচারিতা করছো।
রুমি বলে,
—-প্রতিবাদ করাটাকে যদি তোমাদের কাছে স্বেচ্ছাচারিতা মনে হয় তবে আমি তাই করছি। কারণ তোমাদের অত্যাচারে আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। আমি যত সহ্য করেছি তোমাদের অত্যাচারের মাত্রা ততই বেড়ে গিয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করা ছাড়া আমার কাছে আর কোন অপশন নেই। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে প্রতিটা মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা করার অধিকার রয়েছে।
এমন সময় রুমির শ্বশুর বলে,
—ওর মা একটা কয়েনবাজ মহিলা। ছলচাতুরী করে একটা বাঁজা মেয়েকে তোর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। ওদের নাকি টাকা নেই। যার ছেলে বিদেশে থাকে তার আবার টাকার অভাব হয়।
রুমি অবাক হয়ে ভাবে,শাশুড়ী এই কয়দিনে শ্বশুরের মাথা ভালই ওয়াশ করেছে। রুমিও তাই কথায় ঝাঁঝ মেখে বলে,
—-কে আসলে সত্যিকারের বাঁজা ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করলে জানা যাবে। চলেন আমি এখুনি ডাক্তারের কাছে যাবো। আর আপনারা আপনার ছেলের অসুস্থতা লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে আমার সাথে ক্রাইম করেছেন।
ওর কথা শুনে আবীরের মার অবস্থা এমন হলো যেন জোঁকের মুখে চুন পড়লো। পুরো পল্টি খেলো আবীরের মা।তারপর
আবীরের বাবাকে বললো,
—-তুমি এভাবে আমার বৌমাকে অপমান করতে পারো না। ওর বয়স কম। রক্ত গরম তাই একটু উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে। কিন্তু ও আমার ঘরের লক্ষী। ওর অসম্মান মানে আমার অসম্মান। যাও বৌমা ফ্রেস হয়ে একটু চা বানাও।
রুমি খেয়াল করলো,
—-আবীরের লম্ফ জম্ফ ও হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো।
রুমিরও মনটা একটু খারাপ হলো। ও ভাবছে ও হয়ত একটু বেশীই বলে ফেলেছে। আবীর হয়ত ওর কথায় কষ্ট পেয়েছে।
রুমি ফ্রেস হয়ে কিচেনে গিয়ে সবার জন্য চা বানালো। এমন সময় সাব্বির অফিস থেকে চলে আসলো।রুমি সাব্বিরকে চা খেতে ডাকলো। কিন্তু সাব্বির সাড়া না দেওয়ায় ও চা নিয়ে সাব্বিরের রুমের দিকে যাচ্ছিলো। এমন সময় আবীরের মা বললো,
—- আমাকে দাও আমি চা টা সাব্বিরের রুমে দিয়ে আসি।
রুমি বুঝতে পারলো না সাব্বির কেন ওকে এড়িয়ে চলছে?

রুমি আমাকে বললো,

—–আপু জানেন এই পৃথিবীতে আসলে মুখোশধারী মানুষদের চেনা খুব মুশকিল। কারণ এরা গিরগিটির মতো প্রতিমূহুর্তে রং বদলায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here