#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (২১)
অফিসে গিয়ে নবনী কিছুটা অবাক হলো। তার ডেস্ক পরিপাটি করে সাজানো। নবনী বিরক্ত হয়ে নিজের চেয়ারে বসলো। মেঘের এসব ব্যবহার নবনীর কাছে ভীষণ সস্তা কর্মকাণ্ড বলে মনে হয়। একটা মানুষ নিজের স্ট্যাটাস ভুলে এরকম করবে একটা মেয়ের জন্য এসব ভাবতেই নবনীর বিরক্ত লাগে।
কয়েকদিন ধরে প্রতি দিন সকালে ফ্ল্যাটের দরজা খুললেই একটা ফুলের তোড়া দেখা যায় দরজার সামনে। একটা কার্ডে লিখা থাকে নবনীতা।
নবনীর কাছে এসব ব্যবহার নিতান্ত বাচ্চামি লাগে।
এসব ফুল,গিফট,টেক্সট, ইমোশনাল কথা দিয়ে টিনএজ মেয়েদের পটানো যায় সহজে। কিন্তু জীবনে যে নবনীর মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার স্বীকার,যে জীবনের কঠিন রূপ দেখে ফেলেছে তাকে কি এসব দিয়ে ইমপ্রেস করা যায়?
অবশ্য মেঘের দোষ নেই।সে বেচারা তো জানে না যাকে সে এতো ভালোবাসে তার একটা তিক্ত অতীত আছে।মেঘ ভাবে তার এসব পাগলামি দেখলে নবনী ইমপ্রেস হবে।
নবনীকে ইমপ্রেস করতে অন্যের সাহায্য নিয়েও চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।মেঘের রাগ হয় ভীষণ, বুকে ভীষণ ব্যথা হয়।
একটা মেয়ের জন্য নিজের ক্লাস ভুলে গেছে সে অথচ মেয়েটা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না।চরম হতাশ হয়ে মেঘ রাত কাটায় অনিদ্রায়।
মেঘ আজ অফিসে এসেছে দেরি করে। বাসায় বসে ক্যামেরায় নবনীকে দেখছিলো।দেখতে দেখতে কখন যে বেলা ১২ টা বেজে গেলো মেঘ টের পেলো না।এতোক্ষণে নবনী একটা বার ও মাথা তুলে মেঘের কেবিনের দিকে তাকায় নি।মেঘের ভীষণ কষ্ট হলো।একটা মেয়ে এতটা নির্লিপ্ত কিভাবে হয়?
মুখোমুখি একটা মানুষ বসে যাকে চোখ তুলে তাকালেই দেখতে পায়।সে জ্বলজ্যান্ত মানুষটা আজকে নেই,একবার কৌতুহলী হয়ে ও তাকাবে না সে?
অফিসে এসে নবনীর দিকে না তাকিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো। ভেতর থেকে কেবিনের পর্দা টেনে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বাহির নবনীকে দেখতে লাগলো ল্যাপটপে। জেদ চেপে গেছে তার,কতোক্ষণ নবনী তার কেবিনের দিকে না তাকিয়ে থাকে এটা সে দেখতে চায়।
লাঞ্চের সময় নবনী ক্যান্টিনে চলে গেলো। মেঘ ক্যান্টিনের ক্যামেরাতে এবার নবনীকে দেখতে লাগলো।
পাউরুটি আর ডিম খাচ্ছে নবনী।খাচ্ছে যেনো শুধু খাওয়া দরকার তাই বলে, খাবারের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই তার মূলত।
তামিম বসেছে নবনীর থেকে কিছুটা দূরে,নবনীর দিকে মুখ করে। নিতু বসেছে নবনীকে পেছন করে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তামিমের দৃষ্টি নবনীর দিকে ঘুরে যাচ্ছে।
মেঘের প্রেমিক হৃদয় তাতে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। নবনী কোনো মতে খাবার শেষ করে যেনো পালিয়ে এলো।এসে নিজের ডেস্কে মাথা গুঁজে বসে রইলো।
নিতু আর তামিমের থেকে পালাতেই নবনী তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।কি পরম ভালোবাসা নিয়ে নিতু তামিমের জন্য কফি নিয়ে আসে,খাবার সময় পানি ঢেলে দেয়।নবনী তাকাতে চায় না তবুও তাকিয়ে ফেলে।বুকের ভেতর কাঁপতে থাকে।নিজেকে নিজের গালি দিতে ইচ্ছে করে।
মাঝেমাঝে নবনী ভাবে এরকম ছোট ছোট যত্ন নবনী করতে জানতো না বলেই হয়তো আজ তার জায়গায় নিতু।
দাঁতে দাঁত চেপে মেঘ দেখতে লাগলো সব।ভেতরে অভিমানের পাহাড় জমিয়ে রেখেছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, একবার শুধু তোমাকে পাই,বিশ্বাস করো ২৪ ঘন্টা তুমি শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
সন্ধ্যায় অফিস ছুটি। বের হবার জন্য সব গুছাতে যেতে এই প্রথম বারের মতো নবনীর মনে হলো আজকে মেঘ একবার ও তাকে ডিস্টার্ব করে নি,কোনো কিছুর অযুহাত দিয়ে কেবিনে ডাকে নি,কাজ দেখিয়ে দেয়ার জন্য নবনীর পাশে এসে দাঁড়ায় নি।
ভাবতে ভাবতে নবনী মেঘের কেবিনের দিকে তাকালো।
কতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলো?বড়জোর ৩-৪ সেকেন্ড!
এতেই কেবিনের ভেতর থেকে মেঘের আনন্দের সীমা রইলো না।ভেতরে জমে থাকা সব অভিমান নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেলো। এক পলক তাকাতেক মেঘের মনে হলো তার চাতকের মতো দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।
বাসায় যাবার পথে শিমলা কল দিলো নবনীকে। আগামীকাল নীড়ের জন্মদিন। নবনী মকে সকাল ৭ টার মধ্যেই শিমলাদের বাসাহ যেতে হবে।নবনী অফিসের কথা বলতেই শিমলা বললো,”তোমার ছুটি আমি মঞ্জুর করে রেখেছি।প্লিজ প্লিজ না করো না।আমার তো তেমন কেউ নেই তুমি ছাড়া। খুব ছোট করে আয়োজন করবো। প্লিজ নবনী। ”
নবনীর ইচ্ছে করলো বলতে যে সে যাবে না। কিন্তু কেনো জানি বলতে পারলো না। শিমলা তাকে এতো বেশি পছন্দ করে যে নবনীর পক্ষে শিমলার আবদার প্রত্যাখান করা সহজ হলো না।
আস্তে করে বললো,”ঠিক আছে যাবো,তবে প্লিজ আমাকে যাতে কেউ বিরক্ত না করে। ”
শিমলা বুঝতে পারলো নবনীর সমস্যা মেঘকে নিয়ে।শিমলা আশ্বস্ত করে বললো,”না তেমন কিছু হবে না।তুমি প্লিজ সকালে চলে এসো। আমাকে হেল্প করার মতো তো কেউ নেই আর।মেহমান আসবে সবাই সন্ধ্যা বেলায়।”
নবনী ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।তারপর একটা বাচ্চাদের খেলনার দোকানে গিয়ে নীড়ের জন্য কিছু গিফট কিনলো।
রাতে মেঘ কল দিলো না নবনীকে।নবনী অবাক হলো ভীষণ মেঘের কল না পেয়ে।সারা রাতে মেঘ একটা টেক্সট ও করে নি।
নবনী এবার ভীষণ অবাক হলো। সারাদিনেও মেঘ নবনীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে নি এখন রাতেও না।মেঘের কি শরীর খারাপ? আজ অফিসেও এসেছে দেরি করে। কি হয়েছে আজ?
তারপর নবনীর মনে হলো হয়তো মোহ কেটে গেছে মেঘের তাই আর আজ নবনীর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে নবনী ঘুমিয়ে গেলো। সকালে উঠে হালকা নাশতা করে নবনী শিমলার বাসার জন্য রওয়ানা দিলো। গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে যেতেই নবনী ছোট খাটো একটা ধাক্কা খেলো যেনো।বিশাল প্যান্ডেল খাটানো হয়েছে। একপাশে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে আস লোকেরা স্টেজ সাজাচ্ছে,মরিচ বাতি,বেলুন,রঙিন নেট দিয়ে সব সাজানো হচ্ছে অন্য পাশে রান্নাবান্নার জন্য সব গুছানো হচ্ছে।
নবনীর মনে হলো ভুল করে সে হয়তো কোনো বিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়েছে।শিমলা যেনো নবনীর অপেক্ষায় ছিলো। ছুটে এসে নবনীকে জড়িয়ে ধরলো শিমলা।তারপর বললো,”আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি নবনী।”
নবনীর লজ্জা লাগলো শিমলার এরকম কথায়।কোথায় তার অবস্থান আর কোথায় শিমলার!
আজকাল কেউ নবনীকে আপন করতে চাইলে নবনীর ভীষণ ভয় হয়।মনে হয় ঠিকই একদিন তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে।শিমলার এই উচ্ছ্বাস দেখে নবনীর আবারও তাই মনে হলো। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে এমনি এমনি ভয় পায় না।
শিমলার সাথে বাসার ভেতর ঢুকে নবনী আরেকবার চমকালো।বাসা ভর্তি মেহমান।দেখেই মনে হচ্ছে সবাই অভিজাত পরিবারের মানুষ। সেখানে নবনী কিছুই না।এতোক্ষণের লজ্জা অস্বস্তিতে রূপ নিলো।
সবাই নবনীর দিকে তাকিয়ে আছে। নবনী এখানে দুজনকে চিনে শুধু।একজন শিমলার মা আরেকজন শিমলার মামী,মেঘের মা।সেদিন শিমলা রাতে নবনীকে কল দিয়ে বলেছে মেঘের মায়ের কথা।
মাসুমা বেগম মুখে ফেসপ্যাক দিয়ে চোখে দুই অইস শসা দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে ছিলো।নবনীর নাম শুনতেই চোখ থেকে শসা সরিয়ে তাকালেন।টিয়া কালার শাড়ি পরা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মাসুমা বেগমের মন আনন্দে ভরে উঠলো। উঠে গিয়ে নবনীকে নিয়ে এলেন তার কাছে।সোফায় জায়গা খালি নেই কেউ শুয়ে আছে কেউ বসে আছে। মাসুমা বেগমের পাশে একটা মেয়েও মুখে ফেসপ্যাক দিয়ে শুয়ে ছিলো। মাসুমা বেগম খেঁকিয়ে বললেন,”এই এই মেঘলা,সর সর এখান থেকে। নবনী এসেছে। ওকে বসতে দে।”
মেঘলা নামের মেয়েটা চোখ থেকে শসা সরিয়ে নবনীর দিকে তাকালো।তারপর উঠে ফ্লোরে বসলো।
মাসুমা বেগম ফিসফিস করে বললেন,”আমার মেয়ে মেঘলা বুঝছো?ভীষণ ভয় পায় আমাকে।”
নবনী কিছু না বলে মুচকি হাসলো। মাসুমা বেগম দুনিয়ার সব কথা নিয়ে বসলেন। নবনী জিজ্ঞেস করলো,”আপনার ছেলে,স্বামী ওনারা আসবেন না?”
মাসুমা বেগম মুখ বাঁকিয়ে বললো,”ওদের কথা আর বলো না।আমার কোনো সম্পর্ক নেই ওদের সাথে। আমার ছেলে না-কি ওর অফিসের একটা মেয়েকে ভালোবাসে,পছন্দ মানে যেই সেই পছন্দ না।একেবারে তোমাকে না পেলে মরে যাবো টাইপ পছন্দ বুঝলা।কিন্তু মেয়ে না-কি কিছুতেই পাত্তা দেয় না।ঠিকই তো করেছে মেয়েটা,ওর মতো ধলা বিলাইরে একটা শিক্ষিত মেয়ে কেনো পাত্তা দিবে বলো তো?আর ওর বাবা আছে না সাথে,নিজে তো ছ্যাঁকা খাওয়া মানুষ এখন সে চাচ্ছে তার পরিবারেও সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক,এজন্য ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে সে।
তোমাকে একটা গোপন কথা বলি শুনো মা,সেদিন বেশি দূরে নেই যেদিন ওরা বাপ ছেলে একসাথে মিলে গান গাইবে ঘুমাতে পারি না সারারাত ধরে, বুকের ভেতর হাহাকার করে।”
বলতে বলতে মাসুমা বেগম হা হা করে হাসতে লাগলেন।
নবনীর ভীষণ লজ্জা লাগলো। উনি যদি জানে সেই মেয়েটা ও নিজেই তাহলে কি মনে করবে।
মাসুমা বেগম হাসি থামিয়ে বললেন,”শুনো মা,আমার ছেলে হচ্ছে উন্নত প্রজাতির উচ্চ শিক্ষিত গাধা।এর মাথায় একবার যেটা ঢুকে সেটা আর বের হয় না।নিজের লক্ষ্য না পূরণ হওয়া পর্যন্ত বাপের মতো হাল ছাড়ে না।
তবে গাধা হলেও মানুষ হিসেবে সে কিন্তু খারাপ নয়।”
নবনী কিছু বলতে পারলো না।
মাসুমা বেগম এবার ফিসফিস করে বললো,”এবার তোমাকে আরেকটা সিক্রেট বলি মা,ওই গাধা তো এই প্রেমে কিছুতেই সফল হতে পারবে না।আমি চক্করে আছি মেয়েটা কে সেটা জানার জন্য।আমি নিজে গিয়ে ওর প্রেমে ভাঙানি দিবো তাহলে। ওর বাপ আমারে থ্রেট দেয়
অল কিছু দিনের মধ্যে ওই মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিয়ে সে নাকি নাতি নাতনি থাকবে।আমাকে না-কি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিবে।ভাবতে পারছো তুমি? এই মাসুমা বেগকে নিয়ে ওই লোক এই কথা বললো!
আমি কি যেই সেই মানুষ?
আমি ও তাই ঠিক করেছি নিজের পছন্দের মেয়ের সাথে আমি ছেলেকে বিয়ে দিবো।তারপর মেঘের বাবাকে দেখিয়ে দিব আমি মাসুমা বেগম কি চিজ!”
নবনীর সারা শরীর ঘামতে লাগলো এসব শুনে। কিছুক্ষণ পর শিমলা এসে নবনীকে নিয়ে গেলো নাশতা করার জন্য।নবনী উপরে উঠে শিমলার ঘরের দিকে যাবে সেই সময় শুনতে পেলো কোনো নারী কণ্ঠ বলছে,”প্লিজ মেঘ,প্লিইইইজ….আমাকে আর কতো দিন ঘুরাবি এভাবে। আমি সত্যি পারছি না আর তোকে ছাড়া। এবার একটু আমার দিকে তাকিয়ে দেখ না একবার। “বলতে বলতে মেয়েটা হাঁচি দিতে লাগলো।
মেঘ বিরক্ত হয়ে বললো,”তোর সাথে প্রেম কোনো মানুষ করবে?সারাদিন হাঁচির উপরে থাকিস,দেখা যাবে বিয়ের পর তোর সাথে আমি একান্ত সময় কাটাতে যাবো সেই সময় তুই হাঁচতে থাকবি।আমার যাবে মেজাজ বিগড়ে। এসব আমি সহ্য করতে পারবো না রুনা। ”
রুনা কিছুটা দমে গিয়ে বললো, “তুই তো জানিস আমার ডাস্ট অ্যালার্জির কথা।এজন্য আমার হাঁচি পায়, এজন্য তুই এভাবে আমাকে প্রত্যাখ্যান করবি?
তুই ভুলে গেলেও আমি ভুলি নি ছোট বেলায় পুতুল খেলার সময় থেকে আমি তোকে ভালোবাসি।তোর প্রেমে দিওয়ানা। সবসময় তুই এসব নিয়ে আমাকে কথা শুনাতি।তোর সব কথা শুনেও আমি তোকে ভালোবাসি বলে তোর পিছনে পড়ে আছি মেঘ।আমাকে ফিরিয়ে দিস না।”
মেঘ গম্ভীর হয়ে বললো, “আমি জানি রুনা তুই আমাকে ভালোবাসিস,কিন্তু তুই জানিস না আমি ও অন্য একজন কে ভালোবাসি।শুধু ভালোবাসি না রুনা,প্রচন্ড রকম ভালোবাসি।তাকে প্রথম দেখেছিলাম রাস্তায়,আমার গাড়ি থেকে কাদা ছিটকে গিয়ে তার সারা শরীর নোংরা হয়ে গেলো। লুকিং গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে আমার যে কি হলো আমি জানি না।কবিগুরুর মতো আমি ও ওর চোখে আমার সর্বনাশ দেখতে পেয়েছিলাম।যেই সেই সর্বনাশ না,একেবারে সর্বগ্রাসী সর্বনাশ।ওকে দেখার পর ১ সপ্তাহ আমার মাথা শুধু ঝিমঝিম করতো। তারপর থেকে আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে,ইনসোমনিয়া হয়ে গেলো । এক সপ্তাহের মতো আমি জ্বরে ভুগেছি রুনা নবনীতাকে ভেবে ভেবে।জ্বরের ঘোরে আমি শুধু নবনীতাকে ডেকে গেছি।বারবার মনে হতো নবনীতা যদি একটা বার আমার কপালে হাত রাখতো তবে আমার জ্বর সেরে যেতো। কেউ জানে না মেঘলা ছাড়া। শুধু মেঘলা জানে আমার শরীর কতোটা খারাপ হয়ে গেছে। রাত ভরে মেঘলা আমার মাথায় পানি দিতো।লজ্জায় বাবা মাকে এসব বলতে পারি নি,জানতে পারলে ওনারা সবাই কষ্ট পাবে।
তুই জানিস না রুনা,আমার মতো এরকম একজন ইগো নিয়ে থাকা মানুষ রাতে বাসায় না এসে নবনীতার বাসার সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি তাকে একবার দেখার জন্য। আমি খেতে পারি না রুনা,ঘুমাতে পারি না।আমার চোখের নিচে তাকিয়ে দেখ,কালি পড়ে আছে। আমার কাছে ধ্যান-জ্ঞান সব হয়ে গেলো নবনীতা। আমি ছ্যাচড়া ছেলেদের মতো আমি ওকে কল দিয়ে,মেসেজ দিয়ে ও ডিস্টার্ব করতে থাকি।ভালোবাসা মনে হয় এরকমই রুনা।
আমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছি রুনা।নবনীতাকে না পেলে আমি একেবারে পাগল হয়ে যাবো।আমার অফিসের কাজে মন বসে না,নবনীতা ছাড়া আর কিছু মাথায় ঢুকে না।আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে রুনা।ওরা আমাকে ডাকে চণ্ডীদাস বলে। আমি ওসব গায়ে মাখি না।যার যা ইচ্ছে বলুক।তবুও আমার নবনীতাকে চাই।প্রেমে পড়লে মানুষ তার স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনা ও হারিয়ে ফেলে।লোক লজ্জা ভুলে যায়। আমি ও সব ভুলে গেছি।
আমি তোর ভালোবাসা বুঝতে পেরেছি,আশা করছি তুই ও আর কখনো আমাকে এসব নিয়ে কথা বলতে আসবি না।আমি তোর আবেগকে সম্মান করি।তুই আমার ফুফাতো বোন,সেই সম্পর্ক আজীবন অটুট থাকুক।এর বাহিরে আর কিছু মনে রাখিস না।”
নবনীর সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। শিমলা নবনীকে আসতে না দেখে আবারও নিচের দিকে যাচ্ছিলো, সিড়ির উপরে দেখলো নবনী দাঁড়িয়ে আছে অপ্রস্তুত হয়ে।
শিমলা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কোনো সমস্যা নবনী?”
নবনী মাথা নেড়ে বললো,”না,চলুন।”
নবনী নুডলস নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো,সেই সময় মেঘলা এলো উপরে। নবনীর পাশে বসে শসা খেতে খেতে বললো, “ভাবী,আমি জানি তুমিই যে আমার ভাইয়ার পছন্দ করা সেই মেয়ে।শুধু মা জানে না।ভয় পেও না,মা’কে আমি বলবো না কিছু।”
নবনীর চামচ নাড়াচাড়া বন্ধ হয়ে গেলো। মেঘলা ফিসফিস করে বললো,”আরেকটা কথা শুনো ভাবী,আমার মা একটু পাগলাটে টাইপের তো,এজন্য কাউকে তার ভালো লাগলে তার কাছে সব কথা বলে দেয়।আমার মা মনে মনে ভাইয়ার জন্য পাত্রী হিসেবে কাকে পছন্দ করেছে জানো?
তোমাকে।”
বলেই মেঘলা শসা নিয়ে গান গাইতে গাইতে চলে গেলো। নবনীর মেরুদণ্ড বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেলো।
নবনী হতবিহ্বল হয়ে বসে আছে সেই মুহুর্তে মাসুমা বেগম এলেন।নবনীর পাশে বসে বললেন,”ঘটনা না তো একটা ঘটে গেছে। আমার গাধাটা নাকি আজকে সন্ধ্যায় গান গাইবে নীড়ের জন্মদিন উপলক্ষে। তার সাগরেদরা সবাই কলকব্জা যন্ত্রপাতি নিয়ে তো হাজির।আচ্ছা নবনী,কোন ব্রান্ডের তুলো ভালো হবে সবার কানে গুঁজে দেয়ার জন্য?
আমি অলরেডি এম্বুল্যান্সের জন্য কল দিয়ে রেখেছি,খোদা না করুক ওর ষাঁড়ের মতো গলার গান শুনে যারা অসুস্থ হয়ে যাবে তাদের তো হসপিটালাইজড করতে হবে ইমিডিয়েটলি। আমি অনুষ্ঠান শুরু হলে সবার কাছে আগেই ক্ষমা প্রার্থনা করে নিবো,আমার ছেলের গান শুনে কেউ বিরক্ত হলে যেনো নিজ গুণে ক্ষমা করে দেয়।মা হিসেবে ছেলের জন্য এটুকু তো আমি করতেই পারি তাই না।”
নবনী নিজের হাসি থামাতে না পেরে হাসিতে লুটিয়ে পড়লো।
মাসুমা বেগম আগ্রহ নিয়ে নবনীকে দেখতে লাগলেন।
চলবে……
রাজিয়া রহমান
(অসুস্থতা নিয়ে গল্প লিখছি, রিচেক দেয়ার সময় পাই নি।ভুল ভ্রান্তি মাফ করবেন।আগামী দুদিন হয়তো গল্প দিতে পারবো না।চেষ্টা করবো,না পারলে কেউ রাগ করবেন না।)
join my fb group: রাজিয়ার গল্প কুটির