বৃহন্নলার ডিভোর্স পর্ব-এগারো

0
267

#ধারাবাহিকগল্প
#বৃহন্নলার ডিভোর্স
পর্ব-এগারো
মাহাবুবা বিথী

রুমির বরাবর ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস। ফজরের নামাজ পড়ে দিনটা শুরু হলে রুমির খুব ভাললাগে। যদিও সব সময় হয়ে উঠে না। আজ ও চাকরিতে জয়েন করবে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নিয়েছে। সকালের নাস্তা বানিয়ে দুপুরের রান্নাটাও একটু এগিয়ে রাখবে। কাজের খালাকেও সকালে আসতে বলেছে। রুমি অফিসে যাওয়ার আগেই ঘর মুছে খালা যেন চলে যেতে পারে। যা দিনকাল পড়েছে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। মা বাসায় একা থাকে তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাসায় রুমি স্থায়ী লোক রাখতে পারে না। ইদানিং বাসায় গৃহকত্রীর হাতে যেমন গৃহকর্মী খুন হন তেমনি গৃহকর্মীর হাতেও গৃহকর্ত্রীও খুন হন।

রুমি সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে মায়ের ঘরে গিয়ে বললো,
—-মা আমার জন্য দোয়া করো। আজ প্রথম অফিসে যাচ্ছি।
—-দোয়া ছাড়া দেওয়ার মতো আমার আর কিছু নাইরে মা।
—-আম্মু ঐ অমূল্য রতনটাই তোমার কাছে চাই। মা আসি।
রুমির দিকে তাকিয়ে ওর মা ভাবে
—-মেয়েটা আমার অসম্ভব ভালো। অথচ ওর ভাগ্যটা কি রকম হয়ে গেলো?
কথায় আছে,
“অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর
অতি বড় সুন্দরী না পায় বর”
কি জানি আমার মেয়েটার ভাগ্যে কি লেখা আছে?
রুমি অফিসের দিকে রওয়ানা হলো। ওর অফিসটা মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে একটি পাঁচতলা ভবনে।
রুমি অফিসে ঢুকে ওর ফুফুর সাথে দেখা করলো। নিজের কাজের দায়িত্ব বুঝে নিলো। এটা এনজিও হওয়াতে ফিল্ডওয়ার্ক করতে হয় বেশী। তারপর ওর বসের সাথে দেখা করতে ওনার রুমে গেলো।
—May I come in sir
—-yes! আপনি কি আজই জয়েন করলেন?
—-হ্যাঁ স্যার।
কাজের প্রজেক্ট নিয়ে কিছু কথাবার্তা হলো।
বসটাকে দেখে রুমির একদম ভালো লাগেনি। কেমন যেন লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো। রুমির শরীরটাও ঘিন ঘিন করে উঠলো। ওর বমি উঠে আসতে চাইলো।
রুমি পরিচিত হয়ে ওনার রুম থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলো। যতক্ষণ রুমি ওনার সামনে বসেছিলো নজরটা রুমির বুকের দিকেই ছিলো। মেয়েরা নাকি পুরুষের খারাপ নজরটা বুঝতে পারে। ওনাকে রুমির সুবিধার মনে হয়নি। খুব সাবধানে থাকতে হবে। রুমি তো এই মূহুর্তে চাকরি ছাড়তে পারবে না। কারণ এই অফিসের সাথে এক বছরের কন্ট্রাক্ট করা হয়েছে। অফিসের অন্যান্য কলিগদের সাথে ব্যস্ততার মাঝে ভালই সময় পার হলো। রুমির পাশের ডেস্কে মারিশা বসে। মেয়েটা বেশ মিশুক। শুধু একটু বেশী কথা বলে। রুমি ভাবছে বেশী কথা বলার একটু সুবিধা আছে। অনেক গোপন কথা বলা হয়ে যায়। মারিশাও বললো,
—-রুমি তোমার সাথে বসের কথা হয়েছে?
—–হ্যা হয়েছে।
—–তোমার ওনাকে কেমন লেগেছে?
—–বসেরা যেমন হয় তেমন
—–জ্বীনা আমি তোমার সাথে এক মত না। সব বসেরা একরকম হয় না। এই বসের আলুর দোষ আছে।
—–ওটা আবার কি দোষ?
—–ফিডারে মনে হয় দুধ খাও। কিছু মনে হয় বুঝ না?আরে লুইচ্ছা বেডা। মেয়ে মানুষ দেখলে ওনার জিহ্বা লক লক করে। বড়লোকদের বাড়ির গেটে দেখবা, অনেক সময় লেখা থাকে। কুকুর হইতে সাবধান। আর এই অফিসে বস হইতে সাবধান থাকতে হবে।
রুমি নিজের কাছেও বসের হাবভাব ভাল লাগেনি। ফাইলটি যখন বসের হাতে দেই উনি আমার হাতটা ধরে ফেলে। আমি অস্বস্তি বোধ করলে উনি এমন ভাব করলো ভুলক্রমে হাত লেগে গেছে।
অফিস শেষে ছুটির সময় হঠাৎ একটা গাড়ি সামনে এসে দাঁড়ায়।
রুমি একটু অবাক হয়ে গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। জানালায় কালো কাঁচ থাকার কারনে ভিতরের আগুন্তক কে চেনা যাচ্ছিলো না।
গাড়ির কাঁচ খুলে মুখটা বাড়িয়ে বললো,
—চলেন একটা লিফট দেই
—–ধন্যবাদ স্যার। ওনার তাকানোটা দেখলেই রুমির বিরক্ত লাগে। তারপরও ভদ্রতা বজায় রেখে বললো
—-আমার একটু বাইরে কাজ আছে। বাজার করতে হবে। আপনার বাসাতো গুলশান। আমার মিরপুর এক নাম্বার। আপনার ঘুর পথ হবে।

মিরপুর এক নাম্বারের কথা শুনে স্যার আগ্রহ দেখালো না। রুমির তাতে সুবিধাই হলো। তবে একটা অস্বস্তি রয়ে গেলো।
অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে রুমি মায়ের ঘরে গিয়ে বললো,
—-সারাদিন বাসায় একা থাকতে তোমার খারাপ লেগেছে?
—–নারে মা। বিকালে রুম্মান বাসায় ফিরেছে। তখন ওর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করেছি।
—–মারে,এখন তুই তোর জীবনটাকে নিয়ে ভাবতে পারিস। সময়তো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। রায়হান ছেলেটা খুব ভাল। আর ওর মাও তোকে খুব পছন্দ করে।
—–মা, আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি, ভবিষ্যতেও বলবো নিজেকে পরিপূর্নভাবে প্রতিষ্ঠিত না করে আমি বিয়ে করবো না। এতে যদি রুম্মান আগে বিয়ে করতে চায় এতে আমার কোন আপত্তি নাই। আমি ল,তে ভর্তি হয়েছি। এবার পড়াশোনাটা ভালভাবে করতে চাই।
রুমির মা আর কিছু বললেন না। আসলেই রুমিকে একটু সময় দেওয়া উচিত।

__________
রুমির বসের নাম আলম খান। সবাই ওনাকে আলম সাহেব বলে ডাকে। লোকটার স্বভাবচরিত্রে আসলেই গোলমাল আছে। অফিসের শেষ মূহুর্তে এসে রুমির হাতে কাজ ধরিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে পুরো অফিস খালি হয়ে যায়। রুমির ভয় লাগে তাই বুদ্ধি করে রুম্মানকে ফোন দিয়ে বলে,
—–রুম্মান তোর ক্লাস শেষ।
—–হ্যা আপু
—–তাহলে তুই আর আসিফ আমার অফিসে চলে আয়।
ওরা যথাসময়ে অফিসে চলে আসে। আলম সাহেব ওদেরকে দেখে বিরক্ত হয়ে রুমিকে জিজ্ঞাসা করলো,
—–ওরা অফিসে কেন?
—–স্যার একসাথে বাড়ি ফিরবো।
কোনক্রমেই রুমিকে বাগে আনতে পারছে না। এদিকে রুমিও ওর ফুফুকে কিছু বলতে পারছে না। ওনার আচরণে ঘাপলা আছে রুমি বুঝতে পারছে কিন্তু ওর হাতে তো কোন প্রমান নেই। প্রমান ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না।
তাই রুমির নিজেকেই সাবধান থাকতে হচ্ছে।ওদের অফিস থেকে একটা টিম কক্সবাজার যাবে। সেখানে আলম সাহেব ওর ফুফুর সাথে রুমির নামও আছে। এছাড়াও দুজন মহিলা কলিগ আরও দুজন পুরুষ কলিগ যাবে। সবাই একসাথে দলবেঁধে যাওয়াতে রুমির টেনশন কমলো।

যথাসময়ে ওরা কক্সবাজার পৌছে গেলো। ওরা সবাই কক্সটুডেতে উঠেছে। হোটেলে লাগেজ রেখে সবাই বীচে চলে গেলো। তখন সন্ধে হয়ে আসছিলো। এখনি সূর্যডুববে।তাই সবাই বীচে গেলো। রুমিও ওদের সাথে ছিলো। সবাই খুব আনন্দ করছে। রুমির ফুফু রুমিকে ডাকলো,
—–এই রুমি এদিকে আয়। চল একটু পানিতে নামি। —–না,ফুফু ইচ্ছে করছে না। আমি ছাতার নীচেই বসে থাকি।
ভীড় এড়াতে একটু নিরিবিলি জায়গায় রুমি বসে আছে। এসময়টা এমনিতেই পর্যটকদের ভীড় থাকে। বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। কান পাতলেই শোনা যায় সমুদ্রের ফুঁসে উঠা গর্জন। কাঠফাটা রোদের পর সন্ধার শীতল বাতাসে শরীরটা জুড়িয়ে যায়।
সন্ধার আলো আঁধারীতে চারিদিক ঢেকে আছে। এমন সময় লুইচ্ছাটা রুমিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-তুমি তো ডিভোর্সি।স্বামীর সঙ্গ পেতে ইচ্ছে করে না।
—-রুমি একদলা থুথু ছিটিয়ে দিয়ে একঝটকায় সরে গেলো।
এইভাবে রুমি রিঅ্যাক্ট করবে শয়তানটা বুঝতে পারেনি।
এমনসময় ওখানে রুমির ফুফুও চলে এসে বলে,
—-তুই আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিস। তোকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
রুমি কিছু বলার আগেই আলম সাহেব বললো,
—–চিন্তার কিছু নেই নাজনীন। তোমার ভাতিজী আবার আমার অফিসের কর্মচারী। ওর দিকে তো আমার নজর রাখতেই হবে।
সবাই মিলে হোটেলে ফিরে গেলো। মানসিক চাপ নিতে না পেরে রুমির প্রচন্ড জ্বর আসলো। সারা রাত রুমি ঘোরের মধ্যে ছিলো। ভোরের দিকে জ্বরটা ছাড়লো। রুমির ফুফু রুমির সাথেই ছিলো। সকালে সবাই ফিল্ডে চলে গেলো। রুমি একাই রুমে ছিলো। ওর শরীর এতো দূর্বল ছিলো যে ওর হাঁটার শক্তি ছিলো না। ও রুমের ছিটকিনি লাগিয়ে জেগেই ছিলো। কেন যেন মনে হচ্ছে শয়তানটা আবার আসবে। ঠিক ঘন্টা তিনেক পর কে যেন ওর দরজায় নক করছে। রুমি ঘুমের ভাণ করে বিছানায় পড়ে থাকলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here