এল_এ_ডেইস পর্ব ১৬

0
385

#এল_এ_ডেইস
পর্ব ১৬
লেখনীঃ মাহীরা ফারহীন

‘না, না, না, না, না! উচ্চস্বরে বলল সাইলোহ।
মাহীন অনুনয়ের স্বরে বলল, ‘প্লিজ। এই একটা মাত্র ফেভার চাচ্ছি।’
‘আচ্ছা দেখো আমি রাজি। আর সাইলোর ব্যাপারটা তুমিই সামলাও।’ টেবিলের ওপর উঠে বসে নির্বিকার চিত্তে বলল নায়েল।
মাহীন সাইলোহ ও নায়েলের সঙ্গে ক্লাসে বসে কথা বলছে। প্রচুর চিৎকার চেচামেচির শব্দ চারিদিকে। ঘন্টা মাত্র পরেছে পরের ক্লাসের জন্য। যেকোনো সময় স্যার ক্লাসে আসবেন। খোলা জানালা দিয়ে পরিষ্কার সুবিস্তীর্ণ নীল আকাশ চোখে পরে। বেশ কিছু ছেলে মেয়েরা এক ডজন কাগজ মুড়িয়ে বল বানিয়ে ছোড়াছুড়ি করছে। মাহীনের টেবিলে এসে একটা পরল। সাইলোহ বলল,
‘দেখো মাহীন তুমি যেটার কথা বলছো ওটা আমার স্বপ্নেরও অতীত। কিছুতেই এটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।’

মাহীন বলল,’না, না দেখো নায়েলও তো তোমার সাথেই থাকবে তুমি তো আর একা নও। এবং আমি তোমাদের ফ্রেন্ড হওয়ার পর কিন্তু এখন পর্যন্ত এটাই ফার্স্ট কোনো ফেভার চাচ্ছি।’

নায়েল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,’সাইলোহ রাজি হয়ে যাও না। এত খিটখিট করো কেন?’

সাইলোহ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। তারপর বললো,
‘না তবুও না। তোমরা তো জানো আমার ওকে ভালোই লাগে না। সেখানে এমন একটা কাজ। ওফ কি মুশকিল!’

মাহীন অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকায়। সাইলোহ ওর মুখ দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ইতস্তত করে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু এটাই এমন কোনো কাজের জন্য লাস্ট। এরপর এসবের জন্য কিন্তু আর কিছু করবো না।’

মাহীন বলল,’ঠিক আছে। এমনিতেও এটাই লাস্ট স্টেপ আমার।’ তারপর একটু থেমে বলল,’অল দ্যা বেস্ট গাইজ। কোনো গন্ডগোল করো না আবার।’

নায়েল বলল,’ওকেই ডোন্ট..’

ওর কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই ক্লাসে স্যার ওয়ামস্লি প্রবেশ করলেন। নায়েল লাফ দিয়ে বেঞ্চ থেকে নামল। এখন জিওগ্রাফি ক্লাস। যেটা সাইলোহ ও মাহীনের একসাথে পরেছে। কিন্তু নায়েলের এখন ম্যাথ ক্লাস। ফলে সে এখান থেকে কিভাবে বের হবে তাই কূল কিনারা করতে ব্যস্ত এখন।
.
.
.
টেবিলে বেশ কিছু বই খাতা গুছিয়ে রাখা আছে। রায়েদ সেগুলো নিজের ব্যাগে অতি যত্নের সঙ্গে ঢুকিয়ে রাখছে। নায়েল ও সাইলোহ এসে দুজন টেবিলের সামনে দাঁড়াল তবে রায়েদ একবারও মুখ তুলেও চাইল না। গম্ভীর মুখে নিজের কাজই এক মনে করে যাচ্ছে। নায়েল হালকা ভাবে গলা খাঁকারি দিল। কিন্তু তবুও রায়েদ ভ্রুক্ষেপহীন। নায়েল দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বললো,

‘রায়েদ আমরা তোমার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি। আশা করি তুমি এতটুকু সময় দিতে পারবা।’

ব্যাগ গুছানো শেষে ও উঠে দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে উত্তর দিলো ‘পারবো না।’

সাইলোহ কিছুটা তিক্ত কন্ঠে বলল, ‘দেখো তুমি, মাহীন বলেছে বলে আমরা এসেছি। নাহলে আমাদেরও এখানে আসার কোনো ইচ্ছে…’

নায়েল ওর হাতে গুঁতা দিয়ে ওকে থামিয়ে দিল। তারপর নিজে বলল, ‘দেখো আসলে সামনে পিকনিক জানোই তো। যদিও আমরা জানি তুমি কখনো পিকনিক জয়েন করো না। তবুও আমরা তোমাকে ইনভাইট করতে এসেছি মাহীনের তরফ থেকে।’

রায়েদের কথাটা শুনে এক তিক্ত অনুভূতি হলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেছনের জানালার পাশের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে। বলল,

‘ওহ, মাহীন তোমাদের পাঠিয়েছে? এতটুকু নরম কন্ঠে বলল। তারপর তিক্ত কন্ঠে বললো, ‘আমি বুঝলাম না তোমরা কি ভেবে আর কি এক্সপেক্ট করে এখানে এসেছো। কিন্তু তোমরা আমার উত্তর জানো।’ বলে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েও থেমে গেল। আবার মুখ ফিরিয়ে বলল, আর হ্যা তোমাদের বান্ধবীকে বলো আমাকে যেন এসব প্রস্তাব দিয়ে আর বিরক্ত না করে।’

বলেই সেলফগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে লাগল। নায়েল ও সাইলোহ ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল। সাইলোহ ঝাঁঝাল কন্ঠে বলল,

‘ওয়াও নায়েল! দেখো কি সুন্দর একটা ঘটনা ঘটল। মাহীন আমাদের এভাবে অপমানিত হতে পাঠিয়েছে? অবশ্য ওর দোষ নেই। আমরা তো জানতামই রায়েদ চিরকাল এমনই। মাহীন যে ওকে কি ভাবে সেটাই তো অবাক হওয়ার মতো বিষয়।’

নায়েল মাথায় হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল, ‘কি জানি আমিও জানতাম এমনই হবে। তবুও মাহীন ওর সম্পর্কে গত কয়েক দিন যেভাবে যা বললো তাতে আমার ধারণা একটু পাল্টেছিল।’

‘দেখো এই রায়েদ কখনো বদলাতে পারে না। তুমি যতই ঘষামাজা করো কয়লা তো আর হিরা হয়ে যাবে না! এখন চলো এখান থেকে।’ তীব্র কন্ঠে বলল সাইলোহ।

করিডোর ধরে রায়েদ হেঁটে যাচ্ছে দ্রুত পদক্ষেপ ফেলে। হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ির কাছাকাছি এসে পরল। সামনে সিঁড়ি দিয়ে প্রায় লাফাতে লাফাতে একটা ষষ্ঠ গ্রেডের ছাত্র ওপরে উঠছিল। রায়েদ ধমক দিয়ে বলল,

‘আস্তে উঠতে পারো না!’

ছেলেটা থমকে দাঁড়ালো। তারপর মিনমিন করে বলল,
‘সরি।’ বলেই তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল।

রায়েদ সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামছে। বুকের ভেতর তার বড় অস্থিরতা। তিক্ত পানির ঢেউ তিরতির করে ঢুকে যাচ্ছে মনের ভেতর। দ্রুত হাঁটার ফলে হৃদপিণ্ড ধকধক করছে। কড়া রোদের নিচে হঠাৎ করেই বোধহয় বাতাসের আদ্রতাটা বেড়ে গেল। কেমন হাসফাস লাগছে। ‘কি আশ্চর্য! মাহীন! মাহীন কি ভেবে ওদের দুজনকে এখানে পাঠাল! ইনভাইটই যখন করতে চেয়েছে নিজে এসেও বলতে পারত। হ্যা না যেটাই আমার উত্তর হোক না কেন আমি ওকেই বলতাম। কিন্তু নিজে না এসে এমন একটা ঘটনা ঘটানোর কি দরকার ছিলো? নিজেকে কি মনে করেটা কি ও? আমাকে এভাবে অপমান করল কেন ও? তার চাইতে কিছু না করলেই পারত। আমি কি ওর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতাম যেমনটা অন্যদের সাথে করি? ও আমার সাথে যেমনটা ব্যবহার করতো তার পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট স্বাভাবিক আচরণ করেছি। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার কয়েকদিন আমার আশেপাশে ঘুরে বেড়াল। কি অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা করল। কিন্তু কেন? হঠাৎ করে ওর বোধহয় আর ভাল্লাগছে না এসব। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। আমার সাথে কারোও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে তো তার দুনিয়ার ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমি মানুষটাই এমন জটিল। কিন্তু দোষটা আমারও। আমার ধারণা ভুল ছিলো। ও আর অন্য সবার মধ্যে হয়তো পার্থক্য এটাই যে ওর সাহস আছে। ধৈর্য্য শক্তি অন্যদের তুলনায় বেশি কিন্তু তাই বলে এতটাও না যে আমি ধীরে ধীরে কাউকে বিশ্বাস করার সময়টা নেব এবং ততক্ষণ সে অপেক্ষা করবে।’ ভাবতে ভাবতেই স্কুল বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করল। এবং দ্রুত গতিতে সিঁড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় উঠে গেল।
.
.
.
.
বেলা পৌনে একটা বাজে। এই সময়ের দিকে স্কুলগুলো সব ছুটি হয়ে গিয়েছে। ছাত্র ছাত্রীরা সব বাড়ি ফিরছে বলে রাস্তায় জাম। এবং চারিদিকে হইহট্টগোল। মাহীনের বাড়ির সামনে দিয়ে বেশ কয়েকটা হলুদ স্কুল বাস চলে গেল। মাহীন বাসায় ঢুকছে মাত্র। বাড়িতে এই সময় শুধু মিসেস নাসরিনই থাকেন। মি.মোর্শেদ অফিসে থাকেন। এবং নাইম ভার্সিটি তে থাকে। যদিও সে দেড়টার মধ্যে চলে আসবে। মাহীন বাসায় ঢুকে ক্লান্ত ভঙ্গিতে জুতা খুলে রেখে সোফায় এসে বসল। গরম লাগছে খুব। পায়ের মোজাটাও খুলে ফেললো। মিসেস নাসরিন নিজের কামরা থেকে বেরিয়ে আসলেন, ‘কিরে বাসায় আসছিস অবশেষে? আজ এত দেরি হলো কেন?’
মাহীন ম্লান কন্ঠে বললো, ‘ধীরে ধীরে সাইকেল চালাচ্ছিলাম।’
‘তুই বোধহয় অনেক ক্লান্ত। এখন কিছু খাবি নাকি আগে গোসল করে নিবি?’
‘গোসল করেই তো স্কুলে গিয়েছিলাম। এখন আর গোসল করার ইচ্ছা নাই। এখন না পরে খাব’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু খিদা লাগলে ফ্রিজে খাবার রাখা আছে, গরম করে খেয়ে নিস।’ বলে নিজের কামরায় ফিরে যাওয়ার জন্য পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার থেমে গেলেন। এদিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন,
‘আর হ্যা তোর জুতা মোজা এগুলা উল্টা পাল্টা ভাবে যেন পরে না থাকে। সব জায়গা মতো রাখ।’ বলে চলে গেলেন।

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রইংরুম হতে বাগানে যাওয়ার বড় খোলা দরজার দিকে চাইল। কাঁচের স্লাইডিং ডোরটা হা করে খোলা। বাগানের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছটাও এখান থেকে চোখে পরে। লিলি ফুলের গাছটা সর্বপ্রথম চোখে পরে। তার ওপর তিনটি পাখি বসে আছে। এ পাখিগুলো ওর অচেনা।
মাহীনের সাধারণত এসব ভালো লাগলেও এখন ওর মনে হলো পাখিগুলোও যেন ওকে উপহাস করছে। মুখ ফিরিয়ে নিল সেদিক থেকে। মনে দারুন বিচলিত ভাব। কেমন রাগও হচ্ছে নিজের ওপর। সম্পর্ক কিছুটা ভালোর দিকে গড়িয়েছিল বলেই তো ও এমনটা করলো। তাছাড়াও আর কতবার নিজে থেকে গিয়ে সেই লাইব্রেরিতে হাজির হবে ও? কেনই বা হবে? এখন মাথায় খেলছে, আজকের কাজটাও ঠিক হয়নি। রায়েদের কথায় ওর অপমান হয়েছে। এতটুকু যে ওই অকৃতজ্ঞ, দাম্ভিক ছেলেটার জন্য ভেবেছে তাও বুঝি বড় ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো ওর কথা না ভাববে না ওর মুখদর্শন করবে। এটাই শেষ সিদ্ধান্ত মাহীনের। সাইলোহ ও নায়েলের কাছ থেকে কথাগুলো কানে আসার পর থেকেই বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা। উৎকন্ঠা ও অস্থিরতা ওর বুকে আগুনের উত্তপ্ত শিখার মতো ঝাপটা দিচ্ছে। শুধুই মেঘ জমা মুখে চুপচাপ একা বসে থাকতে ইচ্ছে করছে।

প্রায় আধাঘন্টা পর নাইম বাড়ি ফিরল। বাসায় এসে নিজের কামরায় পৌঁছে হাত পা ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে আসতেই মিসেস নাসরিন জানালেন মাহীনের মন মেজাজ খারাপ। ওর কি হয়েছে দেখার নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন নাইমকে। নাইম বাধ্য ছেলের মতো মায়ের নির্দেশে মাহীনের কামরার সামনে এসে হাজির হলো। ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো মাহীন বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে আছে। লাউড স্পিকারে টেইলর সুইফটের রেড গানটা চলছে। যদিও খুব হাই ডেসিবল নয়। মাহীন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। দরজা খোলার শব্দেও চোখ মেলে তাকায়নি। নাইম গানটা বন্ধ করে দিতে চোখ মেলে চাইল। বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘ভাইয়া ডিসটার্ব করিস না। গানটা চালা।’

‘কি যে ঢং করিস না মাঝে মাঝে। কি হয়েছে তোর হ্যা? স্কুল থেকে ভাজা হয়ে আসছিস দেখি।’

মাহীন সিলিংয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে ম্লান কন্ঠে বলল, ‘কি আর হবে? আমার ভালো লাগছে না শুধু। এতে খুব বিশেষ কিছু হওয়ার মতো কি দেখলি?’

নাইম মাহীনের বাহু আঁকড়ে ধরে টানতে টানতে বলল,
‘এ্যই ওঠ। আমরা বাইরে যাবো।’

মাহীন চোখ বড় বড় করে ওর দিকে চাইল। মুখ কুঁচকে বলল, ‘পাগল নাকি তুই? এই গরমে, ভর দুপুরে কড়া রোদের মধ্যে আমরা এখন বাইরে যাবো? সকাল থেকে ক্লাস করে এসে কি ক্লান্তি লাগে না তোর?’

এমন ভাবে কথাগুলো বললো যেন বাড়ির বাইরে গেলেই এক মস্ত দানবীয় স্যাকামোর গাছের ভূত ওদের ধরে বসবে।

নাইম বলল,’কোথায় রোদ পাইলি তুই? আকাশ কেমন মেঘলা হয়ে আছে দেখিস না? বাতাসও হচ্ছে। চল আর কোনো বাহানা চলবে না।’ বলে মাহীনকে টেনে উঠাল।

মাহীন মুখ গোঁজ করে অগত্যা উঠে দাঁড়াল। তারপরও নড়তে চাচ্ছে না দেখে প্রায় টানতে টানতে ওকে নিচে নামাল নাইম। দুই ভাই বোনই স্নিকার্স পায়ে দিল। এরপর বাইরে বেরিয়ে গেল। ওদের এলাকা মন্টানা এভেনিউ বেশ শান্ত ও নির্জন এলাকা। এদিকে ছেলে মেয়েদের কোলাহল কম হয়। তবে কিছু দূরেই সামোহির আশেপাশে সারাদিনই ব্যস্ততা দেখা যায়। এখানে প্রতিটা বাড়ির বাগান রয়েছে। রাস্তার পাশেও ওক,সিডার বা স্যাকামোর গাছগুলো ছায়া আবরণী তৈরি করেছে। মাঝে মাঝে কোনো ডালের আড়াল থেকে অচেনা পাখির ডাক শোনা যায়। মাহীনের দেখাদেখি আকাশটাও যেন মন ভার করেছে। বড় বড় ভারি ভারি ধূসর মেঘ রাশি এসে জমা হয়েছে আকাশের বুকে। স্প্যানিস ধাঁচের বাড়ি গুলোর সামনে দিয়ে ওরা দুজন হেঁটে যাচ্ছে। নাইম অবশেষে বলল,

‘আচ্ছা তোর স্কুলে কি চলে না চলে সেসব তো কিছুই জানাস না আমাকে। আর তোর নতুন ফ্রেন্ডদেরকেও তো আমি চিনি না। এর আগে বাংলাদেশে থাকতে তোর একেকটা ফ্রেন্ডের নারী-নক্ষত্র, এমনকি দাদা-নানার পেশা কি ছিলো এসবও আমার জানা থাকত।’

মাহীন স্তিমিত কন্ঠে বলল,’হ্যা ভাইয়া। তোকে বলবো বলবো করে তো বলাই আর হচ্ছে না। কারণ কাহিনী অনেক কিছু ঘটে গেছে।’

‘তোর জীবনে এত ড্রামা কিভাবে হয় বুঝি না।’ টিপ্পনী কেটে বলল নাইম।

‘তোর বোঝা লাগবে না। তুই শুধু শোন।’ গাঢ় ভাবে বলল মাহীন। তারপর একদম প্রথম দিনের ঘটনাগুলো খুলে বললো। তারপর ক্রিয়েটিভ ইভেন্ট। এরপর একে একে প্রাইজ গিভিং সেরেমনি, বাস্কেটবল ম্যাচ।’ নাইম চোখ ছানাবড়া করে শুনলো। সবশেষে সবিস্ময়ের সঙ্গে বলল, ‘তোর স্কুলে কি একটাও স্বাভাবিক ছাত্র নাই? সবগুলো একেক ক্যাটাগরির একেকটা নমুনা দেখি।’

মাহীন হেসে ফেললো। বলল, ‘তা আর বলতে। আমি নিজেও অবাক এই বিষয়ে।’

‘ভালো কথা। তুই আবার সোশাল বাটারফ্লাই দেখে নতুন স্কুলের দেড় মাসের মাথায় সবকিছুর সাথে জড়িয়ে গেছিস।’

মাহীন নাটকীয় ভঙ্গিতে সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল।
নাইম বলল, ‘আচ্ছা এটা আগে বল যে, ওইযে র‌্যবিটের বাসায় গিয়ে বুঝলিনা কি করে যে ওটা কার বাসা? বাসার বাইরে নেমপ্লেট ছিল না? আর ওদের মায়ের পদবি তো এট লিস্ট জানিস।’

মাহীন রাস্তায় পরে থাকা একটা নুড়ি পাথরকে লাথি মেরে প্রত্যুত্তরে বলল, ‘ভাই ওদের মায়ের নাম ফাতিমা রহমান। লাস্টে কোনো মাদিহ যুক্ত নাই। এবং আমার যতদূর মনে পরে ওদের বাড়ির বাইরে কোনো নেমপ্লেট নেই।’

‘কিন্তু যেহেতু তুই র‌্যবিটকে আগে থেকে চিনতিস, তোর তো ওর বাসায় গিয়ে কোনো না কোনো হিন্ট পাওয়ার কথা। আর রায়েদের কি? ওর মায়ের মুখে ওর কথাও শুনিস নি?’

‘আরে ওইটাই তো। ওর মায়ের বা দাদির কথা শুনে আমি ওগুলো কিছু বুঝতেই পারিনি। আর আমি যে রায়েদের বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছি এটা নিশ্চয়ই রায়েদের জানার কথা। কিন্তু ওতো এরপর দেখা হওয়ার পরও কিছুই বলেনি এ সম্বন্ধে।’ বলল মাহীন।

নাইম চোখ ছোট করে সন্দিহান কন্ঠে বলল, ‘ঘটনা গোলমেলে।’

মাহীন বলল, ‘হবে নাই বা কেন? সত্যি বলতে ওই দুই মাদিহ ভাইকেই অনেক রহস্যময় লাগে। রায়েদের কথা বাদ। এট লিস্ট র‌্যবিট তো প্রানবন্ত চঞ্চল, মিশুক। ওর অনেক বন্ধুবান্ধব থাকা সত্ত্বেও ও তাদের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায় না কেন এটা একটা ভাবার মতো বিষয়। তারওপর রায়েদ কে নিয়ে কখনো ও মুখ খোলে না। আমার বন্ধুদের মুখে শুনেছি, অনেকজন অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু ওর মুখ থেকে একটা টুঁশব্দও বের হয় না।’

নাইম বলল, ‘হুম। তাহলে তুই ওদের থেকে সাবধান থাকবি। আমার কাছে ওদেরকে একদম সুবিধাজনক লাগছে না।’

মাহীন চট করে বলল, ‘আরেহ না। ওদের অদ্ভুত রহস্যময় লাগলেও ওদের কাউকেই কিন্তু মানুষ হিসেবে আমার খারাপ মনে হয়নি।’

‘এই যে শুরু করেছিস আবার তোর মানব দরদী আচরণ। এসব করতে গিয়ে তুই আবার ঝামেলায় ফাঁসবি। আর লাস্ট তোদের যখন দেখা হয়েছে তখন তো সবকিছু ঠিকই ছিলো, স্বাভাবিক ছিল। সেইসব কে ওমনি থাকতে দে। আর বেশি ঘাটতে যাস না।’ বিজ্ঞের মতো বলল নাইম।

ধূসর রঙের মেঘের পাহাড় গুলোর নিচ দিয়ে এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেল।

মাহীন পানসে কন্ঠে বলল, ‘হ্যা আমি ইতোমধ্যে কিছু করেছি। যদিও মনে হচ্ছে এটা করাটা মোটেও উচিৎ হয়নি। এর ফলে ওই শেষ স্বাভাবিক ব্যাপারটা বোধহয় খুব খারাপ পর্যায় চলে গিয়েছে।

নাইম মাথায় চাপড় দিয়ে হতাশ কন্ঠে বলল,’আল্লাহ! কিছু করার পূর্বে পাঁচজনের মতামত নিতে কি এমন ক্ষতি হয়? আর সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে তোর ভাল্লাগেনা, না?’

মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে তীব্র কন্ঠে বলল, তবে যাই হয়ে যাক আমি আর ওর সাথে জীবনেও কথা বলবো না। ওর ধার দিয়ে আই মিন লাইব্রেরির ডিরেকশনেও তাকাবো না।’

কেমন মুখ ভার করে বলল মাহীন। নাইম কপাল কুঁচকে বলল, এমন কী হয়েছে আবার? ও না অনেক ভালো ছিল একটু আগে? দুই মিনিটে খারাপ হয়ে গেল?’

‘না তেমন কিছু না। শুনলি না ও ওইরকমই?’
তারপর থেমে আবার বলল, ‘আর হ্যা পাঁচজনের মতামত নেওয়ার পরও, আমি ওইটাই করতাম যেটা আমার মনে চায়।’

নাইম মুখ বাঁকিয়ে বলল, ‘এহ! স্টাবার্ন ফ্রিক একটা।’ তারপর একটু বিরতি দিয়ে বলল,’তোর বন্ধুদের মধ্যে যে আমার একমাত্র নায়েল ও লিও কেই স্বাভাবিক লাগে। আর ওই যে…কি জানি চায়নিজ মেয়েটার নাম ওকেও বলতাম স্বাভাবিক। কিন্তু কোন স্বাভাবিক মানুষের সাথে এতো এক্সিডেন্ট হয়? বাই দ্যা ওয়ে ওর সাথে তুই কিন্তু কোথাও যাবি না। পরে ওর সাথে সাথে তোরও এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।’

মাহীন হালকা হাসল। বলল, ‘আসলেই তবে জেনেট আর সাইলোর মধ্যে কি সমস্যা? ওরাও তো স্বাভাবিক।’

‘মোটেও না। তোর বান্ধবী সাইলোহ এত খিটখিটে আচরণ করে কেন? অতিরিক্ত। আর জেনেট তো তোর থেকেও বড় ড্রামা কুইন।’

মাহীন মুখ ফুলিয়ে বলল, ‘ইশ! আমি ড্রামা কুইন না।’

‘তুই বললেই হইলো নাকি। আর এটা বল যে, ওই যে ওই ছেলেটা। যে বাস্কেটবল টিমের ক্যাপ্টেইন। তার কি হলো না হলো সেটা নিয়ে তোর এত মাথা ব্যাথা কিসের? কি করতে ওকে কমফোর্ট করতে গিয়েছিলি?’

‘আমার খারাপ লেগেছিল তাই। আর ওকে ওভাবে বসে থাকতে দেখেও কিছু না বলেই চলে আসব ব্যাপারটা কেমন জানি দেখায় না?” জিজ্ঞেস করল মাহীন।

নাইম বলল,’মোটেও কেমন জানি দেখায় না। আহা কি দরদ! দরদের ফ্লেম থেকে বাঁচি না। ওই সময় বেচারা একটু একা থাকতে চেয়েছিল আর তুই কিনা ফ্রি তে জ্ঞান দান করতে গিয়েছিলি।’

মাহীন বলল, ‘আরেহ আমি জানি কখন কাকে কি বলতে হয়। এবং স্কুলের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ব্যাপারটা তো ক্যাপ্টেইনের জানা উচিৎ। এর আগে শুধু ওকে চিনতাম না এবং বলার সুযোগ হয়নি বলে বলাও হয়নি। সেই দিন সুর্বণ সুযোগ পেয়ে কেন হাতছাড়া করতাম।’

‘ওফ তুই কোথায় গিয়ে পরেছিস। ম্যাচফিক্সিং টাও বাদ রাখেনি এরা। আরেক আছে ধড়িবাজ মনিটর আবার তার মা নাকি জাদরেল টিচার। কোনো এক স্টুডেন্ট প্রথম দিনে স্কুলে এসেই আমার চুনোপুঁটিকে খুন করল। ওফ তোর স্কুলের নাম শুনেই সাফোকেশন হচ্ছে।’ জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল নাইম।

মাহীন ইতস্তত হাসল। বলল,’সামোহি কে নিয়ে কিন্তু একটা নেটফ্লিক্স ওয়েব সিরিজ অনায়াসে বানানো যাবে।’

নায়েল হেসে বলল,’তা বৈকি। ওহ হ্যা তুই কি চতুর্থ বার ফ্রেন্ডস দেখা শেষ করেছিস?’

‘নাহ দশ নাম্বার সিজনের শেষের তিনটা এপিসোড এখনো বাকি আছে। তোর ‘মানি হায়েস্ট’ শেষ হয়েছে?’

নাইম বলল, ‘নাহ। সময় পাই কোথায়? বাই দ্যা ওয়ে তুই শুনেছিস না টেক্সাসে গতকাল একটা স্কুলে বন্দুক হামলায় উনিশ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে এবং একুশ জুন হতাত হয়েছে?’

মাহীন বলল, ‘হ্যা শুনেছি। এবং নিশ্চয়ই খুনি আবার আত্নহত্যাও করেছে?’

‘হ্যা তা তো করেছেই। আজকাল এই বন্দুক হামলাগুলো প্রচুর বেরে গিয়েছে। এবং খুনি গুলো যে কোন পাগলাগারদ থেকে পালায় আসে আল্লাহই জানে। কিন্তু কথা হইল মানুষের জন্য বন্ধুক পকেটে পকেটে রাখা খুব বেশিই সহজলভ্য করেছে আমেরিকা সরকার।’

‘হুম এখনো মনে হয় যেন আমরা ওয়েস্টার্ন যুগেই থেমে গিয়েছি। শুধু পার্থক্য হলো স্থান-কাল, সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়েছে। শুধু মাত্র অত্যাধিক বন্দুক তৈরির ওপর যদি একটা নির্দিষ্ট মাত্রা থাকত তাহলে পরিস্থিতি এতটা ভয়বহ হতো না।’

‘হ্যা বাইডেন সরকার এইদিক দিয়ে একেবারেই ব্যর্থ।’

‘তা ঠিক বলা যায় না। এর আগের সরকাররাও এ বিষয়ে নির্বিকার ছিল। এবং বাইডেন তো বন্দুক আইনের ওপর একটা বিল তৈরি করেছিল তবে হাফ সিনেটরদের ভোটের অভাবে তো তা পাশই হয় নি।’

‘তাও অবশ্য ঠিক। এবং তুই যে একা চলা ফেরা করিস, সাবধানে থাকবি কিন্তু।’ মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল।
.
.
.
.
মি.মোর্শেদ কিছুক্ষণ পূর্বে বাসায় ফিরেছেন। মিসেস নাসরিন খাবার গরম করে টেবিলে রাখছেন। এখন প্রায় বিকেল হতে চলেছে। মি.মোর্শেদ হাত মুখ ধুয়ে এসে টেবিলে বসতে বসতে বললেন, ‘কি ব্যপার আমার ছেলে মেয়েরা কোথায়? বাড়ি খালি খালি কেন?’

মিসেস নাসরিন একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে বলল,
‘ওফ আর বলো না। তোমার দুজন ছেলে মেয়েই পাগল। সেই স্কুল থেকে ফিরেই বাইরে বেরিয়েছিল এখনো ফিরেনি। মাহীন দেখি ফোন বাসায় ফেলে থুয়ে গিয়েছে আর নাইম ফোন ধরছে না।’

মি.মোর্শেদ বললেন, ‘আরেহ চিন্তা করো নাতো। অনেক দিন পর দুইজন ঘুরতে বেরিয়েছে। ব্যস্ততার মধ্যে তো ওদের গল্প করতেই দেখি না।’

মিসেস নাসরিন চিন্তিত কন্ঠে বলছেন, ‘আমার সত্যিই খুব চিন্তা হচ্ছে মাহীনকে নিয়ে। দেড়মাস মাত্র হলো এখানে এসেছি। এখনো স্যান্টা মনিকাই ভালো করে চিনলো না আর ও একা একা যাচ্ছে অন্য শহরে।’

‘তা বৈকি। চিন্তা তো আমারও হচ্ছে। না জানি কোন ঝামেলায় পরে আবার।’ উৎকন্ঠিত স্বরে বললেন মি.মোর্শেদ।

মিসেস নাসরিন বললেন, ‘আরেহ তুমি তো ওর কারিশমা দেখোনি কিছুই। দেশে থাকতে তো বাসায়ই থাকত। স্কুলে শুধু একা যেত, তাই সে চরম চরম রেকর্ড আছে ওর। আর এখানে আরোও স্বাধীন ও।’

মি.মোর্শেদ বললেন, ‘তবে একটা ব্যাপার যে ও অবুঝ না। যথেষ্ট ম্যাচিউর। একটু যা খামখেয়ালী।’

মিসেস নাসরিন বললেন, ‘শুধু কি খামখেয়ালী? মানুষের জন্য উদারতা দেখাতে গিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে যায়। জানো তো আমরা যখন গাড়ো পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তখন পাহাড়ের মধ্যে কিভাবে একটা গাড়ো বাচ্চার খোঁজ পেয়েছিল ও যে হারিয়ে গিয়েছিল। সেই বাচ্চাকে কোন ফাঁকে নিজের বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেছে। চিন্তা করো! তারপর ভাগ্য ভালো চেকপোস্টের আর্মিদের হাতে গিয়ে পরেছিল বলে ওকে আবার খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। শুধু এটাই ওর বড় ধরনের রেকর্ড না। আরো আছে। এই যেমন দুইবছর আগেরই তো কথা, কমলাপুর স্টেশনে কোন চোর এক যাত্রীর ছোট একটা ব্যাগ উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সেই যাত্রীকে হেল্প করতে গিয়ে সেফটিপিন ফুটিয়ে দিয়েছিল চোরের হাতে। ইশ সেকি লঙ্কাকাণ্ড!’

মি.মোর্শেদ হালকা হেসে উঠে বললেন, ‘হ্যা হ্যা জানি। সেই কাহিনী কতবার নাইম শুনিয়েছে আমাকে। কিন্তু কথা হলো আসলেও ওই হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাটা কিন্তু পরে মাহীনের জন্যেই নিজের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল। এবং সেই চোরও ধরা পরেছিল।’

মিসেস নাসরিন বিরক্ত কন্ঠে বললেন, ‘তুমি হাসছ! যদিও প্রতিটা কাজই ওর কোনো না কোনো ভাবে সফল হয় কিন্তু এর বিপরীতও হতে পারত। যদি আমরা ওকে সেই বার পাহাড়ে খুঁজে না পেতাম? আর যদি সেই চোর ওর কোনো ক্ষতি করে দিত? ওর ভাবসাব দেখলে মনে হয় তেইশ চব্বিশ বছর। কিন্তু আসলে তো মাত্র সাড়ে ষোল বছর বয়স ওর। নতুন বন্ধু বান্ধব জুটেছে। কিভাবে যে স্কুলের প্রথম দুইতিন দিনেই এত ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল যে তারা ওকে বিচে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসায় এসে হাজির হয়েছিল তা এখনো আমার বোধগম্য হয়নি। আদৌও কেমন যে ওরা আল্লাহই জানে। আর এখানকার ছেলে মেয়েদের যে উচ্ছন্ন লাইফস্টাইল সে আর বলার নয়। এদের সাথে থাকতে থাকতে কখন না আবার মাহীনও কাউকে জুটায় ফেলে। ওই যে ওর ওই বান্ধুবীটা যার সোনালি চুল ওর বয়ফ্রেন্ড আছে। তাও আবার সেও মাহীনের ফ্রেন্ড। দুইজনই আসছিল সেদিন বাসায়। তাদের ভরসায় তাদের সাথে কিভাবে ওকে অন্য শহরে পাঠাবো বল? ‘

মি.মোর্শেদ শান্ত কন্ঠে বললেন, ‘দেখো নাসরিন, চিন্তিত আমিও। কিন্তু ওকে এখন যেতে না দিলে ওর মন খারাপ হয়ে যাবে। আর ও অসম্ভব জেদি জানতো। ওর সব বন্ধুরা যাবে আর ও, নিজের প্রথম পিকনিকটা মিস করবে তা তো ও মেনে নিতে পারবে না। এত কান্ড করার পর যে তুমি ওকে কম শাসন করেছো তা তো নয়। আমাকে ফোন করে করে সেকি কান্নাকাটি করে বিচার দিত। তারপরও কি ও বদলেছে? ওর স্বভাবই ওরকম। স্বভাব তো আর বদলাবে না। বিপদ ওর কপালে থাকলে বাসায় বসেও হতে পারে, অন্য যেকোনো জায়গায় হতে পারে। এখন অন্য শহরে যাচ্ছে যখন, আমরা যা করতে পারি তা হলো ওকে বুঝিয়ে বলতে পারি সাবধান হওয়ার ব্যাপারে। ও সেন্সিবল একটা মেয়ে একসেপ্ট যা কিছু করে ও। ওতো ভালো করেই বোঝে কোনটাতে ওর বিপদ আছে। ইচ্ছে করে তো আর বিপদে পরবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা বাচ্চাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এইটুকু একা ছেড়ে না দিলে কি হয়? ‘

মিসেস নাসরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ তোমার কথাও ঠিক। কিন্তু ও যেভাবে যেভাবে বিপদে পরে সেগুলো ইচ্ছে করে বিপদে পরারই সামিল।’

চলবে ইনশাআল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here